Book#536

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٣٣) -৫৩৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৫৫-১৫৭ নং আয়াত:-
وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَـذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الاخِرَةِ
এবং আমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নির্ধারণ কর,
“And ordain for us good in this world, and in the Hereafter.”

وَ اخۡتَارَ مُوۡسٰی قَوۡمَہٗ سَبۡعِیۡنَ رَجُلًا لِّمِیۡقَاتِنَا ۚ فَلَمَّاۤ اَخَذَتۡہُمُ الرَّجۡفَۃُ قَالَ رَبِّ لَوۡ شِئۡتَ اَہۡلَکۡتَہُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ وَ اِیَّایَ ؕ اَتُہۡلِکُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَہَآءُ مِنَّا ۚ اِنۡ ہِیَ اِلَّا فِتۡنَتُکَ ؕ تُضِلُّ بِہَا مَنۡ تَشَآءُ وَ تَہۡدِیۡ مَنۡ تَشَآءُ ؕ اَنۡتَ وَلِیُّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا وَ ارۡحَمۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡغٰفِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾
আর মূসা আপন সম্প্রদায় হতে সত্তর জন লোককে আমার প্রতিশ্রুতির সময়ে সমবেত হওয়ার জন্য মনোনীত করল। তারা যখন ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল তখন মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পূর্বেই তো এদেরকে এব আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তাদের কর্মদোষে কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এতো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দিয়ে তুমি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল।

وَ اکۡتُبۡ لَنَا فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ اِنَّا ہُدۡنَاۤ اِلَیۡکَ ؕ قَالَ عَذَابِیۡۤ اُصِیۡبُ بِہٖ مَنۡ اَشَآءُ ۚ وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ؕ فَسَاَکۡتُبُہَا لِلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِاٰیٰتِنَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ۚ
এবং আমাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নির্ধারণ কর, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করছি।’ আল্লাহ বললেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা (দয়া) তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা সাবধান হয়, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে।

اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ۫ یَاۡمُرُہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہٰہُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُحِلُّ لَہُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡہِمُ الۡخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنۡہُمۡ اِصۡرَہُمۡ وَ الۡاَغۡلٰلَ الَّتِیۡ کَانَتۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِہٖ وَ عَزَّرُوۡہُ وَ نَصَرُوۡہُ وَ اتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَہٗۤ ۙ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾٪
যারা নিরক্ষর রসূল ও নবীর অনুসরণ করে, যার উল্লেখ তওরাত ও ইঞ্জীল যা তাদের নিকট আছে তাতে লিপিবদ্ধ পায়, যে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহকে বৈধ করে ও অপবিত্র বস্তুসমূহকে অবৈধ করে এবং যে তাদের ভার ও বন্ধন যা তাদের উপর ছিল (তা হতে) তাদেরকে মুক্ত করে। সুতরাং যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে আলো তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তার অনুসরণ করে তারাই হবে সফলকাম।

১৫৫-১৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে সত্তরজন লোক নির্বাচন করার অধিকার দিয়েছিলেন। সুতরাং মূসা (আঃ) এরূপ সত্তরজন লোক নির্বাচন করে তাদেরকে নিয়ে আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করার জন্যে রওয়ানা হন। কিন্তু যখন তারা আল্লাহর কাছে দু’আ করলো তখন নিম্নরূপ কথা বললোঃ

“হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন কিছু দান করুন যা আপনি ইতিপূর্বে কাউকে দান করেননি এবং না আমাদের পরে কাউকেও দান করবেন। তাদের এই প্রার্থনা আল্লাহ তা’আলার কাছে পছন্দনীয় হলো না। সুতরাং ভূমিকম্প তাদেরকে ঘিরে ফেললো। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-কে এমন ত্রিশজনসহ আসতে বলেছিলেন যারা গো-বৎস পূজার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল এবং দুআর জন্যে একটা সময় ও স্থান নির্ধারণ করেছিল। মূসা (আঃ) সত্তরজন লোক নির্বাচন করলেন, যাদেরকে নিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে বের হলেন। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে নিয়ে অঙ্গীকার স্থলে পৌছলেন তখন তারা তাকে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আমরা যে পর্যন্ত না আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখবো সেই পর্যন্ত আমরা ঈমান আনবো না। আপনি আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন। এখন আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। এই আস্পর্ধামূলক কথার শাস্তি হিসেবে তাদের উপর বিদ্যুত পতিত হলো এবং সবাই ওখানে মরে পড়ে থাকলো। হযরত মূসা (আঃ) ক্রন্দনরত অবস্থায় উঠে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বললেনঃ “হে আমার প্রভু! আমি এখন বানী ইসরাঈলের কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে কি জবাব দেবো? এরা তো তাদের মধ্যে ভাল লোক ছিল, আপনি তাদেরকেও ধ্বংস করে দিলেন। হে আল্লাহ! যদি আপনি তাদের সাথে আমাকেও ধ্বংস করে দিতেন।”(হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও কোন কোন পূর্ববর্তী গুরুজন হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে)

হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের মধ্য থেকে সত্তরজন খুবই ভাল লোককে বেছে নিয়েছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেনঃ “চল, আল্লাহর কাছে যাই। তোমরা কওমের অবশিষ্ট লোকদের পক্ষ থেকে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তোমরা তাওবা কর, রোযা রাখ এবং শরীর ও কাপড় পবিত্র করে নাও।” অতঃপর তিনি নির্ধারিত দিনে তাদেরকে নিয়ে দূরে সাইনার দিকে চললেন। এর সবকিছুই আল্লাহর অবগতি ও অনুমতিক্রমে হয়েছিল। এখন এই সত্তরজন লোক যারা মূসা (আঃ)-এর পরিচালনাধীনে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এসেছিল তারা বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আল্লাহর সাথে আপনার বাক্যালাপ হয়ে থাকে, আমাদেরকে তা শুনতে দিন।” হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে।” অতঃপর যখন হযরত মূসা (আঃ) পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি একটা অত্যন্ত ঘন মেঘখণ্ডের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পাহাড়টিও মেঘের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। হযরত মূসা (আঃ) মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়লেন এবং তার লোকগুলোকে বললেনঃ “তোমরাও আমার নিকটবর্তী হয়ে যাও।” মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল এমন আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠতো যে, কেউই তার চেহারার প্রতি দৃষ্টি রাখতে পারতো । এজন্যে তিনি স্বীয় চেহারার উপর পর্দা ফেলে দিতেন। ঐলোকগুলো যখন মেঘখণ্ডের নিকটে এসে ওর মধ্যে প্রবেশ করলো তখন তারা সিজদায় পড়ে গেল । তারা মূসা (আঃ) ও আল্লাহর কথা শুনতে লাগলো। তিনি মূসা (আঃ)-কে আদেশ ও নিষেধ করে বলেছিলেনঃ “এটা কর এবং ওটা করো না।” যখন তিনি ওটা থেকে মুক্ত হলেন এবং মেঘ সরে গেল তখন তিনি ঐ লোকদের দিকে মনঃসংযোগ করলেন। তারা তাঁকে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! যে পর্যন্ত না আপনি আমাদেরকে প্রকাশ্যভাবে আল্লাহকে দেখাবেন সে পর্যন্ত আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনবো না। তাদের এই ঔদ্ধত্যের কারণে বিজলী তাদেরকে পাকড়াও করলো। তাদের প্রাণপাখী দেহ থেকে বেরিয়ে গেল। তারা মৃত অবস্থায় পড়ে রইলো। এ দেখে হযরত মূসা (আঃ) বিলাপের সুরে বলতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি যখন এদেরকে ধ্বংস করারই ইচ্ছে করেছিলেন তখন তাদের সাথে আমাকেও ধ্বংস করলেন না কেন? এরা বোকামীর কাজ করেছে। আমার পিছনে আপনি কি বানী ইসরাঈলকে ধ্বংস করে দিবেন?”

হযরত আলী ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মূসা (আঃ), হারূন (আঃ), শাবর ও শাবীর প্রমুখ মিলে এক পাহাড়ের উপত্যকার দিকে গেলেন। হারূন (আঃ) একটি টিলার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাঁকে মৃত্যু দান করেন। মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলের নিকট প্রত্যাবর্তন করলে তারা তাকে হারূন (আঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মূসা (আঃ) উত্তরে বলেন যে, তিনি মারা গেছেন। তারা তখন বলে- “না, বরং সম্ভবতঃ আপনিই তাকে মেরে ফেলেছেন। তিনি অত্যন্ত নরম প্রকৃতির লোক ছিলেন।” মূসা (আঃ) তখন তাদেরকে বললেনঃ “আচ্ছা, তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক বেছে নাও।” তারা সত্তরজন লোক নির্বাচন করলো। অতঃপর তারা হারূন (আঃ)-এর মৃতদেহের নিকট গেল এবং জিজ্ঞেস করলোঃ “আচ্ছা বলুন তো আপনাকে কে হত্যা করেছে?” হারূন (আঃ)-এর মৃতদেহ থেকে শব্দ আসলোঃ “আমাকে কেউই হত্যা করেনি। আমি স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছি।” লোকগুলো তখন বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! এরপরে আর কখননা আমরা আপনার অবাধ্য হবো না।” তারা শাস্তি এই পেলো যে, বিদ্যুৎ তাদেরকে ধ্বংস করে দিলো। হযরত মূসা (আঃ) বিনা কারণে ডানে বামে ঘুরতেন এবং বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি কি এই বোকা লোকদের কথায় আমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন? এটা তো আপনার পরীক্ষা ছিল। আপনি যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ তা’আলা তখন তাদের সকলকেই জীবিত করে দিলেন এবং সকলকেই নবী করলেন। এটা হচ্ছে অত্যন্ত গারীব ও অবিশ্বাসযোগ্য হাদীস। এই হাদীসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে আম্মারা ইবনে উবাইদ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত ব্যক্তি। ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ “ঐ লোকগুলোর উপর শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ ছিল এই যে, তাদের সামনে গো-বৎসের পূজা চলছিল, অথচ তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। তাদের কওমকে তারা ঐ শিরকের কাজ থেকে নিষেধ পর্যন্ত করেনি।” এই জন্যেই হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে নির্বোধ নামে অভিহিত করেছেন। তাদের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! এটা আপনার একটা পরীক্ষা।” নিম্নরূপে তিনি আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেছিলেনঃ

“হে আল্লাহ! এটাতো আপনার পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা। একমাত্র আপনারই হুকুম চলে থাকে। আপনি যা চান তাই হয়। হিদায়াত দান ও পথভ্রষ্টকরণ আপনারই হাতে। আপনি যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ কুপথ দেখাতে পারে না। আপনি যাকে দান থেকে বিমুখ করেন তাকে কেউ দান করতে পারে না। পক্ষান্তরে আপনি যাকে দান করেন তা তার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। রাজ্যের মালিক আপনিই। হুকুম দেয়ার অধিকার একমাত্র আপনারই রয়েছে। খাক ও আমর আপনার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।”

এরপর মূসা (আঃ) আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! আপনিই আমাদের অলী বা অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ও আমাদের উপর দয়া করুন। কেননা, আপনিই তো হচ্ছেন সর্বোত্তম ক্ষমাশীল।”

(আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে ঢেকে ফেলা, গোপন করা এবং পাপের কারণে পাকড়াও না করা। আর (আরবী) এর সঙ্গে যখন (আরবী) যুক্ত হয় তখন ভাবার্থ হয়। ক্ষমা করে দেয়ার পর আল্লাহ তা’আলার তাকে আগামীতে পুনরায় পাপে জড়িত না করা।

“হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে এই দুনিয়াতেও কল্যাণ নির্ধারিত করে দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ নির্ধারিত করুন।” (আরবী) -এর তাফসীর সূরায়ে বাকারায় হয়ে গেছে। “আমরা তাওবা করেছি এবং আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি।” হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, বানী ইসরাঈল (আরবী) বলেছিল বলেই তাদের নাম ইয়াহুদী হয়ে গেছে। (এটা ইবনে জারীর তাখরীজ করেছেন। ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এর জাবীর আলজাফী নামক বর্ণনাকারী দুর্বল)

মূসা (আঃ) বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ! এটা আপনার পরীক্ষা। তাই ইরশাদ হচ্ছে- শাস্তি সেই পায় যাকে শাস্তি দেয়ার আমি ইচ্ছা করি এবং মনে করি যে, তার শাস্তি হওয়াই উচিত। নচেৎ, আমার করুণা তো প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে। আমি যা চাই তাই করি। প্রতিটি কাজে নিপণতা ও ন্যায় পরায়ণতার অধিকার আমারই । রহমতযুক্ত আয়াত খুবই বিরাট ও ব্যাপক এবং সবই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের মুখে উচ্চারিত হয়“হে আমাদের প্রভু! আপনার করুণা ও জ্ঞান সব কিছুকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে।”

জুনদুব ইবনে আবদিল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একজন বেদুইন আসলো। সে তার উটটি বসিয়ে বাধলো। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিছনে নামায পড়লো। নামায শেষে উষ্ট্ৰীটিকে খুলে সে ওর উপর সওয়ার হলো এবং দুআ করতে লাগলোঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার উপর ও মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর দয়া করুন। এই দয়ায় আপনি অন্য কাউকেও শরীক করবেন না। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীগণকে বললেনঃ “আচ্ছা বলতো, এই লোকটি বেশী পথভ্রষ্ট ও নির্বোধ, না তার উটটি ? সে যা বলছে তা তোমরা শুনেছো কি?” সাহাবীগণ বললেনঃ “হ্যা শুনেছি।’ তিনি বললেনঃ “আল্লাহর রহমত অতি প্রশস্ত। তিনি স্বীয় রহমতকে একশ’ ভাগে ভাগ করেছেন। এক ভাগ তিনি সমস্ত মাখলুকের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। দানব, মানব এবং চতুষ্পদ জন্তু সবাই এই অংশ থেকেই অংশ পেয়েছে। বাকী নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের জন্যে নির্দিষ্ট রেখেছেন। এখন বল তো, এই উভয়ের মধ্যে কে বেশী নির্বোধ?” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমতকে একশ’ ভাগে ভাগ করেছেন। এই একশ’ ভাগের মধ্যে মাত্র এক ভাগ তিনি দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছেন। এই এক ভাগ দেয়ার কারণেই সৃষ্টজীব একে অপরের উপর করুণা ও মমতা দেখিয়ে থাকে। এ কারণেই সমস্ত প্রাণী নিজেদের সন্তান ও বাচ্চাদের উপর স্নেহ ও দয়া প্রদর্শন করে থাকে। বাকী নিরানব্বই ভাগ করুণা তার কাছেই রয়েছে। এগুলোর প্রকাশ কিয়ামতের দিন ঘটবে। কিয়ামতের দিন এই একভাগ করুণার সাথে সঞ্চিত নিরানব্বই ভাগ করুণা মিলিয়ে দেয়া হবে।”

আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর একশ’ ভাগ রহমত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র এক ভাগ মাখলুকের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন । এর দ্বারাই মানুষ, বন্য পশু এবং পাখী একে অপরের উপর দয়া দেখিয়ে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আল্লাহর শপথ! ধর্মের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি পাপী এবং জীবিকা উপার্জনের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি নির্বোধ সেও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তিও জান্নাতে প্রবেশ করবে যাকে পাপের কারণে আগুন পরিবেষ্টন করেছে। তাঁর রহমত কিয়ামতের দিন এমনভাবে ছেয়ে যাবে যে, ইবলীসও তার থেকে কিছু অংশ পাওয়ার আশা পোষণ করবে।” (এ হাদীসটি অত্যন্ত গারীব । সা’দ নামক এর একজন বর্ণনাকারী অপরিচিত ব্যক্তি)

আল্লাহ পাক বলেনঃ ঐ ব্যক্তিই আমার রহমতের হকদার হবে, যে আমাকে ভয় করে ও পরহেজগারী অবলম্বন করে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “তোমার প্রভু নিজের জন্যে রহমতকে ফরয করে নিয়েছেন।”

‘তারা তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ শিক ও কাবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আর তারা যাকাত প্রদান করে। বলা হয়েছে যে, এখানে যাকাত দ্বারা নসের যাকাত বুঝানো অথবা মালের যাকাত বুঝানো হয়েছে কিংবা দু’টোকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা, এটা হচ্ছে মক্কী আয়াত।

তারা আমার আয়াত সমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করে অর্থাৎ ওগুলোর সত্যতা স্বীকার করে।

যারা নিরক্ষর নবী (সঃ)-এর অনুসরণ করে এবং মুসলমান হয়, তারা সেই ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে সম্যক অবগত যে ভবিষ্যদ্বাণী তাদের কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জীলে নবী উম্মী (সঃ) সম্পর্কে করা হয়েছে। নবীদের গ্রন্থসমূহে নবী (সঃ)-এর গুণাবলী উল্লিখিত আছে। ঐসব গ্রন্থে নবীগণ নিজ নিজ উম্মতকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নবুওয়াতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন এবং তার মাযহাব গ্রহণ করার হিদায়াত করে গেছেন। তাঁদের আলেমগণ ও ধর্মযাজকগণ তা অবগত আছেন।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, একজন বেদুইন বর্ণনা করেছে, নবী (সঃ)-এর যুগে একবার আমি দুধ বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মদীনায় গমন করি । বিক্রি শেষে আমি মনে মনে বলি, মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেই নেই এবং তার মুখের কিছু বাণী শুনাই যাক। আমি দেখি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) হযরত আবু বকর ও হযরত উমার (রাঃ)-এর সাথে কোথায় যেন যাচ্ছেন। আমিও তাঁদের পিছু পিছু চললাম। তারা তিনজন এমন এক ইয়াহূদীর বাড়ীতে পৌছলেন যে তাওরাতের জ্ঞান রাখতো। তার ছেলে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিল। ছেলেটি ছিল নব যুবক এবং সৌন্দর্যের অধিকারী। ইয়াহূদীটি তার ছেলের পার্শ্বে বসে তাওরাত পাঠ করছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ ইয়াহূদীর সাথে বাক্যালাপ করতে শুরু করলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাওরাত অবতীর্ণকারীর শপথ! সত্য করে বল তো, এতে আমার নবুওয়াতের কোন সংবাদ আছে কি নেই?” সে মাথা নেড়ে উত্তর দিলোঃ “না।” তখন তার মরণাপন্ন ছেলেটি বলে উঠলোঃ “তাওরাত অবতীর্ণকারীর শপথ! আমাদের কিতাবে আপনার গুণাবলী ও নবুওয়াতের সংবাদ বিদ্যমান রয়েছে এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল।” অতঃপর ছেলেটি মারা গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এ মুসলমান। সুতরাং ইয়াহূদীদেরকে এখান থেকে সরিয়ে দাও।” তারপর তিনি তার কাফন ও জানাযার নামাযের ব্যবস্থা করলেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) জারীরী হতে এবং তিনি আবু সখর আকীলী হতে তাখরীজ করেছেন। ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি অতি উত্তম ও মজবুত। এটা সহীহ বুখারীতে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে)

হিশাম ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট ইসলাম প্রচারের জন্যে আমি ও অন্য একটি লোক প্রেরিত হই। আমরা উভয়ে গমন করি এবং দামেস্কের উপকণ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছি। জিবিল্লাহ ইবনে আইহাম গাস্সানীর প্রাসাদে আমরা উপস্থিত হই। তিনি সিংহাসনের অধিকারী ছিলেন। আমরা কি বলতে চাই তা জানবার জন্যে তিনি আমাদের কাছে একজন দূত পাঠালেন। আমরা দূতকে বললামঃ “আমরা তোমার সাথে কথা বলবো না। বাদশাহর সাথে কথা বলার জন্যে আমরা প্রেরিত হয়েছি। তিনি যদি আমাদেরকে তার কাছে ডেকে নেন তবে আমরা তার সাথে কথা বলবো। তোমার কাছে আমাদের বলার কিছুই নেই। সে তখন বাদশাহকে (প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে) খবর দিলো। বাদশাহ আমাদেরকে ডেকে নিলেন এবং বললেনঃ “কি বলতে চাও বল।” হিশাম ইবনুল আস তাঁর সাথে আলাপ শুরু করলেন এবং তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি কালো রঙ্গের কাপড় পরিহিত ছিলেন। হিশাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার পরনে কালো কাপড় কেন?” জিবিল্লাহ উত্তরে বললেনঃ “আমি শপথ করেছি যে, যে পর্যন্ত তোমাদেরকে সিরিয়া থেকে বহিষ্কার না করবো সে পর্যন্ত এই কালো পোশাক ছাড়বো না। আমরা বললাম, আল্লাহর কসম! আমরা আপনার সিংহাসন দখল করে নেবো। শুধু তাই নয়, ইনশাআল্লাহ আপনাদের কেন্দ্রীয় সম্রাটের (হিরাক্লিাসের) রাজ্যও আমাদের অধিকারে এসে যাবে। আমাদের নবী (সঃ) এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বললেনঃ “তোমরা সেই লোক নও। ওরা হচ্ছে এমন লোক যে দিনে রোযা রাখে ও রাত্রে নামায পড়ে। বল তো, তোমাদের রোযা কিরূপ?” আমরা পূর্ণভাবে এর বর্ণনা দিলাম। তখন লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ “আচ্ছা যাও, সম্রাটের (হিরাক্লিয়াসের) সাথে সাক্ষাৎ কর।” এই বলে তিনি আমাদের সাথে একজন পথ প্রদর্শক পাঠালেন। আমরা তার পথ প্রদর্শনায় চলতে লাগলাম। যখন আমরা শহরের নিকটবর্তী হলাম তখন ঐ পথ প্রদর্শক আমাদেরকে বললোঃ “তোমরা এই সওয়ারী ও উষ্ট্রীগুলো নিয়ে শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। তোমরা ইচ্ছা করলে আমি তোমাদের জন্যে ঘোড়া ও খচ্চরের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আমরা বললাম, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের এই উষ্ট্ৰীগুলোর উপরই সওয়ার হয়ে থাকবো। সে তখন বাদশাহকে লিখে পাঠালো যে, তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কোন সওয়ারীতে সওয়ার হতে সম্মত নয়। সম্রাট তখন আমাদের উন্ত্রীতেই আরোহণ করে আমাদেরকে শহরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আমরা তরবারী লটকিয়ে সম্রাটের প্রাসাদ পর্যন্ত পৌঁছে নিজেদের সওয়ারীগুলো সেখানে বসিয়ে দিলাম। সম্রাট স্বীয় প্রাসাদের কক্ষ থেকে আমাদেরকে দেখতে ছিলেন। আমরা নেমেই (আরবী) বললাম। আল্লাহ জানেন, আমাদের তাকবীরের শব্দে সারা প্রাসাদ কেঁপে উঠলো। মনে হলো যেন প্রবল ঝটিকা ওকে হেলিয়ে দিলো। বাদশাহ আমাদেরকে বলে পাঠালেনঃ “তোমাদের দ্বীনকে এভাবে প্রকাশ করা উচিত ছিল না। তারপর তিনি আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন। আমরা যখন দরবারে প্রবেশ করি তখন তিনি সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। আর তাঁর চারদিকে পোপ, ধর্মযাজক ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা বসেছিল। তার মজলিসের সমস্ত জিনিসই ছিল লাল বর্ণের। সারা পরিবেশ ছিল লাল এবং তাঁর পোশাকও ছিল লাল। আমরা তাঁর নিকটবর্তী হলে তিনি হেসে ওঠেন এবং বলেনঃ “তোমরা পরস্পর যেমন সালামের আদান প্রদান কর তেমন আমাকে সালাম করলে না কেন?” তার কাছে একজন আরবী ভাষায় পারদর্শী দো-ভাষী বিদ্যমান ছিলেন। আমরা তাঁর মাধ্যমে বললাম, আমরা পরস্পর যে সালাম আদান প্রদান করি তা আপনার জন্যে শোভনীয় নয় এবং আপনাদের পারস্পরিক আদব ও সালামের রীতিও আমাদের জন্যে উপযুক্ত নয় যে, সেই রীতিতে আমরা আপনাকে সম্মান প্রদর্শন করবো। তিনি বললেনঃ “তোমাদের পারস্পরিক সালাম কিরূপ?” আমরা উত্তরে বললামঃ (আরবী) অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হাক। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা তোমাদের বাদশাহকে কিভাবে সালাম জানিয়ে থাক?” আমরা জবাবে বললাম, এভাবেই। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ “তিনি কিভাবে উত্তর দেন?” আমরা বললাম, তিনি এই শব্দগুলো দ্বারাই উত্তর দিয়ে থাকেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমাদের সম্মানিত না’রা কি?” আমরা উত্তর দিলামঃ (আরবী) হচ্ছে আমাদের সম্মানিত ও প্রসিদ্ধ না’রা। যখন আমরা এটা উচ্চৈঃস্বরে বললাম তখন সারা প্রাসাদ কেঁপে উঠলো। শেষ পর্যন্ত তিনি মাথা উঠিয়ে দেখতে লাগলেন যে, না জানি ঘরের ছাদ ভেঙ্গেই পড়ে না কি! তিনি বললেনঃ “তোমরা যে এই কথাটি বললে যার ফলে ঘর নড়ে উঠলো, তাহলে যখন তোমরা নিজেদের বাড়ীতে এটা পড় তখন তোমাদের ঘরও কেপে উঠে না কি?” আমরা উত্তরে বললাম, না তো। আমরা আপনার প্রাসাদ ছাড়া এমনটি হতে তো আর কখনো দেখিনি। তিনি বললেনঃ “হায়! যদি তোমাদের সব জিনিসও কেঁপে উঠতো এবং এই না’রার জোরে আমার অর্ধেক রাজ্য হাত ছাড়া হয়ে যেতো এবং বাকী অর্ধেক টিকে থাকতো তবে কতইনা ভাল হতো।” আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তা কেন? তিনি জবাবে বললেনঃ “নবুওয়াতের বিষয়টি মজবুত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া অপেক্ষা এটাই আমার কাছে সহজতর।” তারপর তিনি আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলেন। আমরা তাবলীগের উদ্দেশ্যের কথা বলেদিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমাদের নামায রোযা কেমন?” আমরা সবকিছুই জানিয়ে দিলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে বিদায় দিলেন এবং অতিথিশালায় অবস্থান করতে বললেন। তিনি উত্তমরূপে আমাদের মেহমানদারী করলেন। তথায় আমরা তিন দিন অবস্থান করলাম। পুনরায় তিনি এক রাত্রে আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন এবং আমাদের আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমরা আমাদের আগমনের উদ্দেশ্যের কথা পুনরাবৃত্তি করলাম। অতঃপর তিনি স্বর্ণ-রৌপ্য জড়ানো একটা খুব বড় জিনিস চেয়ে পাঠালেন। তাতে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ নির্মিত ছিল এবং সবগুলো তালাবদ্ধ ছিল। তিনি একটি কক্ষের তালা খুললেন এবং ওর মধ্য থেকে একটি কালো রেশমী কাপড় বের করলেন। তাতে একটি লাল ছবি নির্মিত ছিল এবং সেটা ছিল একটি মানুষের ছবি। মানুষটির চোখগুলো ছিল বড় বড়, উরু ছিল মোটা, দাড়ি ছিল লম্বা ও ঘন। চুলগুলো ছিল দু’ভাগে বিভক্ত, অত্যন্ত সুন্দর ও দীর্ঘ। সম্রাট আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ইনি কে তা জান কি?” আমরা উত্তর দিলাম, না। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত আদম (আঃ)। তাঁর দেহে অনেকগুলো চুল ছিল। এরপর তিনি আর একটি বাক্সের তালা খুললেন। ওর মধ্য থেকে একটি কালো রেশমী কাপড় বের করলেন। তাতে একটি গৌর বর্ণের মানুষের ছবি বানানো ছিল। মানুষটির ছিল কুঞ্চিত কেশ, লাল চক্ষু, বড় মাথা এবং সুন্দর দাড়ি। বাদশাহ বললেনঃ “ইনি হচ্ছেন হযরত নূহ (আঃ)।” তারপর আর একটি বাক্স থেকে তিনি আর একটি ফটো বের করলেন। ওটার রং ছিল গৌর, চোখগুলো সুন্দর ছিল, কপাল ছিল চওড়া, চেহারা ছিল খাড়া, দাড়িগুলো ছিল সাদা এবং মুখটি ছিল হাস্যময়। সম্রাট জিজ্ঞেস করলেনঃ “জান ইনি কে? ইনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)।” তিনি আর একটি বাক্স খুললেন। তাতে ছিল একটি উজ্জ্বল গৌর বর্ণের ছবি। ওটা ছিল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর ফটো। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই লোকটিকে চেনো কি?” আমরা বললামঃ হ্যা, ইনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। তাঁর ছবিটি দেখে আমরা আবেগে অভিভূত হয়ে পড়লাম। বাদশাহ বললেনঃ “আল্লাহ জানেন যে, ইনিই হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)!” তারপর তিনি দাড়িয়ে গেলেন এবং বলে উঠলেনঃ “আল্লাহর শপথ! ইনিই কি তিনি?” আমরা উত্তরে বললামঃ “হ্যা, ইনিই তিনি। এই ছবিটি দেখে আপনি মনে করে নেন যে তাঁকেই দেখেছেন। তারপর তিনি কিছুক্ষণ ধরে অত্যন্ত মনোযোগর সাথে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেনঃ “এটা ছিল শেষ বাক্স। কিন্তু এটাকে সর্বশেষ দেখাবার পরিবর্তে মধ্যভাগে দেখালাম তোমাদের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্যে।” এরপর তিনি আর একটি ছবি বের করলেন। ওটা ছিল গোধূম বর্ণের এবং নরম ও পাতলা আকৃতি বিশিষ্ট। কেশগুলো ছিল কুঞ্চিত, চোখগুলো ছিল বসা বসা, দৃষ্টি ছিল তীক্ষ এবং ওষ্ঠ ছিল মোটা। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত মূসা (আঃ)!” ওরই সাথে মিলিত আর একটি ছবি ছিল। এটা ছিল আকারে ওরই সাথে সাদৃশ্যযুক্ত। কিন্তু এটার চুলগুলো ছিল তৈলাক্ত ও চিরুনীকৃত । কপাল ছিল চওড়া এবং চোখগুলো বড় বড়। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত হারূন ইবনে ইমরান (আঃ)।” তারপর আর একটি বাক্স থেকে তিনি আর একটি ফটো বের করলেন। ওটার ছিল গোধূম বর্ণ, দেহের উচ্চতা মধ্যম, সোজা কেশ এবং চেহারায় দুঃখ ও ক্রোধের চিহ্ন প্রকাশমান। তিনি বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত লূত (আঃ)।” তারপর তিনি একটা সাদা বর্ণের রেশমী কাপড় বের করলেন। তাতে যে মানুষের ফটো ছিল তা ছিল সেনালী বর্ণের। দেহ লম্বা ছিল না। গাল ছিল হালকা পাতলা এবং চেহারা ছিল সুন্দর। তিনি বললেনঃ “ইনি ইসহাক (আঃ)।” এরপর তিনি আর একটি দরজা খুললেন এবং এর মধ্য থেকে একটি সাদা রেশমী কাপড় বের করে আমাদেরকে দেখালেন। এর আকৃতি হযরত ইসহাক (আঃ)-এর আকৃতির সাথে খুবই সাদৃশ্যযুক্ত ছিল। তিনি বললেনঃ “ইনি হযরত ইয়াকূব (আঃ)।” তারপর তিনি কালো রেশমী কাপড়ের আর একটি ফটো দেখালেন। ওটার ছিল গৌর বর্ণ, সুন্দর চেহারা, মুখমণ্ডলে ঔজ্জ্বল্য, আন্তরিকতা ও বিনয়ের লক্ষণ পরিস্ফুট এবং বর্ণ কতকটা লাল। বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)।” এরপর আর একটি বাক্স হতে আর একটি সাদা রেশমী কাপড় বের করলেন যার মধ্যকার ছবিটি হযরত আদম (আঃ)-এর ছবির সাথে সাদৃশ্যযুক্ত ছিল। চেহারায় যেন সূর্য চমকাচ্ছে। বললেনঃ “ইনি হযরত ইউসুফ (আঃ)।” তারপর আর একটি ছবি বের করলেন। ওটার ছিল লাল রং, পুরু পায়ের গোছা, বড় বড় চোখ, বড় পেট ও বেঁটে দেহ। বললেনঃ “ইনি হযরত দাউদ (আঃ)।” এরপর আরও একটি ছবি বের করলেন। ওটার ছিল মোটা উরু, লম্বা পা এবং তিনি ঘোড়ার উপর সওয়ার ছিলেন। বললেনঃ “ইনি হযরত সুলাইমান (আঃ)।” অতঃপর তিনি আরও একটি ছবি বের করলেন। ওটা ছিল বয়সে যুবক, দাড়ি ছিল কালো, চুলগুলো ছিল ঘন, চক্ষুগুলো সুন্দর এবং চেহারাতেও সৌন্দর্য বিরাজ করছিল। সম্রাট বললেনঃ “ইনি হলেন হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)।” আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এই ছবিগুলো পেলেন কোথায়? আমাদের বিশ্বাস যে, এগুলো অবশ্যই নবীদেরই ছবি। কেননা, আমরা আমাদের নবী (সঃ)-এর ছবি সঠিকভাবেই পেয়েছি। উত্তরে তিনি বললেনঃ “হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ তা’আলার নিকট আবেদন করেছিলেন- হে আল্লাহ! আমার নবী সন্তানদেরকে আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহ তা’আলা তখন ঐ নবীদের ফটোগুলো হযরত আদম (আঃ)-কে প্রদান করেছিলেন। ঐগুলোকে হযরত আদম (আঃ) পাশ্চাত্য দেশে রক্ষিত রেখেছিলেন। যুলকারনাইন ওগুলোকে বের করেন এবং হযরত দানইয়াল (আঃ)-এর হাতে সমর্পণ করেন। অতঃপর সম্রাট বললেনঃ “আমি তো চাচ্ছিলাম যে, নিজের রাজ্য ছেড়ে দিয়ে তোমাদের কোন এক নগণ্য লোকের গোলাম হয়ে থাকি যে পর্যন্ত না আমার মৃত্যু হয়।”

এরপর তিনি আমাদেরকে বিদায় দিলেন। বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি আমাদেরকে বহু পুরস্কার ও উপঢৌকন প্রদান করলেন এবং গমনের সুব্যবস্থা করে দিলেন। যখন আমরা আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে আসলাম এবং ঘটনাটি বর্ণনা করলাম তখন তিনি আবেগে অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং বললেনঃ “আল্লাহ তাকে তাওফীক দিলে এই রূপই করতো!” অতঃপর তিনি বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, ইয়াহূদীরা তাদের কিতাবে নবী (সঃ)-এর গুণাবলী পেয়ে থাকে।”

হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেনঃ “আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে তা জিজ্ঞেস করি। তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, আল্লাহর শপথ! তাওরাতে তাঁর গুণাবলীর এরূপই বর্ণনা রয়েছে যেরূপ কুরআনে রয়েছে।” আল্লাহ পাক বলছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে সাক্ষী, শুভ সংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি।” (৪৮:৮) দ্রুপ তাওরাতেও রয়েছে- “তুমি আমার বান্দা ও রাসূল। তোমার নাম মুতাওয়াক্কিল, তুমি কঠোরও নও এবং সংকীর্ণমনাও নও। আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ঐ পর্যন্ত নিজের কাছে আহ্বান করবেন না যে পর্যন্ত না তুমি ভুল পথে পরিচালিত কওমকে সোজা পথে পরিচালিত করতে পার। আর যে পর্যন্ত না তারা ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর থেকে পর্দা উঠে যায়, কান শ্রবণকারী ও চক্ষু দর্শনকারী হয়। অতঃপর হযরত কা’ব (রঃ)-এর সাথে হযরত আতা’ (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হলে তাকেও তিনি এই প্রশ্ন করেন। তিনি যা বর্ণনা করেন তাতে একটি অক্ষরেরও গরমিল হয়নি। গরমিল শুধু একুটু হয় যে, তিনি নিজের ভাষায় – (আরবী) কে (আরবী) -কে (আরবী) এবং (আরবী)- কে (আরবী) বলতেন। কিন্তু তিনি নিম্নের বাক্যটুকু বাড়িয়ে দিয়েছেনঃ “তিনি বাজারে শোরগোল করেন না, মন্দের বদলা মন্দ দ্বারা দেন না, বরং ক্ষমা করে দেন।” এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর হাদীসটি বর্ণনা করলেন। তারপর বললেনঃ পূর্ববর্তী গুরুজনদের ভাষায়- তাওরাত’ শব্দের প্রয়োগে সাধারণতঃ আহলে কিতাবের কিতাবগুলোর উপর হয়ে থাকে এবং হাদীসের কিতাবগুলোতেও এরূপই কিছু এসেছে। আল্লাহ তাআলাই সর্বাপেক্ষা অধিক জ্ঞানের অধিকারী।

হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করি। যখন আমি সিরিয়ার নিকটবর্তী হই তখন একটি লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে জিজ্ঞেস করে- “তোমাদের দেশে কোন একজন লোক নবী হয়ে এসেছেন কি?” আমি উত্তরে বলি, হ্যা। সে জিজ্ঞেস করে-“তুমি তার ছবি চিনতে পারবে কি?” আমি উত্তর দেই, হ্যা। তখন সে আমাকে এমন একটি ঘরে নিয়ে গেল যেখানে অনেকগুলো ছবি ছিল। কিন্তু আমি সেখানে আমাদের নবী (সঃ)-এর ছবি দেখতে পেলাম না। আমরা ঐ সম্পর্কেই আলাপ আলোচনা করছিলাম এমন সময় একটি লোক এসে বললোঃ “ব্যাপার কি?” আমরা ঐ সংবাদ দিলে সে আমাদেরকে তার বাড়ীতে নিয়ে গেল। তার ঘরে প্রবেশ করেই আমি নবী (সঃ)-এর ছবি দেখতে পেলাম। ছবিতে এও দেখলাম যে, নবী (সঃ)-এর পেছনে একটি লোক দাড়িয়ে রয়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার পেছনে তাকে ধরে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে সে কে? সে উত্তরে বললোঃ “ঐ লোকটি নবী নয়। কিন্তু যদি তার পরে অন্য কেউ নবী হতো তবে এই লোকটিই হতো। তার পরে অন্য কোন নবী আসবেন না। কিন্তু এই লোকটি তার স্থলাভিষিক্ত হবে।”

হযরত উমার (রাঃ)-এর মুআযযিন হযরত আকরা (রাঃ) বলেন, একদা হযরত উমার (রাঃ) আমাকে একজন খ্রীষ্টান পাদ্রীকে ডেকে আনার জন্যে প্রেরণ করেন। আমি তাকে ডেকে আনলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা তোমাদের কিতাবে আমার বর্ণনাও পাও কি?” সে উত্তরে বলেঃ “হাঁ। কিতাবে আপনাকে কারণ বলা হয়েছে।” হযরত উমার (রাঃ) তখন স্বীয় ছড়িটি উঠিয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “কারণ এর অর্থ কি?” সে উত্তর দেয়, “এর অর্থ হচ্ছে লৌহ মানব।” হ্যরত উমার (রাঃ) পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমার পরে কে হবে?” সে জবাবে বলেঃ “হ্যা, আপনার পরে আপনার স্থলাভিষিক্ত হবেন। একজন সৎ লোক। কিন্তু তিনি স্বীয় আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দিবেন।” একথা । শুনে উমার (রাঃ) বলে উঠলেন, “আল্লাহ হযরত উসমান (রাঃ)-এর উপর দয়া করুন।” একথা তিনি তিনবার বললেন। তারপর তিনি ঐ পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এরপর কে হবে?” সে উত্তর দিলোঃ “লৌহ খণ্ডের মতো এক ব্যক্তি।” হযরত উমার (রাঃ) বুঝে ফেললেন যে, এর দ্বারা হযরত আলীকে বুঝানো হয়েছে। তিনি স্বীয় মাথা ধরে আফসোস করতে লাগলেন। পাদ্রী বললোঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! তিনি সৎ খলীফা হবেন। কিন্তু তিনি এমন এক সময় খলীফা হবেন যখন তরবারী কোষ থেকে বের করে নেয়া হবে এবং রক্ত প্রবাহিত হবে।”

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “নবী (সঃ) মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন এবং অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করেন।” এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিশেষণ যা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে উল্লিখিত রয়েছে। বাস্তব ক্ষেত্রেও অবস্থা এই ছিল যে, তিনি কল্যাণকর কথা ছাড়া কিছুই বলতেন না এবং যা অকল্যাণকর ও ক্ষতিকর হতো তা থেকে তিনি মানুষকে বিরত রাখতেন। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “যখন তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে বলতে শুনঃ (আরবী) তখন কান খাড়া করে দাও। হয়তো কোন কল্যাণকর জিনিসের হুকুম করা হচ্ছে অথবা কোন মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা হচ্ছে। আর আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও গুরুতপূর্ণ বিষয়ের যে নির্দেশ দিয়েছেন তা হচ্ছে এই যে, তোমরা অন্যকে অংশীদার করা ছাড়াই তার ইবাদত করবে। কাউকেই তাঁর অংশীদার স্থাপন করবে না। সমস্ত নবী এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই প্রেরিত হয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি প্রত্যেক কওমের মধ্যে স্বীয় রাসূল পাঠিয়েছি (যে, সে তাদেরকে বলবেঃ), তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং প্রতিমা পূজা থেকে বিরত থাকবে।”

আবু হুমাইদ (রাঃ) ও আবু উসাদই (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আমা হতে বর্ণিত কোন হাদীস শুন, যেটাকে তোমাদের অন্তর মেনে নেয় এবং যার দ্বারা তোমাদের বুদ্ধি বিবেক নরম হয়ে যায় এবং তোমরা অনুভব কর যে, এটা তোমাদের মন-মগজের নিকটতর। তখন তোমরা নিশ্চিতরূপে জেনে নেবে যে, আমার মন-মস্তিষ্ক তোমাদের অপেক্ষা ওর বেশী নিকটতম হবে অর্থাৎ ওটা আমার হাদীস হবে। আর যদি স্বয়ং তোমাদের অন্তর ঐ হাদীসকে অস্বীকার করে এবং ওটা তোমাদের মন-মগজ ও বুদ্ধি বিবেক থেকে দূরে হয় তবে জেনে রাখবে যে, তোমাদের চেয়ে আমার মন-মস্তিষ্ক ওর থেকে বেশী দূরে হবে অর্থাৎ ওটা আমার হাদীস হবে না।” (ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, ইমাম আহমাদ (রঃ) এটা উত্তম ইসনাদের সাথে বর্ণনা করেছেন। সুনান কিতাব লেখকদের কেউই এটা তাখরীজ করেননি) হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কোন হাদীস শুনতে পাবে তখন ওটার ব্যাপারে ঐ ধারণাই পোষণ করবে যা সঠিকতম ধারণা হয়, যা বেশী কল্যাণময় এবং পবিত্রময়।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

ইরশাদ হচ্ছে- “সে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে দেয় এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করে।” অর্থাৎ তিনি তাদের এমন বস্তুসমূহ হালাল করেন যা তারা নিজেরাই নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছিল। যেমন ‘বাহীমা’, ‘সায়েবা’, ‘ওয়াসীলা’ এবং ‘হাম’। এসব জন্তু হালাল কিন্তু তারা জোরপূর্বক এগুলোকে হারাম করে নিয়েছিল। এর দ্বারা তারা নিজেদের উপর সংকীর্ণতা আনয়ন করেছে। আর যে অপবিত্র ও খারাপ বস্তুগুলো আল্লাহ তা’আলা হারাম করেছেন যেমন শূকরের মাংস, সুদ এবং খাদ্য জাতীয় জিনিস যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সেগুলোকে তারা হালাল করে নিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা যেসব জিনিস হালাল করেছেন ওগুলো খেলে শরীরের উপকার হয় এবং দ্বীনের সহায়ক হয়। পক্ষান্তরে যেগুলো তিনি হারাম করেছেন ওগুলো দেহ ও দ্বীন উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে থাকে। বিবেক বুদ্ধির মাধ্যমে যারা ভাল ও মন্দ যাচাই করে থাকেন তাঁরা এই আয়াতকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এই ধারণা ও অনুমানেরও উত্তর দেয়া হয়েছে কিন্তু এখানে এসবের ব্যাখ্যা দেয়ার তেমন সুযোগ নেই। এই আয়াতকে হুজ্জত রূপে কায়েম করেছেন ঐ আলেমগণও যারা বলে থাকেন যে, কোন জিনিসের বৈধতা ও অবৈধতা সম্পর্কে কোন হাদীস না থাকলে ওটা হালাল কি হারাম তা যাচাই করার মাপকাঠি হলো এই যে, আরববাসী উপকারের দিক দিয়ে কোন জিনিসকে উপকারী ও পবিত্র মনে করে এবং কোন জিনিসকে অপবিত্র ও ক্ষতিকর মনে করে (এটা দেখতে হবে)। এই অনুমান ও ধারণার ব্যাপারেও অনেক কিছু সমালোচনা হয়েছে।

ঘোষিত হচ্ছে-“মানুষের অন্তরে যে বোঝা ছিল, রাসূল (সঃ) তা হাল্কা করে এবং প্রথার যে শিকলে তারা আবদ্ধ ছিল নবী (সঃ) তা দূর করে থাকে। তিনি সহজ পন্থা, দান ও ক্ষমা নিয়ে এসেছেন। যেমন হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি সহজ এবং ভেজালবিহীন দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।”

নবী (সঃ) যখন হযরত মুআয (রাঃ) ও হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-কে আমির করে ইয়ামনে পাঠিয়েছিলেন তখন তিনি তাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেনঃ “তোমরা সদা প্রফুল্ল ও হাসিমাখা মুখে থাকবে। জনগণ যেন তোমাদেরকে দেখে ভয়ে পালিয়ে না যায়। তাদেরকে সহজ পন্থা বাতলিয়ে দিবে। সংকীর্ণতা আনয়ন করবে না। লোকদের যেন মেনে নেয়ার অভ্যাস হয়। তাদের মধ্যে যেন মতানৈক্য সৃষ্টির খেয়াল না জাগে।”

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবী হযরত আবু বারযা আসলামী (রাঃ) বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে অবস্থান করেছি এবং তার সহজ পন্থা বাতলানোর চিত্র সুন্দরভাবে অবলোকন করেছি।” পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে বড়ই কাঠিন্য ছিল। এই উম্মতের উপর সবকিছু হালকা করে দেয়া হয়েছে। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ আমার উম্মতকে তাদের অন্তরের খেয়াল ও বাসনার জন্যে পাকড়াও করেন না যে পর্যন্ত না তারা মুখে তা প্রকাশ করে অথবা কার্যে পরিণত করে। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ভুলত্রুটি ও বিস্মরণকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারা যদি ভুল বশতঃ কিছু করে বসে অথবা জোরপূর্বক তাদেরকে কোন অন্যায় কাজ করিয়ে নেয়া হয় তবে ক্ষমার্হ বলে গণ্য করা হবে। এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা এই উম্মতকে নিম্নরূপ কথা প্রার্থনা করতে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, যদি আমরা বিস্মরণ হই কিংবা ভুল করে বসি, হে আমাদের প্রভু! আমাদের প্রতি কোন কঠোর ব্যবস্থা পাঠাবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর পাঠিয়েছিলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর এমন কোন গুরুভার চাপাবেন না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই, আর ক্ষমা করে দিন আমাদেরকে এবং মার্জনা করে দিন, আর আমাদের প্রতি কৃপা করুন! আপনি আমাদের কর্মসম্পাদক, সুতরাং আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর প্রাবল্য দান করুন।” (২:২৮৬)।

সহীহ মুসলিম দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, এ দুআ’র মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া হলে তিনি প্রত্যেক যাজ্ঞার সময় বলেনঃ “আচ্ছা, আমি দিলাম, আমি কবুল করলাম।”

আল্লাহ পাক বলেনঃ “যারা তাঁর প্রতি (রাসূল সঃ-এর প্রতি) ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে ও সাহায্য সহানুভূতি করে, আর সেই নূরকে অনুসরণ করে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই ইহকালে ও পরকালে সাফল্য লাভ করবে।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 155-157

وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَـذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الاخِرَةِ

“And ordain for us good in this world, and in the Hereafter.”

Seventy Men from the Children of Israel go for the appointed Meeting Place that Allah designated, Allah later on destroys Them

Allah tells;

وَاخْتَارَ مُوسَى قَوْمَهُ سَبْعِينَ رَجُلً لِّمِيقَاتِنَا فَلَمَّا أَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ

And Musa chose out of his people seventy (of the best) men for Our appointed time and place of meeting, and when they were seized with a violent earthquake,

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented;

“Allah commanded Musa to choose seventy men. So he chose them and proceeded with them in order that they supplicate to their Lord. Their supplication included asking Allah,

`O Allah! Give us what you have never given anyone before us and will never give anyone after us!’ Allah disliked this supplication and they were seized with a violent earthquake,

قَالَ رَبِّ لَوْ شِيْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّايَ

He said:”O my Lord, if it had been Your will, You could have destroyed them and me before.”‘

As-Suddi said,

“Allah commanded Musa to come with thirty men from the Children of Israel, apologizing for worshipping the calf; and He gave them an appointed time and place.
وَاخْتَارَ مُوسَى قَوْمَهُ سَبْعِينَ رَجُل
(And Musa chose out of his people seventy (of the best) men).

He chose these men and went along with them so that they could apologize. When they reached the appointed place, they said,
لَن نُّوْمِنَ لَكَ
(We shall never believe in you), (2:55) `O Musa,
حَتَّى نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً
until we see Allah plainly, for you spoke to Him,’ they said, `therefore, show Him to us.’
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ
(but they were struck with a bolt of lightning) (4:153) and they died.

Musa stood up crying, invoking Allah, `O Lord! What should I tell the Children of Israel, when I go back to them after You destroyed their best men!’
رَبِّ لَوْ شِيْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّايَ
(“O my Lord, if it had been Your will, You could have destroyed them and me before”).”‘

Muhammad bin Ishaq said,

“Musa chose seventy of the best men from the Children of Israel. He said to them, `Go to the meeting with Allah and repent for what you committed. Beg His forgiveness for those of your people whom you left behind. Fast, purify yourselves and clean your clothes.’

So, he went with them to Mount Tur in Sinai for the meeting place and time designated by his Lord. He went there only with the leave and knowledge of Allah.

According to what has been mentioned to me, when the seventy did what he ordered them to do, and went with him to the meeting of Musa with his Lord, they said, `Request that we may also hear the words of our Lord.’

So he replied, `I shall.’

When Musa approached the mountain it became completely covered with columns of clouds, Musa approached it and entered in them. He said to the people, `Approach.’

But when Allah spoke to Musa, his cloak was surrounded by a brilliant light which no human could bear to look at, so below him a barrier was placed and the people approached.

When they entered the cloud they fell prostrate and they heard Him while he was speaking to Musa, commanding him and forbidding him, saying what to do and what not to do. When He completed commanding him, and removed the cloud from Musa, he faced the people and they said, `O Musa! We will not believe in you unless we see Allah directly.’ So the thunder shook them, their souls were captured and they all died. Musa stood up invoking, begging and supplicating to his Lord,
رَبِّ لَوْ شِيْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّايَ
(“O my Lord, if it had been Your will, You could have destroyed them and me before).”‘

meaning, `They were foolish. Would You destroy anyone who comes after me from the Children of Israel’

Ibn Abbas, Qatadah, Mujahid and Ibn Jarir At-Tabari said,

“They were seized by the tremor or lightning, because they neither shunned nor forbade their people who worshipped the calf.”

This is supported by Musa’s statement,

أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَاء مِنَّا

“would You destroy us for the deeds of the fools among us!”

He said next,

إِنْ هِيَ إِلاَّ فِتْنَتُكَ

“It is only Your Fitnah!”

According to Ibn Abbas, Sa`id bin Jubayr, Abu Al-Aliyah, Ar-Rabi bin Anas and several among the Salaf and latter scholars,

affliction, test and trial,

This is the only plausible meaning, in which Musa says,

تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَاء وَتَهْدِي مَن تَشَاء

by which You lead astray whom You will, and keep guided whom You will.

“The decision is Yours (O Allah), and the judgment, and whatever You will occurs. You misguide whom You will, guide whom You will, and none can guide whom You misguide or misguide whom You guide. There is none who can give what You deprive or avert what You give. The sovereignty is all Yours, and Yours is the judgment, the creation and the decision.”

The Ayah,
.
أَنتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا

وَأَنتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ

“You are our protector, so forgive us and have mercy on us:for You are the best of those who forgive.”

pertains to (Allah’s) covering the mistake and not punishing for the sin.

Whenever mercy is mentioned along with forgiveness (such as in Musa’s supplication to Allah), it includes the hope that Allah does not permit one to fall into that act again.

وَأَنتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ
(“for You are the best of those who forgive),”

for none except You can forgive the sin.
وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَـذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الاخِرَةِ

“And ordain for us good in this world, and in the Hereafter.”

The first part of Musa’s supplication was to fend off what should be avoided, while this part is a request for what is sought.

The meaning of this Ayah is,

`ordain for us and grant us all that is good in both lives.

We mentioned the meaning of `good’ before in Surah Al-Baqarah.

إِنَّا هُدْنَـا إِلَيْكَ

“We have Hudna unto You.”

According to the meaning of, `Hudna’, given by Ibn Abbas, Sa`id bin Jubayr, Mujahid, Abu Al-Aliyah, Ad-Dahhak, Ibrahim At-Taymi, As-Suddi, Qatadah and several others,

`we repent, go back and return unto You,’
Allah’s Mercy is for Those Who have Taqwa and believe in Allah’s Ayat and His Messenger

Allah answers the statement,
إِنْ هِيَ إِلاَّ فِتْنَتُكَ
(It is only Your trial…) (7:155), by saying,

قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاء وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ

He said:(As to) My punishment I afflict therewith whom I will and My mercy embraces all things.

Allah says here, `I do what I will, decide what I will and I have wisdom and justice in all matters.’ Certainly, there is no deity worthy of worship except Allah. Allah’s statement,
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
(and My mercy embraces all things) testifies to His encompassing mercy.

Allah said that the angels who carry His Throne and those around the Throne supplicate,

رَبَّنَا وَسِعْتَ كُـلَّ شَىْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْماً

“Our Lord! You comprehend all things in mercy and knowledge.” (40:7)

Imam Ahmad recorded that Jundub bin Abdullah Al-Bajali said,

“A Bedouin man came, he made his camel kneel and he tied it. Then he prayed behind the Messenger of Allah. When the Messenger of Allah finished the prayer, that man untied his camel mounted it and supplicated aloud, `O Allah! Grant Your mercy to me and to Muhammad, and do not give a share in it to anyone else.’

The Messenger of Allah commented (to his Companions),

أَتَقُولُونَ هَذَا أَضَلُّ أَمْ بَعِيرُهُ أَلَمْ تَسْمَعُوا مَا قَالَ

Do you think that this man is more misguided or his camel! Did you not hear what this man has said?

They said, `Yes.’

He said,

لَقَدْ حَظَّرْتَ رَحْمَةً وَاسِعَةً إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ خَلَقَ مِايَةَ رَحْمَةٍ فَأَنْزَلَ رَحْمَةً يَتَعَاطَفُ بِهَا الخَلْقُ جِنُّهَا وَإِنْسُهَا وَبَهَايِمُهَا وَأَخَّرَ عِنْدَهُ تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً أَتَقُولُونَ هُوَ أَضَلُّ أَمْ بَعِيرُهُ

You (the Bedouin man) have restricted a vast mercy! Allah, the Exalted, the most Honored has created a hundred mercies and sent down one of them by which the creation, men, Jinn and animals, show mercy to each other. He left with Him ninety-nine mercies, so do you say that this man is more misguided or his camel?

Ahmad and Abu Dawud collected this Hadith.

Imam Ahmad recorded that Salman narrated that the Prophet said,

إِنَّ للهِ عَزَّ وَجَلَّ مِايَةَ رَحْمَةٍ فَمِنْهَا رَحْمَةٌ يَتَرَاحَمُ بِهَا الْخَلْقُ وَبِهَا تَعْطِفُ الْوُحُوشُ عَلَى أَوْلَادِهَا وَأَخَّرَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَة

Allah, the Exalted and Most Honored, has a hundred mercies. With one of them, the creations show mercy to each other, and even the beasts show kindness to their offspring. He has kept ninety-nine mercies with Him for the Day of Resurrection.

Muslim recorded it.

Allah said next,

فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ

That (mercy) I shall ordain for those who have Taqwa,

meaning, I will ordain My mercy for them, as a favor and kindness from Me to them. Allah said in a similar Ayah,

كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ

He has prescribed mercy for Himself. (6:12)

Allah’s statement,
لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ
(for those who have Taqwa),

means, `I will ordain My mercy for those who possess these qualities, and they are the Ummah of Muhammad,’
لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ
(for those who have Taqwa), who avoid Shirk and major sins,

وَيُوْتُونَ الزَّكَـاةَ

and give Zakah;

purify themselves, according to one opinion.

It was also said that,

`the Zakah’, here pertains to wealth.

It is possible that both meanings are included here, for this Ayah was revealed in Makkah (before Zakah in fixed shares was ordained),

وَالَّذِينَ هُم بِأيَاتِنَا يُوْمِنُونَ

and those who believe in Our Ayat.

those who have faith in them.

The Description of that Messenger

Allah tells;

الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الاُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالاِنْجِيلِ

Those who follow the Messenger, the Prophet who can neither read nor write whom they find written of with them in the Tawrah and the Injil,

This is the description of the Prophet Muhammad in the Books of the Prophets. They delivered the good news of his advent to their nations and commanded them to follow him. His descriptions were still apparent in their Books, as the rabbis and the priests well know.

Imam Ahmad recorded that Abu Sakhr Al-Uqayli said that a Bedouin man said to him,

“I brought a milk-producing camel to Al-Madinah during the life time of Allah’s Messenger. After I sold it, I said to myself, `I will meet that man (Muhammad) and hear from him.’ So I passed by him while he was walking between Abu Bakr and Umar, and I followed them until they went by a Jewish man, who was reading from an open copy of the Tawrah. He was mourning a son of his who was dying and who was one of the most handsome boys. The Messenger of Allah asked him (the father),

أَنْشُدُكَ بِالَّذِي أَنْزَلَ التَّوْرَاةَ هَلْ تَجِدُ فِي كِتَابِكَ هَذَا صِفَتِي وَمَخْرَجِي

I ask you by He Who has sent down the Tawrah, do you not find the description of me and my advent in your Book?

He nodded his head in the negative.

His son said, `Rather, yes, by He Who has sent down the Tawrah! We find the description of you and your advent in our Book. I bear witness that there is no deity worthy of worship except Allah and that you are the Messenger of Allah.’

The Prophet said (to the Companions),

أَقِيمُوا الْيَهُودِيَّ عَنْ أَخِيكُم

Stop the Jew (the father) from (taking care of) your brother (in Islam).

The Prophet then personally took care of the son’s funeral and led the funeral prayer on him.”‘

This Hadith is sound and is supported by a similar Hadith in the Sahih narrated from Anas.

Ibn Jarir recorded that Al-Muthanna said that Ata’ bin Yasar said,

“I met Abdullah bin `Amr and asked him, `Tell me about the description of Allah’s Messenger in the Tawrah.’

He said, `Yes, by Allah! He is described in the Tawrah, just as he is described in the Qur’an,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
O Prophet! Verily, We have sent you as a witness, and a bearer of glad tidings, and a warner. (33:45) as a safe refuge for the unlettered ones. `You are My servant and Messenger. I have called you `Al-Mutawakkil’ (who trusts in Allah), not hard or harsh.’ Neither uttering foul speech in the markets nor returning evil deed with one in kind. Rather, he forgives and forgoes. Allah will not end his life until He straightens through him the crooked religion, so that they might proclaim, `There is no deity worthy of worship except Allah.’ He will open through him sealed hearts, deaf ears and blind eyes.”‘

Ata’ then said,

“I also met Ka`b and asked him the same question, and his answer did not differ from Abdullah’s answer, even concerning one letter.”

Al-Bukhari recorded it from Abdullah bin `Amr. It was also recorded by Al-Bukhari (up to the word) forgoes. And he mentioned the narration of Abdullah bin `Amr then he said; “It was common in the speech of our Salaf that they describe the Books of the People of the Two Scriptures as the Tawrah, as some Hadiths concur. Allah knows best.”

Allah’s statement,

يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ

He commands them to do good; and forbids them from evil;

This is the description of the Messenger of Allah in previous Books. These were the true qualities of our Messenger, as well, for he only ordained good and forbade evil.

We should mention here that Abdullah bin Mas`ud said,

“When you hear Allah’s statement,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ اَمَنُوا
(O you who believe!), then pay it your full attention, for it is a good that you are being commanded, or an evil that you are being forbidden.”

And the most important and greatest of these commands and prohibitions, is that Allah has sent the Messenger to order worshipping Him Alone without partners and forbid worshipping others besides Him. This is the Message that Allah has sent all Messengers with before Muhammad, just as Allah said,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللَّهَ وَاجْتَنِبُواْ الْطَّـغُوتَ

And verily, We have sent among every Ummah a Messenger (proclaiming):”Worship Allah, and avoid the Taghut (false deities).” (16:36)

Allah’s statement,

وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَأيِثَ

He makes lawful for them the good things, and forbids them from the evil things,

meaning, he makes the Bahirah, Sa’ibah, Wasilah and Ham, etc., lawful. They were prohibitions that they invented which were only hard for themselves. He also forbids them from evil things, such as the flesh of the pig, Riba, and foods that were treated as lawful although Allah the Exalted had forbidden them.

Ali bin Abi Talhah reported this from Ibn Abbas.

Allah’s statement,

وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالَاغْلَلَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ

He (Muhammad) releases them from their heavy burdens, and from the fetters that were upon them.

indicates that Muhammad came with leniency and an easy religion.

As mentioned in the Hadith recorded from many routes that Allah’s Messenger said,

بُعِثْتُ بِالْحَنِيفِيَّةِ السَّمْحَة

I was sent with the easy way of Hanifiyyah (monotheism).

The Prophet said to the two Commanders he appointed, Mu`adh and Abu Musa Al-Ash`ari, when he sent them to Yemen,

بَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا وَيَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا وَتَطَاوَعَا وَلَا تَخْتَلِفَا

Bring glad tidings and do not drive people away, make things easy and do not make them difficult, obey each other and do not differ among yourselves.

Abu Barzah Al-Aslami, the Prophet’s Companion, said,

“I accompanied the Messenger of Allah and saw how easy he was. The nations that were before us had things made difficult for them in their laws. Allah made the law encompassing and easy for this Ummah. Hence the statement of the Messenger of Allah,

إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لاُِمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسُهَا مَا لَمْ تَقُلْ أَوْ تَعْمَل

Allah has forgiven my Ummah for what occurs in themselves, as long as they do not utter it or act upon it.

The Prophet said,

رُفِعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأُ وَالنِّسْيَانُ وَمَا اسُتُكْرِهُوا عَلَيْه

My Ummah was forgiven (by Allah) unintentional errors, forgetfulness and what they are forced to do.”

This is why Allah has guided this Ummah to proclaim,

رَبَّنَا لَا تُوَاخِذْنَأ إِن نَّسِينَأ أَوْ أَخْطَأْنَا
“Our Lord! Punish us not if we forget or fall into error,

رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَأ إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا
our Lord! Lay not on us a burden like that which You did lay on those before us (Jews and Christians);

رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ
our Lord! Put not on us a burden greater than we have strength to bear.

وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَأ
Pardon us and grant us forgiveness. Have mercy on us.

أَنتَ مَوْلَـنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَـفِرِينَ
You are our Mawla (Patron, Supporter and Protector) and give us victory over the disbelieving people.
(2:286)

It is recorded in Sahih Muslim that (the Prophet said that);

Allah the Exalted said after every one of these supplications, “I shall accept (your supplication).”

Allah’s statement,

فَالَّذِينَ امَنُواْ بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ

So those who believe in him, honor him, help him.

refers to respecting and honoring Muhammad,

وَاتَّبَعُواْ النُّورَ الَّذِيَ أُنزِلَ مَعَهُ

and follow the light which has been sent down with him,

the Qur’an and the revelation (Sunnah) that the Prophet delivered to mankind,

أُوْلَـيِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

it is they who will be successful.

in this life and the Hereafter.

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] ঐ সত্তরজন ব্যক্তির বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী টীকায় হবে। এখানে এটা বলা হচ্ছে যে, মূসা (আঃ) নিজ জাতির সত্তরজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করলেন এবং তাদেরকে ত্বূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন; যেখানে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হল। যার কারণে মূসা (আঃ) বললেন,—-।

[২] বানী ইস্রাঈলের এই সত্তরজন ব্যক্তি কারা ছিল? এ সম্পর্কে মুফাসসিরদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একটি মত হল যে, যখন মূসা (আঃ) তাদেরকে তাওরাতের আহকাম শুনালেন, তারা বলল, ‘আমরা কেমন করে বিশ্বাস করব যে, এই কিতাব সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে? যতক্ষণ আমরা আল্লাহকে স্বয়ং কথা বলতে না শুনব, ততক্ষণ এটাকে মানব না।’ সুতরাং তিনি সত্তরজন ব্যক্তিকে বেছে নিলেন এবং তাদেরকে ত্বূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর সাথে কথোপকথন করলেন, যা তারাও শুনল। কিন্তু তারা একটি নতুন দাবী করে বসল যে, যতক্ষণ আমরা নিজ চোখে আল্লাহকে না দেখব, ঈমান আনব না। দ্বিতীয় মত হল, এই সত্তরজন ব্যক্তি হল তারা, যাদেরকে পূর্ণ জাতির তরফ হতে বাছুর-পূজার মহাপাপ থেকে তওবা করার জন্য ত্বূর পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর সেখানে গিয়ে তারা আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল। তৃতীয় মত হল, এই সত্তরজন ব্যক্তি বানী ইস্রাঈলকে বাছূর-পূজা করতে দেখেছিল, কিন্তু তারা তাদেরকে নিষেধ করেনি। চতুর্থ মত হল, এই সত্তরজন ব্যক্তি যাদেরকে মহান আল্লাহর আদেশে নির্বাচন করে ত্বূর পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে তারা আল্লাহর নিকট দু’আ করে। যার মধ্যে একটি দু’আ ছিল ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন কিছু দান কর, যা এর পূর্বে কাউকে দান করা হয়নি। আর না পরবর্তীতে কাউকে দান করা হবে।’ মহান আল্লাহর এই দু’আ পছন্দ হল না। যার কারণে তাদেরকে ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংস করা হল। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ দ্বিতীয় মতকে গ্রহণ করেছেন এবং ঐ ঘটনাকে সেই ঘটনা বলে নির্ধারিত করেছেন, যা সূরা বাক্বারার ২:৫৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। যেখানে তাদের উপর বিদ্যুৎ (বজ্র) রূপে মৃত্যু নেমে এসেছিল। আর এখানে ভূমিকম্পন দ্বারা মৃত্যুর কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, হতে পারে দুই আযাবই তাদের উপর এসেছিল; আকাশ হতে বজ্র ও পৃথিবী হতে ভূমিকম্প। যাই হোক, মূসা (আঃ) দু’আ ও দরখাস্ত করে বললেন, তাদের জন্য যদি ধ্বংসই অবধারিত ছিল, তাহলে এর পূর্বে যখন তারা বাছুর-পূজায় নিমগ্ন ছিল, তখনই ধ্বংস করতেন।—‘ সুতরাং তার ফলে মহান আল্লাহ তাদেরকে পুনর্জীবন দান করলেন।

[৩] অর্থাৎ, তওবা করছি।

[৪] এটি মহান আল্লাহর করুণার পরিব্যাপ্তিই বটে যে, পৃথিবীতে সৎ-অসৎ মু’মিন-কাফের সবাই আল্লাহর করুণা হতে উপকৃত হচ্ছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, “আল্লাহর করুণার একশত অংশ আছে। তার মধ্যে একটি অংশ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। যার কারণে সৃষ্টি এক অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকে; এমনকি পশুরাও নিজ নিজ বাচ্চার উপর মায়া করে নিজেদের পা তুলে নেয়। আর তিনি করুণার ৯৯ ভাগ অংশ নিজের কাছে রেখেছেন।” (মুসলিম ২১০৮, ইবনে মাজাহ ৪২৯৩নং)

[৫] এই আয়াত ঐ বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য একটি অকাট্য প্রমাণ যে, মুহাম্মাদী রিসালতের উপর ঈমান আনা ছাড়া পরকালে পরিত্রাণ সম্ভব নয়। আর ঐ ঈমানই ঈমান বলে গণ্য, যা বিস্তারিতভাবে মুহাম্মাদ (সাঃ) বর্ণনা করেছেন। এই আয়াত থেকে ‘সব ধর্ম সমান’ ধারণা সমূলে উৎপাটিত হয়।

[৬] সৎকর্ম তাই, যাকে শরীয়ত সৎ বলেছে এবং অসৎকর্ম তাই, যাকে শরীয়ত অসৎ বলে গণ্য করেছে।

[৭] এই বোঝা ও বন্ধন যা পূর্বের শরীয়তে বিদ্যমান ছিল। যেমন, প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ হত্যা আবশ্যিক ছিল। (রক্তপণ বা ক্ষমার কোন পথ ছিল না।) কাপড়ে অপবিত্রতা লেগে গেলে তা কেটে ফেলা জরুরী ছিল। ইসলাম শুধুমাত্র ধোয়ার আদেশ দিয়েছে। যেমন, প্রাণ হত্যার অপরাধে রক্তপণ ও ক্ষমা করার অনুমতিও রয়েছে ইত্যাদি। নবী (সাঃ)-ও ইরশাদ করেছেন যে, আমি সহজ একনিষ্ঠ ধর্ম দিয়ে প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমাদ) কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, এই জাতি নিজ থেকে অনেক আচার ও প্রথার বোঝা নিজেদের উপর চাপিয়ে নিয়েছে এবং জাহেলিয়াতের বন্ধন নিজেদের গলায় বেঁধে নিয়েছে, যার ফলে বিবাহ ও মৃত্যু উভয়ই আমাদের জন্য আযাব বনে গেছে। আল্লাহ এ জাতিকে হিদায়াত করুন। আমীন।

[৮] এর শেষের শব্দগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, সাফল্য তারাই লাভ করবে যারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনবে ও তাঁর অনুসরণ করবে। আর যারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনবে না, তারা সফলতা লাভ করবে না, বরং তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবে। সাফল্য বলতে পরকালের সাফল্যকে বুঝানো হয়েছে। এটা সম্ভব যে, কোন জাতি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্বাস করে না, তা সত্ত্বেও তারা পৃথিবীর সম্পদ ও ভোগবিলাস লাভে বড় সফল। যেমন বর্তমান যুগে পাশ্চাত্য, ইউরোপ ও অন্যান্য জাতির অবস্থা। তারা খ্রিষ্টান, ইয়াহুদী ও কাফের-মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বড় উন্নত। কিন্তু তাদের পার্থিব এ উন্নতি সাময়িকভাবে তাদের পরীক্ষার জন্য। ওটি তাদের পরকালের সাফল্যের মাপকাঠি নয়। অনুরূপ واتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَه (এবং যে আলো তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করে) থেকে এ কথা পরিষ্কার হয় যে, সূরা মাইদার ৫:১৫ নং আয়াতে ‘নূর’ জ্যোতি বা আলো বলতে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। (যেমন সেখানেও সুস্পষ্ট করা হয়েছে। কারণ যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তা কুরআন মাজীদ। সেই জন্য এই ‘নূর’ হতে নবী (সাঃ)-এর সত্তা অর্থ হতে পারে না। হ্যাঁ, এ কথা স্বতন্ত্র যে, তাঁর গুণাবলীর মধ্যে একটি গুণ নূর, যার দ্বারা কুফর ও শিরকের অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। কিন্তু ‘নূর’ তাঁর গুণ বলে তিনি ‘আল্লাহর নূর’ হতে পারেন না; যেমন বিদআতীরা (জাল হাদীস দ্বারা) প্রমাণ করতে চায়। (বিস্তারিত দেখুন সূরা মাইদার ৫:১৫নং আয়াতের টীকা)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

* জাতীয় প্রতিনিধিদের তলব করার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। জাতির ৭০ জন প্রতিনিধি সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর সমীপে হাযির হয়ে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে গো-বৎস পূজার অপরাধের ক্ষমা চাইবে এবং নতুন করে আল্লাহর আনুগত্যের অঙ্গীকার করবে, এই ছিল এর উদ্দেশ্য। বাইবেল ও তালমুদে এ বিষয়টির উল্লেখ নেই। তবে হযরত মূসা যে ফলকগুলি ছুঁড়ে দিয়ে ভেঙে ফেলেছিলেন সেগুলোর বদলে অন্য ফলক দেবার জন্য তাঁকে সিনাই পাহাড়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল একথা অবশ্যি সেখানে উল্লেখিত হয়েছে। (যাত্রা পুস্তক ৩৪ অধ্যায়) ।

* প্রত্যেকটি পরীক্ষাকাল মানুষের জন্য চূড়ান্তই হয়ে থাকে। এ পরীক্ষা চালুনীর মত একটি মিশ্রিত দল থেকে কর্মঠ লোকগুলোকে বাছাই করে নিয়ে অকর্মন্য লোকগুলোকে দূরে নিক্ষেপ করে দল থেকে আলাদা করে দেয়। এই ধরনের পরীক্ষা মাঝে মাঝে আসতে থাকে, এটা আল্লাহর একটি কর্ম কৌশল। এসব পরীক্ষায় যারা সফলকাম হয় তারা মূলত আল্লাহর সাহায্য ও পথনির্দেশেই সাফল্য লাভ করে থাকে। আর যারা ব্যর্থ হয় তারা আল্লাহর সাহায্য ও পথনির্দেশ থেকে বঞ্চিত হবার কারণেই ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। যদিও আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও পথনির্দেশনা লাভ করার ও একটি নিয়ম আছে এবং এ নিয়মটি সম্পূর্ণরূপে প্রজ্ঞা ও ইনসাফের ওপর নির্ভরশীল। তবুও এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, পরীক্ষায় কারোর সফলকাম বা অসফল হওয়া আসলে আল্লাহরই সাহায্য, অনুগ্রহ ও পথনির্দেশনার ওপর নির্ভর করে।
* মহান আল্লাহ‌ যে পদ্ধতিতে বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন, সেখানে ক্রোধ মুখ্য নয় এবং অনুগ্রহ ও মেহেরবানী সেখানে মাঝে মধ্যে দেখা যায় এমন নয়। বরং অনুগ্রহই সেখানে মূখ্য এবং সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থা তারই ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর সেখানে ক্রোধের প্রকাশ কেবল তখনই ঘটে যখন মানুষের দম্ভ ও অহংকার সীমা ছাড়িয়ে যায়।

*ওপরের বাক্যটি পর্যন্ত হযরত মূসার দোয়ার জওয়াব শেষ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর সুযোগ বুঝে এবার সাথে সাথেই বনী ইসরাঈলকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এ ভাষণটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হবার জন্য হযরত মূসা (আ) এর যুগে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছিল আজো সেগুলোই বহাল রয়ে গেছে। আর তোমাদের এ নবীর প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারটি আসলে সেই শর্তগুলোরই দাবী। তোমারদের বলা হয়েছিল, যারা আল্লাহর নাফরমানী থেকে দূরে থাকে আল্লাহর রহমত তাদেরই প্রাপ্য। তাইতো যে নবীকে আল্লাহ‌ নিযুক্ত করেছেন, তার নেতৃত্ব গ্রহণকরতে অস্বীকার করাই হচ্ছে আজকের সবচেয়ে বড় মৌলিক নাফরমানী। কাজেই যতদিন তোমরা এ নাফরমানী থেকে বিরত হবে না, ততদিন তোমরা খুটিনাটি ও ছোটখাটো তাকওয়ার বিষয় নিয়ে যতই মাতামাতি কর না কেন তাকওয়ার ভিত্তিমূল প্রতিষ্ঠিত হবে না। তোমাদের বলা হয়েছিল যাকাতও আল্লাহর রহমতের অংশ পাওয়ার একটি শর্ত। তাইতো আজ এ নবীর নেতৃত্বে দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম চলছে, যতদিন তার সাথে সেই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা হবে না ততদিন কোন প্রকার অর্থ ব্যয় যাকাতের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কাজেই তোমরা যতই দান-খয়রাত করো এবং নজর-নিয়াজ দাও না কোন, এ পথে অর্থ ব্যয় না করা পর্যন্ত যাকাতের মৌলিক ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হবে না। তোমাদের বলা হয়েছিল, যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহর নিজের রহমত কেবল তাদের জন্যই লিখে রেখেছেন। তাইতো আজ এ নবীর ওপর যেসব আয়াত নাযিল হচ্ছে সেগুলো অস্বীকার করে তোমরা কোনক্রমেই আল্লাহর আয়াত মান্যকারী হিসেবে স্বিকৃতি পেতে পারনা। কাজেই তোমরা তাওরাতের প্রতি ঈমান রাখার যতই দাবী কর না কেন যতদিন তোমরা এ নবীর প্রতি ঈমান আনবে না ততদিন এ শেষ শর্তটিও পূর্ণ হবে না।

এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য “উম্মী” শব্দটি ব্যবহারও বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। বনী ইসরাঈলীরা নিজেদের ছাড়া দুনিয়ার অন্য জাতিদেরকে উম্মী (Gentiles) বলতো। কোন উম্মীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা তো দূরের কথা উম্মীদের জন্য নিজেদের সমান মানবিক অধিকার স্বীকার করাও ছিল তাদের জাতীয় মর্যাদা ও অহংকারের পরিপন্থী। তাই কুরআনেই বলা হয়েছেঃ لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ (উম্মীদের ধন-সম্পদ ভোগ দখল করার জন্য আমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না। (আলে ইমরান ৭৫ আয়াত ) কাজেই আল্লাহ‌ এক্ষেত্রে তাদেরই পরিভাষা ব্যবহার করে বলছেন, এখন তো এ উম্মীর সাথে তোমাদের ভাগ্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর আনুগত্য স্বীকার করলে তোমরা আমার অনুগ্রহের অংশ লাভ করবে, নয়তো শত শত বছর থেকে তোমরা আমার যে ক্রোধের শিকার হয়ে আসছো এখনো তাই তোমাদের কপালে লেখা হবে।

* দৃষ্টান্ত স্বরূপ তাওরাত ও ইনজীলের নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুন। এসব স্থানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮: ১৫-১৯, মথি ২১: ৩৩-৪৬, যোহন ১: ১৯-২১, যোহন ১৪: ১৫-১৭ এবং ২৫-৩০, যোহন ১৫: ২৫-২৬, যোহন ১৬: ৭-১৫)

* অর্থাৎ যে পাক-পবিত্র জিনিসগুলো তারা হারাম করে রেখেছে, সেগুলো তিনি হালাল করে দেন এবং যেসব নাপাক ও অপবিত্র জিনিস তারা হালাল করে নিয়েছে, সেগুলো তিনি হারাম গণ্য করেন।

* অর্থাৎ তাদের ফকীহরা নিজেদের আইনগত সূক্ষ্মতম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক নেতৃবর্গ নিজেদের ধার্মিকতা ও পরহেজগারীর অতি বাড়াবাড়ির সাহায্যে এবং মূর্খ সাধারণ মানুষ নিজেদের কল্প কুসংস্কার ও মনগড়া নীতি-নিয়মের বেড়াজালে আটকে তাদের জীবনকে যেসব বোঝার নীচে দাবিয়ে রাখে এবং যেসব বাঁধনে তাদেরকে বেঁধে রাখে, এ নবী সেই সমস্ত বোঝা নামিয়ে দেন এবং সমস্ত বাঁধন খুলে দেন।

Leave a Reply