Book#559

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٥٦) -৫৫৯
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
২০৫-২০৬ নং আয়াত:-
وَالاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِين
তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।
Be not of those who are neglectful.

وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ ﴿۲۰۵﴾

اِنَّ الَّذِیۡنَ عِنۡدَ رَبِّکَ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِہٖ وَ یُسَبِّحُوۡنَہٗ وَ لَہٗ یَسۡجُدُوۡنَ ﴿۲۰۶﴾٪ٛ
তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চসবরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।
নিশ্চয়ই যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে, তারা অহংকারে তাঁর উপাসনায় বিমুখ হয় না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট তারা সিজদাবনত হয়।

২০৫-২০৬ নং আয়াতের তাফসীরঃ

(بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ)

‘সকাল-সন্ধ্যায়’ অর্থাৎ দিনের প্রথম প্রহরে এবং দিনের শেষ প্রহরে তথা সকাল-সন্ধ্যায়। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ দু’ সময়ের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

(وَلَهُ يَسْجُدُوْنَ)

‘তাঁরই নিকট সিজ্দাবনত হয়।’ এটি কুরআনুল কারীমের প্রথম তিলাওয়াতে সিজদার আয়াত। কুরআনুল কারীমের সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে বা শুনলে তাকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তাকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এ সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালাম নেই।

তাকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন ইয়াসার, আবূ কিলাবা ও ইবনু সীরীন কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ২৬৯)

এ সিজদার অনেক ফযীলত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে: হায় ধ্বংস আমার! সে সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করল, ফলে ওর জন্য জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি ফলে আমার জন্য জাহান্নাম। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯৫)

তেলাওয়াতের সিজদার জন্য ওযূ শর্ত নয়। সতর ঢাকা থাকলে কেবলামুখী হয়ে এ সিজদাহ করা যায়। যেহেতু ওযূ শর্ত হবার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। (নাইনুল আওতার: ৪র্থ খণ্ড পৃঃ ১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ ১/১৯৬) তিলাওয়াতে সিজদায় পঠনীয় একাধিক সুন্নতী দু‘আ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল:

اللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللّٰهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সিজদা করলাম, তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি, তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি, আমার মুখমণ্ডল তার জন্য সিজদাবনত হল যিনি তা সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদ্গত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বরকতময়, সর্বত্তোম সৃষ্টিকারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৭৭১)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকার পদ্ধতি জানতে পারলাম।
* তিলাওয়াতের সিজদার বিধান ও নিয়ম জানলাম।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 205-206

وَالاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِين
Be not of those who are neglectful.

Remembering Allah in the Mornings and Afternoons

Allah says;
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَإِنَّكُمْ لَاا تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَاا غَايِبًا إِنَّ الَّذِي تَدْعُونَهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ عُنُقِ رَاحِلِته بِالْغُدُوِّ وَالاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ

in the mornings and in the afternoons, and be not of those who are neglectful.

These texts encourage the servants to invoke Allah in Dhikr often, especially in the mornings and afternoons, so that they are not among those who neglect remembering Him.

This is why Allah praised the angels who praise Him night and day without tiring,
إِنَّ الَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ

but they glorify His praise and prostrate themselves before Him.

Prostration, here, upon the mention that the angels prostrate to Allah is legitimate.

A Hadith reads;

أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلَيِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الاُْوَلَ فَالاُْوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِي الصَّف

Why not you stand in line (for the prayer) like the angels stand in line before their Lord! They continue the first then the next lines and they stand close to each other in line.

This is the first place in the Qur’an where it has been legitimized — according to the agreement of the scholars — for the readers of the Qur’an, and those listening to its recitation, to perform prostration.

This is the end of the Tafsir of Surah A’raf. All praise and gratitude is due to Allah, and Allah may He be glorified and exalted, knows best.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

২০৫-২০৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন- দিনের প্রথমভাগে এবং শেষ ভাগে আল্লাহকে খুব বেশী বেশী করে স্মরণ কর। যেমন তিনি এই দু’ আয়াতের মাধ্যমে এই দু’সময়ে তার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেনঃ সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং অনুরূপভাবে সূর্যাস্তের পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন কর। এটা শবে মিরাজে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার পূর্বের কথা। এটি মাক্কী আয়াত । গুদুল্লুন শব্দের অর্থ হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগ। আর (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহুবচন। যেমন (আরবী) শব্দের বহুবচন।

অতঃপর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে- তোমার প্রতিপালককে অন্তরেও স্মরণ কর এবং মুখেও স্মরণ কর। তাঁকে ডাকো জান্নাতের আশা রেখেও এবং জাহান্নামের ভয় করেও। উচ্চশব্দে তাকে ডেকো না। মুসতাহাব এটাই যে, আল্লাহর যিকির হবে নিম্ন স্বরে, উচ্চৈঃস্বরে নয়।

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জনগণ জিজ্ঞেস করেঃ “আল্লাহ আমাদের থেকে কাছে। রয়েছেন, না দূরে রয়েছেন? যদি তিনি নিকটে থাকেন তবে আমরা তাঁকে চুপে চুপে সম্বোধন করবো। আর যদি দূরে থাকেন তবে তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকবো।” তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে (আমি নিকটে আছি না দূরে আছি), তুমি তাদেরক বলে দাও আমি খুবই নিকটে রয়েছি। যখন তারা আমাকে ডাকে তখন আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি।

হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কোন এক সফরে জনগণ উচ্চশব্দে দুআ করতে শুরু করে। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “হে লোক সকল। নিজেদের জীবনের উপর দয়া প্রদর্শন কর। তোমরা কোন বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না । যাকে ডাকছো তিনি শুনতে রয়েছেন এবং তিনি নিকটে রয়েছেন। তিনি তোমাদের গ্রীবার শাহ্ রগ থেকেও নিকটে রয়েছেন।” এই আয়াতের ভাবার্থ নিম্নের আয়াতের মতও হতে পারে- “তোমরা দুআ ও নামায খুব উচ্চ শব্দেও পড়ো না এবং খুব নিম্ন শব্দেও না, বরং এর মাঝামাঝি শব্দে পড়।” কেননা, মুশরিকরা যখন কুরআন শুনতো তখন তারা কুরআনকে, কুরআন অবতীর্ণকারীকে এবং কুরআন আনয়নকারীকে ভালমন্দ বলতো। তখন আল্লাহ পাক নির্দেশ দান করলেনঃ তোমরা খুব উচ্চ শব্দে কুরআন পড়ো না যাতে মুশরিকরা কষ্ট না পায়। আবার এতো নিম্ন স্বরেও পড়ো না যে, তোমার সঙ্গীও শুনতে পায় না। এই আয়াতে কারীমায় এই বিষয়ই রয়েছে- তোমরা তোমাদের সকাল-সন্ধ্যার ইবাদতে উচ্চ স্বরে পড়ো না এবং মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেয়ো না। উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুরআনের শ্রোতাকে হুকুম দেয়া হবে যে, এই ঢঙ্গে নামায পড়া ও ইবাদত করা উচিত। এটা খুব দূরের কথা এবং এটা ধীরে পড়ার হুকুমের পরিপন্থী। আবার এর ভাবার্থ এটাও যে, এই হুকুম নামাযের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এটা নামায ও খুত্বার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এটা স্পষ্ট কথা যে, এরূপ সময়ে যিকির অপেক্ষা নীবর থাকাটাই উত্তম। এই যিকির উচ্চ স্বরেই হাক বা নিম্ন স্বরেই হাক। এ দু’জন যা বর্ণনা করেছেন তা অনুসৃত নয়। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দাদেরকে সকাল-সন্ধ্যা সব সময় অধিক যিকিরের কাজে উৎসাহিত ও উত্তেজিত করা। যেন তারা কোন অবস্থাতেই আল্লাহর যিকির থেকে বিস্মরণ না হয় এবং উদাসীন না থাকে। এ জন্যেই ঐসব ফেরেশতার প্রশংসা করা হয়েছে যারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকিরের কাজে ঔদাসীন্য প্রদর্শন করেন না। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা তোমার প্রভুর সান্নিধ্যে থাকে (অর্থাৎ ফেরেশতামণ্ডলী) তারা অহংকারে তার ইবাদত হতে বিমুখ হয় না। যেমন হাদীসে এসেছে“ফেরেশতারা যেমন আল্লাহর ইবাদতের জন্যে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে যান, তদ্রুপ তোমরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াও না কেন। প্রথম সারিওয়ালাদের অন্যান্য সারিওয়ালাদের উপর প্রাধান্য ও মর্যাদা রয়েছে। তাঁরা সারি বা কাতারকে সোজা করার প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন।” এখানে যে সিজদায়ে তিলাওয়াত রয়েছে এটা হচ্ছে কুরআনের সর্বপ্রথম সিজদায়ে তিলাওয়াত। এটা আদায় করা পাঠক ও শ্রোতা সবারই জন্যে শরীয়তসম্মত কাজ। এতে সমস্ত আলিম একমত । সুনানে ইবনে মাজাহ্র হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই সিজদাহূকে কুরআন কারীমের সিজদাহ্ সমূহের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] এটি কুরআন মাজীদের প্রথম তিলাঅতের সিজদার স্থান। কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালাম নেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ ২৬৯পৃঃ) এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (আহমাদ, মুসলিম ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ) তিলাঅতের সিজদার জন্য ওযূ শর্ত নয়। লজ্জাস্থান ঢাকা থাকলে ক্বিবলামুখে এই সিজদাহ করা যায়। যেহেতু ওযূ শর্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। (নাইলুল আউত্বার, আল-মুমতে’ ৪/১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ আরবী ১/১৯৬) তিলাঅতের সিজদায় একাধিকবার পঠনীয় সুন্নতী দু’আ হল, سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ অর্থাৎ, আমার মুখমন্ডল তাঁর জন্য সিজদাবনত হল যিনি ওকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। (আহমদ ৬/৩০, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী) বাইহাকীর বর্ণনায় (وَصَوَّرَه) হাকেমের বর্ণনায় এই শব্দগুলিও বাড়তি এসেছে فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ। (আওনুল মাবূদ ১/৫৩৩) -সম্পাদক

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
স্মরণ করা অর্থ নামাযও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনভাবেই তা হোক না কেন। সকাল-সাঁঝ বলতে নির্দিষ্টভাবে এ দু’টি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দুসময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে নামাযকে। পক্ষান্তরে সকাল-সাঁঝ কথাটা “সর্বক্ষণ” অর্থেও ব্যবহৃত হয় এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এ ভাষণটির উপসংহারে সর্বশেষ উপদেশ হিসেবে এটা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায় আল্লাহ‌ তার রব, সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ায় তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবন শেষ হবার পর তাকে তার রবের কাছে হিসেব দিতে হবে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজেও সঠিক পথে চলতে চায় এবং দুনিয়ার অন্যান্য মানুষকেও তদনুসারে চালাতে চায়, সে নিজে যেন কখনো এ ধরনের ভুল না করে, এ ব্যাপারে তাকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ জন্যই নামায ও আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে সব সময় স্থায়ীভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকার ও তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য বার বার তাকীদ করা হয়েছে।

* এর হচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করা ও রবের বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শয়তানের কাজ। এর ফলে হয় অধঃপতন ও অবনতি। পক্ষান্তরে তার আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড়া এবং তাঁর বন্দেগীতে অবিচল থাকা একটি ফেরেশতাসুলভ কাজ। এর ফল হয় উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যদি তোমরা এ উন্নতি চাও, তাহলে নিজেদের কর্মনীতিকে শয়তানের পরিবর্তে ফেরেশতাদের কর্মনীতির অনুরূপ করে গড়ে তোল।

* মহিমা ঘোষণা করে অর্থাৎ আল্লাহ‌ যে ত্রুটিমুক্ত, দোষমুক্ত, ভুলমুক্ত সব ধরনের দুর্বলতা থেকে তিনি যে একেবারেই পাক-পবিত্র এবং তিনি যে লা-শরীক, তুলনাহীন ও অপ্রতিদ্বন্দ্বি, এ বিষয়টি সর্বান্তকরণে মেনে নেয়। মুখে তার স্বীকৃতি দেয় ও অঙ্গীকার করে এবং স্থায়ী ভাবে সবসময় এর প্রচার ও ঘোষনায় সোচ্চার থাকে।

* এক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান এই যে, যে ব্যক্তি এ আয়াতটি পড়বে বা শুনবে তাকে সিজদা করতে হবে। এভাবে তার অবস্থা হয়ে যাবে আল্লাহর নিকটতম ফেরেশতাদের মত। এভাবে সারা বিশ্বজাহানের ব্যবস্থাপনা পরিচালনাকারী কর্মীরা যে মহান আল্লাহর সামনে নত হয়ে আছে, তারাও তাদের সাথে তাঁর সামনে নত হয়ে যাবে এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গেই একথা প্রমাণ করে দেবে যে, তারা কোন অহমিকায় ভোগে না এবং আল্লাহর বান্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াও তাদের স্বভাব নয়।

কুরআন মজীদে চৌদ্দটি স্থানে সিজদার আয়াত এসেছে। এ আয়াতগুলো পড়লে বা শুনলে সিজদা করতে হবে, এটি ইসলামী শরীয়াতের একটি বিধিবদ্ধ বিষয়, এ ব্যাপারে সবাই একমত। তবে এ সিজদা ওয়াজিব হবার ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (র) তেলাওয়াতে সিজদাকে ওয়াজিব বলেন। অন্যান্য উলামা বলেন, এটি সুন্নত। নবী ﷺ অনেক সময় একটি বড় সমাবেশ কুরআনে পড়তেন এবং সেখানে সিজদার আয়াত এলে তিনি নিজে তৎক্ষণাৎ সিজদা করতেন এবং সাহাবীগণ এর যিনি যেখানে থাকতেন তিনি সেখানেই সিজদাবনত হতেন। এমনকি কেউ কেউ সিজদা করার জায়গা না পেয়ে নিজের সামনের ব্যক্তির পিঠের ওপর সিজদা করতেন। হাদীসে একথাও এসেছে, মক্কা বিজয়ের সময় তিনি কুরআন পড়েন। সেখানে সিজদার আয়াত এলে যারা মাটির ওপর দাঁড়িয়েছিলেন তারা মাটিতে সিজদা করেন এবং যারা ঘোড়ার ও উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন তারা নিজেদের বাহনের পিঠেই ঝুঁকে পড়েন। কখনো নবী (সা.) খুতবার মধ্যে সিজদার আয়াত পড়তেন, তখন মিম্বার থেকে নেমে সিজদা করতেন তারপর আবার মিম্বারের ওপর উঠে খুতবা দিতেন।

অধিকাংশ আলেমের মতে নামাযের জন্য যেসব শর্ত নির্ধারিত, এ তেলাওয়াতের সিজদার জন্যও তাই নির্ধারিত। অর্থাৎ অযুসহকারে কিবলার দিকে মুখ করে নামাযের সিজদার মত করে মাটিতে মাথা ঠেকাতে হবে। কিন্তু তেলাওয়াতের সিজদার অধ্যায়ে আমরা যতগুলো হাদীস পেয়েছি সেখানে কোথাও এ শর্তগুলোর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। সেখান থেকে তো একথাই জানা যায় যে, সিজদার আয়াত শুনে যে ব্যক্তি যেখানে যে অবস্থায় থাকে, সে অবস্থায়ই যেন সিজদা করে-তার অযু থাক বা না থাক, কিবলামুখী হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হোক বা না হোক, মাটিতে মাথা রাখার সুযোগ পাক বা না পাক তাতে কিছু আসে যায় না। প্রথম যুগের আলেমদের মধ্যেও আমরা এমন অনেক লোক দেখি যারা এভাবেই তেলাওয়াতের সিজদা করেছেন। ইমাম বুখারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি অযু ছাড়াই তেলাওয়াতের সিজদা করতেন। ফাতহুল বারীতে আবু আবদুর রহমান সুলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি পথ চলতে কুরআন মজীদ পড়তেন এবং কোথাও সিজদার আয়াত এলেই মাথা ঝুঁকিয়ে নিতেন। অযু সহকারে থাকুন বা থাকুন এবং কিবলার দিকে মুখ ফিরানো থাক বা না থাক, তার পরোয়া করতেন না। এসব কারণে আমি মনে করি, যদিও অধিকাংশ আলেমের মতটিই অধিকতর সতর্কতামূলক তবুও কোন ব্যক্তি যদি অধিকাংশ আলেমের মতের বিপরীত আমল করে, তাহলে তাকে তিরস্কার করা যেতে পারে না। কারণ অধিকাংশ আলেমের মতের স্বপক্ষে কোন প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত নেই। আবার প্রথম দিকের আলেমদের মধ্যে এমনসব লোকও পাওয়া গেছে, যাদের রীতি ছিল পরবর্তীকালের অধিকাংশ আলেমদের থেকে ভিন্নতর।

Leave a Reply