أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٧٣)-৫৭৬
www.motaher21.net
সুরা: আল্ – আনফাল।
সুরা:৮
৩৬-৩৭ নং আয়াত:-
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাসী, আল্লাহর পথ হতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য তারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে।
The Disbelievers spend Their Wealth to hinder Others from Allah’s Path,
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ لِیَصُدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ فَسَیُنۡفِقُوۡنَہَا ثُمَّ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِمۡ حَسۡرَۃً ثُمَّ یُغۡلَبُوۡنَ ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِلٰی جَہَنَّمَ یُحۡشَرُوۡنَ ﴿ۙ۳۶﴾
لِیَمِیۡزَ اللّٰہُ الۡخَبِیۡثَ مِنَ الطَّیِّبِ وَ یَجۡعَلَ الۡخَبِیۡثَ بَعۡضَہٗ عَلٰی بَعۡضٍ فَیَرۡکُمَہٗ جَمِیۡعًا فَیَجۡعَلَہٗ فِیۡ جَہَنَّمَ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿٪۳۷﴾
নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাসী, আল্লাহর পথ হতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য তারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর তা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে। এরপর তারা পরাভূত হবে। আর যারা অবিশ্বাস করে, তাদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে।
এ জন্যই যে, আল্লাহ কুজনকে সুজন হতে পৃথক করবেন[১] এবং কুজনের এককে অপরের উপর রাখবেন, অতঃপর সকলকে স্তূপীকৃত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন, এরাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীরঃ
৩৬ নং আয়াতের শানে নুযূল:
বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের পরাজয় বরণ এবং আবূ সুফিয়ান ও তার কাফেলা মক্কায় প্রত্যার্বতন করার পর আবদুল্লাহ বিন আবূ রাবিআহ, ইকরিমা বিন আবূ জাহল, সাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং কুরাইশদের আরো কয়েকজন লোক যাদের পিতা-পুত্র ও ভাই যুদ্ধে মারা গিয়েছিল তারা আবূ সুফিয়ানকে এবং ঐ লোকেদেরকে বলল যাদের কাফেলাতে সম্পদ ছিল, হে কুরাইশদের দল! মুহাম্মাদ তোমাদেরকে নীচে ফেলে দিয়েছে এবং তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকেদের হত্যা করেছে। তার সাথে পুনরায় যুদ্ধ করার জন্য তোমাদের এই কাফেলার সমস্ত মাল দিয়ে দাও, যেন আমরা এর মাধ্যমে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারি। তখন তারা তাই করল। তাদের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। এরূপ ইবনু আব্বাস (রাঃ) উল্লেখ করেছেন। (তাফসীর তাবারী. ১৩/৫৩২, ইবনে হিশাম সীরাহ নবুবিয়াহ ২ /২৭৪,মুরসাল সহীহ)
(الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ)
‘কুজনকে সুজন হতে’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: সৌভাগ্যশীলদেরকে দুর্ভাগ্যবানদের থেকে আলাদা করার জন্য। সুদ্দী (রহঃ) বলেন: মু’মিনদেরকে কাফিরদের হতে আলাদা করার জন্য।
তবে সম্ভবনা রয়েছে এ আলাদা আখিরাতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ أَنْتُمْ وَشُرَكَا۬ٓؤُكُمْ ج فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ)
“এবং সেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করে যারা মুশরিক তাদেরকে বলব, ‘তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান কর’; আমি তাদেরকে পরস্পর হতে পৃথক করে দেব।” (সূরা ইউনূস ১০:২৮)
আবার সম্ভবনা রয়েছে এ আলাদা দুনিয়াতেও হতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا كَانَ اللّٰهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلٰي مَآ أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتّٰي يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ)
“আল্লাহ এরূপ নন যে, তিনি অপবিত্র হতে পবিত্রকে পৃথক না করা পর্যন্ত মু’মিনরা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থার উপরেই ছেড়ে দিবেন?” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৭৯)
فَيَرْكُمَهُ অর্থাৎ সবাইকে একত্রিত করবেন। সকল পাপাচারী লোকেদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামে একত্রিত করবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্বের সকল অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায়।
২. শির্ক থাকা অবধি শরীয়তসম্মতভাবে জিহাদ চলতে থাকবে।
৩. কাফিরদের সম্পদ ব্যয় করার উদ্দেশ্য জানতে পারলাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 36-37
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ
The Disbelievers spend Their Wealth to hinder Others from Allah’s Path,
The Disbelievers spend Their Wealth to hinder Others from Allah’s Path, but this will only cause Them Grief
Allah states;
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ
Verily, those who disbelieve spend their wealth to hinder (men) from the path of Allah, and so will they continue to spend it; but in the end it will become an anguish for them. Then they will be overcome. And those who disbelieve will be gathered unto Hell.
Muhammad bin Ishaq narrated that Az-Zuhri, Muhammad bin Yahya bin Hibban, Asim bin Umar bin Qatadah, and Al-Husayn bin Abdur-Rahman bin Amr bin Sa`id bin Mu`adh said,
“The Quraysh suffered defeat at Badr and their forces went back to Makkah, while Abu Sufyan went back with the caravan intact. This is when Abdullah bin Abi Rabiah, Ikrimah bin Abi Jahl, Safwan bin Umayyah and other men from Quraysh who lost their fathers, sons or brothers in Badr, went to Abu Sufyan bin Harb.
They said to him, and to those among the Quraysh who had wealth in that caravan, `O people of Quraysh! Muhammad has grieved you and killed the chiefs among you. Therefore, help us with this wealth so that we can fight him, it may be that we will avenge our losses.’
They agreed.”
Muhammad bin Ishaq said,
“According to Ibn Abbas, this Ayah was revealed about them,
(
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ
… Verily, those who disbelieve spend their wealth… until,
هُمُ الْخَاسِرُونَ
they who are the losers).”
Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Al-Hakam bin Uyaynah, Qatadah, As-Suddi and Ibn Abza said that;
this Ayah was revealed about Abu Sufyan and his spending money in Uhud to fight the Messenger of Allah.
Ad-Dahhak said that;
this Ayah was revealed about the idolators of Badr.
In any case, the Ayah is general, even though there was a specific incident that accompanied its revelation.
Allah states here that the disbelievers spend their wealth to hinder from the path of truth. However, by doing that, their money will be spent and then will become a source of grief and anguish for them, availing them nothing in the least. They seek to extinguish the Light of Allah and make their word higher than the word of truth. However, Allah will complete His Light, even though the disbelievers hate it. He will give aid to His religion, make His Word dominant, and His religion will prevail above all religions. This is the disgrace that the disbelievers will taste in this life; and in the Hereafter, they will taste the torment of the Fire. Whoever among them lives long, will witness with his eyes and hear with his ears what causes grief to him. Those among them who are killed or die will be returned to eternal disgrace and the everlasting punishment. This is why Allah said,
فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ
And so will they continue to spend it; but in the end it will become an anguish for them. Then they will be overcome. And those who disbelieve will be gathered unto Hell.
Allah said
لِيَمِيزَ اللّهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
In order that Allah may distinguish the wicked from the good,
meaning recognize the difference between the people of happiness and the people of misery, according to Ibn Abbas, as Ali bin Abi Talhah reported from him.
Allah distinguishes between those believers who obey Him and fight His disbelieving enemies and those who disobey Him.
Allah said in other Ayat,
مَّا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُوْمِنِينَ عَلَى مَأ أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ
Allah will not leave the believers in the state in which you are now, until He distinguishes the wicked from the good. Nor will Allah disclose to you the secrets of the Ghayb (Unseen). (3:179)
and,
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَـهَدُواْ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّـبِرِينَ
Do you think that you will enter Paradise before Allah (tests) those of you who fought (in His cause) and (also) tests those who are the patient. (3:142)
Therefore, the Ayah (8:37) means,
`We tried you with combatant disbelievers whom We made able to spend money in fighting you,’
لِيَمِيزَ اللّهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَىَ بَعْضٍ فَيَرْكُمَهُ جَمِيعاً
in order that Allah may distinguish the wicked from the good, and put the wicked one over another, heap them together,
put in a pile on top of each other,
فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ أُوْلَـيِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
and cast them into Hell. Those! It is they who are the losers.
in this life and the Hereafter.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:
বদরের যুদ্ধে কুরায়েশদের উপর যখন বিপদ পৌঁছে এবং তারা মক্কা প্রত্যাবর্তন করে, আর আবূ সুফিয়ানও কাফেলাসহ মক্কা ফিরে যান তখন আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবিআহ, ইকরামা ইবনে আবি জেহেল, সাফওয়ান। ইবনে উমাইয়া এবং কুরায়েশদের আরো কয়েকজন লোক, যাদের পিতা, পুত্র এবং ভাই যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তারা আবু সুফিয়ানকে বললো এবং ঐ লোকদেরকেও বললো যাদের ব্যবসায়ের মাল ঐ কাফেলায় ছিলঃ “হে কুরায়েশের দল! মুহাম্মাদ (সঃ) তোমাদেরকে নীচে ফেলে দিয়েছে এবং তোমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে হত্যা করেছে। তার সাথে পুনরায় যুদ্ধ করার জন্যে তোমরা এই কাফেলার সমস্ত মাল দিয়ে দাও, যেন আমরা এর মাধ্যমে তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি।” সুতরাং তারা তাদের সমস্ত মাল দিয়ে দিলো। এ ব্যাপারেই আল্লাহ তা’আলা … (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। অর্থাৎ কাফিররা আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের মাল-ধন ব্যয় করে। তারা তাদের মাল-ধন ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর ওটাই তাদের জন্যে দুঃখ ও আফসোসের কারণ হবে এবং তারা পুনরায় পরাজিত হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে । যাহহাক (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আবু সুফিয়ান এবং কুরায়েশদের মাল-ধন খরচ করার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়নি, বরং আহলে বদরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। মোটকথা, যে ব্যাপারেই অবতীর্ণ হাক না কেন আয়াতটি সাধারণ, যদিও এর শানে নুযূল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, সত্যের পথ অনুসরণকারীদেরকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে কাফিররা তাদের ধন-দৌলত ব্যয় করে থাকে। কিন্তু তাদের এই সমুদয় মাল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিণামে তাদেরকে আফসোস করতে হবে। তারা আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ চান তার নূরকে পূর্ণ করতে-যদিও এটা কাফিরদের কাছে অপছন্দনীয় হয়। আল্লাহ স্বীয় দ্বীনের সাহায্যকারী ও স্বীয় কালেমাকে জয়যুক্তকারী থাকবেন। কাফিরদের জন্যে দুনিয়ায় রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। যারা যুদ্ধের ময়দান থেকে জীবিত ফিরেছে তারা তাদের লজ্জাজনক পরিণাম স্বচক্ষে অবলোকন করেছে। আর যারা নিহত হয়েছে তারা তো চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে গেছে।
(আরবী) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- যেন আল্লাহ ভাগ্যবানদের থেকে হতভাগাদেরকে পৃথক করে দেন। অর্থাৎ যেন মুমিনরা কাফিরদের থেকে পৃথক হয়ে যায়। আবার এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এই পৃথককরণ দ্বারা আখিরাতের পৃথককরণ বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি মুশরিকদেরকে বলবো- তোমরা ও তোমাদের শরীকরা তোমাদের স্থানে অবস্থান কর, আমি তাদের মাঝে স্বাতন্ত্র্য আনয়ন করবো।” অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘ “সেই দিন তারা পৃথক পৃথক হয়ে যাবে।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে অপরাধীরা! আজ তোমরা (মুমিনদের হতে) পৃথক হয়ে যাও।” অথবা এর দ্বারা দুনিয়াতেই পৃথক হওয়া উদ্দেশ্য। তা এভাবে যে, মুমিনদের আমল আলাদা এবং কাফিরদের আমল আলাদা। আর (আরবী)-এর (আরবী) টি বা কারণ সম্পৰ্কীয় হতে পারে। অর্থাৎ পাপ কার্যের উপর মাল খরচ করার কারণে আল্লাহ তা’আলা ভাল হতে মন্দকে পৃথক করে দিয়েছেন। অর্থাৎ এই স্বাতন্ত্র্য আনয়নের জন্যে যে, কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে কে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করছে এবং কে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাপী হয়ে যাচ্ছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ দুটো সেনাবাহিনী মুখোমুখী হওয়ার সময় তোমাদের উপর যা কিছু পৌঁছেছিল তা আল্লাহর হুকুমেই ছিল, যেন তিনি মুমিনদেরকেও দেখে নেন। আর ঐ লোকদেরকেও দেখে নেন যারা কপটতাপূর্ণ কাজ করেছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল- এসো, আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শত্রুদের প্রতিরোধকারী হয়ে যাও। তারা বললো- “যদি আমরা কোন নিয়মিত যুদ্ধ দেখতাম তবে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গী হয়ে যেতাম।” আল্লাহ তাআলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখন পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে তো দেখেই নেননি যারা তোমাদের মধ্যে জিহাদ করেছে এবং তাদেরকেও দেখেননি যারা জিহাদে দৃঢ়পদ থাকে।” মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ আল্লাহ মুমিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না যে অবস্থায় তোমরা এখন রয়েছে, যে পর্যন্ত না তিনি অপবিত্রকে পবিত্র হতে পৃথক করেন এবং আল্লাহ এরূপ অদৃশ্য বিষয় তোমাদেরকে অবহিত করেন না।” এর দৃষ্টান্ত সূরায়ে বারাআতেও রয়েছে। সুতরাং এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে- আমি তোমাদেরকে কাফিরদের সাথে ভিড়িয়ে দিয়ে পরীক্ষা করবো। তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের ধন-মাল খরচ করবে। এটা শুধু এই পৃথককরণের জন্যে যে, অপবিত্র কারা এবং পবিত্র কারা (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে একটা জিনিসের উপর একটা জিনিসকে একত্রিত করা। যেমন মেঘ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর ঐ মেঘকে তিনি স্তরে স্তরে সাজিয়ে দেন।” (২৪:৪৩) (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর তিনি তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন, ঐসব লোকই হচ্ছে চরম ক্ষতিগ্রস্ত লোক।”
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] যখন মক্কার কুরাইশদের বদরে পরাজয় ঘটল এবং পরাজিত সেনা মক্কায় পৌঁছল, এদিকে আবু সুফিয়ানও বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে মক্কায় এসে পৌঁছল, তখন যাদের পিতা, পুত্র বা ভাই নিহত হয়েছিল তারা আবূ সুফিয়ান ও যারা বাণিজ্যের শরীকান ছিল তাদের নিকট গিয়ে আপিল করল যে, এই কাফেলার সকল সম্পদ মুসলিমদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্যয় হোক। মুসলিমরা আমাদের প্রচুর ক্ষতি করেছে। এতএব প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ অত্যন্ত জরুরী। মহান আল্লাহ এই আয়াতে তাদের বা তাদের মত চরিত্রের অধিকারী লোকেদের ব্যাপারে বলেন, নিঃসন্দেহে কাফেররা অন্যদেরকে আল্লাহর রাস্তায় বাধা দানের জন্য সম্পদ খরচ করবে। ফলে তাদের ভাগ্যে আফসোস ও দুঃখ ছাড়া আর কিছু থাকবে না। আর পরকালে তাদের স্থান হবে জাহান্নাম।
* এই পৃথকীকরণ হয়তো বা পরকালে হবে। সৎলোকদেরকে অসৎ লোক হতে আলাদা করে নেওয়া হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, {وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ} “হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, সৎলোকদের হতে আলাদা হয়ে যাও। আর অপরাধীরা অর্থাৎ, কাফের-মুশরিক ও অবাধ্য লোকেরা। এদেরকে একত্রিত করে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অথবা এই পৃথকীকরণ পৃথিবীতেই ঘটবে। আর ‘লাম’ হরফটি কারণ দর্শানোর জন্য হবে। অর্থাৎ, কাফেররা অন্যদেরকে আল্লাহর রাস্তায় বাধা দেওয়ার জন্য সম্পদ খরচ করবে। আমি তাদেরকে এ রকম করার সুযোগ দেব, যাতে এভাবে ভালকে মন্দ হতে, কাফেরকে মু’মিন হতে, মুনাফিককে প্রকৃত মুসলিম হতে আলাদা করে দিই। এইভাবে এই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় যে, আমি কাফেরদের দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা নেব; তারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়বে। আর আমি তাদের লড়াইয়ে অর্থব্যয় করার শক্তি যোগাব, যাতে সুজন হতে কুজন আলাদা হয়ে যায়। অতঃপর তিনি সকল কুজনদের একত্রিত করবেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মানুষ যে পথে নিজের সমস্ত সময়, শ্রম, যোগ্যতা ও জীবন পুঁজি ব্যয় করে, তার একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে যদি সে জানতে পারে যে, এসব তাকে সোজা ধ্বংসের দিকে টেনে এনেছে এবং এ পথে সে যা কিছু খাটিয়েছে তাতে সূদ বা মুনাফা পাওয়ার পরিবর্তে উল্টো তাকে দণ্ড ভোগ করতে হবে, তাহলে এর চাইতে বড় দেউলিয়াপনা তার জন্য আর কী হতে পারে!