أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٤٠) -৫৪৩
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
১৭১ নং আয়াত:-
وَإِذ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ
স্মরণ কর, আমি পর্বতকে তাদের ঊর্ধ্বে স্থাপন করি,
(And (remember) when We Nataqna the mountain over them),
وَ اِذۡ نَتَقۡنَا الۡجَبَلَ فَوۡقَہُمۡ کَاَنَّہٗ ظُلَّۃٌ وَّ ظَنُّوۡۤا اَنَّہٗ وَاقِعٌۢ بِہِمۡ ۚ خُذُوۡا مَاۤ اٰتَیۡنٰکُمۡ بِقُوَّۃٍ وَّ اذۡکُرُوۡا مَا فِیۡہِ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۱﴾٪
এবং আরো স্মরণ কর, আমি পর্বতকে তাদের ঊর্ধ্বে স্থাপন করি, আর তা ছিল যেন একখন্ড ছায়াদার মেঘ। তারা মনে করল যে, ঐটি তাদের উপর পড়ে যাবে। (বললাম,) আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ওতে যা আছে তা স্মরণ কর, যাতে তোমরা সাবধান হও।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
(أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِيْثَاقُ الْكِتَابِ)
‘কিতাবের অঙ্গীকার কি তাদের নিকট হতে নেয়া হয়নি’ অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা এ অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন:
(وَإِذْ أَخَذَ اللّٰهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ لَتُبَيِّنُنَّه۫ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُوْنَه۫ ﺡفَنَبَذُوْهُ وَرَا۬ءَ ظُهُوْرِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِه۪ ثَمَنًا قَلِيْلًا ط فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ)
“আর (স্মরণ কর!) যখন আল্লাহ তা‘আলা কিতাবধারীদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা অবশ্যই এটা লোকেদের মধ্যে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না; কিন্তু তারা ওটা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং ওটা অল্প মূল্যে বিক্রি করল, অথচ তারা যা ক্রয় করেছিল তা নিকৃষ্টতর।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৮৭)
(وَالَّذِيْنَ يُمَسِّكُوْنَ بِالْكِتَابِ)
‘যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে’ অর্থাৎ তাদের মধ্যে যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে, শক্তভাবে কিতাব ধারণ করবে (যার অর্থ) আসল তাওরাতের ওপর আমল করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুওয়াতের ওপর ঈমান আনবে, সালাত ইত্যাদি ভালভাবে আদায় করবে। তাহলে এমন সৎ কর্মশীলদের কর্মফল আল্লাহ তা‘আলা নষ্ট করবেন না। এখানে আহলে কিতাব বিশেষ করে ইয়াহূদীদের কথা বলা হচ্ছে।
(وَإِذْ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ)
‘স্মরণ কর, যখন আমি পর্বতকে তাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করেছিলাম’ এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন মূসা (আঃ) স্বজাতির নিকট তাওরাত নিয়ে এলেন ও তার আদেশ-নিষেধ পড়ে শুনালেন। তারা অভ্যাসমত তার ওপর আমল করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর পাহাড় তুলে ধরলেন যে, না মানলে পাহাড় চাপিয়ে শেষ করে দেয়া হবে। ভয়ে তারা আমল করার অঙ্গীকার করল।
কেউ কেউ বলেন: তাদের ওপর পাহাড় তোলার ঘটনা তাদেরই দাবী অনুসারে ঘটেছিল। তবে সঠিক কথা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এটা ছিল তূর পাহাড় যা সূরা বাকারার ৬৩ ও ৯৩ নং আয়াতে ঘটনাটির বর্ণনা রয়েছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 171
وَإِذ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ
(And (remember) when We Nataqna the mountain over them),
Raising Mount Tur over the Jews, because of Their Rebellion
Allah tells;
وَإِذ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُ ظُلَّةٌ وَظَنُّواْ أَنَّهُ وَاقِعٌ بِهِمْ
خُذُواْ مَا اتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُواْ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
And (remember) when We Nataqna the mountain over them as if it had been a canopy, and they thought that it was going to fall on them. (We said):”Hold firmly to what We have given you (the Tawrah), and remember that which is therein (act on its commandments), so that you may fear Allah and obey Him.”
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented on the Ayah,
وَإِذ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ
(And (remember) when We Nataqna the mountain over them),
“We raised the mountain, as Allah’s other statement testifies,
وَرَفَعْنَا فَوْقَهُمُ الطُّورَ بِمِيثَاقِهِمْ
(And for their covenant, We raised over them the mountain) (4:154).”
Also, Sufyan Ath-Thawri narrated that Al-A`mash said that, Sa`id bin Jubayr said that Ibn Abbas said,
“The angels raised the Mount over their heads, as reiterated by Allah’s statement,
وَرَفَعْنَا فَوْقَهُمُ الطُّورَ
(We raised over them the mountain) (4:154).”
Al-Qasim bin Abi Ayyub narrated that Sa`id bin Jubayr said that Ibn Abbas said,
“Musa later on proceeded with them to the Sacred Land. He took along the Tablets, after his anger subsided, and commanded them to adhere to the orders that Allah ordained to be delivered to them. But these orders became heavy on them and they did not want to implement them until Allah raised the mountain over them,
كَأَنَّهُ ظُلَّةٌ
(as if it had been a canopy), that is, when the angels raised the mountain over their heads.”
An-Nasa’i collected it.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি যখন বানী ইসরাঈলের মাথার উপর (তৃর) পাহাড়কে ছাদের মত লটকিয়ে দিলাম। যেমন আল্লাহ তা’আলার (আরবী) (অর্থাৎ “আমি তুর পাহাড়কে তাদের উপর উঠালাম”) (২:৯৩) এই উক্তি দ্বারা এটা প্রকাশিত হয়েছে। ফেরেশতারা এই পাহাড়টিকে উঠিয়ে তাদের মাথার উপর খাড়া করে রেখেছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মূসা (আঃ) যখন বানী ইসরাঈলকে নিয়ে পবিত্র ভূমির দিকে যাচ্ছিলেন এবং ক্রোধ প্রশমিত হওয়ার পর ফলকগুলো উঠিয়ে নিয়েছিলেন, আর তাবলীগের কর্তব্য সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশ তাদেরকে শুনিয়েছিলেন তখন তাদের কাছে। কঠিন ঠেকেছিল বলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ঐ সময় আল্লাহ তা’আলা তাদের মাথার উপর পাহাড়কে এনে খাড়া করে রেখেছিলেন, যেমন মাথার উপর ছাদ থাকে। ফেরেশতারা ঐ পাহাড়টিকে ধরে রয়েছিলেন এবং মূসা (আঃ) তাদেরকে বলেছিলেনঃ “দেখ, এটা হচ্ছে আল্লাহর অহী ও তার নির্দেশাবলী। এতে হালাল, হারাম, আদেশ ও নিষেধের উল্লেখ রয়েছে। তোমরা কবূল করছে কি না?” (এটা ইমাম নাসাঈ (রঃ) সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) হতে এবং তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন) তারা তাকে উত্তরে বলেছিলঃ “তাতে কি নির্দেশাবলী রয়েছে তা আমাদেরকে শুনিয়ে দিন। যদি এর বিধানগুলো সহজ হয় তবে অবশ্যই আমরা সেগুলো ককূর্ল করবো।” হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “যা আছে তা-ই তোমাদেরকে কবুল করতে হবে। তারা বললোঃ “না, যে পর্যন্ত আমরা অবহিত না হবো সেই পর্যন্ত কবুল করবো না।” কয়েকবার এই প্রশ্ন ও উত্তর চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পাহাড়কে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন যে, ওটা যেন স্বীয় জায়গা হতে উঠে গিয়ে আকাশে উড়তে উড়তে তাদের মাথার উপর ছেয়ে যায়। পাহাড় তাই করলো । মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “মহা মহিমান্বিত আল্লাহ যা কিছু বলছেন তা মানছো কি না? যদি তোমরা তাওরাতের বিধানসমূহ না মানে তবে এই পাহাড় তোমাদের উপর পড়ে যাবে। যখন তারা দেখলো যে, পাহাড় তাদের উপর পড়তেই চায় তখন মাথার বাম দিকের ভরে সিজদায় পড়ে গেল। আর ডান চক্ষু দিয়ে পাহাড়টির দিকে তাকাতে থাকলো যে, সত্যিই ওটা তাদের উপর পড়ে যায় না কি! এ কারণেই ইয়াহুদীরা যখনই সিজদা করে তখন বাম দিকের ভরেই করে এবং বলেঃ “শাস্তি উঠে যাওয়ার স্মারক হিসেবে আমরা এই সিজদা করলাম।” আৰূ বকর (রঃ) বলেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ) ফলকগুলো ছুঁড়ে ফেলেছিলেন যা ছিল আল্লাহর কিতাব এবং যা তাঁর কাছেই লিখিত হয়েছিল, তখন যমীনের প্রত্যেক পাহাড়, প্রতিটি গাছ এবং সমস্ত পাথর কেঁপে উঠেছিল! এ কারণেই প্রত্যেক ইয়াহুদী তাওরাত পাঠের সময় স্বীয় মস্তক আন্দোলিত করে থাকে। (এটা সানীদ ইবনে দাঊদ (রঃ) স্বীয় তাফসীরে হাজ্জাজ ইবনে মুহাম্মাদ (রঃ) হতে তাখরীজ করেছেন এবং তিনি আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন) আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে বেশী জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এটি সেই সময়ের ঘটনা, যখন মূসা (আঃ) তাদের নিকট তাওরাত নিয়ে এলেন ও তার আদেশ-নিষেধ পড়ে শোনালেন, তখন তারা অভ্যাস মত তার উপর আমল করতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। যার ফলে মহান আল্লাহ পাহাড়কে তাদের উপর তুলে ধরলেন যে, তোমাদেরকে পাহাড় চাপা দিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে। যার ভয়ে তারা তাওরাতের উপর আমল করার অঙ্গীকার করল। কেউ কেউ বলেন, পাহাড় তাদের উপর তোলার ঘটনা তাদেরই দাবী অনুসারে ঘটেছিল। যখন তারা বলেছিল, আমরা তাওরাতের উপর তখনই আমল করব যখন মহান আল্লাহ আমাদের মাথার উপর পাহাড়কে তুলে দেখাবেন। তবে প্রথম কথাটিই বেশি সঠিক বলে মনে হয়। (আর আল্লাহই অধিক জানেন।) এখানে সাধারণ পাহাড় তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে, পাহাড়ের কোন নাম নেওয়া হয়নি। কিন্তু এর পূর্বে সূরা বাক্বারার ২:৬৩ ও ২:৯৩ নং আয়াতে দুই জায়গায় এই ঘটনার উল্লেখ হয়েছে এবং সেখানে পরিষ্কারভাবে ত্বূর পাহাড়ের কথাই বলা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মূসা আলাইহিস সালামকে অঙ্গীকারনামা খোদিত শিলালিপি গুলো দেবার সময় সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিকে এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাইবেলে নিম্নোক্ত ভাষায় এ ঘটনাটি বর্ণনা দেয়া হয়েছেঃ “পরে মূসা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেয়ার জন্য লোকদেরকে শিবির থেকে বাইরে আনলেন। আর তারা পর্বতের তলায় দাঁড়ালো। তখন সমস্ত সিনাই পর্বত ওপর থেকে নীচে পর্যন্ত ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল। কারণ মহান আল্লাহ অগ্নিশিখার মধ্য দিয়ে তার ওপর নেমে এলেন। আর ভাঁটির ধোঁয়ার মত ধোঁয়া ওপরে উঠছিল এবং গোটা পর্বত ভীষণভাবে কাঁপছিল।” (যাত্র পুস্তক ১৯: ১৭-১৮)
এভাবে আল্লাহ কিতাবের বিধান মেনে চলার জন্য বনী ইসরাঈলীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেন। এ অঙ্গীকার নিতে গিয়ে বাইরে তাদের জন্য একটি বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যাতে আল্লাহর প্রতাপ-প্রতিপত্তি, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব এবং এ অঙ্গীকারের গুরুত্ব তাদের মনে পুরোপুরি অনুভূত হয় এবং বিশ্বজাহানের সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী শাহেনশাহের সাথে অঙ্গীকার ও চুক্তি সম্পাদন করাকে তারা যেন মামুলি ব্যাপার মনে করতে না পারে। এ থেকে এ ধারণা করা ঠিক হবে না যে, তারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করতে প্রস্তুত ছিল না, ভয় দেখিয়ে জোর জবরদস্তি করে তাদেরকে অঙ্গীকারাব্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তারা সবাই ছিল মু’মিন। সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে তারা গিয়েছিল অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সাথে মামুলীভাবে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবার পরিবর্তে এ অঙ্গীকারের অনুভূতি তাদের মনে ভালভাবে বদ্ধমূল করার চেষ্টা করেন। অঙ্গীকার করার সময় কোন মহাশক্তিধর সত্তার সাথে তারা অংগীকার করছে এবং তাঁর সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করার পরিণাম কি হতে পারে, তা যেন তারা অনুভব করতে পারবে, এটাই ছিল আল্লাহর অভিপ্রায়।
এখানে এসে বনী ইসরাঈল জাতিকে সম্বোধনের পালা শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী রুকূগুলোতে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। বিশেষ করে নবী ﷺ যাদেরকে সরাসরি ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, তাদেরকে লক্ষ্য করে বক্তব্য রাখা হয়েছে।