Book#579

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٧٣٦)-৫৭৯
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
৪২-৪৪ নং আয়াত:-

إِذْ يُرِيكَهُمُ اللّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلً

যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে তাদের সংখ্যা অল্প দেখিয়েছিলেন।
When Allah showed them to you as few in your dream;

اِذۡ اَنۡتُمۡ بِالۡعُدۡوَۃِ الدُّنۡیَا وَ ہُمۡ بِالۡعُدۡوَۃِ الۡقُصۡوٰی وَ الرَّکۡبُ اَسۡفَلَ مِنۡکُمۡ ؕ وَ لَوۡ تَوَاعَدۡتُّمۡ لَاخۡتَلَفۡتُمۡ فِی الۡمِیۡعٰدِ ۙ وَ لٰکِنۡ لِّیَقۡضِیَ اللّٰہُ اَمۡرًا کَانَ مَفۡعُوۡلًا ۬ۙ لِّیَہۡلِکَ مَنۡ ہَلَکَ عَنۡۢ بَیِّنَۃٍ وَّ یَحۡیٰی مَنۡ حَیَّ عَنۡۢ بَیِّنَۃٍ ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَسَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿ۙ۴۲﴾

اِذۡ یُرِیۡکَہُمُ اللّٰہُ فِیۡ مَنَامِکَ قَلِیۡلًا ؕ وَ لَوۡ اَرٰىکَہُمۡ کَثِیۡرًا لَّفَشِلۡتُمۡ وَ لَتَنَازَعۡتُمۡ فِی الۡاَمۡرِ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ سَلَّمَ ؕ اِنَّہٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۴۳﴾
وَ اِذۡ یُرِیۡکُمُوۡہُمۡ اِذِ الۡتَقَیۡتُمۡ فِیۡۤ اَعۡیُنِکُمۡ قَلِیۡلًا وَّ یُقَلِّلُکُمۡ فِیۡۤ اَعۡیُنِہِمۡ لِیَقۡضِیَ اللّٰہُ اَمۡرًا کَانَ مَفۡعُوۡلًا ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ الۡاُمُوۡرُ ﴿٪۴۴﴾

স্মরণ কর, তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিল দূর প্রান্তে আর উষ্ট্রারোহী কাফেলা ছিল তোমাদের অপেক্ষা নিম্ন ভূমিতে। যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে (যুদ্ধ সম্পর্কে সময়) ধার্য করতে, তাহলে সে ধার্যকৃত সময়ে পৌঁছতে তোমরা ভিন্নতর হতে। কিন্তু বস্তুতঃ যা ঘটার ছিল আল্লাহ তা সম্পন্ন করার জন্য উভয় দলকে যুদ্ধক্ষেত্রে (ধার্যকাল ছাড়াই সমবেত করলেন)। যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে, সে যেন স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে, সে যেন স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে জীবিত থাকে। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে তাদের সংখ্যা অল্প দেখিয়েছিলেন। যদি তোমাকে তাদের সংখ্যা অধিক দেখাতেন, তাহলে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে অবশ্যই তিনি বিশেষভাবে অবহিত।

)স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিলে, তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প-সংখ্যক দেখিয়েছিলেন এবং তোমাদেরকেও তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প-সংখ্যক দেখিয়েছিলেন; যাতে যা ঘটার ছিল তা তিনি সম্পন্ন করেন। আর সব বিষয় আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে।

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
(আরবী) সম্পর্কে সংবাদ দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ঐ দিন তোমরা ওয়াদী দুনিয়ায় ছিলে যা মদীনার নিকটবর্তী একটি জায়গা। আর মুশরিকরা মক্কার দিকে এবং মদীনার দূরবর্তী উপত্যকায় অবস্থান করছিল। এদিকে আবু সুফিয়ান ও তার বাণিজ্যিক কাফেলা ব্যবসার মাল সম্ভারসহ নীচের দিকে সমুদ্রের ধারে ছিল। হে মুমিনরা! যদি তোমরা ও কাফির কুরায়েশরা প্রথম থেকেই যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করতে তবে যুদ্ধ কোথায় সংঘটিত হবে এ নিয়ে তোমাদের মধ্যে অবশ্যই মতানৈক্য সৃষ্টি হতো।” ভাবার্থ নিম্নরূপও বর্ণনা করা হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা যদি পরস্পরের সিদ্ধান্তক্রমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে তবে তোমরা মুশরিক সৈন্যদের আধিক্য ও তাদের রণ সম্ভারের আধিক্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর খুব সম্ভব হতোদ্যম হয়ে পড়তে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ কোন পূর্ব সিদ্ধান্ত ছাড়াই দু’টি দলকে আকস্মিকভাবে একত্রে মিলিয়ে দিলেন যাতে আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যায় এবং ইসলাম ও মুসলিমদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং মুশরিকদের হীনতা ও নীচতা প্রকাশ পায়। সুতরাং আল্লাহ পাক যা করতে চেয়েছিলেন তা তিনি করেই ফেললেন।” কাব ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও মুসলমানরা একমাত্র কাফেলার উদ্দেশ্যেই বের হয়েছিলেন। কোন তারিখ নির্ধারণ ও কোন যুদ্ধ প্রস্তুতি ছাড়াই তিনি মুসলমানদেরকে কাফিরদের সাথে মিলিয়ে দিলেন। আবু সুফিয়ান (রাঃ) সিরিয়া হতে কাফেলাসহ ফিরছিলেন। এদিকে আবু জেহেল কাফেলাকে মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। বাণিজ্যিক কাফেলা অন্য পথ ধরে আসছিল। অতঃপর মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেল। এর পূর্বে উভয় দল একে অপর থেকে সম্পূর্ণরূপে বে-খবর ছিল । পানি নেয়ার জন্যে আগমনকারীদেরকে দেখে এক দল অপর দলের অবস্থা অবগত হয়। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ)-এর ‘সীরাত’ গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চলছিলেন। সাফরা নামক স্থানের নিকটবর্তী হয়ে বাসবাস ইবনে আমর (রাঃ) ও আদী ইবনে আবু যা’বা জুহনী (রাঃ)-কে আবু সুফিয়ান (রাঃ)-এর গতিবিধি লক্ষ্য করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। তারা দু’জন বদর প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে বাতহার একটি টিলার উপর নিজেদের সওয়ারীকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তারা পানি নেয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে তাঁরা দুটি মেয়েকে পরস্পর ঝগড়া করতে দেখতে পান। একজন অপরজনকে বলছিলঃ “তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করছে না কেন?” অপর মেয়েটি উত্তরে বললোঃ “এতো তাড়াহুড়া করো না। আগামীকাল অথবা। পরশু এখানে বাণিজ্যিক কাফেলার আগমন ঘটবে। আমি তখন তোমাকে তোমার প্রাপ্য দিয়ে দেবো।” মাজদা ইবনে আমর নামক একটি লোক মধ্য থেকে বলে উঠলোঃ “এ মেয়েটি সঠিক কথাই বলেছে।” ঐ সাহাবী দু’জন তাদের কথাগুলো শুনে নেন এবং তৎক্ষণাৎ উটের উপর সওয়ার হয়ে নবী (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে যান ও তাঁর কাছে ঐ সংবাদ পরিবেশন করেন। ওদিকে আবু সুফিয়ান (রাঃ) কাফেলার পূর্বে একাকীই ঐ জায়গায় পৌঁছেন এবং মাজদা ইবনে আমরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই কূপের কাছে তুমি কাউকে দেখেছিলে কি?” সে উত্তরে বললোঃ “অবশ্যই দু’জন উষ্ট্রারোহী এসেছিল। তারা তাদের উট দু’টি ঐ টিলার উপর বসিয়ে রেখে এখানে এসে মশকে পানি ভর্তি করে নিয়ে চলে গেছে। এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান (রাঃ) ঐ পাহাড়ের উপর গমন করেন এবং উটের গোবর নিয়ে ভেঙ্গে দেখেন যে, ওর মধ্যে খেজুরের আঁটি রয়েছে। ঐ আঁটি দেখে তিনি বলে ওঠেনঃ “আল্লাহর শপথ! এরা মদীনারই লোক।” সেখান থেকে তিনি কাফেলার কাছে ফিরে যান এবং পথ পরিবর্তন করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে থাকেন। সুতরাং এদিক থেকে তিনি আস্বস্ত হলেন এবং তাদের রক্ষার্থে আগমনকারী কুরায়েশদেরকে দূত মারফত জানিয়ে দিলেনঃ “আল্লাহ তোমাদের বাণিজ্যিক কাফেলা ও মালধন রক্ষা করেছেন, সুতরাং তোমরা ফিরে যাও।” এ কথা শুনে আবূ জেহেল বলেঃ “না, এত দূর যখন এসেই গেছি তখন বদর পর্যন্ত অবশ্যই যাবো।” ওখানে একটি বাজার বসতো।

তাই সে বললোঃ “ওখানে আমরা তিনদিন অবস্থান করবো এবং উট যবেহ করবো, মদ পান করবো এবং গোশতের কাবাব তৈরী করবো যাতে সারা আরবে আমাদের ধুমধামের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং আমাদের বীরত্বপনার সংবাদ সবারই কানে পৌছে যায়। ফলে যেন তারা সদা সর্বদা আমাদের নামে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।” কিন্তু আখনাস ইবনে শুরাইক নামক একটি লোক বললোঃ “হে বানী যুহরা গোত্রের ললাকেরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাল রক্ষা করেছেন। সুতরাং তোমাদের ফিরে যাওয়াই উচিত।” ঐ গোত্রের লোকেরা তার কথা মেনে। নিলো এবং ফিরে গেল। তাদের সাথে বানু আদী গোত্রের লোকেরাও ফিরে গেল। এদিকে বদরের নিকটবর্তী হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ), সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) এবং যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ)-কে খবর নেয়ার জন্যে পাঠিয়ে দেন। আরো কয়েকজন সাহাবীকেও তাদের সঙ্গী করে দেন। তাঁরা বানু সাঈদ ইবনে আস ও বানু হাজ্জাজের গোলামদ্বয়কে কূয়ার ধারে পেয়ে যান। দু’জনকেই গ্রেফতার করে তাঁরা নবী (সঃ)-এর খিদমতে হাযির করেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায পড়ছিলেন। তারা তাদেরকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তারা প্রশ্ন করলেনঃ “তোমরা কে?” তারা উত্তরে বললোঃ “আমরা কুরায়েশদের পানি বহনকারী। তারা আমাদেরকে পানি নিতে পাঠিয়েছিল।” সাহাবীদের ধারণা ছিল যে, তারা আবু সুফিয়ানের লোক। এ জন্যে তারা তাদের প্রতি কঠোর হয়ে উঠলেন। তারা ভয় পেয়ে বলে উঠলো যে, তারা আবূ সুফিয়ানের কাফেলার লোক। তখন তারা তাদেরকে ছেড়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক রাকাআত নামায পড়ে নিয়ে সালাম ফিরিয়ে দেন এবং সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তারা যখন সত্য কথা বললো তখন তোমরা তাদেরকে মারধর করলে, আর যখন তারা মিথ্যা কথা বললো তখন তোমরা তাদেরকে ছেড়ে দিলে? আল্লাহর কসম! এরা পূর্বে সত্য কথাই বলেছিল। এরা কুরায়েশেরই গোলাম।” অতঃপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আচ্ছা বলতো, কুরায়েশদের সেনাবাহিনী কোথায় রয়েছে?” তারা উত্তরে বললোঃ “কুসওয়া উপত্যকার ঐ দিকের ঐ পাহাড়ের পিছনে রয়েছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “সংখ্যায় তারা কত হতে পারে?” তারা জবাব দিলোঃ “সংখ্যায় তারা অনেক।” তিনি বললেনঃ “সংখ্যায় তারা কত হতে পারে?” তারা বললোঃ “সংখ্যা তো আমাদের জানা নেই।” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, দৈনিক তারা কয়টা উট যবেহ করে থাকে তা তোমরা বলতে পার কি?” উত্তরে তারা বললোঃ “কোনদিন নয়টি এবং কোন দিন দশটি।” তিনি তখন মন্তব্য করলেনঃ “তাহলে সংখ্যায় তারা নয় হাজার থেকে দশ হাজার হবে। তারপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাদের মধ্যে কুরায়েশ নেতৃবর্গের কে কে আছে?” তারা উত্তর দিলোঃ “তারা হচ্ছে উত্যা ইবনে রাবীআ’, সায়বা ইবনে রাবীআ’, আবুল বাখতারী ইবনে হিশাম, হাকীম ইবনে হিশাম, নাওফেল ইবনে খুয়াইলিদ, হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফেল, তায়ীমা ইবনে আদী, নাযার ইবনে হারিস, যামআ ইবনে আসওয়াদ, আবূ জেহেল ইবনে হিশাম, উমাইয়া ইবনে খালফ, নাবীহ ইবনে হাজ্জাজ, মুনাব্বাহ্ ইবনে হাজ্জাজ, সালাহ ইবনে আমর এবং আমর ইবনে আবদূদ।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গকে বললেনঃ “জেনে রেখো যে, মক্কা নগরী ওর কলিজার টুকরোগুলোকে তোমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে।”

বদরের দিন দু’ দলের মধ্যে যখন মুকাবিলা শুরু হয়ে গেল তখন সা’দ ইবনে মুআয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আপনার জন্যে একটা কুটির নির্মাণ করে দেই। সেখানে আপনি অবস্থান করবেন। আর আমরা আমাদের জন্তুগুলো এখানে বসিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করবো। যদি আমরা জয়যুক্ত হই তবে তো আলহামদুলিল্লাহ, এটাই আমাদের কাম্য। আর যদি আল্লাহ না করুন, অন্য কিছু ঘটে যায় তবে আপনি আমাদের জানোয়ারগুলোর উপর সওয়ার হয়ে ওগুলোকে সাথে নিয়ে আমাদের কওমের ঐ মহান ব্যক্তিদের কাছে যাবেন যারা মদীনায় রয়েছেন। আপনার প্রতি তাদের ভালবাসা আমাদের চেয়ে বেশী রয়েছে। এখানে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হবে এটা তাঁদের অজানা ছিল। তা না হলে তারা কখনো আপনার সঙ্গ ছাড়তেন না। আপনার সাহায্যার্থে অবশ্যই তারা বেরিয়ে আসতেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এ পরামর্শ মেনে নিলেন এবং তার জন্যে দুআ করলেন। অতঃপর তিনি ঐ তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করলেন। তার সাথে আবু বকর (রাঃ) ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। সকাল হতেই কুরায়েশ সেনাবাহিনীকে পাহাড়ের পিছন দিক থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। তাদেরকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ “হে আল্লাহ! এ লোকগুলো গর্বের সাথে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ও আপনার রাসূল (সঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন। করার মানসে এগিয়ে আসছে। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করুন।ইবনে ইসহাকের সীরাতের মধ্যে এই আয়াতের শেষ বাক্যটির তাফসীর নিম্নরূপ এসেছেঃ “এটা এ কারণে যে, যেন কাফিররা কুফরীর উপর থেকেও আল্লাহর দলীল প্রমাণ দেখে নেয় এবং মুমিনরাও দলীল দেখেই ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। অর্থাৎ কোন উত্তেজনা, শর্ত ও দিন নির্ধারণ ছাড়াই আকস্মিকভাবে আল্লাহ তা’আলা এখানে মুমিন ও কাফিরদেরকে মুকাবিলা করে দিলেন, উদ্দেশ্য এই যে, তিনি সত্যকে মিথ্যার উপর জয়যুক্ত করে সত্যকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করবেন, এভাবে যেন কারো মনে কোন সংশয় ও সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে। এখন যে কুফরীর উপর থাকবে সে কুফরীকে কুফরী মনে করেই থাকবে। আর যে মুমিন হবে সে দলীল প্রমাণ দেখেই ঈমানের উপর কায়েম থাকবে। ঈমানই হচ্ছে অন্তরের জীবন এবং কুফরীই হচ্ছে প্রকৃত ধ্বংস।” যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ ব্যক্তি, যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং আমি তার জন্যে একটা নূর বানিয়েছি। সে ঐ নূরের মাধ্যমে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করছে।” (৬:১২২) তুহমাত বা অপবাদের ঘটনায় আয়েশা (রাঃ)-এর কথাগুলো ছিলঃ “ যে ধ্বংস হওয়ার ছিল সে ধ্বংস হলো।” অর্থাৎ অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে সে অংশ নিলো।

(আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের বিনয়, প্রার্থনা, ইতিগফার, ফরিয়াদ, মুনাজাত ইত্যাদি সবই শ্রবণকারী। (আরবী) অর্থাৎ তোমরা যে আহলে হক, তোমরা যে সাহায্য পাওয়ার যোগ্য এবং তোমরা এরও যোগ্য যে, তোমাদেরকে কাফির ও মুশরিকদের উপর জয়যুক্ত করা উচিত, এসব বিষয় আল্লাহ ভালভাবে অবগত আছেন।

৪৩-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:

মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে স্বপ্নে মুশরিকদের সংখ্যা খুবই কম দেখান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীবর্গের নিকট তা বর্ণনা করেন। এটা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাগুলো অটল থাকার কারণ হয়ে যায়। কোন কোন বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন যে, মুশরিকদের সংখ্যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ চোখে কম দেখানো হয় যে চোখে তিনি দ্রিা যেতেন। কিন্তু এটা গারীব বা দুর্বল কথা। কেননা, কুরআন কারীমে যখন (আরবী) শব্দ রয়েছে তখন বিনা দলীলে ওর এরূপ ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন কি? সম্ভাবনা ছিল যে, মুশরিকদের সংখ্যাধিক্য মুসলমানদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করতো এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন কি করবেন না এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হতো। আল্লাহ তা’আলা এটা থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলেন এবং মুশরিকদের সংখ্যা কম দেখালেন। আল্লাহ পাক অন্তরের গুপ্ত কথা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত। তিনি চক্ষুর খিয়ানত ও অন্তরের গুপ্ত রহস্য জানেন। তিনি এই দয়াও দেখালেন যে, মুসলমানদের দৃষ্টিতে যুদ্ধের সময়েও মুশরিকদের সংখ্যা কম দেখালেন, যাতে তারা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেন। এবং তাদেরকে খুবই নগণ্য মনে করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি আমার সঙ্গীকে মুশরিকদের আনুমানিক সংখ্যা বললাম যে, তারা প্রায় ৭০ (সত্তর) জন হবে। আমার সাথী তখন পূর্ণভাবে অনুমান করে বললেনঃ “না, তারা প্রায় ১০০ (একশ’) জন হবে।” অতঃপর তাদের একজন লোক আমাদের হাতে বন্দী হয়। তাকে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কতজন রয়েছে? সে উত্তরে বললোঃ “আমাদের সৈন্যসংখ্যা এক হাজার।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ও ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 42-44
إِذْ يُرِيكَهُمُ اللّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلً

When Allah showed them to you as few in your dream

Some Details of the Battle of Badr

Allah describes Yawm Al-Furqan, (i.e. the day of Badr),

إِذْ أَنتُم بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا

(And remember) when you (the Muslim army) were on the near side of the valley,

camping in the closest entrance of the valley towards Al-Madinah,

وَهُم

and they,

the idolators, who were camped,

بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَى

on the farther side,

from Al-Madinah, towards Makkah.

وَالرَّكْبُ

and the caravan,

that was under the command of Abu Sufyan, with the wealth that it contained,

أَسْفَلَ مِنكُمْ

on the ground lower than you,

closer to the sea,

وَلَوْ تَوَاعَدتَّمْ

even if you had made a mutual appointment to meet,

you and the idolators,

لَاخْتَلَفْتُمْ فِي الْمِيعَادِ

you would certainly have failed in the appointment,

Muhammad bin Ishaq said, “Yahya bin Abbad bin Abdullah bin Az-Zubayr narrated to me from his father about this Ayah

“Had there been an appointed meeting set between you and them and you came to know of their superior numbers and your few forces, you would not have met them,

وَلَـكِن لِّيَقْضِيَ اللّهُ أَمْراً كَانَ مَفْعُولاً

but (you met) that Allah might accomplish a matter already ordained,

Allah had decreed that He would bring glory to Islam and its people, while disgracing Shirk and its people. You (the companions) had no knowledge this would happen, but it was out of Allah’s compassion that He did that.”

In a Hadith, Ka`b bin Malik said,

“The Messenger of Allah and the Muslims marched to intercept the Quraysh caravan, but Allah made them meet their (armed) enemy without appointment.”

Muhammad bin Ishaq said that Yazid bin Ruwman narrated to him that Urwah bin Az-Zubayr said,

“Upon approaching Badr, the Messenger of Allah sent Ali bin Abi Talib, Sa`d bin Abi Waqqas, Az-Zubayr bin Al-Awwam and several other Companions to spy the pagans.

They captured two boys, a servant of Bani Sa`id bin Al-`As and a servant of Bani Al-Hajjaj, while they were bringing water for Quraysh. So they brought them to the Messenger of Allah, but found him praying.

The Companions started interrogating the boys, asking them to whom they belonged. Both of them said that they were employees bringing water for Quraysh (army). The Companions were upset with that answer, since they thought that the boys belonged to Abu Sufyan (who was commanding the caravan). So they beat the two boys vehemently, who said finally that they belonged to Abu Sufyan. Thereupon companions left them alone.

When the Prophet ended the prayer, he said,

إَذَا صَدَّقَاكُمْ ضَرَبْتُمُوهُمَا وَإِذَا كَذَّبَاكُمْ تَرَكْتُمُوهُمَا صَدَقَا وَاللهِ إِنَّهُمَا لِقُرَيْشٍ أَخْبِرَانِي عَنْ قُرَيْش

When they tell you the truth you beat them, but when they lie you let them go They have said the truth, by Allah! They belong to the Quraysh.

addressing to the boys He said:Tell me the news about Quraysh.

The two boys said, `They are behind this hill that you see, on the far side of the valley.’

The Messenger of Allah asked,

كَمِ الْقَوْمُ

How many are they?

They said, `They are many.’

He asked,

مَاعُدَّتُهُمْ

How many?

They said, `We do not know the precise number.’

He asked,

كَمْ يَنْحَرُونَ كُلَّ يَوْمٍ

How many camels do they slaughter every day?

They said, `Nine or ten a day.’

The Messenger of Allah said,

الْقَوْمُ مَا بَيْنَ التِّسْعمِايَةِ إِلَى الاَْلْف

They are between nine-hundred and a thousand.

He asked again,

فَمَنْ فِيهِمْ مِنْ أَشْرَافِ قُرَيْشٍ

Which chiefs of Quraysh are accompanying the army?

They said,

Utbah bin Rabiah,

Shaybah bin Rabiah,

Abu Al-Bakhtari bin Hisham,

Hakim bin Hizam,

Nawfal bin Khuwaylid,

Al-Harith bin Amir bin Nawfal,

Tu`aymah bin Adi bin Nawfal,

An-Nadr bin Al-Harith,

Zam`ah bin Al-Aswad,

Abu Jahl bin Hisham,

Umayyah bin Khalaf,

Nabih and Munabbih sons of Al-Hajjaj,

Suhayl bin Amr and

Amr bin Abd Wadd.

The Messenger of Allah said to the people,

هَذِهِ مَكَّةُ قَدْ أَلْقَتْ إِلَيْكُمْ أَفَلَذَ كَبِدِهَا

This is Makkah! She has brought you her most precious sons (its chiefs)!”

Allah said,

لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَن بَيِّنَةٍ وَيَحْيَى مَنْ حَيَّ عَن بَيِّنَةٍ

So that those who were to be destroyed might be destroyed after a clear evidence.

Muhammad bin Ishaq commented,

“So that those who disbelieve do so after witnessing clear evidence, proof and lessons, and those who believe do so after witnessing the same.”

This is a sound explanation.

Allah says,

He made you meet your enemy in one area without appointment, so that He gives you victory over them.’ This way, `He will raise the word of truth above falsehood, so that the matter is made clear, the proof unequivocal and the evidence plain. Then there will be no more plea or doubt for anyone. Then, those destined to destruction by persisting in disbelief do so with evidence, aware that they are misguided and that proof has been established against them,
وَيَحْيَى مَنْ حَيَّ
(and those who were to live might live), those who wish to believe do so,
عَن بَيِّنَةٍ
(after a clear evidence), and proof. Verily, faith is the life of the heart, as Allah said,

أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَـهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِى النَّاسِ كَمَن

Is he who was dead (without faith by ignorance and disbelief) and We gave him life (by knowledge and faith) and set for him a light (of belief) whereby he can walk among men (6:122)

Allah said next,

وَإِنَّ اللّهَ لَسَمِيعٌ

And surely, Allah is All-Hearer,

of your invocation, humility and requests for His help,

عَلِيمٌ

All-Knower.

meaning; about you, and you deserve victory over your rebellious, disbelieving enemies.
Allah made each Group look few in the Eye of the Other

Allah said,

إِذْ يُرِيكَهُمُ اللّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلً

(And remember) when Allah showed them to you as few in your dream;

Mujahid said,

“In a dream, Allah showed the Prophet the enemy as few. The Prophet conveyed this news to his Companions and their resolve strengthened.”

Similar was said by Ibn Ishaq and several others.

Allah said,

وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الَامْرِ

If He had shown them to you as many, you would surely, have been discouraged, and you would surely have disputed in making a decision.

you would have cowardly abstained from meeting them and fell in dispute among yourselves,

وَلَـكِنَّ اللّهَ سَلَّمَ

(But Allah saved), from all this, when He made you see them as few,

إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

Certainly, He is the All-Knower of that is in the breasts.

Allah knows what the heart and the inner-self conceal,

يَعْلَمُ خَأيِنَةَ الاٌّعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُورُ

Allah knows the fraud of the eyes, and all that the breasts conceal. (40:19)

Allah’s statement.

وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِي أَعْيُنِكُمْ قَلِيلً

And (remember) when you met, He showed them to you as few in your eyes,

demonstrates Allah’s compassion towards the believers. Allah made them see few disbelievers in their eyes, so that they would be encouraged and feel eager to meet them.

Abu Ishaq As-Subai`i said, that Abu Ubaydah said that Abdullah bin Mas`ud said,

“They were made to seem few in our eyes during Badr, so that I said to a man who was next to me, `Do you think they are seventy?’

He said, `Rather, they are a hundred.’

However, when we captured one of them, we asked him and he said, `We were a thousand.”‘

Ibn Abi Hatim and Ibn Jarir recorded it.

Allah said next,

وَيُقَلِّلُكُمْ فِي أَعْيُنِهِمْ
.

and He made you appear as few in their eyes,

According to Ikrimah, as recorded by Ibn Abi Hatim,

Allah said,
وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ
(And (remember) when you met. He showed them to you…),

He encouraged each of the two groups against the other.

This statement has a Sahih chain of narrators.

..
لِيَقْضِيَ اللّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولاً وَإِلَى اللّهِ تُرْجَعُ الامُورُ

so that Allah might accomplish a matter already ordained, and to Allah return all matters (for decision).

Muhammad bin Ishaq said that Yahya bin Abbad bin Abdullah bin Az-Zubayr narrated to him that his father said about Allah’s statement,
لِيَقْضِيَ اللّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولاً
(so that Allah might accomplish a matter already ordained),

“In order for the war to start between them, so that He would have revenge against those whom He decided to have revenge (pagans), and grant and complete His favor upon those He decided to grant favor to, His supporters.”

The meaning of this, is that Allah encouraged each group against the other and made them look few in each other’s eyes, so that they were eager to meet them. This occurred before the battle started, but when it started and Allah supported the believers with a thousand angels in succession, the disbelieving group saw the believers double their number.

Allah said,

قَدْ كَانَ لَكُمْ ءَايَةٌ فِي فِيَتَيْنِ الْتَقَتَا فِيَةٌ تُقَـتِلُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَى كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْىَ الْعَيْنِ وَاللَّهُ يُوَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَأءُ إِنَّ فِى ذَلِكَ لَعِبْرَةً لاوْلِى الاٌّبْصَـرِ

There has already been a sign for you (O Jews) in the two armies that met (in combat, the battle of Badr). One was fighting in the cause of Allah, and as for the other, (they) were disbelievers. They (disbelievers) saw them (believers) with their own eyes twice their number. And Allah supports with His aid whom He wills. Verily, in this is a lesson for those who understand. (3:13)

This is how we combine these two Ayat, and certainly, each one of them is true, all the thanks are due to Allah and all the favors are from Him.

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] دُنيا শব্দটির উৎপত্তি دُنُو থেকে, যার অর্থঃ নিকটে। এখানে ‘নিকট প্রান্ত’ বলে সেই প্রান্তকে বোঝানো হয়েছে যেটা মদীনা শহর থেকে নিকটেই ছিল। আর قصوى বলা হয় দূরকে। কাফেররা সেই প্রান্তে ছিল, যা মদীনা শহর থেকে দূরে অবস্থিত ছিল।

[২] ‘কাফেলা’ থেকে সেই বাণিজ্যিক দলকে বোঝানো হয়েছে যা আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে শাম থেকে মক্কা ফিরছিল এবং (মক্কায় কবলিত সম্পত্তির বিনিময় স্বরূপ) যা পাবার উদ্দেশে মূলতঃ মুসলিমগণ এই দিকে এসেছিলেন। এ উটের কাফেলা পাহাড় থেকে বহুদূরে পশ্চিম দিকে নিম্নভূমিতে অবস্থিত ছিল। আর বদর প্রান্ত যুদ্ধক্ষেত্র ছিল উঁচু জায়গায়।

[৩] অর্থাৎ, যদি যুদ্ধের দিন ও তারীখ নির্ধারিত করে পরস্পরের মাঝে অঙ্গীকার বা ঘোষণা হত, তাহলে এমন সম্ভব ছিল, বরং নিশ্চিত ছিল যে, কোন দল লড়াই ছাড়াই পাশ কেটে যেত। কিন্তু এই যুদ্ধ ঘটার কথা যেহেতু আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছিলেন তাই তার জন্য এমন কারণ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, উভয় দল কোন প্রকার পূর্বদত্ত অঙ্গীকার ও হুমকি ছাড়াই বদর প্রান্তরে যুদ্ধের জন্য এক অপরের সামনা-সামনি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

[৪] এ হল আল্লাহর তকদীরী ইচ্ছার হেতু বা কারণ, যার ফলে উভয় দল বদরের ময়দানে একত্রিত হল। যাতে যে ঈমানদার হয়ে জীবিত থাকবে, সে যেন দলীলের সাথে জীবিত থাকে এবং তার এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, ইসলাম হল সত্য ধর্ম। কেননা, এর সত্যতার চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছে বদরের যুদ্ধে। আর যে কাফের অবস্থায় ধ্বংস হবে, সেও যেন দলীলের সাথে ধ্বংস হয়। কেননা, এতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মুশরিকদের পথ হল ভ্রষ্ট এবং বাতিল।
* আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-কে সবপ্নে কাফেরদের সংখ্যা অল্প দেখিয়েছিলেন। আর সেই সংখ্যা তিনি সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করলেন। যার ফলে তাঁদের হিম্মত বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদি তাঁদের তুলনায় কাফেরদের সংখ্যা বেশী দেখানো হত, তাহলে হয়তো সাহাবাগণের হিম্মত দমে যেত এবং আপোসের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই দু’টি সমস্যা থেকে তাঁদেরকে বাঁচিয়ে নিলেন।

* যাতে সেই কাফেররাও তোমাদের ভয়ে পিছু হটে না যায়। প্রথম ঘটনাটি ছিল স্বপ্নের। আর এটা ঠিক লড়াইয়ের সময় দেখানো হয়েছিল, যেমন কুরআনের শব্দাবলী হতে এ কথা স্পষ্ট হয়। পরন্তু এই ব্যাপারটি শুরুর দিকে ছিল। কিন্তু যখন পূর্ণভাবে লড়াই আরম্ভ হয়ে গেল তখন কাফেররা মুসলিমদেরকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখতে পেল; যেমন সূরা আলে ইমরানের ৩:১৩নং আয়াত থেকে সে কথা জানা যায়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে সংখ্যা বেশী দেখাবার হিকমত এই ছিল যে, যাতে অধিক সংখ্যা দেখে তাদের অন্তরে মুসলিমদের ত্রাস ও ভীতি সঞ্চার হয় এবং তার ফলে কাফেরদের মধ্যে কাপুরুষতা, ভীরুতা ও নিরুদ্যমতা এসে যায়। আর এর বিপরীত প্রথমে কম সংখ্যা দেখানোতে হিকমত এটাই ছিল যে, তারা যেন যুদ্ধ থেকে দূরে সরে না পড়ে।

* এসবের উদ্দেশ্য ছিল যে, আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করে রেখেছিলেন তা পূরণ হয়ে যায়। এই জন্য তিনি তার কারণ ও উপকরণ সৃষ্টি করে দিলেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

প্রমাণ হয়ে যাবে যে, যে জীবিত আছে তার জীবিত থাকাই উচিত ছিল এবং যে ধ্বংস হয়ে গেছে তার ধ্বংস হয়ে যাওয়াই সমীচীন ছিল। এখানে জীবিত থাকা ও ধ্বংস হওয়া বলতে ব্যক্তিদেরকে নয় বরং ইসলাম ও জাহেলিয়াতকে বুঝানো হয়েছে।

* অর্থাৎ আল্লাহ‌ অন্ধ, বধির ও বেখবর নন। বরং তিনি জ্ঞানী-সবকিছু জানেন এবং সবকিছু দেখেন। তাঁর রাজত্বে অন্ধের মত আন্দাজে কাজ-কারবার হচ্ছে না।

* এটা এমন এক সময়ের কথা, যখন নবী (সা.) মুসলমানদের নিয়ে মদীনা থেকে বের হচ্ছিলেন অথবা পথে কোন মনযিলে অবস্থান করছিলেন তখন কাফেরদের যথার্থ সৈন্য সংখ্যা জানা যায়নি। এ সময় নবী (সা.) স্বপ্নে কাফেরদের সেনাবাহিনী দেখলেন। তাঁর সামনে যে দৃশ্যপট পেশ করা হয় তাতে শত্রু সেনাদের সংখ্যা খুব বেশী নয় বলে তিনি অনুমান করতে পারলেন। এ স্বপ্নের বিবরণ তিনি মুসলমানদের শুনালেন। এতে মুসলমানদের হিম্মত বেড়ে গেলো এবং তারা তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখলো।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

৪২-৪৪ নং আয়াতের তাফসীরঃ

এ আয়াতগুলোতে বদরের প্রান্তরে উভয় বাহিনীর অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিম বাহিনী বদর প্রান্তরে মদীনার নিকটবর্তী উপতক্যার কাছে অবস্থান করেছিল। আর কাফিররা ছিল মদীনার দূরবর্তী উপত্যকার কাছে।

কাফেলা বলতে আবূ সুফিয়ানের বাণিজ্যিক দলকে বুঝানো হয়েছে যা শাম থেকে মক্কায় ফিরছিল, যাকে ধরার জন্য মুসিলমরা বের হয়েছিল। এ কাফেলা ছিল সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় নিন্ম ভূমিতে।

(وَلَوْ تَوَاعَدْتُمْ لَاخْتَلَفْتُم)

‘যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত করতে চাইতে তবে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটত।’ অর্থাৎ যদি পূর্ব থেকে যুদ্ধের দিন ও তারিখ নির্ধারণ করে পরস্পরের মাঝে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে তাহলে কখনো পারতে না বরং মতানৈক্য করতে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকদীরে রেখেছেন- দুই দলকে একত্রিত করে ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যক্তিদের ধ্বংস করে ঈমানদারদের জীবিত রাখবেন।

(يُرِيْكَهُمُ اللّٰهُ فِيْ مَنَامِكَ قَلِيْلًا)

‘স্মরণ কর! আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় অল্প; মুজাহিদ (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাঃ)-কে স্বপ্নযোগে কাফিরদের সংখ্যা কম দেখিয়েছিলেন। আর সেই সংখ্যা তিনি সাহাবাদের মাঝে বর্ণনা করে দিলেন। ফলে তাদের হিম্মত বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু যদি সংখ্যা বেশি দেখাতেন তাহলে সাহস হারিয়ে ফেলত এবং যুদ্ধ করবে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য করত। অনুরূপভাবে কাফিরদের দৃষ্টিতে মুসলিমদের সংখ্যা আল্লাহ তা‘আলা কম দেখিয়ে ছিলেন ফলে তারা পিছপা না হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এরূপ আল্লাহ তা‘আলা করেছেন তার নির্ধারিত কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য। এ সম্পর্কে সূরা আলি-ইমরানের ১৩ নং আয়াতে আরো সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. বদর যুদ্ধে মুসলিমদের অবস্থান সম্পর্কে জানলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে যা কিছু করেছেন তা পূর্ব নির্ধারিত।
৩. আল্লাহ তা‘আলার কাজের হিকমত অবগত হলাম।
৪. সবকিছুর প্রত্যাবর্তন আল্লাহ তা‘আলার কাছে।

Leave a Reply