أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٥٥) -৫৫৮
www.motaher21.net
সুরা: আল্ আরাফ
সুরা:৭
২০৪ নং আয়াত:-
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْانُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ
যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর।
So, when the Qur’an is recited, listen to it,
وَ اِذَا قُرِیٴَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَہٗ وَ اَنۡصِتُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۲۰۴﴾
যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ হয়ে থাক; যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।
২০৪ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতে কুরআনকে মানুষের পথপ্রদর্শক, রহমত ও দলীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতে কুরআনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে তেলাওয়াতকালে চুপ থাকা ও মনোযোগসহকারে শ্রবণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কাফিরদের মত হট্টগোল করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সম্পর্কে বলেন:
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَا تَسْمَعُوْا لِهٰذَا الْقُرْاٰنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُوْنَ )
“কাফিররা বলেঃ তোমরা এই কুরআন শ্রবণ কর না এবং তা তেলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি কর যাতে তোমরা জয়ী হতে পার।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ ৪১:২৬)
নাবী (সাঃ) যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন মক্কার কাফিররা তখন হট্টগোল সৃষ্টি করতো যাতে কেউ না শুনতে পায়।
মনোযোগসহকারে শ্রবণ করা আর চুপ থাকার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- চুপ থাকা হল: বাহ্যিক কথাবার্তা ও অন্যান্য ব্যস্ততা বর্জন করা, যা কুরআন শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করে। আর মনোযোগসহকারে শ্রবণ করা হল: অন্তরের উপস্থিতিসহ একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করা ও শ্র“ত বিষয়কে অনুধাবন করা। কুরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণকালে এ দু’টি আবশ্যিক বিষয়। তাহলেই আল্লাহ তা‘আলার রহমত পাওয়ার আশা করা যায়। যে ব্যক্তিই কুরআন তেলাওয়াত শুনবে সে সকল ব্যক্তি এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। সালাতের ভিতর হোক আর বাইরে হোক।
সুতরাং সালাতেও ইমাম যখন কুরআন তেলাওয়াত করবে তখন মুক্তাদির চুপ থাকা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا، وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا
ইমামকে নিযুক্ত করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। অতএব তিনি তাকবীর দিলে তারপর তোমরা তাকবীর দাও তিনি কিরাত পড়লে তোমরা চুপ থাক। (নাসায়ী হা: ৯২১, সহীহ)
তবে অবশ্যই সকলকে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। কেননা সূরা ফাতিহা ছাড়া কারো সালাত হবে না। এ সম্পর্কে সূরা ফাতিহায় আলোচনা করা হয়েছে। অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-সহ সকলকে নির্দেশ দিচ্ছেন যেন আল্লাহ তা‘আলাকে স্বরণ করে। আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ অন্তর, জিহবা ও অন্তর-জিহবা উভয়টা দ্বারা হয়। তবে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করতে হবে বিনয়-নম্র ও ভয়-ভীতির সাথে। আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করতে গিয়ে আওয়াজ করে হট্টগোল সৃষ্টি করা যাবে না আবার একেবারে নিঝুম থাকলেও হবে না বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অতএব জামাতের সাথে গোলাকার হয়ে বসে সশব্দে মাথা দুলিয়ে যিকির করা শরীয়তসম্মত নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কুরআন তেলাওয়াতকালে চুপ থাকা ও মনোযোগসহকারে শ্রবণ করা আবশ্যক।
২. কুরআন তেলাওয়াতকালে হট্টগোল করা হারাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 204
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْانُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ
So, when the Qur’an is recited, listen to it,
The Order to listen to the Qur’an
Allah says;
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْانُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
So, when the Qur’an is recited, listen to it, and be silent that you may receive mercy.
After Allah mentioned that this Qur’an is a clear evidence, guidance and mercy for mankind, He commanded that one listen to the Qur’an when it is recited, in respect and honor of the Qur’an.
This is to the contrary of the practice of the pagans of Quraysh, who said,
لَا تَسْمَعُواْ لِهَـذَا الْقُرْءَانِ وَالْغَوْاْ فِيهِ
“Listen not to this Qur’an, and make noise in the midst of its (recitation).” (41:26)
Ibn Jarir reported that Ibn Mas`ud said;
“We would give Salams to each other during Salah. So the Ayah of Qur’an was revealed;
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْانُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ
When the Qur’an is recited, then listen to it.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
যখন এই বর্ণনা সমাপ্ত হলো যে, কুরআন হচ্ছে হিদায়াত ও রহমত এবং লোকদের জন্যে বুঝবার জিনিস, তখন ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা এই কুরআন পাঠের সময় নীরব থাকবে, যেন এর মর্যাদা রক্ষিত হতে পারে। এমন হওয়া উচিত নয় যেমন কুরাইশরা বললো। অর্থাৎ তারা বলতোঃ “তোমরা শুনো না, শুনতে দিয়ো না, বরং কুরআন পাঠের সময় গণ্ডগোল ও হৈ চৈ করতে থাকো।” কিন্তু এই নীরবতা অবলম্বনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ফরয নামাযের ব্যাপারে বা ঐ সময়, যখন ইমাম উচ্চৈঃস্বরে কিরআত পাঠ করেন। যেমন হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অনুসরণের জন্যেই ইমাম নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং যখন সে তাকবীর পাঠ করে, আর সে যখন কিরআত পাঠ করে তখন তোমরা নীরব হয়ে যাও।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) তার সহীহ গ্রন্থে তাখরীজ করেছেন এবং আহলে সুনান এটা বর্ণনা করেছেন) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে লোকেরা নামাযের সময় কথা বলতো। অতঃপর যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়“তোমরা নীরব থাকো ও কিরআত শ্রবণ কর তখন নামাযে নীরব থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আমরা নামাযের মধ্যে একে (আরবী) অপরকে বলতাম। এ জন্যে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।” হযরত বাশীর ইবনে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা ইবনে মাসউদ (রাঃ) নামায পড়াচ্ছিলেন। লোকদেরকে তিনি দেখলেন যে, তারা ইমামের সাথে নিজেরাও কিরআত পাঠ করছে। তিনি নামায শেষে বললেনঃ “তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা কুরআন শুনছে না এবং বুঝছো না? অথচ আল্লাহ তা’আলা নীরব থেকে শুনতে বলেছেন?” যুহরী (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি আনসারের একটি লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় (এই আয়াতটি মাক্কী এবং আনসারদের ইসলাম ককূলের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল)। রাসূলুল্লাহ (সঃ) পড়তেন তখন তিনিও তার পিছনে পিছনে পড়ে যেতেন।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সশব্দ নামায শেষ করে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ নিজেও কি আমার সাথে সাথে পড়ছিল?” তখন একটি লোক উত্তরে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)। হ্যা (আমি পড়ছিলাম বটে)।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমার কি হয়েছে যে, আমি মানুষকে আমার সাথে সাথে কুরআন পড়তে দেখছি?” তখন থেকে মানুষ সশব্দ নামাযে ইমামের পিছনে কিরআত পড়া হতে বিরত থাকেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও আহলুস সুনান বর্ণনা করেছেন)
যুহরী (রঃ) বলেন যে, উচ্চ শব্দ বিশিষ্ট নামাযে ইমামের পিছনে কিরআত না পড়া উচিত। ইমামের কিরআতই মুকতাদীর জন্যে যথেষ্ট, যদিও তার শব্দ শোনা না যায়। কিন্তু যদি উচ্চ শব্দ বিশিষ্ট নামায না হয় তবে পড়ে নেয়া যায় । কিন্তু এটা ঠিক নয় যে, কেউ সশব্দ নামাযে ইমামের পিছনে কিরআত পড়ে। না প্রকাশ্যে পড়ে, না গোপনে পড়ে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “কুরআন পাঠের সময় তোমরা নীরবতা অবলম্বন কর।” আমি বলি- আলেমদের একটি দলের নীতি হচ্ছে, উচ্চ শব্দ বিশিষ্ট নামাযে মুকতাদীর উপর এটা ওয়াজিব নয় যে, নিজেও সে কিরআত পাঠ করবে। না ইমামের সূরায়ে ফাতেহা পাঠের সময়, না অন্য সরা পাঠের সময়। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর দু’টি উক্তি রয়েছে। এ দুটি উক্তির মধ্যে একটি উক্তি এটাও রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বলেন যে, মুকতাদী যেন কোন সময়েই কিরআত পাঠ না করে, আস্তের নামাযেও নয় এবং জোরের নামাযেও নয়। কেননা হাদীসে এসেছে- “যার জন্যে ইমাম রয়েছে, ইমামের কিরআতই তার কিরআত।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত জাবির (রাঃ) হতে মার’ রূপে বর্ণনা করেছেন। এটা মুআত্তায় হযরত জাবির (রাঃ) হতে মাওকুফরূপে বর্ণিত আছে। ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এটাই বিশুদ্ধমত) এটা অত্যন্ত জটিল ও মতভেদী মাসআলা। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, ইমামের পিছনে কিরআত ওয়াজিব। নামায সিররী হাক অথবা জিহরী হাক। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সমধিক জ্ঞাত।
‘যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন নীরবে শ্রবণ কর’ অর্থাৎ ফরয নামাযে যখন কিরআত পাঠ করা হয় তখন চুপচাপ হয়ে শ্রবণ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ ইবনে কারীয (রাঃ) বলেনঃ “আমি একদা উবাইদুল্লাহ ইবনে উমাইর (রাঃ) এবং আতা’ ইবনে রাবাহ (রাঃ)-কে পরস্পর কথাবার্তা বলতে শুনি। অথচ সেই সময় অন্য দিকে ওয়ায হচ্ছিল। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ আল্লাহর যিকির হচ্ছে অথচ আপনারা শুনছেন না কেন? আপনারা তো শাস্তির যোগ্য হয়ে গেছেন! তখন তারা আমার দিকে ঘুরে তাকালেন এবং পুনরায় কথা বলতে শুরু করলেন। আমি আবার তাদেরকে সতর্ক করলাম। তারা এবারও আমার দিকে তাকালেন এবং পরস্পর কথা বলতেই থাকলেন। আমি তৃতীয়বার আমার কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। তখন তারা বললেনঃ “এটা হচ্ছে নামায সম্পৰ্কীয় নির্দেশ যে, নামাযে ইমাম যখন কুরআন পাঠ করেন তখন মুকতাদীকে নীরব হয়ে শুনতে হবে। তাদেরকে পড়তে হবে না।” মুজাহিদ (রঃ) এবং আরও কয়েকজন বর্ণনাকারীও কুরআনের এই হুকুমের ব্যাপারে এ কথাই বলেন। তারা বলেন যে, কেউ যদি নামাযের মধ্যে না থাকে এবং কুরআন পাঠ হয় তবে তার কথা বলায় কোন দোষ নেই। যায়েদ ইবনে আসলামও (রঃ) এই ভাবই নিয়েছেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এই হুকুম নামায এবং জুমআর দিনের খাবার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এটা ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিত্র, জুমআর দিনের খুৎবা এবং জিহরী নামাযের সাথে সম্পর্কযুক্ত। জিহরী ছাড়া অন্য নামাযের সাথে এটা সম্পর্কযুক্ত নয়। ইবনে জারীরও (রঃ) এটাই অবলম্বন করেছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নামাযে ও খুৎবায় চুপ থাকা। আর এ হুকুমই হচ্ছে- তোমরা খুৎবায় ও ইমামের পিছনে নীরব থকি। হাদীসে হুবহু এই হুকুমই এসেছে। মুজাহিদ (রঃ) এটা খুবই খারাপ মনে করতেন যে, ইমাম যখন কোন ভয়ের বা রহমতের আয়াত পাঠ করেন তখন মুকতাদীরা কিছু বলতে শুরু করে দেয়। এটা ঠিক নয়, বরং মুকতাদীর উচিত হবে নীরব থাকা। ভয় এবং আশার আবেগে মুখে কোন কথা উচ্চারণ করা উচিত নয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআনের কোন আয়াত নীরব হয়ে শ্রবণ করে তার জন্যে দ্বিগুণ সওয়াব লিখা হয়। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে, কিয়ামতের দিন এই কুরআন তার জন্যে নূর বা আলো হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে ঐ সকল কাফেরদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যারা কুরআন তিলাঅতের সময় চেঁচামেচি করত এবং সঙ্গী-সাথীদের বলত, {لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ} অর্থাৎ, তোমরা কুরআন শোন না এবং হট্টগোল কর। (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:২৬) তাদেরকে বলা হল যে, এর পরিবর্তে তোমরা যদি মন দিয়ে শোন ও নীরব থাক, তাহলে হয়তো বা তোমাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করবেন এবং সেই সাথে তোমরা আল্লাহর দয়া ও রহমতের অধিকারী হয়ে যাবে। কোন কোন ইমাম এটিকে সাধারণ আদেশ বলে ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ, যখনই কুরআন পাঠ করা হবে; নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে তখনই সকলকেই নীরব থেকে কুরআন শ্রবণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই সাধারণ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সশব্দে ক্বিরাআত পড়া হয়, এমন সমস্ত নামাযে মুক্তাদীদের সূরা ফাতিহা পাঠ কুরআনের এই আদেশের পরিপন্থী বলেছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামদের মত হল, সশব্দে ক্বিরাআত পড়া হয়, এমন নামাযে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে নবী (সাঃ) তাকীদ করেছেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাঁদের নিকট এই আয়াত শুধুমাত্র কাফেরদের জন্য মনে করাই সঠিক। যেমন এই সূরার মক্কী হওয়ার মধ্যেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু যদি এটিকে সাধারণ আদেশ মেনে নেওয়া যায়, তবুও নবী (সাঃ) এই সাধারণ আদেশ হতে মুক্তাদীদেরকে আলাদা করে নিয়েছেন। আর এভাবে কুরআনের এই আদেশ সত্ত্বেও মুক্তাদীদের সশব্দে ক্বিরাআতবিশিষ্ট নামাযেও সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যিক হবে। কারণ কুরআনের এই সাধারণ আদেশ থেকে সূরা ফাতিহা পাঠ করার আদেশ সহীহ মজবূত হাদীস দ্বারা ব্যতিক্রান্ত। যেমন অন্য কিছু ক্ষেত্রে কুরআনের ব্যাপক আদেশকে সহীহ হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট করে নেওয়া স্বীকৃত। যেমন, (الزَّانِيَةُ والزَّانِي فَاجلِدُوا) এর ব্যাপক আদেশ হতে বিবাহিত ব্যভিচারীকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অনুরূপ (والسَّارِقُ وَالسَّارِقة) এর ব্যাপক আদেশ হতে এমন চোরকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যে দীনারের এক চতুর্থাংশের কম মাল চুরি করেছে অথবা চুরির মাল যথেষ্ট হিফাযতে ছিল না ইত্যাদি। অনুরূপ (فَاستَمِعُوا لَهُ وأَنصِتُوا) এর ব্যাপক আদেশ হতে মুক্তাদীদেরকে আলাদা বা নির্দিষ্ট করে নেওয়া হবে। সুতরাং তাদের সশব্দে ক্বিরাআত হয় এমন সকল নামাযেও সূরা ফাতিহা পাঠ করা জরুরী হবে। কারণ নবী (সাঃ) এর তাকীদ দিয়েছেন। যেমন সূরা ফাতিহার তফসীরে ঐ সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অর্থাৎ বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা ও হঠকারিতার কারনে তোমরা কুরআনের বানী শুনতেই যে কানে আঙুল দাও এবং নিজেরা না শুনার ও অন্যদের না শুনতে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে হৈ চৈ ও শোরগোল শুরু করে থাকো, এ নীতি পরিহার করো। বরং কুরআনের বাণী গভীর মনোযোগ সহকারে শোনো এবং তার শিক্ষা অনুধাবন করো। এর শিক্ষার সাথে পরিচিত হবার পর ঈমানদারদের মত তোমাদের নিজেদেরও এর রহমতের অংশীদার হয়ে যাওয়া কোন বিচিত্র ব্যাপার নয়। বিরোধীদের বিদ্রূপাত্মক বক্রোক্তির জবাবে এটি এমন একটি মার্জিত, মধুর ও হৃদয়গ্রাহী প্রচারনীতি, যার চমৎকারিত্ব বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। যে ব্যক্তি প্রচার কৌশল শিখতে চায়, গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এ জবাব থেকে সে তা শিখতে পারে। এ আয়াতের মূল উদ্দেশ্য তো আমি ওপরে বর্ণনা করেছি। কিন্তু পরোক্ষভাবে এ থেকে এ বিধানটিও পাওয়া যায় যে, যখন আল্লাহর কালাম পাঠ করা হয়, তখন লোকদের আদব সহকারে নীরব থাকা এবং মনোযোগ সহকারে তা শোনা উচিত। এ থেকে এ কথাটিও প্রমাণিত হয় যে, নামাযের মধ্যে ইমাম যখন কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন তখন মুকতাদীদের নীরবে তা শোনা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রা.) এবং তার সাথীদের মতে, ইমামদের ক্বেরাত উচ্চস্বরে হোক বা অনুচ্চ স্বরে হোক সব অবস্থায় মুকতাদীদের নীরব থাকতে হবে। ইমাম মালিক (র) ও ইমাম আহমদের (র) মতে, কেবলমাত্র ইমাম যখন উচ্চ স্বরে ক্বেরাত পড়বেন তখনই মুকতাদীদের নীরব থাকতে হবে। কিন্তু ইমাম শাফেঈ (র) বলেন, ইমামের উচ্চ ও অনুচ্চ স্বরে ক্বেরাত পড়ার উভয় অবস্থায়ই মুকতাদীদের ক্বেরাত পড়তে হবে। কারণ কোন কোন হাদীসের ভিত্তিতে তিনি মনে করেন, যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতেহা পড়ে না তার নামায হয় না।