أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٤٤) -৫৪৭
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
১৮০ নং আয়াত:-
وَلِلّهِ الَاسْمَاء الْحُسْنَى
উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই।
Allah’s Most Beautiful Names .
وَ لِلّٰہِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡہُ بِہَا ۪ وَ ذَرُوا الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اَسۡمَآئِہٖ ؕ سَیُجۡزَوۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸۰﴾
উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা সে সব নামেই তাকে ডাকো। আর যারা তাঁর নাম সম্বন্ধে বক্রপথ অবলম্বন করে তাদেরকে বর্জন কর, তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেওয়া হবে।
১৮০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে সেসব নাম দিয়ে তাঁকে ডাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। আর যারা তাঁর নামে ইলহাদ করে তাদেরকে বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
আল্লাহ তা‘আলার সকল নামই সুন্দর। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রতিটি নামই পরিপূর্ণ গুণাবলীর ওপর প্রমাণ বহন করে। এজন্য তাঁর প্রতিটি নাম উত্তম ও সুন্দর। যেমন ‘আলীম’ অর্থাৎ সকল বিষয়ের ও জিনিসের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত, কোন জিনিস তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে অর্থাৎ একশ; একটি ব্যতীত। যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বেজোড় তিনি বেজোড়কে ভালবাসেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪১০, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৭)
গণনার অর্থ হল নামগুলোর প্রতি যথাযথ ঈমান আনা, এক একটি ইসলামের সাথে বরকতের জন্য পাঠ করা, তা মুখস্ত করা, তাঁর অর্থ বুঝা, সেসব গুণে গুণান্বিত হওয়া এবং কোন প্রকার বিকৃতি না করা। (মিরকাত ৫/৭১, মিশকাত)
তবে এ নিরানব্বইটি নামের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নাম সীমাবদ্ধ নয় বরং এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার অনেক নাম রয়েছে যা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: হে আল্লাহ তা‘আলা! আমি তোমার প্রত্যেক ঐ নামের ওয়াসীলায় চাচ্ছি যদ্বারা তোমার নিজের নাম রেখেছ অথবা তোমার কোন মাখলুককে তা জানিয়েছ অথবা তোমার কিতাবে নাযিল করেছ অথবা যা নিজের কাছে গোপন রেখেছ। (আহমাদ ১/৩৯১, আহমাদ শাকের বলেন, সহীহ, ৫/পৃঃ ২৬৬)
(وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ)
‘যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর’ – الحاد (ইলহাদ)-এর অর্থ হল একদিকে ঝুঁকে পড়া। দীনের মধ্যে ইলহাদ হল, বক্রপথ অবলম্বন করা বা ধর্মত্যাগী হওয়া। আল্লাহ তা‘আলার নামে ইলহাদ করা তিনভাবে হতে পারে- ১. আল্লাহ তা‘আলার নামের পরিবর্তন করা, যেমন মুশরিকরা করত। উদাহারণস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা থেকে লাত। আযীয থেকে উযযা ইত্যাদি। ২. আল্লাহ তা‘আলার নামে মনগড়া অতিরিক্ত সংযোজন করা যা তিনি আদেশ করেননি বা অপব্যাখ্যা করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন:
(يَدُ اللّٰهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ)
“আল্লাহ তা‘আলার হাত তাদের হাতের ওপর।” এখানে বলা যে, আল্লাহ তা‘আলার কুদরতী হাত তাদের হাতের ওপর। ৩. তার নাম কম করে দেয়া। যেমন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামেই ডাকা। (ফাতহুল কাদীর, ২/৩৪৪)
সুতরাং কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার যে সকল সিফাত বা গুণাবলী এসেছে তা কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন ও বিকৃতি না করে স্বস্থানে বহাল রেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নামসমূহ হিফয ও আমল করার নামই গণনা করা, এর ফযীলত রয়েছে।
২. যারা আল্লাহ তা‘আলার নামে ইলহাদ করে তাদের বর্জন করা আবশ্যক।
৩. ইলহাদের অর্থ জানলাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 180
وَلِلّهِ الَاسْمَاء الْحُسْنَى
Allah’s Most Beautiful Names.
Allah’s Most Beautiful Names
Allah says;
وَلِلّهِ الَاسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَأيِهِ
سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
And (all) the Most Beautiful Names belong to Allah, so call on Him by them, and leave the company of those who belie His Names. They will be requited for what they used to do.
Abu Hurayrah narrated that the Messenger of Allah said,
إِنَّ للهِ تِسْعًا وَتِسْعِينَ اسْمًا مِايَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْر
Verily, Allah has ninety-nine Names, a hundred less one; whoever counts (and preserves) them, will enter Paradise. Allah is Witr (One) and loves Al-Witr (the odd numbered things),
The Two Sahihs collected this Hadith.
We should state that Allah’s Names are not restricted to only ninety-nine. For instance, in his Musnad, Imam Ahmad recorded that Abdullah bin Mas`ud said that the Messenger of Allah said;
مَا أَصَابَ أَحَدًا قَطُّ هَمٌّ وَلَاا حَزَنٌ فَقَالَ
Any person who is overcome by sadness or grief and supplicates,
اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ ابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضُاوُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُهِفي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرانَ الْعَظِيمَ رَبِيعَ قَلْبِي وَنُورَ صَدْرِي وَجَلَءَ حُزْنِي وَذَهَابَ هَمِّي إِلاَّ أَذْهَبَ اللهُ حُزْنَهُ وَهَمَّهُ وَأَبْدَلَ مَكَانَهُ فَرَحًا
`O Allah! I am Your servant, son of Your female servant. My forelock is in Your Hand. Your decision concerning me shall certainly come to pass. Just is Your Judgement about me. I invoke You by every Name that You have and that You called Yourself by, sent down in Your Book, taught to any of Your creatures, or kept with You in the knowledge of the Unseen that is with You. Make the Glorious Qur’an the spring of my heart, the light of my chest, the remover of my grief and the dissipater of my concern.’
Surely, Allah will remove his grief and sadness and exchange them for delight.
The Prophet was asked “O Messenger of Allah! Should we learn these words?”
He said,
بَلَى يَنْبَغِي لِكُلِّ مَنْ سَمِعَهَا أَنْ يَتَعَلَّمَهَا
Yes. It is an obligation on all those who hear this supplication to learn it.
Al-`Awfi said that Ibn Abbas said about Allah’s statement,
وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَأيِهِ
(and leave the company of those who belie His Names),
“To belie Allah’s Names includes saying that Al-Lat (an idol) derived from Allah’s Name.”
Ibn Jurayj narrated from Mujahid that he commented,
وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَأيِهِ
(and leave the company of those who belie His Names),
“They derived Al-Lat (an idol’s name) from Allah, and Al-Uzza (another idol) from Al-Aziz (the All-Mighty).”
Qatadah stated that;
Ilhad refers to associating others with Allah in His Names (such as calling an idol Al-Uzza).
The word Ilhad (used in the Ayah in another from) means,
deviation, wickedness, injustice and straying.
The hole in the grave is called Lahd, because it is a hole within a hole, that is turned towards the Qiblah (the direction of the prayer).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলোকে বিশেষ সময়ে পাঠ করবে বা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং বেজোড় (এক)। তাই তিনি বেজোড়কেই পছন্দ করেন।” ঐ পবিত্র নামগুলো নিম্নরূপ : (আরবী) এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল। এভাবে এই নামগুলো সুনানে ইবনে মাজাহতেও এসেছে। কোন কোন বুযুর্গ ব্যক্তির ধারণা এই যে, এই নামগুলো বর্ণনাকারিগণ কুরআন মাজীদ থেকে ছাঁটাই করে এনেছেন। আল্লাহ তা’আলাই সর্বাপেক্ষা সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’আলার শুধু এই নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, আর নেই, এটা নয়। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কাউকে যখন কোন দুঃখ-কষ্ট পৌছবে তখন সে যেন এ দুআটি পড়ে- (আরবী) তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার দুঃখ-চিন্তা দূর করে দিবেন এবং ঐ স্থানে খুশী আনয়ন করবেন। তখন জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আমরা কি এটা মুখস্থ করবো না?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “ হ্যাঁ, বরং যেই এটা শুনবে তারই মুখস্থ করে নেয়া উচিত।” কোন কোন লোক তো কুরআন ও সুন্নাহ্ হতে আল্লাহ তা’আলার এক হাজার নাম বের করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে- ‘যারা আল্লাহর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর। কাফিররা আল্লাহর নামের সাথে (আরবী) শব্দটিকেও যোগ করে দেয়। তারা ‘লাত’-কে আল্লাহর স্ত্রীলিঙ্গ বলে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা)। (আরবী) শব্দটিকে তারা (আরবী) থেকে বের করে থাকে এবং এটাকেও স্ত্রী খোদা বলে। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আর আরবদের পরিভাষায় মধ্যম পন্থা থেকে সরে যাওয়াকে (আরবী) বলা হয়। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে কবর ! কবরকে (আরবী) এজন্যেই বলা হয় যে, ওটাকে কিবলার দিকে ফিরিয়ে তৈরী করা হয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] حُسنى শব্দটি أحسَن শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। আল্লাহর ঐ সুন্দর নামসমূহ বলতে যে নামগুলোতে বিভিন্ন গুণের; তাঁর মহানুভবতা, মাহাত্ম্য ও শক্তি ইত্যাদি প্রকাশ পায়। সহীহায়নে তার সংখ্যা নিরানব্বই; এক কম একশত বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তাআলা বেজোড়, তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। (বুখারী দু’আ অধ্যায়, মুসলিম যিকর অধ্যায়) গণনা করার অর্থ , তার উপর ঈমান আনা বা তা গোনা এবং এক একটি ইখলাসের সাথে বর্কতের জন্য পাঠ করা, তা মুখস্থ করা, তার অর্থ বুঝা এবং সেই সব গুণে গুণান্বিত হওয়া। (মিরকাত, মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) কোন কোন হাদীসে উক্ত ৯৯ নামের উল্লেখ এসেছে। কিন্তু সে হাদীসগুলি দুর্বল। উলামাগণ সেগুলিকে বর্ণনাকারীর নিজের তরফ হতে বাড়ানো জিনিস বলেছেন; তা হাদীসের অংশ নয়। সেই সাথে উলামাগণ এটাও বলেছেন, যে, আল্লাহর নামের সংখ্যা নিরানব্বইয়ের মধ্যেই সীমিত নয়; বরং তারও অধিক। (ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর)
[২] إلحاد (ইলহাদ) এর অর্থ হল এক দিকে ঝুঁকে পড়া। আর এর থেকে ‘লাহাদ’ এসেছে। লাহাদ ঐ কবরকে বলা হয় যার একদিক খনন করা হয়। দ্বীনের মধ্যে ইলহাদ হল, বক্রপথ অবলম্বন করা বা ধর্মত্যাগী হওয়া। আল্লাহর নামসমূহে বক্রপথ অবলম্বন করা তিনভাবে হতে পারে। (ক) আল্লাহর নামের পরিবর্তন করা, যেমন মুশরিকরা করত। উদাহরণ স্বরূপ মহান আল্লাহর সাত্ত্বিক নাম ‘আল্লাহ’ থেকে তারা তাদের এক মূর্তির নামকরণ করেছিল ‘লাত’, আল্লাহর গুণবাচক নাম, ‘আযীয’ হতে ‘উয্যা’ নামকরণ করেছিল। (খ) আল্লাহর নামে মনগড়া অতিরিক্ত বা সংযোজন করা, যার আদেশ তিনি দেননি। (গ) তাঁর নাম কম করে দেওয়া; যেমন, তাঁকে একটি নির্দিষ্ট নামেই ডাকা এবং অন্যান্য গুণবাচক নামে ডাকাকে খারাপ মনে করা। (ফাতহুল ক্বাদীর) আল্লাহর নামসমুহে ‘বক্রপথ অবলম্বন’ করার একটি অর্থ এটাও হতে পারে যে, তার তা’বীল (অপব্যাখ্যা) করা অথবা তা অর্থহীন বা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া অথবা তার উপমা বা সদৃশ বর্ণনা করা। (আয়সারুত তাফাসীর) যেমন মু’তাযিলা, মুআত্তিলা, মুশাবিবহা ইত্যাদি পথভ্রষ্ট দলগুলোর আচরণ। মহান আল্লাহ এসব থেকে দূরে থাকার ও বাঁচার আদেশ করেছেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
* এখন ভাষণ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই উপসংহারে উপদেশ ও তিরষ্কার মিশ্রিত পদ্ধতিতে লোকদেরকে তাদের কয়েকটি প্রধান প্রধান গোমরাহীর ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। এই সঙ্গে নবীর দাওয়াতের মোকাবিলায় তারা যে অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান ও বিদ্রূপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করেছিল, তার ভুল বুঝিয়ে দিয়ে তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কেও তাদেরকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে।
* মানুষের মনে বিভিন্ন জিনিসের যে ধারণা থাকে এবং বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে মানুষ যেসব কল্পনা করে থাকে, তারই ভিত্তিতে নিজের ভাষায় সে তাদের নাম রাখে। ধারণা ও কল্পনায় গলদ থাকলে তা নামের মধ্যেও ফুটে উঠে। আবার নামের ভ্রান্তি, ধারণা ও কল্পনার ভ্রান্তির কথাই প্রকাশ করে। তারপর বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে মানুষের মনে যে ধারণা থাকে, তারই ভিত্তিতে তার সাথে তার সম্পর্কও গড়ে উঠে এবং সেই হিসেবে তার সাথে সে ব্যবহারও করে। ধারণা ও কল্পনার ত্রুটি, সম্পর্ক ও ব্যবহারের ত্রুটির আকারে আত্মপ্রকাশ করে। আবার ধারণা ও কল্পনা নির্ভুল হলে, পারস্পরিক সম্পর্কও নির্ভুল ও সঠিক রূপ নেয়। একথা দুনিয়ার অন্যান্য সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে যেমন সত্য, তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও সত্য। মানুষ আল্লাহর নাম (তাঁর সত্তা সম্পর্কিত হোক বা গুণবাচক নাম হোক) স্থির করার ব্যাপারে যে ভুল করে থাকে, তা হয় আসলে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কিত তার আকীদা বিশ্বাসের ফলশ্রুতি। তারপর আল্লাহ সম্পর্কে নিজের ধারণা ও আকীদার মধ্যে মানুষ যতটুকু ও যে ধরণের ভুল করে, ঠিক ততটুকু ও সেই ধরণের ভুল তার নিজের জীবনের সমগ্র নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতি গড়ে তোলার ব্যাপারেও সংঘটিত হয়ে যায়। কারণ মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে এবং আল্লাহর সাথে নিজের ও বিশ্বজাহানের সম্পর্কের ব্যাপারে যে ধারণা গড়ে তোলে, পুরোপুরি তারই ভিত্তিতে তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠে। তাই বলা হয়েছে, আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে ভুল করা থেকে দূরে থাকো। ভাল নামই আল্লাহর উপযোগী এবং তার সাহায্যেই তাঁকে স্মরণ করা উচিত। তার নাম ঠিক করার ব্যাপারে ‘ইলহাদ’ তথা বিদ্রোহাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। “ভাল ভাল নাম” বলতে এমন সব নাম বুঝায়, যার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব, তাঁর পাক-পবিত্রতা ও তাঁর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর প্রকাশ ঘটে। কুরআনে উল্লেখিত ‘ইলহাদ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, মধ্যবর্তী স্থান থেকে সরে যাওয়া এবং সোজা-সরল দিক থেকে বিপথগামী হয়ে যাওয়া। তীর যখন সোজা নিশানায় না লেগে অন্য কোনো দিকে লাগে, তখন আরবীতে বলা হয় الحد السهم الهدف অর্থাৎ তীর নিশানা থেকে ইহলাদ করেছে। অর্থাৎ লক্ষভ্রষ্ট হয়েছে। আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে ‘ইহলাদ’ হচ্ছে এই যে, আল্লাহর এমনভাবে নামকরণ করা, যাতে তাঁর মর্যাদাহানি হয়, যা তাঁর আদবের পরিপন্থী হয়। যার মাধ্যমে তাঁর প্রতি দোষ-ত্রুটি আরোপ করা হয় অথবা যার সাহায্যে তাঁর উন্নত ও পবিত্র সত্তা সম্পর্কে কোনো প্রকার ভুল আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে থাকে। যে নাম একমাত্র আল্লাহর উপযোগী, সৃষ্টি জগতের কাউকে সে নামে ডাকাও ইহলাদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর কুরআনের আয়াতে যে বলা হয়েছে “আল্লাহর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় (ইহলাদ করে) তাদেরকে বর্জন কর। এর অর্থ হচ্ছে, সোজাভাবে বুঝাবার পর যদি তারা না বোঝে, তাহলে তাদের সাথে অনর্থক বিতর্কে জড়িত হবার তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই। নিজেদের গোমরাহীর ফল তারা নিজেরাই ভুগবে।