أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٧٠)-৫৭৩
www.motaher21.net
সুরা: আল্ – আনফাল।
সুরা:৮
২৯-৩০ নং আয়াত:-
إَن تَتَّقُواْ اللّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَاناً
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন,
If you obey and fear Allah, He will grant you Furqan,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُکَفِّرۡ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۲۹﴾
وَ اِذۡ یَمۡکُرُ بِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡکَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡکَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡکَ ؕ وَ یَمۡکُرُوۡنَ وَ یَمۡکُرُ اللّٰہُ ؕ وَ اللّٰہُ خَیۡرُ الۡمٰکِرِیۡنَ ﴿۳۰﴾
হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল।
স্মরণ কর, যখন অবিশ্বাসীরা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য। তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আল্লাহ শ্রেষ্ট।
২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলার উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথম উপকার:
(يَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا)
‘তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন’ অর্থাৎ যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের নিষ্কৃতির পথ ও দুনিয়াতে নাযাত দেবেন। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১৮০)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: فُرْقَانًا এর অর্থ নাযাত, অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, সাহায্য করবেন।
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক (রাঃ) বলেন: فُرْقَانًا অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করার বুঝ দেবেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আল্লামা আবদুর রহমান সা‘দী (রাঃ) বলেন: اَلْفُرْقَانُ হল সে জ্ঞান ও হিদায়াত যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি হিদায়াত ও পথ ভ্রষ্টতার মাঝে, হক ও বাতিলের মাঝে, হালাল ও হারামের মাঝে, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ব্যক্তিদের মাঝে পার্থক্য করার মানদণ্ড অর্জন করতে পারে। (তাফসীরে সা‘দী, পৃঃ ৩২)
দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপকার:
পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন আর খারাপ কাজসমূহ মোচন করে দেবেন। যদিও পাপ ও খারাপ কাজ একটি অন্যটির ভিতর শামিল। তবে খারাপ কাজকে ছোট গুনাহ বলে তাফসীর করা হয় আর পাপসমূহকে বড় গুনাহ বলে তাফসীর করা হয়। (তাফসীরে সা‘দী, পৃঃ ৩২)
চতুর্থ উপকার: মহা প্রতিদান দেবেন।
এছাড়াও অন্যান্য আয়াতে তাক্বওয়ার অনেক উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ يَّتَّقِ اللّٰهَ يَجْعَلْ لَّه۫ مِنْ أَمْرِه۪ يُسْرًا)
“যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ-কর্ম সহজ করে দেবেন।”(সূরা তালাক ৬৫:৪)
(وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
‘স্মরণ কর, যখন কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে’- এটি সেই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা যা মক্কার নেতারা এক রাতে দারুন নাদওয়ায় বসে করেছিল। শেষ পর্যায় তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, বিভিন্ন গোত্রের যুবকদের দ্বারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করা হবে। যাতে তার খুনের বদলা কোন ব্যক্তিকে না দিতে হয়।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. তাক্বওয়ার ফলাফল ও উপকারিতা অবগত হলাম।
২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে হত্যা করার নীল নকশার কথা জানলাম।
৩. مَكْرٌ তথা কৌশল করা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ তার প্রমাণ পেলাম। তবে এ গুণটি আলাদাভাবে ব্যবহার হয় না। যদি কেউ مَكْرٌ বা ষড়যন্ত্র করে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা বিপরীতে এ গুণ ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ ও শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা যা প্রদান করেন সেটাই আল্লাহ তা‘আলার مَكْرٌ।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 29-30
إَن تَتَّقُواْ اللّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَاناً
If you obey and fear Allah, He will grant you Furqan,
Allah says;
يِا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ إَن تَتَّقُواْ اللّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَاناً وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّيَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
O you who believe! If you obey and fear Allah, He will grant you Furqan, and will expiate for you your sins, and forgive you; and Allah is the Owner of the great bounty.
Ibn Abbas, As-Suddi, Mujahid, Ikrimah, Ad-Dahhak, Qatadah, Muqatil bin Hayyan and several others said that,
فُرْقَاناً
(Furqan),
means, `a way out’;
Mujahid added, “In this life and the Hereafter.”
In another narration, Ibn Abbas is reported to have said,
`Furqan’ means `salvation’
or — according to another narration — `aid’.
Muhammad bin Ishaq said that
`Furqan’ means `criterion between truth and falsehood’.
This last explanation from Ibn Ishaq is more general than the rest that we mentioned, and it also includes the other meanings.
Certainly, those who have Taqwa of Allah by obeying what He ordained and abstaining from what he forbade, will be guided to differentiate between the truth and the falsehood. This will be a triumph, safety and a way out for them from the affairs of this life, all the while acquiring happiness in the Hereafter. They will also gain forgiveness, thus having their sins erased, and pardon, thus having their sins covered from other people, as well as, being directed to a way to gain Allah’s tremendous rewards,
يأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ اتَّقُواْ اللَّهَ وَءَامِنُواْ بِرَسُولِهِ يُوْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُوراً تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
O you who believe! Have Taqwa of Allah, and believe in His Messenger, He will give you a double portion of His mercy, and He will give you a light by which you shall walk (straight). And He will forgive you. And Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful. (57:28).
The Makkans plot to kill the Prophet, imprison Him or expel Him from Makkah
Allah reminds;
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ
And (remember) when the disbelievers plotted against you to imprison you, or to kill you, or to expel you (from your home, Makkah); they were plotting and Allah too was plotting; and Allah is the best of plotters.
Ibn Abbas, Mujahid and Qatadah said,
لِيُثْبِتُوكَ
(Liyuthbituka),
means “to imprison you.”
As-Suddi said,
“Ithbat is to confine or to shackle.”
Imam Muhammad bin Ishaq bin Yasar, the author of Al-Maghazi, reported from Abdullah bin Abi Najih, from Mujahid, from Ibn Abbas,
“Some of the chiefs of the various tribes of Quraysh gathered in Dar An-Nadwah (their conference area) and Iblis (Shaytan) met them in the shape of an eminent old man. When they saw him, they asked, `Who are you?’
He said, `An old man from Najd. I heard that you are having a meeting, and I wished to attend your meeting. You will benefit from my opinion and advice.’
They said, `Agreed, come in.’
He entered with them. Iblis said, `You have to think about this man (Muhammad)! By Allah, he will soon overwhelm you with his matter (religion).’
One of them said, `Imprison him, restrained in chains, until he dies just like the poets before him all died, such as Zuhayr and An-Nabighah! Verily, he is a poet like they were.’
The old man from Najd, the enemy of Allah, commented, `By Allah! This is not a good idea. His Lord will release him from his prison to his companions, who will liberate him from your hands. They will protect him from you and they might expel you from your land.’
They said, `This old man said the truth. Therefore, seek an opinion other than this one.’
Another one of them said, `Expel him from your land, so that you are free from his trouble! If he leaves your land, you will not be bothered by what he does or where he goes, as long as he is not among you to bring you troubles, he will be with someone else.’
The old man from Najd replied, `By Allah! This is not a good opinion. Have you forgotten his sweet talk and eloquence, as well as, how his speech captures the hearts By Allah! This way, he will collect even more followers among Arabs, who will gather against you and attack you in your own land, expel you and kill your chiefs.’
They said, `He has said the truth, by Allah! Therefore, seek an opinion other than this one.’
Abu Jahl, may Allah curse him, spoke next, `By Allah! I have an idea that no one else has suggested yet, and I see no better opinion for you. Choose a strong, socially elevated young man from each tribe, and give each one of them a sharp sword. Then they would all strike Muhammad at the same time with their swords and kill him. Hence, his blood would be shed by all tribes. This way, his tribe, Banu Hashim, would realize that they cannot wage war against all of the Quraysh tribes and would be forced to agree to accept the blood money; we would have brought comfort to ourselves and stopped him from bothering us.’
The old man from Najd commented, `By Allah! This man has expressed the best opinion, and I do not support any other opinion.’
They quickly ended their meeting and started preparing for the implementation of this plan.
Jibril came to the Prophet and commanded him not to sleep in his bed that night and conveyed to him the news of their plot. The Messenger of Allah did not sleep in his house that night, and Allah gave him permission to migrate. After the Messenger migrated to Al-Madinah, Allah revealed to him Surah Al-Anfal reminding him of His favors and the bounties He gave him,
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
And (remember) when the disbelievers plotted against you to imprison you, or to kill you, or to expel you (from Makkah); they were plotting and Allah too was plotting; and Allah is the best of plotters.
Allah replied to the pagans’ statement that they should await the death of the Prophet, just as the poets before him perished, as they claimed,
أَمْ يَقُولُونَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِهِ رَيْبَ الْمَنُونِ
Or do they say:”He is a poet! We await for him some calamity by time!” (52:30)
As-Suddi narrated a similar story.
Allah next tells;
وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
they were plotting and Allah too was plotting, and Allah is the best of plotters.
Muhammad bin Ishaq reported from Muhammad bin Jafar bin Az-Zubayr, from Urwah bin Az-Zubayr who commented on Allah’s statement,
“I (Allah) plotted against them with My sure planning, and I saved you (O Muhammad) from them.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
ইবনে আব্বাস (রাঃ), সুদ্দী (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ) যহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন। যে, (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ বের হওয়ার স্থান। মুজাহিদ (রঃ) (আরবী)-এটুকু বেশী করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে অর্থাৎ মুক্তি। তাঁর আর একটি বর্ণনায় (আরবী) অর্থাৎ সাহায্য রয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেছেন যে, (আরবী) দ্বারা (আরবী) অর্থাৎ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ফায়সালা বুঝানো হয়েছে। ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর এই তাফসীর পূর্ববর্তী তাফসীরগুলো হতে বেশী সাধারণ। কেননা, যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে থাকবে সে সত্য ও মিথ্যার পরিচয় লাভের তাওফীক প্রাপ্ত হবে। এটা হবে তার মুক্তি ও সাহায্য লাভের কারণ। তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা গাফফার (বড় ক্ষমাশীল) এবং সাত্তার (দোষত্রুটি গোপনকারী) হয়ে যাবেন। আল্লাহর কাছে বড় পুরস্কার পাওয়ার সে হকদার হয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমত দ্বিগুণ প্রদান করবেন এবং তোমাদের জন্যে এমন নূরের ব্যবস্থা করে দিবেন যার আলোকে তোমরা পথ চলতে পারবে, আর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন, তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে কয়েদ বা বন্দী করা । আতা (রঃ) এবং ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে হাস্ বা অবরোধ করা। আর সুদ্দী (রঃ) বলেন। যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) ও (আরবী) অর্থাৎ অবরোধ করা ও বেঁধে ফেলা। এর মধ্যে সবগুলো অর্থই রয়েছে। ভাবার্থ হচ্ছে- তারা তোমার সাথে কোন মন্দ ব্যবহারের ইচ্ছা পোষণ করে। আতা (রঃ) বলেনঃ “আমি উবায়েদ ইবনে উমায়েরকে বলতে শুনেছি যে, যখন কাফিররা নবী (সঃ)-কে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা দেশান্তরিত করার ষড়যন্ত্র করে তখন তাকে তার চাচা আবু তালিব জিজ্ঞেস করেন, কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করেছে তা তুমি জান কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা আমাকে বন্দী করতে বা হত্যা করতে অথবা নির্বাসিত করতে চায়।” আবু তালিব আবার জিজ্ঞেস করেন, এ সংবাদ তোমাকে কে জানিয়েছে? তিনি জবাব দেনঃ “আমার প্রতিপালক আমাকে এ সংবাদ জানিয়েছেন।” আবু তালিব তখন বলেন, তোমার প্রতিপালক খুবই উত্তম প্রতিপালক। তার কাছে উত্তম উপদেশ প্রার্থনা কর। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “আমি তার কাছে উত্তম উপদেশই চাচ্ছি এবং তিনি সদা আমাকে উত্তম উপদেশই প্রদান করবেন।” সত্য কথা তো এই যে, এখানে আবু তালিবের আলোচনা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার এমন কি প্রত্যাখ্যান যোগ্য। কেননা, এটা হচ্ছে মাদানী আয়াত। আর এই ঘটনা এবং কুরায়েশদের এভাবে পরামর্শকরণ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের রাত্রে। অথচ আবু তালিবের মৃত্যু ঘটেছিল এর তিন বছর পূর্বে। আবূ তালিবের মৃত্যুর কারণেই তো কাফিররা এতোটা দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল। কেননা, আবু তালিব সদা সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাজে সাহায্য ও সহায়তা করতেন এবং তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে কুরায়েশদের সাথে মুকাবিলা করতেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশ নেতৃবর্গের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে একটি পরামর্শ সভায় মিলিত হয়। ঐ সভায় ইবলীসও একজন মর্যাদা সম্পন্ন বৃদ্ধের বেশে উপস্থিত হয়। জনগণ তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “আপনি কে?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি নাজদবাসী একজন শায়েখ । আপনারা পরামর্শ সভা আহ্বান করেছেন। জেনে আমিও সভায় হাযির হয়েছি, যেন আপনারা আমার উপদেশ ও সৎ পরামর্শ থেকে বঞ্চিত না হন।” তখন কুরায়েশ নেতৃবর্গ তাকে অভিনন্দন জানালো। সে তাদেরকে বললোঃ “আপনারা এই লোকটির (মুহাম্মাদ সঃ-এর) ব্যাপারে অত্যন্ত চিন্তাভাবনা ও তদবীরের সাথে কাজ করুন। নতুবা খুব সম্ভব সে আপনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে বসবে।” সুতরাং একজন মত প্রকাশ করলোঃ “তাকে বন্দী করা হাক, শেষ পর্যন্ত সে বন্দী অবস্থাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন ইতিপূর্বে কবি যুহাইর ও নাবেগাকে বন্দী করা হয়েছিল এবং ঐ অবস্থাতেই তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। এও তো একজন কবি।” এ কথা শুনে ঐ নাজদী বৃদ্ধ চীৎকার করে বলে উঠলোঃ “আমি এতে কখনই একমত নই। আল্লাহর শপথ! তার প্রভু তাকে সেখান থেকে বের করে নেবে। ফলে সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে যাবে। অতঃপর সে তোমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তোমাদের সবকিছু ছিনিয়ে নেবে এবং তোমাদেরকে তোমাদের শহর থেকে বের করে দেবে।” লোকেরা তার এ কথা শুনে বললোঃ “শায়েখ সত্য কথা বলেছেন। অন্য মত পেশ করা হাক।” অন্য একজন তখন বললোঃ “তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হাক, তা হলেই তোমরা শান্তি পাবে। সে যখন এখানে থাকবেই না, তখন তোমাদের আর ভয় কিসের? তার সম্পর্ক তোমাদের ছাড়া অন্য কারো সাথে থাকবে। এতে তোমাদের কি হবে?” তার এ কথা শুনে ঐ বৃদ্ধ বললোঃ “আল্লাহর কসম! এ মতও সঠিক নয়। সে যে মিষ্টভাষী তা কি তোমাদের জানা নেই। সে মধু মাখানো কথা দ্বারা মানুষের মন জয় করে নেবে। তোমরা যদি এই কাজ কর তাহলে সে আরবের বাইরে গিয়ে সারা আরববাসীকে একত্রিত করবে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে তোমাদের উপর হামলা করে বসবে এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে। আর তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে হত্যা করে ফেলবে।” লোকেরা বললোঃ “শায়েখ সাহেব ঠিক কথাই বলেছেন। অন্য একটি মত পেশ করা হাক।” তখন আবু জেহেল বললোঃ “আমি একটা পরামর্শ দিচ্ছি । তোমরা চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবে যে, এর চেয়ে উত্তম মত আর হতে পারে না। প্রত্যেক গোত্র থেকে তোমরা একজন করে যুবক বেছে নাও যারা হবে বীর পুরুষ ও সম্ভ্রান্ত। সবারই কাছে তরবারী থাকবে। সবাই সম্মিলিতভাবে হঠাৎ করে তাকে তরবারীর আঘাত করবে। যখন সে নিহত হয়ে। যাবে তখন তার রক্ত সকল গোত্রের মধ্যে বণ্টিত হয়ে যাবে। এটা কখনও সম্ভব নয় যে, বানু হাশিমের একটি গোত্র সমস্ত গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বাধ্য হয়ে বানু হাশিমকে রক্তপণ গ্রহণ করতে হবে। আমরা তাদেরকে রক্তপণ দিয়ে দিবো এবং শান্তি লাভ করবো।” তার এ কথা শুনে নাজদী বৃদ্ধ বললোঃ “আল্লাহর কসম! এটাই হচ্ছে সঠিকতম মত। এর চেয়ে উত্তম মত আর হতে পারে না।” সুতরাং সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল এবং এরপর সভা ভঙ্গ হলো। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “আজকে রাত্রে আপনি বিছানায় শয়ন করবেন না।” এ কথা বলে তিনি তাকে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কথা অবহিত করলেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ রাত্রে নিজের বিছানায় শয়ন করলেন না এবং তখনই আল্লাহ তা’আলা তাঁকে হিজরতের নির্দেশ দিলেন। মদীনায় আগমনের পর আল্লাহ পাক তার উপর সূরায়ে আনফাল অবতীর্ণ করলেন। স্বীয় নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং আল্লাহ তা’আলাও (স্বীয় নবীকে সঃ রক্ষা করার) তদবীর ও ফিকির করতে থাকেন, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাধিক উত্তম তদবীরকারক।” তাদের উক্তি ছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ “তার ব্যাপারে তোমরা মৃত্যু ঘটবার অপেক্ষা কর, শেষ পর্যন্ত সে ধ্বংস হয়ে যাবে।” ঐ দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
অর্থাৎ “তারা কি বলে- এ ব্যক্তি কবি, আমরা তার ব্যাপারে মৃত্যু ঘটারই অপেক্ষা করছি।” (৫২:৩০) তাই ঐ দিনের নামই রেখে দেয়া হয় অর্থাৎ “দুঃখ-বেদনার দিন।” কেননা, ঐ দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তাদের সেই দুরভিসন্ধির আলোচনা নিম্নের আয়াতে রয়েছে-(আরবী) অর্থাৎ “তারা এই ভূমি হতে তোমাকে উৎখাত করতে উদ্যত হয়েছিল, যেন তোমাকে তথা হতে বের করে দেয়, আর যদি এরূপ ঘটে যেতো তবে তারাও তোমার পর (এখানে) অতি অল্প সময় টিকে থাকতে পারতো।” (১৭:৭৬) নবী (সঃ) আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। যখন কুরায়েশরা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিলো তখন হযরত আলী (রাঃ)-কে ডেকে তিনি নির্দেশ দিলেনঃ “তুমি আমার বিছানায় শুয়ে পড়।” হযরত আলী (রাঃ) তখন সবুজ চাদর গায়ে দিয়ে তার বিছানায় শুয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাইরে বের হলেন। লোকদেরকে তিনি দরজার উপর দেখতে পেলেন। তিনি এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ফলে তাদের চক্ষু নবী (সঃ)-এর দিক থেকে ফিরে গেল। তিনি সূরায়ে ইয়াসীনের (আরবী) হতে (আরবী) (৩৬:১-৯) পর্যন্ত আয়াতগুলো পাঠ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে নবী (সঃ)-এর কাছে আসলেন। তিনি তাকে কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি না কেঁদে পারি কি? কুরায়েশের লোকেরা লাত উযযার নামে শপথ করে বলেছে যে, আপনাকে দেখা মাত্রই আক্রমণ চালিয়ে তারা হত্যা করে ফেলবে এবং তাদের প্রত্যেকেই আপনার হত্যায় অংশগ্রহণ করতে চায়।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আমার প্রিয় কন্যা! আমার জন্যে অযুর পানি নিয়ে এসো।” তিনি অযু করে বায়তুল্লাহর দিকে চললেন। কুরায়েশরা তাঁকে দেখেই বলে উঠলোঃ “এই যে তিনি।” কিন্তু সাথে সাথেই তাদের মাথাগুলো নীচের দিকে ঝুঁকে পড়লো এবং গর্দানগুলো বাঁকা হয়ে গেল। তারা তাদের চক্ষুগুলো উঠাতে পারলো না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “চেহারাগুলো নষ্ট হয়ে যাক।” যার গায়েই এই কংকর লেগেছিল সে-ই বদরের যুদ্ধে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছিল। (হাকিম (রঃ) বলেনঃ “এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর সহীহ। তারা দুজন এটা তাখরীজ করেননি এবং এর কোন দোষ-ত্রুটি আমার জানা নেই।”) মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হিজরত করে (সওরের) গুহায় পৌছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) সাথে ছিলেন। মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ী অবরোধ করে থাকে। হযরত আলী (রাঃ)-কেই তারা মুহাম্মাদ (সঃ) মনে করতে থাকে। সকাল হলে তারা তার ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ঘরে হযরত আলী (রাঃ)-কে দেখতে পায়। এভাবে আল্লাহ তাদের সমস্ত অভিসন্ধি নস্যাৎ করে দেন। তারা হযরত আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেঃ “মুহাম্মাদ (সঃ) কোথায়?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি তার কোন খবর জানি না। তারা তখন তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলতে থাকে। পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। সুতরাং তারা পাহাড়ের উপর উঠে পড়ে। গুহার সামনে দিয়ে চলার সময় তারা দেখতে পায় যে, গুহার মুখে মাকড়সায় জাল বুনিয়ে রেখেছে। তাই তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “গুহার মধ্যে মানুষ প্রবেশ করলে ওর মুখে কখনো মাকড়সার এত বড় জাল ঠিক থাকতো না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ গুহার মধ্যে তিনদিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ “তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং আল্লাহ তা’আলাও (স্বীয় নবীকে সঃ রক্ষা করার) তদবীর করতে থাকেন, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাধিক উত্তম তদবীরকারক।” অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তুমি লক্ষ্য কর যে, কিভাবে তদবীর করে আমি তোমাকে ঐসব কাফিরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
‘তাকওয়া’ অর্থ হল আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ ও তাঁর নিষিদ্ধ কর্ম হতে বিরত থাকা। فُرقَان এর কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে; যেমন এমন বিবেক বা অন্তর যা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। অর্থ এই যে, তাকওয়ার কারণে অন্তর দৃঢ়, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও হিদায়াতের রাস্তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ যখন দ্বিধা ও সন্দেহের মরুভূমিতে ঘুরপাক খায়, তখন সে সঠিক পথের সন্ধান পায়। এ ছাড়াও فُرقَان এর অর্থঃ সাহায্য, পরিত্রাণ, বিজয় সমস্যার সমাধানও করা হয়েছে। আর এ সকল অর্থই এখানে উদ্দিষ্ট হতে পারে। কারণ তাকওয়ার কারণে এই সব উপকার হয়ে থাকে। বরং তার সাথে সাথে গোনাহের কাফফারা, পাপ থেকে ক্ষমালাভ এবং মহা পুরস্কার লাভও হয়।
এটি সেই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা যা মক্কার নেতারা এক রাত্রে ‘দারুন নাদ্ওয়া’য় বসে করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, বিভিন্ন গোত্রের যুবকদেরকে মহানবী (সাঃ)-কে হত্যার জন্য নিযুক্ত করা হোক। যাতে তাঁর খুনের বদলে কোন একজনকে হত্যা না করা হয়; বরং মুক্তিপণ দিয়ে বাঁচা যায়।
* সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক রাতে যুবকগণ তাঁর বাড়ির সামনে এমন প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যে, তিনি বের হলেই মেরে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলা উক্ত ষড়যন্ত্রের সংবাদ নবী (সাঃ)-কে পৌঁছে দিলেন এবং তিনি এক মুঠো বালি নিয়ে তাদের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। কেউ নবী (সাঃ)-এর বের হওয়ার টের পর্যন্তও পায়নি। অতঃপর তিনি সওর গিরিগুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এটিই ছিল মহান আল্লাহর কাফেরদের বিরুদ্ধে কৌশল বা ষড়যন্ত্র। আর তাঁর থেকে উত্তম ষড়যন্ত্র আর কেউ করতে পারে না। مكر এর অর্থ দেখার জন্য আল ইমরানের ৫৪নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
কষ্টিপাথর এমন একটি জিনিসকে বলা হয় যা খাঁটি ও ভেজালের মধ্যকার পার্থক্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে। এটিই “ফুরকান”-এর অর্থ। এ জন্যই আমি ফুরকানের অনুবাদ করেছি কষ্টিপাথর শব্দ দিয়ে। এখানে আল্লাহর বানীর অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর ইচ্ছা বিরোধী কোন কাজে করতে প্রস্তুত না হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্যে এমন পার্থক্যকারী শক্তি সৃষ্টি করে দেবেন, যার ফলে প্রতি পদে পদে তোমরা জানতে পারবে কোন কর্মনীতিটা ভুল ও কোনটা নির্ভুল এবং কোন কর্মনীতি অবলম্বন করলে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা যায় এবং কিসে তিনি অসন্তুষ্ট হন। জীবন পথের প্রতি বাঁকে বাকেঁ প্রতিটি চৌরাস্তায় এবং প্রতিটি চড়াই উতরাইয়ে তোমাদের অন্তরদৃষ্টি বলে দেবে কোন দিকে চলা উচিত এবং কোন দিকে চলা উচিত নয়। কোনটি সেই নিরেট সত্যের পথ যা আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় এবং কোনটি মিথ্যা ও অসত্যের পথ, যা শয়তানের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়।
* এটা এমন সময়ের কথা, যখন কুরাইশদের এযাবতকারআশঙ্কা নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলযে, এখন মুহাম্মাদ ﷺ ও মদীনায় চলে যাবেন। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো, এ ব্যক্তি মক্কা থেকে বের হয়ে গেলে বিপদ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কাজেই তারা তাঁর ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য দারুন নদওয়ায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের একটি সভা ডাকলো। কিভাবে এ বিপদের পথরোধ করা যায়, এ ব্যাপারে তারা পরামর্শ করলো। এক দলের মত ছিল, এ ব্যক্তির হাতে পায়ে লোহার বেড়ী পরিয়ে এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হোক। মৃত্যুর পূর্বে আর তাকে মুক্তি দেবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ মত গ্রহীত হলো না। কারণ তারা বললো, আমরা তাকে বন্দী করে রাখলেও তার যেসব সাথী কারাগারের বাইরে থাকবে তারা বরাবর নিজেদের কাজ করে যেতে থাকবে এবং সামান্য একটু শক্তি অর্জন করতে পারলেই তাকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে দিতে কুন্ঠা বোধ করবে না। দ্বিতীয় দলের মত ছিল, একে আমাদের এখান থেকে বের করে দাও। তারপর যখন সে আমাদের মধ্যে থাকবে না তখন সে কোথায় থাকে ও কি করে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার কি আছে? মোটকথা এভাবে তার অস্তিত্ব আমাদের জীবন ব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ মতটিকেও এই বলে রদ করে দেয়া হলো যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে কথার যাদুকর। কথার মাধ্যমে মানুষের মন গলিয়ে ফেলার ব্যাপারে এর জুড়ি নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে গেলে না জানি আরবের কোন কোন উপজাতি ও গোত্রকে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেবে! তারপর না জানি কী পরিমাণ ক্ষমতা অর্জন করে আরবের কেন্দ্রস্থলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমাদের ওপর আক্রমণ করে বসবে! সব শেষে আবু জেহেল মত প্রকাশ করলো যে, আমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে উচ্চ বংশীয় অসি চালনায় পারদর্শী যুবক বাছাই করে নিতে হবে। তারা সবাই মিলে একই সঙ্গে মুহাম্মাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তাকে হত্যা করবে। এভাবে মুহাম্মাদকে হত্যা করার দায়টি সমস্ত গোত্রের ওপর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আর সবার সঙ্গে লড়াই করা বনু আবদে মান্নাফের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই বাধ্য হয়ে তারা রক্তমূল্য গ্রহণ করতে রাজী হয়ে যাবে। এ মতটি সবাই পছন্দ করলো। হত্যা করার জন্য লোকদের নাম স্থিরীকৃত হলো। হত্যা করার সময়ও নির্ধারিত হলো। এমনকি যে রাতটি হত্যার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল, সে রাতে ঠিক সময়ে হত্যাকারীরাও যথাস্থানে নিজেদের মতলব হাসিল করার উদ্দেশ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের হাত উঠাবার আগেই নবী ﷺ তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে একেবারে শেষ সময়ে তাদের পরিকল্পিত কৌশল বানচাল হয়ে গেলো।