Book#540

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٣٧) -৫৪০
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৬৩-১৬৬ নং আয়াত:-

أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ

যারা মন্দ কাজে বাধা দান করত, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম।
We rescued those who forbade evil,

وَ سۡـَٔلۡہُمۡ عَنِ الۡقَرۡیَۃِ الَّتِیۡ کَانَتۡ حَاضِرَۃَ الۡبَحۡرِ ۘ اِذۡ یَعۡدُوۡنَ فِی السَّبۡتِ اِذۡ تَاۡتِیۡہِمۡ حِیۡتَانُہُمۡ یَوۡمَ سَبۡتِہِمۡ شُرَّعًا وَّ یَوۡمَ لَا یَسۡبِتُوۡنَ ۙ لَا تَاۡتِیۡہِمۡ ۚۛ کَذٰلِکَ ۚۛ نَبۡلُوۡہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۱۶۳﴾
সাগর সৈকতে অবস্থিত জনপদ সম্বন্ধে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, তারা শনিবারে সীমালংঘন করত। যখন উক্ত শনিবারে তাদের কাছে পানির উপর মাছ ভেসে আসত এবং শনিবার ভিন্ন অন্য দিন আসত না। তারা অবাধ্য ছিল বলেই আমি এভাবে তাদের পরীক্ষা নিই।
وَ اِذۡ قَالَتۡ اُمَّۃٌ مِّنۡہُمۡ لِمَ تَعِظُوۡنَ قَوۡمَۨا ۙ اللّٰہُ مُہۡلِکُہُمۡ اَوۡ مُعَذِّبُہُمۡ عَذَابًا شَدِیۡدًا ؕ قَالُوۡا مَعۡذِرَۃً اِلٰی رَبِّکُمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۱۶۴﴾
আর স্মরণ কর, যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘আল্লাহ যাদেরকে ধ্বংস করবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দেবেন তোমরা তাদেরকে সদুপদেশ দাও কেন?’ তারা বলেছিল, ‘তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দোষ মুক্তির জন্য এবং যাতে তারা সাবধান হয় এ জন্য।’

فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُکِّرُوۡا بِہٖۤ اَنۡجَیۡنَا الَّذِیۡنَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ السُّوۡٓءِ وَ اَخَذۡنَا الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا بِعَذَابٍۭ بَئِیۡسٍۭ بِمَا کَانُوۡا یَفۡسُقُوۡنَ ﴿۱۶۵﴾
যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল, তখন যারা মন্দ কাজে বাধা দান করত, তাদেরকে আমি উদ্ধার করলাম এবং যারা অত্যাচারী ছিল, তারা সত্যত্যাগ করত বলে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তির সাথে পাকড়াও করলাম।

فَلَمَّا عَتَوۡا عَنۡ مَّا نُہُوۡا عَنۡہُ قُلۡنَا لَہُمۡ کُوۡنُوۡا قِرَدَۃً خٰسِئِیۡنَ ﴿۱۶۶﴾
অতঃপর তাদের জন্য যে কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সে কাজেও তারা যখন সীমালংঘন করতে লাগল, তখন আমি তাদেরকে বললাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও!’

১৬৩-১৬৬ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এ আয়াতে দাঊদ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন ও তাদের ওপর আপতিত আযাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

দাঊদ (আঃ) হলেন আল্লাহ তা‘আলার সেই বান্দা যাকে আদম (আঃ) নিজ বয়স থেকে ৪০ বছর দান করেছিলেন। (তিরমিযী, মিশকাত হা: ১৮৮, হাসান সহীহ)

দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে নয়টি সূরার তেইশটি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আগমনের প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বেকার নাবী। (তাফসীরে মারেফুল কুরআন, পৃঃ ৯৯০) তিনি যেমন রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তেমনি দৈহিকভাবে শক্তিশালী ও ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান ছিলেন। তার নিম্নরূপ:

১. তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اِصْبِرْ عَلٰي مَا يَقُوْلُوْنَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاودَ ذَا الْأَيْدِ ج إِنَّه۫ أَوَّابٌ)‏

“তারা যা কিছু বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং স্মরণ কর আমার বান্দা দাঊদের কথা, যে ছিল খুব শক্তিশালী এবং সে ছিল অতিশয় আল্লাহ তা‘আলা অভিমুখী।” (সূরা সোয়াদ ৩৮:১৭)

২. পাহাড় ও পক্ষীকুল তার অনুগত ছিল। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَه۫ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ وَالطَّيْرَ مَحْشُوْرَةً ط كُلٌّ لَّه۫ أَوَّابٌ)

“আমি পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, তার সাথে তারা সকাল-সন্ধ্যায় আমার তাসবীহ পাঠ করত এবং পাখীদেরকেও, যারা তার কাছে একত্র হত। সকলেই ছিল তাঁর অভিমুখী।” (সূরা সোয়াদ ৩৮:১৮-১৯)

৩. তিনি ছিলেন সুদৃঢ় সাম্রাজের অধিকারী, গভীর প্রজ্ঞাবান ও বাগ্মী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَشَدَدْنَا مُلْكَه۫ وَاٰتَيْنٰهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ)‏

“আর আমি তার রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম হিকমাত ও বিচার ফায়সালায় তীক্ষ্মবুদ্ধি।” (সূরা সোয়াদ ৩৮:২০)

এছাড়াও সূরা সোয়াদে তার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।

শনিবারের ঘটনার সার-সংক্ষেপ: বানী ইসরাঈলদের জন্য শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ও পবিত্র দিন। এ দিন তাদের জন্য মাছ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকুলের বাসিন্দা ছিল এবং মাছ শিকার ছিল তাদের পেশা।

এদের মধ্যে তিন শ্রেণির মানুষ ছিল:

একশ্রেণি: এরা প্রথমে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশলে সমুদ্র সংলগ্ন স্থানে খাল খনন করে রাখত, ফলে শনিবার তাতে মাছ প্রবেশ করে আর বের হতে পারত না। আর শনিবার চলে গেলে শিকার করে নিত। পরে তারা প্রকাশ্যে শনিবারে মাছ শিকার করে। এদের ব্যাপারে সূরা বাক্বারার ৫৬-৬৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে:

দ্বিতীয় শ্রেণি: এরা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীদের বাধা প্রদান করে। বাধা না মানার কারণে তারা তাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এমনকি বাসস্থানও আলাদা করে ফেলে। এদের ব্যাপারে অত্র সূরার ১৬৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

তৃতীয় শ্রেণি: তারা নিষেধকৃত কাজে জড়িত হয়নি আবার বারণও করেনি। এদেরকেও শাস্তি পাকড়াও করে। সুতরাং অপরাধ করা ও অপরাধ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চুপ থাকা সমান অন্যায়। তাই যথাসম্ভব খারাপ কাজে বাধা দেয়া উচিত।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. দাঊদ (আঃ) ও তাঁর বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম।
২. দাঊদ (আঃ)-এর সম্প্রদায় পৃথিবীর অদ্বিতীয় শাস্তিপ্রাপ্ত জাতি।
৩. যারা অস্যৎ কাজ করে আর যারা তাদের অসৎ কাজে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাধা দেয় না, বরং নিরবতা অবলম্বন করে থাকে তারা সবাই একই বিধানের শামিল।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 163-166
أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ
We rescued those who forbade evil,

The Jews transgress the Sanctity of the Sabbath

This Ayah explains Allah’s statement,

وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَواْ مِنكُمْ فِى السَّبْتِ

And indeed you knew those among you who transgressed in the matter of the Sabbath… (2:65)

Allah says to His Prophet here,

واَسْأَلْهُمْ

And ask them,

ask the Jews who are with you, about the story of their fellow Jews who defied Allah’s command, so that His punishment overtook them all of a sudden for their evil actions, transgression and defiance by way of deceit.

Also, warn the Jews (O Muhammad) against hiding your description that they find in their books, so that they do not suffer what their forefathers suffered.

The village mentioned here is Aylah, on the shore of the Qulzum (Red) Sea.

Muhammad bin Ishaq recorded from Dawud bin Al-Husayn from Ikrimah that Ibn Abbas commented on Allah’s statement,

واَسْأَلْهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ

And ask them about the town that was by the sea…

“A village called Aylah between Madyan and At-Tur (which is in Sinai).

Ikrimah, Mujahid, Qatadah and As-Suddi said similarly.

Allah’s statement,

إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ

when they transgressed in the matter of the Sabbath;

means, they transgressed in the Sabbath and defied Allah’s command to them to keep it sanctified,

إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعاً

when their fish came to them openly on the Sabbath day,

According to Ad-Dahhak who reported it from Ibn Abbas that;

it used to be visible on top of the water.

وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ لَا تَأْتِيهِمْ كَذَلِكَ نَبْلُوهُم

and did not come to them on the day they had no Sabbath. Thus We made a trial of them,

Ibn Jarir said,

means, this is how We tested them by making the fish swim close to the surface of the water, on the day which they were prohibited to fish. The fish would be hidden from them on the day when they were allowed to fish,
كَذَلِكَ نَبْلُوهُم
(Thus We made a trial for them,) so that We test them,

بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

for they used to rebel against Allah’s command.

by defying His obedience and rebelling against it.

Therefore, these were a people who used a trick to violate Allah’s prohibitions, taking an action that seemed legal on the surface. However, in reality, this action was meant to transgress the prohibition.

Imam and scholar Abu Abdullah Ibn Battah reported that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

لَاا تَرْتَكِبوُا مَا ارْتَكَبَتِ الْيَهُودُ فَتَسْتَحِلُّوا مَحَارِمَ اللهِ بِأَدْنَى الْحِيَل

Do not repeat what the Jews committed, and violate Allah’s prohibitions using deceitful tricks.

This Hadith has a reasonable chain.

Those Who breached the Sabbath were turned into Monkeys, but Those Who prohibited Their Actions were saved

Allah says;

وَإِذَ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ

And when a community among them said:

Allah said that the people of this village were divided into three groups, a group that committed the prohibition, catching fish on the Sabbath, as we described in the Tafsir of Surah Al-Baqarah. Another group prohibited them from transgression and avoided them. A third group neither prohibited them, nor participated in their action. The third group said to the preachers,

لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا اللّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا

“Why do you preach to a people whom Allah is about to destroy or to punish with a severe torment!”

They said, `why do you forbid these people from evil, when you know that they are destroyed and have earned Allah’s punishment!’ Therefore, they said, there is no benefit in forbidding them.

قَالُواْ

(The preachers) said:

مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ

“In order to be free from guilt before your Lord (Allah),”

`for we were commanded to enjoin righteousness and forbid evil,’

وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

“and perhaps they may fear Allah.”

for on account of our advice, they might stop this evil and repent to Allah. Certainly, if they repent to Allah, Allah will accept their repentance and grant them His mercy.’

Allah said
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِ

So when they forgot the reminder that had been given to them,

when the evil doers refused the advice,

أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُواْ

We rescued those who forbade evil, but We seized who did wrong,

who committed the transgression,

بِعَذَابٍ بَيِيسٍ

with a severe torment,

Allah stated that those who enjoined good were saved, while those who committed the transgression were destroyed, but He did not mention the end of those who were passive (the third group), for the compensation is comparable to the deed. This type did not do what would warrant praise, nor commit wrong so that they are admonished.

Ikrimah said,

“Ibn Abbas said about the Ayah:`I do not know whether or not the people were saved who said;
لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا اللّهُ مُهْلِكُهُمْ
(“Why do you preach to a people whom Allah is about to destroy…”). So I continued discussing it with him until I convinced him that they were. Then he gave me (the gift of) a garment.”

Allah said,

وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُواْ

بِعَذَابٍ بَيِيسٍ

and We seized those who did wrong with a Ba’is torment,

indicating that those who remained were saved.

As for `Ba’is’, it means `severe’, according to Mujahid, or `painful’, according to Qatadah. These meanings are synonymous, and Allah knows best.

بِمَا كَانُواْ يَفْسُقُونَ

because they used to rebel against Allah’s command.

Allah said next,

فَلَمَّا عَتَوْاْ عَن مَّا نُهُواْ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَاسِيِينَ
So when they exceeded the limits of what they were prohibited, We said to them:”Be you monkeys, despised.”

خَاسِيِينَ
(despised),

humiliated, disgraced and rejected.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ পাকের উক্তি ছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ লোকদের খবর তোমাদের জানা আছে যারা শনিবারের দিনের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছিল।” (২:৬৫) এই আয়াতের আলোকেই এখানকার এই আয়াতটির ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে ইরশাদ করছেনঃ “হে নবী (সঃ)! যেসব ইয়াহূদী তোমাদের পার্শ্বে রয়েছে তাদেরকে ঐলোকদের ঘটনা জানিয়ে দাও যারা আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। ফলে তাদেরকে তাদের ঔদ্ধত্যপনার আকস্মিক শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল। এসব ইয়াহূদীকে খারাপ পরিণাম থেকে ভয় প্রদর্শন কর যারা তোমার সেই গুণাবলীকে গোপন করছে যা তারা তাদের কিতাবে পাচ্ছে, না জানি তাদের উপরও ঐ শাস্তি এসে পড়ে যা তাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদীদের উপর এসে পড়েছিল।” ঐ বস্তি বা জনপদের নাম ছিল আয়লা। ওটা কুলযুম নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। আর এই আয়াতে সমুদ্রের তীরবর্তী যে জনপদের কথা বলা হয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনানুযায়ী ওর নাম হচ্ছে ‘আয়লা’ যা মাদইয়ান ও ভূরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। (এটাই ইকরামা (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং সুদ্দীরও (রঃ) উক্তি) আবার এ উক্তিও রয়েছে যে, ওর নাম ‘মাতনা’ যা মাদইয়ান ও আয়নার মধ্যস্থলে অবস্থিত। (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছে-তারা শনিবারের দিনের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। ঐদিন মাছগুলো স্বাধীনভাবে পানির উপর ভেসে উঠতো এবং কিনারায় ছড়িয়ে পড়তো। কিন্তু শনিবার ছাড়া অন্য দিনে পানির ধারে কখনই আসতো না। আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি এরূপ কেন করেছিলাম? এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু তাদের আনুগত্যের পরীক্ষা করা যে, আমার আদেশ তারা মেনে চলছে কি-না! যেদিন মৎস্য শিকার হারাম ছিল সেদিন মাছগুলো আশাতীতভাবে নদীর ধারে এসে জমা হয়ে যেতো। আবার যেদিনগুলোতে মাছ ধরা হালাল ছিল ঐ সময় ঐগুলো লুকিয়ে যেতো। এটা ছিল একটা পরীক্ষা। কেননা, তারা আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকারের কৌশল অনুসন্ধান করেছিল এবং নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ার জন্যে গোপন দরজা দিয়ে প্রবেশের ইচ্ছা করেছিল। তাই, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা এমন কাজে জড়িয়ে পড়ো না যে কাজে ইয়াহূদীরা জড়িয়ে পড়েছিল যে, তারা কৌশল খুঁজে খুঁজে হারামকে হালাল করে নিয়েছিল। (ইবনে কাসীর (সঃ) বলেন যে, এ হাদীসের ইসনাদ উত্তম এবং এর বর্ণনাকারীরা মাশহর ও নির্ভরযোগ্য)

ইরশাদ হচ্ছে যে, এই জনপদবাসী তিন ভাগে ভাগ হয়েছিল। প্রথম প্রকার হচ্ছে ঐসব লোক যারা শনিবারের দিন মাছ ধরার কৌশল অবলম্বন করতঃ নিষিদ্ধ কাজ করে বসেছিল। যেমন সূরায়ে বাকারায় আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ঐ লোকেরা যারা ঐ পাপী লোকদেরকে ঐ পাপ কার্য করতে নিষেধ করেছিল এবং নিজেরা ঐ কাজ থেকে দূরে রয়েছিল। আর তৃতীয় প্রকার হচ্ছে ঐ দল যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। যারা নিজেরা ঐ কাজে লিপ্ত হয়নি বটে, কিন্তু যারা ঐ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল তাদেরকে নিষেধও করেনি। বরং যারা নিষেধ করেছিল তাদেরকে তারা বলেছিলঃ “যে লোকদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করতে চান বা শাস্তি দিতে চান তাদেরকে উপদেশ দিয়ে লাভ কি? তোমরা তো জানছো যে এরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়ে গেছে। সুতরাং এদের ব্যাপারে উপদেশ মোটেই ক্রিয়াশীল হবে না।” নিষেধকারীরা জবাবে বলেছিলঃ “আমরা তো কমপক্ষে আল্লাহর কাছে এ কৈফিয়ত দিতে পারবো যে, আমরা তাদেরকে নিষেধ করেছিলাম। কেননা, ভাল কাজের আদেশ করা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা কর্তব্য তো বটে। কেউ কেউ মায়ূজেরাতান শব্দকে মায়ূজেরাতুন পড়েছেন। অর্থাৎ এটা ওর । আর মায়ূজেরাতান পড়লে অর্থ হবে- “আমরা ওযরের খাতিরে নিষেধ করছি। আর এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, তারা হয়তো এ কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করবে।” আল্লাহ পাক বলেন-কিন্তু তারা যখন তাদের উপদেশ গ্রহণ করলো না, বরং ঐ পাপ কার্য করতেই থাকলো তখন ঐ কাজ করতে নিষেধকারীদেরকে তো আমি বাঁচিয়ে নিলাম, কিন্তু ঐ পাপ কার্যে লিপ্ত যালিমদেরকে আমি পাকড়াও করলাম এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করলাম।

এখানে নিষেধকারীদের মুক্তি ও পাপীদের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যারা ঐ পাপকার্যে জড়িতও হয়নি এবং নিষেধও করেনি তাদের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করা হয়েছে। কেননা, কাজ যেমন হবে প্রতিদান তেমনই হবে। সুতরাং তারা প্রশংসার যোগ্য হলো না কারণ তারা প্রশংসার যোগ্য কাজ করেনি। আর তারা নিন্দারও পাত্র হলো না, কেননা, তারা ঐ পাপকার্যে জড়িত হয়নি। তবে তারা মুক্তি পেয়েছিল কি ধ্বংস হয়েছিল এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, মাছ শনিবারে খুবই বেশী আসতো, কিন্তু অন্যান্য দিনে আসতো না। এভাবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে কতক লোক শনিবারও মাছ ধরতে শুরু করে। কতক লোক তাদেরকে বলেঃ “আজকের দিন তো মাছ ধরা হারাম।” কিন্তু তাদের অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যপনা ঠিকই থাকে। কিন্তু কতক লোক বরাবর নিষেধ করতেই থাকে। যখন এভাবেও কিছু দিন কেটে গেল তখন নিষেধকারীদেরকে তাদেরই মধ্যকার একটি দল বললোঃ এই দুষ্টদেরকে নিষেধ করে লাভ কি? আল্লাহর শাস্তি তাদের প্রাপ্য হয়ে গেছে! সুতরাং এখন আর তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছ কেন? এই লোকগুলো নিষেধকারীদের তুলনায় আল্লাহর পথে বেশী কঠোর ও রাগান্বিত ছিল। তখন নিষেধকারীরা তাদেরকে বলেছিল, “আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন! আমরা ওযর পেশ করছি।” তাহলে এই দু’টি দলই যেন নিষেধকারী দল ছিল। সুতরাং যখন আল্লাহর শাস্তি নাযিল হয়ে গেল তখন এই দুটি দলই রক্ষা পেলো।

ইকরামা (রাঃ) বলেন, আমি একদা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গমন করি। সেই সময় তাঁর চক্ষু দু’টি অশ্রুসিক্ত ছিল এবং দেখি যে, কুরআন কারীম তার ক্রোড়ে রয়েছে। আমি সময়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তার সামনে বসে পড়লাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “কুরআনের এ পৃষ্ঠা আমাকে কাঁদাচ্ছে।” তিনি সূরায়ে আরাফ পাঠ করছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আয়লা কি জান কি?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা। এবার তিনি বলতে শুরু করলেনঃ আয়লায় ইয়াহূদীরা বাস করতো। শনিবার মৎস্য শিকার তাদের উপর নিষিদ্ধ ছিল। তাদের পরীক্ষার জন্যে মাছগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, ওরা যেন শুধু শনিবারেই বের হয়। শনিবারের দিন নদী মাছে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো। মোটাতাজা ও ভাল ভাল অধিক সংখ্যক মাছ পানির উপর লাফালাফি করতো। শনিবার ছাড়া অন্যান্য দিন কঠিন চেষ্টার পর কিছু মাছ পাওয়া যেতো। কিছুদিন পর্যন্ত ঐ লোকগুলো আল্লাহর আদেশের মর্যাদা দিলো এবং ঐ দিনে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলো। অতঃপর শয়তান তাদের অন্তরে এই অনুভূতি জাগিয়ে দিলো যে, শনিবার দিন মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ বটে কিন্তু ধরা নিষিদ্ধ নয়। সেই দিনে ধরে অন্য দিনে খাওয়া যেতে পারে। একটি দলের অন্তরে এই খেয়াল জেগেই গেল। কিন্তু অন্য দল তাদেরকে বললোঃ “খাওয়া ও ধরা উভয়ই নিষিদ্ধ। মোটকথা, যখন জুমআর দিন আসলো তখন ঐ লোকগুলো নিজেদের স্ত্রী ও শিশু সন্তানদেরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তাদের ডান দিকে ছিল নিষেধকারী দলটি এবং বাম দিকে ছিল ঐ দলটি যারা নীরবতা অবলম্বন করেছিল। ডানদিকের দলটি বললোঃ “দেখো, আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করছি, না জানি হয়তো এরূপ ঘটবে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তির কবলে পড়ে যাবে। তখন বাম দিকের দলটি নিষেধকারী দলটিকে বললো, তোমরা এমন লোকদেরকে কেন উপদেশ দান করছো যারা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহর শাস্তির কবলে পতিত হবে? এরা কি তোমাদের কথা মানবে? ডান দিকের লোকেরা উত্তরে বললো, “আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা এ জন্যেই এদেরকে নিষেধ করছি যে, হয়তো তারা এ কাজ থেকে বিরত থাকবে। আমাদের তো আন্তরিক ইচ্ছা এটাই যে, তারা যেন আল্লাহর আযাবে পাকড়াও না হয়। যদি তারা এ কাজ থেকে বিরত না হয় তবে আল্লাহ আমাদেরকে তো ক্ষমা করবেন!” ঐলোকগুলো কিন্তু ঐ পাপ কাজের উপর কায়েম থাকলো। নিষেধকারীরা তখন তাদেরকে বললো, “হে আল্লাহর শক্ররা! শেষ পর্যন্ত তোমরা মানলেই না। আল্লাহর কসম! আমাদের ভয় হচ্ছে যে, এই দিনের মধ্যেই হয়তো তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে, বা তোমাদের উপর পাথর বর্ষিত হবে অথবা অন্য কোন শাস্তি তোমাদের উপর এসে পড়বে।” এখন এ নিষেধকারী দল এবং নীরবতা অবলম্বনকারী দল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে শহরের বাইরে অবস্থান করতে থাকলো। আর পাপীরা শহরের মধ্যেই রয়ে গেল। তারা শহরের সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলো । অতঃপর বাইরে অবস্থানকারীরা সকালেই নগর প্রাচীরের দরজার কাছে পৌছে গেল। লোকগুলো বাইরে বের হয়নি বলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধই ছিল। বহুক্ষণ ধরে তারা দরজায় করাঘাত করলো। বহু ডাকাডাকি করলো । কিন্তু কোন উত্তর আসলো না। তখন তারা নগর প্রাচীরের উপর সিঁড়ি লাগিয়ে উপরে উঠলো। উঠে দেখলো যে, তারা সব বানরে পরিণত হয়েছে। তাদের লম্বা লম্বা লেজ রয়েছে। এখন তারা সদর দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো । ঐ বানরগুলো তাদের বন্ধু বান্ধবদেরকে চিনে ফেললো। কিন্তু তারা তাদের বন্ধু বানরদেরকে চিনতে পারলো না। বানরগুলো তাদের কাছে এসে তাদের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়লো । মানুষগুলো। তাদেরকে বললোঃ “আমরা কি তোমাদেরকে নিষেধ করিনি?” তারা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ “যখন তারা উপদেশ কবূল করলো না তখন আমি নিষেধকারীদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম এবং ঐ পাপী অত্যাচারীদেরকে শাস্তিতে জড়িয়ে ফেললাম।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমি তো জানতে পারছি যে, নিষেধকারীরা মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে এটা বুঝছি না। বিপদ তো এটাই যে, আমরাও লোকদেরকে পাপ করতে দেখছি, অথচ কিছুই বলছি না।” ইকরামা (রঃ) বলেন- তখন আমি বললাম, আমি আপনার উপর উৎসর্গীকৃত হই। এই দ্বিতীয় দলটিও তো ঐ পাপীদের উপর খুবই অসন্তুষ্ট ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতো। তারা বলতঃ “ধ্বংসের সম্মুখীন এই দলটিকে উপদেশ দিয়ে লাভ কি?” এর দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এই দ্বিতীয় দলটিকে শাস্তিতে শরীক করা যেতে পারে না। আমার এ কথা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এতো খুশী হলেন যে, তিনি আমাকে দু’টি ভাল কাপড় পুরস্কার দিলেন।” (এটা আবদুর রাযযাক (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে তাখরীজ করেছেন)

কথিত আছে যে, শনিবার দিন মাছগুলোকে নদীর ধারে ধারে বহু সংখ্যায় দেখা যেতো। আর যখন সন্ধ্যা হয়ে যেতো তখন পরবর্তী শনিবার না আসা পর্যন্ত মাছগুলোকে আর দেখা যেতো না। একদা একটি লোক জালের দড়ি ও পেরেক। নিয়ে নদীতে গেল এবং জাল পেতে আসলো। শনিবার দিন একটি বড় মাছ। জালে আটকা পড়ে গেল। শনিবার গত হয়ে যখন রবিবারের রাত আসলো তখন সে মাছটি ধরে এনে রান্না করলো এবং খেতে লাগলো। রান্না করা মাছের সুগন্ধ পেয়ে লোকেরা তার কাছে দৌড়িয়ে আসলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করলো যে, সে একটি মাছ ধরে এনেছিল। পরবর্তী শনিবার আসলে সে পুনরায় ঐ কাজই করলো এবং রবিবারে ওটাকে ভূনা করে খেলো। মাছের গন্ধ পেয়ে লোকেরা পুনরায় তার কাছে দৌড়িয়ে আসলো এবং সে মাছ কোথায় পেলো তা জিজ্ঞেস করলো। সে উত্তরে বললোঃ “আমি যা করছি তোমরাও তা-ই কর।” তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “তুমি কি কি করে থাক?” উত্তরে সে নিজের কৌশলের কথা বলে দিলো। অন্যান্য লোকেরাও তখন ঐ কৌশলের উপর কাজ করতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত কাজটি সাধারণভাবে হতে লাগলো । রব্য নামে তাদের একটি শহর ছিল। রাত্রিকালে তারা শহরটির দরজা বন্ধ করে রাখতো । রাতের মধ্যেই তাদের আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। তাদের প্রতিবেশী গ্রামের লোকেরা, যারা জীবিকা অন্বেষণে সকালে ঐ শহরের মধ্যে প্রবেশ করতো, দরজা বন্ধ দেখলো। বহুক্ষণ ধরে ডাকলো, কিন্তু কোন উত্তর পেলো না। বাধ্য হয়ে তারা দেয়ালের উপর চড়লো। দেখে যে, তারা বানরে পরিণত হয়েছে। তারা লোকগুলোর নিকটে এসে তাদেরকে জড়িয়ে ধরলো। সূরায়ে বাকারায় আমরা এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। ওখানে দেখে নেয়াই যথেষ্ট।

অন্য একটি উক্তি এও রয়েছে যে, নীরবতা অবলম্বনকারী দলটিও শাস্তিতে পতিত হয়েছিল । কেননা, তারা পাপীদেরকে মাছ ভাজতে ও খেতে দেখেও নিষেধ করতো না। শুধু একটি দল নিষেধ করেছিল। শেষ পর্যন্ত পাপীদের কাজ সাধারণভাবে অনুসৃত হতে শুরু হয়েছিল। তখন নীরবতা অবলম্বনকারী দলটি নিষেধকারী দলটিকে বলেছিলোঃ “এই অত্যাচারী দলটিকে আর নিষেধ করছো কেন? তারা তো কঠিন শাস্তিতে জড়িত হয়ে পড়বেই। আমরা তো তাদের এই আমলের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই তিনটি দলের মধ্যে শুধুমাত্র নিষেধকারী দলটি মুক্তি পেয়েছিল। অবশিষ্ট দুটি দলই শাস্তিতে জড়িত হয়েছিল কিন্তু ইকরামা (রঃ)-এর উপরোক্ত কথা বলার পর মনে হয় তিনি তাঁর এই উক্তি হতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। কেননা, তিনি ইকরামা (রঃ)-কে খুশী হয়ে দু’টি পোশাক পুরস্কার দিয়েছিলেন। তাঁর এ উক্তির চাইতে প্রত্যাবর্তনকৃত উক্তিটিই বেশী উত্তম যে, নীরবতা অবলম্বনকারী লোকেরাও মুক্তি পেয়েছিল। কেননা, আল্লাহ পাকের, (আরবী) -এ কথা দ্বারাও এটাই প্রমাণিত হয় যে, ঐ পাপীদের ছাড়া অবশিষ্ট দু’টি দলই মুক্তি পেয়েছিল। (আরবী) শব্দের অর্থ (আরবী) (কঠিন) বা (আরবী) (যন্ত্রণাদায়ক)। এ অর্থগুলোর ভাবার্থ প্রায় একই। আল্লাহ তাআলাই সর্বাপেক্ষা উত্তম জ্ঞানের অধিকারী। (আরবী) শব্দের অর্থ লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] এই জনবসতিটি সঠিক কোন শহর বা গ্রাম ছিল সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন আইলাহ, কেউ বলেন ত্বাবারিয়্যাহ, কেউ ঈলিয়া, আবার কেউ বলেন শাম দেশের কোন এক জনপদ; যা সমূদ্রতীরে অবস্থিত ছিল। মুফাসসিরদের অধিক মত আইলার দিকে। যা মাদয়্যান ও ত্বূর পাহাড়ের মধ্যবর্তী লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত।

[২] وسئلهم এ هم (তাদের) সর্বনাম দ্বারা ইয়াহুদীদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ইয়াহুদীদেরকে জিজ্ঞাসা কর। এখানে ইয়াহুদীদেরকে এই বলা উদ্দেশ্য যে, এই ঘটনার জ্ঞান নবী (সাঃ)-এরও আছে, যা তাঁর সত্য নবী হওয়ার কথা প্রমাণ করে। কারণ আল্লাহর পক্ষ হতে অহী না হলে তিনি সে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারতেন না।

[৩] حيتان শব্দটি حوت এর বহুবচন, شرع শব্দটি شارع এর বহুবচন, যার অর্থ হল, এমন মাছ যা পানির উপরি ভাগে ভেসে ওঠে। এখানে ইয়াহুদীদের ঐ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যাতে তাদের শনিবার দিন মাছ শিকার করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার জন্য শনিবার দিন বেশি বেশি মাছ পানির উপর ভেসে উঠত। আর এদিন পার হলে এমনটি আর হত না। শেষ পর্যন্ত ইয়াহুদীরা এক চালাকি অবলম্বন করে আল্লাহর আদেশ লংঘন করল। তারা সমুদ্র সংলগ্নে খাল খনন করেছিল, ফলে শনিবার তাতে মাছ প্রবেশ করে ফেঁসে যেত। অতঃপর শনিবার গত হলেই তা শিকার করত।

[৪] এই একদল বলতে সৎলোকের ঐ দলকে বুঝানো হয়েছে, যারা ঐ ধোঁকার কৌশল অবলম্বন করেনি এবং কৌশল অবলম্বনকারীদেরকে বুঝাতে বুঝাতে নিরাশ হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়াও অন্য কিছু লোক ছিল, যারা তাদেরকে উপদেশ দান করত। সৎলোকের এই দল তাদেরকে বলত, এমন লোকেদেরকে উপদেশ দিয়ে কি লাভ, যাদের ভাগ্যে রয়েছে ধ্বংস ও আল্লাহর আযাব? অথবা এই দল বলতে ঐ সকল সীমালংঘনকারী আল্লাহর অবাধ্যদেরকে বুঝানো হয়েছে, যখন তাদেরকে উপদেশ দানকারীরা উপদেশ দিত, তখন তারা বলত যে, যখন তোমাদের ধারণায় আমাদের ভাগ্যে ধ্বংস ও আল্লাহর আযাবই আছে, তাহলে আমাদেরকে উপদেশ দাও কেন? তারা উত্তরে বলত প্রথমতঃ প্রতিপালকের নিকট ওযর পেশ করার জন্য, যাতে আমরাও আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচতে পারি। কারণ, পাপ করতে দেখা এবং বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করাও এক পাপ। যার উপর আল্লাহর পাকড়াও হতে পারে। আর দ্বিতীয়তঃ হয়ত বা লোকেরা আল্লাহর আদেশ লংঘন করা হতে বিরত থাকতে পারে। প্রথম ব্যাখ্যার দিক দিয়ে তিনটি দল হয়ঃ (ক) আল্লাহর অবাধ্য ও শিকারকারী দল। (খ) এমন দল যারা শিকারকারীও ছিল না ও নিষেধকারীও ছিল না। (গ) এমন দল যারা অবাধ্য ছিল না; বরং সীমালংঘনকারীদের উপদেশ দিত। দ্বিতীয় ব্যাখ্যার দিক দিয়ে দুটি দলের কথা বুঝা যায়ঃ প্রথম সীমালংঘনকারীদের এবং দ্বিতীয় নিষেধকারীদের দল।

[৫] তারা উপদেশ ও নসীহতের কোন পরোয়া করল না; বরং আল্লাহর অবাধ্যতায় অবিচল থাকল।

[৬] অর্থাৎ, তারা অত্যাচারীও ছিল, আল্লাহর অবাধ্যতা করে নিজেদের উপর তারা অত্যাচার করেছিল এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছিল। আর তারা সত্যত্যাগীও ছিল। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিল।
[৭] عَتَوا এর অর্থ হল, আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমা অতিক্রম করা। মুফাসসিরদের মাঝে এ ব্যাপারে মত পার্থক্য রয়েছে যে, যারা নিষেধকারী তারাই শুধু পরিত্রাণ পেয়েছিল, আর বাকী দুই দল আল্লাহর আযাবের আওতায় এসেছিল? নাকি পাপকারী দলই শুধু আল্লাহর আযাবের আওতায় এসেছিল আর দুটি দল পরিত্রাণ পেয়েছিল? ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) দ্বিতীয় মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মতে এ স্থানটি ছিল ‘আয়লা’, ‘আয়লাত’ বা ‘আয়লুত’। ইসরাঈলের ইহুদী রাষ্ট্র বর্তমানে এখানে এ নামে একটি বন্দর নির্মাণ করেছে। এর কাছেই রয়েছে জর্দানের বিখ্যাত বন্দর আকাবা। লোহিত সাগরের যে শাখাটি সিনাই উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল ও আরবের পশ্চিম উপকূলের মাঝখানে একটি লম্বা উপসাগরের মত দেখায়, তার ঠিক শেষ মাথায় এ স্থানটি অবস্থিত। বনী ইসরাঈলের উত্থানযুগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এ শহরেই তাঁর লোহিত সাগরের সামরিক ও বাণিজ্যিক নৌবহরের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।

এখানে যে ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থসমূহে আমরা তার কোন উল্লেখ পাই না। তাদের ইতিহাসও এ প্রসঙ্গে নীরব। কিন্তু কুরআন মজীদে যেভাবে এ ঘটনাটিকে এখানে ও সূরা বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে, তা থেকে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, কুরআন নাযিলের সময় বনী ইসরাঈলীরা সাধারণভাবে এ ঘটনাটি সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত ছিল। এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতার প্রশ্নে যেখানে মদীনার ইহুদীরা কোন একটি সুযোগও হাতছাড়া হতে দিতো না সেখানে কুরআনের এ বর্ণনার বিরুদ্ধে তারা আদৌ কোন আপত্তিই তোলেনি।

* কুরআনে ‘সাব্ত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সাব্ত মানে শনিবার। বনী ইসরাঈলীদের জন্য এ দিনটিকে পবিত্র দিন গণ্য করা হয়েছিল। মহান আল্লাহ‌ এ দিনটিকে নিজের ও বনী ইসরাঈলীদের সন্তান-সন্তুতিদের মধ্যে সম্পাদিত পুরুষানুক্রমিক স্থায়ী অঙ্গীকার গণ্য করে তাকীদ করেছিলেন যে, এ দিন কোন পার্থিব কাজ করা যাবে না, ঘরে আগুন পর্যন্ত জ্বালানো যাবে না, গৃহপালিত পশু এমন কি চাকর-বাকর-দাসদাসীদের থেকেও কোন সেবা করা চলবে না এবং যে ব্যক্তি এ নিয়ম লংঘন করবে তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু উত্তরকালে বনী ইসরাঈল প্রকাশ্যে এ আইনের বিরোধিতা করতে থাকে। ইয়ারমিয়াহ (যিরমিয়) নবীর আমলে (যিনি খৃষ্টপূর্ব ৬২৮ ও ৫৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে বেঁচে ছিলেন)। লোকেরা খাস জেরুজালেমের সিংহ দরজাগুলো দিয়ে মালপত্র নিয়ে চলাফেরা করতো। এতে ঐ নবী ইহুদীদেকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তোমরা যদি এভাবে প্রকাশ্যে শরীয়াতের বিরুদ্ধাচারণ করা থেকে বিরত না হও তাহলে জেরুজালেমে আগুন লাগিয়ে দেয়া হবে। (যিরমিয় ১৭: ২১-২৭) হযরত হিযকিঈল (যিহিস্কেল) নবীও এ একই অভিযোগ করেন। তাঁর আমল ছিল খৃষ্টপূর্ব ৫৯৫ ও ৫৩৬ এর মধ্যবর্তী সময়ে। তাঁর গ্রন্থে শনিবারের অবমাননাকে ইহুদীদের একটি মস্তবড় জাতীয় অপরাধ গণ্য করা হযেছে। (যিহিস্কেল ২০: ১২-২৪) এসব উদ্ধৃতি থেকে অনুমান করা যেতে পারে, কুরআন মজিদ এখানে যে ঘটনাটির কথা বলছে সেটিও সম্ভবত এ একই যুগের ঘটনা।

* মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য মহান আল্লাহ‌ যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন তার মধ্যে এও একটি পদ্ধতি যে, যখন কোন ব্যক্তি বা দলের মধ্যে আনুগত্য বিচ্যুতি ও নাফরমানীর প্রবণতা বাড়তে থাকে, তখন তাকে আরো বেশী করে নাফরমানী করার সুযোগ দেয়া হয়। যেন তার যেসব প্রবণতা ভেতরে লুকিয়ে থাকে সেগুলো পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যেসব অপরাধে সে নিজেকে কুলষিত করতে চায়, কেবলমাত্র সুযোগের অভাবে সে সেগুলো থেকে বিরত থেকে না যায়।

** এ বর্ণনা থেকে জানা যায়, এ জনপদে তিন ধরনের লোক ছিল।

এক, যারা প্রকাশ্যে ও পূর্ণ ঔদ্ধত্য সহকারে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করছিল।

দুই, যারা নিজেরা বিরুদ্ধাচরণ করছিল না কিন্তু অন্যের বিরুদ্ধাচরণকে নীরবে হাত-পা গুটিয়ে বসে বসে দেখছিল এবং উপদেশ দানকারীদের বলছিল, এ হতভাগাদের উপদেশ দিয়ে কী লাভ?

তিন, যারা ঈমানী সম্ভমবোধ ও মর্যাদাবোধের কারণে আল্লাহর আইনের এহেন প্রকাশ্য অমর্যাদা বরদাশত করতে পারেনি এবং তারা এ মনেকরে সৎকাজের আদেশ দিতে ও অসৎকাজ থেকে অপরাধীদের বিরত রাখতে তৎপর ছিল যে, হয়তো ঐ অপরাধীরা তাদের উপদেশের প্রভাবে সৎপথে এসে যাবে, আর যদি তারা সৎপথে নাও আসে তাহলে অন্তত নিজেদের সামর্থ্য মোতাবিক কর্তব্য পালন করে তারা আল্লাহর সামনে নিজেদের দায় মুক্তির প্রমাণ পেশ করতে পারবে।

এ অবস্থায় এ জনপদের ওপর যখন আল্লাহর আযাব নেমে এলো, তখনকার অবস্থা বিশ্লেষণ করে কুরআন মজীদ বলছে, এ তিনটি দলের মধ্য থেকে একমাত্র তৃতীয় দলটিকেই বাঁচিয়ে নেয়া হয়েছিল। কারণ একমাত্র তারাই আল্লাহর সামনে নিজেদের ওযর পেশ করার চিন্তা করছিল এবং একমাত্র তারাই নিজেদের দায়িত্ব মুক্তির প্রমাণ সংগ্রহ করে রেখেছিল। বাকি দল দু’টিকে অপরাধীদের মধ্যে গণ্য করা হলো এবং নিজেদের অপরাধ অনুপাতে তারা শাস্তি ভোগ করলো। কোন কোন তাফসীরকার এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, আল্লাহ‌ প্রথম দলটির শাস্তি ভোগ করার এবং দ্বিতীয় দলটির উদ্ধার প্রাপ্তির ব্যাপারে স্পষ্ট উক্তি করেছেন। কিন্তু তৃতীয় দলটির ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কাজেই তারা শাস্তি ভোগ করেছিল না উদ্ধার পেয়েছিল, এ ব্যাপারে কিছুই বলা যায় না। আবার আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, তিনি প্রথমে দ্বিতীয় দলটি শাস্তি লাভ করেছিল বলে মত পোষণ করতেন। পরে তাঁর ছাত্র ইকরামা তাকে এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করে দেন যে, দ্বিতীয় দলটি উদ্ধার পেয়েছিল। কিন্তু কুরআনের বর্ণনা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হয়, হযরত ইবনে আব্বাসের প্রথম চিন্তাটিই সঠিক ছিল। একথা সুস্পষ্ট যে, কোন জনপদের ওপর আল্লাহর আযাব অবতীর্ণ হলে সমগ্র জনপদবাসীরা দুভাগেই বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এক ভাগে এমন সব লোকেরা থাকে যারা আযাব ভোগ করে এবং অন্য ভাগে থাকে তারা যারা আযাব থেকে বেঁচে যায়। এখন কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী উদ্ধারপ্রাপ্ত যদি কেবল তৃতীয় দলটিই হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যারা উদ্ধার পায়নি তাদের মধ্যে থাকবে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় দলই। এরই সমর্থন পাওয়া যায় مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ (অর্থাৎ এসব কিছুই করছি আমরা তোমাদের রবের সামনে নিজের ওযর পেশ করার উদ্দেশ্যে) বাক্যাংশটির মধ্যে। এ বাক্যাংশটিতে আল্লাহ‌ নিজেই একথা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহর কাছে ওযর করার জন্য অবশ্যি নিজেদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে যেতে হবে। এভাবে দায়িত্ব মুক্তির প্রমাণ যারা সংগ্রহ করতে পারবে, একমাত্র তারাই আল্লাহর কাছে ওযর পেশ করতে পারবে। এ থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হচ্ছে, যে জনপদে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিধান লংঘন করা চলতে থাকে, সেখানকার সবাই জবাবদিহির সম্মুখীন হয়। সেখানকার কোন অধিবাসী শুধু নিজেই আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করেনি বলেই আল্লাহর সামনে জবাবদিহি থেকে বাঁচতে পারে না। বরং আল্লাহর সামনে নিজের সাফাই পেশ করার জন্য তাকে অবশ্যই এ মর্মে প্রমাণ পেশ করতে হবে যে, নিজের সামর্থ্য মোতাবিক মানুষের সংশোধন ও আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতিষ্ঠার জন্য সে প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। এছাড়া কুরআন হাদীসের অন্যান্য বক্তব্য থেকেও আমরা সামষ্টিক অপরাধের ক্ষেত্রে আল্লাহর এ একই ধরনের আইনের কথা জানতে পারি। তাই আমরা দেখি কুরআনে বলা হয়েছেঃ

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً

(সেই বিপর্যয় থেকে সাবধান হও, যার কবলে বিশেষভাবে কেবলমাত্র তোমাদের মধ্য থেকে যারা জুলুম করেছে তারাই পড়বে না) আর এর ব্যাখ্যায় নবী ﷺ বলেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لاَ يُعَذِّبُ الْعَامَّةَ بِعَمَلِ الْخَاصَّةِ حَتَّى يَرَوُا الْمُنْكَرَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ وَهُمْ قَادِرُونَ عَلَىأَنْ يُنْكِرُوهُ فَلاَ يُنْكِرُوهُ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَذَّبَ اللَّهُ الْخَاصَّةَ وَالْعَامَّةَ-

“মহান আল্লাহ‌ বিশেষ লোকদের অপরাধের দরুন সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষন সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌঁছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশের ক্ষমতাও রাখে, এরপরও কোন অসন্তোষ প্রকাশ করে না। কাজেই লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, তখন আল্লাহ‌ সাধারণ ও অসাধারণ নির্বিবেশেষে সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।”

এছাড়াও আলোচ্য আয়াত থেকে একথাও জানা যায় যে, এ জনপদের ওপর দুই পর্যায়ে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়। প্রথম পর্যায়ে নাযিল হয় عَذَابٍ بَئِيسٍ (কঠিন শাস্তি) এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে নাফরমানী যারা অব্যাহত রেখেছিল তাদেরকে বানরে পরিণত করা হয়। আমার মতে প্রথম পর্যায়ের আযাবে উভয় দলই শামিল ছিল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আযাব দেয়া হয়েছিল কেবলমাত্র প্রথম দলকে।

এক্ষেত্রে অবশ্যি সঠিক ব্যাপার একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। যদি আমার অভিমত সঠিক হয়ে থাকে তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। আর যদি আমি ভুল করে থাকি তাহলে সেজন্য আমিই দায়ী। আল্লাহ‌ অবশ্যি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

***
সূরা আ’রাফের ২১ রুকু’ তে এ ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। তাদেরকে বানরে পরিণত করার ধরন সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, তাদের দৈহিক কাঠামো পরিবর্তন করে বানরে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়েছিল। আবার অনেকে এর অর্থ এই গ্রহণ করে থাকে যে, তাদের মধ্যে বানরের স্বভাব ও বানরের গুণাবলী সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কুরআনের শব্দাবলী ও বর্ণনাভংগী থেকে মনে হয়, তাদের মধ্যে নৈতিক নয়, দৈহিক বিকৃতি ঘটেছিল। আমার মতে, তাদের মস্তিষ্ক ও চিন্তাশক্তিকে পূর্ববৎ অবিকৃত রেখে শারীরিক বিকৃতি ঘটিয়ে বানরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এটিই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়।

Leave a Reply