Book#566

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٦٣)-৫৬৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
১৭-১৮ নং আয়াত:-

فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَـكِنَّ اللّهَ قَتَلَهُمْ
তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন.
You killed them not, but Allah killed them.

فَلَمۡ تَقۡتُلُوۡہُمۡ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ قَتَلَہُمۡ ۪ وَ مَا رَمَیۡتَ اِذۡ رَمَیۡتَ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ رَمٰی ۚ وَ لِیُبۡلِیَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ مِنۡہُ بَلَآءً حَسَنًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۷﴾
ذٰلِکُمۡ وَ اَنَّ اللّٰہَ مُوۡہِنُ کَیۡدِ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۱۸﴾

তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। এবং তুমি যখন (মাটি) নিক্ষেপ করেছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ করনি, বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। যাতে তিনি বিশ্বাসীগণকে নিজের তরফ হতে উত্তমরূপে পরীক্ষা (করে পুরস্কৃত) করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।
এ তো ছিলই। আর নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসীদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করে থাকেন।

১৭-১৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরার পর বলছেন: ইতোপূর্বে তোমরা যে সকল কাফিরদেরকে হত্যা করেছো এবং যুদ্ধের ময়দানে তীর নিক্ষেপ করেছো মূলত তোমরা হত্যা করনি এবং তোমরা নিক্ষেপও করনি আমিই সব করেছি। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সবকাজে মু’মিনদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ ج فَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ)

“আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা স্বল্প ছিলে; অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১২৩)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ لا وَّيَوْمَ حُنَيْنٍ لا إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَّضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِيْنَ)‏

“নিশ্চয়ই‎ আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য; কিন্তু সেটা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল ও পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।”(সূরা তাওবাহ ৯:২৫)

বদর প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাউনির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু’আ করে সেখান হতে বাইরে আসলেন। তিনি লৌহ বর্ম পরিহিত ছিলেন। পূর্ণ উদ্যমে তিনি সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং মুখে উচ্চারণ করছিলেন:

(سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ)

“ঐ দল শ্রীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে”(সূরা কামার ৫৪:৪৫)

তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক মুষ্টি পাথুরে মাটি নিলেন এবং কুরাইশদের দিকে মুখ করে বললেন:

شَاهَتِ الوُجُوْهُ

‘চেহারাগুলো বিকৃত হোক’। আর এ কথা বলার সাথে সাথেই ঐ মাটি তাদের চেহারার দিকে নিক্ষেপ করলেন। তারপর মুশরিকদের মধ্যে এমন কেউই ছিল না যার চক্ষুদ্বয়ে, নাসারন্ধ্রে ও মুখে ঐ এক মুষ্টি মাটির কিছু না কিছু যায়নি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ رَمٰي)

“এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ করনি, আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।”

এসব দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের পরীক্ষা করতে চান, তাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করতে এবং তাঁর নেয়ামত রাজি তাদের সামনে তুলে ধরতে চান যাতে তারা আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করে। অতএব মু’মিনদের সকল অবস্থাই কল্যাণকর। তাই সর্বাবস্থায় মু’মিনদের আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুসলিমদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে।
২. মুসলিমদেরকে আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করেন তাদেরকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য।
৩. সাহাবীদের মত ঈমান আমল থাকলে এখনো আমরা আল্লাহ তা‘আলার সার্বিক সহযোগিতা পাব ইনশা-আল্লাহ।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 17-18
فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَـكِنَّ اللّهَ قَتَلَهُمْ

You killed them not, but Allah killed them.

Allah’s Signs displayed during Badr, And throwing Sand in the Eyes of the Disbelievers

Allah states that He creates the actions that the servants perform and that whatever good actions they take, it is He Who should be praised for them, for He directed and helped them perform these actions.

Allah said,

فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَـكِنَّ اللّهَ قَتَلَهُمْ

You killed them not, but Allah killed them.

meaning, it is not because of your power and strength that you killed the pagans, who were many while you were few. Rather, it is He Who gave you victory over them, just as He said in another Ayah,

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ

And Allah has already made you victorious at Badr, when you were a weak little force. (3:123)

and,

لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِى مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْياً وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الَارْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ

Truly, Allah has given you victory on many battlefields, and on the day of Hunayn when you rejoiced at your great number, but it availed you naught and the earth, vast as it is, was straitened for you, then you turned back in flight. (9:25)

Allah, the Exalted and Ever High, states that victory does not depend on numbers or collecting weapons and shields. Rather, victory is from Him, Exalted He is.

كَم مِّن فِيَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِيَةٍ كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّـبِرِينَ

How often has a small group overcome a mighty host by Allah’s leave!” And Allah is with the patient. (2:249)

Allah then mentioned the handful of sand that His Prophet threw at the disbelievers during the day of Badr, when he went out of his bunker. While in the bunker, the Prophet invoked Allah humbly and expressing his neediness before Allah. He then threw a handful of sand at the disbelievers and said,
شَاهَتِ الْوُجُوه
(Humiliated be their faces).

He then commanded his Companions to start fighting with sincerity and they did. Allah made this handful of sand enter the eyes of the idolators, each one of them were struck by some of it and it distracted them making each of them busy.

Allah said,

وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـكِنَّ اللّهَ رَمَى

And you threw not when you did throw, but Allah threw.

Therefore, it is Allah Who made the sand reach their eyes and busied them with it, not you (O Muhammad).

وَلِيُبْلِيَ الْمُوْمِنِينَ مِنْهُ بَلء حَسَناً

that He might test the believers by a fair trial from Him.

Muhammad bin Ishaq said that Muhammad bin Jafar bin Az-Zubayr narrated to him that Urwah bin Az-Zubayr said;

“So that the believers know Allah’s favor for them by giving them victory over their enemy, even though their enemy was numerous, while they were few. They should thus know His right and express gratitude for His favor on them.”

Similar was said by Ibn Jarir.

It is stated in a Hadith,

وَكُلَّ بَلَءٍ حَسَنٍ أَبْلَنَا

Every trial (from Allah) is a favor for us.

Allah said next,

إِنَّ اللّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

Verily, Allah is All-Hearer, All-Knower.

Allah hears the supplication and knows those who deserve help and triumph.

Allah said,

ذَلِكُمْ وَأَنَّ اللّهَ مُوهِنُ كَيْدِ الْكَافِرِينَ

This (is the fact) and surely Allah weakens the deceitful plots of the disbelievers.

This is more good news, aside from the victory that the believers gained. Allah informed them that He will weaken the plots of the disbelievers in the future, degrade them and make everything they have perish and be destroyed, all praise and thanks are due to Allah.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
১৭-১৮ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে এই কথার উপর আলোকপাত করা হচ্ছে যে, বান্দাদের কার্যাবলীর সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। যে সৎ কাজ বান্দা হতে প্রকাশিত হয় তা আল্লাহই সৎ বানিয়ে থাকেন। কেননা, সেই কাজ করার ক্ষমতা তিনিই প্রদান করেছেন। ঐ কাজ করার সাহস ও শক্তি তিনিই যুগিয়েছেন। এ জন্যেই ইরশাদ হচ্ছে- ঐ কাফিরদেরকে তোমরা হত্যা করনি, বরং আল্লাহই হত্যা করেছেন। তোমাদের এ শক্তি কি করে হতো যে, তোমাদের সংখ্যা এতো কম হওয়া সত্ত্বেও তোমরা এতো অধিক সংখ্যক শত্রুকে পরাজিত করে দিলে? এই সফলতা আল্লাহই তোমাদেরকে প্রদান করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “বদরে তোমাদের সংখ্যা কম থাকা অবস্থাতেও আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন (এবং শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করেছেন)।” (৩:১২৩) আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ অধিকাংশ স্থানে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন, হুনায়েনের যুদ্ধের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে অহংকারী করেছিল, কিন্তু ঐ সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনই উপকারে আসেনি, যমীন এতো প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের উপর তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল এবং তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।” (৯:২৫) আল্লাহ জানেন যে, যুদ্ধে বিজয় লাভ ও সফলতা সংখ্যাধিক্যের উপর নির্ভর করে না এবং অস্ত্রশস্ত্রের প্রাচুর্যের উপরও নয়। বরং কৃতকার্যতা ও সফলতা আল্লাহর পক্ষ থেকেই লাভ হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ(আরবী) অর্থাৎ “অনেক সময় এরূপ ঘটে থাকে যে, ছোট দল বৃহৎ দলের উপর জয়যুক্ত হয়।” (২৪ ২৪৯)।

(আরবী) ঐ মুষ্টিপূর্ণ মাটি সম্পর্কে আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেছেন যে মাটি তিনি বদরের যুদ্ধে কাফিরদের মুখের উপর নিক্ষেপ করেছিলেন। ঘটনা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যুদ্ধক্ষেত্রের কুটির থেকে বেরিয়ে এসে অত্যন্ত বিনীতভাবে আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তিনি এক মুষ্টি মাটি কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “তোমাদের চেহারা নষ্ট হাক।” তারপর তিনি সাহাবীদেরকে মুশরিকদের উপর হামলা করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর হুকুমে এই মাটি ও কংকর মুশরিকদের চোখে গিয়ে পড়ে। এমন কেউ অবশিষ্ট থাকলো না যার চোখে তা পড়েনি এবং তাকে যুদ্ধ করতে অপারগ করেনি। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যখন তুমি (ধুলাবালি) নিক্ষেপ করছিলে তখন প্রকৃতপক্ষে তুমি তা নিক্ষেপ করনি, বরং আল্লাহই তা নিক্ষেপ করেছিলেন।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরের দিন স্বীয় হাত দুটি উঠিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে আল্লাহ! যদি এই মুষ্টিপূর্ণ লোকগুলো মরে যায় তবে আপনার নাম নেয়ার আর কে থাকবে?” তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার কাছে হাযির হয়ে বললেনঃ “মুষ্টিপূর্ণ মাটি এই কাফিরদের প্রতি নিক্ষেপ করুন!” তিনি ঐরূপই করেন। এর ফলে কাফিরদের নাক, মুখ ও চোখ মাটিতে ভরে যায় এবং তারা ঐ ধূলিঝড়ে আতংকিত হয়ে পশ্চাদপদে পালিয়ে যায়। এইভাবে তাদের পরাজয় ঘটে। মুসলমানরা তাদেরকে হত্যা করতে করতে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং বন্দী করে ফেলেন। কাফিরদের এই পরাজয় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুজিযার কারণেই ঘটেছিল।

আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনটি কংকর নিয়েছিলেন। একটি তিনি সামনে নিক্ষেপ করেছিলেন, একটি নিক্ষেপ করেছিলেন শত্রুদের ডান দিকে এবং একটি বাম দিকে। এটা হচ্ছে বদরের দিনের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরূপ কাজ হুনায়েনের যুদ্ধেও করেছিলেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের দিন আমরা আকাশ থেকে একটা শব্দ পতিত হতে শুনতে পাই, মনে হচ্ছিল যেন ওটা থালায় কংকর পতনের শব্দ। ওটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুষ্টি হতে কংকর নিক্ষেপের শব্দ। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের পরাজয় ঘটে।” এখানে আরো দু’টি উক্তি রয়েছে যা অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল। উক্তি দু’টি নিম্নে দেয়া হলোঃ

(১) আব্দুর রহমান ইবনে জুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি কামান আনতে বলেন। কামানটি ছিল খুবই লম্বা। অতঃপর তিনি আরেকটি কামান আনবার নির্দেশ দেন। তখন অন্য একটি কামান আনয়ন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওটার মাধ্যমে দুর্গের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করেন । তীরটি ঘুরতে ঘুরতে চললো এবং গোত্রপতি ইবনে আবি হাকীকের গায়ে লেগে গেল। সেই সময় সে দুর্গের মধ্যে বিছানায় শায়িত ছিল। এটাকে ভিত্তি করেই আল্লাহ পাক…(আরবী)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। এ হাদীসটি অতি দুর্বল। হয়তো বর্ণনাকারী সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছেন, অথবা ভাবার্থ এই যে, এই আয়াতটি সাধারণ এবং এই ঘটনাটিও এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তা না হলে এটা তো স্পষ্ট কথা যে, সূরা আনফালের এ আয়াতটির মধ্যে বদরের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। তাহলে এই ঘটনাটি ঐ বদর যুদ্ধের ঘটনাই হবে। আর এটা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার কথা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন।

(২) সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) এবং যুহরী (রঃ) বলেন যে, উহুদ যুদ্ধের দিন উবাই ইবনে খালফকে লক্ষ্য করে নবী (সঃ) একটি বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন। লোকটি লৌহবর্ম পরিহিত ছিল। কিন্তু বর্শা ফলকটি তার তালুতে বিধে যায় এবং এর ফলে সে অশ্বপৃষ্ঠ হতে পড়ে যায়। এর কয়েকদিন পরেই সে ঐ ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে মারা যায়। সে এই পার্থিক শাস্তি ছাড়াও পারলৌকিক শাস্তিরও যোগ্য হয়ে গেল। এই দুই ইমাম হতে এ ধরনের বর্ণনা খুবই গরীব বা দুর্বল। সম্ভবতঃ এই দুই মনীষীর উদ্দেশ্য এই হবে যে, আয়াতটি সাধারণ, কোন নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে এটা সম্পর্কযুক্তই নয়। বরং প্রত্যেক ঘটনাই এই আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।

(আরবী) অর্থাৎ যেন মুমিনরা আল্লাহর এই নিয়ামত সম্পর্কে অবহিত হয় যে, শত্রুদের সংখ্যা তাদের চেয়ে বহু বেশী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাদেরকে শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করলেন এবং এরপর হয়তো তারা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। হাদীসে রয়েছে- “আল্লাহ আমাদেরকে উত্তমরূপে পরীক্ষা করেছেন।”

(আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ (প্রার্থনা) শ্রবণকারী এবং (কে তাঁর সাহায্য পাওয়ার যোগ্য এবং কে নয় এ) সবকিছু জানেন। (আরবী) আর এমনিভাবেই আল্লাহ কাফিরদের চক্রান্ত দুর্বল ও নস্যাকারী। এটা হচ্ছে সাহায্য লাভের দ্বিতীয় সুসংবাদ। আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি কাফিরদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থতায় পর্যবসিতকারী। আর ভবিষ্যতেও তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং ধ্বংস করে দিবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ, বদর যুদ্ধের সকল অবস্থা তোমার সামনে তুলে ধরা হল, আর যেভাবে আল্লাহ তোমার সাহায্য করেছেন তাও। এসব স্পষ্ট করে দেওয়ার পর যেন তুমি এটা না ভাব যে, কাফেরদেরকে হত্যা করা তোমার কৃতিত্ব। না, বরং তা আল্লাহর সাহায্যের ফল। যার ফলে তুমি এই শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছ। সত্যিকার তাদের হত্যাকারী মহান আল্লাহই।

 

[২] বদর যুদ্ধে নবী (সাঃ) এক মুঠি বালি নিয়ে কাফেরদের দিকে ছুঁড়ে মেরেছিলেন; যা প্রথমতঃ মহান আল্লাহ তাদের মুখ ও চোখ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়তঃ এর মধ্যে এমন প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন, যার ফলে তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায় ও তারা কিছুই দেখতে পায় না। এই মু’জিযা যা আল্লাহর তরফ থেকে সেই সময় প্রকাশ পায়, তা মুসলিমদের বিজয়ে বিরাট সহযোগিতা করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! ধুলোবালি তুমি অবশ্যই তাদের দিকে নিক্ষেপ করেছিলে। কিন্তু ওর মধ্যে প্রভাব আমিই সৃষ্টি করেছিলাম, আমি প্রভাব সৃষ্টি না করলে এই ধুলো-বালি কি করতে পারত? এতএব এ কাজ সত্যিকারে আমার, নাকি তোমার?’

 

[৩] بلاء এখানে পুরস্কারের অর্থে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর এই সমর্থন ও সাহায্য মুসলিমদের জন্য একটি উত্তম পুরস্কার ছিল।

* দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, কাফেরদের চক্রান্ত দুর্বল ও নস্যাৎ করে দেওয়া।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

বদরের যুদ্ধে যখন মুসলমান ও কাফেরদের সেনাদল ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি হলো এবং আঘাত-পাল্টা আঘাতের সময় এসে গেলো তখন নবী (সা.) এক মুঠো বালি হাতে নিয়েشَاهَتِ الْوُجُوهُ (শত্রুদলের চেহারাগুলো বিগড়ে যাক) বলে কাফেরদের দিকে ছুড়ে দিলেন। এই সঙ্গে তার ইঙ্গিতে মুসলমানরা অকস্মাৎ কাফেরদের ওপর আক্রমণ করলো। এখানে এ ঘটনাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

Leave a Reply