Book#555

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٥٢) -৫৫৫
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
১৯৯-২০০ নং আয়াত:-
وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।
Turn away from the foolish.

خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۱۹۹﴾
وَ اِمَّا یَنۡزَغَنَّکَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰہِ ؕ اِنَّہٗ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۰۰﴾

তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।

আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর,নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

১৯৯-২০০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন: জনগণের যে অতিরিক্ত সম্পদ রয়েছে এবং যে সম্পদ তারা নিজেরাই তোমার কাছে নিয়ে আসে তুমি (নাবী) তা গ্রহণ কর। সূরা তাওবার ফরয যাকাত অবতীর্ণ হবার পূর্বে এ বিধানই ছিল। (ইবনু কাসীর, ৩/৬৮০)

অন্যান্য মুফাসসিরগণ এ থেকে চারিত্রিক নির্দেশনা অর্থাৎ ক্ষমা করার অর্থ নিয়েছেন। ইমাম ইবনু জারীর ও ইমাম বুখারী (রাঃ) প্রভৃতি এ অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

ইমাম বুখারী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উমার (রাঃ) থেকে একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তা হল: একদা উয়াইনাহ বিন হিসন উমার (রাঃ)-এর খিদমতে হাজির হন ও সমালোচনা করতে শুরু করেন যে, আপনি আমাদের পূর্ণ প্রাপ্য দেন না আর আমাদের মাঝে ইনসাফও করেন না। উমার (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে যান। এই পরিস্থিতি দেখে উমারের পরামর্শদাতা হুর বিন কায়িস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-কে আদেশ করেন:

(خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِيْنَ)‏

“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকার্যের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল।” সাথে সাথে উমার (রাঃ) কুরআনের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪২)

আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ) বলেন:

(خُذِ الْعَفْوَ)

আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চরিত্রের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৩)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ওপর যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: এটা কি হে জিবরীল? উত্তরে তিনি বললেন: যিনি আপনার ওপর জুলুম করবে তাকে ক্ষমা করা আর যিনি আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে তাকে প্রদান করতে এবং যিনি সম্পর্ক ছিন্ন করবে তার সাথে সম্পর্ক বহাল রাখতে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনু জারীর, ১৫৫৪৮, কুরতুবী: ৭/৩২৯, সহীহ)

কতক আলিমগণ বলেছেন: মানুষ দুই প্রকার ১. সৎ লোক, এ সকল সৎ লোকের সৎ আচরণ গ্রহণ কর, তাদের ওপর সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দিও না। ২. খারাপ লোক, তাদেরকে ভাল কাজের আদেশ দাও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ط نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُوْنَ وَقُلْ رَّبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزٰتِ الشَّيٰطِيْنِ)

“মন্দের মোকাবেলা কর‎ যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। বল:‎ ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে।” (সূরা মু’মিনূন ২৩:৯৬-৯৭)

(وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ)

‘যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে’ এরূপ আরো দু’টি আয়াত রয়েছে। একটি সূরা মু’মিনূন-এর ৯৭, ৯৮ নং আয়াতে, অন্যটি সূরা হা-মীম সিজদাহ ৩৬ নং আয়াতে। এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা পাপাচারী মানুষদের সাথে মুয়ামালাত/উঠা-বসা লেনদেন ইত্যাদি করার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তবে উত্তম পন্থায়। কেননা উত্তম পন্থা অবলম্বন করলে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় তা প্রতিহতকরণে যথেষ্ট হবে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَه۫ عَدَاوَةٌ)।

তারপর তিনি জিন শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিচ্ছেন।

কেননা তাদের সাথে সৎ আচরণে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কেননা তারা সর্বদা তোমার ধ্বংস ও বিনাশ চায়।

نَزْغٌ অর্থ কুমন্ত্রণা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমাদের কারো কাছে শয়তান এসে বলে: কে এরূপ সৃষ্টি করেছে? কে এরূপ সৃষ্টি করেছে? এমনকি তাকে বলে তোমার আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৭৬, সহীহ মুসলিম হা: ১৩৪)

আল্লামা ইবনু জারীর (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন: হয়তো শয়তান তোমাকে মূর্খদের থেকে এড়িয়ে চলতে বাধা দেবে আর তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে প্রেরণা যোগাবে। এক্ষেত্রে তুমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. উত্তম আখলাকে ভূষিত হবার নির্দেশ পেলাম।
২. ক্ষমা মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৩. শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা আবশ্যক।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 199-200
وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
Turn away from the foolish.

Showing Forgiveness

Allah says;
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ

Show forgiveness, enjoin Al-‘Urf (the good), and turn away from the foolish (don’t punish them).

Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam commented on Allah’s statement,
خُذِ الْعَفْوَ
(Show forgiveness),

“Allah commanded (Prophet Muhammad) to show forgiveness and turn away from the idolators for ten years. Afterwards Allah ordered him to be harsh with them.”

And more than one narration from Mujahid says,

“From the (bad) behavior and actions of the people, of those who have not committed espionage.”

And Hashim bin Urwah said that his father said,

“Allah ordered Allah’s Messenger to pardon the people for their behavior.”

And in one narration,

“pardon what I have allowed you of their behavior.”

In Sahih Al-Bukhari it is recorded that Hisham reported from his father Urwah from his brother Abdullah bin Az-Zubayr who said;

“(The Ayah);
خُذِ الْعَفْوَ
(Show forgiveness) was only revealed about the peoples (bad) character.”

There is a narration from Mughirah from Hisham from his father from Ibn Umar; and another from Hisham from his father from A’ishah, both of whom said similarly. And Allah knows best.

Ibn Jarir and Ibn Abi Hatim recorded that Yunus said that Sufyan bin Uyaynah narrated that Umay said,

“When Allah, the Exalted and Most Honored, revealed this Ayah,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
(Show forgiveness, enjoin Al-`Urf (what is good), and turn away from the foolish), to His Prophet, the Messenger of Allah asked,

مَا هَذَا يَا جِبْرِيل

`What does it mean, O Jibril!

Jibril said, `Allah commands you to forgive those who wronged you, give to those who deprived you, and keep relations with those who cut theirs with you.”‘

Al-Bukhari said, “Allah said,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
(Show forgiveness, enjoin Al-`Urf and turn away from the ignorant).

`Al-`Urf’, means, righteousness.”

Al-Bukhari next recorded from Ibn Abbas that he said,

“Uyaynah bin Hisn bin Hudhayfah stayed with his nephew Al-Hur bin Qays, who was among the people whom Umar used to have near him, for Umar used to like to have the reciters of the Qur’an (who memorized it) near him and would listen to their opinion, regardless of whether they were old or young men.

Uyaynah said to his nephew, `O my nephew! You are close to this chief (Umar), so ask for permission for me to see him.’

Al-Hur said `I will ask him for you,’ and he asked Umar for permission for Uyaynah to meet him, and Umar gave him permission. When Uyaynah entered on Umar, he said, `O Ibn Al-Khattab! You neither give to us sufficiently nor rule with justice between us.’

Umar became so angry that he almost punished Uyaynah. However, Al-Hur said, `O Chief of he Faithful! Allah, the Exalted, said to His Prophet,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
(Show forgiveness, enjoin Al-`Urf, and turn away from the foolish), Verily this man (Uyaynah) is one of the fools!’ By Allah, Umar did not do anything after he heard that Ayah being recited, and indeed, he was one who adhered to the Book of Allah, the Exalted and Most Honored.”

Al-Bukhari recorded this Hadith.

Some scholars said that people are of two kinds,

a good-doer, so accept his good doing and neither ask him more than he can bear nor what causes him hardship.

The other kind is the one who falls in shortcomings, so enjoin righteousness on him. If he still insists on evil, becomes difficult and continues in his ignorance, then turn away from him, so that your ignoring him might avert his evilness.

Allah said in other instances,

ادْفَعْ بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ السَّيِّيَةَ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ

وَقُلْ رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيـطِينِ

وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ

Repel evil with that which is better. We are best-acquainted with the things they utter. And say:”My Lord! I seek refuge with You from the whisperings (suggestions) of the Shayatin (devils). And I seek refuge with You, My Lord! lest they should come near me.” (23:96-98)

and,

وَلَا تَسْتَوِى الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّيَةُ ادْفَعْ بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِىٌّ حَمِيمٌ

وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّاهَأ إِلاَّ ذُو حَظِّ عَظِيمٍ

The good deed and the evil deed cannot be equal. Repel (the evil) with one which is better, then verily he, between whom and you there was enmity, (will become) as though he was a close friend. But none is granted it (the above quality) except those who are patient — and none is granted it except the owner of the great portion in this world. (41:34-35)

in reference to the advice contained in these Ayat,

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ

إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

And if an evil whisper from Shaytan tries to turn you away (from doing good), then seek refuge in Allah. Verily, He is the All-Hearer, the All-Knower) (41:36)

Allah said in this honorable Surah,

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

And if an evil whisper comes to you from Shaytan, then seek refuge with Allah. Verily, He is All-Hearer, All-Knower.

These three instances in the Qur’an, in Surahs Al-A`raf, Al-Mu’minun and As-Sajdah, are unique in the Qur’an. Allah encourages lenient treatment of evil doers, for this might deter them from persistence in their evil, Allah willing,
فَإِذَا الَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِىٌّ حَمِيمٌ
(then verily he, between whom and you there was enmity, (will become) as though he was a close friend). (41:34)

Allah also encourages seeking refuge with Him from the devils of the Jinns. The devil will not be deterred if one is lenient with him, because he seeks your destruction and total demise. The devil to you, O mankind, is an open enemy, just as he was for your father before you.

Ibn Jarir said, while explaining Allah’s statement,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ
(And if an evil whisper comes to you from Shaytan),

“If the devil lures you to get angry, thus directing you away from forgiving the ignorant and towards punishing him
فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ
(then seek refuge with Allah.) Allah commands here to seek refuge with Him from the devil’s whispers,
إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
(Verily, He is All-Hearer, All-Knower.) Allah hears the ignorance that the fools subject you to, your seeking refuge with Him from the devil’s whispers, and the rest of the speech of His creation; none of it escapes His knowledge. He knows what drives the lures of the devil away from you, as well as, the rest of what His creatures do.”

We mentioned the Hadiths concerning Isti`adhah (seeking refuge with Allah) in the beginning of this Tafsir, so we do not need to repeat them here.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

১৯৯-২০০ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছেজনগণের যে মাল তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং যে মাল তারা নিজেরাই নিয়ে আসে, (হে মুহাম্মাদ সঃ!) তুমি তা গ্রহণ কর। সূরায়ে বারাআতে ফরয দানের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, এ নির্দেশ ছিল তার পূর্বেকার। সেই সময় সাদকা তাঁর কাছে পেশ করা হতো। যহহাক (রঃ) বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছেযা অতিরিক্ত হয় তা খরচ করে দাও। (আরবী) শব্দের অর্থ করা হয়েছে ‘অতিরিক্ত। যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, এতে মুশরিকদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার হুকুম হয়েছে। দশ বছর পর্যন্ত এই ক্ষমার নীতি কার্যকরী থাকে। এরপর তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়। এটা হচ্ছে হযরত ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- লোকদেরকে তাদের চরিত্র ও কাজের ব্যাপারে ক্ষমার চোখে দেখ । অর্থাৎ তাদের স্বভাব চরিত্র ও কাজ কারবারের খোঁজ খবর নিয়ো না। ভাবার্থ হচ্ছে- লোকদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং খারাপ সাহচর্য অবলম্বন করা থেকে বিরত থাক। আল্লাহর শপথ! আমি যার সাহচর্য অবলম্বন করবে, তার সুন্দর চরিত্র অবশ্যই গ্রহণ করবো। সকল উক্তির মধ্যে এই উক্তিটিই সর্বোত্তম।

হযরত উয়াইনা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-এর উপর (আরবী) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন তখন নবী (সঃ) হযরত জিবরাঈল (আ)-কে জিজ্ঞেস করলেন- “হে জিবরাঈল (আঃ)! এর উদ্দেশ্য কি?” জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, কেউ আপনার উপর অত্যাচার করলে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন, যে আপনাকে দান থেকে বঞ্চিত করে তাকে আপনি দান করবেন এবং যে আপনার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে আপনি তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবেন।” (এ হাদীসটি ইবনে জারীর (রঃ) এবং ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এই বিষয় সম্পর্কীয় আর একটি হাদীস হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি। আমি তার হাত ধারণ করে বলি- হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সর্বোত্তম আমল আমাকে বাতলিয়ে দিন। তিনি তখন আমাকে বললেনঃ “হে উকবা ইবনে আমির (রাঃ)! যে তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখায় না তুমি তার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন কর, যে তোমাকে দান থেকে বঞ্চিত রাখে তুমি তাকে দান থেকে বঞ্চিত করো না, যে তোমার প্রতি যুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।” (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বিনয় ও ক্ষমা পরায়ণতার নীতি গ্রহণ কর এবং লোকদেরকে সকাজের নির্দেশ দাও, আর জাহিল ও মূর্খদের সাথে জড়িয়ে পড়ো না বরং তাদেরকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো৷” (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে বা সত্ত্বাজ। [বুখারীর (রঃ) উক্তি হচ্ছে (আরবী)-এর অর্থ (আরবী) এবং এর থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন উরওয়া (রঃ), সুদ্দী (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং ইবনে জারীর (রঃ)]

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, উয়াইনা ইবনে হসন ইবনে হুযাইফা স্বীয় ভ্রাতুস্পুত্র হুর ইবনে কয়েস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। হুর ইবনে কয়েস (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-এর একজন দরবারী লোক ছিলেন। কুরআন কারীমে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি হযরত উমার (রাঃ)-এর মজলিসের কারী ও আলিমদের অন্যতম কারী ও আলিম ছিলেন এবং তার পরামর্শ সভার একজন সদস্য ছিলেন। হযরত উমার (রাঃ)-এর দরবারের আলিমগণ যুবকও ছিলেন, বৃদ্ধও ছিলেন। উয়াইনা স্বীয় ভ্রাতুস্পুত্রকে বললেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমীরুল মুমিনীনের কাছে তোমার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং তুমি তার সাথে আমার সাক্ষাতের অনুমতি নিয়ে এসো।” তখন হুর (রাঃ) উয়াইনার জন্যে অনুমতি নিয়ে আসলেন এবং হযরত উমার (রাঃ) উয়াইনাকে হাযির হওয়ার অনুমতি দিলেন। উয়াইনা যখন আমীরুল মুমিনীন।

হযরত উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন তখন তিনি তাকে বললেনঃ “হে। খাত্তাবের পুত্র! আপনি আমাকে যথেষ্ট টাকাও দেননি এবং আমার প্রতি আদল বা ন্যায় বিচারও করেনি।” আদলের কথা শোনা মাত্রই হযরত উমার তেলে বেগুনে। জ্বলে উঠলেন এবং উয়াইনাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর (রাঃ) বলে উঠলেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেনঃ “তুমি বিনয় ও ক্ষমাপরায়ণতার নীতি অবলম্বন কর, জনগণকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদের সাথে জড়িয়ে পড়ো না (বরং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও)। ইনি তো মূর্খদেরই অন্তর্ভুক্ত! আল্লাহর শপথ । যখন হযরত উমার (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলো তখন তিনি থেমে গেলেন এবং উয়াইনাকে কোন শাস্তি দিলেন না। মহা মহিমান্বিত আল্লাহর কিতাবে তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ছিল। (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে তাখরীজ করেছেন)

ইবনে আবি হাতিম (রঃ) আবদুল্লাহ ইবনে নাফি (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একদা সালিম ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে উমার (রঃ) সিরিয়াবাসী এক যাত্রী দলের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। যাত্রী দলের মধ্যে ঘন্টা বাজছিল। তিনি বললেনঃ “ঘন্টা বাজানো নিষিদ্ধ। কাফিররা তাদের মন্দিরে ঘন্টা বাজিয়ে থাকে।” তখন সেই কাফেলার লোকেরা বললোঃ “এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান আপনার চেয়ে বেশী আছে। বড় বড় ঘন্টা বাজানো নিষিদ্ধ বটে, কিন্তু ছোট ছোট ঘন্টায় কোন দোষ নেই। তাদের একথা শুনে হযরত সালিম (রঃ) নীরব হয়ে যান। শুধু এতোটুকু তিনি বললেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মূর্খদের সাথে বকাবকি না করাই উত্তম। বলা হয় যে, (আরবী) এ সবগুলোরই অর্থ একই। অর্থাৎ সৎ কাজ। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন আল্লাহর বান্দাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন। (আরবী) শব্দের মধ্যে সমস্ত আনুগত্য নিহিত রয়েছে। আর তিনি তাকে মূর্খদের সাথে জড়িয়ে না পড়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ বাহ্যতঃ নবী (সঃ)-এর প্রতি হলেও সমস্ত বান্দাই এর অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে বান্দাদেরকে আদব বা ভদ্রতা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যে, তাদের প্রতি কেউ যদি জুলুম করে তবে তাদেরকে তা সহ্য করতে হবে, এর অর্থ এটা নয় যে, কেউ যদি আল্লাহর ওয়াজেবী হকের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করে বা তার সাথে কুফরী করে অথবা তার একত্ববাদ থেকে অজ্ঞ থেকে যায় তবুও তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। এর অর্থ এটাও নয় যে, মূর্খরা যদি মূখতা বশতঃ মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় তবুও নীরব থাকতে হবে। মোটকথা, এটা হচ্ছে ঐ চরিত্র যা আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে শিক্ষা দিয়েছেন। এই বিষয়টিকে একজন জ্ঞানী কবি কবিতার মধ্যে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ক্ষমা করে দেয়ার নীতি অবলম্বন কর এবং সৎকাজের নির্দেশ দাও যেমন তোমাকে আদেশ করা হয়েছে। আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল, তাদের সাথে জড়িয়ে পড়ো না। প্রত্যেক লোকের সাথে নরমভাবে কথা বল । আর উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন লোকের প্রতি নরম ভাষা প্রয়োগ করা খুবই প্রশংসাৰ্হ।”

কোন কোন আলিমের উক্তি রয়েছে যে, মানুষ দু’ প্রকারের রয়েছে। প্রথম হচ্ছে উপকারী মানুষ। সে তোমাকে খুশী মনে যা কিছু দান করে তা তুমি কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ কর এবং সাধ্যের অতিরিক্ত ভার তার উপর চাপিয়ে দিয়ো না যার ফলে নিজেই সে পিষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয় হচ্ছে হতভাগ্য ব্যক্তি। তুমি তাকে ভাল কাজের পরামর্শ দাও। কিন্তু যদি তার বিভ্রান্তি বেড়েই চলে এবং সে তার অজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে যায় তবে তাকে এড়িয়ে চল। সম্ভবতঃ এই ক্ষমাই তাকে তার দুষ্কার্য থেকে বিরত রাখবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “উত্তম পন্থায় খারাপকে দূরীভূত কর, এভাবে তোমার শত্রুও তোমার মিত্রতে পরিণত হবে। তারা যে খেয়াল প্রকাশ করছে তা আমি খুব ভালই জানি।” আল্লাহ পাক বলেনঃ “শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।” অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নেকী ও বদী, সৎ ও অসৎ এবং ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না।” ভাল পন্থায় খারাপকে দূর কর।’ এই আমল ঐ লোকেরাই অবলম্বন করতে পারে যারা প্রকৃতিগতভাবে ধৈর্যশীল। ভাগ্যবান লোকেরাই এর উপর আমল করতে পারে। পরিণামে তারা বড়ই সফলতা লাভ করবে। যদি শয়তান তোমাদের অন্তরে কোন কুমন্ত্রণা দেয় এবং বিভ্রান্ত করতে শুরু করে অথবা শত্রুর সাথে ঝগড়ার সময় তোমাকে রাগান্বিত করে এবং ঐ মূখ হতে এড়িয়ে চলা থেকে তোমাকে বিরত রাখে এবং তাকে দুঃখ দিতে তোমাকে উত্তেজিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। মূর্খ যে তোমার উপর বাড়াবাড়ি করছে তা আল্লাহ দেখছেন এবং তোমার আশ্রয় প্রার্থনাও তিনি শুনছেন। তাঁর কাছে কোন কথাই গোপন নেই। শয়তানের বিভ্রান্তি এবং ফাসাদ সৃষ্টি তোমাদের যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারে আল্লাহ তা সম্যক অবগত।

যখন (আরবী) -এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন বান্দা বলেঃ “হে আমার মা’বৃদ! যদি ক্রোধ এসে পড়ে তবে কিভাবে ক্ষমা করার নীতি অবলম্বন করা যাবে?” তখন মহান আল্লাহ (আরবী)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। ঐ দুই ব্যক্তির ঘটনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা উভয়ে নবী (সঃ)-এর সামনে লড়ে যায়। এমন কি একজনের নাসারন্ধ্র ক্রোধে ফুলে ওঠে। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি যে, যদি সে ওটা পাঠ করে তবে তার ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যাবে! কালেমাটি হচ্ছে নিম্নরূপঃ

(আরবী) অর্থাৎ “আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। লোকটিকে কালেমাটি বলে দেয়া হলো। তখন সে বললোঃ আমার মধ্যে কোন পাগলামি নেই। (আরবী) -এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে ফাসাদ। এই ফাসাদ ক্রোধের কারণেই হাক বা অন্য কোন কারণেই হাক। আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ) ! উত্তম রীতিতে কথা বল। শয়তান পরস্পরের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে রয়েছে। (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে দুষ্টামি ও কুমন্ত্রণা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর (আরবী) শব্দটি মঙ্গল বা কল্যাণ কামনায় ব্যবহৃত হয়। (আরবী)-এর হাদীসগুলো তাফসীরের শুরুতে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] خُذ العَفو উলামাদের মধ্যে কেউ কেউ এর অর্থ এই বলেছেন যে, خُذ مَا عَفَا لَكَ مِن أَموَالِهِم، أي: مَا فَضَل অর্থাৎ, তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল তাদের নিকট হতে গ্রহণ কর। এটি যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বেকার আদেশ। (ফাতহুল বারী) কিন্তু অন্যান্য মুফাসসিরগণ এর থেকে চারিত্রিক নির্দেশনা অর্থাৎ, ক্ষমা করার অর্থ নিয়েছেন। ইমাম জারীর ও ইমাম বুখারী (রঃ) প্রভৃতি এ অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং ইমাম বুখারী উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উমার (রাঃ)-এর একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন। আর তা হল এই যে, একদা উয়াইনাহ বিন হিসন্ উমার (রাঃ)-এর খিদমতে হাযির হন ও সমালোচনা করতে শুরু করেন যে, আপনি না আমাদের পূর্ণ প্রাপ্য দেন, আর না আমাদের মাঝে ইনসাফ করেন! যার কারণে উমার (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতি দেখে উমারের পরামর্শদাতা হুর বিন কায়েস (রাঃ) (উয়াইনার ভাতিজা) বললেন, মহান আল্লাহ নিজ নবী (সাঃ)-কে আদেশ করেন, {خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ} অর্থাৎ, ‘ক্ষমা কর, সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল। আর ইনি একজন মূর্খ মানুষ। সুতরাং উমার (রাঃ) তাকে ক্ষমা করে দেন। বলাই বাহুল্য যে, উমার (রাঃ) কুরআনের আদেশের সামনে আত্মসমর্পণকারী ছিলেন। (বুখারীঃ সূরা আ’রাফের তাফসীর) এর সমর্থন ঐ হাদীসসমূহ দ্বারাও হয়, যাতে অত্যাচারের মোকাবেলায় ক্ষমা প্রদর্শন, সম্পর্ক ছিন্ন করার মোকাবেলায় সুসম্পর্ক বজায় ও অন্যায়ের মোকাবেলায় সদাচরণ প্রয়োগ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

[২] عرف অর্থাৎ معووف অর্থাৎ, সৎকর্ম।

[৩] অর্থাৎ, সৎকার্যের আদেশ দিয়ে হুজ্জত কায়েম করার পরও যদি সে না মানে, তাহলে তাদেরকে এড়িয়ে চল এবং তাদের ঝগড়া ও মূর্খতার উত্তর দিও না।

[৪] এমতাবস্থায় যদি শয়তান তোমাকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।

Leave a Reply