(Book#840)[Your Lord Has Declared=:-3] [لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾ Do not spend wastefully. কিছুতেই অপব্যয় করো না।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#840)[Your Lord Has Declared=:-3]
[لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾
Do not spend wastefully.
কিছুতেই অপব্যয় করো না।]
www.motaher21.net

وَ اٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّہٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ وَ لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾
And give the relative his right, and [also] the poor and the traveler, and do not spend wastefully.
তুমি আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য প্রদান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও।আর কিছুতেই অপব্যয় করো না।
اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا ﴿۲۷﴾
Indeed, the wasteful are brothers of the devils, and ever has Satan been to his Lord ungrateful.
নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
وَ اِمَّا تُعۡرِضَنَّ عَنۡہُمُ ابۡتِغَآءَ رَحۡمَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکَ تَرۡجُوۡہَا فَقُلۡ لَّہُمۡ قَوۡلًا مَّیۡسُوۡرًا ﴿۲۸﴾
And if you [must] turn away from the needy awaiting mercy from your Lord which you expect, then speak to them a gentle word.
তুমি নিজেই যখন তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন প্রত্যাশিত করুণা লাভের সন্ধানে থাকো, তখন তাদেরকে যদি বিমুখই কর, তাহলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#840)[Your Lord Has Declared=:-3]
[لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾
Do not spend wastefully.
কিছুতেই অপব্যয় করো না।]
www.motaher21.net

Tafsir Ibne Kasir
Said that:-
The Command to maintain the Ties of Kinship and the Prohibition of Extravagance

Allah says

وَاتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ

And give to the kinsman his due, and to the Miskin (poor), and to the wayfarer.

When Allah mentions honoring one’s parents, He follows this with the command to treat one’s relatives well and to maintain the ties of kinship.

According to the Hadith:

أُمَّكَ وَأَبَاكَ ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاك

ثُمَّ الاَْقْرَبَ فَالاَْقْرَب

Your mother and your father, then your closest relatives and the next closest.

According to another Hadith:

مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَجَلِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَه

Whoever would like to see his provision expanded and his life extended, let him maintain his ties of kinship.

وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا

But spend not wastefully (your wealth) in the manner of a spendthrift.

When Allah commands spending, He forbids extravagance. Spending should be moderate, as stated in another Ayah:

وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُواْ لَمْ يُسْرِفُواْ وَلَمْ يَقْتُرُواْ

And those who, when they spend, are neither extravagant nor stingy. (25:67)

Then He says, to discourage extravagance.

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ

Verily, the spendthrifts are brothers of the Shayatin,

They have this trait in common.

Ibn Mas`ud said:

“This refers spending extravagantly when it is not appropriate.”

Ibn Abbas said likewise.

Mujahid said:

“If a man spends all his wealth on appropriate things, then he is not a spendthrift, but if he spends a little inappropriately, then he is a spendthrift.”

Qatadah said:

“Extravagance means spending money on sin in disobeying Allah, and on wrongful and corrupt things.”

Imam Ahmad recorded that Anas bin Malik said:

“A man came from Banu Tamim to the Messenger of Allah and said:`O Messenger of Allah, I have a lot of wealth, I have a family, children, and the refinements of city life, so tell me how I should spend and what I should do.’

The Messenger of Allah said:

تُخْرِجُ الزَّكَاةَ مِنْ مَالِكَ إِنْ كَانَ فَإِنَّهَا طُهْرَةٌ تُطَهِّرُكَ

وَتَصِلُ أَقْرِبَاءَكَ

وَتَعْرِفُ حَقَّ السَّايِلِ وَالْجَارِ وَالْمِسْكِين

Pay the Zakah on your wealth if any is due, for it is purification that will make you pure,

maintain your ties of kinship,

pay attention to the rights of beggars, neighbors and the poor.

He said:`O Messenger of Allah, make it less for me.’

He (recited):

وَاتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا

And give to the kinsman his due, and to the Miskin (poor) and to the wayfarer. But spend not wastefully in the manner of a spendthrift.

The man said, `That is enough for me, O Messenger of Allah. If I pay Zakah to your messenger, will I be absolved of that duty before Allah and His Messenger!’

The Messenger of Allah said:

نَعَمْ إِذَا أَدَّيْتَهَا إِلَى رَسُولِي فَقَدْ بَرِيْتَ مِنْهَا وَلَكَ أَجْرُهَا وَإِثْمُهَا عَلَى مَنْ بَدَّلَهَا

Yes, if you give it to my messenger, you will have fulfilled it, and you will have the reward for it, and the sin is on the one who changes it.”

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ

Verily, the spendthrifts are brothers of the Shayatin,

meaning, they are their brothers in extravagance, foolishness, failing to obey Allah and committing sin.

Allah said:

وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا

and the Shaytan is ever ungrateful to his Lord.

meaning, he is an ingrate, because he denied the blessings of Allah and did not obey Him, turning instead to disobedience and rebellion.
وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاء رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ

And if you turn away from them and you are awaiting a mercy from your Lord,

`If your relatives and those to whom We have commanded you to give, ask you for something, and you do not have anything, and you turn away from them because you have nothing to give,

تَرْجُوهَا

for which you hope,

i.e. a mercy from your Lord,

فَقُل لَّهُمْ قَوْلاً مَّيْسُورًا

then, speak unto them a soft, kind word.

meaning, with a promise.

This was the opinion of Mujahid, Ikrimah, Sa`id bin Jubayr, Al-Hasan, Qatadah and others.

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪০) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৩]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
২৬-২৮ নং
[لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾
কিছুতেই অপব্যয় করো না।]
www.motaher21.net
وَ اٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّہٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ وَ لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا ﴿۲۶﴾
তুমি আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য প্রদান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও।আর কিছুতেই অপব্যয় করো না।
اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا ﴿۲۷﴾
নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
وَ اِمَّا تُعۡرِضَنَّ عَنۡہُمُ ابۡتِغَآءَ رَحۡمَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکَ تَرۡجُوۡہَا فَقُلۡ لَّہُمۡ قَوۡلًا مَّیۡسُوۡرًا ﴿۲۸﴾
তুমি নিজেই যখন তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে কোন প্রত্যাশিত করুণা লাভের সন্ধানে থাকো, তখন তাদেরকে যদি বিমুখই কর, তাহলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো।

২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর:

পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পিতামাতার সাথে সৎ আচরণ করার নির্দেশ দেয়ার পর আত্মীয়-স্বজন, ফকীর-মিসকীনদের ও পথিকদের হক দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাদের হক হল তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, তাদেরকে ধমক না দেয়া এবং বিপদে পড়লে সহযোগিতা করা। আর ধনীদের সম্পদে তারা যাকাত পাওয়ার যে হকদার সে হক দিয়ে দেয়া। আত্মীয়-স্বজনরা যদি ওয়ারিশ হয় তাহলে তাদের প্রাপ্য সম্পদ দিয়ে দেয়া এবং মারা গেলে তাদের জানাযায় শরীক হওয়া। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। অতঃপর যারা নিকটবর্তী ও তাদের পরে যারা নিকটবর্তী। (মুসতাদরাক: ৪২১৯, শুআবুল ঈমান হা: ৭৮৪৪)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি তার রিযিক ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৮৫, ৫৯৮৬, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৫৭)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। আর যে অপচয় করে তাকে শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অপচয় হল প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা বা নষ্ট করা। সেটা যেকোন ক্ষেত্রে হতে পারে। সম্পদ অপচয় হতে পারে, সময় অপচয় হতে পারে, জ্ঞান-বুদ্ধির অপচয় হতে পারে, ইত্যাদি। মু’মিনরা কখনো কিছু অপচয় করে না, তাদের সম্পদ অতিরিক্ত থাকলে আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে, সময় অতিরিক্ত থাকলে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে মগ্ন থাকে। সুতরাং কেবল শয়তানের অনুসারীরাই অপচয় করতে পারে, অন্য কেউ নয়।

অর্থাৎ আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে (যা দূরীভূত হওয়ার এবং রুযীর প্রসারতার তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আশা রাখ) যদি তোমাকে গরীব আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন এবং অভাবী ব্যক্তিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় অর্থাৎ কিছু দিতে না পারার ওজর পেশ করতে হয় তাহলে নরম ও কোমল কন্ঠে পেশ করবে। কর্কশ ও অভদ্রতার সাথে বলো না। কেননা তাদের সাথে ভালভাবে কথা বলা এটাও একটা সাদকাহ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ وَّمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّنْ صَدَقَةٍ يَّتْبَعُهَآ أَذًي ط وَاللّٰهُ غَنِيٌّ حَلِيْمٌ‏)‏

“ভাল কথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দানের চেয়ে উত্তম যে দানের পরে কষ্ট দেয়া হয়। আর আল্লাহ ধনী এবং ধৈর্যশীল।” (সূরা বাকারাহ ২:২৬৩) সুতরাং গরীব-মিসকিনরা কোন কিছু চাইতে আসলে যথাসম্ভব কিছু দেয়ার চেষ্টা করবে, দিতে না পারলে তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করবে না, বরং সুন্দর ভাষায় ও ভদ্রতার সাথে বিদায় দেবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) হক্বদারদের হক্ব যথাযথভাবে আদায় করে দিতে হবে।
(২) অপচয় ও কৃপণতা করা যাবে না।
(৩) মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করাও একটি নেকীর কাজ।
(৪) গরীব-মিসকিনদেরকে ধমক দিয়ে বিদায় দেয়া উচিত নয়, বরং যদি কিছু না দিতে পারো নরম ভাষায় বিদায় দেবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# এ তিনটি ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ নিজের উপার্জন ও ধন-দৌলত শুধুমাত্র নিজের জন্যই নির্ধারিত করে নেবে না বরং ন্যায়সঙ্গতভাবে ও ভারসাম্য সহকারে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর নিজের আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য অভাবী লোকদের অধিকার আদায় করবে। সমাজ জীবনে সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং অন্যের অধিকার জানা ও তা আদায় করার প্রবণতা সক্রিয় ও সঞ্চারিত থাকবে। প্রত্যেক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের সাহায্যকারী এবং প্রত্যেক সমর্থ ব্যক্তি নিজের আশপাশের অভাবী মানুষদের সাহায্যকারী হবে। একজন মুসাফির যে জনপদেই যাবে নিজেকে অতিথি বৎসল লোকদের মধ্যেই দেখতে পাবে। সমাজে অধিকারের ধারণা এত বেশী ব্যাপক হবে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি যাদের মধ্যে অবস্থান করে নিজের ব্যক্তি-সত্তা ও ধন-সম্পদের ওপর তাদের সবার অধিকার অনুভব করবে। তাদের খিদমত করার সময় এ ধারণা নিয়েই খিদমত করবে যে, সে তাদের অধিকার আদায় করছে, তাদেরকে অনুগ্রহ পাশে আবদ্ধ করছে না। কারোর খিদমত করতে অক্ষম হলে তার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আল্লাহর বান্দাদের খিদমত করার যোগ্যতা লাভ করার জন্য আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। ইসলামের ঘোষণাপত্রের এ ধারাগুলোও শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নৈতিকতার শিক্ষাই ছিল না বরং পরবর্তী সময়ে মদীনা তাইয়েবার সমাজে ও রাষ্ট্রে এগুলোর ভিত্তিতেই ওয়াজিব ও নফল সাদকার বিধানসমূহ প্রদত্ত হয়, অসিয়ত, মীরাস ও ওয়াকফের পদ্ধতি নির্ধারিত হয়, এতিমের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, প্রত্যেক জনবসতির ওপর মুসাফিরের কমপক্ষে তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারী করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং এ সঙ্গে সমাজের নৈতিক ব্যবস্থা কার্যত এমন পর্যায়ে উন্নীত করা হয় যার ফলে সমগ্র সামাজিক পরিবেশে দানশীলতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা মনোভাব সঞ্চারিত হয়ে যায়। এমনকি লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনগত অধিকারসমূহ দেয়া ছাড়াও আইনের জোরে যেসব নৈতিক অধিকার চাওয়া ও প্রদান করা যায় না সেগুলো ও উপলব্ধি ও আদায় করতে থাকে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*অপচয় রোধ ও অধিকার আদায় : পিতামাতা সম্পর্কে নির্দেশাবলী দেয়ার পর সব ধরনের আত্মীয়স্বজন, মিসকীন তথা দরিদ্র ও পথিকের ব্যাপারেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এভাবে আত্মীয়তার পরিমন্ডলকে প্রশস্ত করে ব্যাপকতর অর্থে গােটা মানব জাতির সাথে বন্ধন মজবুত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও…'(আয়াত ২৬-২৮) এভাবে কোরআন আত্মীয়, মিসকীন পথিকের জন্যে অধিকার চাপিয়ে দিয়েছে প্রত্যেকের ওপর এবং সম্পদের অংশবিশেষ দান করেই এ অধিকার থেকে অব্যাহতি লাভ করা যায়। এটা একজনের ওপর আর একজনকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া নয়, বরং এটা এমন একটা অধিকার, যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে তাঁর এবাদাত ও তাওহীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ অধিকার প্রদান করেই এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়। সেই সাথে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের মধ্যে হৃদ্যতা ও সম্প্রীতির সৃষ্টি হয়। অথচ দাতা কোনাে স্বেচ্ছামূলক দান করে না, বরং আল্লাহর অর্পিত দায়িত্বই পালন করে। কোরআন অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করেছে। হযরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে মাসউদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, অপচয় ও অপব্যয় হলাে অন্যায়, ও অসৎ পথে ব্যয়। মুজাহিদ বলেছেন, কোনাে মানুষ যদি তার সমস্ত সম্পদ সৎ পথে ব্যয় করে তবুও সেটা অপব্যয় নয়। কিন্তু যদি একটা পয়সাও অসৎ পথে ব্যয় করে, তবে সেটা অপব্যয়। কাজেই বেশী বা কম ব্যয় করাকেই অপব্যয় ও অপচয় বলা হয় না। কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে, এটাই আসল প্রতিপাদ্য বিষয়। অপচয় ও অপব্যয়কারীদেরকে শয়তানের ভাই এ জন্যেই বলা হয়েছে যে, তারা অন্যায় ও অসৎ পথে ব্যয় করে। আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহর কাজে ব্যয় করে। তাই তারা শয়তানের সাথী ও বন্ধু। ‘আর শয়তান হচ্ছে নিজ প্রতিপালকের প্রতি চরম অকৃতজ্ঞ।’ অর্থাৎ সে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের হক আদায় করে না। অনুরূপভাবে শয়তানের অপব্যয়ী ভাইরাও নেয়ামতের হক আদায় করে না। এর হক হলো, সৎ পথে ব্যয় করা, অপচয় ও অপব্যয় না করা। কিন্তু যখন কোনাে ব্যক্তি আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও পথিকের হক দেয়ার মতাে সম্পদের অধিকারী হয় না এবং নিজেদের অক্ষমতার কারণে তাদের সামনে যেতে লজ্জাবােধ করে। তখন তার কর্তব্য হলাে একদিকে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেন তিনি তাকে ও তার আত্মীয়স্বজনকে জীবিকার সচ্ছলতা দান করেন। সচ্ছলতা এলে তাদেরকে সাধ্যমত দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। আর যতােদিন সচ্ছলতা না আসে, ততােদিন সে তাদেরকে বিনীতভাবে ও উপকারী কথা দ্বারা সাহায্য করতে পারে। তাহলে তাদের সামনে লজ্জা ও সংকোচে ভুগতে হবে না। আর্থিক সাহায্য করতে না পেরে দুঃখে ও লজ্জায় আত্মীয় ও দরিদ্রদেরকে ত্যাগ করলে ও নীরবতা অবলম্বন করলে তারাও তার প্রতি সংকুচিত হয়ে পড়বে। বস্তুত বিনম্র কথাবার্তায়ও অনেক উপকারিতা, আশা ও সৌজন্যে থাকতে পারে।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর

পিতা-মাতার সাথে সদয় আচরণের নির্দেশ দানের পর আল্লাহ তাআলা আত্মীয়দের সাথে সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন। হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাতার সাথে সদাচরণ কর এবং পিতার সাথেও সদাচরণ কর। তারপর তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর যে বেশী নিকটবর্তী, তারপর তার সাথে যে বেশী নিকটবর্তী।” অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার জীবিকায় ও বয়সে বৃদ্ধি বা উন্নতি চায় সে যেন সদয় আচরণ করে।”

মুসনাদে বায্যারে রয়েছে যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমাকে (রাঃ) ডেকে তাকে ফিদক (বাগানটি) দান করেন। (এই হাদীসের সনদ সঠিক নয় এবং ঘটনাটিও সত্য বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, এই আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সময় ফিদক’ বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) দখলেই ছিল না। সপ্তম হিজরীতে খায়বার বিজিত হয়, এরপর ফিদক নামক বাগানটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) অধিকারভূক্ত হয়)

মিসকীন ও মুসাফিরের পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বারাআতে গত হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। খরচের হুকুমের পর অপব্যয় করতে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করছেন। মানুষের কৃপণ হওয়াও উচিত নয় এবং অপব্যয়ী হওয়াও উচিত নয়, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অমিতব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (২৫:৬৭) তারপর আল্লাহ তাআলা অপব্যয়ের মন্দগুণের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই। (আরবি) বলা হয় অন্যায় পথে ব্যয় করাকে। কেউ যদি তার সমুদয় মাল আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেয়, তবুও তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে না। পক্ষান্তরে অল্প মালও যদি অন্যায় পথে ব্যয় করে তবুও, তাকে অমিতব্যয়ী বলা হবে।

বানু তামীম গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি একজন সম্পদশালী লোক এবং আমার পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন রয়েছে। আমি কি পন্থা অবলম্বন করবো। তা আমাকে বলে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “প্রথমে তুমি। যাকাতকে তোমার মাল হতে পৃথক করে দাও, তাহলে তোমার মাল পবিত্র হয়ে যাবে। তারপর তা হতে তোমার আত্মীয় স্বজনের উপর খরচ কর, ভিক্ষুককে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং প্রতিবেশী ও মিসকীনদের উপরও খরচ কর।” সে আবার বললোঃ (আরবি) “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অল্প কথায় পূর্ণ। উদ্দেশ্যটি আমাকে বুঝিয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ “আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের হক আদায় কর এবং বাজে খরচ করো না।” সে তখন বললোঃ । অর্থাৎ “আল্লাহ আমার জন্যে যথেষ্ট।” আচ্ছা জনাব! যখন আপনার যাকাত আদায়কারীকে আমার যাকাতের মাল প্রদান করবো তখন কি আমি আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবো। (অর্থাৎ আমার উপর আর কোন দায়িত্ব থাকবে না, (তা)?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে তাকে বললেনঃ “হাঁ, যখন তুমি আমার দূতকে তোমার যাকাতের মাল প্রদান করে দেবে তখন তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) কাছে মুক্ত হয়ে যাবে এবং তোমার জন্যে প্রতিদান ও পুরস্কার সাব্যস্ত হয়ে। যাবে। এখন যে এটা বদলিয়ে দেবে, এর গুনাহ তার উপরই বর্তিবে।”

এখানে বলা হয়েছে যে, অপব্যয়, নির্বুদ্ধিতা, আল্লাহর আনুগত্য হতে ফিরে আসা এবং অবাধ্যতার কারণে অপব্যয়ী লোকেরা শয়তানের ভাই হয়ে যায়। শয়তানের মধ্যে এই বদঅভ্যাসই আছে যে, সে আল্লাহর নিয়ামতের নাশুকরী করে এবং তার আনুগত্য অস্বীকার করে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই আত্মীয় স্বজন, মিসকীন ও মুসাফিরদের কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চেয়ে বসে এবং ঐ সময় তোমার হাতে কিছুই না থাকে, আর এই কারণে তোমাকে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে দিতে হয় তবে তাকে নরম কথায় বিদায় করতে হবে। যেমন বলতে হবেঃ “ভাই! এখন আমার হাতে কিছুই নেই। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে দিবেন তখন আমি। তোমার প্রাপ্য ভুলে যাবো না ইত্যাদি।”

Leave a Reply