أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٤٣) -৫৪৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
১৭৮-১৭৯ নং আয়াত:-
كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالاِنسِ
বহু জ্বিন ও মানুষকে,
Many of the Jinn and mankind,
مَنۡ یَّہۡدِ اللّٰہُ فَہُوَ الۡمُہۡتَدِیۡ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۱۷۸﴾
আল্লাহ যাকে পথ দেখান, সেই পথ পায় এবং যাদেরকে তিনি বিপথগামী করেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَہَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ ۫ۖ لَہُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِہَا ؕ اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ ﴿۱۷۹﴾
আর আমি তো বহু জ্বিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দর্শন করে না এবং তাদের কর্ণ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবণ করে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত! তারাই হল উদাসীন।
১৭৮-১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই হিদায়াত প্রাপ্ত আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন হিদায়াতকারী নেই। পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব আল্লাহ তা‘আলা যদি হিদায়াত না দেন তাহলে কোন পীর ওলী আওলীয়া, মুরশিদ, গাউস, কুতুব, বাবা ইত্যাদি হিদায়াত দিতে পারে না। স্বয়ং রাসূলই পারেন না আর কোথায় এসব ব্যক্তিরা! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَا۬ءُ ج وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ তা‘আলাই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদের সম্পর্কে।” (সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা অনেক জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জাহান্নামের জন্য। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি বাধ্য করে তাদেরকে জাহান্নামে দেবেন।
তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যখন সৃষ্টি করেন তখনই তিনি জানেন এরা দুনিয়াতে জাহান্নামের আমল করবে। এটাই আল্লাহ তা‘আলা পঞ্চাশ হাজার পূর্বে তাকদীরের খাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাকদীর নির্ধারণ করে রেখেছেন। তখন তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল। (অর্থাৎ সাত আকাশের ওপর যে সাগর রয়েছে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলার আরশ)। (আবূ দাঊদ হা: ২১১৮, নাসাঈ হা: ১৪০২, ইবনু মাযাহ হা: ১৮৮২, সহীহ)
(لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا)
‘তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না’ অর্থাৎ এসব অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকা সত্ত্বেও তারা তার দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ مَکَّنّٰھُمْ فِیْمَآ اِنْ مَّکَّنّٰکُمْ فِیْھِ وَجَعَلْنَا لَھُمْ سَمْعًا وَّاَبْصَارًا وَّاَفْئِدَةًﺘ فَمَآ اَغْنٰی عَنْھُمْ سَمْعُھُمْ وَلَآ اَبْصَارُھُمْ وَلَآ اَفْئِدَتُھُمْ مِّنْ شَیْءٍ اِذْ کَانُوْا یَجْحَدُوْنَﺫ بِاٰیٰتِ اللہِ وَحَاقَ بِھِمْ مَّا کَانُوْا بِھ۪ یَسْتَھْزِءُوْنَﭩﺟ)
“আমি তাদেরকে এমন সব কিছু দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দিইনি। আমি তাদেরকে কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছিলাম; কিন্তু তাদের কান, চোখ ও হৃদয় তাদের কোনো কাজে আসল না। কারণ, তারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছিল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত তা-ই তাদেরকে ঘিরে ফেলল।” (সূরা আহকাফ ৪৬:২৬)
তারা কেবল হিদায়াতের ক্ষেত্রে বধির, অন্ধ ও বোবা। তারা দেখে না বা শুনে না তা। নয় যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِي الْأَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوْبٌ يَّعْقِلُوْنَ بِهَآ أَوْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَا ج فَإِنَّهَا لَا تَعْمَي الْأَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَي الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِي الصُّدُوْرِ)
“তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্র“তিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” (সূরা হজ্জ ২২:৪৬)
(أُولٰ۬ئِكَ كَالْأَنْعَامِ)
‘তারাই পশুর ন্যায়’ অর্থাৎ এসকল পথভ্রষ্ট কাফিররা চতুষ্পদ জন্তু বরং তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট। কেননা চতুষ্পদ জন্তু তার জন্য কোনটা কল্যাণ আর কোন্টা ক্ষতিকর সব দেখতে পায় এবং রাখালের অনুসরণ করে চলে আর এসব কাফিররা এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর বিপরীত। ভাল-মন্দ কিছুই বুঝার চেষ্টা করে না এবং কুরআনের গাইড লাইন অনুসরণ করে না।
তাই সকল মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত নয়। কেবল মু’মিন মুসলিমরাই আশরাফুল মাখলুকাত। কারণ যারা কাফির তাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা চতুষ্পদ জন্তু বলছেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. জাহান্নামের হকদাররাই জাহান্নামে যাবে।
৩. তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক।
৪. কাফিররা চতুষ্পদ জন্তুর মত কাণ্ডজ্ঞানহীন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 178-179
كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالاِنسِ
Many of the Jinn and mankind,
Disbelief and the Divine Decree :-
Allah says,
مَن يَهْدِ اللّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي
وَمَن يُضْلِلْ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
Whomsoever Allah guides, he is the guided one, and whomsoever He sends astray, — then those! They are the losers
Allah says, whomever He leads aright, then none can lead him to misguidance, and whomever He leads astray, will have acquired failure, loss and sure misguidance. Verily, whatever Allah wills occurs; and whatever He does not will, does not occur.
A Hadith narrated from Abdullah bin Mas`ud reads,
إِنَّ الْحَمْدَ للهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَهْدِيهِ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّيَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِ اللهُ فَلَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَلَ هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُه
All praise is due to Allah, Whom we praise and seek help, guidance and forgiveness from. We seek refuge with Allah from the evils within ourselves and from the burden of our evil deeds. He whom Allah guides, will never be misled; and he whom He misguides, will never have one who will guide him. I bear witness that there is no deity worthy of worship except Allah without partners and that Muhammad is His servant and Messenger.
The complete Hadith was collected by Imam Ahmad and the collectors of Sunan and others.
Allah said,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ
And surely, We have created for Hell,
We made a share in the Fire for,
كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالاِنسِ
many of the Jinn and mankind,
We prepared them for it by their performance of the deeds of its people.
When Allah intended to create the creation, He knew what their work will be before they existed. He wrote all this in a Book, kept with Him, fifty thousand years before He created the heavens and earth.
Muslim recorded that Abdullah bin `Amr narrated that the Messenger of Allah said,
إِنَّ اللهَ قَدَّرَ مَقَادِيرَ الْخَلْقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالاَْرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاء
Verily, Allah decided the destination and due measurement of the creation fifty thousand years before He created the heavens and earth, and His Throne was over the water.
There are many Hadiths on this subject, and certainly, the matter of Al-Qadar is of utmost importance, yet this is not where we should discuss it.
Allah said,
لَهُمْ قُلُوبٌ لاَّ يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ اذَانٌ لاَّ يَسْمَعُونَ بِهَا
They have hearts wherewith they understand not, and they have eyes wherewith they see not, and they have ears wherewith they hear not.
meaning, they do not benefit from these senses that Allah made for them as a means of gaining guidance.
Similarly, Allah said,
وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعاً وَأَبْصَـراً وَأَفْيِدَةً فَمَأ أَغْنَى عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَا أَبْصَـرُهُمْ وَلَا أَفْيِدَتُهُمْ مِّن شَىْءٍ إِذْ كَانُواْ يَجْحَدُونَ بِـَايَـتِ اللَّهِ
And We had assigned them the (faculties of) hearing, seeing, and hearts; but their hearing, seeing, and their hearts availed them nothing since they used to deny the Ayat. (46:26)
Allah also said about the hypocrites,
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْىٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
(They are) deaf, dumb, and blind, so they return not (to the right path). (2:18),
and about the disbelievers,
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْىٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
(They are) deaf, dumb and blind. So they do not understand. (2:171)
However, they are not deaf, dumb or blind, except relation to the guidance.
Allah said;
وَلَوْ عَلِمَ اللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لَاسْمَعَهُمْ وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعْرِضُونَ
Had Allah known of any good in them, He would indeed have made them listen; and even if He had made them listen, they would but have turned away with aversion (to the truth). (8:23)
فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الاٌّبْصَـرُ وَلَـكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِى فِى الصُّدُورِ
Verily, it is not the eyes that grow blind, but it is the hearts which are in the breasts that grow blind. (22:46)
and,
وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَـنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ
And whosoever turns away blindly from the remembrance of the Most Gracious (Allah), We appoint for him Shaytan to be an intimate companion to him. And verily, they hinder them from the path, but they think that they are guided aright! (43:36-37)
Allah’s statement,
أُوْلَـيِكَ كَالَانْعَامِ
They are like cattle,
means, those who neither hear the truth, nor understand it, nor see the guidance, are just like grazing cattle that do not benefit from these senses, except for what sustains their life in this world.
Allah said in a similar Ayah,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُواْ كَمَثَلِ الَّذِى يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلاَّ دُعَأءً وَنِدَاءً
And the example of those who disbelieve is as that of one who shouts to those who hear nothing but calls and cries. (2:171)
meaning, their example, when they are called to the faith, is the example of cattle that hear only the voice of their shepherd, but cannot understand what he is saying.
Allah further described them
بَلْ هُمْ أَضَلُّ
nay even more astray,
than cattle, because cattle still respond to the call of their shepherd, even though they do not understand what he is saying.
As for the people described here, they are unlike cattle, which fulfill the purpose and service they were created for. The disbeliever was created to worship Allah alone in Tawhid, but he disbelieved in Allah and associated others in His worship. Therefore, those people who obey Allah are more honorable than some angels, while cattle are better than those who disbelieve in Him. So Allah said;
أُوْلَـيِكَ كَالَانْعَامِ
بَلْ هُمْ أَضَلُّ
أُوْلَـيِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ
They are like cattle, nay even more astray; those! They are the heedless ones.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা এখানে বলেন যে, যাকে তিনি সুপথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, কার এমন শক্তি আছে যে, তাকে পথ দেখাতে পারে? আল্লাহ যা চান তাই হয় এবং তিনি যা চান না তা হয় না। এ জন্যেই ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। আমরা তার প্রশংসা করছি; তাঁরই কাছে সাহায্য চাচ্ছি, তারই নিকট হিদায়াত কামনা করছি এবং তাঁরই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ হতে তাঁর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এবং মন্দ আমল হতেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক । তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আহলুস্ সুনান (রঃ) সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করেছেন)
একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কোন এক আনসারীর ছেলের জানাযায় হাযির হওয়ার সুযোগ ঘটে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ ছেলেটি তো জান্নাতের একটি পাখী! সে কোন খারাপ কাজও করেনি এবং জাহান্নাম তার ঠিকানাও নয়।” তিনি তখন বলেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! তা হলে শুননা। আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত সৃষ্টি করেছেন এবং যারা জান্নাতবাসী হবে তাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। আর এই জান্নাতবাসীদের জান্নাতের অধিকারী হওয়ার ফায়সালা ঐ দিনই করা হয়েছে যেই দিন তারা আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠে ছিল। আবার তিনি জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসীকে সৃষ্টি করেছেন যখন তারা আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠেই ছিল।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা’আলা মায়ের গর্ভাশয়ে একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে থাকেন যিনি ঐ গর্ভাশয়ের সন্তান সম্পর্কে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করে নেন। (১) জীবিকা, (২) বয়স, (৩) ভাল আমল এবং (৪) মন্দ আমল। আর এ কথা তো পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, আদম (আঃ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর সন্তানদেরকে বের করেন। তখন তাদেরকে ডানদিক বিশিষ্ট এবং বামদিক বিশিষ্ট এই দু’টি দলে বিভক্ত করেন। একদল জান্নাতবাসী এবং অন্য দল জাহান্নামবাসী। তিনি বলেনঃ আমি কোনই পরওয়া করি না যে, কে নিজেকে জান্নাতবাসী রূপে গড়ে তুলছে এবং আমি এরও কোন পরওয়া করি না যে, কে নিজেকে জাহান্নামবাসী রূপে গড়ে তুলছে। এ ব্যাপারে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর তাকদীরের মাসআলাটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা। এখানে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার তেমন কোন সুযোগ নেই।
ইরশাদ হচ্ছে- তাদের অন্তর তো রয়েছে কিন্তু তারা অনুধাবন করে না । চক্ষু রয়েছে কিন্তু দেখে না। কান রয়েছে কিন্তু শ্রবণ করে না। এ জিনিসগুলোকে হিদায়াত লাভ করার জন্যে কারণ বানানো হয়েছিল। কিন্তু ওগুলো দ্বারা তারা মোটেই উপকৃত হয়নি। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “তাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অস্তকরণ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ওগুলো দ্বারা তাদের কোনই উপকার করেনি। কেননা, তারা ওগুলো দ্বারা কাজ নেয়নি এবং আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করে বসে। মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “তারা বধির, মূক এবং অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরবে না।” আর কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ “তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা বুঝবে না।”
আল্লাহ পাক ঘোষণা করছেনঃ “যদি আল্লাহ মন্দ লোকদের মধ্যে কোন মঙ্গল জানতেন তবে অবশ্যই তাদেরকে শুনবার যোগ্য বানাতেন। তখন তারা নিশ্চিতরূপে হিদায়াত লাভ করতো।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “চক্ষুগুলো অন্ধ নয়, বরং বক্ষের মধ্যস্থিত অন্তকরণগুলোই অন্ধ।” আরও বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রহমানের (আল্লাহর) যি হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তার উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং সব সময় তার সঙ্গী হয়ে থাকে। এই লোকগুলো লোকদেরকে আল্লাহর পথ হতে সরিয়ে রাখে এবং ধারণা করে যে, তারা ঠিক পথেই রয়েছে।”
এখন এখানে ইরশাদ হচ্ছে—তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত। তারা সত্য কথা শুনেও না এবং সত্যের পথে সাহায্যও করে না। তারা হিদায়াতও লাভ করে না। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তারা কোন উপকার লাভ করে না। শুধুমাত্র পার্থিব জীবনে এর দ্বারা উপকার লভি করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “কাফিরদের দৃষ্টান্ত ঐ জন্তুর মত যে রাখালের ডাক ও শব্দ শুনে থাকে মাত্র, কিন্তু কিছুই বুঝে না।” তদ্রুপ এই লোকগুলোকেও ঈমানের দিকে ডাকা হলে তারা এর উপকারিতা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, শুধু শব্দই শুনে থাকে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এই লোকগুলো জন্তুর চাইতেও অধিক পথভ্রষ্ট। কেননা, জন্তু রাখালের কথা না বুঝলেও কমপক্ষে তার দিকে মুখ তো করে। তাছাড়া ঐ জন্তুগুলো দ্বারা অনুধাবন করতে না পারার যে কাজ প্রকাশ পায় তা হচ্ছে তাদের প্রকৃতিগত ও সৃষ্টিগত ব্যাপার। পক্ষান্তরে কাফিরদেরকে তো কোন অংশী স্থাপন করা ছাড়াই আল্লাহর ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা কুফরী ও শির্ক করে বসেছে। আর এ জন্যেই তো যারা আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করেছে তারা কিয়ামতের দিন ফেতোদের চাইতেও শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হবে। কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা পশুর মত তার চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এর সম্পর্ক তকদীরের সাথে। অর্থাৎ, প্রত্যেক মানুষ ও জ্বিনের ব্যাপারে আল্লাহর জানা ছিল যে, পৃথিবীতে গিয়ে তারা ভাল করবে না মন্দ করবে, সেই মত তিনি লিখে দিয়েছেন। এখানে ঐ সকল দোযখবাসীদের কথা উল্লিখিত হয়েছে, যারা আল্লাহর পূর্বজ্ঞান অনুযায়ী দোযখবাসী হওয়ারই কাজ করবে। পরবর্তীতে তাদের আরো কিছু গুণের কথা বলা হয়েছে যে, যাদের মধ্যে এ সকল জিনিস এভাবে পাওয়া যাবে, যার বর্ণনা এখানে দেওয়া হয়েছে, জানতে হবে তাদের পরিণাম হবে মন্দ।
[২] অর্থাৎ, অন্তর, চোখ, কান এগুলি মহান আল্লাহ এই জন্য দান করেছেন, যাতে মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হয়ে নিজ প্রভুকে চিনতে পারে, তার নিদর্শনসমূহ লক্ষ্য করে এবং সত্যের বাণী মন দিয়ে শোনে। কিন্তু যে ব্যক্তি ঐ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা উপকার নেয় না, যেন উপকার না নেওয়ার কারণে সে পশুর মত; বরং তার থেকেও অধম। কারণ পশুরা নিজের লাভ- নোকসান কিছুটা বুঝে। উপকারী জিনিস হতে উপকার নেয় এবং ক্ষতিকারক জিনিস হতে দূরে থাকে। কিন্তু আল্লাহর হিদায়াত হতে বিমুখতা প্রকাশকারী ব্যক্তির মধ্যে এই পার্থক্য করার শক্তিই শেষ হয়ে যায় যে, কোনটি তার জন্য লাভদায়ক, আর কোনটি ক্ষতিকারক। আর সেই কারণেই পরবর্তী বাক্যে তাদেরকে গাফিল বা উদাসীন বলা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এর অর্থ এটা নয় যে, আমি তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম এবং তাদেরকে সৃষ্টি করার সময় এ সংকল্প করেছিলাম যে, তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করবো এবং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এ বেকুফরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। চরম দুঃখ প্রকাশ ও আক্ষেপ করার জন্য মানুষের ভাষায় যে ধরনের বাক-রীতির প্রচলন রয়েছে, এখানেও এ বিষয়বস্তুটি প্রকাশ করার জন্য সেই একই ধরনের বাক্য-রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন মায়ের কয়েকজন জোয়ান ছেলে যুদ্ধে মারা গেলে সে লোকদের বলতে থাকে, আমি তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে জীবন দান করার জন্যই বুঝি খাইয়ে পরিয়ে বড় করেছিলাম। এ বাক্যে মায়ের বক্তব্যের উদ্দেশ্য এ নয় যে, সত্যই সে তার সন্তানদেরকে এ উদ্দেশ্যে লালন পালন করেছিল বরং এ ধরনের আক্ষেপের সুরে সে আসলে বলতে চায়, আমি নিজের সন্তানদেরকে বড়ই পরিশ্রম করে নিজের শরীরের রক্ত পানি করে বড় করে তুলে ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী যুদ্ধবাজদেরকে শাস্তি দিন। কারণ তাদের জন্যই আমার পরিশ্রম ও ত্যাগের ফসল এভাবে মাটি হয়ে গেলো।