Book#589

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٣٨٦)-৫৮৯
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ – আনফাল।
সুরা:৮
৬৭-৭১ নং আয়াত:-
وَ اللّٰہُ یُرِیۡدُ الۡاٰخِرَۃ
আল্লাহ চান পরলোকের কল্যাণ।
Allah desires (for you) the Hereafter.

مَا کَانَ لِنَبِیٍّ اَنۡ یَّکُوۡنَ لَہٗۤ اَسۡرٰی حَتّٰی یُثۡخِنَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ تُرِیۡدُوۡنَ عَرَضَ الدُّنۡیَا ٭ۖ وَ اللّٰہُ یُرِیۡدُ الۡاٰخِرَۃَ ؕ وَ اللّٰہُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۷﴾
لَوۡ لَا کِتٰبٌ مِّنَ اللّٰہِ سَبَقَ لَمَسَّکُمۡ فِیۡمَاۤ اَخَذۡتُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۶۸﴾
فَکُلُوۡا مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿٪۶۹﴾
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّمَنۡ فِیۡۤ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنَ الۡاَسۡرٰۤی ۙ اِنۡ یَّعۡلَمِ اللّٰہُ فِیۡ قُلُوۡبِکُمۡ خَیۡرًا یُّؤۡتِکُمۡ خَیۡرًا مِّمَّاۤ اُخِذَ مِنۡکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۷۰﴾

وَ اِنۡ یُّرِیۡدُوۡا خِیَانَتَکَ فَقَدۡ خَانُوا اللّٰہَ مِنۡ قَبۡلُ فَاَمۡکَنَ مِنۡہُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۷۱﴾
দেশে সম্পূর্ণভাবে শত্রু নিপাত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ চান পরলোকের কল্যাণ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

আল্লাহর পূর্ব বিধান (লিপিবদ্ধ) না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ, তার জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত।

যুদ্ধে তোমরা যা কিছু (গনীমত) লাভ করেছ, তা বৈধ ও পবিত্ররূপে ভোগ কর। আর আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হে নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বল, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন, তাহলে তোমাদের নিকট হতে (মুক্তিপণ হিসাবে) যা নেওয়া হয়েছে, তা অপেক্ষা উত্তম কিছু তিনি তোমাদেরকে দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

আর তারা তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইলে (করতে পারে) তারা তো পূর্বে আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, পরিশেষে তিনি তাদেরকে (তোমার হাতে) গ্রেফতার করিয়েছেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৬৭-৭১ নং আয়াতের তাফসীর:

يُثْخِنَ পরাভূত হওয়া, নির্মূল হওয়া।

৬৭ নং আয়াতের শানে নুযূল:

ইবুন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: বদরের দিন যখন বন্দীরা বন্দী হল সে সকল বন্দীদের মধ্যে আব্বাসও ছিলেন। তাকে বন্দী করেছিল একজন আনসারী। আনসারীর ধারণা ছিল তাকে হত্যা করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ অবস্থা অবগত ছিলেন। তিনি (সাঃ) বললেন: আমার চাচা আব্বাসের কারণে গত রাতে ঘুমাতে পারিনি, আর আনসাররা ধারণা করেছে তারা তাকে হত্যা করবে। উমার (রাঃ) বললেন: আমি কি তাদের কাছে যাব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন: হ্যাঁ। উমার (রাঃ) আনসারীর নিকট আসলেন এবং বললেন: আব্বাসকে ছেড়ে দাও। আনসারীরা বলল: না। আল্লাহর শপথ! ছাড়ব না। উমার তাদের বললেন: এতে যদি রাসূলের সন্তুষ্টি থাকে? তারা বলল: এতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি থাকলে নিন। উমার (রাঃ) তাকে নিলেন। যখন তার হাতে চলে এল তখন বললেন: হে আব্বাস ইসলাম গ্রহণ কর। তোমার ইসলাম গ্রহণ করা আমার পিতার ইসলাম গ্রহণ করার চেয়ে অধিক প্রিয়। কেননা তুমি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুশি হবেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবূ বকরের সাথে পরামর্শ করলে তিনি বলেছেন: তিনি আপনার আত্মীয়। সুতরাং তাকে ছেড়ে দিন। তারপর উমার (রাঃ)-এর সাথে পরার্মশ করলেন। তিনি বললেন: সকলকেই হত্যা করুন। অবশেষে মুক্তিপণ নিয়ে সকলকে ছেড়ে দিলেন। তখন

(مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّي يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ)

আয়াতটি নাযিল হয়। (হাকিম: ২/৩২৯, সনদ সহীহ)

প্রকৃত পক্ষে এসব পরামর্শের কারণ হল বদর যুদ্ধ মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধ, তখনও জিহাদ সংক্রান্ত সকল হুকুম-আহকাম বিস্তারিত বিবরণ কুরআনে অবতীর্ণ হয়নি। যেমন গনীমতের মাল পেলে কী করতে হবে, বন্দীদের কী করতে হবে ইত্যাদি।

وَلَوْلَا كِتَابٌ مِنَ اللّٰهِ سَبَقَ

‘আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে….’ অর্থাৎ গনীমত হালাল হবার বিধান যদি পূর্ব থেকেই আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে তথা লাওহে মাহফূযে লেখা না থাকত তাহলে বন্দীদের থেকে যা নিয়েছো তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে পাকড়াও করত। আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেন: পূববর্তীদের জন্য গনীমতের মাল খাওয়া হারাম ছিল। আকাশ থেকে আগুন এসে তা পুড়িয়ে দিত। যখন বদরের দিন আসল হালাল হবার পূর্বেই লোকেরা গনীমতের মাল নিয়ে টানাটানী করতে লাগল- তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তিরমিযী হা: ৩০৮৫, সহীহ)

আনাস (রাঃ) বলেন: নাবী (সাঃ) বদরের বন্দীদের সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের হস্তগত করে দিয়েছেন। উমার (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদের গর্দান উড়িয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ মত গ্রহণ করলেন না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন: আমি মনে করি তাদের ক্ষমা করে দিয়ে মুক্তিপণ গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্ষমা করে দিলেন এবং মুক্তিপণ গ্রহণ করলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (আহমাদ ৩/২৪৩)

(فَكُلُوْا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا)

‘যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর‎’ অর্থাৎ গনীমত হালাল করে দেয়া হল যা পূর্ববর্তীদের জন্য হারাম ছিল। এখন তোমরা হালাল ও পবিত্র রিযিক হিসেবে খেতে পার। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা পূর্বে কোন নাবীকে দেয়া হয়নি। তার মধ্যে একটি হল- আমার জন্য গনীমত হালাল করে দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৫)

(قُلْ لِّمَنْ فِيْ أَيْدِيْكُمْ مِّنَ الْأَسْرٰي)

‘তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদেরকে বল:‎ ‘আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন..’ অর্থাৎ বদরের বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। যারা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু। যারা তাদেরকে কষ্ট দিতে, মারতে এবং হত্যা করতে কখনই কোন ক্রটি করেনি; যখনই কোন রকম সুযোগ পেয়েছে তখনই নির্দয়ভাবে অত্যাচার-উৎপীড়ন করেছে, মুসলিমদের হাতে বন্দী হয়ে আসার পর এহেন শত্রুদেরকে প্রাণে বাঁচিয়ে দেয়াটা সাধারণ ব্যাপার ছিল না; এটা ছিল তাদের বিরাট প্রাপ্তি এবং অসাধারণ দয়া ও করুণা। পক্ষান্তরে মুক্তিপণ হিসেবে তাদের কাছ থেকে যে অর্থ গ্রহণ করা হয়েছিল তাও ছিল অতি সাধারণ। এটা আল্লাহ তা‘আলার একান্ত মেহেরবানী যে, এ সাধারণ অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে যে কষ্ট তাদের করতে হয়, তাও তিনি কি চমৎকারভাবে দূর করে দিয়েছেন। উল্লিখিত আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে- আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমাদের মন-মানসিকতায় কোন রকম কল্যাণ দেখতে পান, তবে তোমাদের কাছ থেকে যা কিছু নেয়া হয়েছে তার চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন। তদুপরি তোমাদের অতীত গুনাহ ক্ষমা করবেন। এখানে خير অর্থ ঈমান ও ইসলাম। অর্থাৎ মুক্তি লাভের পর সেসব বন্দীদের মধ্যে যারা পরিপূর্ণ নিষ্ঠার সাথে ঈমান ও ইসলাম গ্রহণ করবে, তারা যে মুক্তিপণ দিয়েছে, তার চেয়ে অধিক উত্তম বস্তু পেয়ে যাবে। তা হল তাদের অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। বন্দীদেরকে মুক্তি করে দেয়া সাথে সাথে তাদেরকে এমনভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে, তারা যেন মুক্তি লাভের পর নিজেদের লাভ-ক্ষতির প্রতি মনোনিবেশ করে। সুতরাং বাস্তব ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত যে, তাদের মধ্যে যারা মুসলিম হয়েছিল আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে এবং জান্নাতের সুউচ্চ স্থান দান ছাড়াও পার্থিব জীবনে এত অধিক পরিমাণ ধন-সম্পদ দান করেছিলেন, যা তাদেরকে দেয়া মুক্তিপণ অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম ও অধিক ছিল।

আর যদি খিয়ানত করতে চায় অর্থাৎ মুখে ইসলাম প্রকাশ করে আর উদ্দেশ্য হয় ধোঁকা দেয়া তাহলে তাদেরকেও তাদের পূর্বে যারা এরূপ করেছিল তাদের মত পাকড়াও করবেন।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আব্বাস (সাঃ)-এর ফযীলত জানলাম, তার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
২. সৎ কাজের নিয়ত করার ফযীলত জানলাম।
৩. যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কিছু ছেড়ে দেবে আল্লাহ তা‘আলা তার বিনিময়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Anfal
Sura:8
Verses :- 67-71
وَ اللّٰہُ یُرِیۡدُ الۡاٰخِرَۃ

Allah desires (for you) the Hereafter.

Allah says;

مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الَارْضِ تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللّهُ يُرِيدُ الاخِرَةَ وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

It is not (fitting) for a Prophet that he should have prisoners of war until he has fought (his enemies thoroughly) in the land. You desire the goods of this world, but Allah desires (for you) the Hereafter. And Allah is All-Mighty, All-Wise.

Imam Ahmad recorded that Anas said,

“The Prophet asked the people for their opinion about the prisoners of war of Badr, saying,

إِنَّ اللهَ قَدْ أَمْكَنَكُمْ مِنْهُم

Allah has made you prevail above them.

Umar bin Al-Khattab stood up and said, `O Allah’s Messenger! Cut off their necks,’ but the Prophet turned away from him.

The Messenger of Allah again asked,

يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ قَدْ أَمْكَنَكُمْ مِنْهُمْ وَإِنَّمَا هُمْ إِخْوَانُكُمْ بِالاْاَمْس

O people! Allah has made you prevail over them, and only yesterday, they were your brothers.

Umar again stood up and said, `O Allah’s Messenger! Cut off their necks.’

The Prophet ignored him and asked the same question again and he repeated the same answer.

Abu Bakr As-Siddiq stood up and said, `O Allah’s Messenger! I think you should pardon them and set them free in return for ransom.’

Thereupon the grief on the face of Allah’s Messenger vanished. He pardoned them and accepted ransom for their release. Allah, the Exalted and Most Honored, revealed this verse,

لَّوْلَا كِتَابٌ مِّنَ اللّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
Were it not a previous ordainment from Allah, a severe torment would have touched you for what you took.”

Ali bin Abi Talhah narrated that Ibn Abbas said about Allah’s statement,
لَّوْلَا كِتَابٌ مِّنَ اللّهِ سَبَقَ
(Were it not a previous ordainment from Allah…),

“In the Preserved Book, that war spoils and prisoners of war will be made allowed for you,
لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ
(would have touched you for what you took), because of the captives.
عَذَابٌ عَظِيمٌ
(a severe torment).

Allah, the Exalted said next,
فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَلاً طَيِّبًا
(So enjoy what you have gotten of booty in war, lawful and good).”

Al-Awfi also reported this statement from Ibn Abbas.

A similar statement was collected from Abu Hurayrah, Ibn Mas`ud, Sa`id bin Jubayr, Ata’, Al-Hasan Al-Basri, Qatadah and Al-A`mash.

They all stated that,
لَّوْلَا كِتَابٌ مِّنَ اللّهِ سَبَقَ
(Were it not a previous ordainment from Allah…),

refers to allowing the spoils of war for this Ummah.

Supporting this view is what the Two Sahihs recorded that Jabir bin Abdullah said that the Messenger of Allah said,

أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الاَْنْبِيَاءِ قَبْلِي

نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ

وَجُعِلَتْ لِيَ الاَْرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا

وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَايِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لاِأَحَدٍ قَبْلِي

وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ

وَكَان النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّة

I have been given five things which were not given to any Prophet before me. (They are:)

Allah made me victorious by awe, (by His frightening my enemies) for a distance of one month’s journey.

The earth has been made a place for praying and a purifier for me.

The booty has been made lawful for me, yet it was not lawful for anyone else before me.

I have been given the right of intercession (on the Day of Resurrection).

Every Prophet used to be sent to his people only, but I have been sent to all mankind.

Al-A`mash narrated that Abu Salih said that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

لَمْ تَحِلَّ الْغَنَايِمُ لِسُودِ الرُّوُوسِ غَيْرَنَا

War booty was never allowed for any among mankind except us.

Abu Hurayrah said; This is why Allah the Most High said.

فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَلاً طَيِّبًا

So enjoy what you have gotten of booty in war, lawful and good.

The Muslims then took the ransom for their captives.

وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

and have Taqwa of Allah. Certainly, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

In his Sunan, Imam Abu Dawud recorded that Ibn Abbas said that;

the Messenger of Allah fixed four hundred (Dirhams) in ransom from the people of Jahiliyyah in the aftermath of Badr.

The majority of the scholars say that;

the matter of prisoners of war is up to the Imam. If he decides, he can have them killed, such as in the case of Bani Qurayzah. If he decides, he can accept a ransom for them, as in the case of the prisoners of Badr, or exchange them for Muslim prisoners. The Messenger exchanged a woman and her daughter who were captured by Salamah bin Al-Akwa, for exchange of some Muslims who were captured by the idolators, or if he decides he can take the prisoner as a captives.

Pagan Prisoners at Badr were promised better than what They lost, if They become Righteous in the Future

Muhammad bin Ishaq reported that Abdullah bin Abbas said that before the battle of Badr, the Messenger of Allah said,

إِنِّي قَدْ عَرَفْتُ أَنَّ أُنَاسًا مِنْ بَنِي هَاشِمٍ وَغَيْرِهِمْ قَدْ أُخْرِجُوا كَرْهًا لَا حَاجَةَ لَهُمْ بِقِتَالِنَا فَمَنْ لَقِيَ مِنْكُمْ أَحَدًا مِنْهُمْ أَيْ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ فَلَ يَقْتُلْهُ وَمَنْ لَقِيَ أَبَا الْبُخْتَرِي بْنَ هِشَامٍ مُسْتَكرِهًا

I have come to know that some people from Bani Hashim and others were forced to accompany the pagans, although they had no desire to fight us. Therefore, whoever meets any of them (Bani Hashim), do not kill him. Whoever meets Abu Al-Bukhtari bin Hisham, should not kill him. Whoever meets Al-Abbas bin Abdul-Muttalib, let him not kill him, for he was forced to come (with the pagan army).

Abu Hudhayfah bin Utbah said, “Shall we kill our fathers, children, brothers and tribesmen (from Quraysh), and leave Al-Abbas By Allah! If I meet him, I will kill him with the sword.”

When this reached the Messenger of Allah, he said to Umar bin Al-Khattab,
يَا أَبَا حَفْص
O Abu Hafs!

and Umar said, “By Allah that was the first time that the Messenger of Allah called me Abu Hafs.”

أَيُضْرَبُ وَجْهُ عَمِّ رَسُولِ اللهِ بِالسَّيْف

Will the face of the Messenger of Allah’s uncle be struck with the sword!

Umar said, “O Allah’s Messenger! Give me permission to cut off his neck (meaning Abu Hudhayfah) for he has fallen into hypocrisy, by Allah!”

Ever since that happened, Abu Hudhayfah used to say, “By Allah! I do not feel safe from this statement coming back to haunt me, and I will continue to fear its repercussions, unless Allah, the Exalted, forgives me for it through martyrdom.”

Abu Hudhayfah was martyred during the battle of Al-Yamamah, may Allah be pleased with him.

Ibn Abbas said,

“On the eve after Badr, the Messenger of Allah spent the first part of the night awake, while the prisoners were bound. His Companions said to him, `O Allah’s Messenger! Why do you not sleep!’

Al-Abbas had been captured by a man from Al-Ansar, and the Messenger of Allah said to them,

سَمِعْتُ أَنِينَ عَمِّي الْعَبَّاسِ فِي وِثَاقِهِ فَأَطْلِقُوه

I heard the cries of pain from my uncle Al-Abbas, because of his shackles, so untie him.

When his uncle stopped crying from pain, Allah’s Messenger went to sleep.”

In his Sahih, Al-Bukhari recorded a Hadith from Musa bin Uqbah who said that Ibn Shihab said that Anas bin Malik said that;

some men from Al-Ansar said to the Messenger of Allah, “O Allah’s Messenger! Give us permission and we will set free our maternal cousin Al-Abbas without taking ransom from him.”

He said,

لَاا وَاللهِ لَاا تَذَرُونَ مِنْهُ دِرْهَمًا

No, by Allah! Do not leave any Dirham of it.

And from Yunus Bikkir, from Muhammad bin Ishaq, from Yazid bin Ruwman, from Urwah, from Az-Zuhri that several people said to him,

“The Quraysh sent to the Messenger of Allah concerning ransoming their prisoners, and each tribe paid what was required for their prisoners.

Al-Abbas said, `O Allah’s Messenger! I became a Muslims before.’

The Messenger of Allah said,

اللهُ أَعْلَمُ بِإِسْلَمِكَ فَإِنْ يَكُنْ كَمَا تَقُولُ فَإِنَّ اللهُ يُجْزِيكَ وَأَمَّا ظَاهِرُكَ فَقَدْ كَانَ عَلَيْنَا فَافْتَدِ نَفْسَكَ وَابْنَي أَخِيكَ نَوْفَلَ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِالْمُطَّلِبِ وَعَقِيلَ بْنَ أَبِي طَالِبِ بْنِ عَبْدِالْمُطَّلِبِ وَحَلِيفَكَ عُتْبَةَ بْنَ عَمْرٍو أَخِي بَنِي الْحَارِثِ بْنِ فِهْر

Allah knows if you are Muslim! If what you are claiming is true, then Allah will compensate you. As for your outward appearance, it was against us. Therefore, ransom yourself, as well as, your nephews Nawfal bin Al-Harith bin Abdul-Muttalib and Aqil bin Abu Talib bin Abdul-Muttalib, and also your ally Utbah bin `Amr, from Bani Al-Harith bin Fihr.

Al-Abbas said, `I do not have that (money), O Allah’s Messenger!’

The Messenger said,

فَأَيْنَ الْمَالُ الَّذِي دَفَنْتَهُ أَنْتَ وَأُمُّ الْفَضْلِ فَقُلْتَ لَهَا إِنْ أَصَبْتُ فِي سَفَرِي هَذَا فَهَذَا الْمَالُ الَّذِي دَفَنْتُهُ لِبَنِي الْفَضْلِ وَعَبْدِاللهِ وَقُثَمٍ

What about the wealth that you and Umm Al-Fadl buried, and you said to her, `If I am killed in this battle, then this money that I buried is for my children Al-Fadl, Abdullah and Quthm.

Al-Abbas said, `By Allah, O Allah’s Messenger! I know that you are Allah’s Messenger, for this is a thing that none except Umm Al-Fadl and I knew. However, O Allah’s Messenger! Could you count towards my ransom the twenty Uwqiyah (pertaining to a weight) that you took from me (in the battle)’

The Messenger of Allah said,

لَاا ذَاكَ شَيْءٌ أَعْطَانَا اللهُ تَعَالَى مِنْك

No, for that was money that Allah made as war spoils for us from you.

So Al-Abbas ransomed himself, his two nephews and an ally, and Allah revealed this verse,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّمَن فِي أَيْدِيكُم مِّنَ الَاسْرَى إِن يَعْلَمِ اللّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُوْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّا أُخِذَ مِنكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

O Prophet! Say to the captives that are in your hands:”If Allah knows any good in your hearts, He will give you something better than what has been taken from you, and He will forgive you, and Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.” (8:70)

Al-Abbas commented, `After I became Muslim, Allah gave me twenty servants in place of the twenty Uwqiyah I lost. And I hope for Allah’s forgiveness.”

Al-Hafiz Abu Bakr Al-Bayhaqi recorded, that Anas bin Malik said,

“The Prophet was brought some wealth from Bahrain and said;

انْثُرُوهُ فِي مَسجِدِي

Distribute it in my Masjid,

and it was the biggest amount of goods Allah’s Messenger had ever received. He left for prayer and did not even look at the goods. After finishing the prayer, he sat by those goods and gave some of it to everybody he saw. Al-Abbas came to him and said, `O Allah’s Messenger! give me (something) too, because I gave ransom for myself and Aqil.’

Allah’s Messenger told him to take. So he stuffed his garment with it and tried to carry it away but he failed to do so.

He said, `Order someone to help me in lifting it.’

The Prophet refused.

He then said to the Prophet, `Will you please help me to lift it!’

Allah’s Messenger refused.

Then Al-Abbas dropped some of it and lifted it on his shoulders and went away.

Allah’s Messenger kept on watching him till he disappeared from his sight and was astonished at his greediness. Allah’s Messenger did not get up until the last coin was distributed.”

Al-Bukhari also collected this Hadith in several places of his Sahih with an abridged chain, in a manner indicating his approval of it.

Allah said.

وَإِن يُرِيدُواْ خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُواْ اللّهَ مِن قَبْلُ

But if they intend to betray you, they indeed betrayed Allah before,

meaning,
وَإِن يُرِيدُواْ خِيَانَتَكَ
(But if they intend to betray you) in contradiction to what they declare to you by words.
فَقَدْ خَانُواْ اللّهَ مِن قَبْلُ
(they indeed betrayed Allah before), the battle of Badr by committing disbelief in Him,

فَأَمْكَنَ مِنْهُمْ

So He gave (you) power over them,

causing them to be captured in Badr,

وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

And Allah is All-Knower, All-Wise.

He is Ever Aware of his actions and All-Wise in what He decides.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৬৭-৭১ নং আয়াতের তাফসীর:

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, বদরের বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীবর্গের সাথে পরামর্শ করেন। তিনি তাদের বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা এই বন্দীদেরকে তোমাদের অধিকারে দিয়েছেন। বল, তোমাদের ইচ্ছা কি?” উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদেরকে হত্যা করা হাক।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, এরা কাল পর্যন্তও তোমাদের ভাইই ছিলো।” উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে তাঁর উত্তরের পুনরাবৃত্তি করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং পুনরায় ঐ কথা বললেন। এবার আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) দাড়িয়ে গিয়ে আরয করলেন- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার মত এই যে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করুন।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা থেকে চিন্তার লক্ষণ, দূরীভূত হয়। তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই মুক্ত করে দেন। তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। এই সূরারই শুরুতে ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমেও এরূপ একটি হাদীস আছে যে, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেনঃ “এই বন্দীদের ব্যাপারে তোমরা কি চাও?” আবু বকর (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা তো আপনার কওমের লোক এবং আপনার পরিবারেরই মানুষ। সুতরাং এদেরকে জীবিতই ছেড়ে দেয়া হাক এবং তাওবা করিয়ে নেয়া যাক। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, হয়তো কাল আল্লাহ এদের উপর দয়া করবেন।” কিন্তু উমার (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এরা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী এবং আপনাকে দেশ থেকে বিতাড়নকারী। সুতরাং এদের গর্দান উড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দান করুন।” আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ মাঠে বহু খড়ি রয়েছে। এগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিন এবং এদেরকে এ আগুনে ফেলে দিয়ে জ্বালিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এদের কথা শুনে নীরব হয়ে যান। কাউকেও কোন জবাব না দিয়ে উঠে চলে গেলেন। এই তিন মহান ব্যক্তিরই পক্ষ অবলম্বনকারী লোক জুটে গেলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে বলতে লাগলেনঃ কারও কারও অন্তর দুধের চেয়েও নরম হয়ে গেছে এবং কারও কারও হৃদয় পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ)-এর মত। তিনি আল্লাহর নিকট আরয করেছিলেনঃ “যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা তো আমারই লোক, আর যারা আমার অবাধ্য হয়েছে তাদের ব্যাপারেও আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” হে আবূ বকর! তোমার দৃষ্টান্ত ঈসা (আঃ)-এর দৃষ্টান্তের ন্যায়ও বটে। যিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনার বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” হে উমার! তোমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে মূসা (আঃ)-এর ন্যায়। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং তাদের অন্তর কঠোর করে দিন, সুতরাং তারা ঈমান আনবে না যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।হে আব্দুল্লাহ! তোমার দৃষ্টান্ত নূহ (আঃ)-এর ন্যায়ও বটে। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! আপনি কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না।” দেখো, তোমরা এখন দারিদ্রপীড়িত। সুতরাং এই বন্দীদের। কেউই ফিদইয়া প্রদান ছাড়া মুক্তি পেতে পারে না। আর ফিদইয়া না দিলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এদের থেকে সাহল ইবনে বায়যাকে বিশিষ্ট করে নিন। কেননা, সে ইসলামের আলোচনা করে থাকে।” এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব হয়ে যান। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি সারা দিন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকলাম যে, না জানি আমার উপর আকাশ থেকে পাথরই বর্ষিত হয়। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সাহীল ইবনে বায়যা ব্যতীত।” তখন আল্লাহ তা’আলা… (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) এটাকে তাঁর মুসতাদরিক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর বলেছেন যে, এর ইসনাদ বিশুদ্ধ এবং তারা দুজন এটাকে তাখরীজ করেননি) এই কয়েদীদের মধ্যে আব্বাস (রাঃ) ছিলেন। তাঁকে একজন আনসারী গ্রেফতার করেছিলেন। এই আনসারীর ধরণা ছিল যে, তাঁকে হত্যা করা হবে। রাসূলুল্লাহও (সঃ) এ অবস্থা অবগত ছিলেন। তিনি বলেনঃ “এই চিন্তায় রাত্রে আমার ঘুম হয়নি।” উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনার অনুমতি হলে আমি এ ব্যাপারে আনসারদের নিকট গমন করি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং উমার (রাঃ) আনসারদের নিকট গমন করে বললেনঃ “আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দিন। তারা বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আমরা তাকে ছাড়বো না।” তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ “এতেই যদি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টি নিহিত থাকে তবুও কি ছাড়বেন না?” তারা তখন বললেনঃ “যদি এটাই হয় তবে আপনি তাঁকে নিয়ে যান। আমরা খুশী মনে তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।” উমার (রাঃ) আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আব্বাস (রাঃ)! আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে। আমার পিতার ইসলাম গ্রহণের চাইতেও বেশী আনন্দের কারণ হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আপনার ইসলাম গ্রহণে খুশী হবেন।” এই সব কয়েদীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলেন। তখন তিনি বললেনঃ “এরা তো আমাদের গোত্রেরই লোক। সুতরাং এদেরকে ছেড়ে দিন।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) উমার (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করলে তিনি বললেনঃ “এদের সকলকেই হত্যা করে দিন।” শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বন্দীদের কাছে মুক্তিপণ নিয়ে সকলকেই ছেড়ে দেন। আলী (রাঃ) বলেন যে, জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! আপনার সাহাবীদেরকে ইখতিয়ার দিন যে, তারা দুটোর মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারেন। হয় তাঁরা মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীদেরকে ছেড়ে দিবেন, না হয় তাদেরকে হত্যা করে ফেলবেন। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হলে আগামী বছর বন্দীদের সমান সংখ্যক মুসলমান শহীদ হয়ে যাবেন।” সাহাবীগণ বলেন যে, তারা প্রথমটিই গ্রহণ করলেন এবং বন্দীদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিবেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি অত্যন্ত গারীব ও দুর্বল)

এই বদরী বন্দীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ হে সাহাবীর দল! যদি চাও তবে মুক্তিপণ আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দাও। অথবা ইচ্ছা করলে হত্যা করে দাও। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে তাদের সমান সংখ্যক তোমাদের লোক শহীদ হয়ে যাবে।” এই সত্তরজন শহীদের মধ্যে সর্বশেষ শহীদ হচ্ছেন সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ), যিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এই রিওয়ায়াতটি মুরসালরূপে উবাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ পাকের জ্ঞানই সবচেয়ে বেশী।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর কিতাবে প্রথম থেকেই যদি তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল রূপে লিপিবদ্ধ না করা হতো এবং বর্ণনা করে দেয়ার পূর্বে আমি শাস্তি প্রদান করি না- এটা যদি আমার নীতি না হতো তবে যে ফিদইয়া বা মুক্তিপণ তোমরা গ্রহণ করেছে তার কারণে আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করতাম। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা ফায়সালা করে রেখেছিলেন যে, কোন বদরী সাহাবীকে তিনি শাস্তি দিবেন না। তাদের জন্যে ক্ষমা লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। উম্মুল কিতাবে তোমাদের জন্যে গনীমতের মাল হালাল বলে লিখে দেয়া হয়েছে। সুতরাং গনীমতের মাল তোমাদের জন্যে হালাল ও পবিত্র। ইচ্ছামত তোমরা তা খাও, পান কর এবং নিজেদের কাজে লাগাও।” পূর্বেই এটা লিখে দেয়া হয়েছিল যে, এই উম্মতের জন্যে এটা হালাল। এটাই ইবনে জারীর (রঃ)-এর নিকট পছন্দনীয় উক্তি। আর সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এর সাক্ষ্য মিলে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে অন্য কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। (১) এক মাসের পথ পর্যন্ত ভয় ও প্রভাব দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) যমীনকে আমার জন্যে মসজিদ ও পবিত্র বানানো হয়েছে। (৩) গনীমতের মাল আমার জন্যে হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কারো জন্যে হালাল ছিল না। (৪) আমাকে শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। (৫) প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তাঁর নিজের কওমের কাছে প্রেরণ করা হতো। কিন্তু আমি সাধারণভাবে সকল মানবের নিকট প্রেরিত হয়েছি।”

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের ছাড়া কোন কালো মাথা বিশিষ্ট মানুষের জন্যে গনীমতের মাল হালাল করা হয়নি। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “তোমরা যে গনীমতের মাল লাভ করেছো তা হালাল ও পবিত্ররূপে ভক্ষণ কর।” সাহাবীগণ কয়েদীদের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছিলেন । সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, প্রত্যেকের নিকট থেকে চারশ করে আদায় করা হয়েছিল। সুতরাং জমহুরে উলামার মতে প্রতি যুগের ইমামের এ ইখতিয়ার রয়েছে যে, তিনি ইচ্ছা করলে বন্দী কাফিরদেরকে হত্যা করতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু কুরাইযার বন্দীদেরকে হত্যা করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরী বন্দীদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে আযাদ করে দিয়েছিলেন। আবার ইচ্ছা করলে মুসলমান বন্দীদের বিনিময়ে মুক্ত করে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাসলামা ইবনে আকওয়া গোত্রের একটি স্ত্রীলোক ও তার মেয়েকে মুশরিকদের নিকট বন্দী মুসলমানদের বিনিময়ে তাদেরকে প্রদান করেছিলেন। আর ইচ্ছা করলে ঐ বন্দীদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে পারে। এটাই ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও উলামায়ে কিরামের একটি দলের মাযহাব, যদিও অন্যেরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এখানে এর বিস্তারিত আলোচনা করার তেমন কোন সুযোগ নেই।

 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বদরের দিন বলেছিলেনঃ “নিশ্চিতরূপে আমি অবগত আছি যে, কোন কোন বানু হাশিমকে জোরপূর্বক এই যুদ্ধে বের করে আনা হয়েছে। আমাদের সাথে যুদ্ধ করার তাদের মোটেই ইচ্ছা ছিল না। সুতরাং বানু হাশিমকে হত্যা করো না, আবুল বাখতারী ইবনে হিশামকেও মেরে ফেলো না এবং আব্বাস ইবনে মুত্তালিবকেও হত্যা করো না। লোকেরা তাদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের সাথে টেনে এনেছে।” তখন আবূ হুযাইফা ইবনে উত্মা (রাঃ) বলেনঃ “আমরা আমাদের বাপদাদাদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের ভাইদেরকে এবং আমাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে হত্যা করবো, আর আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দেবো? আল্লাহর কসম! যদি আমি তাকে পেয়ে যাই তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেবো।” একথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কানে পৌছলে তিনি বলেন “হে আবু হাফস!” (উমার (রাঃ)-এর কুনিয়াত বা উপনাম) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচার মুখে কি তরবারীর আঘাত করা হবে?” উমার ফারূক (রাঃ) বলেনঃ “এটাই ছিল প্রথম দিন যেই দিন রাসূলুল্লাহ আমাকে আমার কুনিয়াত দ্বারা সম্বোধন করেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অনুমতি হলে আমি আবূ হুযাইফা (রাঃ)-এর গর্দান উড়িয়ে দেবো। আল্লাহর কসম! সে মুনাফিক হয়ে গেছে।” আবু হুযাইফা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমার সেই দিনের কথার খটকা আজ পর্যন্তও রয়েছে। ঐ কথার জন্যে আমি আজও ভীত আছি। আমি তো ঐ দিনই শান্তি লাভ করবো যেই দিন আমার এই কথার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। আর সেই কাফফারা হচ্ছে এই যে, আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাবো।” অতঃপর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করুন!

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যেই দিন বদরী বন্দীরা গ্রেফতার হয়ে আসে সেই রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর ঘুম হয়নি। সাহাবীগণ কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এই কয়েদীদের মধ্য থেকে আমার চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর কান্নাকাটির শব্দ আমার কানে আসছে।” তখন সাহাবীরা তাঁর বন্ধন খুলে দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘুম হয়। আব্বাস (রাঃ)-কে একজন আনসারী সাহাবী গ্রেফতার করেছিলেন। তিনি খুব ধনী ছিলেন। মুক্তিপণ হিসেবে তিনি একশ আওকিয়া (এক আওকিয়ার ওজন হচ্ছে এক তোলা সাত মাশা) সোনা প্রদান করেছিলেন। কোন কোন আনসারী নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “আমরা আপনার চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দিতে চাই।” কিন্তু সমতা কায়েমকারী নবী (সঃ) বলেনঃ “না, আল্লাহর কসম! তোমরা এক দিরহাম কম করো না। বরং পূর্ণ মুক্তিপণ আদায় করো।” কুরায়েশরা মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে তাক পাঠিয়েছিল। প্রত্যেকই ধার্যকৃত অর্থ দিয়ে। নিজ নিজ কয়েদীকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মুসলমানই ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আপনার ইসলাম গ্রহণের বিষয় আমি অবগত আছি। যদি আপনার কথা সত্য হয় তবে আল্লাহ আপনাকে এর বিনিময় প্রদান করবেন। কিন্তু আহকাম বাহ্যিকের উপর জারী হয়ে থাকে বলে আপনাকে আপনার মুক্তিপণ আদায় করতেই হবে। তাছাড়া আপনার দু’ভ্রাতুস্পুত্র নওফেল ইবনে হারিস ইবনে আবদিল মুত্তালিব ও আকীল ইবনে আবি তালিব ইবনে আবদিল মুত্তালিবের মুক্তিপণ আপনাকে আদায় করতে হবে। আরো আদায় করতে হবে আপনার মিত্র উৎবা ইবনে আমরের মুক্তিপণ, যে বানু হারিস ইবনে ফাহরের গোত্রভুক্ত।” তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কাছে তো এতো মাল নেই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেন, আপনার ঐ মাল কোথায় গেল যা আপনি ও উম্মুল ফযল যমীনে পুঁতে রেখেছেন আর বলেছেন, “আমি যদি এই সফরে সফলকাম হই তবে এই মাল হবে বানুল ফযল, আবদুল্লাহ এবং কাসামের।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর একথা শুনে আব্বাস (রাঃ) স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল। আমার এই মাল পুঁতে রাখার ঘটনা আমি ও উম্মুল ফযল (তার স্ত্রী) ছাড়া আর কেউই জানে না! আচ্ছা, এ কাজ করুন যে, আমার নিকট থেকে আপনার সেনাবাহিনী বিশ আওকিয়া সোনা প্রাপ্ত হয়েছে, ওটাকেই আমার মুক্তিপণ হিসেবে গণ্য করা হাক।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “কখনও নয়। ওটা তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন। সুতরাং আব্বাস (রাঃ) নিজের, তাঁর দুই ভাতুস্পুত্রের এবং তাঁর মিত্রের মুক্তিপণ নিজের পক্ষ হতে আদায় করলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তোমাদের অন্তরে কল্যাণকর কিছু রয়েছে তা যদি আল্লাহ অবগত হন তবে তোমাদের হতে (মুক্তিপণরূপে) যা কিছু নেয়া হয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম কিছু দান করবেন।” আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলার এই ঘোষণা কার্যকরী হয়েছে । আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে আমার এই বিশ আওকিয়ার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে এমন বিশটি গোলাম দান করেছেন যারা সবাই ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী । সাথে সাথে আমি এ আশাও করছি যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।” তিনি বলেনঃ ‘‘আমার ব্যাপারেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে আমার ইসলাম গ্রহণের খবর দিলাম এবং বললাম, আমার বিশ আওকিয়ার বিনিময় আমাকে দেয়া হাক। তিনি তা অস্বীকার করলেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যে, তিনি আমাকে আমার এই বিশ আওকিয়ার বিনিময়ে এমন বিশটি গোলাম দান করেন যারা সবাই ব্যবসায়ী।” তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলেনঃ “আমরা তো আপনার অহীর উপর ঈমান এনেছি, আপনার রিসালাতের আমরা সাক্ষ্য দান করছি এবং আমাদের কওমের মধ্যে আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করেছি।” তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “সারা দুনিয়া লাভ করলেও আমি ততে খুশী হতাম না যতো খুশী হয়েছিলাম এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণে। আল্লাহর কসম! আমার নিকট থেকে মুক্তিপণ হিসেবে যা নেয়া হয়েছিল তার চেয়ে একশ গুণ বেশী আল্লাহ আমাকে প্রদান করেছেন এবং এটাও আশা করছি। যে, আমার পাপগুলোও মাফ করে দেয়া হবে।”

এ আয়াতের তাফসীরে কাতাদা (রঃ) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা। হয়েছে যে, বাহরাইন থেকে যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আশি হাজার পরিমাণ মাল এসে পৌঁছে তখন তিনি যোহরের সালাতের জন্যে অযু করছিলেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেক অভিযোগকারীকেই সেই দিন ঐ মাল থেকে প্রদান করেন। এবং কোন প্রার্থনাকারীকেই বঞ্চিত করেননি। সেইদিন তিনি (যোহরের) সালাতের পূর্বেই সমস্ত মাল আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেন। আব্বাস (রাঃ)-কে তিনি ঐ মাল থেকে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন এবং বোঝা বেঁধে নিতে বলেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমার থেকে যা নেয়া হয়েছিল তার থেকে এটা বহুগুণে উত্তম এবং আমি আশা করছি যে, আমার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে।”

হামীদ ইবনে হিলাল (রাঃ) বলেন যে, এই মাল ইবনে হাযরামী বাহরাইন থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। এতো মাল নবী (সঃ)-এর নিকট এর পূর্বে এবং পরে কখনো আসেনি। এ মালের পরিমাণ ছিল আশি হাজার। এ মাল চাটাইর উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়। অতঃপর নামাযের জন্যে আযান দেয়া হয়। রাসলুল্লাহ (সঃ) আগমন করেন এবং মালের কাছে দাঁড়িয়ে যান। মসজিদের নামাযীরাও এসে পড়েন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেককে দিতে শুরু করেন। সেইদিন কোন ওজনও ছিল না এবং গণনাও ছিল না। যে আসে সেই নিয়ে যায়। তারা সবাই ইচ্ছামত নিয়ে যায়। আব্বাস (রাঃ) এসে তো চাদরের বোঝা বাঁধেন। কিন্তু উঠাতে সক্ষম না হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! একটু উঠিয়ে দিন। এতে নবী (সঃ) হেসে উঠেন, এমন কি তাঁর দাঁতের ঔজ্জ্বল্য পরিলক্ষিত হয়। তিনি তাকে বলেনঃ “কিছু কম নিন। যা উঠাতে পারবেন তাই নিন।” সুতরাং তিনি কিছু কমিয়ে নিলেন এবং তা উঠিয়ে নিয়ে বলতে বলতে গেলেনঃ “আল্লাহ তা’আলার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। তাঁর একটি কথা তো পূর্ণ হলো। তার দ্বিতীয় ওয়াদাও ইনশাআল্লাহ পূর্ণ হয়ে যাবে (অর্থাৎ তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন)। আমার নিকট থেকে মুক্তিপণ হিসেবে যা। নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে এটা বহুগুণে উত্তম।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ মাল বন্টন করতেই থাকেন। শেষ পর্যন্ত ঐ মালের কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। তিনি ঐ মাল থেকে নিজের পরিবার-পরিজনকে একটি কানাকড়িও প্রদান করলেন না। অতঃপর তিনি নামাযের জন্যে সামনে এগিয়ে যান এবং নামায পড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে অন্য একটি হাদীস আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বাহরাইন হতে মাল আসে। তিনি সাহাবীদেরকে বলেনঃ “এগুলো আমার মসজিদে ছড়িয়ে দাও।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অন্য সময় যে মাল এসেছিল, ওগুলোর চেয়ে এটাই ছিল অধিক মাল অর্থাৎ এর পূর্বে বা পরে এতো অধিক মাল তাঁর কাছে আসেনি। অতঃপর তিনি নামাযের জন্যে বেরিয়ে আসেন। কারো দিকে তিনি ফিরে তাকালেন না। নামায পড়িয়ে দিয়ে তিনি বসে পড়লেন। অতঃপর তিনি যাকেই দেখলেন তাকেই দিলেন। ইতিমধ্যে আব্বাস (রাঃ) এসে গেলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকেও প্রদান করুন। আমি আমার নিজের ও আকীলের মুক্তিপণ আদায় করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “আপনি নিজের হাতেই নিয়ে নিন।” তিনি চাদরে পুটলি বাঁধলেন। কিন্তু ওটা ওজনে ভারী হয়ে যাওয়ার কারণে উঠাতে পারলেন না। সুতরাং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাউকে এটা আমার কাঁধে উঠিয়ে দিতে বলুন।” নবী (সঃ) বললেনঃ “কাউকে আমি এটা উঠিয়ে দিতে বলবো না।” তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে আপনিই উঠিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবারও অস্বীকৃতি জানালেন। কাজেই বাধ্য হয়ে তাকে কিছু কম করতেই হলো। অতঃপর তিনি ওটা কাঁধে উঠিয়ে চলতে শুরু করলেন। তাঁর এ লোভ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর দিকে চেয়েই থাকলেন যে পর্যন্ত না তিনি তাঁর দৃষ্টির অন্তরাল হলেন। যখন সমস্ত মাল বন্টিত হয়ে গেল এবং একটা কড়িও বাকী থাকলো না তখন তিনি ওখান থেকে উঠলেন। ইমাম বুখারীও (রঃ) স্বীয় কিতাব সহীহ বুখারীর মধ্যে এ বর্ণনাটিকে কয়েক জায়গায় এনেছেন।

আল্লাহ পাক বলেনঃ এ লোকগুলো যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে এটা কোন নতুন কথা নয়। এর পূর্বে তারা আল্লাহর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সুতরাং তাদের দ্বারা এটাও সম্ভব যে, এখন মুখে তারা যা প্রকাশ করছে, অন্তরে হয়তো এর বিপরীত কিছু গোপন করছে। এতে ঘাবড়াবার কিছুই নেই। এখন যেমন আল্লাহ তা’আলা এদেরকে তোমার ক্ষমতাধীনে রেখেছেন, এরূপই তিনি সব সময়েই করতে সক্ষম। আল্লাহর কোন কাজই কোন জ্ঞান ও হিকমত থেকে শূন্য নয়। এদের সাথে এবং সমস্ত মাখলুকের সাথে তিনি যা কিছু করেন তা নিজের চিরন্তন পূর্ণ জ্ঞান ও পূর্ণ নিপুণতার সাথেই করে থাকেন।

কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি লেখক আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ। এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়েছিল। আতা খুরাসানী (রঃ) বলেন যে, এটা আব্বাস (রাঃ) এবং তাঁর সাথীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যখন তারা বলেছিলেনঃ “আমরা আপনার মঙ্গল কামনা করতে থাকবো।” সুদ্দী (রঃ) বলেন, এটা সাধারণ এবং সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। এটা সঠিকও বটে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফের মারা পড়ল এবং ৭০ জন বন্দী হল। এটা কাফের ও মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধ ছিল। এই জন্য যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে কি ধরনের আচরণ করা যেতে পারে এ ব্যাপারে পূর্ণরূপে কোন বিধান স্পষ্ট ছিল না। সুতরাং নবী (সাঃ) সেই ৭০ জন বন্দীদের ব্যাপারে সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন যে, কি করা যাবে? তাদেরকে হত্যা করা হবে, না কিছু মুক্তিপণ (বিনিময়) নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে? বৈধতা হিসাবে এই দু’টি রায়ই সঠিক ছিল। সেই জন্য উক্ত দু’টি রায় নিয়ে বিবেক-বিবেচনা ও চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলেন। কিন্তু কখনো কখনো বৈধতা ও অবৈধতা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে কাল-পাত্র ও পরিস্থিতি বুঝে অধিকতর উত্তম পন্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন হয়। এখানেও অধিকতর কল্যাণকর পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বৈধতাকে সামনে রেখে অপেক্ষাকৃত কমতর কল্যাণকর পন্থা অবলম্বন করা হল। যে ব্যাপারে সতর্ক করে আল্লাহ তাআলার তরফ হতে ভৎর্সনাস্বরূপ আয়াত অবতীর্ণ হল। উমার (রাঃ) প্রভৃতিগণ নবী (সাঃ)-কে এই পরামর্শ দিলেন যে, কুফরের শক্তি ও প্রতাপকে ভেঙ্গে ফেলা দরকার আছে। এই জন্য বন্দীদেরকে হত্যা করা হোক। কেননা, এরা হল কুফর ও কাফেরদের প্রধান ও সম্মানিত ব্যক্তি। এরা মুক্তি পেলে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অধিকরূপে চক্রান্ত চালাবে। পক্ষান্তরে আবু বাকর (রাঃ) প্রভৃতিগণ উমার (রাঃ)-এর রায়ের বিপরীত রায় পেশ করলেন যে, তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ (বিনিময়) নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হোক। আর ঐ মাল দ্বারা আগামী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হোক। নবী (সাঃ) এই রায়কে প্রাধান্য দিলেন। তখন এ ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হল, {حَتَّى يُثْخِنَ فِي الأَرْض}। এর মতলব হল যদি দেশে কুফরের আধিপত্য হয় (যেমন, সেই সময় আরবে কুফরের আধিপত্য ছিল), তাহলে এ অবস্থায় বন্দী কাফেরদেরকে হত্যা করে তাদের শক্তির মাথাকে চূর্ণ করে ফেলা আবশ্যক। সুতরাং তোমরা এই সূক্ষ্ম নীতিকে দৃষ্টিচ্যুত করে যে মুক্তিপণ (বিনিময়) গ্রহণ করলে, তার মানে হল অধিকতর উত্তম পন্থা বর্জন করে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পন্থা অবলম্বন করলে; যা তোমাদের ভুল এখতিয়ার। পরবর্তীতে যখন কুফরের প্রভাব কম হয়ে গেল, তখন বন্দীদের ব্যাপার সেই সমসাময়িক রাষ্ট্রনেতার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হল। তিনি চাইলে তাদেরকে হত্যা করবেন, নতুবা মুক্তিপণ নিয়ে মুক্ত করে দেবেন। কিম্বা মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্ত করবেন। অথবা চাইলে তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখবেন। অবস্থা ও পরিস্থিতি সমীক্ষা করে উক্ত কোন একটি পন্থা অবলম্বন করা বৈধ হবে।

এ ব্যাপারে তাফসীরবিদদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে যে, এই লিপিবদ্ধ বিধান কি ছিল? কেউ বলেন, তাতে গনীমতের মাল হালাল হওয়ার কথা লেখা ছিল। অর্থাৎ, যেহেতু লিপিবদ্ধ তকদীর এই ছিল যে, মুসলিমদের জন্য গনীমতের মাল হালাল হবে। এই জন্য তোমরা মুক্তিপণ নিয়ে এক বৈধ কাজ করেছ। যদি এমন না হত তাহলে মুক্তিপণ নেওয়ার কারণে তোমাদের উপর বড় ধরনের আযাব আসত। কেউ কেউ বলেছেন, তাতে বদর যুদ্ধে মুজাহিদদের জন্য ক্ষমা ঘোষণার কথা লিপিবদ্ধ ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, রসূল (সাঃ)-এর বর্তমানে আযাব না আসার কথা লিপিবদ্ধ ছিল ইত্যাদি।

(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য ফাতহুল ক্বাদীর দ্রষ্টব্য)

 

এখানে গনীমতের মাল হালাল ও পবিত্র হওয়ার কথা উল্লেখ করে মুক্তিপণ গ্রহণ করার বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে এ কথার সমর্থন হয় যে, ‘লিপিবদ্ধ’ বিধানে সম্ভবতঃ গনীমতের মাল হালাল হওয়ার কথাই ছিল।

অর্থাৎ, ঈমান ও ইসলাম আনয়নের সংকল্প এবং তা গ্রহণ করার আগ্রহ।

অর্থাৎ, যে মুক্তিপণ তোমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে এ থেকে উত্তম জিনিস তোমাদের ইসলাম আনয়ন করার পর আল্লাহ তোমাদেরকে দান করবেন। সুতরাং পরবর্তীতে এমনটিই ঘটেছিল। আব্বাস (রাঃ) এবং আরো অন্যান্য জন যাঁরা সেই বন্দীদলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁরা মুসলমান হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে পার্থিব জীবনে মাল-ধনের প্রাচুর্য দান করলেন।

‘বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইলে’ অর্থাৎ, মুখে ইসলাম প্রকাশ করলে এবং উদ্দেশ্য ধোঁকা দেওয়া হলে। তাহলে এর পূর্বে তারা কুফর ও শির্কে পতিত হয়ে কি লাভ করল? এটাই যে, মুসলিমদের হাতে তারা বন্দী হল। এই জন্য ভবিষ্যতেও যদি তারা শিরকের উপর অটল থাকে, তাহলে এ থেকেও অধিক অপমান ও লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের জন্য অন্য কিছু জুটবে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় টীকাকারগণ যেসব হাদিস বর্ণনা করেছেন তার মোদ্দাকথা হচ্ছেঃ বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের যেসব লোক বন্দী হয় তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে এ নিয়ে পরে পরামর্শ হয়। হযরত আবু বকর (রা.) পরামর্শ দেন, ফিদিয়া (মুক্তিপণ) নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হোক। হযরত উমর (রা.) বলেন, তাদের হত্যা করা হোক। নবী (সা.) হযরত আবু বকরের (রা.) মত গ্রহণ করেন এবং ফিদিয়া তথা বিনিময় মূল্য স্থিরীকৃত হয়ে যায়। এর ফলে মহান আল্লাহ‌ তিরস্কার করে ও অসন্তোষ প্রকাশ করে এ আয়াত নাযিল করেন। কিন্তু তাফসীরকারগণ “আল্লাহর লিখন যদি আগেই লেখা না হয়ে যেতো” আয়াতের এ অংশের কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তারা বলেন, এখানে আল্লাহর তাকদীরের কথা বলা হয়েছে অথবা আল্লাহ‌ আগেভাগেই মুসলমানদের জন্য গনীমাতের মাল হালাল করে দেবার সংকল্প করেছিলেন। কিন্তু একথা সুস্পষ্ট, যতক্ষন পর্যন্ত শরীয়াতের বিধান প্রদানকারী অহীর মাধ্যমে কোন জিনিসের অনুমতি না দেয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা গ্রহণ করা জায়েয হতে পারেনা। কাজেই নবী (সা.) সহ সমগ্র ইসলামী জামায়াত এ ব্যাখ্যার কারণে গুনাহগার গণ্য হবে। “খবরে ওয়াহিদ” (অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হাদীস) এর ওপর নির্ভর করে এ ধরনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করে নেয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার।

আমার মতে এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা নিম্নরূপঃ বদরের যুদ্ধের আগে সূরা মুহাম্মাদে যুদ্ধ সম্পর্কে যে প্রাথমিক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিলঃ

فَإِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنْتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاءً حَتَّى تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا

“কাজেই যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকো তখন তাদের গর্দানে আঘাত করো। শেষে যখন তোমরা তাদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করবে তখন তাদের কষে বাঁধবে। তারপর হয় করুণা, নয় মুক্তিপণ। তোমরা জিহাদ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না যুদ্ধের অবসান ঘটে।” সূরা মুহাম্মাদঃ ৪

এ বক্তব্যে যুদ্ধাবন্দীদের থেকে ফিদিয়া আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এই সঙ্গে এ মর্মে শর্ত লাগানো হয়েছিল যে, প্রথমে শত্রুদের শক্তি ভালভাবে চূর্ণ করে দিতে হবে তারপর তাদের বন্দী করার কথা চিন্তা করতে হবে। এ ফরমান অনুযায়ী মুসলমানরা বদরে যেসব যুদ্ধ অপরাধীকে বন্দী করেছিল, তারপর তাদের কাছ থেকে যেসব ফিদিয়া আদায় করেছিল তা অনুমতি মোতাবেক ছিল ঠিকই কিন্তু সেখানে ভুলটি ছিল এইঃ পূর্বাহ্ণে “শত্রুর শক্তি ভালভাবে চূর্ণ করে দেবার” যে শর্তটি রাখা হয়েছিল তা পূর্ণ করার ব্যাপারে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। যুদ্ধে কুরাইশ সেনারা যখন পালাতে শুরু করলো, তখন মুসলমানদের অনেকেই গনীমাতের মাল লুটপাট করতে এবং কাফেরদের ধরে ধরে বাঁধতে লাগলো। এ সময় খুব কম লোকই শত্রুদের পিছনে কিছু দূর পর্যন্ত ধাওয়া করেছিল। অথচ মুসলমানরা যদি পূর্ণ শক্তিতে তাদেরকে ধাওয়া করতো, তাহলে সেদিনই কুরাইশদের শক্তি নির্মূল হয়ে যেতো। এ জন্য আল্লাহ‌ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর এ ক্ষোভ নবীর ওপর নয় বরং মুসলমানদের ওপর। আল্লাহর এ মহান ফরমানের মর্ম হচ্ছেঃ তোমরা এখনো নবীর মিশন ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারোনি। ফিদিয়া ও গনিমাতের মাল আদায় করে অর্থভাণ্ডার ভরে তোলা নবীর আসল কাজ নয়। একমাত্র কুফরের শক্তির দম্ভ ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার কাজটিই তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রাখে। কিন্তু দুনিয়ার লোভ লালসা তোমাদের ওপর বারবার প্রাধান্য বিস্তার করে। প্রথমে তোমরা চাইলে শত্রুর মূল শক্তিকে এড়িয়ে বাণিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমণ চালাতে। তারপর চাইলে শত্রুর মাথা গুড়িয়ে দেবার পরিবর্তে গনীমাতের মাল লুট করতে ও যুদ্ধ অপরাধীদের বন্দী করতে। আবার এখন গনিমাতের মাল নিয়ে ঝগড়া করতে শুরু করেছো। যদি আমি আগেই ফিদিয়া আদায় করার অনুমতি না দিয়ে দিতাম তাহলে তোমাদের এ কার্যক্রমের জন্য তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। যা হোক, এখন তোমরা যা কিছু নিয়েছো তা খেয়ে ফেলো কিন্তু আগামীতে এমন ধরনের আচরণ অবলম্বন করা থেকে দূরে থাকো, যা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। এ ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমি মত স্থির করে ফেলেছিলাম এমন সময় ইমাম আবু বকর জাসসাস তার আহকামুল কুরআন গ্রন্থে এ ব্যাখ্যাটিকে কমপক্ষে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন দেখে আমি আরো একটু বেশী মানসিক নিশ্চিন্ততা অনুভব করতে পেরেছি। তারপর সীরাতে ইবনে হিশামও একটি রেওয়ায়াত দেখেছি। তাতে বলা হয়েছে, মুসলিম মুজাহিদরা যখন গনীমাতের মাল আহরণ করতে ও কাফেরদেরকে ধরে ধরে বেঁধে ফেলতে ব্যস্ত ছিলেন তখন নবী (সা.) হযরত সাদ ইবনে মুআযের (রা.) চেহারায় কিছু বিরক্তির ভাব লক্ষ্য করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “হে সাদ! মনে হচ্ছে, লোকদের এ কাজ তোমার পছন্দ হচ্ছে না।” তিনি জবাব দিলেন “ঠিকই, হে আল্লাহর রসূল!, মুশরিকদের সাথে এ প্রথম যুদ্ধ এবং এ যুদ্ধে আল্লাহ‌ তাদেরকে পরাজিত করেছেন। কাজেই এ সময় বন্দী করে তাদের প্রাণ বাঁচাবার চাইতে বরং তাদেরকে চরমভাবে গুড়িয়ে দিলেই বেশী ভাল হতো।” (২য় খণ্ড, ২৮০-২৮১ পৃঃ)।

Leave a Reply