أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٣٨١)-৫৮৪
www.motaher21.net
সুরা: আল্ – আনফাল।
সুরা:৮
৫৫-৫৭ নং আয়াত:-
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰہِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿ۖۚ۵۵﴾
Striking Hard against Those Who disbelieve and break the Covenants
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব তারাই, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান (কুফরী) করেছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস (ঈমান আনয়ন) করবে না।
اَلَّذِیۡنَ عٰہَدۡتَّ مِنۡہُمۡ ثُمَّ یَنۡقُضُوۡنَ عَہۡدَہُمۡ فِیۡ کُلِّ مَرَّۃٍ وَّ ہُمۡ لَا یَتَّقُوۡنَ ﴿۵۶﴾
فَاِمَّا تَثۡقَفَنَّہُمۡ فِی الۡحَرۡبِ فَشَرِّدۡ بِہِمۡ مَّنۡ خَلۡفَہُمۡ لَعَلَّہُمۡ یَذَّکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾
ওদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ, তারা প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তারা সাবধান হয় না।
যুদ্ধে ওদেরকে তোমরা যদি তোমাদের আয়ত্তে পাও, তাহলে তাদেরকে এমন শায়েস্তা কর, যাতে ওদের পশ্চাতে যারা আছে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পলায়ন করে। সম্ভবতঃ তারা শিক্ষা লাভ করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
شر الناس (নিকৃষ্টতম মানুষ) এর পরিবর্তে তাদেরকে شر الدوابّ (নিকৃষ্টতম জীব) বলা হয়েছে; যা আভিধানিক অর্থ হিসাবে এটা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তু প্রভৃতির ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। কিন্তু সাধারণতঃ এর ব্যবহার চতুষ্পদ জন্তুর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। বুঝা যায় যে, কাফেরদের সম্পর্ক মানুষের সাথে নয়। (বরং জন্তুর সাথে। নিজের সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার ও অমান্য করে) কুফরে পতিত হয়ে তারা চতুষ্পদ জন্তু; বরং তার থেকেও নিকৃষ্ট জীব হয়ে গেছে।
*এখানে কাফেরদেরই একটা খারাপ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রত্যেকবার তারা চুক্তি ভঙ্গ করে এবং তার মন্দ পরিণাম হতে একটুকুও ভয় করে না। কেউ কেউ এ থেকে ইয়াহুদী গোত্র বানু কুরাইযাকে বুঝিয়েছেন। যাদের সাথে রসূল (সাঃ)-এর চুক্তি ছিল যে, তারা কাফেরদের কোন প্রকার মদদ করবে না। কিন্তু তারা সে চুক্তি রক্ষা করেনি।
* شرِّدْ بهم বলতে তাদেরকে এমন মার মারো, যাতে তাদের পশ্চাতে তাদের পৃষ্ঠপোষক এবং সাথীদের মাঝে ভাগ-দৌড় অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যায়। এমন কি তারা তোমার দিকে এই আশংকায় অগ্রসর না হয় যে, হতে পারে তাদেরও সেই অবস্থা হবে, যে অবস্থা তাদের অগ্রবর্তীদের হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এখানে বিশেষভাবে ইহুদীদের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। মদীনা তাইয়েবায় আসার পর নবী ﷺ সর্বপ্রথম তাদের সাথেই সৎ প্রতিবেশী সুলভ জীবন-যাপন ও পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার চুক্তি করেছিলেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তিনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পূর্ণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাছাড়া ধর্মীয় দিক দিয়েও তিনি ইহুদীদেরকে মুশরিকদের তুলনায় নিজের অনেক কাছের মনে করতেন। প্রত্যেক ব্যাপারেই তিনি মুশরিকদের মোকাবিলায় আহলি কিতাবদের মত ও পথকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু নবী ﷺ নির্ভেজাল তাওহীদ ও সৎ চরিত্র নীতি সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচার করে চলছিলেন, বিশ্বাস ও কর্মের গোমরাহীর বিরুদ্ধে যে সমালোচনা করে চলছিলেন এবং সত্য দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রচেষ্ঠা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ইহুদীদের উলামা ও মাশায়েখ গোষ্ঠী তা একটুও পছন্দ করতো না। এ নতুন আন্দোলন যাতে কোনভাবেই সাফল্য লাভ করতে না পারে সেজন্য তারা অনবরত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা মদীনার মুনাফিক মুসলমানদের সাথে মিলে চক্রান্ত করে চলছিল। এ উদ্দেশ্যেই তারা আওস ও খাযরাজ বংশীয় লোকদের যেসব পুরাতন শত্রুতা ইসলাম পূর্বযুগে তাদের মধ্যে খুনাখুনি ও হানাহানির কারণ হতো, সেগুলোকে উৎসাহিত ও উত্তেজিত করতো। এ উদ্দেশ্যেই কুরাইশ ও অন্যান্য ইসলাম বিরোধী গোত্রগুলোর সাথে তাদের গোপন যোগসাজস চলছিল। নবী (সা.) ও তাদের মধ্যে যে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা সত্ত্বেও এসব কাজ করে চলছিল। যখন বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হলো, শুরুতে তারা আশা করেছিল, কুরাইশদের প্রথম আঘাতেই এই আন্দোলনের মৃত্যু ঘণ্টা বেজে উঠবে। কিন্তু ফলাফল দেখা গেলো তাদের প্রত্যাশার বিপরীত। এ অবস্থায় তাদের অন্তরে আরো বেশী করে জ্বলে উঠলো হিংসার আগুন। বদরের বিজয় যাতে ইসলামের শক্তিকে একটি স্থায়ী ‘বিপদে’ পরিণত না করে দেয় এআশঙ্কায় তারা নিজেদের বিরোধীতামূলক প্রচেষ্টা আরো বেশী জোরদার করে দিল। এমনকি একজন নেতা কা’ব ইবনে আশরাফ (কুরাইশদের পরাজয়ের খবর শুনে যে ব্যক্তি চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আজ যমীনের পেট তার পিঠের চেয়ে আমাদের জন্য অনেক ভাল) নিজে মক্কা গেলো। সেখানে সে উদ্দীপনাময় শোক গীতি গেয়ে কুরাইশদের অন্তরে প্রতিশোধ স্পৃহা জাগিয়ে তুলতে থাকলো। এখানেই তারা ক্ষান্ত হলো না। ইহুদীদের বনী কাইনুকা গোত্র সৎ প্রতিবেশী সুলভ বসবাসের চুক্তি ভঙ্গ করে তাদের জনবসতিতে যেসব মুসলমান মেয়ে কোন কাজে যেতো, তাদেরকে উত্যক্ত ও উৎপীড়ন করতে শুরু করলো। নবী ﷺ যখন তাদের এ অন্যায় কার্যকলাপের জন্য তাদের তিরস্কার করলেন তখন তারা জবাবে হুমকি দিলঃ “আমাদের মক্কার কুরাইশ মনে করো না। আমরা যুদ্ধ করতে ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রাণ দিতে জানি। আমাদের মোকাবিলায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে নামলে তোমরা টের পাবে, পুরুষ কাকে বলে।”
এর অর্থ হচ্ছে, যদি কোন জাতির সাথে আমাদের চুক্তি হয়, তারপর তারা নিজেদের চুক্তির দায়িত্ব বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে আমরাও চুক্তির নৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাবো। এক্ষেত্রে আমরাও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার লাভ করবো। তাছাড়া যদি কোন জাতির সাথে আমাদের যুদ্ধ চলতে থাকে এবং আমরা দেখি, শত্রুপক্ষের সাথে এমন এক সম্প্রদায়ের লোকরাও যুদ্ধে শামিল হয়েছে যাদের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে তাহলে আমরা তাদেরকে হত্যা করতে এবং তাদের সাথে শত্রুর মত ব্যবহার করতে একটুও দ্বিধা করবো না। কারণ তারা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গ করে তাদের ধন-প্রাণের নিরাপত্তার প্রশ্নে তাদের সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের যে চুক্তি রয়েছে তা লংঘন করেছে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তার অধিকার তারা প্রমাণ করতে পারেনি।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 55-57
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰہِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿ۖۚ۵۵﴾
Striking Hard against Those Who disbelieve and break the Covenants.
Striking Hard against Those Who disbelieve and break the Covenants
Allah says;
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللّهِ الَّذِينَ كَفَرُواْ فَهُمْ لَا يُوْمِنُونَ
الَّذِينَ عَاهَدتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِي كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ
Verily, the worst of living creatures before Allah are those who disbelieve, — so they shall not believe.
They are those with whom you made a covenant, but they break their covenant every time and they do not have Taqwa.
Allah states here that the worst moving creatures on the face of the earth are those who disbelieve, who do not embrace the faith, and break promises whenever they make a covenant, even when they vow to keep them,
وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ
and they do not have Taqwa.
meaning they do not fear Allah regarding any of the sins they commit.
فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ
So if you gain the mastery over them in war,
if you defeat them and have victory over them in war,
فَشَرِّدْ بِهِم مَّنْ خَلْفَهُمْ
then disperse those who are behind them,
According to Ibn Abbas, Al-Hasan Al-Basri, Ad-Dahhak, As-Suddi, Ata’ Al-Khurasani and Ibn Uyaynah,
by severely punishing (the captured people).
This Ayah commands punishing them harshly and inflicting casualties on them. This way, other enemies, Arabs and non-Arabs, will be afraid and take a lesson from their end,
لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
so that they may learn a lesson.
As-Suddi commented,
“They might be careful not to break treaties, so that they do not meet the same end.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৫৫-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন- ভূ-পৃষ্ঠে যত প্রাণী চলাফেরা করছে ওদের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারাই যারা বেঈমান ও কাফির, যারা চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে দেয়। এদিকে একটি কথা দিলো, আর ওদিকে তা থেকে ফিরে গেল। এদিকে শপথ করলো, ওদিকে তা ভেঙ্গে দিলো। তাদের না আছে আল্লাহর কোন ভয় এবং না আছে কৃত পাপের কোন পরওয়া। সুতরাং হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যখন তুমি যুদ্ধে তাদের উপর জয়যুক্ত হবে তখন তাদেরকে এমন শাস্তি দিবে যে, যেন তাদের পরবর্তী লোকেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তারাও যেন ভয় পেয়ে যায়। তাহলে হয়তো তারা তাদের পূর্ববর্তীদের কৃত দুষ্কার্য থেকে বিরত থাকবে। [এ কথা বলেছেন ইবনে আব্বাস (রাঃ), হাসান বসরী (রঃ), যহহাক (রঃ), সুদ্দী (রঃ), আতা খুরাসানী (রঃ) এবং ইবনে উয়াইনা (রঃ)]
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
اِنَّ شَرَّ الدَّوَا۬بِّ عِنْدَ اللّٰهِ)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব তারাই..’ খারাপ জীব ব্যবহার করা হয় চতুষ্পদ জন্তুর ক্ষেত্রে। কিন্তু তা কাফিরদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, এতে বুঝা গেল তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত জীব, এরা মানুষ নয়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِﺘ لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِهَا ز وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا ط أُولٰ۬ئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ط أُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ)
“আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না, এবং তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা শ্রবণ করে না, তারাই পশুর ন্যায়, বরং তারা অধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফিল।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
কাফিররা আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিকৃষ্ট জাতি।