أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٦٥)-৫৬৮
www.motaher21.net
সুরা: আল্ – আনফাল।
সুরা:৮
২০-২৩ নং আয়াত:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর,
O you who believe! Obey Allah and His Messenger,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ وَ لَا تَوَلَّوۡا عَنۡہُ وَ اَنۡتُمۡ تَسۡمَعُوۡنَ ﴿ۚۖ۲۰﴾
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ ہُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۱﴾
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰہِ الصُّمُّ الۡبُکۡمُ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۲﴾
وَ لَوۡ عَلِمَ اللّٰہُ فِیۡہِمۡ خَیۡرًا لَّاَسۡمَعَہُمۡ ؕ وَ لَوۡ اَسۡمَعَہُمۡ لَتَوَلَّوۡا وَّ ہُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ ﴿۲۳﴾
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং (তার কথা) শ্রবণ করার পরেও তার (আনুগত্য) হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে, ‘শ্রবণ করলাম’ অথচ তারা শ্রবণ করে না।
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব কালা ও বোবা; যারা কিছুই বোঝে না।
আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে ভাল কিছু জানতেন, তাহলে তিনি তাদেরকে শোনাতেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে শোনালেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফেরাত।
২০-২৩ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে তাঁর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর ঐ সব জাতির মত হতে নিষেধ করেছেন যারা শুনেও শুনে না। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যারা সত্য শুনে না এবং সত্য প্রকাশও করে না তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا كَمَثَلِ الَّذِيْ يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَا۬ٓءً وَّنِدَا۬ٓءً ط صُمٌّۭ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ)
“আর যারা কুফরী করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায় যাদেরকে কেউ আহ্বান করলে শুধু চিৎকার ও শব্দ ব্যতীত আর কিছুই শুনে না। তারা বধির, বোবা, অন্ধ। কাজেই তারা বুঝতে পারে না।”(সূরা বাক্বারাহ ২:১৭১)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ز ﺻﻠﮯ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا ط أُولٰ۬ئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ط أُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ)
“আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না, এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করে না, তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফিল।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১৭৯) এ আয়াত সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তারা হচ্ছে বানী আবুদ দারর গোষ্ঠীর একটি দল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৬) তবে এরূপ আচরণ যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তাদের সকলের জন্য তা প্রযোজ্য।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবগত করেন: তাদের সঠিক বুঝ নেই এবং সঠিকটা বুঝার ইচ্ছাও নেই। যদি থাকত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিদায়াতের জন্য কুরআনের বাণী শুনাতেন।
সুতরাং সদা-সর্বদা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে হবে, আনুগত্যের নামে প্রহসন করা যাবে না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সর্বদা ও সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের আনুগত্য করা ফরয।
২. কাফির মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
৩. কিছু মানুষ রয়েছে তারা চতুষ্পদ জন্তু থেকেও নিকৃষ্ট।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 20-23
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ
O you who believe! Obey Allah and His Messenger,
The Command to obey Allah and His Messenger
Allah says;
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ
O you who believe! Obey Allah and His Messenger,
Allah commands His believing servants to obey Him and His Messenger and warns them against defying him and imitating the disbelievers who reject him.
Allah said,
وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ
and turn not away from him…,
neither refrain from obeying him or following his commands nor indulge in what he forbade,
وَأَنتُمْ تَسْمَعُونَ
while you are hearing.
after you gained knowledge of his Message,
وَلَا تَكُونُواْ كَالَّذِينَ قَالُوا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ
And be not like those who say:”We have heard,” but they hear not.
Ibn Ishaq said that;
this Ayah refers to the hypocrites, who pretend to hear and obey, while in fact they do neither.
Allah declares that these are the most wicked creatures among the Children of Adam.
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابَّ عِندَ اللّهِ الصُّمُّ
Verily, the worst of living creatures with Allah are the deaf,
who do not hear the truth,
الْبُكْمُ
and the dumb,
who cannot comprehend it,
الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
who understand not.
These indeed are the most wicked creatures, for every creature except them abide by the way that Allah created in them. These people were created to worship Allah, but instead disbelieved.
This is why Allah equated them to animals, when He said,
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُواْ كَمَثَلِ الَّذِى يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلاَّ دُعَأءً وَنِدَاءً
And the example of those who disbelieve is as that of him who shouts to those that hear nothing but calls and cries. (2:171)
and,
أُوْلَـيِكَ كَالَانْعَـمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـيِكَ هُمُ الْغَـفِلُونَ
They are like cattle, nay even more astray; those! They are the heedless ones. (7:179)
It was also said that;
the Ayah (8:22) refers to some of the pagans of Quraysh from the tribe of Bani `Abd Ad-Dar, according to Ibn Abbas, Mujahid and Ibn Jarir.
Muhammad bin Ishaq said that;
this Ayah refers to hypocrites, as we stated.
There is no contradiction here, because both disbelievers and hypocrites are devoid of sound comprehension, in addition to having lost the intention to do good.
Allah states here that such are those who neither have sound understanding nor good intentions, even if they have some type of reason.
وَلَوْ عَلِمَ اللّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لاَّسْمَعَهُمْ
Had Allah known of any good in them, He would indeed have made them listen.
He would have helped them understand. However, this did not happen because there is no goodness in such people, for Allah knows that,
وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ
even if He had made them listen…
and allowed them to understand,
لَتَوَلَّواْ
they would but have turned…,
intentionally and out of stubbornness, even after they comprehend,
وَّهُم مُّعْرِضُونَ
with aversion, (to the truth).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
২০-২৩ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করার এবং বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আর তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন না করে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমরা তাঁর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।
(আরবী) অর্থাৎ অথচ তোমরা জানছো যে, নবী (সঃ) তোমাদেরকে কোন্ কথার দিকে আহ্বান করছেন। আর তোমরা ঐ লোকদের মত হয়ো না যারা বলে আমরা আপনার কথা শুনলাম, অথচ কার্যতঃ তারা কিছুই শোনে না। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। তাদের রীতিনীতি এই ছিল যে, তারা মুখে বলতো- আমরা শুনলাম ও কবুল করলাম । কিন্তু আসলে তারা কিছুই শুনতো না।
এরপর জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই প্রকারের আদম সন্তানরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম জীব। চতুষ্পদ জন্তু ও প্রাণীদের মধ্যে ওরাই হচ্ছে নিকৃষ্টতম যারা সত্য কথা শোনার ব্যাপারে বধির ও সত্য কথা বলার ব্যাপারে মূক। তারা কোন জ্ঞানই রাখে না। কেননা, তারা সত্য কথা মোটেই বুঝে না। এরা নিকৃষ্টতম প্রাণী, এরাই কাফির। চতুষ্পদ জন্তু যে প্রকৃতিতে সৃষ্ট হয়েছে ওরা ঐ ভাবেই চলাফেরা করে, কাজেই তারা যেন আল্লাহর অনুগত। কিন্তু মানুষ তো প্রকৃতিগতভাবে ইবাদতের জন্যে সৃষ্ট হয়েছে, অথচ তারা কুফরী করতে রয়েছে। অতএব প্রকৃতির বিপরীতরূপে চলার কারণে তারা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এ জন্যেই তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “কাফিরদের দৃষ্টান্ত ঐ জানোয়ারগুলোর মত যারা আহ্বানকারীদের উদ্দেশ্য কিছুই বুঝে না, শুধু শব্দ শুনে থাকে।” আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “বরং এই কাফিররা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট, এরাই হচ্ছে সীমাহীন গাফেল।” বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা কুরায়েশের বানু আবদিদ দারের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারো কারো ধারণায় এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফিকরা। কিন্তু মুশরিক ও মুনাফিকদের পার্থক্য কিছুই নেই। কেননা, এই দু’দলই হচ্ছে জ্ঞানবিবেকহীন লোক। ভাল কাজ করার মত কোন যোগ্যতাই তাদের মধ্যে নেই। এরপর ইরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কল্যাণকর কিছু নিহিত রয়েছে তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনবার (ও বুঝবার) তাওফীক দিতেন।” অন্তর্নিহিত কথা এই যে, যেহেতু তাদের মধ্যে কোন মঙ্গলই নিহিত নেই সেহেতু তারা কিছুই বুঝে না। আর যদি মহান আল্লাহ তাদেরকে শুনানও তবুও এই হতভাগারা সরল সোজা পথ অবলম্বন করবে না বরং তখনো তারা উপেক্ষা করতঃ মুখ ফিরিয়ে নিবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
অর্থাৎ, শোনার পরও আমল না করা, এটি কাফেরদের অভ্যাস। এই শ্রেণীর অভ্যাস থেকে তোমরা বিরত থাক। পরবর্তী আয়াতে তাদেরকে কালা, বোবা, বিবেকহীন ও নিকৃষ্টতম জীব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। دَوَاب শব্দটি دَابَّة এর বহুবচন। পৃথিবীতে চলাফেরা করে এ রকম প্রত্যেক জীবকেই دابة বলা হয়। এখানে সৃষ্টিজগতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, এরা সকল জীব হতে নিকৃষ্ট, যারা সত্যের ব্যাপারে কালা, বোবা ও বিবেকহীন।
* এই কথাটিকেই কুরআনের অন্যত্র এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।{لَهُمْ قُلُوبٌ لاَّ يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُونَ بِهَا أُوْلَئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ} অর্থাৎ, তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দর্শন করে না এবং তাদের কর্ণ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবণ করে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত! তারাই হল উদাসীন। (সূরা আ’রাফ ৭:১৭৯ আয়াত)
* অর্থাৎ, তাদের শোনাকে ফলপ্রসূ করে তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করতেন, যাতে তারা সত্য গ্রহণ করে নিত। কিন্তু যেহেতু তাদের মধ্যে কল্যাণ অর্থাৎ, সত্যের সন্ধানই নেই, সেহেতু তারা সঠিক বুঝ হতে বঞ্চিত।
* প্রথম শোনা হতে লাভদায়ক শোনা (অর্থাৎ, মানা), আর দ্বিতীয় শোনা হতে কেবল সাধারণ শোনা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ যদি সত্য কথা শুনিয়েও থাকেন, তবুও যেহেতু তাদের মধ্যে সত্যের অনুসন্ধান নেই, সেহেতু তারা পুনরায় তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে শোনা বলতে এমন শোনা বুঝায়, যা মেনে নেয়া ও গ্রহণ করা অর্থ প্রকাশ করে। যেসব মুনাফীক ঈমানের কথা মুখে বলতো কিন্তু আল্লাহর হুকুম মেনে চলতো না এবং তার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো তাদের দিকেই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
* যারা সত্য কথা শোনেও না। সত্য কথা বলেও না। যাদের কান ও মুখ সত্যের ব্যাপারে বধির ও বোবা।
* যখন তাদের মধ্যে সত্যপ্রিয়তা ও সত্যের জন্য কাজ করার আবেগ ও প্রেরণা নেই, তখন তাদের যদি আদেশ পালন করার জন্য যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করাও হতো, তাহলেও তারা এ আসন্ন বিপদ দেখেই অবলীলাক্রমে পালিয়ে যেতো। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গ তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবার পরিবর্তে ক্ষতিকর প্রমাণিত হতো।