Book#569

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٦٦)-৫৬৯
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
২৪ নং আয়াত:-
إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُم
তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে,
When he (the Messenger) calls you to that which will give you life,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَجِیۡبُوۡا لِلّٰہِ وَ لِلرَّسُوۡلِ اِذَا دَعَاکُمۡ لِمَا یُحۡیِیۡکُمۡ ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ یَحُوۡلُ بَیۡنَ الۡمَرۡءِ وَ قَلۡبِہٖ وَ اَنَّہٗۤ اِلَیۡہِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۲۴﴾
হে বিশ্বাসীগণ! রসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দাও এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ পাক বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমাদেরই সংশোধনের উদ্দেশ্যে যখন নবী (সঃ) তোমাদেরকে আহ্বান করেন তখন তোমরা অতিসত্বর সাড়া দাও এবং হুকুম পালন কর। আবু সাঈদ ইবনে মাআ’ল্লা (রাঃ) বলেন, আমি একদা নামায পড়ছিলাম, এমন সময় নবী (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। তিনি আমাকে ডাক দেন, কিন্তু আমি নামাযে থাকায় সাথে সাথে তাঁর কাছে যেতে পারলাম না। নামায শেষে তাঁর কাছে পৌছলে তিনি আমাকে বলেন, তুমি এতক্ষণ আসনি কেন? আল্লাহ কি তোমাদেরকে বলেননি- “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর হুকুম পালন কর যখন রাসূল (সঃ) তোমাদেরকে তোমাদের জীবন সঞ্চারক বস্তুর দিকে আহ্বান করে?” অতঃপর তিনি আমাকে বলেনঃ “আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পূর্বে তোমাকে কুরআনের একটি মহা সম্মানিত সূরা শিখিয়ে দেবো।” এর পর তিনি যাওয়ার উদ্যোগ করলে আমি তাঁকে ঐ কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম।” মোটকথা, এখানে আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর নির্দেশ সত্বর পালনের হুকুম দেয়া হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এটা হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন যে, ঐ সূরাটি হচ্ছে সূরায়ে ফাতেহা । অতঃপর তিনি বলেনঃ “এটাই হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ সাতটি আয়াত যা নামাযে সদা পুনরাবৃত্তি করা হয়। এই হাদীসের বর্ণনা সূরায়ে ফাতেহার তাফসীরে দেয়া হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে ‘সত্যের খাতিরে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এটাই হচ্ছে কুরআন যাতে মুক্তি, স্থায়িত্ব এবং জীবন রয়েছে। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, ইসলাম গ্রহণের মধ্যেই জীবন রয়েছে এবং কুফরীর মধ্যে রয়েছে মৃত্যু। অথবা ভাবার্থ হচ্ছে- যখন নবী (সঃ) তোমাদেরকে সেই জিহাদের দিকে আহ্বান করেন। যার মাধ্যমে তোমরা মর্যাদা লাভ করেছো, অথচ এর পূর্বে তোমরা দুর্বল ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে শক্তিশালী করেছেন এবং তোমরা কাফিরদের কাছে পরাজিত হয়েছিলে, যার পর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করেছেন, তখন তোমরা তাড়াতাড়ি তার ডাকে সাড়া দাও এবং হুকুম পালন কর।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ জেনে রেখো যে, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে আড়াল হয়ে রয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি আড়াল হয়ে আছেন মুমিন ও কুফরীর মাঝে এবং কাফির ও ঈমানের মাঝে। মুমিনকে তিনি কুফরী করতে দেন না এবং কাফিরকে ঈমান আনতে দেন না। (এটাই হচ্ছে মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), যহহাক (রঃ), আতিয়্যা এবং মুকাতিল (রঃ)-এরও উক্তি। মুজাহিদ (রঃ)-এর এক রিওয়ায়াতে আছে যে, (আরবী) অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত তিনি তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেন যে, সে কিছুই বুঝতে পারে না) সুদ্দী (রঃ) বলেনঃ “এর অর্থ হচ্ছেকেউই এই ক্ষমতা রাখে না যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া ঈমান আনে কুফরী করে।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি (৫০:১৬) -এই আয়াতটির মতই। এর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত বহু হাদীস রয়েছে।

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন-(আরবী) অর্থাৎ “হে অন্তরকে পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন!” (হযরত আনাস রাঃ তখন বলেন) আমরা বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা আপনার উপর এবং কুরআনের উপর ঈমান এনেছি। আমাদের ব্যাপারে আপনার কোন সন্দেহ রয়েছে কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা কেননা এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, তোমাদের পরিবর্তন ঘটে যাবে। কারণ, মানুষের অন্তর আল্লাহ তাআলার দু’ অঙ্গুলির মাঝে রয়েছে। তিনি যখন ইচ্ছা করবেন তখন বদলিয়ে দিবেন।”

হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেন- “প্রত্যেক অন্তর আল্লাহর দু’টি অঙ্গুলির মধ্যভাগে রয়েছে। আল্লাহ যখন ওটাকে সোজা রাখার ইচ্ছা করেন তখন তা সোজা থাকে। আর যখন বাঁকা করে দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন তা বাঁকা হয়ে যায়।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “মীযান আল্লাহর হাতে রয়েছে। ইচ্ছা করলে তিনি ওকে হালকা করে দিবেন এবং ইচ্ছা করলে ভারী করবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত উম্মু সালমা (রাঃ) বলেনঃ “আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অন্তর কি পরিবর্তিত হয়?” তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের অন্তর সোজা রাখেন এবং ইচ্ছা করলে বাকা করে দেন। এ জন্যেই আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- (আরবী) অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরগুলোকে বাঁকা করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি বড় দাতা।” (৩:৮) আমি বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন যার মাধ্যমে আমি নিজের জন্যে প্রার্থনা করবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতিপালক! আমার গুনাহ মার্জনা করুন, আমার অন্তরের ক্রোধ দূরীভূত করুন এবং যতদিন আমাকে জীবিত রাখবেন ততদিন আমাকে বিভ্রান্তিকর ফিত্না হতে বাঁচিয়ে রাখুন!”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “বানী আদমের অন্তরগুলো আল্লাহর দু’টি অঙ্গুলির মাঝে একটি অন্তরের ন্যায়। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই ওগুলোকে ফিরিয়ে থাকেন।” অতঃপর তিনি বলেনঃ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! হে অন্তরগুলোকে পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরগুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দিন।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 24
إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُم
When he (the Messenger) calls you to that which will give you life,

The Command to answer and obey Allah and His Messenger

Allah commands;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ اسْتَجِيبُواْ لِلّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ

O you who believe! Answer Allah and (His) Messenger when he (the Messenger) calls you to that which will give you life,

Al-Bukhari said,

“(
اسْتَجِيبُواْ
Answer), obey, (
لِمَا يُحْيِيكُمْ
that which will give you life) that which will make your affairs good.”

Al-Bukhari went on to narrate that Abu Sa`id bin Al-Mu`alla said,

“I was praying when the Prophet passed by and called me, but I did not answer him until I finished the prayer.

He said,

مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنِي أَلَمْ يَقُلِ اللَّهُ

What prevented you from answering me?

Has not Allah said:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ اسْتَجِيبُواْ لِلّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ
(O you who believe! Answer Allah and (His) Messenger when he calls you to that which will give you life).’

He then said:

لَاأُعَلِّمَنَّكَ أَعْظَمَ سُورَةٍ فِي الْقُرانِ قَبْلَ أَنْ أَخْرُج

I will teach you the greatest Surah in the Qur’an before I leave.

When he was about to leave, I mentioned what he said to me. He said,

الْحَمْدُ للَّهِ رَبِّ الْعَـلَمِينَ

All the praises and thanks are to Allah, the Lord of all that exists… (1:1-6)

هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِي

Surely, it is the seven oft-repeated verses.”‘

Muhammad bin Ishaq narrated that Muhammad bin Jafar bin Az-Zubayr said that Urwah bin Az-Zubayr explained this Ayah,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ اسْتَجِيبُواْ لِلّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُم لِمَا يُحْيِيكُمْ
(O you who believe! Answer Allah and (His) Messenger when he calls you to that which will give you life),

“Answer when called to war (Jihad) with which Allah gives you might after meekness, and strength after weakness, and shields you from the enemy who oppressed you.”
Allah comes in between a Person and His Heart

Allah said,

وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ

and know that Allah comes in between a person and his heart.

Ibn Abbas commented,

“Allah prevents the believer from disbelief and the disbeliever from faith.”

Al-Hakim recorded this in his Mustadrak and said, “It is Sahih and they did not record it.”

Similar was said by Mujahid, Sa`id, Ikrimah, Ad-Dahhak, Abu Salih Atiyyah, Muqatil bin Hayyan and As-Suddi.

In another report from Mujahid, he commented;
يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ
(…comes in between a person and his heart).

“Leaves him without comprehension,”

As-Suddi said,

“Prevents one self from his own heart, so he will neither believe nor disbelieve except by His leave.”

There are several Hadiths that conform with the meaning of this Ayah. For instance, Imam Ahmad recorded that Anas bin Malik said,

“The Prophet used to often say these words,

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِك

O You Who changes the hearts, make my heart firm on Your religion.

We said, `O Allah’s Messenger! We believed in you and in what you brought us. Are you afraid for us?’

He said,

نَعَمْ إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ تَعَالَى يُقَلِّبُهَا

Yes, for the hearts are between two of Allah’s Fingers, He changes them (as He wills).”

This is the same narration recorded by At-Tirmidhi in the Book of Qadar in his Jami (Sunan), and he said, “Hasan.”

Imam Ahmad recorded that An-Nawwas bin Sam`an Al-Kilabi said that he heard the Prophet saying,

مَا مِنْ قَلْبٍ إِلاَّ وَهُوَ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ رَبِّ الْعَالَمِينَ إِذَا شَاءَ أَنْ يُقِيمَهُ أَقَامَهُ وَإِذَا شَاءَ أَنْ يُزِيغَهُ أَزَاغَه

Every heart is between two of the Fingers of the Most Beneficent (Allah), Lord of all that exists, if He wills, He makes it straight, and if He wills, He makes it stray.

And he said:

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِك

O You Who changes the hearts! keep my heart firm on Your religion!

And he would say;

وَالْمِيزَانُ بِيَدِ الرَّحْمنِ يَخْفِضُهُ وَيَرْفَعُه

The Balance is in the Hand of Ar-Rahman, He raises and lowers it.

This was also recorded by An-Nasa’i and Ibn Majah.

وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

And verily to Him you shall (all) be gathered.

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] لِمَا يُحْيِيكُم এর অর্থঃ এমন বস্তুর দিকে যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। কেউ কেউ বলেন, এ থেকে জিহাদ বুঝানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিজয়ীর জীবন। আবার কেউ কুরআনের আদেশ-নিষেধ, শরীয়তের বিধান অর্থ নিয়েছেন, এর মধ্যে জিহাদও রয়েছে। সারকথা হল যে, কেবল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মানো, তার উপর আমল কর। এতেই রয়েছে তোমাদের জীবন।

[২] অর্থ মৃত্যুদান করে, যার স্বাদ সকলকেই গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ, তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে নিয়ে তার উপর আমল কর। কেউ কেউ বলেন, মহান আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের এত নিকটে যে, তারই উপমা এখানে দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ তিনি মানুষের মনের গোপন কথাও জানেন, তাঁর কাছে কোন জিনিসই লুক্কায়িত নয়। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এর অর্থ বলেছেন যে, তিনি যখন চান মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। এমনকি মানুষ তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কিছুই পেতে পারে না। আবার কেউ কেউ একে বদরের যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত বলেছেন; মুসলিমগণ শত্রুদের সংখ্যাধিক্যে ভীত ছিলেন, মহান আল্লাহ তাঁদের অন্তরে অন্তরায় হয়ে ভয়কে অভয়ে বদলে দেন। ইমাম শাওকানী বলেন, আয়াতের উক্ত সকল অর্থই হতে পারে। (ফাতহুল কাদীর) ইমাম ইবনে জারীরের বর্ণিত অর্থের সমর্থন ঐ সকল হাদীস দ্বারা হয়, যাতে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার দু’আ করতে তাকীদ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, “আদম সন্তানের অন্তরসমূহ একটি অন্তরের ন্যায় রহমানের (আল্লাহর) দুই আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে। তিনি যেভাবে চান তা ঘুরিয়ে থাকেন। তারপর তিনি এই দু’আ পাঠ করেন। হে অন্তর ফিরানোর মালিক! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (মুসলিমঃ তকদীর অধ্যায়) অন্য বর্ণনায় আছে, “হে হৃদয় পরিবর্তনকারী! তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনে অবিচল রাখ।” (তিরমিযী, তাকদীর পরিচ্ছেদ)

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মানুষের মুনাফেকী আচরণ থেকে বাঁচবার জন্য সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ্ধতি যেটি হতে পারে, তা হলো তার মনে দুটো বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেয়া। এক, যাবতীয় কর্মকাণ্ড সেই আল্লাহর সাথে জড়িত যিনি মনের অবস্থাও জানেন। মানুষ তার মনে মনে যে সংকল্প পোষণ করে এবং মনের মধ্যে যেসব ইচ্ছা, আশা, আকাংখা, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও চিন্তা-ভাবনা লুকিয়ে রাখে, তার যাবতীয় গোপন তথ্য তাঁর কাছে দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট। দুই, একদিন আল্লাহর সামনে যেতেই হবে। তাঁর হাত থেকে বের হয়ে কেউ কোথাও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। এ দু’টি বিশ্বাস যত বেশী শক্তিশালী ও পাকাপোক্ত হবে, ততই মানুষ মুনাফেকী আচরণ থেকে দূরে থাকবে। এ জন্য মুনাফেকী আচরণের বিরুদ্ধে উপদেশ দান প্রসঙ্গে কুরআন এ বিশ্বাস দু’টির উল্লেখ করেছে বারবার।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

 

ঈমানদারদেরকে আহ্বান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ডাকে আনুগত্যের মাধ্যমে সাড়া দাও। এতে তোমাদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ রয়েছে।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন: اسْتَجِيبُوا এর অর্থ হল: সাড়া দাও। আর

لِمَا يُحْيِيكُمْ

যাতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে। (সূরা আনফাল তাফসীর, সহীহ বুখারী)

আবূ সাঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি সালাতরত ছিলাম, এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার পাশ দিয়ে গেলেন এবং আমাকে ডাকলেন। সালাত শেষ না করা পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাইনি, তারপর গেলাম। তিনি বললেন, তোমাকে আসতে বাধা দিল কিসে? আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি “হে মু’মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দাও” হাদীসের শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, ৪৪৭৪)

(أَنَّ اللّٰهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِه)

‘নিশ্চয়ই‎ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধক হয়ে থাকেন’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মধ্যে পরিবর্তনকারী এমনকি একজন মানুষের ও তার অন্তর যা চায় তার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সক্ষম। (তাফসীর মুয়াসসার, ১৭৯)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেন মু’মিন ও কুফরীর মাঝে এবং কাফির ও ঈমানের মাঝে। (মুসতাদরাক হাকিম ২য় খ. পৃঃ ৩২৮)

তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু‘আ করতেন:

يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِينِكَ

হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আমার অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল রাখিও।

আয়িশাহ  বলেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি বেশি বেশি এ দু‘আ কেন করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জবাবে বললেন: আদম সন্তানের অন্তরসমূহ আল্লাহ তা‘আলার দু’ আঙ্গুলের মাঝে বিদ্যমান; ইচ্ছা করলে সেগুলোকে তিনি বক্র করে দেন আর ইচ্ছা করলে সঠিকের ওপর বহাল রাখেন। (মুসনাদ আহমাদ ৬ষ্ঠ খ. পৃঃ ৯১, তিরমিযী হা: ৩৫২২, হাসান)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষ যে প্রান্তেই থাকুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ডাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক। সাড়া দেয়ার অর্থ হল তাদের আনুগত্য করা।
২. আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

৩. يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِينِكَ

এ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া উচিত।

Leave a Reply