أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيم
(Book# 816)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৮৪-৮৯ নং আয়াত:-
[ وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا
যেদিন আমি প্রত্যেক জাতি হতে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব।
And on the Day when We resurrect a witness from each nation,]
www.motaher21.net
وَ یَوۡمَ نَبۡعَثُ مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍ شَہِیۡدًا ثُمَّ لَا یُؤۡذَنُ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ ﴿۸۴﴾
যেদিন আমি প্রত্যেক জাতি হতে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব। অতঃপর সেদিন অবিশ্বাসীদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে না এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও দেওয়া হবে না।
And [mention] the Day when We will resurrect from every nation a witness. Then it will not be permitted to the disbelievers [to apologize or make excuses], nor will they be asked to appease [ Allah ].
وَ اِذَا رَاَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوا الۡعَذَابَ فَلَا یُخَفَّفُ عَنۡہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۸۵﴾
আর যারা যুলুম করেছে, তারা যখন শাস্তি দেখবে তখন তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশও দেয়া হবে না।
And when those who wronged see the punishment, it will not be lightened for them, nor will they be reprieved.
وَ اِذَا رَاَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا شُرَکَآءَہُمۡ قَالُوۡا رَبَّنَا ہٰۤؤُلَآءِ شُرَکَآؤُنَا الَّذِیۡنَ کُنَّا نَدۡعُوۡا مِنۡ دُوۡنِکَ ۚ فَاَلۡقَوۡا اِلَیۡہِمُ الۡقَوۡلَ اِنَّکُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ ﴿ۚ۸۶﴾
আর যারা শির্ক করেছে, তারা যখন তাদের শরীকদেরকে দেখবে তখন বলবে, ‘হে আমাদের রব! এরাই তারা যাদেরকে আমরা আপনার পরিবর্তে ডাকতাম;’ তখন শরীকরা এ কথা মুশরিকদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা মিথ্যাবাদী।’
And when those who associated others with Allah see their “partners,” they will say,” Our Lord, these are our partners [to You] whom we used to invoke besides You.” But they will throw at them the statement, “Indeed, you are liars.”
وَ اَلۡقَوۡا اِلَی اللّٰہِ یَوۡمَئِذِۣ السَّلَمَ وَ ضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ ﴿۸۷﴾
সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, তা তাদের নিকট হতে উধাও হয়ে যাবে।
And they will impart to Allah that Day [their] submission, and lost from them is what they used to invent.
اَلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ صَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ زِدۡنٰہُمۡ عَذَابًا فَوۡقَ الۡعَذَابِ بِمَا کَانُوۡا یُفۡسِدُوۡنَ ﴿۸۸﴾
যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহ্র পথ থাকে বাধা দিয়েছে, আমরা তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব ; কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।
Those who disbelieved and averted [others] from the way of Allah – We will increase them in punishment over [their] punishment for what corruption they were causing.
وَ یَوۡمَ نَبۡعَثُ فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ شَہِیۡدًا عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِہِمۡ وَ جِئۡنَا بِکَ شَہِیۡدًا عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ ؕ وَ نَزَّلۡنَا عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ تِبۡیَانًا لِّکُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿٪۸۹﴾
সেদিন প্রত্যেক জাতিতে তাদেরই মধ্য হতে তাদেরই বিপক্ষে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব এবং ওদের বিষয়ে তোমাকে আমি আনব সাক্ষীরূপে। আর আমি তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের জন্য, পথনির্দেশ, করুণা ও সুসংবাদ স্বরূপ।
And [mention] the Day when We will resurrect among every nation a witness over them from themselves. And We will bring you, [O Muhammad], as a witness over your nation. And We have sent down to you the Book as clarification for all things and as guidance and mercy and good tidings for the Muslims.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৮৪-৮৯ নং আয়াত:-
[ وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا
যেদিন আমি প্রত্যেক জাতি হতে এক একজন সাক্ষী দাঁড় করাব।
And on the Day when We resurrect a witness from each nation,]
www.motaher21.net
৮৪-৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে মানুষের পাপের কারণে আখিরাতে তাদের কিরূপ অবস্থা হবে সে কথা বর্ণনা করছেন।
شَهِيْدًا একজন সাক্ষী বলতে সে জাতির নাবীকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক নাবী তাঁর জাতির জন্য সাক্ষ্য দেবে যে, তিনি তাদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করেছিল। ঐ সকল কাফিরদেরকে অজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ তাদের গ্রহণযোগ্য কোন অজুহাত থাকবে না। আর না তাদেরকে প্রত্যাবর্তন বা অসন্তোষ দূর করার সময় দেয়া হবে। কারণ তার প্রয়োজন তখন হয়, যখন কাউকে সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هٰذَا يَوْمُ لَا يَنْطِقُوْنَ - وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُوْنَ)
“এটা এমন একদিন যেদিন তারা কিছু বলতে পারবে না। এবং না তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে ওযর পেশ করার।” (সূরা মুরসালাত ৭৭:৩৫-৩৬)
(وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ)
এর অন্য আরেকটি অর্থ হল তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ সে সুযোগ তাদেরকে পৃথিবীতে দেয়া হয়েছিল, যা ছিল কর্মস্থল। আখিরাত কর্মস্থল নয়, বরং প্রতিদান দেয়ার দিন। সেখানে মানুষ পৃথিবীতে যা করেছে তার প্রতিদান পাবে। সেখানে কাউকেই কিছু আমল করার সুযোগ দেয়া হবে না।
(وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ)
অর্থাৎ শাস্তি হালকা করা হবে না এবং বিরতি দেয়া হবে না। বরং অবিরাম শাস্তি দেয়া হবে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন মুশরিকরা তাদের মা‘বূদদেরকে দেখতে পাবে তখন তারা বলবে: হে আল্লাহ তা‘আলা! এরা হল আমাদের মা‘বূদ, আপনাকে বাদ দিয়ে এদের ইবাদত করেছি। তখন মা‘বূদেরা অস্বীকার করে বলবে: তোমরা মিথ্যা বলছ, তোমরা আমাদের ইবাদত করনি, কারণ আমরা কখনো তোমাদেরকে আমাদের ইবাদত করতে বলিনি।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَه۫ٓ إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَا۬ئِهِمْ غٰفِلُوْنَ – وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ أَعْدَا۬ءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كٰفِرِيْنَ)
“সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্ল¬াহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও সাড়া দেবে না। বরং তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে গাফেল। (হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন যারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের দুশমন হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (সূরা আহক্বাফ ৪৬:৫-৬)
আর যদি শরীক আল্লাহ তা‘আলার নেক বান্দা হয়, যেমন বহু নেক বান্দা যাদেরকে কেন্দ্র করে মাযার তৈরি করা হয়েছে কিংবা তাদের নামে মানত করা হয়, নযর মানা হয় বা তাদের কাছে চাওয়া হয় এবং সিজদা করা হয় তাহলে কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে নির্দোষ প্রমাণ করা হবে। আর যারা তাদের ইবাদত করত তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দেয়া হবে। যেমন ঈসা (عليه السلام)-এর সাথে আল্লার প্রশ্নোত্তর সূরা মায়িদার ১১৬-১১৮ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
আর যারা নিজেরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করত এবং মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার পথে চলতে বাধা প্রদান করত তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তির ওপর শাস্তি বৃদ্ধি করে দেবেন। কারণ যাদেরকে বাধা দিয়েছে তাদের পাপের ভারও বহণ করতে হবে। যদি বাধা না দিত তাহলে হয়তো তারা ঈমান আনত।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ)
“তারা অবশ্যই নিজেদের পাপের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরও কিছু বোঝা।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে আসবেন। আর তখন পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَکَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ کُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَھِیْدٍ وَّجِئْنَا بِکَ عَلٰی ھٰٓؤُلَا۬ئِ شَھِیْدًاﭸﺛیَوْمَئِذٍ یَّوَدُّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا وَعَصَوُا الرَّسُوْلَ لَوْ تُسَوّٰی بِھِمُ الْاَرْضُﺚ وَلَا یَکْتُمُوْنَ اللہَ حَدِیْثًاﭹﺟ)
“যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব তখন কী অবস্থা হবে? যারা কুফরী করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারত! আর তারা আল্লাহ হতে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।” (সূরা নিসা ৪:৪১-৪২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَلَنَسْئَلَنَّ الَّذِيْنَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْئَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ)
“অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করব এবং রাসূলগণকেও জিজ্ঞেস করব।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৬)
অতএব সেদিনের অবস্থা হবে খুবই কঠিন। সেদিন প্রত্যেক অপরাধীকে তার কৃতকর্মের জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যে শাস্তি থেকে রেহাই পাবার কোনই পথ থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে সাক্ষী উপস্থিত করা হবে।
২. কোন ওযর-আপত্তি পেশ করা যাবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় মানুষকে বাধা দেয়া যাবে না।
৪. জাহান্নামে শাস্তির কোন কম-বেশি করা হবে না।
৫. দুনিয়ায় যাদের ইবাদত করা হত তারা তাদের অনুসারীদের কথা অস্বীকার করবে।
৬. কুরআনে সকল বিষয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# সেই উম্মতের নবী বা এমন কোন ব্যক্তি নবীর তিরোধানের পর যিনি সেই উম্মতের তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাদেরকে শিরক ও মুশরিকী চিন্তা-ভাবনা, ভ্রষ্টাচার ও কুসংস্কার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং কিয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করার ব্যাপারে সজাগ করে দিয়েছিলেন। তিনি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবেন যে, তিনি তাদের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। কাজেই যা কিছু তারা করেছে তা অজ্ঞতার কারণে নয় বরং জেনে বুঝেই করেছে।
# এর অর্থ এ নয় যে, তাদেরকে সাফাই পেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তাদের অপরাধগুলো এমন অকাট্য ও অনস্বীকার্য সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয়া হবে যে, তাদের সাফাই পেশ করার আর কোন অবকাশই থাকবে না।
# সে সময় তাদেরকে একথা বলা হবে না যে, এখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি— অপরাধগুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নাও। কারণ সেটা হবে ফায়সালার সময়। ক্ষমা চাওয়ার সময় তার আগে শেষ হয়ে যাবে। কুরআন ও হাদীস উভয় সূত্রই একথা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এ দুনিয়াতেই তাওবা ও ইসতিগফার করতে হবে, আখেরাতে নয়। আবার দুনিয়াতেও এর সুযোগ শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ মৃত্যুর চিহ্নগুলো ফুটে না ওঠে, যখন মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে যে, তার শেষ সময় পৌঁছে গেছে। এ সময় তার তওবা গ্রহণীয় নয়। মৃত্যুর সীমান্তে পৌঁছার সাথে সাথেই মানুষের কর্মের অবকাশ খতম হয়ে যায় এবং তখন শুধুমাত্র পুরস্কার ও শাস্তি দানের পাট বাকি থেকে যায়।
# এর মানে এই নয় যে, তারা মূল ঘটনাটি অস্বীকার করবে এবং বলবে যে, মুশরিকরা তাদেরকে সংকট উত্তরণকারী ও প্রয়োজন পূর্ণকারী বলে ডাকতো না। বরং তারা আসলে এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের নিজেদের জানা ও অবহিত থাকা এবং এর প্রতি তাদের সম্মতি ও দায়িত্ব অস্বীকার করবে। তারা বলবে, আমরা কখনো তোমাদের একথা বলিনি যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাদের ডাকো এবং তোমাদের এ কাজের প্রতি আমরা কখনো সন্তুষ্টও ছিলাম না। বরং তোমরা যে আমাদের ডেকে চলছো তাতো আমরা জানতামই না। তোমরা যদি প্রার্থনা শ্রবণকারী, প্রার্থনা পূরণকারী, হস্ত ধারণকারী ও সংকট নিরসনকারী বলে আমাদের মনে করে থেকে থাকো তাহলে তো এটা ছিল তোমাদের মনগড়া একটা সর্বৈব মিথ্যা কথা। কাজেই এর সব দায়-দায়িত্বই তোমাদের। এখন এ দায়িত্বের বোঝা আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছো কেন?
# তা সবই মিথ্যা প্রমাণিত হবে। দুনিয়ায় তারা যেসব নির্ভর বানিয়ে নিয়েছিল এবং তাদের ওপর ভরসা করতো, সেসব অদৃশ্য হয়ে যাবে। কোন অভিযোগের প্রতিকারকারীকে সেখানে অভিযোগের প্রতিকার করার জন্য পাবে না। কোন সংকট নিরসনকারীকে তাদের সংকট নিরসন করার জন্য সেখানে পাওয়া যাবে না। কেউ সেখানে এগিয়ে এসে একথা বলবে না যে, এ ব্যক্তিকে কিছু বলো না এ আমার লোক ছিল।
# একটা আযাব হবে কুফরী করার জন্য এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়ার জন্য হবে আর একটা আযাব।
# এমন প্রত্যেকটি জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে, যার ওপর হিদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে, যা জানা সঠিক পথে চলার জন্য একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভুলক্রমে কিছু কিছু তাফসীর লেখক تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ বাক্যাংশটি এবং এর সম-অর্থবোধক আয়াতগুলোর অর্থ করে এভাবে যে, কুরআনে সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর তারা নিজেদের এ বক্তব্য সত্য প্রমাণ করার জন্য কুরআন থেকে বিজ্ঞান ও টেকনোলজির অদ্ভূত অদ্ভূত বিষয়বস্তু টেনে বের করতে থাকে।
# যারা আজ এ কিতাবটি মেনে নেবে এবং আনুগত্যের পথ অবলম্বন করবে এ কিতাব জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবে, একে অনুসরণ করে চলার কারণে তাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে এবং এ কিতাব তাদেরকে এ সুসংবাদ দেবে যে, চূড়ান্ত ফায়সালার দিন আল্লাহর আদালত থেকে তারা সফলকাম হয়ে বের হয়ে আসবে। অন্যদিকে যারা এ কিতাব মানবে না তারা যে কেবল হিদায়াত ও রহমত থেকে বঞ্চিত হবে তাই নয় বরং কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর নবী তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে দাঁড়াবেন তখন এ দলীলটিই হবে তাদের একটি জবরদস্ত প্রমাণ। কারণ নবী একথা প্রামণ করে দেবেন যে, তিনি তাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছিলেন যারা মধ্যে হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছিল।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*কেয়ামতের ময়দানে নেতা ও জনগণের ঝগড়া : এরপর কোরআন আমাদের সামনে কেয়ামতের ময়দানের একটি দৃশ্য চিত্রায়ন করছে। আজকের যারা মূর্তিপূজা কিংবা কাউকে অন্ধ অনুসরণ কিংবা কাউকে অদৃশ্যের বিষয়ে জ্ঞানী কিংবা নিজেদের জন্যে আইন কানুন রচনা করার অধিকার দিয়ে আল্লাহর সাথে শরীক করছে এইসব মােশরেক এবং শরীকদের মাঝে ঝগড়ার দৃশ্যটি আমাদের সামনে তুলে ধরে। ‘যে দিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন করে সাক্ষী দাড় করাবাে… যারা অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় আসা থেকে মানুষকে বাধা দিয়েছে, তাদের ওপর আমি আযাবের ওপর আযাব বাড়িয়ে দেব যেসব অশান্তিকর কাজ তারা করতে থেকেছে, তারই প্রতিদান স্বরূপ তাদেরকে দেয়া হবে এ আযাব।'(আয়াত ৮৪-৮৮) ওপরের আয়াতগুলােতে নবীদের দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সকল নবীই তাদের জাতির মধ্য থেকে এগিয়ে আসা ঈমানদারদেরকে সাথে নিয়ে দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে নানা প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং দুনিয়ার জীবনে নানা প্রকার দুঃখ কষ্টের মধ্যে অব্যাহতভাবে তাবলিগী কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। আয়াতে যারা জেনে বুঝে সত্যকে অস্বীকার করেছিলাে তাদের করুণ অবস্থাও ফুটে উঠেছে। যারা সত্যের বিরােধিতা করেছিলাে এবং সত্যকে উৎখাত করার জন্যে তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়ােগ করেছিলাে, তাদের সম্পর্কে এ প্রসংগে জানানাে হচ্ছে যে, কেয়ামতের দিন আত্মপক্ষ সমর্থন করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কোনাে যুক্তি তর্ক পেশ করার সুযােগ দেয়া হবে না, তাদের পক্ষে কারাে সুপারিশও গ্রহণ করা হবে না এবং সে দিন কোনাে কাজ বা কথা দিয়ে তাদের রবের করুণাপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণেরও কোনাে সুযােগ দেয়া হবে না। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর সাথে সাথে পরিমাপ করা তওবা করা বা নিজেদেরকে শােধরানাের সকল সুযােগ শেষ হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর শুধু হিসাব নিকাশ হওয়া ও পুরস্কার বা শাস্তি গ্রহণ করা ছাড়া অন্য সকল প্রকার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘যখন যালেমরা আযাব দেখতে শুরু করবে তখন তাদের আযাবকে কোনাে প্রকার হালকা করাও হবে না অথবা তাদের অবস্থাকে কোনােভাবেই পুনর্বিবেচনা করা হবে না।’ ওপরের আয়াতগুলােতে এরপর দেখা যায়, বর্ণনা ধারা কেটে গিয়ে আসছে সেসব মােশরেকদের দৃশ্য যারা আল্লাহর ক্ষমতায় অন্যদের অংশীদার করে এবং তাদের দাসত্ব করতাে, তাদের বানিয়ে দেয়া আইন কানুন মানতাে। সেসব শরীকদেরকে দেখিয়ে তারা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এর কাছে আরয করবে, বলবে, ‘হে আমাদের রব, ওই হচ্ছে আমাদের সেই সব মাবুদ যাদেরকে আপনার ক্ষমতার অংশীদার বলে মনে করতাম এবং আপনাকে বাদ দিয়ে তাদেরকেই আমরা সাহায্যের জন্যে ডাকতাম।’ রােজ হাশরের দিন ওরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়েই তারা একথা বলবে, অথচ এর আগে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে তারা তাদেরকে আল্লাহর শরীক বানিয়ে নিয়েছিলাে। সাধারণ মানুষের এই দুর্বলতার সুযােগ নিয়ে সমাজের নেতারা, নিজ নিজ স্বার্থে জনগণকে এমনভাবে ভেড়া বানিয়ে রাখতে যে স্বাধীনভাবে কোনাে চিন্তা করার সুযােগও তাদেরকে দিতাে না। নানা প্রকার ভয় দেখিয়ে, অর্থনৈতিক চাপে রেখে ও তাদের মধ্যে বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস সৃষ্টি করে নিজেদের কথা মানতে তাদেরকে বাধ্য করতাে এবং বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কৌশলে তারা নিজেদের হাতে কর্তৃত্ব ধরে রাখতাে। তাদেরকে বুঝাতাে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর।’ নিজেদের স্বার্থে মানুষের ওপর এই যুলুম প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছিলাে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে। আফ্রিকার নিগ্রোদেরকে ধরে এনে যখন আমেরিকার ধনকুবেররা অসহায় দাসে পরিণত করছিলাে এবং স্থানীয় নিগ্রোদেরকে যখন তারা অন্যান্য আমেরিকানদের মতাে নাগরিক স্বাধীনতা দিচ্ছিলাে না তখন আব্রাহাম লিংকন উদাত্ত কণ্ঠে বলে উঠেছিলেন, ‘Man was born free; but everywhere he is in chains. আর কেয়ামতের দিন ওই দেব দেবীদের সম্পর্কে এই আইন প্রনেতা বিধান দাতা নেতাদের সম্পর্কে ওরা বলবে না যে, ওরা আল্লাহর শরীক, বরং বলবে ‘ওরা আমাদের শরীক অর্থাৎ আমরা আমাদের অন্ধত্বের কারণে ওদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে করতাম। সে দিন কিন্তু ওইসব শরীকরা অর্থাৎ ওইসব ধর্ম যাজক বা সমাজপতিরা যারা মানুষকে ভুলের মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে অন্ধভাবে তাদের আনুগত্য করতে বাধ্য করতাে এই মারাত্মক ধোকাবাজি করার অপরাধে লিপ্ত থাকার কথা স্মরণ করে ভয়ে কাঁপতে থাকবে। কেয়ামতের ওই কঠিন দিনে তার মুখােমুখি হবে তাদের ওইসব অন্ধভক্ত দাসদের যারা সেদিন সকল ভয়ের উর্ধে উঠে যাবে এবং তাদের মুখের ওপর কথা ছুড়ে দিয়ে তারা বলে উঠবে, তোমরা, অবশ্যই তােমরা মহামিথ্যাবাদী। এসময় তারা আল্লাহর দিকে মুখ করে আত্মসমর্পণ করবে এবং অনুনয় বিনয় করতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা সেদিন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তাদের উদ্ভাবিত সকল কথা সেদিন নিষ্ফল হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ মােশরেকরা তাদের এইসব মনগড়া কাজ কর্মের কারণে এমন কোনাে কিছুর অধিকারী হবে না, যার বিনিময়ে সেই কঠিন দিনে তারা শান্তি থেকে মুক্তি পেতে পারে। এরশাদ হচ্ছে, ‘সেদিন সে সব কিছু নিস্ফল হয়ে যাবে যা কিছু মনগড়া ও মিথ্যা তারা তৈরী করে বলতে এবং অনুসরণ করতাে। এ কথার ওপর এখানে আলােচনা শেষ হচ্ছে যে, কুফরী যারা করেছিলাে অপরকে কুফরী করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাে এবং মানুষকে সত্যপথ গ্রহণ করায় বাধা দিয়েছিলাে তাদেরকে দ্বিগুন আযাব দেয়া হবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যারা কুফুরী করেছিলাে আর মানুষকে আল্লাহর পথে আসা থেকে বাধা দিয়েছিলাে, উপর্যুপরি আযাব দিয়ে তাদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেবাে, যেহেতু তারা (পৃথিবীর বুকে) বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে থেকেছে।’ অর্থাৎ কুফুরী করা অর্থাৎ আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাস অথবা তার আইন বাদ দিয়ে নিজেরা আইন তৈরী করে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া-ই হলাে সবচেয়ে বড় ফাসাদ বড়াে কুফরী, এই কুফুরীই হলাে সকল বিশৃংখলা ও অশাস্তির মূল-এ বিষয়ে যে কোনাে চিন্তাই একটি বিপর্যয়, আর এহেন বিশ্বাসের গােলমালের কারণে তারা বাস্তবে বহু কুফরী কাজে লিপ্ত রয়েছে, যার ফল শুধু অশান্তিই অশান্তি এবং এটাই এক বিরাট অপরাধ। দ্বিতীয় অপরাধটি হচ্ছে অপরকে হেদায়াতের পথ থেকে সরিয়ে রাখা-এজন্যে তাদেরকে যহুশুণ বেশী আযাব দেয়া হবে। সকল জনপদের জন্যেই এটা সাধারণ অবস্থা। অর্থাৎ, যে কোনাে ব্যক্তি ওপরে বর্ণিত মতে অন্যায় কাজ করবে তাদের সবার অবস্থা একই হবে।
# তারপর রসূলুল্লাহ(স.)-এর সাথে তাঁর জাতির ব্যবহারকে কেন্দ্র করে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলাে সেই অবস্থাটাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর সেই দিনকে স্মরণ করা দরকার যে দিন আমি, আল্লাহ তায়ালা, প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে একজন সাক্ষ্য দানকারীকে…. রহমত এবং সকল মুসলমানের জন্যে যা সুসংবাদ দানকারী।'(আয়াত ৮৯) এখানে মােশরেকদের যে পরিণতির কথা উল্লেখিত হয়েছে তার আলােকে এবং কেয়ামতের ওই ভয়ংকর দিনে তখন কাফেররা তাদের অলীক দেব-দেবী বা সমাজ পতিদের কাছ থেকে সকল প্রকার সম্পর্ক মুক্তির ঘােষণা দেবে, সেই অবস্থার প্রেক্ষাপটে এবং যখন ওই সব ব্যক্তিত্ব যাদের আল্লাহর সাথে শরীক করা হলে, তারা যখন এই অপরাধের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতার কথা জানাবে তখনকার করুণ ও অসহায় অবস্থাকে সামনে রেখেই মক্কার কোরায়শদের সাথে রসূলুল্লাহ(স.)-এর অবস্থাকে পরিমাপ করা হয়েছে, ‘যেদিন প্রত্যেক উম্মত থেকেই একজন সাক্ষ্যদানকারীকে বের করে আনা হবে’ অর্থাৎ, সময় মতােই এ অবস্থা তার সকল বিভীষিকা নিয়ে হাযির হয়ে যাবে, আর একই সময়ে। ‘হে রসূল, তােমাকেও আনা হবে জাতির ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে।…’ এরপর জানানাে হচ্ছে যে, ‘যে কিতাব রসূলের কাছে এসেছে, তা সব কিছুর ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দানকারী।…’ অতএব, এ কিতাব নাযিল হওয়ার পর আর কারাে কোনাে তর্কবিতর্ক করার সুঘােগ নেই। এবং কোনাে ব্যক্তির কোনাে ওযর ওজুহাত দেখানাের মতােও কোনো অবকাশ নেই, কারণ মুসলমানদের জন্যে এ কিতাব ‘হেদায়াত ও রহমত’। অতএব হেদায়াত ও রহমত যে পেতে চাইবে তার প্রথম কাজ হচ্ছে, ওই কঠিন ও ভয়ংকর দিন আসার পূর্বেই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে তার হুকুম মতাে জীবন যাপন করা। আর এইভাবে কোরআন মজীদে, আলােচ্য বিষয়টিকে যথাযথভাবে হৃদয়গ্রাহী করার জন্যে কেয়ামতের দৃশ্যাবলী তুলে ধরা হচ্ছে, যেন এ দৃশ্যাবলীর বিবরণ বাস্তব ছবির মতাে মানুষের অন্তর্দৃষ্টিতে ফুটে উঠে তাকে সত্যের দিকে এগিয়ে দিতে পারে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# ৮৪-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর
কিয়ামতের দিন মুশরিকদের যে দূরবস্থা ও দুর্গতি হবে, আল্লাহ তাআলা এখানে তারই খবর দিচ্ছেন। ঐদিন প্রত্যেক উম্মতের বিরুদ্ধে তার নবী সাক্ষ্য প্রদান করবেন যে, তিনি তাদের কাছে আল্লাহর কালাম পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
অতঃপর কাফিরদেরকে কোন ওযর পেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। কেননা, তাদের ওযর যে বাতিল ও মিথ্যা এটা তো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা এমন একদিন যেদিন কারো বাকস্ফুর্তি হবে না, এবং তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না অপরাধ স্থালনের।” (৭৭:৩৫-৩৬)
মুশরিকরা আযাব দেখবে, তাদের আযাব হ্রাস করা হবে না এবং এক ঘন্টার জন্যেও শাস্তি হালকা হবে না এবং তারা অবকাশও পাবে না। অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। জাহান্নাম এসে পড়বে যা সত্তর হাজার লাগাম বিশিষ্ট হবে। একটি লাগামের উপর নিযুক্ত থাকবেন সত্তর হাজার ফেরেশতা। তাদের মধ্যে একজন গ্রীবা বের করে এমনভাবে ক্রোধ প্রকাশ করবেন যে, সমস্ত হাশরবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে হাটুর ভরে পড়ে যাবে। এ সময় জাহান্নাম নিজের ভাষায় সশব্দে ঘোষণা করবেঃ “আমাকে প্রত্যেক অবাধ্য ও হঠকারীর জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করেছে এবং এরূপ এরূপ কাজ করেছে। এভাবে সে কয়েক প্রকারের পাপীর কথা উল্লেখ করবে, যেমন হাদীসে রয়েছে। অতঃপর সে সমস্ত লোককে জড়িয়ে ধরবে এবং হাশরের মাঠে তাদেরকে লাফিয়ে ধরবে যেমন পাখী চঞ্চু দ্বারা খাদ্য ধরে খেয়ে থাকে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “দূর হতে অগ্নি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে ওর ক্রুদ্ধ গর্জন ও চীৎকার। আর যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় ওর কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে। তাদেরকে বলা হবেঃ আজ তোমরা একবারের জন্যে ধ্বংস কামনা করো না। বহুবার ধ্বংস হওয়ার কামনা করতে থাকো।” (২৫:১২-১৪)
আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “অপরাধীরা জাহান্নাম দেখে ধারণা করবে যে, তাদেরকে ওর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে এবং তারা ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় দেখতে পাবে না। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “যদি কাফিররা ঐ সময়ের কথা জানতে পারতো! যখন তারা নিজেদের চেহারা ও কোমরের উপর হতে জাহান্নামের আগুন দূর করতে পারবে না, তারা কোন সাহায্যকারীও পাবে না, হঠাৎ আল্লাহর শাস্তি তাদেরকে হতভম্ব করে ফেলবে!
ঐ শাস্তি দূর করার তাদের ক্ষমতা থাকবে, না তাদেরকে এক মুহূর্তকাল অবকাশ দেয়া হবে।”
ঐ সময় মুশরিকরা তাদের ঐ বাতিল মা’বূদদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে যাদের তারা জীবন ধরে ইবাদত করে এসেছিল। কারণ, এ সময় তারা তাদের কোনই কাজে আসবে না। তাদের মা’বূদদেরকে দেখে তারা বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরা তারাই যাদের আমরা দুনিয়ায় ইবাদত করতাম।” তখন তারা উত্তরে বলবেঃ “তোমরা মিথ্যাবাদী। আমরা কখন তোমাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাদেরই ইবাদত করো?” এ সম্পর্কেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “ওদের চেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে, যারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে আহ্বান করে যারা কিয়ামত পর্যন্তও তাদের আহ্বানে সাড়া দিতে পারবে না। বরং তাদের ডাক থেকেও তারা। উদাসীন? হাশরের দিন তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে।” অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য মাবুদ গ্রহণ করে, যেন তারা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়; তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।” হযরত খলীলও (আঃ) একথাই বলেছিলেনঃ (আরবি), অর্থাৎ “অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের একে অপরকে অস্বীকার করবে।” (২৯:২৫) আর এক আয়াতে আছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের শরীকদেরকে আহবান কর।” (২৮:৬৪) এ বিষয়ের আরো বহু আয়াত কুরআন কারীমে বিদ্যমান রয়েছে। এ দিন সবাই মুসলমান ও অনুগত হয়ে যাবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেদিন তারা আমার নিকট আসবে সেইদিন তারা খুবই শ্রবণকারী ও দর্শনকারী হয়ে যাবে।” (১৯:৩৮) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হায়! তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে অধোবদন হয়ে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম। (৩২:১২) অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ “ঐ দিন। সমস্ত চেহারা চিরঞ্জীব, স্বাধিষ্ঠ বিশ্বধাতার সামনে অধোমুখী হবে।” অর্থাৎ বাধ্য ও অনুগত হবে। তাদের সমস্ত অপবাদ প্রদান দূর হয়ে যাবে। শেষ হবে সমস্ত ষড়যন্ত্র ও চাতুরী। কোন সহায় সাহায্যকারী সাহায্যের জন্যে দাঁড়াবে না।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করবো কাফিরদের ও আল্লাহর পথে বাধাদানকারীদের; কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করতো। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে, কিন্তু তারা বুঝে না।
এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, কাফিরদের শাস্তিরও শ্রেণী বিভাগ থাকবে, যেমন মুমিনদের পুরস্কারের শ্রেণী বিভাগ হবে। আল্লাহ তাআলা যেমন বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যে রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা অবগত নও।” (৭:৩৮)
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জাহান্নামের শাস্তির সাথে সাথেই বিষাক্ত সর্পের দংশন বৃদ্ধি পাবে। সর্পগুলি এতো বড় বড় হবে যেমন বড় বড় খেজুরের গাছ। (এটা হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “আরশের নীচে পাঁচটি নদী রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। দিনেও এবং রাত্রেও।”
# আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) সম্বোধন করে বলছেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি ঐ দিনটিকে স্মরণ কর যেই দিন হচ্ছে তোমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত হওয়ার দিন।” এই আয়াতটি সূরায়ে নিসার নিম্নের আয়াতটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো। এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবো তখন কি অবস্থা হবে?” (৪:৪১) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনু মাসউদকে (রাঃ) সূরায়ে নিসা পাঠ করতে বলেন। যখন তিনি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “থাক, যথেষ্ট হয়েছে।” হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখেন যে, তার চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “এটা আমার অবতারিত কিতাব। সবকিছুই আমি তোমার সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি। সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত জিনিস এই কুরআন কারীমে রয়েছে। প্রত্যেক হালাল, হারাম, প্রত্যেক উপকারী বিদ্যা, সমস্ত কল্যাণ, অতীতের খবর, আগামী দিনের ঘটনাবলী, দ্বীন ও দুনিয়া, উপজীবিকা, পরকাল প্রভৃতির সমস্ত জরুরী আহকাম এবং অবস্থাবলী এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এটা হচ্ছে অন্তরের হিদায়াত, রহমত এবং সুসংবাদ।
ইমাম আওযায়ী (রাঃ) বলেন যে, সুন্নাতে রাসূলকে (সঃ) মিলিয়ে এই কিতাবে সমস্ত কিছুর বর্ণনা রয়েছে। এই আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক প্রধানতঃ এই যে, হে নবী (সঃ)! যিনি তোমার উপর এই কিতাবের তাবলীগ ফরয করেছেন এবং ওটা অবতীর্ণ করেছেন, তিনি কিয়ামতের দিন। তোমাকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন। যেমন তিনি (আল্লাহ) বলেনঃ “যাদের কাছে রাসূলদেরকে পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলদেরকে আমি অবশ্যই প্রশ্ন করবো। তোমার প্রতিপালকের শপথ! অবশ্যই আমি তাদের সকলকেই তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। সেই দিন তিনি রাসূলদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেনঃ “তোমাদেরকে কি উত্তর দেয়া হয়েছিল?” তারা উত্তর দিবেঃ “আমাদের কিছুই জানা নাই। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্যের খবর জানেন।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যিনি তোমার উপর কুরআনের তাবলীগ ফরয করেছেন তিনি। তোমাকে কিয়ামতের দিন তাঁর কাছে ফিরিয়ে এনে তার অর্পণকৃত দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।” (২৮:৮৫) এই আয়াতের তাফসীরের উক্তিগুলির মধ্যে এটি একটি উক্তি এবং এটা খুবই যথার্থ ও উত্তম উক্তি।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 84-89
وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ]
And on the Day when We resurrect a witness from each nation,]
www.motaher21.net
The Plight of the Idolators on the Day of Judgement
Allah says:
وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا
And on the Day when We resurrect a witness from each nation,
Allah tells about the predicament of the idolators on the Day when they will be resurrected in the realm of the Hereafter. He will raise a witness from every nation – that is – their Prophet, to testify about their response to the Message he conveyed from Allah.
ثُمَّ لَا يُوْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ
then, those who disbelieved will not be given leave.
meaning, they will not be allowed to offer any excuse, as Allah says:
هَـذَا يَوْمُ لَا يَنطِقُونَ
وَلَا يُوْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُونَ
That will be a Day when they do not speak. And they will not be permitted to present any excuse. (77:35-36)
Hence, Allah says:
وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ
وَإِذَا رَأى الَّذِينَ ظَلَمُواْ
nor will they be allowed (to return to the world) to repent and ask for Allah’s forgiveness. And once those who did wrong see,
meaning those who associated others in worship with Allah,
الْعَذَابَ فَلَ يُخَفَّفُ عَنْهُمْ
the torment, it will not decrease for them,
meaning it will not be reduced for them even for a moment.
وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ
nor will they be given respite.
meaning, it will not be delayed for them, rather they will be taken quickly from the place of gathering, with no calling to account.
Then Hell will be brought forth, pulled by seventy thousand ropes, each of which is held by seventy thousand angels, and a neck will stretch forth from Hell towards the people, and it will expel a gust of hot air. No one will be left but will fall to his knees.
Then it (the neck that is stretched forth) will say, “I have been entrusted to deal with every stubborn, arrogant one who joined another god with Allah,” and so and so, mentioning different types of people, as was reported in the Hadith.
Then it will come down upon them and pick them up from where they are standing as a bird picks up a seed.
Allah says:
إِذَا رَأَتْهُمْ مِّن مَّكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُواْ لَهَا تَغَيُّظاً وَزَفِيراً
وَإَذَا أُلْقُواْ مِنْهَا مَكَاناً ضَيِّقاً مُّقَرَّنِينَ دَعَوْاْ هُنَالِكَ ثُبُوراً
لااَّ تَدْعُواْ الْيَوْمَ ثُبُوراً وَحِداً وَادْعُواْ ثُبُوراً كَثِيراً
When it (Hell) sees them from a far place, they will hear its raging and its roaring. And when they are thrown into a narrow part of it, chained together, they will cry for destruction.
Today, do not scream for one destruction, but scream repeatedly for destruction. (25:12-14)
وَرَأَى الْمُجْرِمُونَ النَّارَ فَظَنُّواْ أَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوهَا وَلَمْ يَجِدُواْ عَنْهَا مَصْرِفًا
And the guilty shall see the Fire and apprehend that they are about to fall into it. And they will find no way to avoid it. (18:53)
لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَ يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ
If only those who disbelieved knew (about the time) when they will not be able to protect their faces nor their backs from the Fire, and they have no help.
Nay, it (the Fire) will come upon them all of a sudden and will perplex them, and they will have no power to avert it nor will they have any respite. (21:39-40)
The gods of the Idolators will disown Them at the Time when They need them most
Then Allah tells us that their gods will disown them when they need them most.
He says.
وَإِذَا رَأى الَّذِينَ أَشْرَكُواْ شُرَكَاءهُمْ
And when those who associated partners with Allah see their partners,
meaning, those whom they used to worship in this world.
قَالُواْ رَبَّنَا هَـوُلاء شُرَكَأوُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُوْ مِن دُونِكَ فَألْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ
they will say:”Our Lord! These are our partners whom we used to call upon besides you.”
But they will throw their statements back at them (saying):”You are indeed liars!”
i.e., those gods will say to them, `you are lying. We never commanded you to worship us.’
Allah says:
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لاَّ يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَـمَةِ وَهُمْ عَن دُعَأيِهِمْ غَـفِلُونَ
وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُواْ لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمْ كَـفِرِينَ
And who is more astray than one who calls upon others besides Allah, such as will not answer him till the Day of Resurrection, and who are (even) unaware of their invocations to them And when the people are gathered (on the Day of Resurrection), they (false deities) will become their enemies and will deny their worship, (46:5-6)
وَاتَّخَذُواْ مِن دُونِ اللَّهِ ءالِهَةً لِّيَكُونُواْ لَهُمْ عِزّاً
كَلَّ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَـدَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدّاً
And they have taken gods besides Allah, that they might give them honor, power and glory.
Nay, but they will deny their worship, and become their adversaries (on the Day of Resurrection). (19:81-82)
Al-Khalil (Ibrahim) said:
ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَـمَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ
but on the Day of Resurrection, you will disown each other. (29:25)
And Allah says:
وَقِيلَ ادْعُواْ شُرَكَأءَكُمْ
And it will be said (to them):”Call upon your partners.” (28:64)
And there are many other similar Ayat.
Everything will surrender to Allah on the Day of Resurrection
Allah says.
وَأَلْقَوْاْ إِلَى اللّهِ يَوْمَيِذٍ السَّلَمَ
And they will offer (their full) submission to Allah on that Day,
Qatadah and Ikrimah said:
“They will humble themselves and surrender on that Day,”
i.e., they will all surrender to Allah, there will not be anyone who does not hear and obey.
As Allah says:
أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا
How clearly will they see and hear, the Day when they will appear before Us! (19:38)
meaning, they will see and hear better than they have ever seen and heard before.
And Allah says:
وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُواْ رُءُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَأ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا
And if you only could see when the guilty hang their heads before their Lord (saying):”Our Lord! We have now seen and heard.” (32:12)
وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَىِّ الْقَيُّومِ
And (all) faces shall be humbled before the Ever Living, the Sustainer. (20:111)
meaning, they will humble and submit themselves.
وَأَلْقَوْاْ إِلَى اللّهِ يَوْمَيِذٍ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
And they will offer (their full) submission to Allah on that Day, and what they falsely invented will wander away from them.
The things that they used to worship which were all based on fabrications and lies, will all disappear, and they will have no helper or supporter, and no one to turn to.
Those among the Idolators who corrupted Others will receive a Greater Punishment
Then Allah tells us.
الَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا
فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُواْ يُفْسِدُونَ
Those who disbelieved and tried to obstruct the path of Allah, for them We will add torment,
meaning one punishment for their disbelief and another punishment for turning others away from following the truth, as Allah says:
وَهُمْ يَنْهَوْنَ عَنْهُ وَيَنْأَوْنَ عَنْهُ
And they prevent others from him and they themselves keep away from him. (6:26)
meaning they forbade others to follow him and they themselves shunned him, but:
وَإِن يُهْلِكُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
they destroyed only themselves, while they do not realize it.
This is evidence that there will be varying levels of punishment for the disbelievers, just as there will be varying degrees of Paradise for the believers, as Allah says:
قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ
For each one there is double (torment), but you know not. (7:38).
Every Prophet will bear Witness against his Nation on the Day of Resurrection
Allah addressed His servant and Messenger Muhammad, saying:
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ وَجِيْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَـوُلاء
And on the Day when We resurrect a witness from each nation from among themselves, and We bring you (O Muhammad) as a witness against these),
meaning, your Ummah.
The Ayah means:remember that Day and its terrors, and the great honor and high position that Allah has bestowed upon you.
This is like the Ayah with which Abdullah bin Mas`ud ended when he recited to the Messenger of Allah from the beginning of Surah An-Nisa’. When he reached the Ayah:
فَكَيْفَ إِذَا جِيْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِيْنَا بِكَ عَلَى هَـوُلاءِ شَهِيداً
How (will it be) then, when We bring from each nation a witness and We bring you (O Muhammad) as a witness against these! (4:41)
the Messenger of Allah said to him:
حَسْبُك
Enough.
Ibn Mas`ud said:
“I turned to him and saw his eyes streaming with tears.”
The Qur’an explains Everything
Allah says:
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ
(And We revealed the Book (the Qur’an) to you as an explanation of everything,) Ibn Mas`ud said:”﴿Allah﴾ made it clear that in this Qur’an there is complete knowledge and about everything.” The Qur’an contains all kinds of beneficial knowledge, such as reports of what happened in the past, information about what is yet to come, what is lawful and unlawful, and what people need to know about their worldly affairs, their religion, their livelihood in this world, and their destiny in the Hereafter.
وَهُدًى
a guidance,
means, for their hearts.
وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
a mercy, and good news for the Muslims.
Al-Awza`i said:
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ
(And We have revealed the Book (the Qur’an) as an explanation of everything),
meaning, with the Sunnah. The is the reason why the phrase,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ
(And We have revealed the Book to you), is mentioned immediately after the phrase,
وَجِيْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَـوُلاء
And We shall bring you (O Muhammad) as a witness against these.
the meaning – and Allah knows best – is that the One Who obligated you to convey the Book which He revealed to you, will also ask you about that on the Day of Resurrection.
فَلَنَسْـَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ
Then We shall indeed question those (people) to whom it (the Book) was sent and We shall indeed question the Messengers. (7:6)
فَوَرَبِّكَ لَنَسْـَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
عَمَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
So by your Lord We question them all about what they did. (15:92-92)
يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ قَالُواْ لَا عِلْمَ لَنَأ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّـمُ الْغُيُوبِ
On the Day when Allah gathers the Messengers together and says to them:”What was the response you received (to your Message)!”
They will say:”We have no knowledge, indeed only You are the Knower of all that is hidden.” (5:109)
And Allah says:
إِنَّ الَّذِى فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْءَانَ لَرَادُّكَ إِلَى مَعَادٍ
Verily, He Who obligated the Qur’an upon you (O Muhammad) will surely bring you back to the return. (28:85)
meaning, the One Who gave you the obligation of conveying the Qur’an will bring you back to Him, and your return will be on the Day of Resurrection, and He will question you about you commission of the duty He gave you.
This is one of the opinions, and it presents a good understanding of it.