أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 815)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৮০-৮৩ নং আয়াত:-
[ وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡۢ بُیُوۡتِکُمۡ سَکَنًا
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেছেন তোমাদের বিশ্রাম স্থল।
And Allah has made for you from your homes a place of rest,]
www.motaher21.net
وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡۢ بُیُوۡتِکُمۡ سَکَنًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡ جُلُوۡدِ الۡاَنۡعَامِ بُیُوۡتًا تَسۡتَخِفُّوۡنَہَا یَوۡمَ ظَعۡنِکُمۡ وَ یَوۡمَ اِقَامَتِکُمۡ ۙ وَ مِنۡ اَصۡوَافِہَا وَ اَوۡبَارِہَا وَ اَشۡعَارِہَاۤ اَثَاثًا وَّ مَتَاعًا اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۸۰﴾
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেছেন তোমাদের বিশ্রাম স্থল।এবং তিনি তোমাদের জন্য পশু-চর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন; যা তোমরা ভ্রমণকালে ও অবস্থানকালে সহজে বহন করে থাক। আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন ওদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার্য উপকরণ।
And Allah has made for you from your homes a place of rest and made for you from the hides of the animals tents which you find light on your day of travel and your day of encampment; and from their wool, fur and hair is furnishing and enjoyment for a time.
وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّمَّا خَلَقَ ظِلٰلًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنَ الۡجِبَالِ اَکۡنَانًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمُ الۡحَرَّ وَ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمۡ بَاۡسَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُتِمُّ نِعۡمَتَہٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تُسۡلِمُوۡنَ ﴿۸۱﴾
আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; যা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে। এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।
And Allah has made for you, from that which He has created, shadows and has made for you from the mountains, shelters and has made for you garments which protect you from the heat and garments which protect you from your [enemy in] battle. Thus does He complete His favor upon you that you might submit [to Him].
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡکَ الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۸۲﴾
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমার কর্তব্য তো শুধু স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া।
But if they turn away, [O Muhammad] – then only upon you is [responsibility for] clear notification.
یَعۡرِفُوۡنَ نِعۡمَتَ اللّٰہِ ثُمَّ یُنۡکِرُوۡنَہَا وَ اَکۡثَرُہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ ﴿٪۸۳﴾
তারা আল্লাহ্র নি’আমত চিনতে পারে; তারপরও সেগুলো তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।
They recognize the favor of Allah ; then they deny it. And most of them are disbelievers.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৮০-৮৩ নং আয়াত:-
[ وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡۢ بُیُوۡتِکُمۡ سَکَنًا
আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেছেন তোমাদের বিশ্রাম স্থল।
And Allah has made for you from your homes a place of rest,]
www.motaher21.net
৮০-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতগুলোতে চতুষ্পদ জন্তুসহ যে সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রেখেছেন তার কয়েকটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মানুষের গৃহগুলোকে আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছেন। গৃহে রাত্রি যাপন, গরম ও ঠাণ্ডার সময় আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যতত্নসহকারে রাখা হয়। ظَعْنِ অর্থ সফরে থাকা, অর্থাৎ সফরে ও বাড়িতে অবস্থানকালে চতুষ্পদ জন্তুর চামড়ার তাঁবু বানিয়ে ঘর তৈরি করে থাকতে পার, সফরে নিয়ে যাওয়ার সময় বহন করা হালকা হয়।
أَصْوَافِ শব্দটি صوف এর বহুবচন, এটি ভেড়ার লোমকে বুঝায়, وَأَوْبٰرِ শব্দটি وبر এর বহুবচন, উটের লোমকে বুঝায়, أَشْعَارِ শব্দটি شعر এর বহুবচন যা দুম্বা-ছাগলের লোমকে বুঝায়।
আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির অন্যতম হল গাছ, প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যে পথ চলা কালে পথিমধ্যে বিশ্রামের সময় গাছের ছায়ার গুরুত্ব বুঝা যায়। এছাড়াও অন্যান্য বস্তুর ছায়া মানুষ প্রয়োজনানুপাতে গ্রহণ করে থাকে। أَكْنَانًا অর্থ গুহা, অর্থাৎ পাহাড়ে গুহা সৃষ্টি করেছেন যাতে গরমের দিন ঠাণ্ডা আর শীতের দিন গরম গ্রহণ করতে পারে এবং ঝড়-তুফানে আশ্রয় নিতে পারে। যেমন বনী ইসরাঈলের সে তিন ব্যক্তি যারা ঝড়ের কবলে পড়ে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। একটি পাথর এসে গুহার মুখে পড়ে ফলে দুনিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ২৩৩৩)
(تَقِيْكُمْ بَأْسَكُمْ)
অর্থাৎ পশম ও তুলার জামা যা মানুষকে গরম ও ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে। আর এমন কতক পোশাক রয়েছে যা মানুষকে যুদ্ধের ময়দানে শত্র“র আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যেমন লৌহ বর্ম, হেলমেট ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَعَلَّمْنٰهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْۭ بَأْسِكُمْ ج فَهَلْ أَنْتُمْ شٰكِرُوْنَ)
“আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৮০)
মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা এভাবে নেয়ামত দান করে থাকেন যাতে তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কারণ দাতার কাছে গ্রহীতা সর্বদা কৃতজ্ঞ ও নমনীয় হয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলার এসব নেয়ামত পাওয়ার পরেও যদি মানুষ ঈমান না আনে, বরং ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত রাসূলদের দায়িত্ব কেবল পৌঁছে দেয়া, কারো ওপর জবরদস্তি করে ঈমান আনতে বাধ্য করা নয়।
(يَعْرِفُوْنَ نِعْمَتَ اللّٰهِ)
অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা চিনে এসব আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত, কিন্তু তারপরেও তারা অস্বীকার করে। যেমন মক্কার মুশরিকরা স্বীকার করত আকাশ থেকে বৃষ্টি দেয় আল্লাহ তা‘আলা, হায়াত-মউত ও রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা; কিন্তু তারপরেও তারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতো না। মুজাহিদ বলেন: এর অর্থ হল যেমন মানুষ বলে: এগুলো আমার সম্পদ, আমার বাপ-দাদাদের থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছি। আওন বিন আব্দুল্লাহ বলেন- অমুকরা না থাকলে এসব সম্পদ পেতাম না। অনুরূপ সমুদ্রের ঢেউ যখন উত্তাল হয়ে ওঠে আর মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে একাগ্র চিত্তে আহ্বান করে, কিন্তু যখন তা থেকে মুক্তি পায় তখন বলে: মাঝি ভাল ছিল বলে বেঁচে গেলাম। অনুরূপভাবে বৃষ্টি পাওয়ার পর একশ্রেণির মানুষ বলে: অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি পেয়েছি, অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে। এসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে অস্বীকার করা এবং তাঁর সাথে কুফরী করার শামিল। যে ব্যক্তি অন্তর ও মুখ দিয়ে এসব নেয়ামতকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা শুকরিয়া আদায় করা ঈমানের মাথা যা তিনটি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত সকল নেয়ামত অন্তরে স্বীকার করা। ২. মুখে বলা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা। ৩. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে তা কাজে লাগানো। সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে স্বীকার করে ইবাদত ও আনুগত্যমূলক কাজে ব্যবহার করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চতুষ্পদ জন্তুসহ অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা অনেক উপকার নিহিত রেখেছেন।
২. এসব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য হল যাতে মানুষ তার কাছে আত্মসমর্পণ করে।
৩. নেয়ামতকে আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্পৃক্ত না করে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করা শিরক ও নেয়ামতকে অস্বীকার করা হয়।
৪. ঈমান ও ইসলাম গ্রহণ করতে কাউকে জবরদস্তি করা ইসলামের বিধান নয়।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সৃষ্টি রহস্য ও সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ তায়ালা ও তার নেয়ামতের বহিপ্রকাশ সম্পর্কে প্রসংগক্রমে আরাে অনেক কথা এসেছে, ধীরে ধীরে হলেও এসব রহস্য ভান্ডার উন্মুক্ত হচ্ছে। এ অনুভূতি মানুষকে মুগ্ধ করতে শুরু করেছে যে বিশ্ব প্রকৃতির চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি সৌন্দর্য, জীবন ধারণ উপকরণ, সুখে দুঃখে ঠাই নেয়ার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবেলায় প্রদত্ত সকল ব্যবস্থাদি অবশ্যই এসবের মালিক আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ নয়। এসব বিষয়ের দিকে ইংগিত করে বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালাই তােমাদের জন্যে তােমাদের ঘরগুলােকে শান্তির নীড় বানিয়েছেন এভাবে তিনি তার নেয়ামতকে তােমাদের ওপরে পরিপূর্ণ করছেন, যেন তােমরা আত্মসমর্পণ করাে।'(আয়াত ৮০) কিন্তু, বাসােপযােগী গৃহ লাভ করা ও শান্তি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া যে কতাে বড়াে নেয়ামত, তা বাস্তুহারা যাযাবর, যাদের মাথা গুঁজার মতাে এতােটুকু ঠাই নেই, নেই কোনাে স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা, তারা ছাড়া আর কেউ সঠিকভাবে এই নেয়ামতের মাহাত্ম বুঝতে পারবে না। গায়েব সম্পর্কিত বিবরণ দানের পর এসব নিরাপদ বাসস্থান সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে। আর এটাও খেয়াল করার বিষয় যে, শান্তি নিরাপত্তার আধার এসব শান্তিপূর্ণ বাসস্থানের বিষয়টি গায়েবের বিষয় থেকে কোনাে অংশে কম বিস্ময়কর নয়,যেহেতু উভয়টি অদৃশ্য মহাশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও বরাদ্দকৃত। উভয়টির মধ্যেই আল্লাহর কুদরতী হাতের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রন ও গোপন রহস্য বিদ্যমান আর এই শান্তি পাওয়ার কথাটি উদাসীন চেতনাকেও গভীরভাবে স্পর্শ করে এবং এ মহান নেয়ামত যে, কতাে বড়াে ও কতাে মূল্যবান তা তাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। নীচে বর্ণিত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে, ঘরে বসবাস করার মধ্যে শান্তির বিষয়টা এতাে বেশী গুরুত্ব পেয়েছে যে মনে করা হচ্ছে, যেন আমরা ইসলাম থেকে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ঘর ও ঘরের শান্তি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি; দেখুন এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদের বাড়ীগুলােকে শান্তির নিড় বানিয়ে দিয়েছেন।’ একথা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা জানাতে চাচ্ছেন যে প্রত্যেক মানুষের বাস করার জন্যে একটি বাড়ী প্রয়োজন-দয়াময় আল্লাহ তায়ালা চান প্রত্যেক মানুষ মাথা গােজার মতাে একটা ঠাই পাক, এটা তার পক্ষ থেকে মানুষকে দেয়া এক মৌলিক অধিকার। যদি কেউ এটা না পায় তাহলে বুঝতে হবে, আল্লাহর দেয়া এ অধিকার থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করছে, তাই ইসলাম চায় মানুষের জন্মগত এ অধিকারকে নিশ্চিত করতে, তার অধিকার তার কাছে পৌছে দিতে, যেন সে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসাবে তার রাজ্যে নিরাপত্তা ও শান্তি পেতে পারে, পেতে পারে আরামদায়ক বাসস্থান। মানুষের তৈরী নিয়মে অথবা আল্লাহর নাফরমান কোনাে ব্যক্তি বা শ্রেণীর কোনাে ব্যবস্থাপনায় যদি এ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তাহলে তা হবে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ । এহেন আল্লাহদ্রোহীদেরকে উৎখাত করে আল্লাহর রাজ্যে তার আইন চালু করাই হচ্ছে তার খলীফা বা প্রতিনিধিদের কাজ। এখানে বাসস্থান কথাটার মধ্যে শারীরিক প্রয়ােজন ও মানসিক শান্তির প্রয়ােজনে বস্তুগত বিষয়সমূহের কথা উল্লেখ হয়েছে। মানব জীবনে এগুলাের প্রয়ােজন অবশ্যই রয়েছে এবং এ বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বৈধ পন্থায় অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত পথে এগুলাে লাভ করার জন্যে চেষ্টা সংগ্রাম করা অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছাকেই পূরণ করা, অতএব এগুলাের জন্যে চেষ্টা সাধনা অবশ্যই অন্যান্য এবাদাতের মতাে আল্লাহর ইবাদত। এখন, এমন বাড়ী বানাতে হবে যা শান্তি ও নিরাপত্তার আধার হয়, এখানে এমন কোনাে কাজ বা ব্যবহার যেন না হয় যে এ শান্তির নীড় ঝগড়া ফাসাদ ও বিবাদ বিসম্বাদের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। বিশ্বপালক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চান তার বান্দার প্রতিটি বাড়ী ঘর যেন সুন্দর ও আরামদায়ক বাসস্থানে পরিণত হয় যেন তা হয় শান্তির ও নিরাপত্তার কেন্দ্র। বাইরে কাজকর্ম শেষে অথবা ক্লান্তিকর সফর শেষে যখন সে ঘরে পৌছবে তখন সে যেন শান্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে সে তার ঘরকে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে ফিরে পায়। এ প্রয়োজনে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে ঘরের বাসিন্দাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, তাদেরকে উপযােগী শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এ কারণেই ইসলাম প্রতিটি ঘরের মান সম্ভ্রম ও ইযযত আবরু সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেয়, তার জান মালের নিরাপত্তা দেয়, শান্তি ও নিশ্চিন্ততার নিশ্চয়তা দেয়, সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করতে হবে, শাসন ক্ষমতায় আছে বলে কউ কারাে ঘরে হঠাৎ করে বা জোর করে প্রবেশ করার অধিকার রাখে না এবং কোনাে কারণেই ঘরের কোনাে বাসিন্দার স্বাতন্ত্র্য ও গোপনীয়তা কেউ নষ্ট করবে না, আর গৃহকর্তার অবর্তমানে বা অনুপস্থিতিতে ঘরের কোনাে গােপন তথ্য জানার জন্যে ওঁৎ পেতে থাকা বা গৃহকর্তার অজান্তে গােয়েন্দাগিরি করার কোনাে অধিকার কারাে নেই, কারণ এতে ঘরের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, ঘরের বাসিন্দাদের জন্যে ইসলাম প্রদত্ত শান্তি বিধানের প্রতিশ্রুতি বিঘ্নিত হয়। এভাবে ঘর ও ঘরের বাসিন্দাদের সম্পর্কে ওপরে বর্ণিত আয়াতের গভীর ব্যাখ্যা যেন সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হয়। আর যেহেতু এখানে ঘরবাড়ী, আশ্রয়স্থল এবং পােশাক আশাকের দৃশ্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এজন্যে এর সাথে জড়িত গৃহপালিত পশুর কথাও জানানাে হয়েছে। যেমন আর তিনিই তােমাদের জন্যে গবাদি পশুর চামড়া দ্বারা ঘর দুয়ার বানানোর ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তােমরা সফরে (সহজে) বহন করে নিতে পারো, আবার কোথাও বসতি স্থাপন করার দিনেও (তা ব্যবহার করতে পারে) ওদের পশম লােম ও কেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে তােমাদের অনেক ব্যাবহার (উপযােগী) সমগ্ৰী বানাবার ব্যবস্থা করেছেন।’ অর্থাৎ, গৃহপালিত পশুর যে নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে দিয়েছেন সেগুলােকে তােমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করাে, কখনও সেগুলাে থেকে জরুরী কাজে খেদমত নাও, আবার কখনও সেগুলাে থেকে শখের বস্তুও বানাও। মাতা অর্থাৎ আসবাবপত্র যা দিয়ে কখনও ব্যবসায়ের পণ্য বানাও আবার গৃহের সৌখিন আসবাবপত্র বানাও যা অনেক সময় সম্পদ হিসাবে কাজে লাগে। আসলে ‘মাতা’ বলতে সফরে ব্যবহৃত গদি, পর্দা, আসবাবপত্র ইত্যাদি সব কিছু বুঝায় আবার এগুলাে দিয়ে অনেক সময় শখের জিনিসও বানানাে যায় । বাড়ীতে বসবাস করার সময় মানুষ শান্তিপূর্ণ যে পরিবেশ পায়, যে নিশ্চিন্ততা ও শান্তি পায় সে অবস্থাটাই ওপরের আয়াতাংশে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর দ্বারা ঘরের শান্তিপূর্ণ অবস্থাটাকে তুলে ধরা হয়েছে, যেমন তিনি বানিয়েছেন প্রখর রৌদ্রের সময় ঘরের স্নিগ্ধ ছায়া পাহাড়-পর্বতের মধ্যে ছায়া ঘেরা গুহাসমূহ এবং শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে বাঁচানাের জন্যে নানা প্রকার আরামদায়ক পােশাক ও যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত বর্ণ।
# নিরাপদ বাসস্থানে থেকে প্রশান্তি লাভ করার লক্ষ্যেই এসব ঘর-বাড়ী তৈরী করা হয়েছিলো একথার দ্বারা ছায়া, পাহাড়ের মধ্যে আশ্রয় এবং বর্মের দিকে ইংগিত করা হয়েছে যার দ্বারা গরম থেকে ও যুদ্ধের সময় শত্রুর অস্ত্র থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয়। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, তােমাদের জন্যে পাহাড়-পর্বতের মধ্যে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর বানিয়েছেন তােমাদের জন্যে এমন পােশাক ও বর্ম, যার দ্বারা তােমরা গরম থেকে ও (শত্রুর ব্যবহৃত যুদ্ধের অস্ত্রের) অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে পার।’ মানুষের জন্যে ছায়ার মধ্যে আরাম গ্রহণ ও বাসােপযােগী আশ্রয়স্থল রয়েছে। আরাে রয়েছে এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলােতে নিশ্চিন্ত ও আরামের নিশ্চয়তা। আবার যেসব পােশাক-আশাক বানানাের পদ্ধতি তিনি তােমাদেরকে শিখিয়েছেন সেগুলাে দিয়ে মরু অঞ্চলের তাপ দাহ থেকে তােমরা নিজেদেরকে বাঁচাও এবং যুদ্ধে শত্রুর অস্ত্রাঘাত থেকে আত্মরক্ষা করার জন্যেও সেগুলােকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করাে, এসব কিছুর প্রস্তুতি নিয়ে থাকা শান্তিময় ও নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থাকার প্রয়ােজনে। অতপর আসছে পরবর্তী কথা, ‘এইভাবে আল্লাহ তায়ালা তােমাদের ওপর তার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করেছেন যেন তােমরা (তার কাছে পুরােপুরিভাবে) আত্মসমর্পণ করতে পারাে।’ অর্থাৎ, ইসলাম অর্থই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি লাভ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা। এভাবে, আল কোরআনে ছবির মতাে যে কথাটা ফুটিয়ে তােলা হয়েছে তা হচ্ছে, একথা বলা যে, (মরুভূমির কঠিন ও উত্তপ্ত পরিবেশে) ছায়া ঘেরা সুশীতল বাসস্থান লাভ তােমাদের জন্যে আল্লাহর খাস নেয়ামত। এসব আরামের বাসস্থানে থেকে যদি ওরা ইসলাম গ্রহণ করে এবং আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং তার বিধান মতাে জীবন যাপন করে তাহলে তারা দো-জাহানের সার্বিক কল্যাণ লাভ করবে। আর তা না করে যদি ওরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থা থেকে পালিয়ে যেতে চায় সে অবস্থায়, হে রসূল, তােমার কাজ শুধু মাত্র পৌছে দেয়া। কিন্তু, আল্লাহর যে নেয়ামতকে তারা কোনােভাবেই অস্বীকার করতে পারে না, তা বুঝার পরও যদি ওরা তার নাফরমানী করে ও তার নেয়ামতের নাশুকরি করে তাহলে তারা চরম অকৃতজ্ঞ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘অতপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে চলে যায়, তাহলে (উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনাে কারণ নেই, কেননা) তােমার দায়িত্ব হচ্ছে শুধু পৌছে দেয়া। ওরা আল্লাহর নেয়ামতকে জানছে বুঝছে, এরপরও সে নেয়ামতকে অস্বীকার করছে, সত্যি বলতে কি ওদের বেশীর ভাগই হচ্ছে কাফের।’
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# পশুচর্মের তাঁবু। আরবে এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।
# যখন কোথাও রওয়ানা হয়ে যেতে চাও তখন তাকে সহজে গুটিয়ে ভাঁজ করে নিয়ে বহন করতে পারো। আবার যখন কোথাও অবস্থান করতে চাও তখন অতি সহজেই ভাঁজ খুলে খাঁটিয়ে ঘর বানিয়ে ফেলতে পারো।
# ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাবার কথা না বলার কারণ হচ্ছে এই যে, গরমের সময় কাপড়ের ব্যবহার মানব সভ্যতার পূর্ণতার পর্যায়ভুক্ত। আর পূর্ণতার পর্যায়ের উল্লেখ করার পর তার নিম্নবর্তী প্রাথমিক পর্যায়গুলোর উল্লেখের কোন প্রয়োজন থাকে না। অথবা একথাটি বিশেষভাবে বলা হয়েছে। এজন্য যে, যেসব দেশে অত্যন্ত মারাত্মক ধরনের লু-হাওয়া চলে সেখানে শীতকালীন পোশাকের পরিবর্তে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের গুরুত্ব হয় বেশী। এসব দেশে লোকেরা যদি মাথা, ঘাড়, কান ও সারা দেহ ভালভাবে না ঢেকে বাইরে বের হয় তাহলে গরম বাতাসে তাদের শরীর ঝলসে যাবে। বরং কোন কোন সময় তো তাদের শুধুমাত্র চোখ দু’টো বাদ দিয়ে সমস্ত চেহারাটাই ঢেকে নিতে হয়।
# অর্থাৎ বর্ম।
# নিয়ামত পূর্ণ বা সম্পূর্ণ করার মানে হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর এক একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। যেমন এ বিষয়টিই ধরা যায়। বাইরের প্রভাব থেকে মানুষের দেহ সংরক্ষণ কাম্য ছিল। তাই আল্লাহ কোন্ কোন্ দিক থেকে কেমন ধরনের কি পরিমাণ উপকরণ তৈরী করে দিয়েছেন তার বিস্তারিত বিবরণ যদি কেউ লিখতে বসে তাহলে একটি বই তৈরী হয়ে যাবে। এটি যেন পোশাক ও বাসস্থানের দিক দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা। অথবা যেমন খাদ্যোপকরণের ব্যাপারটিই ধরা যায়। এজন্য কত বিশাল পর্যায়ে কত বৈচিত্র্য সহকারে কেমন ধরনের সব ছোটখাটো প্রয়োজনের প্রতিও নজর রেখে মহান আল্লাহ অসংখ্য অগণিত উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। যদি কেউ এগুলো পর্যালোচনা করতে চায় তাহলে হয়তো শুধুমাত্র খাদ্যের প্রকারভেদ এবং খাদ্য বস্তুগুলোর তালিকা তৈরী করার জন্য একটি বিপুলাকার গ্রন্থের প্রয়োজন হবে। এটি যেন খাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা। এভাবে মানব জীবনের এক একটি ক্ষেত্র ও বিভাগ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে ও বিভাগে আল্লাহ আমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন।
# অস্বীকার বলতে সেই একই আচরণের কথা বুঝানো হয়েছে, যার উল্লেখ আমরা আগেই করে এসেছি। মক্কার কাফেররা একথা অস্বীকার করতো না যে, এ সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহ তাদের প্রতি করেছেন। কিন্তু তাদের আকীদা ছিল, তাদের বুযর্গ ও দেবতাদের হস্তক্ষেপের ফলে তাদের প্রতি এসব অনুগ্রহ করা হয়েছে। আর একারণেই তারা এসব অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সময় ঐসব বুযর্গ ও দেবতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো বরং তাদের প্রতি কিছুটা বেশী করেই প্রকাশ করতো। একাজটিকেই আল্লাহ নিয়ামত অস্বীকৃতি এবং অকৃতজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮০-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর
মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর আরো অসংখ্য ইহসান, ইনআম ও নিয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনিই আদম সন্তানের বসবাসের এবং আরাম ও শান্তি লাভ করার জন্যে ঘর-বাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে চতুষ্পদ জন্তুর চামড়ার তাঁবু, ডেরা ইত্যাদি তাদেরকে দান করেছেন। এগুলো তাদের সফরের সময় কাজে লাগে। এগুলো বহন করাও সহজ এবং কোন জায়গায় অবস্থানকালে খাটানোও সহজ। তারপর বকরীর লোম, উঁটের কেশ এবং মেষ ও দুম্বার পশম ব্যবসায়ের মাল হিসেবে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন। এগুলো দ্বারা বাড়ীর আসবাবপত্রও তৈরী হয়। যেমন এগুলো দ্বারা কাপড়ও বয়ন করা হয়। এবং বিছানাও তৈরী করা হয়, আবার ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসার মালও বটে। এগুলো বড়ই উপকারী জিনিস এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ এগুলো দ্বারা উপকার লাভ করে থাকে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ তোমাদের উপকার ও আরামের জন্য গাছের ছায়া দান করেছেন। তোমাদের উপকারার্থে তিনি পাহাড়ের উপর গুহা, দুর্গ ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন যাতে তোমরা তাতে আশ্রয় গ্রহণ করতে পার এবং মাথা গুজবার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। তিনি তোমাদেরকে দান। করেছেন সূতী ও পশমী কাপড়, যেন তোমরা তা পরিধান করে শীত ও গরম। হতে রক্ষা পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের গুপ্তস্থান আবৃত কর এবং দেহের শোভাবর্ধনে সমর্থ হতে পার। তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন লৌহবর্ম, যা শত্রুদের আক্রমণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের কাজে লাগে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনের পুরোপুরি জিনিস নিয়ামত স্বরূপ দিতে রয়েছেন, যেন তোমরা আরাম ও শান্তি পাও এবং প্রশান্তির সাথে নিজেদের প্রকৃত নিয়ামত দাতার ইবাদতে লেগে থাকো।”
(আরবি) এর দ্বিতীয় পঠন (আরবি) এরূপও রয়েছে অর্থাৎ, তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ কর। আর প্রথম কিরআতের অর্থ হচ্ছেঃ যাতে অনুগত হও ও আত্মসমর্পণ কর। এই সূরার আর একটি নাম ‘সূরাতুন নিআ’মও রয়েছে। অর্থাৎ নিয়ামত সমূহের সূরা। (আরবি) এর (আরবি) কে যবর দিয়ে পড়লে আর একটি অর্থ হবেঃ “তিনি তোমাদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কাজে লাগে এরূপ জিনিস দান করেছেন, যেন তোমরা শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পার।” জঙ্গল ও মরুপ্রান্তরও আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত, কিন্তু এখানে পাহাড়ের নিয়ামতের বর্ণনা দেয়ার কারণ এই যে, যাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে তারা ছিল পাহাড়ের অধিবাসী। কাজেই তাদের অবগতি অনুযায়ী তাদের সাথে। কথা বলা হচ্ছে। অনুরূপভাবে মেষ, বকরী ও উট ছিল তাদের প্রধান জীবনোপকরণ। তাই, মহান আল্লাহ তাদেরকে এই নিয়ামতের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। অথচ এর চেয়ে আরো অনেক বড় বড় অসংখ্য নিয়ামত মাখলুকের হাতে রয়েছে। আর এই একই কারণে শীত-গ্রীষ্ম হতে রক্ষা পাওয়ার উপকরণরূপ নিয়ামতের কথা বলেছেন, অথচ এর চেয়ে আরো বড় নিয়ামত বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এটা তাদের সামনে রয়েছে এবং তাদের জানা জিনিস। তারা ছিল যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তাই, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার যে উপকরণ রয়েছে, সেই নিয়ামতের কথা তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ এর চেয়ে বহু বড় বড় নিয়ামত মানুষের অধিকারে রয়েছে। যেহেতু ওটা ছিল গরম দেশ, সেহেতু তাদেরকে বলা হয়েছেঃ “তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে। কিন্তু এর চেয়ে বহুগুণ উত্তম আরো বহু নিয়ামত কি এই প্রকৃত নিয়ামত দাতা আল্লাহ তাআলার নিকট বিদ্যমান নেই? অবশ্যই আছে। এ কারণেই এ সব নিয়ামত ও রহমত প্রকাশ করার পরেই স্বীয় নবীকে (সঃ) সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! এখনো যদি এরা আমার ইবাদত, তাওহীদ এবং অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্বীকার না করে বরং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে এতে তোমার কি আসে যায়? তুমি তাদেরকে তাদের কাজের উপর ছেড়ে দাও। তুমি তো শুধু প্রচারক মাত্র। সুতরাং তুমি তোমার কার্য চালিয়ে যাও।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তারা তো নিজেরাই জানে যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন নিয়ামতরাজি দানকারী। কিন্তু এটা জানা সত্ত্বেও তারা এগুলি অস্বীকার করছে এবং তার সাথে অন্যদের ইবাদত করছে। এমন কি তারা তাঁর নিয়ামতের সম্পর্ক অন্যদের প্রতি আরোপ করছে। তারা মনে করছে যে, সাহায্যকারী অমুক, আহার্যদাতা অমুক। তাদের অধিকাংশই কাফির। তারা হচ্ছে আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে আগমন করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সামনে (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাস স্থল।” বেদুঈন বলেঃ “হাঁ, (এটা সত্য)।” তারপর তিনি পাঠ করেনঃ “তিনি তোমাদের জন্যে পশু চর্মের ব্যবস্থা করেন। সে বলেঃ “হাঁ, (এটাও সত্য)।” এইভাবে তিনি আয়াতগুলি পাঠ করতে থাকেন এবং সে প্রত্যেক নিয়ামতেরই স্বীকারোক্তি করে। শেষে তিনি পাঠ করেনঃ “যাতে তোমরা মুসলমান ও অনুগত হয়ে যাও।” সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়। এ সময় আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “তারা আল্লাহর অনুগ্রহ জ্ঞাত আছে; কিন্তু সেগুলি তারা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই কাফির।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 80-83
[ وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡۢ بُیُوۡتِکُمۡ سَکَنًا
And Allah has made for you from your homes a place of rest,]
www.motaher21.net
Homes, Furnishings and Clothing are also Blessings from Allah
Allah says:
وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّن بُيُوتِكُمْ سَكَنًا وَجَعَلَ لَكُم مِّن جُلُودِ الَانْعَامِ بُيُوتًا
And Allah had made your homes a place of rest for you, and made dwellings for you out of the hides of the cattle,
Allah mentions His great blessings for His servant in that He has given them homes to dwell in and protect themselves with, in which they find all kinds of benefits. He has also given them homes from the hides of cattle, i.e., leather, which are light and easy to carry on journeys and can be erected wherever they stop, whether they are traveling or are settled.
Thus Allah says:
تَسْتَخِفُّونَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ إِقَامَتِكُمْ
which you find so light when you travel and when you camp;
وَمِنْ أَصْوَافِهَا وَأَوْبَارِهَا وَأَشْعَارِهَا
out of their wool, fur and hair,
refers to sheep, camels and goats respectively.
أَثَاثًا
furnishings,
meaning what you take from them, i.e., wealth.
It was also said that it means articles of convenience, or clothing.
The correct view is more general in meaning than this; it means that you make carpets, clothing and other things from their wool, hair etc., which you use as wealth and for trade.
Ibn Abbas said:
`Al-Athath means articles of convenience and comfort.”
This was also the view of Mujahid, Ikrimah, Sa`id bin Jubayr, Al-Hasan, Atiyah Al-`Awfi, Ata’ Al-Khurasani, Ad-Dahhak and Qatadah.
وَمَتَاعًا إِلَى حِينٍ
and articles of convenience – comfort for a while.
The phrase,
إِلَى حِينٍ
(for a while) means,
until the appointed time.
Shade, Places of Refuge in the Mountains, Garments and Coats of Mail are also Blessings from Allah
Allah says.
وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَلاً
And Allah has made shade for you out of that which He has created,
Qatadah said:
“This means trees.”
وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا
and He has made places of refuge in the mountains for you,
meaning fortresses and strongholds.
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ
and He has made garments for you to protect you from the heat,
meaning clothing of cotton, linen and wool.
وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ
and coats of mail to protect you from your violence.
such as shields made of layers of sheet iron, coats of mail and so on.
كَذَلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ
Thus does He perfect His favor for you,
meaning, thus He gives you what you need to go about your business, so that this will help you to worship and obey Him.
لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ
that you may submit yourselves to His will.
This is interpreted by the majority to mean submitting to Allah or becoming Muslim.
All the Messenger has to do is convey the Message
Allah says.
فَإِن تَوَلَّوْاْ
Then, if they turn away,
meaning, after this declaration and reminder, do not worry about them.
فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَغُ الْمُبِينُ
your duty (O Muhammad) is only to convey (the Message) in a clear way),
and you have delivered the Message to them.
يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا
They recognize the grace of Allah, yet they deny it,
meaning they know that Allah is the One Who grants these blessings to them, and that He is Bountiful towards them, but they still deny this by worshipping others besides Him and thinking that their help and provisions come from others besides Him.
وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ
and most of them are disbelievers.