(Book#730)
[ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে তাদেরকে বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةً)
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে,তোমরা একটি গরু ‘যবেহ’কর।”]
www.motaher21.net
একথা শুনে তারা বলল:
(أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا)
“তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ?” তখন মূসা (আঃ) বললেন:
(قَالَ أَعُوْذُ بِاللّٰهِ أَنْ أَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ)
“আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন আমি মূর্খদের অন্তর্গত না হই।”
তখন যদি তারা যেকোন একটি গরু যবাই করত তাহলেই যথেষ্ট হত। কিন্তু তারা কাঠিন্য অবলম্বন করল তখন আল্লাহ তা‘আলাও তাদের ওপর তা কঠিন করে দিলেন।
২: আল-বাক্বারাহ,:আয়াত: ৬৭,
وَ اِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهٖۤ اِنَّ اللّٰهَ یَاْمُرُكُمْ اَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةً١ؕ قَالُوْۤا اَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا١ؕ قَالَ اَعُوْذُ بِاللّٰهِ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْجٰهِلِیْنَ
এরপর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা যখন মূসা তার জাতিকে বললো, আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন। তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো? মূসা বললো, নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আমি আল্লাহ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-71
টিকা নং:84,
قَالَ اِنَّهٗ یَقُوْلُ اِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُوْلٌ تُثِیْرُ الْاَرْضَ وَ لَا تَسْقِی الْحَرْثَ١ۚ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِیَةَ فِیْهَا١ؕ قَالُوا الْئٰنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ١ؕ فَذَبَحُوْهَا وَ مَا كَادُوْا یَفْعَلُوْنَ۠
মূসা জবাব দিল আল্লাহ বলছেন, সেটি এমন একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না, জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ কোনটিই করে না, সুস্থ-সবল ও নিখুঁত। একথায় তারা বলে উঠলো, হ্যাঁ,, এবার তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো। অতঃপর তারা তাকে যবেহ করলো, অন্যথায় তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না।৮৪
তাফসীর :
টিকা: 84
তাদের প্রতিবেশী জাতিরা গরুকে শ্রেষ্ঠ ও পবিত্র মনে করতো এবং গরু পূজা করতো আর প্রতিবেশীদের থেকে এ রোগ তাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়, তাই তাদেরকে গরু যবেহ করার হুকুম দেয়া হয়। তাদের ঈমানের পরীক্ষা এভাবেই হওয়া সম্ভবপর ছিল। এখন যদি তারা যথার্থই আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে মাবুদ বলে স্বীকার না করে তাহলে এ আকীদা গ্রহণ করার পূর্বে যেসব ঠাকুর-দেবতার মূর্তিকে তারা মাবুদ মনে করে আসছিল তাদেরকে নিজের হাতে ভেঙে ফেলতে হবে। এটা অনেক বড় পরীক্ষা ছিল। তাদের দিলের মধ্যে ঈমান পুরোপুরি বাসা বাঁধতে পারেনি, তাই তারা টালবাহানা করতে থাকে এবং বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাক। কিন্তু যতই বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে ততই তারা নিজেরা ঘেরাও হয়ে যেতে থাকে। অবশেষে সেকালে যে বিশেষ ধরনের সোনালী গাভীর পূজা করা হতো তার প্রতি প্রায় অংগুলি নির্দেশ করে তাকেই যবেহ করতে বলা হলো। বাইবেলেও এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে বনী ইসরাঈলরা এ নির্দেশটি উপেক্ষা করার জন্য কোন্ ধরনের টালবাহানা করেছিল, তা সেখানে বলা হয়নি। (গণনা পুস্তক, ১৯ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক)
বাজারে গিয়ে গাভী আনতে আমি তিনটি হাটে যেতে হয়েছে।
গাভী ১% ও নেই।
নাহলে সবাইকে বলতাম গাভী কিনার জন্য।
তাহলে সবাই কুরআন এর সবচেয়ে নিকটতম আমল কাজটি হতো।
তুই কি জানিস করআনে একটি সুরা আছে?
নাম:- বাকারা।
অষ্টম পারা এখানে কুরবানী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এবং গাভী কুরবানী করার নির্দেশ করা হয়েছে।
৬৭ থেকে ৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:
মুসনাদ ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একটি ধনী লোক ছিল, যার কোন সন্তান ছিল না। তার উত্তরাধিকারী ছিল তার এক ভ্রাতুষ্পুত্র। সত্বর উত্তরাধিকার প্রাপ্তির আশায় সে তার চাচাকে হত্যা করে ফেলে এবং রাতে তাদের গ্রামের একটি লোকের দরজার ওপরে রেখে আসে এবং সকালে গিয়ে ঐ লোকটির ওপর হত্যার অপবাদ দেয়। অবশেষে এর দলের ও ওর দলের লোকেদের মধ্যে মারামারি ও খুনাখুনি হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় তাদের জ্ঞানী লোকেরা তাদেরকে বলেন: তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল মূসা (আঃ) বিদ্যমান থাকতে তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে কেন? সুতরাং তারা মূসা (আঃ)-এর নিকট এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে।
তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে তাদেরকে বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوْا بَقَرَةً)
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা একটি গরু ‘যবেহ’কর।”একথা শুনে তারা বলল:
(أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا)
“তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ?” তখন মূসা (আঃ) বললেন:
(قَالَ أَعُوْذُ بِاللّٰهِ أَنْ أَكُوْنَ مِنَ الْجَاهِلِيْنَ)
“আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন আমি মূর্খদের অন্তর্গত না হই।”
তখন যদি তারা যেকোন একটি গরু যবাই করত তাহলেই যথেষ্ট হত। কিন্তু তারা কাঠিন্য অবলম্বন করল তখন আল্লাহ তা‘আলাও তাদের ওপর তা কঠিন করে দিলেন।
তারপর তারা ঐরূপ গরু একটি লোকের নিকট পেল। যা তার কাছে ব্যতীত অন্য কারো নিকট ছিল না। লোকটি বলল: আল্লাহ তা‘আলার শপথ! এ গরুর চামড়া পূর্ণ স্বর্ণের কম মূল্যে আমি বিক্রয় করব না। সুতরাং তারা ঐ মূল্যেই তা কিনে নেয় এবং যবেহ করে। তারপর তারা ঐ যবেহকৃত গরুর একখণ্ড গোশ্ত দ্বারা ঐ মৃত ব্যক্তির ওপর আঘাত করে। তখন মৃতলোকটি দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো তাকে জিজ্ঞাসা করে: তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলল: “আমার এ ভ্রাতুষ্পুত্র।” একথা বলেই সে পুনরায় মরে যায়। ফলে তাকে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পদ দেয়া হয়নি। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/২৮৫)
এ আয়াতে বানী ইসরাঈলকে লক্ষ করে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন আল্লাহ তা‘আলার এ নেয়ামতকে ভুলে না যায়, তিনি এমন এক স্বভাব বিরুদ্ধ ঘটনা ঘটালেন যার ফলে গরুর এক টুকরা গোশতের দ্বারা মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করায় সে জীবিত হয়ে যায় এবং সে তার হত্যাকারীর নাম বলে দেয়। ফলে একটি বড় বিবাদের নিস্পত্তি ঘটে। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
উল্লেখ্য যে, এ ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সতর্ক করলেন যে, “এরূপে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।”
সুতরাং আমাদের সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কর্ম আল্লাহ তা‘আলা জানেন ও দেখেন। তাঁকেই ভয় করে আমাদের সকল অপকর্ম বর্জন করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা যে বিধান দেন তা মাথা পেতে নেয়া অবশ্য কর্তব্য, আর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হারাম।
২. শরয়ী বিধান পাওয়ার পর অহেতুক প্রশ্ন করা নিষেধ, এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়।
৩. ইনশা-আল্লাহ বলার উপকার জানলাম। যেমন শেষবারে ইয়াহূদী ইনশা-আল্লাহ না বললে হয়তো আদিষ্ট গরু খুঁজে পেত না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা বানী ইসরাঈলের উক্ত ব্যক্তিকে যেমন মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন আমাদেরকেও তেমন মৃত্যুর পর জীবিত করবেন।