Book#535

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٣٢) -৫৩৫
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৪৮-১৫৪ নং আয়াত:-

عَن مُّوسَى الْغَضَبُ
মূসার ক্রোধ যখন ….
The anger of Musa…..

وَ اتَّخَذَ قَوۡمُ مُوۡسٰی مِنۡۢ بَعۡدِہٖ مِنۡ حُلِیِّہِمۡ عِجۡلًا جَسَدًا لَّہٗ خُوَارٌ ؕ اَلَمۡ یَرَوۡا اَنَّہٗ لَا یُکَلِّمُہُمۡ وَ لَا یَہۡدِیۡہِمۡ سَبِیۡلًا ۘ اِتَّخَذُوۡہُ وَ کَانُوۡا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۱۴۸﴾
(আরও স্মরণ কর) মূসার লোকেরা তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুরের মূর্তি তৈরী করল, যার শব্দ ছিল গরুর মতই। তারা কি দেখল না যে, ঐটি তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে পথও দেখায় না। তারা ঐটিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল। আর তারা ছিল অত্যাচারী।
وَ لَمَّا سُقِطَ فِیۡۤ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ رَاَوۡا اَنَّہُمۡ قَدۡ ضَلُّوۡا ۙ قَالُوۡا لَئِنۡ لَّمۡ یَرۡحَمۡنَا رَبُّنَا وَ یَغۡفِرۡ لَنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۱۴۹﴾
তারা যখন অনুতপ্ত হল ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
وَ لَمَّا رَجَعَ مُوۡسٰۤی اِلٰی قَوۡمِہٖ غَضۡبَانَ اَسِفًا ۙ قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُوۡنِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِیۡ ۚ اَعَجِلۡتُمۡ اَمۡرَ رَبِّکُمۡ ۚ وَ اَلۡقَی الۡاَلۡوَاحَ وَ اَخَذَ بِرَاۡسِ اَخِیۡہِ یَجُرُّہٗۤ اِلَیۡہِ ؕ قَالَ ابۡنَ اُمَّ اِنَّ الۡقَوۡمَ اسۡتَضۡعَفُوۡنِیۡ وَ کَادُوۡا یَقۡتُلُوۡنَنِیۡ ۫ۖ فَلَا تُشۡمِتۡ بِیَ الۡاَعۡدَآءَ وَ لَا تَجۡعَلۡنِیۡ مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۵۰﴾
আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও দুঃখিত অবস্থায় স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা কিই না জঘন্য কাজ করেছ! তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বেই কেন তোমরা তাড়াহুড়া করতে গেলে?’ সে ফলকগুলি ফেলে দিল[১] এবং তার ভাইকে মাথায় ধরে নিজের দিকে টেনে আনল। হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পুত্র (সহোদর)![২] লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল।[৩] সুতরাং তুমি আমাকে নিয়ে শত্রু হাসায়ো না[৪] এবং আমাকে অনাচারীদের দলভুক্ত গণ্য করো না।’ [৫]
قَالَ رَبِّ اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِاَخِیۡ وَ اَدۡخِلۡنَا فِیۡ رَحۡمَتِکَ ۫ۖ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ ﴿۱۵۱﴾٪
মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে তোমার করুণায় আশ্রয় দান কর। আর তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوا الۡعِجۡلَ سَیَنَالُہُمۡ غَضَبٌ مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَ ذِلَّۃٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُفۡتَرِیۡنَ ﴿۱۵۲﴾
(আল্লাহ বললেন,) নিশ্চয় যারা গোবৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছে অচিরেই পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আসবে। আর এভাবে আমি অপবাদ রচনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
وَ الَّذِیۡنَ عَمِلُوا السَّیِّاٰتِ ثُمَّ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِہَا وَ اٰمَنُوۡۤا ۫ اِنَّ رَبَّکَ مِنۡۢ بَعۡدِہَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۵۳﴾
পক্ষান্তরে যারা অসৎকাজ করে, অতঃপর তারা পরে তওবা করে ও ঈমান আনে (তাদের জন্য) এসব কিছুর পরেও তোমার প্রতিপালক নিশ্চয়ই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
وَ لَمَّا سَکَتَ عَنۡ مُّوۡسَی الۡغَضَبُ اَخَذَ الۡاَلۡوَاحَ ۚۖ وَ فِیۡ نُسۡخَتِہَا ہُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلَّذِیۡنَ ہُمۡ لِرَبِّہِمۡ یَرۡہَبُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾
মূসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হল, তখন সে ফলকগুলি তুলে নিল। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের জন্য ওর প্রতিলিপিতে ছিল পথ-নির্দেশ ও করুণা।
১৪৮-১৫৪ নং আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
**মূসা (আঃ) যখন চল্লিশ রাত্রির জন্য ত্বূর পাহাড়ে গেলেন, তখন সামেরী নামক এক ব্যক্তি সম্প্রদায়ের সোনার অলংকার জমা করে তা থেকে একটি বাছুর তৈরী করল। যার মধ্যে জিবরীল (আঃ)-এর ঘোড়ার পায়ের নীচের কিছু মাটি মিশিয়ে দিল যা তার কাছে রাখা ছিল এবং যার মধ্যে মহান আল্লাহ প্রাণ-প্রতিষ্ঠার শক্তি রেখেছিলেন। যার কারণে বাছুরটি গরুর মত শব্দ করত। (যদিও পরিষ্কার কথা বলতে ও পথ-নির্দেশ করতে অক্ষম ছিল; যেমন কুরআনের ভাষায় স্পষ্ট।) এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, সেটি সত্যি সত্যি রক্ত-মাংসের বাছুরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল, নাকি সেটি ছিল সোনারই, কিন্তু কোন প্রকারে তাতে হাওয়া প্রবেশ করার ফলে গরুর মত শব্দ বের হত। (ইবনে কাসীর) এই শব্দ দ্বারাই সামেরী বানী ইস্রাঈলকে এই বলে পথভ্রষ্ট করল যে, এটিই তোমাদের মাবূদ (উপাস্য)। মূসা (আঃ) ভুলে গেছেন এবং তিনি উপাস্যের খোঁজে ত্বূর পাহাড়ে গেছেন। এই ঘটনা সূরা ত্বাহা ২০:৮৮-৮৯নং আয়াতেও বর্ণিত হবে।

*سُقط في أيديهم এটি একটি পরিভাষা, যার অর্থঃ লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া। তাদের এ অনুতাপ মূসা (আঃ)-এর ফিরে আসার পর হল, যখন তিনি তাদেরকে এর উপর তিরস্কার করলেন ও ধমক দিলেন; যেমন সূরা ত্বাহা ২০:৯৭নং আয়াতে আছে। এখানে আগে এই জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাদের কাজ ও কথার বর্ণনা একত্রে হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর)

*** [১] মূসা (আঃ) যখন এসে দেখলেন যে, তারা বাছুরের পূজা শুরু করেছে, তখন অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। আর তাড়াহুড়োয় কাষ্ঠফলকগুলো — যা তিনি ত্বূর পাহাড় হতে এনেছিলেন — এমনভাবে রাখলেন যাতে দর্শকের মনে হল, যেন তিনি তা নীচে ফেলে দিলেন; যেটাকে কুরআন ‘ফেলে দিল’ বলে ব্যক্ত করেছে। তা সত্ত্বেও যদি তিনি ফেলেও থাকেন, তাহলেও এটি বেআদবী নয়। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ফলকের অসম্মান ছিল না; বরং দ্বীনী আত্মসম্মানবোধে আত্মহারা হয়ে বিনা ইচ্ছায় তিনি এ রকমটি করে ফেলেছিলেন।

[২] (মাথায় ধরে অথবা চুলে ধরে।) হারূন (আঃ) এখানে (মূসা (আঃ)-কে ভাই না বলে) মায়ের পুত্র বললেন। কারণ এ শব্দে মমতা বোধ ও ভালবাসা বেশি পাওয়া যায়।

[৩] হারূন (আঃ)-এর এই ওযর ছিল; যার কারণে তিনি জাতিকে শিরকের মত ভয়ানক পাপ থেকে বাধা দিতে সক্ষম হননি। এক তো নিজের দুর্বলতা, আর দুই বানী ইস্রাঈলের বিরোধিতা ও ঔদ্ধত্য; এমনকি (বারণ করার ফলে) তারা তাঁকে হত্যা পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়। ফলে তাঁকে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য চুপ থাকতে হয়। আর এ মত ক্ষেত্রে চুপ থাকার অনুমতি মহান আল্লাহও দিয়ে রেখেছেন।

[৪] আমাকে বকা-ঝকা করলে শত্রুরাই আনন্দিত হবে। অথচ এ সময় শত্রুদেরকে শায়েস্তা করা এবং তাদের প্রভাব থেকে জাতিকে বাঁচানোর সময়।

[৫] আর এমনিতেই আমাকে আকীদা ও আমলের দিক দিয়ে তাদের দলভুক্ত কিভাবে করা যেতে পারে? আমি না শিরক করেছি, না তাদেরকে শিরকের অনুমতি দিয়েছি, আর না আমি তাতে সন্তুষ্ট। শুধু মাত্র চুপ থেকেছি, তার জন্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ওজরও রয়েছে। সুতরাং আমার গণনা যালেম (মুশরিক)-দের মধ্যে কিভাবে হতে পারে? সেই জন্য মূসা (আঃ) নিজের জন্য ও ভাই হারূনের জন্য ক্ষমা ও দয়া চেয়ে দু’আ করলেন।

*আল্লাহর গযব (ক্রোধ) এই ছিল যে, তাদের তওবার জন্য হত্যা আবশ্যিক করা হল। আর এর পূর্বে তারা যতদিন জীবিত থাকল লাঞ্ছনা ও অপমানের উপযুক্ত বলে গণ্য হল।

* এই শাস্তি শুধুমাত্র তাদের জন্য নয়; বরং যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে, আমি তাদেরকে এই শাস্তিই দিয়ে থাকি।

* হ্যাঁ, যারা তওবা করে, আল্লাহ তাদের জন্য চরম ক্ষমাশীল পরম দয়াবান। জানা গেল যে, তওবার কারণে সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে শর্ত এই যে, তওবা বিশুদ্ধ হতে হবে।

** نُسخَة শব্দটি فُعلَة এর ওজনে منسوخ এর অর্থে (কপি, প্রতিলিপি)। আসল ও নকল উভয় কপিকেই نسخة বলা হয়। এখানে আসল ফলককে বুঝানো হয়েছে, যাতে তাওরাত লিখিত ছিল। অথবা নকলকৃত কপিকে বুঝানো হয়েছে, যা ফলকগুলিকে সজোরে ফেলে দেওয়ার ফলে ভেঙ্গে যাওয়ার পর নকল করা হয়েছিল। তবে প্রথমটিই সঠিক বলে মনে হয়। কেননা পরবর্তিতে বলা হচ্ছে যে, মূসা (আঃ) উক্ত ফলকগুলি তুলে নেন। যাতে বুঝা যায় যে, ফলকগুলি ভেঙ্গে যায়নি। যাই হোক, এখানে উদ্দেশ্য তার বিষয়-বস্তু।

* তাওরাতকেও কুরআনের মত ঐসকল লোকেদের জন্য পথনির্দেশ ও করুণা বলে গণ্য করা হয়েছে, যারা আল্লাহকে ভয় করে। কারণ আসমানী কিতাব থেকে উপকৃত এই শ্রেণীর লোকেরাই হয়ে থাকে। আর অন্যরা যেহেতু সত্য শোনা থেকে নিজেদের কানকে ও সত্য দেখা হতে নিজেদের চোখকে বন্ধ রাখে, সেহেতু তারা সাধারণতঃ এর উপকার হতে বঞ্চিত থাকে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 148-154
عَن مُّوسَى الْغَضَبُ

The anger of Musa….

Story of worshipping the Calf

Allah tells;

وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَى مِن بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلً جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ

And the people of Musa made in his absence, out of their ornaments, the image of a calf (for worship). It had a sound.

Allah describes the misguidance of those who worshipped the calf that As-Samiri made for them from the ornaments they borrowed from the Copts. He made the shape of a calf with these ornaments and threw in it a handful of dust from the trace of the horse that the Angel Jibril was riding, and the calf seemed to moo. This occurred after Musa went for the appointed term with his Lord, where Allah told him about what happened when he was on Mount Tur.

Allah said about His Honorable Self,

قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِن بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ السَّامِرِىُّ

(Allah) said:”Verily, We have tried your people in your absence, and As-Samiri has led them astray.” (20:85)

The scholars of Tafsir have different views over the calf, whether it actually became alive and mooing, or if it remained made of gold, but the air entering it made it appear to be mooing. These are two opinions. Allah knows best.

It was reported that when the statue mooed, the Jews started dancing around it and fell into misguidance because they adored it. They said that this, the calf, is your god and the god of Musa, but Musa forgot it!

Allah answered them,

أَفَلَ يَرَوْنَ أَلاَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلاً وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرّاً وَلَا نَفْعاً

Did they not see that it could not return them a word (for answer), and that it had neither power to harm them nor to do them good. (20:89)

Allah said here,

أَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلً

Did they not see that it could neither speak to them nor guide them to the way,

Allah condemned the Jews for falling into misguidance, worshipping the calf and ignoring the Creator of the heavens and earth, the Lord and King of all things. They worshipped besides Him a statue made in the shape of a calf, that seemed to moo, but it neither spoke to them nor brought them any benefit. Rather, their very sense of reason was blinded because of ignorance and misguidance.

اتَّخَذُوهُ وَكَانُواْ ظَالِمِينَ

They took it (for worship) and they were wrongdoers.

Allah’s statement.

وَلَمَّا سُقِطَ فَي أَيْدِيهِمْ

And when they regretted,

and felt sorrow for their action,

وَرَأَوْاْ أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّواْ قَالُواْ

لَيِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

and saw that they had gone astray, they said:”If our Lord have not mercy upon us and forgive us, we will certainly become among the losers.”

or among the destroyed ones. This was their recognition of their sin and their way of seeking salvation from Allah the Most Mighty and Majestic.
Allah tells;

وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَى إِلَى قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا

And when Musa returned to his people, angry and grieved,

Allah states that when Musa returned to his people after conversation with his Lord, he became angry and full of regret.

Abu Ad-Darda’ said that;
Asif, or regret, is the severest type of anger.

قَالَ بِيْسَمَا خَلَفْتُمُونِي مِن بَعْدِيَ

He (Musa) said:”What an evil thing is that which you have done during my absence.”

evil it is that which you committed after I departed and left you, by worshiping the calf,

أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ

Did you hasten in the matter of your Lord,

Musa said, `You wanted me to rush back to you, even though (being there) this was Allah’s decision!’

Allah said next,

وَأَلْقَى الالْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُ إِلَيْهِ

And he threw down the Tablets and seized his brother by his head and dragged him towards him.

This Ayah demonstrates the meaning of the Hadith,

لَيْسَ الْخَبَرُ كَالْمُعَايَنَة

Information is not the same as observation.

It indicates that Musa threw down the Tablets because he was angry at his people, according to the majority of scholars of early and latter times.

Allah said,
وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُ إِلَيْهِ
(and seized his brother by (the hair of), his head and dragged him towards him), for Musa feared that Harun might have not tried hard enough to forbid them from their evil action.

In another Ayah, Allah said,

قَالَ يهَـرُونُ مَا مَنَعَكَ إِذْ رَأَيْتَهُمْ ضَلُّواْ

أَلاَّ تَتَّبِعَنِ أَفَعَصَيْتَ أَمْرِى

قَالَ يَبْنَوُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِى وَلَا بِرَأْسِى إِنِّى خَشِيتُ أَن تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِى إِسْرءِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِى

He (Musa) said:”O Harun ! What prevented you when you saw them going astray. That you followed me not (according to my advice to you)! Have you then disobeyed my order!”

He (Harun) said:”O son of my mother! Seize (me) not by my beard, nor by my head! Verily, I feared lest you should say:`You have caused a division among the Children of Israel, and you have not respected (waited or observed) my word!”‘ (20:92-94)

Here, Allah said that;

قَالَ ابْنَ أُمَّ إِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُونِي وَكَادُواْ يَقْتُلُونَنِي

فَلَ تُشْمِتْ بِيَ الاعْدَاء وَلَا تَجْعَلْنِي مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

He (Harun) said:”O son of my mother! Indeed the people judged me weak and were about to kill me, so make not the enemies rejoice over me, nor put me among the people who are wrongdoers.”

Harun said, `Do not place me on the same level as they are, as if I was one of them.’

Further, Harun said, `O son of my mother’, so that Musa would feel more mercy and leniency towards him, even though Harun was also the son of Musa’s father. When Musa was satisfied that his brother was innocent,

وَلَقَدْ قَالَ لَهُمْ هَـرُونُ مِن قَبْلُ يقَوْمِ إِنَّمَا فُتِنتُمْ بِهِ وَإِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمَـنُ فَاتَّبِعُونِى وَأَطِيعُواْ أَمْرِى

And Harun indeed had said to them beforehand:”O my people! You are being tried in this, and verily, your Lord is (Allah) the Most Gracious, so follow me and obey my order.” (20:90)

this is when,

قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلَاخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ

وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
he (Musa) said , “O my Lord! Forgive me and my brother, and admit us into Your mercy, for you are the Most Merciful of those who show mercy.”

Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas said that the Messenger of Allah said,

يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى لَيْسَ الْمُعَايِنُ كَالْمُخْبِرِ أَخْبَرَهُ رَبُّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَّ قَوْمَهُ فُتِنُوا بَعْدَهُ فَلَمْ يَلْقَ الاَْلْوَاحَ فَلَمَّا رَاهُمْ وَعَايَنَهُمْ أَلْقَى الاَْلْوَاح

May Allah grant His mercy to Musa! Surely, he who observes (something) is nothing like he who is informed about it. His Lord, the Exalted and Most Honored, told him that his people were tested after him, but he did not throw the Tablets. When he saw them with his eyes, then he threw the Tablets.
Allah tells;

إِنَّ الَّذِينَ اتَّخَذُواْ الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا

Certainly, those who took the calf (for worship), wrath from their Lord and humiliation will come upon them in the life of this world.

The `wrath’ mentioned here that struck the Children of Israel because of their worshipping the calf, means, Allah did not accept their repentance until some of them [who did not worship the calf (killed others) who worshipped the calf]. We mentioned this story in Surah Al-Baqarah,

فَتُوبُواْ إِلَى بَارِيِكُمْ فَاقْتُلُواْ أَنفُسَكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِيِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

So turn in repentance to your Creator and kill yourselves (the guilty), that will be better for you before your Creator.” Then He accepted your repentance. Truly, He is the One Who accepts repentance, the Most Merciful. (2:54)

As for the humiliation mentioned in the Ayah, it pertains to the disgrace and humiliation that the Jews suffered in the life of this world.

Allah’s statement,

وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُفْتَرِينَ

Thus do We recompense those who invent lies!

is for all those who invent an innovation (in religion).

Surely, the disgrace resulting from inventing an innovation (in religion) and defying Allah’s Message, will be placed in the heart and from there on to the shoulders.

Al-Hasan Al-Basri said;

“The disgrace of innovation will weigh on their shoulders even if they were to gallop on their mules or trot on their work horses.”

Ayub As-Sakhtiyani narrated from Abu Qilabah Al-Jarmi that he commented on this Ayah,
وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُفْتَرِينَ
(Thus do We recompense those who invent lies),

“By Allah! This Ayah is for all those who invent a lie, until the Day of Resurrection.”

Also, Sufyan bin Uyaynah said,

“Every person who invents a Bid`ah (innovation in the religion) will taste disgrace.”

Allah tells His servants that He accepts repentance from His servants for any sin, even Shirk, Kufr, hypocrisy and disobedience.

Allah said.

وَالَّذِينَ عَمِلُواْ السَّيِّيَاتِ ثُمَّ تَابُواْ مِن بَعْدِهَا وَامَنُواْ

إِنَّ رَبَّكَ

But those who committed evil deeds and then repented afterwards and believed, verily, your Lord, (O Muhammad, Messenger of Repentance and Prophet of Mercy),

مِن بَعْدِهَا

after that,

after committing that evil action,

لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

is indeed Oft-Forgiving, Most Merciful.

Ibn Abi Hatim reported that Abdullah bin Mas`ud was asked about a man committing fornication with a woman and then marrying her, and Ibn Mas`ud recited this Ayah,

وَالَّذِينَ عَمِلُواْ السَّيِّيَاتِ ثُمَّ تَابُواْ مِن بَعْدِهَا وَامَنُواْ إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

But those who committed evil deeds and then repented afterwards and believed, verily, your Lord after (all) that is indeed Oft-Forgiving, Most Merciful.

Abdullah recited this Ayah ten times, neither allowing nor disallowing it.

Musa picked up the Tablets when His Anger subsided

Allah said next,

وَلَمَّا سَكَتَ

And when calmed (and subsided),

عَن مُّوسَى الْغَضَبُ

the anger of Musa (with his people),

أَخَذَ الَالْوَاحَ

he took up the Tablets,

which he had thrown out of jealousy for Allah and anger for His sake, because of his people worshipping the calf,

وَفِي نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ

and in their inscription was guidance and mercy for those who fear their Lord.

Several scholars of Tafsir said that when Musa threw the Tablets on the ground they were shattered and he collected the pieces afterwards. Musa found in its inscription guidance and mercy, but the specific details of the Law was lost, so they said.

They also claimed that the shattered pieces of the Tablets still remained in the treasury safes of some Israelite kings until the Islamic State came into existence.

Only Allah knows if these statements are true.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
১৪৮-১৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:

বানী ইসরাঈলের বিভ্রান্ত লোকেরা বাছুর পূজা করেছিল। কিবতীদের নিকট থেকে যেসব অলংকার ধারে নেয়া হয়েছিল সেগুলো দ্বারা সামেরী একটি বাছুর তৈরী করেছিল। ওর পেটের মধ্যে ঐ মুষ্টির মাটি নিক্ষেপ করেছিল যা সে হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর ঘোড়ার পায়ের থেকে গ্রহণ করেছিল। সুতরাং ঐ বাছুরের মধ্য থেকে গাভীর মত শব্দ বের হতে লাগলো। এ সবকিছুই হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুপস্থিতির সময় ঘটেছিল। ভূরে আল্লাহ তা’আলা তাকে এই ফিত্না সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। তাই মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করা হচ্ছে- হে মূসা! তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে আমি তোমার কওমকে পরীক্ষায় ফেলেছি। অর্থাৎ সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে! ঐ বাছুরটিকে রক্ত-মাংস দ্বারা তৈরী করা হয়েছিল এবং ওর মধ্য থেকে শব্দ বের হচ্ছিল, না কি ওটাকে সোনা দ্বারা তৈরী করা হয়েছিল এবং ওর মধ্যে বাতাস প্রবেশ করেছিল, ফলে ওর মধ্য থেকে গাভীর শব্দ বের হচ্ছিল, এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কথিত আছে যে, ঐ বাছুরটিকে তৈরী করার পর যখন ওটা গাভীর মত শব্দ করতে শুরু করলো তখন জনগণ ওর চতুর্দিকে নাচতে নাচতে প্রদক্ষিণ করতে লাগলো এবং তারা বড় রকমের ফিত্রায় পতিত হলো। তারা পরস্পর বলাবলি করতে শুরু করলোঃ “এটাই আমাদের মা’রূদ এবং মূসারও (আঃ) মা’রূদ। মূসা (আঃ) ভুলের মধ্যে পতিত হয়েছেন। তাই ইরশাদ হচ্ছে- “তারা কি এটুকুও বুঝে না যে, ওটা শব্দ করছে তাতে কি হয়েছে? ওটাতো তাদের কোন কথার উত্তর দিতে পারে না! না তাদের কোন উপকার করতে পারে, না কোন ক্ষতি করতে পারে!” সুতরাং অত্র আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “তারা কি দেখেনি যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখায় না? তবুও তারা ওটাকে মা’বূদরূপে গ্রহণ করে নিলো, বস্তুতঃ তারা ছিল বড় অত্যাচারী।” তারা বাছুরকে মাবুদরূপে গ্রহণ করার ফলে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকেও ভুলে বসলো। তাদের অন্তরে অজ্ঞতা ও মূখতার পর্দা পড়ে গেছে। যেমন ইতিপূর্বে হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন কিছুর মহব্বত তোমাদেরকে অন্ধ ও বধির করে ফেলবে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) অতঃপর যখন তারা নিজেদের কর্মের উপর লজ্জিত হলো এবং বুঝতে পারলো যে, বাস্তবিকই তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলোঃ “যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে আমরা বড়ই ক্ষগ্রিস্ত হয়ে পড়বো ও ধ্বংস হয়ে যাবো। যাহাক তারা নিজেদের পাপকে স্বীকার করে নিলো এবং অনুশোচনা করলো। কেউ কেউ য়্যারহামনা এর (আরবী) স্থলে দ্বারা তারহামনা ও য়্যাগফিরলানা এর স্থলে তাগফিরলানা পড়েছেন। এইভাবে (আরবী) কর্তা হওয়ার পরিবর্তে (আরবী) বা সম্বোধন হয়ে যাচ্ছে।

মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ তা’আলার সাথে বাক্যালাপ করে স্বীয় কওমের নিকট ফিরে আসেন তখন তিনি ছিলেন অত্যন্ত রাগান্বিত ও ভারাক্রান্ত। অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ “তোমাদের নিকট থেকে আমার বিদায়ের পর বাছুর-পূজায় লিপ্ত হয়ে তোমরা বাস্তবিকই অত্যন্ত অন্যায় ও মন্দ কাজ করেছে। তোমরা কি অতি তাড়াতাড়ি আল্লাহর শাস্তি ডেকে আনার ইচ্ছা করেছিলে? আর আল্লাহর বাক্যালাপ থেকে সরিয়ে আমাকে সত্বর ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলে?” কিন্তু এটাই ছিল ভাগ্যের লিখন। কঠিন রাগের ভরে তিনি ফলকগুলো মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেন এবং ভাই হারূন (আঃ)-এর মাথা ধরে নিজের দিকে সজোরে টেনে আনেন। কথিত আছে যে, এই ফলকগুলো মূল্যবান পাথর ও মণি-মানিক্য দ্বারা নির্মিত ছিল। এই ঘটনাটি নিম্নের হাদীসটিকে প্রমাণিত করছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শ্রুত সংবাদ দৃশ্যের মত নয়।” আর প্রকাশ্য বচন হচ্ছে এই যে, হযরত মূসা (আঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে ফলকগুলো কওমের সামনে নিক্ষেপ করেন। এটা হচ্ছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুরুজনদের উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এই উক্তিটি গারীব বা দুর্বল। এর ইসনাদ বিশুদ্ধ নয়। অধিকাংশ আলিম বলেছেন যে, এটা প্রত্যাখ্যান করার যোগ্য। সম্ভবতঃ কোন আহলে কিতাবের যখীরা হতে কাতাদা (রঃ) এটা নকল করেছেন। আর আহলে কিতাবের মধ্যে তো মিথ্যাবাদী, বানানো কথার কথক এবং যিন্দীক বহু রয়েছে। হযরত মূসা (আঃ) যে স্বীয় ভ্রাতা হারূন (আঃ)-কে তাঁর মাথা ধরে টেনেছিলেন তার কারণ ছিল এই যে, তার ধারণায় হারূন (আঃ) জনগণকে বাছুর পূজায় বাধা দেয়ার ব্যাপারে। অবহেলা করেছিলেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে- “হে হারূন (আঃ)! তুমি যখন দেখলে যে, জনগণ এই গুমরাহী অবলম্বন করেছে তখন তোমাকে আমার নির্দেশের উপর চলতে কিসে বাধা দিয়েছে। আমার হুকুম অমান্য করার সাহস তুমি পেলে কোথায়?” তখন হারূন (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি বা মাথার চুল ধরে টেনে না, আমার এ ভয় তো ছিলই যে, তুমি না জানি বলবে-তুমি আমার জন্যে কেন অপেক্ষা করনি এবং বানী ইসরাঈলকে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে কেন নিক্ষেপ করেছো? হে আমার ভাই! এ লোকগুলো আমার কোনই পরওয়া করেনি। তারা আমাকে দুর্বল মনে করেছিল। এমন কি তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। শত্রুদের সামনে তুমি আমাকে হাস্যস্পদ করো না এবং আমাকে এই অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য করো না।” “হে আমার মায়ের পুত্র’ হারূন (আঃ)-এর এ ভাষা প্রয়োগের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মূসা (আঃ)-এর মনকে আকর্ষণ করা। যেন তাঁর প্রতি দয়ার উদ্রেক হয়। নচেৎ, তিনি পিতা ও মাতা উভয়ের দিক থেকেই তো মূসা (আঃ)-এর ভাই ছিলেন। যখন মূসা (আঃ)-এর কাছে তাঁর ভাই হারুন নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তখন তিনি হারুন (আঃ)-কে ছেড়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে যে, হারূন পূর্বেই লোকদেরকে বলে দিয়েছিলেনঃ “হে লোকেরা! তোমরা ফিন্যায় পড়তে যাচ্ছ। তোমাদের মা’রূদ গো-বৎস নয়, বরং মা’বুদ হচ্ছেন রহমান (আল্লাহ)। তোমরা আমাকেই অনুসরণ কর এবং আমার কথা মেনে চল।” এ জন্যেই মূসা (আঃ) বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের উভয়কে আপনার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন। আপনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় দয়ালু।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)-এর উপর দয়া করেন। দর্শকের কথা ও শ্রোতার কথা পৃথক হয়ে থাকে। মহা মহিমান্বিত আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে সংবাদ দিয়েছিলেন- “তোমার অনুপস্থিতির সুযোগে তোমার কওম শিকের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।” একথা শুনে তিনি ফলকগুলো নিক্ষেপ করেননি। কিন্তু যখন তিনি স্বচক্ষে তাদেরকে শিরুকের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে দেখলেন তখন তিনি ক্রোধভরে ফলকগুলো ছুঁড়ে ফেললেন।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে মরিফুরূপে বর্ণনা করেছেন)

 

গো-বৎস পূজার শাস্তিস্বরূপ বানী ইসরাঈলের উপর যে গযব নাযিল হয়েছিল তা ছিল এই যে, তাদের তাওবা ঐ পর্যন্ত ককূল হবে না যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশক্রমে পরস্পর একে অপরকে হত্যা করে ফেলে। যেমন সূরায়ে বাকারায় বলা হয়েছে- “তোমরা আল্লাহর বারগাহে এই তাওবা পেশ কর যে, তোমরা পরস্পর একে অপরকে হত্যা করে ফেল। আল্লাহ জানেন যে, এতেই তোমাদের মঙ্গল নিহিত রয়েছে। যখন তারা এরূপ করলো তখন তাদের তাওবা ককূল করে নেয়া হলো। তিনি তো হচ্ছেন দয়ালু প্রভু। কিন্তু দুনিয়ায় তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।”

(আরবী) অর্থাৎ ‘মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি। এই অপমান ও লাঞ্ছনা প্রত্যেক মিথ্যা রচনাকারীর জন্যে কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে । সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক বিদআতপন্থী এভাবেই অপমানিত হবে। যে বিদআত বের করবে সে এই শাস্তিই পাবে। রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা এবং বিদআতের বোঝা তার অন্তর থেকে বের হয়ে তার স্কন্ধের উপর এসে পড়বে। হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, সে পার্থিব জগতে জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করলেও তার চেহারায় অপমানের ছাপ লেগে যাবে। মিথ্যা রচনাকারী কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এ শাস্তি পেতে থাকবে।

আল্লাহ তা’আলা হচ্ছেন তাওবা কবুলকারী। যত বড়ই পাপী হাক না কেন, তাওবার পর আল্লাহ পাক সেই পাপীকে ক্ষমা করে দেবেন। যদি কেউ কুফরী, শিরক ও নিফাকের কাজ ও করে, অতঃপর আন্তরিকতার সাথে তাওবা করে তবে সেই পাপও আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।

ইরশাদ হচ্ছে-যে ব্যক্তি পাপ কার্যে লিপ্ত হওয়ার পর তাওবা করে এবং ঈমান আনয়ন করে, হে রহমতের রাসূল (সঃ)! জেনে রেখো যে, এর পরেও তোমার প্রতিপালককে তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে। হযরত হানে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, একটি লোক কোন একটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করলো, অতঃপর তাকে সে বিয়ে করে নিলো, এর কি হবে? উত্তরে তিনি এ আয়াতটিই পাঠ করলেনঃ “যারা খারাপ কাজ করে, এরপর তাওবা করে ও ঈমান আনে (তাদের আশান্বিত হওয়া উচিত যে,) আল্লাহ এর পরেও ক্ষমাশীল ও দয়ালু (হতে পারেন)।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) দশবার এই আয়াতটি পাঠ করেন। তিনি তাদেরকে এর নির্দেশও দিলেন না এবং তা থেকে নিষেধও করলেন না। (এ হাদীসটিও ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ পাক বলেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ)-এর ক্রোধ প্রশমিত হলো তখন তিনি প্রস্তর ফলকগুলো উঠিয়ে নিলেন যেগুলো তিনি কঠিন ক্রোধের কারণে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। তাঁর এ কাজটা ছিল মূর্তিপূজার প্রতি ঘৃণা ও ক্রোধের কারণে। ইরশাদ হচ্ছে। এর মধ্যে হিদায়াত ও রহমত ছিল ঐ লোকদের জন্যে যারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। অধিকাংশ মুফাসসির বলেন যে যখন তিনি ওগুলো নিক্ষেপ করেছিলেন তখন সেগুলো ভেঙ্গে গিয়েছিল। তারপর তিনি সেগুলো একত্রিত করেছিলেন। এর উপর ভিত্তি করেই পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজন বলেন যে, ঐ ভাঙ্গা ফলকগুলোতে হিদায়াত ও রহমতের আহকাম লিপিবদ্ধ ছিল। কিন্তু তফসীল সম্পর্কিত আহকাম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হয় যে, ইসরাঈলী বাদশাহদের পুস্তকাগারে ইসলামী শাসনের যুগ পর্যন্ত এই খণ্ডগুলো বিদ্যমান ছিল। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু এ কথার উপর স্পষ্ট দলীল রয়েছে যে, ছুঁড়ে ফেলার কারণে ঐ প্রস্তর ফলকগুলো ভেঙ্গে গিয়েছিল। এ ফলকগুলো জান্নাতের মূল্যবান পাথর দ্বারা নির্মিত ছিল। আল্লাহ পাক খবর দেন যে, যখন মূসা (আঃ) ওগুলো উঠিয়ে নেন তখন তিনি, ওতে হিদায়াত ও রহমত প্রাপ্ত হন। (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। (আরবী) -এর সম্পর্কে কাতাদা (রঃ) বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি ফলকগুলোতে লিখিত পাচ্ছি যে, একটি সর্বোত্তম উম্মত হবে যারা সদা সর্বদা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। হে আমার প্রভু! ওদেরকে আমার উম্মত করুন!” আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)! এটা তো আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত হবে।” পুনরায় মূসা (আঃ) বললেনঃ “হে আমার প্রভু! এই ফলকগুলোর মধ্যে এমন এক উম্মতকে দেখতে পাচ্ছি যারা সর্বশেষে আসবে কিন্তু সকলের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে আমার প্রভু! ওদেরকে আমার উম্মত করুন। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “ওরা হচ্ছে আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত!” মূসা (আঃ) আবার বললেনঃ “হে আমার প্রভু! এই ফলকগুলোর মধ্যে এমন উম্মতকে দেখতে পাচ্ছি যাদের অন্তরে কুরআন থাকবে, অন্তৰ্চক্ষে তারা তা পাঠ করবে। অথচ তাদের পূর্ববর্তী সকল লোক তাদের কিতাব অন্তর্চক্ষে পাঠ করে না, এমন কি যদি তাদের কিতাবকে তাদের থেকে সরিয়ে নেয়া হয় তবে তাদের কিছুই স্মরণ থাকে না এবং কিছুই চিনতে পারে না। আল্লাহ এই উম্মতকে এমন স্মরণশক্তি দান করেছেন যা তিনি অন্য কোন উম্মতকে দান করেননি। হে আমার প্রতিপালক! এদেরকে আমারই উম্মত করুন। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “হে মূসা (আঃ)!

এটা তো আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত হবে। মূসা (আঃ) পুনরায় বললেনঃ “হে আমার প্রভু! ঐ উম্মত আপনার প্রত্যেক কিতাবের উপর ঈমান আনবে, তারা পথভ্রষ্ট ও কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে। এমন কি তারা কানা দাজ্জালের সাথেও যুদ্ধ করবে। হে আমার মা’বুদ! এদেরকে আমার উম্মত করুন!” আল্লাহ বললেনঃ “এরা হবে আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত।” মূসা (আঃ) আবার বললেনঃ “হে। আল্লাহ! এই ফলকগুলোতে এমন উম্মতের উল্লেখ রয়েছে যারা তাদের ন্যরানা ও সাদকা নিজেরাই খেতে পাবে। অথচ এই উম্মতের পূর্ববর্তী উম্মতবর্গের এই অবস্থা ছিল যে, তারা কোন সাদকা বা নয়র পেশ করলে তা যদি ককূল হতো তবে আল্লাহ প্রেরিত আগুনে তা খেয়ে ফেলতে । আর ককূল না হলেও তারা তা খেতে পারতো না, বরং পশু পাখী এসে তা খেয়ে ফেলতো। ফলকের মধ্যে উল্লিখিত উম্মতের ধনী লোকদের নিকট থেকে সাদকা আদায় করে তা গরীবদের মধ্যে বন্টিত হবে। হে আল্লাহ! এদেরকে আমারই উম্মত করুন!” আল্লাহ বললেনঃ “এরা হবে আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত।” হযরত মূসা (আঃ) পুনরায় আরয করলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি এই ফলকগুলোর মধ্যে এমন উম্মত পাচ্ছি যে, তারা যদি কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু কার্যে পরিণত করতে না পারে তবুও তাদেরকে একটা পুণ্য দেয়া হবে। আর যদি কার্যে পরিণত করতে পারে তবে দশটি পুণ্য তাদেরকে প্রদান করা হবে, এমন কি তা বৃদ্ধি পেতে পেতে সাতশ’ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। হে আল্লাহ! এদেরকে আমার উম্মত করুন!” আল্লাহ বললেনঃ “তারা আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত হবে। আবার হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “হে আমার প্রভু! ফলকগুলোর মধ্যে এমন উম্মত দেখা যাচ্ছে যারা অন্যদের জন্যে সুপারিশ করবে এবং অন্যদের পক্ষ থেকেও তাদের জন্যে সুপারিশ করা হবে। হে আল্লাহ! এদেরকে আমারই উম্মত করুন।” আল্লাহ বলেনঃ “না, বরং তারা হবে আহমাদ (সঃ)-এর উম্মত।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, মূসা (আঃ) তখন প্রস্তর ফলকগুলো রেখে দিলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে আহমাদ (সঃ)-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।”

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
*৪০ দিন পর্যন্ত হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর ডাকে সিনাই পাহাড়ে গিয়ে অবস্থান করেছিলেন এবং তার জাতি পাহাড়ের পাদদেশে আর রাহা প্রান্তরে অবস্থান করছিল সেই সময়।

* বনী ইসরাঈলীরা যে মিসরীয় কৃষ্টি নিয়ে মিসর ত্যাগ করেছিল এটি তার দ্বিতীয় প্রকাশ। মিসরে গো-পূজা ও গরুর পবিত্রতার যে ধারণা প্রচলিত ছিল তাতে এ জাতিটি, এমন গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল যে, এ সম্পর্কে কুরআন বলছেঃ وَأُشْرِبُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْعِجْلَ অর্থাৎ “তাদের মনের গভীরে গো-বৎসের ভাবমূর্তি বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল।‌‌” সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, সবেমাত্র তিন মাস হলো তারা মিসর ত্যাগ করেছিল। সাগরের দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যাওয়া, সাগর বুকে ফেরাউনের সলিল সমাধি লাভ করা, এমন একটি দাসত্বের নিগড় ভেঙে তাদের বেরিয়ে আসা যা ভাঙার কোন আশাই ছিল না এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন ঘটনা এখনো তাদের স্মৃতিতে জীবন্ত ছিল। তারা খুব ভাল করেই জানতো, এসব কিছুই আল্লাহর অসীম ক্ষমতাবলেই সম্ভব হয়েছিল। অন্য কারোর শক্তির সামান্যতম অংশও এতে ছিল না। কিন্তু এরপরও তারা প্রথমে নবীর কাছে একটি কৃত্রিম ইলাহের চাহিদা পেশ করলো, তারপর নবীর অনুপস্থিতির প্রথম সুযোগেই নিজেরাই একটি মূর্তি বানিয়ে ফেললো। এ ধরনের কার্যকলাপের কারণেই বনী ইসরাঈলের কোন কোন নবী নিজের জাতিকে এমন এক ব্যভিচারী নারীর সাথে তুলনা করেছেন, যে নিজের স্বামী ছাড়া অন্য যে কোন পুরুষের সাথে প্রেম করে এবং বিয়ের প্রথম রাতেই যে স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দ্বিধা করে না।

* ইহুদীরা জোরপূর্বক হযরত হারুনের ওপর একটি জঘন্য অপবাদ আরোপ করে আসছিল। কুরআন মজীদ এখানে তা খণ্ডন করেছে। বাইবেলে বাছুর পূজার ঘটনাটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ হযরত মূসার যখন পাহাড় থেকে নেমে আসতে দেরি হলো, তখন বনী ইসরাঈলীরা অধৈর্য হয়ে হযরত হারুনকে বললো, আমাদের জন্য একটি মাবুদ বানিয়ে দাও। হযরত হারুন তাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী একটি সোনার বাছুর বানিয়ে দিলেন। বাছুরটিকে দেখেই বনী ইসরাঈলীরা বলে উঠলো, হে বনী ইসরাঈল! এ তো তোমাদের সেই খোদা, যা তোমাদেরকে মিসর থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। তারপর হযরত হারুন তার জন্য একটি বেদী নির্মাণ করলেন, এক ঘোষনার মাধ্যমে পরের দিন সমস্ত বনী ইসরাঈলকে একত্রিত করলেন এবং সেই গো-দেবতার বেদীমূলে কুরবানী দিলেন। (যাত্রা পুস্তক ৩২: ১-৬) কুরআন মজীদের একাধিক স্থানে এ মিথ্যা বর্ণনার প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং যথার্থ সত্য ঘটনা বর্ণনা করে সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহর নবী হারুন এ ঘৃণ্য অপরাধটি করেননি বরং এটি করেছিল আল্লাহর দুশমন ও বিদ্রোহী সামেরী। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা ত্বা-হা ৯০-৯৪ আয়াত)।

সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :-90

وَ لَقَدْ قَالَ لَهُمْ هٰرُوْنُ مِنْ قَبْلُ یٰقَوْمِ اِنَّمَا فُتِنْتُمْ بِهٖۚ وَ اِنَّ رَبَّكُمُ الرَّحْمٰنُ فَاتَّبِعُوْنِیْ وَ اَطِیْعُوْۤا اَمْرِیْ

(মূসার আসার) আগেই হারুন তাদের বলেছিল, “হে লোকেরা! এর কারণে তোমরা পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছো। তোমাদের রব তো করুণাময়, কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার কথা মেনে নাও।”
সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :-91
টিকা নং:69,

قَالُوْا لَنْ نَّبْرَحَ عَلَیْهِ عٰكِفِیْنَ حَتّٰى یَرْجِعَ اِلَیْنَا مُوْسٰى

কিন্তু তারা তাকে বলে দিল, “মূসার না আসা পর্যন্ত আমরা তো এরই পূজা করতে থাকবো।” ৬৯

তাফসীর :

 

টিকা:৬৯) বাইবেল এর বিপরীত হযরত হারুনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনছে যে, বাছুর বানানো এবং তাকে উপাস্য বানানোর মহা পাপ তিনিই করেছিলেনঃ “পর্বত হইতে নামিতে মোশির বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া লোকেরা হারোণের নিকটে একত্র হইয়া তাহাকে কহিল, উঠুন আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, আমরা জানি না। তখন হারোণ তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপন আপন স্ত্রী ও পুত্রকন্যাগণের কর্ণের সুবর্ণ কুণ্ডল খুলিয়া আমার কাছে আন। তাহাতে সমস্ত লোক তাহাদের কর্ণ হইতে সুবর্ণ কুণ্ডল খুলিয়া হারোণের নিকটে আনিল। তখন তিনি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিয়া শিল্পাস্ত্রে গঠন করিলেন; এবং একটি ঢালা গো-বৎস নির্মাণ করিলেন, তখন লোকেরা বলিতে লাগিল, হে ইস্রায়েল, এ তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর হারোণ তাহা দেখিয়া তাহার সম্মুখে এক বেদি নির্মাণ করিলেন এবং হারোণ ঘোষণা করিয়া দিলেন, বলিলে, কল্য সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসব হইবে।” (যাত্রা পুস্তক ৩২: ১-৬)

বনী ইসরাঈলের সমাজে এ ভুল বর্ণনার খ্যাতি লাভের সম্ভাব্য কারণ এও হতে পারে যে, হয়তো সামেরীর নাম হারুণই ছিল এবং পরবর্তী লোকেরা এই হারুণকে হারুণ নবীর সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আজ খৃস্টান মিশনারী ও পশ্চিমের প্রাচ্যবিদরা জোর দিয়ে একথাই বলতে চায় যে, এখানেও কুরআন নিশ্চয়ই ভুল করেছে। তাদের পাক-পবিত্র নবী-ই বাছুরকে ইলাহ বানিয়েছিলেন এবং তাঁর গাত্রাবরণ থেকে এ দাগটি তুলে দিয়ে কুরআন একটি উপকার করেনি বরং উলটো অপরাধ করেছে। এ হচ্ছে তাদের হঠকারিতার অবস্থা। তবে তারা এটা দেখছেন না যে, এ একই অধ্যায়েই মাত্র কয়েক লাইন পরেই বাইবেল কিভাবে নিজেই নিজের ভুল বর্ণনার রহস্য ভেদ করছে। এ অধ্যায়ের শেষ দশটি শ্লোকে বাইবেল বর্ণনা করছে যে, হযরত মূসা (আ) এরপর লেবীর সন্তানদেরকে একত্র করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর এ হুকুম শুনালেন যে, যারা এ শিরকের মহাপাপে লিপ্ত হয়েছে তাদেরকে হত্যা করতে হবে এবং প্রত্যেক মু’মিন নিজ হাতে নিজের যেসব ভাই, সাথী ও প্রতিবেশী গো-বৎস পূজায় লিপ্ত হয়েছিল তাদেরকে হত্যা করবে। এভাবে সেদিন তিন হাজার লোক নিহত হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হযরত হারুণকে কেন ছেড়ে দেয়া হলো? যদি তিনিই এ অপরাধের মূল উদগাতা ও স্রষ্টা হয়ে থাকেন তাহলে তাকে এ গণহত্যা থেকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা হলো? লেবীর সন্তানরা কি তাহলে একথা বলতো না যে, হে মূসা! আমাদের তো হুকুম দিচ্ছো নিজেদের গুনাহগার ভাই, সাথী ও প্রতিবেশীদেরকে নিজেদের হাতে হত্যা করার কিন্তু নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত উঠাচ্ছো না কেন, অথচ আসল গোনাহগার তো সে-ই ছিল? সামনের দিকে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, মূসা সদাপ্রভুর কাছে গিয়ে আবেদন জানান, এবার বনী ইসরাঈলের গোনাহ মাফ করে দেন, নয়তো তোমার কিতাব থেকে আমার নাম কেটে দাও। এ কথায় আল্লাহ‌ জবাব দেন,”যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে গোনাহ করেছে আমি তার নাম আমার কিতাব থেকে মুছে ফেলবো।” কিন্তু আমরা দেখছি, হযরত হারুণের নাম মুছে ফেলা হয়নি। বরং তার পরিবর্তে তাঁকে ও তাঁর সন্তান সন্ততিদেরকে বনী ইসরাঈলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদ অর্থাৎ নবী লেবীর নেতৃত্বও বায়তুল মাকদিসের সেবায়েতের দায়িত্ব দান করা হয়। (গণনা পুস্তক ১৮: ১-৭) বাইবেলের এ আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য কি তার নিজের পূর্ববর্তী বর্ণনার প্রতিবাদ ও কুরআনের বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে না?

সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :-92

قَالَ یٰهٰرُوْنُ مَا مَنَعَكَ اِذْ رَاَیْتَهُمْ ضَلُّوْۤاۙ

মূসা (তার সম্প্রদায়কে ধমকাবার পর হারুনের দিকে ফিরে) বললো, “হে হারুন! তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন আমার পথে চলা থেকে কিসে তোমাকে বিরত রেখেছিল?

সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :-93
টিকা নং:70,

اَلَّا تَتَّبِعَنِؕ اَفَعَصَیْتَ اَمْرِیْ

তুমি কি আমার হুকুম অমান্য করেছো?৭০

তাফসীর :

 

টিকা:৭০) হুকুম বলতে এখানে পাহাড়ে যাবার সময় এবং নিজের জায়গায় হযরত হারুনকে বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব অধিষ্ঠিত করার পূব মুহূর্তে হযরত মূসা তাঁকে যে হুকুম দিয়েছিলে সে কথাই বুঝানো হয়েছে। সূরা আরাফের একে এভাবে বলা হয়েছেঃ

وَقَالَ مُوسَى لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ

“আর মূসা (যাওয়ার সময়) নিজের ভাই হারুনকে বললো, তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করো এবং দেখো, সংশোধন করবে, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করো না। (১৪২ আয়াত )

সুরা: ত্ব-হা
আয়াত নং :-94
টিকা নং:71, 72,

قَالَ یَبْنَؤُمَّ لَا تَاْخُذْ بِلِحْیَتِیْ وَ لَا بِرَاْسِیْۚ اِنِّیْ خَشِیْتُ اَنْ تَقُوْلَ فَرَّقْتَ بَیْنَ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ وَ لَمْ تَرْقُبْ قَوْلِیْ

হারুন জবাব দিল, “হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না। ৭১ আমার আশঙ্কা ছিল, তুমি এসে বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি।”৭২

তাফসীর :

 

টিকা:৭১) এ আয়াতগুলোর অনুবাদের সময় আমি এ বিষয়টি সামনে রেখেছি যে, হযরত মূসা ছোট ভাই ছিলেন কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে ছিলেন বড়। অন্যদিকে হযরত হারুন বড় ভাই ছিলেন কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে ছিলেন ছোট।

টিকা:৭২) হযরত হারুনের জবাবের অর্থ কখনোই এই নয় যে, জাতির ঐক্যবদ্ধ থাকা তার সঠিক পথে থাকার চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং শিরকের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা তার এমন অনৈক্যের চেয়ে ভালো যার ভিত্তি গড়ে ওঠে হক ও বাতিলের বিরোধের ওপর। কোন ব্যক্তি যদি এ আয়াতের এ অর্থ করে তাহলে সে কুরআন থেকে গোমরাহী গ্রহণ করবে। হযরত হারুনের পুরো কথাটা বুঝতে হলে এ আয়াতটিকে সূরা আ’রাফের ১৫০ আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। সেখানে বলা হয়েছেঃ

ابْنَ أُمَّ إِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُونِي وَكَادُوا يَقْتُلُونَنِي فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْأَعْدَاءَ وَلَا تَجْعَلْنِي مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

“হে আমার সহোদর ভাই! এ লোকেরা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি দুশমনদেরকে আমার প্রতি হাসবার সুযোগ দিয়ো না এবং ঐ জালেম দলের মধ্যে আমাকে গণ্য করো না।”

এখন এ উভয় আয়াত একত্র করে দেখলে যথার্থ ঘটনার এ ছবি সামনে আসে যে, হযরত হারুন লোকদেরকে এ গোমরাহী থেকে রুখবার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু তারা তাঁর বিরুদ্ধে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং তাঁকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়। বাধ্য হয়ে তিনি এইআশঙ্কায় নীরব হয়ে যান যে, হযরত মূসার ফিরে আমার আগেই গৃহযুদ্ধ শুরু না হয়ে যায় এবং তিনি পরে এসে এ অভিযোগ না করে বসেন যে, তোমার যখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতা ছিল না তখন তুমি পরিস্থিতিকে এতদূর গড়াতে দিলে কেন? আমার আসার অপেক্ষা করলে না কেন? সূরা আ’রাফের আয়াতের শেষ বাক্য থেকেও একথাই প্রতিভাত হয় যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে উভয় ভাইয়ের একদল শত্রু ছিল।

আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি বড় বিস্ময়কর মনে হয়। বনী ইসরাঈলীরা যাদেরকে আল্লাহর নবী বলে মানে তাদের মধ্য থেকে কারোর চরিত্রে তারা কলঙ্ক লেপন না করে ছাড়েনি, আবার কলঙ্ক লেপনও করেছে এমন বিশ্রীভাবে, যা শরীয়াত ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে নিকৃষ্টতম অপরাধ বিবেচিত হয়। যেমন, শিরক, যাদু, ব্যভিচার, মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং এমনি ধরনের আরো বিভিন্ন জঘন্য গুনাহের কাজ, যেগুলোতে লিপ্ত হওয়া একজন নবী তো দূরের কথা সাধারণ মু’মিন ও ভদ্রলোকের পক্ষেও মারাত্মক লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। বাহ্যত কথাটি বড়ই অদ্ভুত মনে হয়। কিন্তু বনী ইসরাঈলীদের নৈতিকতার ইতিহাস অধ্যয়ন করলে জানা যায়, আসলে এ জাতিটির ব্যাপারে এটি মোটেই বিস্ময়কর নয়। এ জাতিটি যখন নৈতিক ও ধর্মীয় অধঃপতনের শিকার হলো এবং তাদের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত এমনকি উলামা, মাশায়েখ ও দ্বীনী পদাধিকারী ব্যক্তিরাও গোমরাহী ও চরিত্রহীনতার সয়লাবে ভেসে গেলো, তখন তাদের অপরাধী বিবেক নিজেদের এ অবস্থার জন্য ওযর তৈরী করতে শুরু করে দিল এবং যেসব অপরাধ তারা নিজেরা করে চলছিল, সেগুলো সবই নবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে তাদের নবীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। এভাবে তারা বলতে চাইলো যে, নবীরাই যখন এসব থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেননি তখন অন্যেরা আর কেমন করে বাঁচতে পারে? এ ব্যাপারে হিন্দুদের সাথে ইহুদীদের অবস্থার মিল রয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেও যখন নৈতিক অধঃপতন চরম পর্যায়ে পৌঁছে তখন এমন ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে দেবতা, মুনি-ঋষি, অবতার তথা জাতির যারা সর্বোত্তম আদর্শ ব্যক্তিত্ব ছিল তাদের সবার গায়ে কলঙ্ক লেপন করে দেয়া হয়েছিল। এভাবে তারা বলতে চেয়েছিল যে, এত বড় মহান ব্যক্তিত্বরাই যখন এসব খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে, তখন আমরা সাধারণ মানুষরা আর কোন ছার? আর এ কাজগুলো যখন এ ধরনের মহীম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য লজ্জাকর নয়, তখন আমাদের জন্যই বা তা কলঙ্কজনক হতে যাবে কেন?

Leave a Reply