(Book# 814) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ৭৩-৭৯ নং আয়াত:- [ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷۹﴾ অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য। Indeed in that are signs for a people who believe.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ ا NJللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 814)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৭৩-৭৯ নং আয়াত:-
[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷۹﴾
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
Indeed in that are signs for a people who believe.]
www.motaher21.net
وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَمۡلِکُ لَہُمۡ رِزۡقًا مِّنَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ شَیۡئًا وَّ لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ﴿ۚ۷۳﴾
তারা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করে, তারা তাদের জন্য আকাশমন্ডলী অথবা পৃথিবী হতে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করার শক্তি রাখে না এবং তারা কিছুই করতে সক্ষম নয়।
And they worship besides Allah that which does not possess for them [the power of] provision from the heavens and the earth at all, and [in fact], they are unable.
فَلَا تَضۡرِبُوۡا لِلّٰہِ الۡاَمۡثَالَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷۴﴾
সুতরাং তোমরা আল্লাহর সদৃশাবলী স্থির করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।
So do not assert similarities to Allah . Indeed, Allah knows and you do not know.
ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا عَبۡدًا مَّمۡلُوۡکًا لَّا یَقۡدِرُ عَلٰی شَیۡءٍ وَّ مَنۡ رَّزَقۡنٰہُ مِنَّا رِزۡقًا حَسَنًا فَہُوَ یُنۡفِقُ مِنۡہُ سِرًّا وَّ جَہۡرًا ؕ ہَلۡ یَسۡتَوٗنَ ؕ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷۵﴾
আল্লাহ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির যাকে আমি নিজের পক্ষ হতে উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; তারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য। বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
Allah presents an example: a slave [who is] owned and unable to do a thing and he to whom We have provided from Us good provision, so he spends from it secretly and publicly. Can they be equal? Praise to Allah ! But most of them do not know.
وَ ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا رَّجُلَیۡنِ اَحَدُہُمَاۤ اَبۡکَمُ لَا یَقۡدِرُ عَلٰی شَیۡءٍ وَّ ہُوَ کَلٌّ عَلٰی مَوۡلٰىہُ ۙ اَیۡنَمَا یُوَجِّہۡہُّ لَایَاۡتِ بِخَیۡرٍ ؕ ہَلۡ یَسۡتَوِیۡ ہُوَ ۙ وَ مَنۡ یَّاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ ۙ وَ ہُوَ عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿٪۷۶﴾
আর আল্লাহ্‌ আরো উপমা দিচ্ছেন দু ব্যক্তিরঃ তাদের একজন বোবা, কোন কিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার অভিভাকের উপর বোঝা; তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে কোন কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে না; সে কি সমান ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে ?
And Allah presents an example of two men, one of them dumb and unable to do a thing, while he is a burden to his guardian. Wherever he directs him, he brings no good. Is he equal to one who commands justice, while he is on a straight path?
وَ لِلّٰہِ غَیۡبُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَاۤ اَمۡرُ السَّاعَۃِ اِلَّا کَلَمۡحِ الۡبَصَرِ اَوۡ ہُوَ اَقۡرَبُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۷۷﴾
আর আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েবী বিষয় আল্লাহ্‌রই। আর কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায় ,‌অথবা তা থেকেও সত্বর। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
And to Allah belongs the unseen [aspects] of the heavens and the earth. And the command for the Hour is not but as a glance of the eye or even nearer. Indeed, Allah is over all things competent.
وَ اللّٰہُ اَخۡرَجَکُمۡ مِّنۡۢ بُطُوۡنِ اُمَّہٰتِکُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا ۙ وَّ جَعَلَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ۙ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۷۸﴾
আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
And Allah has extracted you from the wombs of your mothers not knowing a thing, and He made for you hearing and vision and intellect that perhaps you would be grateful.
اَلَمۡ یَرَوۡا اِلَی الطَّیۡرِ مُسَخَّرٰتٍ فِیۡ جَوِّ السَّمَآءِ ؕ مَا یُمۡسِکُہُنَّ اِلَّا اللّٰہُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷۹﴾
তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদেরকে স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
Do they not see the birds controlled in the atmosphere of the sky? None holds them up except Allah . Indeed in that are signs for a people who believe.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৭৩-৭৯ নং আয়াত:-

[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷۹﴾
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।
Indeed in that are signs for a people who believe.]
www.motaher21.net

৭৩-৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতগুলোতে কাফির-মুশরিকদের বাতিল মা‘বূদের দুর্বলতা ও অক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা এমন মা‘বূদের ইবাদত করে যারা আকাশ-জমিন কোথাও থেকে একটু রিযিকের ব্যবস্থা করতে সক্ষম নয়। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে না, কোন খাদ্য নিয়ে আসতে পারে না। জমিন থেকে কোন ফসল উৎপন্ন করতে পারে না, কোন খাদ্য সরবরাহ করতে পারে না। বরং সকল রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

আল্লাহ বলেন:

(إِنَّ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ لَا يَمْلِكُوْنَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوْا عِنْدَ اللّٰهِ)

“তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজো কর তারা তোমাদের জীবনোপকরণের ক্ষমতা রাখে না, তোমরা রিযিক কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তাঁরই ‘ইবাদত কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৭)

তাই আল্লাহ তা‘আলার জন্য কোন উপমা, শরীক ও মাধ্যম সাব্যস্থ কর না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা একাই সকলকে সৃষ্টি করেছেন, রিযিক দিয়ে থাকেন এবং পরিচালনা করে থাকেন। তাই তার কোন সহযোগী, শরীক ও মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ)

“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।” (সূরা শুরা ৪২:১১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَمْ يَكُنْ لَّه۫ كُفُوًا أَحَدٌ)‏

“আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস ১১২:৪)

অনেকে বলে থাকে বান্দা পাপ করতে করতে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে সরাসরি চাইলে তিনি তা কবূল করেন না, বা তাঁর কাছে পৌঁছা সম্ভব নয়। সুতরাং কোন বুযুর্গ বা ওলী-আওলীয়াকে ধরতে হবে যেমন কোন রাজা বা বড় ধরণের ব্যক্তির কাছে যেতে পিয়ন বা নৈকট্যশীল ব্যক্তির প্রয়োজন হয়। এরূপ বিশ্বাস ও কর্ম সম্পূর্ণ শিরক ও কুফরী কাজ। বান্দা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইবে এ নির্দেশ কুরআনে আল্লাহ তা‘আলাই দিয়েছেন। যেমন সূরা মু’মিন ৬০ নং, সূরা বাকারাহ ১৮৬ নং-সহ অনেক আয়াত রয়েছে। হাদীসে এসেছে রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং বলেন: কে আছো আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো, কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে তাকে ক্ষমা করে দেবো, কে আছো আমার কাছে সম্পদ চাইবে তাকে আমি দেবো। এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত বলতে থাকেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৪৫, সহীহ মুসলিম হা: ৭৫৮)

আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতে কোন পীর-ফকীর বা মাজারে শায়িত ব্যক্তিসহ কারো মাধ্যম লাগে না, বরং সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইলেই আল্লাহ তা‘আলা খুশি হন ও তা পাওয়া যায়।

রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই সকলের উচিত সব কিছু ছেড়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাওয়া।

(ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا عَبْدًا)

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার ও যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করে তাদের দুটি উপমা বর্ণিত হয়েছে:

একটি উপমা হল-
১. কৃতদাস, যে দুনিয়ার কোন কিছু তো দূরের কথা নিজেরও মালিক না।
২. স্বাধীন ধনী ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা অনেক সম্পদ দান করেছেন এবং সম্মানিত করেছেন। সে তার সম্পদ থেকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করে। এ দু’জন ব্যক্তি কি সমান? না, কখনো সমান হতে পারে না, অথচ দু’জনেই মাখলুক। তাহলে কিভাবে আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দা সমান হতে পারে, যে বান্দার কোন ক্ষমতা ও সামর্থ্য নেই, সব দিক থেকে আল্লাহ তা‘আলার মুখাপেক্ষী। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা নিজের প্রশংসা করেছেন।

দ্বিতীয় উপমা হল দু’জন ব্যক্তির একজন কোন কিছু শুনতে পায় না এবং কোন কথা বলতে পারে না, এমনকি কোন কিছু করতে সক্ষম নয়, সে তার মালিকের বোঝাস্বরূপ। এ ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির মত হবে যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে নিজে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর কথাগুলো ন্যায়সঙ্গত এবং কাজগুলো সঠিক। এ দু’জন যেমন সমান হতে পারে না তেমনি যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করে আর যারা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে তারা কক্ষনো সমান হতে পারে না ।

(وَلِلّٰهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ….)

অর্থাৎ আকাশ ও জমিনে যত গায়েবের বিষয় রয়েছে সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন, অন্য কেউ নয়। এসব গায়েবের বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল কিয়ামত দিবস সংঘটিত হওয়ার সময়কাল আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না।

কিয়ামতের বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার কাছে একটি পলকের ন্যায় বরং তার চেয়েও সত্বর। তা সংঘটিত করতে আল্লাহ তা‘আলার এক মূহুর্তের ব্যাপার নয়।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَآ أَمْرُنَآ إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍۭ بِالْبَصَرِ)

“আমার আদেশ তো একটি কথায় নিষ্পন্ন, চক্ষুর পলকের মত।” (সূরা ক্বামার ৫৪:৫০)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(إِنَّهُمْ يَرَوْنَه۫ بَعِيْدًا – وَّنَرَاهُ قَرِيْبًا)

“নিশ্চয়ই তারা ঐ দিনকে অনেক দূরে মনে করে, কিন্তু আমি তা দেখছি নিকটে।” (সূরা মায়া‘রিজ ৭০:৬-৭)

সুতরাং বুঝা গেল যে, কিয়ামত অতি সন্নিকটে, তা যেকোন মুহূর্তে সংঘটিত হতে পারে।

(وَاللّٰهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ…..)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় বের করে আনেন যে,সে অবস্থায় তার কোন জ্ঞান থাকে না। কোনটা ভাল-মন্দ, কোন্টা সঠিক, কোন্টা বেঠিক ইত্যাদি সম্পর্কে থাকে একেবারেই অজ্ঞ। কিন্তু সৃষ্টির সময় আল্লাহ তা‘আলা কান, চোখ ও অন্তর দিয়ে দিয়েছেন যাতে কান দ্বারা শোনে, চোখ দ্বারা দেখে এবং অন্তর দ্বারা উপলদ্ধি করে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। মানুষ যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন তার সব কিছু বাড়তে থাকে এবং দৈহিক শক্তি ও জ্ঞানের পরিমাণও বাড়তে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ هُوَ الَّذِيْٓ أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ط قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ -‏ قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ)

“বল: তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। বল: তিনিই পৃথিবীব্যাপী তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।” (সূরা মুলক ৬৭:২৩-২৪)

(أَلَمْ يَرَوْا إِلَي….)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে আবারো তাঁর ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনিই আকাশের এই শূন্য গর্ভে পাখিকে উড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন, তাদেরকে স্থির রাখেন, কোন ইঞ্জিন নেই, কোন সংযোগ নেই। এসব কে করেন, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই নয় কী?

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اَوَ لَمْ یَرَوْا اِلَی الطَّیْرِ فَوْقَھُمْ صٰ۬فّٰتٍ وَّیَقْبِضْنَﺔ مَا یُمْسِکُھُنَّ اِلَّا الرَّحْمٰنُﺚ اِنَّھ۫ بِکُلِّ شَیْءٍۭ بَصِیْرٌﭢ)‏

“তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের উপরে পাখিসমূহের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও সঙ্কুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে শূন্যে স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।” (সূরা মুলক ৬৭:১৯)

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের কথাই বর্ণনা করছেন যে, তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব পালন করেন। সুতরাং ইবাদত পাবার যোগ্য একমাত্র তিনিই, অন্য কেউ নয়। তাই সকলের উচিত তাঁরই উপাসনা করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ।
২. আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করতে হবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নিকট সকল কিছুর জ্ঞান রয়েছে।
৪. মানুষকে অস্তিত্বহীন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ক্ষমতায় পাখিরা শূন্য আকাশে উড়ে বেড়ায়।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# এসব নিয়ামত আল্লাহর দেয়া, একথা যদিও মক্কায় মুশরিকরা অস্বীকার করতো না এবং এসব নিয়ামতের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ মেনে নিতেও তারা গররাযী ছিল না কিন্তু তারা যে ভুলটা করতো সেটা ছিল এ যে, এই নিয়ামতগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সাথে সাথে তারা নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে এমন বহু সত্তার কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো যাদেরকে তারা কোন প্রকার প্রমাণ ও সনদপত্র ছাড়াই এ নিয়ামতগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে অংশীদার বানিয়ে নিয়েছিল। এ জিনিসটিকেই কুরআন “আল্লাহর অনুগ্রহের অস্বীকৃতি” বলে গণ্য করছে। যে উপকার করলো, তার উপকারের জন্য যে উপকার করেনি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মূলত উপকারীর উপকার অস্বীকৃতিরই নামান্তর, কুরআনে এ কথাটিকে একটি সাধারণ নীতি হিসেবে পেশ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে কুরআন একথাটিকেও একটি মূলনীতি হিসেবে বর্ণনা করছে যে, বিনা যুক্তি-প্রমাণে উপকারী সম্পর্কে ধারণা করা যে, তিনি নিজ অনুগ্রহ ও দয়ার বশে এ উপকার করেননি বরং অমুক ব্যক্তির অছিলায় বা অমুক ব্যক্তির সুবিধার্থে অথবা অমুক ব্যক্তির সুপারিশক্রমে কিংবা অমুকের হস্তক্ষেপ করার কারণে এ উপকার করেছেন, এটাও মূলত তার উপকারের প্রতি অস্বীকৃতিরই শামিল। ইনসাফ ও সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি এ মৌলিক কথা দু’টিকে পুরোপুরি সমর্থন করে। সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলে প্রত্যেক ব্যক্তিই এর যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পারে। মনে করুন, কোন অভাবী ব্যক্তির প্রতি করুণা করে আপনি তাকে সাহায্য করলেন এবং সে তখনই উঠে দাঁড়িয়ে এমন এক ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো যার এ সাহায্যে কোন হাতই ছিল না। এ অবস্থায় আপনি নিজের উদার মনোবৃত্তির কারণে তার এ অবাঞ্ছিত আচরণকে যতই উপেক্ষা করুন না কেন এবং আগামীতে নিজের সাহায্য যতই জারী রাখুন না কেন, তবুও মনে মনে নিশ্চয়ই ভাববেন এ লোকটি আসলে বড়ই নির্লজ্জ ও অকৃতজ্ঞ। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ করে যদি আপনি জানতে পারেন, তার এ কাজটি করার কারণ এই ছিল যে, সে মনে করে, আপনি তাকে কিছু সাহায্য করেছেন তার পেছনে আপনার সততা ও দানশীলতার মনোবৃত্তি কার্যকর ছিল না বরং সবকিছু করেছিলেন ঐ ব্যক্তির খাতিরে, অথচ আসল ঘটনা তা ছিল না, তাহলে এক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয়ই একে নিজের অপমান মনে করবেন। আপনার কাছে তার এ উদ্ভট ব্যাখ্যার অর্থ এ হবে যে, সে আপনার সম্পর্কে বড়ই ভুল ধারণা রাখে এবং আপনাকে দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল বলে মনে করে না। বরং আপনাকে মনে করে একজন বন্ধু বৎসল লোক। বন্ধুর কথায় আপনি ওঠা বসা করেন। কয়েকজন পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে যদি কেউ এসে যায় তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট বন্ধুদের খাতিরে তাকে সাহায্য করেন অন্যথায় আপনার আঙুলের ফাঁক দিয়ে দানের একটা সিকিও গলতে পারে না।

# আল্লাহর জন্য সদৃশ তৈরী করো না’— অর্থাৎ আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-মহারাজা ও বাদশাহ-শাহানশাহদের সমপর্যারে রেখে বিচার করো না। রাজা-বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও মোসাহেবদের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না। ঠিক তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করতে থাকো যে, তিনি নিজের শাহী মহলে ফেরেশতা, আউলিয়া ও অন্যান্য সভাসদ পরিবৃত হয়ে বিরাজ করছেন এবং এদের মাধ্যমে ছাড়া তাঁর কাছে কারোর কোন কাজ সম্পন্ন হতে পারে না।

# যদি উপমার সাহায্যে কথা বুঝতে হয় তাহালে আল্লাহ‌ সঠিক উপমা দিয়ে তোমাদের সত্য বুঝিয়ে দেন। তোমরা যেসব উপমা দিচ্ছো সেগুলো ভুল। তাই তোমরা সেগুলো থেকে ভুল ফলাফল গ্রহণ করে থাকো।

#.প্রশ্ন ও আলহাম্দুলিল্লাহ এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ফাঁক রয়ে গেছে। এ ফাঁক পূরণ করার জন্য আলহাম্দুলিল্লাহ এর মধ্যেই একটি তাৎপর্যময় ইঙ্গিত রয়ে গেছে। একথা সুস্পষ্ট যে, নবীর মুখ থেকে একথা শুনে মুশরিকদের পক্ষে এ দু’টি সমান এ ধরনের জবাব দেয়া কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না। নিশ্চয়ই এর জবাবে কেউ না কেউ পরিষ্কারভাবে একথা স্বীকার করে থাকতে পারে যে, আসলে দু’টি সমান নয়। আবার কেউ এ ভয়ে নীরবতা অবলম্বন করে থাকতে পারে যে, স্বীকারোক্তিমূলক জবাব দেবার মাধ্যমে তার অনিবার্য ফলাফলকেও স্বীকার করে নিতে হবে এবং এর ফলে স্বতস্ফূর্তভাবেই তাদের শিরক বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই নবী উভয়ের জবাব পেয়ে বললেন, আলহাম্দুল্লিল্লাহ। স্বীকারকারীদের স্বীকারোক্তির পরও আলহাম্দুল্লিল্লাহ এবং নীরবতা পালনকারীদের নীরবতার ওপরও আলহাম্দুলিল্লাহ। প্রথম অবস্থাটিতে এর অর্থ হয় “আল্লাহর শোকর অন্তত এতটুকু কথা তো তোমরা বুঝতে পেরেছো।” দ্বিতীয় অবস্থায় এর অর্থ হয়, “নীরব হয়ে গেছে? আলহাম্দুলিল্লাহ, নিজেদের সমস্ত হঠকারিতা সত্ত্বেও দু’টি অবস্থা সমান বলে দেবার হিম্মত তোমাদেরও নেই।”

#.যদিও তারা মানুষের মধ্যে ক্ষমতাহীন ও ক্ষমতাধরের মধ্যকার পার্থক্য অনুভব করে এবং এ পার্থক্য সামনে রেখেই প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা আচরণ করে, তবুও তারা এমনি মূর্খ ও অবুঝ সেজে আছে যে, স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার পার্থক্য তারা বুঝতে পারে না। স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলী, অধিকার, শক্তিমত্তা সবকিছুতেই তারা সৃষ্টিকে শরীক মনে করছে এবং সৃষ্টির সাথে এমন আচরণ করছে যা একমাত্র স্রষ্টার সাথেই করা যেতে পারে। উপায় উপকরণের ওপর নির্ভরশীল এ জগতে কারোর কাছে কোন জিনিস চাইতে হলে আমরা গৃহম্বামীর কাছেই চেয়ে থাকি, চাকর বাকরদের কাছে চাই না। কিন্তু সমগ্র দয়া-দাক্ষিণ্যের উৎস যেই সত্তা, তার কাছ থেকে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যখন সচেষ্ট হই, তখন সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিককে বাদ দিয়ে তাঁর বান্দাদের কাছে হাত পাতি।

# প্রথম উপমায় আল্লাহ ও বানোয়াট মাবুদদের পার্থক্যটা কেবলমাত্র ক্ষমতা ও অক্ষমতার দিক দিয়ে সুস্পষ্ট করা হয়েছিল। এখন এ দ্বিতীয় উপমায় সেই পার্থক্যটিকে আরো বেশী সুস্পষ্ট করে গুণাবলীর দৃষ্টিতে বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও এ বানোয়াট মাবুদদের মধ্যে ফারাক শুধুমাত্র এতটুকুই নয় যে, একজন ক্ষমতাধর মালিক এবং অন্যজন ক্ষমতাহীন গোলাম বরং এছাড়াও তাদের মধ্যে এ ফারাকটিও রয়েছে যে, এ গোলাম তোমাদের ডাকও শোনে না। তার নিজের সারাটি জীবন তার মালিক ও প্রভুর সত্তার ওপর নির্ভরশীল। আর প্রভু যদি তার ওপর কোন কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সে কিছুই করতে পারে না। অন্যদিকে প্রভুর অবস্থা হচ্ছে এই যে, তিনি কেবল বক্তাই নন বরং জ্ঞানী বক্তা। তিনি দুনিয়াকে ইনসাফের হুকুম দেন। তিনি কেবল কাজ করার ক্ষমতাই রাখেন না বরং যা করেন তা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবেই করেন, সততা ও নির্ভুলতার সাথে করেন। তাহলে বলো, এ ধরনের প্রভু ও গোলামকে তোমরা সমান মনে করো কেমন করে? এটা তোমাদের কোন্ ধরনের বুদ্ধিমত্তা?
# পরবর্তী বাক্য থেকে বুঝা যায়, এটি আসলে মক্কার কাফেরদের একটি প্রশ্নের জবাব। তারা প্রায়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করতো, তুমি আমাদের যে কিয়ামতের আগমনের খবর দিচ্ছো তা যদি সত্যি সত্যিই আসে, তাহলে তা কবে কোন্ তারিখে আসবে? এখানে প্রশ্ন উদ্ধৃত না করে তার জবাব দেয়া হচ্ছে।

# কিয়ামত আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে কোন দীর্ঘকালীন পর্যায়ে সংঘটিত হবে না। তার আসার আগে তোমরা দূর থেকে তাকে আসতে দেখবে না এবং এর মাঝখানে তোমরা নিজেদেরকে সামলে নিয়ে তার জন্য কিছু প্রস্তুতিও করতে পারবে না। যেকোন দিন যেকোন মুহূর্তে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে তা এসে যাবে। কাজেই যে চিন্তা-ভাবনা করতে চায় তার গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত এবং নিজের মনোভাব ও কর্মনীতি সম্পর্কে যে ফায়সালাই করতে হয় শীঘ্রই করা দরকার। “এখন তো কিয়ামত অনেক দূরে, যখন তা আসতে থাকবে তখনই আল্লাহর সাথে একটা মিটমাট করে নেবো,” কারো এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা করে তার ওপর ভরসা করে বসে থাকা উচিত নয়। তাওহীদ সম্পর্কে ভাষণ দিতে দিতে তার মাঝখানে হঠাৎ এভাবে কিয়ামতের আলোচনা করার কারণ হচ্ছে এই যে, লোকেরা যেন তাওহীদ ও শিরকের মাঝখানে কোন একটি আকীদা নির্বাচন করার ব্যাপারটিকে নিছক একটি তাত্বিক ব্যাপার মনে না করে বসে। তাদের এ অনুভূতি থাকা উচিত যে, কোন অজ্ঞাত মুহূর্তে যে কোন সময় হঠাৎ একটি ফায়সালার সময় এসে যাবে এবং সে সময় এ নির্বাচনের সঠিক বা ভুল হওয়ার ওপর মানুষের সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করবে। এ সতর্কবাণীর পর আবার আগে থেকে চলে আসা সেই একই আলোচনা শুরু হয়ে যায়।
# এমনসব উপকরণ যার সাহায্যে তোমরা দুনিয়ায় সব রকমের জ্ঞান ও তথ্য সংগ্রহ করে দুনিয়ার যাবতীয় কাজ কাম চালাবার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছো। জন্মকালে মানব সন্তান যত বেশী অসহায় ও অজ্ঞ হয় এমনটি অন্য কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে হয় না। কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের উপকরণাদির (শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টিশক্তি, বিবেক ও চিন্তাশক্তি) সাহায্যেই সে উন্নতি লাভ করে পৃথিবীর সকল বস্তুর ওপর প্রাধান্য বিস্তার এবং তাদের ওপর রাজত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করে।

# যে আল্লাহ তোমাদের এসব অগণিত নিয়ামত দান করেছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এ নিয়ামতগুলোর ব্যাপারে এর চেয়ে বেশী অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে যে, এ কান দিয়ে মানুষ সব কিছু শোনে কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহর কথা শোনে না, এ চোখ দিয়ে সবকিছু দেখে কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহর নিদর্শনাবলী দেখে না এবং এ মস্তিস্ক দিয়ে সবকিছু চিন্তা করে কিন্তু শুধুমাত্র একথা চিন্তা করে না যে, আমার যে অনুগ্রহকারী আমার প্রতি এসব অনুগ্রহ করেছেন তিনি কে?

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*শিরকের অসারতা : এ অধ্যায়ের তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষের নিজেদের অস্তিত্ব, স্ত্রী, সন্তান ও পরবর্তী বংশধরদের আলােচনা। এদের সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে নর ও নারীর মধ্যে যে প্রাণবন্ত সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয় দিয়ে শুরু করা হচ্ছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালাই তােমাদের নিজেদের মধ্যে জোড়া বানিয়েছেন’ অর্থাৎ ওরা তােমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই পয়দা হয়েছে, তারা তােমাদের অর্ধেক। তারা এমন কোনাে অস্পৃশ্য জীব নয়, যাদের পয়দা হওয়ার সংবাদ শুনে মুখ লুকানাের প্রয়ােজন হবে অথবা দুঃখিত হতে হবে। আর তােমাদের এ(যুগল) দম্পতি থেকে পুত্র ও প্রৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তাে প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল ও মরণশীল, তার সাহায্য ও বংশ রক্ষার জন্য তার সন্তানাদি ও পৌত্রাদির প্রয়ােজন রয়েছে, সুতরাং একারণে তার অন্তরের মধ্যে এদের সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব সর্বাধিক। এজন্যে আল্লাহর তরফ থেকেও পুত্র কন্যা পৌত্রাদি-শারীরিক ও মানসিক প্রয়ােজন মেটানাে ও আন্তরিক প্রশান্তির জন্যে, যাতে করে এসবের হিসাব দিতে গিয়ে তাকে এ প্রশ্নের জওয়াব দিতে প্রস্তুত থাকতে হয়, ‘ওরা কি তাহলে মিথ্যার ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং অস্বীকার করবে আল্লাহর নেয়ামতকে?’ অর্থাৎ এই ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করে কি ওরা শিরক করবে এবং তার হকুমের বিরােধিতা করবে? অথচ এসব যতাে নেয়ামত আছে সবই তাঁর দান! এগুলাে সবই তার প্রভুত্ব কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। এটি মানব জীবনের এক চরম বাস্তবতা। এগুলাে নিয়েই তারা সারাক্ষণ। ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। ‘তাহলে ওরা কি মিথ্যার ওপরই বিশ্বাস স্থাপন করবে?’ অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া যা কিছু আছে সবই তাে মিথ্যা, মিথ্যা এসব দেবদেবী যাদের পূজা ওরা করে, বিপদ আপদে যাদের কাছে ওরা কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা করে, তাদের এই ভ্রান্ত চিন্তা চেতনা অলীক কল্পনা সবই বাতিল, নির্জলা মিথ্যা, এদের কোনাে অস্তিত্ব নেই, কারাে ভক্তি শ্রদ্ধা বা পূজা অর্চনা পাওয়ার কোনাে অধিকার তাদের নেই, আসলে ওই মূর্খ নাদানেরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে চলেছে। নিশিদিন আল্লাহর যে সব নেয়ামত তারা লাভ করছে, তা তাদের অনুভব করা উচিৎ, যেসব নেয়ামতের মধ্যে তারা ডুবে রয়েছে তা খেয়াল করা দরকার। তার দেয়া সব কিছু সারাক্ষণ তারা ভােগ করা সত্তেও তাকেই তারা অস্বীকার করছে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর পূজা অর্চনা করছে, যাদের আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কোথাও থেকে কোনাে প্রকার রিযিক সরবরাহের ক্ষমতা নেই।'(আয়াত ৭৩) এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, ওরা ওদের স্বভাবজাত মানসিকতা থেকে এতাে বেশী দূরে সরে গেছে যে, নিজেরা তো সত্যকে স্বীকার করছেই না, বরং মানুষকেও এমন কিছুর অন্ধ আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ করছে যারা কোনাে কিছুরই মালিক নয় এবং কোনাে জিনিসের ওপর এক দিনের জন্যেও তারা কোনাে কর্তৃত্ব রাখে না অথবা কোনাে অবস্থাতেই কোনাে কিছু পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে না-অথচ ওই মূর্খ হঠকারী নাদানেরা স্বীকার করে যে, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা এবং তারই নেয়ামত ছড়িয়ে রয়েছে তাদের চোখের সামনে-যার কোনােটাকে তারা তার দেয়া নেয়ামত বলে অস্বীকার করতে পারে না। এরপরও তারা মনে করে আল্লাহর মতাে আরাে কেউ আছে বা আল্লাহর উদাহরণ দেয়ার ধৃষ্টতা করে। ‘অতএব, খবরদার আল্লাহর কোনাে সাদৃশ্য পেশ করাে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালাই সবকিছু জানেন, আর তােমরা কিছুই জান না।'(আয়াত ৭৪) অর্থাৎ কোনাে কিছু এমন নেই যার সাথে আল্লাহর তুলনা করা যেতে পারে। যার উদাহরণ দিয়ে আল্লাহকে বুঝানাে যেতে পারে, সুতরাং তার জন্যে কোনাে উদাহরণ দিয়াে না।
# *সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক নির্ণয়ে দুটি উদাহরণ : এরপর ওদের বিবেককে জাগিয়ে তােলার জন্যে এবং ওদের মধ্যে সঠিক চেতনা সৃষ্টি করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা দুটি উদাহরণ পেশ করছেন। এক. একজন হচ্ছে মনিব, বাড়ীর মালিক এবং জীবন যাপন উপযােগী সব কিছু সরবরাহকারী। দুই. অসহায় ও অক্ষম একজন দাস, যার নিজের বলতে কিছু নেই এবং সে এমনই অকেজো ব্যক্তি যে কিছুই রােযগার করার ক্ষমতা রাখে না। যারা ইচ্ছা করে সত্যকে জানা ও বুঝা থেকে উদাসীন হয়ে রয়েছে, তাদের জন্যে এ হচ্ছে এক মোক্ষম উদাহরণ, তাও যদি তারা না বুঝে বা বুঝতে না চায় তাহলে কীইবা করার আছে। সত্য বলতে কি আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই কিছুতেই তাকে কোনাে কিছুর উদাহরণ দিয়ে বুঝানাে যায় না, আর এই কারণেই যেভাবে তাঁর এবাদাত করা হয় তার হুকুম মানা হয়, এভাবে আর কারাে এবাদাত করা যায় না বিনা যুক্তিতে ও বিনা শর্তে আর কারাে কথা মানা যায় না, তার সৃষ্টির মধ্যে আর কারাে হুকুম মানা যায় না, কারণ যে সব বস্তুর সামনে ওরা মাথা নত করছে, সবাই তাই ওদের গােলাম হিসাবে খেদমত করে চলেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা উদাহরণ দিয়েছেন এমন একজন অধীনস্থ গােলামের যার কোনাে কিছুর ওপর কোনাে ক্ষমতা নেই, আর এক ব্যক্তির উদাহরণ দিচ্ছেন যার সম্পর্কে তিনি বলছেন, আমি তাকে উত্তম রিযিক দিয়েছি, অতপর তার থেকে সে গােপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে। এরা দুজন কি বরাবর হতে পারে? যাবতীয় প্রশংসা ও কৃতিত্ব আল্লাহর), কিন্তু ওদের অধিকাংশ জানেনা'(আয়াত ৭৫) আল্লাহ তায়ালা আরাে দু’ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন, ওদের একজন বােবা যে কোনাে কিছু করতে সক্ষম নয়, সে তার মনিবের ওপর বােঝা হয়ে রয়েছে…'(আয়াত ৭৬) প্রথম উদাহরণটি বাস্তব অবস্থা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, কারণ (যে সময়ে কথাগুলাে নাযিল হচ্ছিলাে সে সময়ে) তাদের অধীনস্থ অনেক দাস দাসী ছিলো, তারা কোনাে কিছুর মালিক ছিলাে না। ওই সমাজের লােকেরা এসব অক্ষম দাস দাসী ও মনিব শ্রেণীর লােক, যারা দান গ্ৰহণ করতো এদেরকে কখনও সমান মনে করতাে না। এমতাবস্থায় সকল দাস দাসীর পরিচালক ও মালিক যিনি, তিনি এবং যা তিনি সৃষ্টি করেছেন সেসব জিনিস ও সেই সব মানুষ কি করে সমান হবে? সকল সৃষ্টিই কি তাঁর বান্দা নয়? দ্বিতীয় উদাহরণটিতে এমন একজন মুক বধির ব্যক্তির অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তােলা হয়েছে যে সব কিছুর ব্যাপারেই দুর্বল এবং বুদ্ধির দিক দিয়েও সে আশানুরূপ নয়, সে কিছু বুঝে না এবং কিসে যে কল্যাণ তাও জানেনা, ফলে ভালাের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। অপরদিকে তার পাশেই রয়েছে আর এক ব্যক্তি যে শক্তিশালী বাকপটু এবং সুবিচারের সাথে কর্তৃত্ব করে, কল্যাণের পথে দৃঢ়তার সাথে কাজ করে চলে। কোনাে বুদ্ধিমান ব্যক্তি এই দুই শ্রেণীর লােককে এক সমান বলবে না, তা হলে ইট পাথরে অথবা মাটি দিয়ে তৈরী মূর্তি এবং পবিত্র আল্লাহ তায়ালা যিনি সব কিছু করতে সক্ষম, সবজান্তা, ভাল কাজের নির্দেশ দানকারী এবং সরল সঠিক ও মযবুত পথে পরিচালনাকারী এই দুই সত্ত্বা কেমন করে এক হবে, কোনাে বিবেকবান ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি এই দুই সত্ত্বাকে সমান মনে করবে? এ দুটি উদাহরণ প্রদানের সাথে আলােচ্য সেই অধ্যায়টি পেশ হচ্ছে যার সূচনা হয়েছিলাে আল্লাহর এই নির্দেশ দিয়ে যে, ওরা যেন দুজন ব্যক্তিকে চরম নির্বোধের মতাে সর্বশক্তিমান বা জীবন মৃত্যুর মালিক মনে না করে। আর পরিচ্ছেদটি শেষ হচ্ছে একথার ওপর বিস্ময় প্রকাশের সাথে যে, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বা সর্বশক্তিমান দু’জন হয় কেমন করে? ক্ষমতাকেও যদি একটা ইউনিট ধরা হয়, আর এটা যদি দুজনের মধ্যে বিভক্ত থাকে তাকে একজন ৫০% এবং এ অন্যজন বাকি ৫০% এর মালিক অথবা কম বেশী হলে ১০০% ক্ষমতার মালিক কেউ হতে পারছে না। এমতাবস্থায় খন্ডিত ক্ষমতার মালিককে সর্বশক্তিমান বলবে কোন বােকা? যেহেতু সর্ব থেকে কিছু বের হয়ে গেলে সর্ব তাে আর থাকে না। এরপর ক্ষমতা বলতেই বুঝায় সর্বময় ক্ষমতা যেমন দেশের ক্ষমতা এখানে একজনই হবে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী-তা না হলে অপর ক্ষমতাবানরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষমতা চালাবার চেষ্টা করবে আর এর ফলে অবশ্যই সৃষ্টি হবে বিশৃংখলা; কিন্তু, মুখে বললেও কোনাে ব্যক্তিকেই এরকম একচ্ছত্র ও নিরংকুশ ক্ষমতার মালিক মানুষ বেশী দিন মেনে নিতে পারে না। এ কারণেই বিদ্রোহ হয়, ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, হয় বিশৃংখলা ও খুন খারাবি আসলে এই সার্বভৌম ক্ষমতা বা নিরংকুশ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হতে পারে। যে দেশের মানুষ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে এবং একমাত্র তারই আইন বিধানকে চূড়ান্ত হিসাবে গ্রহণ করেছে, তারাই অশান্তি ও খুন খারাবি থেকে বেঁচে গেছে। সেখানে শান্তি এসেছে এজন্যে যে, পরিচালক ও পরিচালিত সবাই একই আইনের আনুসারী। সেখানে কারাে মতই চূড়ান্ত নয়।
# সংক্ষিপ্ত আলোচনা (৭৭-৮৯) : ‘আর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অজানা অদেখা ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর আর কেয়ামত সংঘটিত হওয়া সে তাে মাত্র চোখের এক পলকের ব্যাপার অথবা তার থেকেও নিকটবর্তী। তারা আল্লাহর নেয়ামতকে ভালােকরেই চিনে এরপরও তারা তা অস্বীকার করছে আর প্রকৃতপক্ষে ওদের অধিকাংশই কাফের সত্য অস্বীকারকারী।’ (আয়াত ৭৭-৮৩) ‘(স্মরণ করাে) যেদিন আমি, প্রত্যেক জনপদ থেকে একজনকে সাক্ষী হিসাবে উঠাবাে… আর (সেদিনের কথাও স্মরণ করাে) যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বয়ং তাদের থেকেই তাদের ওপর একজন সাক্ষী উথিত করবাে এবং এ লোকদের ওপর আমি তােমাকেও সাক্ষীরূপে নিয়ে আসবে…'(আয়াত ৮৪-৮৯) সূরাটির বর্তমান অধ্যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সার্বভৌমত্বকে কেন্দ্র করেই সমস্ত আলােচনা আবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ, সৃষ্টি কাজের বিশালত্ব, সবার প্রতি নেয়ামত বর্ষণ এবং সর্ববিষয়ে জ্ঞান রাখা- আয়াতগুলােতে এই গুণাবলীরই উল্লেখ রয়েছে। এখানে পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে কথা মুখ্যভাবে আসেনি। তবে অদেখা সকল রহস্যের মধ্যে কেয়ামত দিবসের জ্ঞান। অন্যতম বিধায় আল্লাহর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসাবে এ বিষয়ের বিবরণও আলােচ্য পরিচ্ছেদে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেহেতু কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারাে কাছে নেই এজন্যে এটা স্পষ্ট যে কেয়ামত সংঘটিত করার মালিকও একমাত্র তিনি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে এ কাজ অতি সহজ, এরশাদ হচ্ছে, ‘কেয়ামতের বিষয়টি মাত্র এক মুহূর্ত বা তার থেকেও কম সময়ের মধ্যে সংঘটিত হওয়ার বিষয়।’ অপরদিকে চিন্তা করুন, মায়ের গর্ভাশয়ে যে ভ্রণের জন্ম হয় তাও মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টির অন্তরালে, এজন্যে এটাও গায়েবেরই বিষয়, কাজেই এ গঠন প্রক্রিয়া কৌশল ও পদ্ধতি মানুষের কাছে চিরদিন রহস্যাবৃতই থাকবে। এই রহস্য ভেদ করেই আল্লাহর হুকুমে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে এই ভ্রুণ একটি পূর্ণাংগ মানব শিশু আকারে দুনিয়ার আলাে বাতাসে আভির্ভূত হয়। যখন এ বাচ্চা দুনিয়ায় আসে তখন পৃথিবীর পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই তার জানা থাকে না, তারপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে পর্যায়ক্রমে শােনার শক্তি, দেখার শক্তি ও অন্তর দিয়ে অনুভব করার শক্তি দান করেন, যাতে করে ওই ব্যক্তিরা তাঁর নেয়ামতের শােকরগােযারি করে। সৃষ্টির এই রহস্যাবলীর মধ্যে আরাে রয়েছে মহাশূন্যে এক বিশেষ নিয়মের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত থাকা অবস্থায় পাথীর উড্ডয়ন ও মহাশূণ্যে দীর্ঘক্ষণ উড়ে বেড়ানাের ক্ষমতা। একবার খেয়াল করে দেখুন ওই সুদুর মহাশূন্যে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কে তাদেরকে ধরে রাখে? নীচের আলােচনায় আরাে দেখা যাবে, মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বস্তুগত যেসব নেয়ামত দিয়েছেন তারও কিছু বিবরণ এখানে এসেছে-এখানেও দেখা যায় অদৃশ্য এক শক্তিশালী হাত মানুষের যাবতীয় জীবন সামগ্রীকে এক বিশেষ নিয়মের অধীনে তার কাছে পৌছে দিচ্ছে। যে গৃহে সে বাস করে তার মধ্যে ছায়া লাভ করা, শান্তি-শৃংখলা ও আরাম আয়েশ ভােগ করা এসব তাে তাঁরই দান। বাড়িঘরের মধ্যে যেমন রয়েছে মযবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাড়ী ঘর তেমনি রয়েছে পশুর চামড়ায় তৈরী ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী তাঁবুর ঘর। এসব ঘরকে ভ্রাম্যমাণ বাড়ী হিসাবে যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনি দীর্ঘস্থায়ী বাড়ী হিসাবেও অনেক সময়ে এগুলােকে ব্যবহার করা হয়, আবার এরই মধ্যে মানুষ পশম ছোটো চুল ও বড় চুল দ্বারা নানা প্রকার আসবাবপত্র তৈরী করে জীবনের প্রয়ােজন মেটায় এবং আরাে প্রস্তুত করে নানা প্রকার আমােদ-প্রমােদের উপকরণাদি । এভাবে সে তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিতেও পায় সুশীতল স্নিগ্ধ ছায়া, আরামদায়ক বাসস্থান ও দেহাবরণের জন্যে প্রয়ােজনীয় পরিধেয় বস্ত্র, চাদর ও এমন পােষাক যার দ্বারা গ্রীষ্মের তাপ থেকে সে রক্ষা পায়। যুদ্ধের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে নানা প্রকার বর্মও সে এইসব উপকরণ দিয়ে তৈরী করে। এরশাদ হচ্ছে, ‘এমনি করে আল্লাহ তায়ালা তােমাদের ওপর তার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করেন, যেন তােমরা তার কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করো।’ এরপর বিস্তারিতভাবে আসছে পুনরুত্থান দিবসের বিবরণ, যা মােশরেক ও তাদের দোসরদের কাছে সমভাবে হাযির হচ্ছে, আর রসূলরা এই সব সত্য তথ্য তাদের সামনে হাযির করে তাদের ওপর সত্যের সাক্ষী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন, রসূলুল্লাহ(স.) ও তার জাতির কাছে সত্যের বাস্তব সাক্ষী হিসাবে এসেছিলেন। এইভাবে পুনরুত্থান ও কেয়ামত সম্পর্কিত বর্ণনা এ অধ্যায়ে এখানেই শেষ হচ্ছে। *তাফসীর :  *কেয়ামত খুবই কাছে : ‘আসমানসমূহ ও যমীনের গােপন রহস্য একমাত্র আল্লাহর কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি তো চোখের একটি পলকের মতাে অথবা তার থেকেও নিকটতর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু করতে সক্ষম।’ মৃত্যুর পর আবার জীবিত হওয়ার বিষয় ঈমানের সাথে জড়িত বিষয়গুলোর অন্যতম, যা নিয়ে প্রত্যেক যামানায় কঠিন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, ঝগড়া লেগেছে এবং প্রত্যেক রসূলকেই এই কঠিন প্রশ্নের সমুখীন হতে হয়েছে। যে সব বিষয় বিশেষভাবে আল্লাহর জ্ঞান ভান্ডারের মধ্যে রয়েছে, মৃত্যুর পর আবার জীবিত হওয়ার বিষয়টি তার অন্যতম । আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য যা কিছু আছে তার মালিক আল্লাহ তায়ালা, পৃথিবীর যতাে জ্ঞান যতাে সম্পদ ও শক্তির মালিকই মানুষ হোক না কেন কেয়ামতের সেই কঠিন দিনে কতাে অক্ষম ও অসহায় অবস্থায় পড়ে যাবে তা কারাে বুঝার ক্ষমতা নেই, মানুষের মধ্যে যে যতাে জ্ঞানীই হােক না কেন কেয়ামত সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং অসহায়। সে ধারনাও করতে পারবেনা যে একটুপরে তার সাথে কী ব্যবহার করা হবে, তার রূহ যা মৃত্যুর সাথে সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে তা কি কখনও আবার ফিরে আসবে? না, আসবে না এবং তার আশা-আকাংখা চিরদিনের মতাে শেষ হয়ে যাবে। তার তাকদীরে কি আছে সবই তাে গায়েবের পর্দার আড়ালে গােপন রয়েছে, সে জানে না, কখন হঠাৎ করে তার পরিসমাপ্তি ঘটবে। তাদের ওপর মৃত্যু হঠাৎ করে এবং কোনাে নােটিশ না দিয়েই এসে পড়বে, আর এটা তাে অবশ্যই মানুষের জন্যে আল্লাহর এক রহমত, যে বর্তমান সময়ের পর কী ঘটতে যাচ্ছে তা সে ভুলে থাকে, যাতে করে সে এ জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, কাজ করতে পারে তার ফল পেতে পারে এবং পৃথিবীতে উন্নত জীবন যাপন করতে পারে। সাথে সাথে যেন তাদের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে রূখে দাঁড়াতে পারে যারা পর্দার অন্তরালে থেকে ওদের ভীষণ ক্ষতি করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আর কেয়ামতও এই গায়েবের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিষয়গুলাের একটি। মানুষ যদি তার পরিণতির কথা জানতাে তাহলে তার জীবনের চাকা একেবারেই থেমে যেতাে, অথবা সে সম্পূর্ণভাবে কাজ কর্ম করা ছেড়ে দিতাে। গায়েবের অবস্থা জানা না থাকায় মানুষ তার শক্তি সামর্থকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু জীবন তার সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত এক বিশেষ গতিতেই চলছে, যা তার তাকদীরে পূর্ব থেকে লেখা রয়েছে। এভাবে মানুষ বছর, দিন, মাস, ঘন্টা ও মুহূর্তগুলাে গণনা করতে করতে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘আর কেয়ামতের বিষয়টি হচ্ছে একটি মাত্র মুহূর্তের মতাে, অথবা তার থেকেও আরাে নিকটবর্তী। প্রকৃতপক্ষে কেয়ামত খুব কাছেই রয়েছে যদিও আমরা তাকে অনেক অনেক দূরে মনে করি, মানুষের জানা গণনা করা বা হিসাব ক্ষমতার থেকেও কাছে। একারণে তার কাছে কোনাে প্রস্তুতি গ্রহণ করার সময় নেই বা থাকবে না, চোখের এক পলকের মধ্যে এটা সংঘটিত হয়ে যাবে। আসলে প্রত্যেকে মৃত্যু আসার সাথে সাথেই কেয়ামতের মজা টের পেয়ে যায়-তখন তার যে অবস্থা হয় সেই অবস্থাটাই তাে তার একার জন্যে কেয়ামত। মৃত্যুকালে কেয়ামতের সকল আলামত প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে ফুটে ওঠে। এইভাবে প্রতিটি মৃত্যুপথযাত্রীর সামনে কেয়ামতের বিভীষিকা হাযির করে দেয়া আল্লাহর কাছে অতি সহজ কাজ। এজন্যে এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু করতে সক্ষম।’ আর সকল সৃষ্টির মধ্য থেকে ছাঁটাই করে একমাত্র মানবমন্ডলীকে কেয়ামতের দিন মাটির মধ্য থেকে তুলে নেয়া এবং হাশরের মাঠে একত্রিত করা মানুষের কল্পনার বাইরে হলেও আল্লাহর কাছে এটা কোনাে ব্যাপারই নয়, এধরনের সর্বপ্রকার অকল্পনীয় সব কিছু তিনি করতে সম্পূর্ণ সক্ষম । তার হুকুমে কেয়ামত সংঘটিত হবে যার প্রকম্পনে সব কিছুই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং সবাই উর্ধশ্বাসে আদিগন্তব্যাপী হাশরের ময়দানে ছুটোছুটি করতে করতে অবশেষে আল্লাহর দরবারে সমবেত হয়ে যাবে এবং হিসাব নিকাশের পর পুরস্কার অথবা শাস্তির ফয়সালার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকবে। এভাবে সকল কিছু পূর্ব পরিকল্পিত অবস্থায় গায়েবের মধ্যে রয়েছে এবং সব কিছুকে পর্যায়ক্রমে এবং সময় মতাে সংঘটিত করা মহা ক্ষমতাবান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অতি সহজ কাজ। সে সময়ে তিনি শুধু বলবেন, ‘হয়ে যাও’ অমনি হয়ে যাবে। এভাবে মােমেনদের কাছে কেয়ামতের বিষয়টি অত্যন্ত সহজ বলে মনে হয়, আর যারা মানুষের সংকীর্ণ দৃষ্টিশক্তি ও অত্যন্ত সীমাবদ্ধ অনুমান ক্ষমতার ভিত্তিতে কেয়ামতকে বুঝতে চায় তাদের কাছেই কেয়ামত সংঘটিত হওয়াটা বড়ই কঠিন ও বড়ই বিস্ময়কর বলে মনে হয়। তারা মানুষের সীমাবদ্ধ ও সংকীর্ণ দৃষ্টি দিয়ে সব কিছু দেখে। মানুষের অতি সীমাবদ্ধ ক্ষমতাকে কেন্দ্র যার যাদের চিন্তা চেতনা আবর্তন করে তাদের এর বাস্তবতা উপলব্দি করা সম্ভব নয়।
# *আল্লাহকে চিনতে এই উপমাগুলােই যথেষ্ট : মহাগ্রন্থ আল কোরআন মানুষের জীবনের ছােট্ট একটি ঘটনা দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে বিরাজমান আল্লাহর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা তার শক্তি ক্ষমতা ও সৃষ্টি জগতের সর্বত্র তার উপস্থিতির বিষয়টি বুঝানাের প্রয়াস পেয়েছে। মানুষ যা কিছু করতে চায়, তার সমস্ত শক্তি প্রয়ােগ করেও তা করতে পারে না, এমনকি অনেক বিষয়ে চিন্তা করতেও সে অক্ষম হয়ে যায়। এ অবস্থাটা দিন রাত ঘটছে। সামান্য একটু খেয়াল করলেই একথার যথার্থতা মানুষ বুঝবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে তােমাদের মায়ের পেটের মধ্য থেকে এমন (অসহায়) অবস্থায় বের করেছেন যে তােমরা কিছুই জানতে না, অতপর তোমাদের জন্যে কান, চোখ ও হৃদয় বানিয়ে দিয়েছেন, যেন তােমরা তার কৃতজ্ঞতা আদায় করাে।'(আয়াত ৭৮) এই যে উদাহরণটি পেশ করা হলাে, এটা খুব কাছাকাছির একটি অদেখা বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কিত উদাহরণ, কিন্তু বিষয়টি বড়ােই সুদূরপ্রসারী, অথচ মাতৃগর্ভে ক্রমান্বয়ে ও ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ভ্রুণের অবস্থা আজকাল মানুষ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু এটা কিভাবে পরিপূর্ণ বাচ্চার রূপ নেবে তা সে জানেনা, কারণ এর রহস্যই জীবনের গােপন রহস্য। এই তাে হচ্ছে মানুষের জ্ঞান ও বিদ্যার দৌড়, এরপর সে আবার কেয়ামত ও অন্যান্য গায়েবী বিষয় জানতে চায়, দাবী করে তাকে এ বিষয়ে জানানাে হােক। বস্তুতপক্ষে, তার জ্ঞান হচ্ছে অতি ক্ষণস্থায়ী এবং বড়ো কষ্ট করেই এই জ্ঞান তাকে অর্জন করতে হয়, অথচ ইচ্ছা করলেও যতােদিন খুশী তা ধরে রাখা যায় না। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে তােমাদের মায়ের পেট থেকে বের করেছেন এমন অসহায় অবস্থায় যে তােমরা কিছুই জানতে না’ অর্থাৎ তােমাদের কোনাে জ্ঞান ছিলাে না। প্রকৃতপক্ষে গােটা বিশ্ব জগতই তাে মানুষের জন্ম স্থান, অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষই বিশ্বজনীন নাগরিক এবং বিশ্বের সব কিছুই তার বিবেচ্য বিষয়, তবে মাতৃগর্ভ থেকে তার বেরিয়ে আসার বিষয়টি হচ্ছে সব থেকে কাছাকাছির বিষয় এবং সব থেকে কাছের যে জায়গা থেকে সে সরাসরি ভূমিষ্ট হচ্ছে, তা খুবই কাছের এবং তা মানুষের জ্ঞানের আওতাভুক্ত স্থান। সেখান থেকে সে একেবারেই জ্ঞানহীন বা না-দান হিসাবে বেরিয়ে আসছে। এরপর সে যা কিছু (জ্ঞান) অর্জন করছে তা অবশ্যই আল্লাহর দান এবং তার পরিমাপ ততােটুকুই যতােটুক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার তাকদীরে লিখে রেখেছেন এবং অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাই তার জন্যে তা নির্ধারণ করে রেখেছেন, আর তার জীবনকে সৃষ্টি জগতের মধ্যে অবস্থিত এই গ্রহের জন্যেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই তিনি জানাচ্ছেন, তিনি বানিয়েছেন তােমাদের জন্যে কান, চোখ ও হৃদয় এবং তার বক্ষস্থিত সকল কলকব্জা। ‘যেন তােমরা শোকরগুজারী করো’ অর্থাৎ, যখন তােমরা দুনিয়ার বুকে আল্লাহর দেয়া এসব নেয়ামতের মূল্য অনুভব করবে, অনুভব করবে যে আল্লাহর মেহেরবানী সদা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে তােমাদের পরবর্তী জীবনের জন্যে, তখন কৃতজ্ঞতা ভরে তােমাদের দেহ মন ও হৃদয় সব কিছু আল্লাহর দরবারে ঝুঁকে পড়বে; আর শােকরিয়া আদায়ের জন্যে প্রথম কথাই হচ্ছে আল্লাহর ওপর ঈমান আনা, তার শক্তি ও ক্ষমতার ওপর আস্থা স্থাপন করা, যিনি একমাত্র মাবুদ একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করতে হবে নিরংকুশ ও নিঃশর্তভাবে।
# আল্লাহ রব্বল আলামীনের সার্বভৌম ক্ষমতার যেসব বহিপ্রকাশ ও নিদর্শন তাদের চোখের সামনে এবং আশে পাশে নিশিদিন তারা দেখতে পাচ্ছে সেগুলােও তাদের মনের মধ্যে যে এটুকু চিন্তা ভাবনা জাগায় না-এটাও আর একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। এরশাদ হচ্ছে, ‘এরা কি সুদূর আকাশের শূণ্যগর্ভে (উড়ন্ত) পাখিটির দিকে তাকিয়ে দেখেনা? এক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এদেরকে শুন্যের মাঝে কে স্থির করে রাখে? অবশ্যই এর মধ্যে ঈমানদার জাতির জন্যে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।’ আকাশের ওই মহাশূণ্যতায় পাখীকূলের নিয়ন্ত্রিতভাবে উড়ে বেড়ানাে এমন একটি দৃশ্য যা আমাদের নযরে বার বার পড়ে। আশ্চার্যান্বিত হয়ে মানুষ যখন এ চমকপ্রদ দৃশ্য দেখে তখন তার হৃদয়ের এক অভূতপূর্ব আবেগের সৃষ্টি হয়। যখন সে জেগে থাকে তখনই তাে তার নযরে এ দৃশ্য পড়ে এবং তার হৃদয়ে এক ভাবের আবেগ সৃষ্টি হয়, বস্তুত সে তখন আনন্দে আত্মহারা এক কবির দৃষ্টি দিয়ে এসব দৃশ্য দেখে ও উপভােগ করে, আর কোনাে কবি মুগ্ধ নয়নে যখন এ পাখীর দৃশ্য অবলােকন করে, তখন সে খুশীতে ও ভাবের আবেগে কাব্য রচনায় মগ্ন হয়ে যায়, অতপর চির পুরাতন ও চির নতুন এ দৃশ্য তাকে প্রকম্পিত করতে থাকে। আবেগের আতিশয্যে তার মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে, ’একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আকাশের ওই মহা শূন্যতায় ওদেরে কেউ ধরে রাখছে না।’ তিনি পাখীর প্রকৃতির মধ্যে যে শক্তি দিয়েছেন এবং সারাবিশ্বের মধ্যে যে নিয়ম চালু রেখেছেন সেই নিয়ম অনুযায়ীই পাখীরা ঐ মহাশূন্যে এভাবে উড়তে পারে। তার ওই ক্ষমতার রশিতে বাঁধা থাকার কারণেই ওই মহাশূণ্যলােক ও আশ-পাশের সমস্ত পরিবেশে ওই পাখীগুলােকে মহাকাশে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। আকাশকে পাখীর উড্ডয়নের উপযােগী করে তােলা হয়েছে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান তিনিই এই পাখিগুলোকে সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত মহাশূন্যে উড়বার এই ক্ষমতা দিয়েছেন এবং তার আশে পাশের পরিবেশকেও পাখীকুলের উড়ে বেড়ানাের জন্যে উপযােগী বানিয়েছেন, তিনিই ওই মহাকাশের শূণ্যতায় পাখীদেরকে ধরে রেখেছেন, তারা এতাে দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে থাকা সত্তেও ক্লান্ত হয় না এবং নীচের দিকে পড়ে যায় না। এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই এর মধ্যে ঈমানদার জাতির জন্যে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।’ সুতরাং, এটা নিশ্চিত যে প্রত্যেক মােমেনের অন্তর মন হচ্ছে কবিদের আবেগে ভরা মনের মতােই সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখে আবেগে আপ্লুত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রূপ মাধুর্যবাহী এ বিশ্ব প্রকৃতিতে ছড়িয়ে রয়েছে যে মাধুরী, দিবানিশি ঝংকৃত হচ্ছে যে সুরলহরী এসব কিছু একজন মােমেনের আবেগকে প্রচন্ডভাবে আন্দোলিত করতে থাকে, তার বিবেককে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তােলে এবং তখন সে তার গভীর বিশ্বাস আনুগত্যবােধ ও ভক্তিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর তাসবীহ জপতে থাকে। এইভাবে সে তার বিমুগ্ধ ও পুলকিত মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে এই মােমেনরা আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্রের সঠিক ব্যাখ্যা বিবরণ জানতে পেরে কৃতার্থ বােধ করে এবং তারা নানা বর্ণের সৃষ্টি বৈচিত্রের মধ্যে নিহিত আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনাকারী কথাগুলাের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারে। তাই দেখা যায়, মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বর্ণিত সৃষ্টি লীলা সম্পর্কিত কথাগুলাে তাকে এতােবেশী আবেগাপ্লুত করতে সক্ষম হয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যারা তার সাথে অন্যের ইবাদত করে। তিনি বলেনঃ “নিয়ামত দানকারী, সষ্টিকারী, রুযী দাতা একমাত্র আল্লাহ। তার কোন অংশীদার নেই। আর এই মুশরিকরা আল্লাহর সাথে যাদের ইবাদত করছে তারা না পারে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে, না পারে যমীন থেকে শস্য ও গাছ পালা জন্মাতে। তারা যদি সবাই মিলিতভাবেও চেষ্টা করে, তবুও এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত বর্ষণ করতে সক্ষমহবে না। তারা একটা পাতাও পয়দা করার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং হে মুশরিকদের দল! তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকেও তুলনা করো না এবং তাঁর শরীক ও তাঁর মত কাউকেও মনে করো না। আল্লাহ আলেম ও জ্ঞানী। তিনি তার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নিজের তাওহীদের সাক্ষ্য দিচ্ছেন। আর তোমরা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে অন্যদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিয়েছে।
# ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রভৃতি গুরুজন বলেন যে, এটা হচ্ছে কাফির ও মুমিনের দৃষ্টান্ত। অপরের অধিকারভূক্ত দাসের দ্বারা কাফির এবং উত্তম রিযক প্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা মুমিনকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রাঃ) বলেন যে, এই দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রতিমা ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে প্রভেদ বুঝানোই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এটা ও ওটা সমান নয়। এই দৃষ্টান্তের পার্থক্য এতো স্পষ্ট যে, এটা বলার কোন প্রয়োজন হয় না। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেন যে, প্রশংসার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ। অথচ তাদের অধিকাংশই এটা জানে না।
# মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “এই দৃষ্টান্ত দ্বারাও ঐ পার্থক্য দেখানো উদ্দেশ্য, যা আল্লাহ তাআলা ও মুশরিকদের প্রতিমাগুলির মধ্যে রয়েছে। এই প্রতিমা হচ্ছে। বোবা। সে কথা বলতেও পারে না, কোন জিনিসের উপর ক্ষমতাও রাখে না। কথা ও কাজ এ দুটো থেকেই সে শূন্য। সে শুধু তার মালিকের উপর বোঝাস্বরূপ। সে যেখানেই যাক না কেন, কোন মঙ্গল আনতে পারে না। সুতরাং এক তো হলো এই ব্যক্তি। আর এক ব্যক্তি, যে ন্যায়ের হুকুম করে থাকে এবং নিজে রয়েছে সরল সোজা পথের উপর অর্থাৎ, কথা ও কাজ এই উভয় দিক দিয়েও ভাল। এ দু’জন কি করে সমান হতে পারে?”

একটি উক্তি রয়েছে যে, মূক দ্বারা হযরত উসমানের (রাঃ) গোলামকে বুঝানো হয়েছে। আবার এও হতে পারে যে, এটাও মুমিন ও কাফিরের দৃষ্টান্ত। যেমন এর পূর্ববর্তী আয়াতে ছিল। কথিত আছে যে, কুরায়েশের এক ব্যক্তির গোলামের বর্ণনা পূর্বে রয়েছে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি দ্বারা হযরত উসমানকে (রাঃ) বুঝানো হয়েছে। আর বোঝা গোলাম দ্বারা হযরত উসামনের (রাঃ) ঐ গোলামটিকে বুঝানো হয়েছে যার উপর তিনি খরচ করতেন, অথচ সে তাঁকে কষ্ট দিতো। তিনি তাকে কাজ-কর্ম হতে মুক্তি দিয়ে রেখে ছিলেন, তথাপি সে ইসলাম থেকে বিমুখই ছিল এবং তাঁকে দান খায়রাত ও পূণ্যের কাজ থেকে বাধা প্রদান করতো। তারই ব্যাপারেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

# আল্লাহ তাআলা স্বীয় পূর্ণজ্ঞান ও পূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যমীন ও আসমানের অদৃশ্যের খবর তিনিই রাখেন। কেউ এমন নেই যে, অদৃশ্যের খবর জানতে পারে। তিনি যাকে যে জিনিসের খবর অবহিত করেন সে তখন তা জানতে পারে। প্রত্যেক জিনিসই তার ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। কেউ তাঁর বিপরীত করতে পারে না, কেউ তাকে বাধা প্রদানও করতে পারে না। যখন যে কাজের তিনি ইচ্ছা করেন তখনই তা করতে পারেন। হে মানুষ! তোমাদের চক্ষু বন্ধ করার পর তা খুলতে তো কিছু সময় লাগে, কিন্তু আল্লাহর হুকুম পুরো হতে ততটুকুও সময় লাগে না। কিয়ামত আনয়নও তাঁর কাছে এরূপই সহজ ওটাও হুকুম হওয়া মাত্রই সংঘটিত হয়ে যাবে। একজনকে সৃষ্টি করা এবং অনেককে সৃষ্টি করা তাঁর কাছে সমান।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ সম্পর্কে চিন্তা করে দেখো, তিনি মানুষকে মায়ের গর্ভ হতে বের করেছেন। তখন তারা ছিল সম্পূর্ণরূপে শক্তিহীন। তারপর তিনি তাদেরকে শুনবার জন্যে কান দিলেন, দেখবার জন্যে দিলেন চক্ষু এবং বুঝবার জন্যে দিলেন জ্ঞান-বুদ্ধি। জ্ঞান-বুদ্ধির স্থান হচ্ছে। হৃদয়। কেউ কেউ মস্তিষ্কও বলেছেন। জ্ঞান ও বিবেক দ্বারাই লাভ ও ক্ষতি জানতে পারা যায়। এই শক্তি ও এই ইন্দ্রিয় মানুষকে ক্রমান্বয়ে অল্প অল্প করে দেয়া হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পূর্ণতায় পৌঁছে যায়। মানুষকে এ সব এ জন্যেই দেয়া হয়েছে যে, তারা এ গুলোকে আল্লাহর মারেফাত ও ইবাদতে লাগিয়ে দেবে।” যেমন সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “যারা আমার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা করে তারা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আমার ফরজ আদায় করার মাধ্যমে বান্দা আমার যতটা নৈকট্য ও বন্ধুত্ব লাভ করে এতটা আর কিছুর মাধ্যমে করতে পারে না। খুব বেশী বেশী নফল আদায় করতে করতে বান্দা আমার নৈকট্য লাভে সমর্থ হয় এবং আমার বন্ধু হয়ে যায়। যখন আমি তাকে মুহব্বত করতে শুরু করি তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যার দ্বারা শুনে, আমিই তার চক্ষু হয়ে যাই যার দ্বারা সে দেখে, আমিই তার হাত হয়ে যাই যার দ্বারা সে ধারণ করে এবং আমিই তার পা হয়ে যাই যার দ্বারা সে চলে-ফিরে। সে আমার কাছে চাইলে আমি তাকে দিয়ে থাকি। আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। আমি কোন কাজে ততো ইতস্ততঃ করি না যতো ইতস্তত করি আমার মুমিন বান্দার রূহ কব করতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে এবং আমি তাঁকে অসন্তুষ্ট করতে চাই না। কিন্তু মৃত্যু এমনই যে, কোন প্রাণীই এর থেকে রেহাই পেতে পারে না।”

এই হাদীসের ভাবার্থ এই যে, মু’মিন যখন আন্তরিকতা ও আনুগত্যে পূর্ণতা লাভ করে তখন তার সমস্ত কাজ শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্যে হয়ে থাকে। সে শুনে আল্লাহর জন্যে, দেখে আল্লাহর জন্যে। অর্থাৎ সে শরীয়তের কথা শুনে এবং শরীয়তে যেগুলি দেখা জায়েয রয়েছে সেগুলিই দেখে থাকে। অনুরূপ ভাবে তার হাত বাড়ানো এবং পা চালানোও আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজের জন্যেই হয়ে থাকে। সে আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে এবং তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তার সমস্ত কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। কোন কোন গায়ের সহীহ হাদীসে এরপর নিম্নলিখিত কথাও এসেছেঃ “অতপর সে আমার জন্যেই শ্রবণ করে, আমার জন্যেই দর্শন করে , আমার জন্যেই ধারণ করে এবং আমার জন্যেই চলাফেরা করে।” এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি, এবং হৃদয় যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি বলঃ তিনিই (আল্লাহই) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় দিয়েছেন, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। তুমি বলঃ তিনিই তোমারেকে ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে একত্রিত করা হবে।” (৬৭:২৩-২৪)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেনঃ “তোমরা কি আকাশের শূন্য গর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিগুলির দিকে লক্ষ্য কর না? আল্লাহ তাআলাই ওগুলিকে স্বীয় ক্ষমতা বলে স্থির রাখেন। তিনিই ওদেরকে এভাবে উড়বার শক্তি দান করেছেন এবং বায়ুকে ওদের অনুগত করে দিয়েছেন।” সূরায়ে মুলকের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা কি লক্ষ্য করে না, তাদের ঊর্ধ্বদেশে বিহঙ্গকুলের প্রতি যারা পক্ষ বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।” এখানেও আল্লাহ তাআলা সমাপ্তি টেনে বলেনঃ “এতে ঈমানদারদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 73-79
[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۷۹﴾
Indeed in that are signs for a people who believe.]
Denouncing the Worship of anything besides Allah

Allah tells

وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ

And they worship others besides Allah,

Allah tells us about the Mushrikin who worship others besides Him, even though He alone is the bountiful Provider, the Creator and Sustainer, without partners or associates, but they still worship idols and make rivals for Him.

He says:

مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ شَيْيًا

such as do not have power to grant them any provision from the heavens or the earth,

meaning, nobody can cause rain to fall, or make plants and trees grow.

وَلَا يَسْتَطِيعُونَ

nor the ability to do so.

They cannot do these things for them- selves, even if they wanted to.

Thus Allah says.
فَلَ تَضْرِبُواْ لِلّهِ الَامْثَالَ

So do not give examples on behalf of Allah.

meaning, do not set up rivals to Him or describe anything as being like Him.

إِنَّ اللّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

Truly, Allah knows and you know not.

meaning, He knows and bears witness that there is no god but Him, but you are ignorant and associate others in worship with Him.
The Example of the Believer and the Disbeliever, or the Idol and the True God

Allah tells:

ضَرَبَ اللّهُ مَثَلً عَبْدًا مَّمْلُوكًا لاَّ يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ

16:75 Allah gives the example of a servant under the possession of another, he has no power of any sort, and a man on whom We have bestowed good provisions from Us, and he spends from that secretly and openly. Can they be equal (By no means).

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

“This is the example which Allah gives of the disbeliever and the believer.”

This was also the view of Qatadah and Ibn Jarir.

The servant who has no power over anything is like the disbeliever, and the one who is given good provisions and spends of them secretly and openly is like the believer.

Ibn Abi Najih reported that Mujahid said:

“This is an example given of the idol and the True God – can they be the same!” Once the difference between them is so clear and so obvious, no one can be unaware of it except the one who is foolish.

Allah says:

الْحَمْدُ لِلّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

All the praises and thanks are to Allah.

Nay! (But) most of them know not.
Another Example

Allah tells:

وَضَرَبَ اللّهُ مَثَلً رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَىَ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلاهُ

And Allah gives an example of two men, one of them dumb, who has no power over anything, and he is a burden on his master;

Mujahid said,

“This also refers to idols and the True God, may He be exalted.”

Meaning that the idol is dumb and cannot speak or say anything, good or otherwise. It cannot do anything at all, no words, no action, it is dependent and is a burden on its master.

أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ

whichever way he directs him,

meaning, wherever he sends him.

لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ

he brings no good.

meaning, he does not succeed in what he wants.

هَلْ يَسْتَوِي

Is such a man equal,

meaning, a man who has these attributes,

هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ

to one who commands justice,

meaning fairness, one whose words are true and whose deeds are righteous.

وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

and is himself on the straight path.

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

“This is also an example of the disbeliever and the believer,” as in the previous Ayah.
The Unseen belongs to Allah and only He has Knowledge of the Hour

Allah says:

وَلِلّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ

And to Allah belongs the Unseen of the heavens and the earth.

Allah tells us of the perfection of His knowledge and ability to do all things, by telling us that He alone knows the Unseen of the heavens and the earth. No one knows anything about such things except for what Allah informs about as He wills.

His complete power, which no one can oppose or resist, means that when He wants a thing, He only has to say to it “Be!” and it is, as Allah says:

وَمَأ أَمْرُنَأ إِلاَّ وَحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ

And Our commandment is but one as the twinkling of an eye. (54:50)

meaning, whatever He wills happens in blinking.

Thus Allah says here:

وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلاَّ كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

And the matter of the Hour is not but as a twinkling of the eye, or even nearer. Truly, Allah is Able to do all things.

Elsewhere, Allah says:

مَّا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ إِلاَّ كَنَفْسٍ وَحِدَةٍ

The processes of creating you all and resurrecting you all are but like that of (the creation and resurrection of) a single person. (31:28)
Among the Favors Allah has granted People are Hearing, Sight and the Heart

Allah says:

وَاللّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْيًا وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالَابْصَارَ وَالَافْيِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
And Allah has brought you out from the wombs of your mothers while you knew nothing. And He gave you hearing, sight, and hearts, that you might give thanks.

Allah mentions His blessings to His servants in that He brought them from their mothers’ wombs not knowing a thing, then He gives them hearing to recognize voices, sight to see visible things and hearts – meaning reason – whose seat, according to the correct view, is the heart, although it was also said that its seat is the brain. With his reason, a person can distinguish between what is harmful and what is beneficial.

These abilities and senses develop gradually in man. The more he grows, the more his hearing, vision and reason increase, until they reach their peak.

Allah has created these faculties in man to enable him to worship his Lord, so he uses all these organs, abilities and strengths to obey his Master.

Al-Bukhari reported in his Sahih from Abu Hurayrah that the Messenger of Allah said:

يَقُولُ تَعَالَى

مَنْ عَادَىىِلي وَلِيًّا فَقَدْ بَارَزَنِي بِالْحَرْبِ

وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ أَدَاءِ مَا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَلَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ

فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا

وَلَيِنْ سَأَلَنِي لَاُعْطِيَنَّهُ وَلَيِنْ دَعَانِي لَاُجِيبَنَّهُ وَلَيِنِ اسْتَعَاذَ بِي لَاُعِيذَنَّهُ

وَمَا تَرَدَّدْتُ فِي شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي فِي قَبْضِ نَفْسِ عَبْدِي الْمُوْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ وَلَا بُدَّ لَهُ مِنْه

Allah says:

“Whoever takes My friend as an enemy, has declared war on Me.

My servant does not draw near to Me with anything better than his doing that which I have enjoined upon him, and My servant keeps drawing near to Me by doing Nawafil (supererogatory) deeds until I love him.

And when I love him, I am his hearing with which he hears, his vision with which he sees, his hand with which he strikes and his foot with which he walks.

Were he to ask Me for anything, I would give it to him, if he were to call on Me, I would respond, if he were to seek Me for refuge I would surely grant him it.

I do not hesitate to do anything as I hesitate to take the soul of My believing servant, because he hates death and I hate to upset him, but it is inevitable.”

The meaning of the Hadith is that when a person is sincere in his obedience towards Allah, all his deeds are done for the sake of Allah, so he only hears for the sake of Allah, he only sees for the sake of Allah – meaning he only listens to or looks at what has been allowed by Allah. He does not strike or walk except in obedience to Allah, seeking Allah’s help in all of these things. Thus in some versions of the Hadith, narrated outside the Sahih, after the phrase “his foot with which he walks”, there is added:

فَبِي يَسْمَعُ وَبِي يُبْصِرُ وَبِي يَبْطِشُ وَبِي يَمْشِي

So through Me he hears, through Me he sees, through Me he strikes and through Me he walks.

Thus Allah says:

وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالَابْصَارَ وَالَافْيِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

And He gave you hearing, sight, and hearts that you might give thanks.

Elsewhere, He says:

قُلْ هُوَ الَّذِى أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالاٌّبْصَـرَ وَالاٌّفْيِدَةَ قَلِيلً مَّا تَشْكُرُونَ

قُلْ هُوَ الَّذِى ذَرَأَكُمْ فِى الاٌّرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

Say it is He Who has created you, and endowed you with hearing and seeing, and hearts. Little thanks you give.

Say:”It is He Who has created you on the earth, and to Him shall you be gathered (in the Hereafter).” (67:23-24)
In the Subjection of the Birds in the Sky there is a Sign

Allah says.
أَلَمْ يَرَوْاْ إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاء مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلاَّ اللّهُ

Do they not see the birds held (flying) in the midst of the sky! None holds them up but Allah.

Then Allah tells His servants to look at the birds held (flying) in the sky, between heaven and earth, and how He has caused them to fly with their wings in the sky. They are held up only by Him, it is He Who gave them the strength to do that, subjecting the air to carry them and support them. As Allah says in Surah Al-Mulk:

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ فَوْقَهُمْ صَــفَّـتٍ وَيَقْبِضْنَ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلاَّ الرَّحْمَـنُ إِنَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ بَصِيرٌ

Do they not see the birds above them, spreading their wings out and folding them in None holds them up except the Most Gracious (Allah). Verily, He is the All-Seer of everything. (67:19)

And here Allah says:

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يُوْمِنُونَ

Verily, in this are clear signs for people who believe.

Leave a Reply