(Book#850) Sura:17 Sura: Bony Israyel. Ayat: 44 [ تُسَبِّحُ لَہُ Everything glorifies Allah. ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#850)
Sura:17
Sura: Bony Israyel.
Ayat: 44
[ تُسَبِّحُ لَہُ
Everything glorifies Allah. ]
www.motaher21.net
تُسَبِّحُ لَہُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِہٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَہُوۡنَ تَسۡبِیۡحَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا ﴿۴۴﴾
The seven heavens and the earth and whatever is in them exalt Him. And there is not a thing except that it exalts [ Allah ] by His praise, but you do not understand their [way of] exalting. Indeed, He is ever Forbearing and Forgiving.

Tafsir Ibne Kasir Said:-

Everything glorifies Allah

Allah says:

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالَارْضُ وَمَن فِيهِنَّ

The seven heavens and the earth and all that is therein, glorify Him

meaning the creatures that dwell therein, sanctify Him, exalt Him, venerate Him, glorify Him and magnify Him far above what these idolators say, and they bear witness that He is One in His Lordship and Divinity. In everything there is a sign of Allah indicating that He is One.

As Allah says:

تَكَادُ السَّمَـوَتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الاٌّرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدّاً

أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَـنِ وَلَداً

Whereby the heavens are almost torn, and the earth is split asunder, and the mountains fall in ruins, That they ascribe child to the Most Beneficent. (19:90-91)

وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ

and there is not a thing but glorifies His praise.

there is no created being that does not celebrate the praises of Allah.

وَلَـكِن لاَّ تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ

But you understand not their glorification.

means, `You do not understand them, O mankind, because it is not like your languages.’

This applies to all creatures generally, animal, inanimate and botanical.

This is the better known of the two opinions according to the most reliable of two opinions.

It was reported in Sahih Al-Bukhari that Ibn Mas`ud said:

“We used to hear the Tasbih of the food as it was being eaten.”

Imam Ahmad recorded that (Mu`adh bin Anas said that) the Messenger of Allah came upon some people who were sitting on their mounts and talking to one another. He said to them:

ارْكَبُوهَا سَالِمَةً وَدَعُوهَا سَالِمَةً وَلَا تَتَّخِذُوهَا كَرَاسِيَّ لاَِحَادِيثِكُمْ فِي الطُّرُقِ وَالاَْسْوَاقِ فَرُبَّ مَرْكُوبَةٍ خَيْرٌ مِنْ رَاكِبِهَا وَأَكْثَرُ ذِكْرًااِللهِ مِنْه

Ride them safely then leave them safely. Do not use them as chairs for you to have conversations in the streets and marketplaces, because the one that is ridden may be better than the one who rides it, and may remember Allah more than he does.

An-Nasa’i recorded in his Sunan that Abdullah bin `Amr said:

“The Messenger of Allah forbade us from killing frogs.”

إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

Truly, He is Ever Forbearing, Oft-Forgiving.

means, He does not hasten to punish those who disobey Him, rather He gives them time and waits, then if they persist in their stubborn Kufr, He seizes them with a punishment of the All-Mighty, All-Capable.

It was recorded in the Two Sahihs that:

إِنَّ اللهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْه

Allah will let the wrongdoer carry on until, when He does seize him, He will never let him go.

Then the Messenger of Allah recited:

وَكَذلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِىَ ظَـلِمَةٌ

Such is the punishment of your Lord when He seizes the (population of) towns while they are doing wrong.(11:02)

Allah says:

وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِىَ ظَـلِمَةٌ

And many a township did I give respite while it was given to wrongdoing. (22:45) until the end of two Ayat.

فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ

And many a township did We destroy while they were given to wrongdoing. (22:48)

Whoever gives up his disbelief and disobedience, and turns back to Allah in repentance, Allah will accept his repentance, as He says:

وَمَن يَعْمَلْ سُوءاً أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّه

And whoever does evil or wrongs himself but afterwards seeks Allah’s forgiveness. (4:110)

Here, Allah says:

إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

Truly, He is Ever Forbearing, Oft-Forgiving.

At the end of Surah Fatir, He says:

إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضَ أَن تَزُولَا وَلَيِن زَالَتَأ إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ إِنَّهُ كَانَ حَلِيماً غَفُوراً

Verily, Allah grasps the heavens and the earth lest they should move away from their places, and if they were to move away from their places, there is not one that could grasp them after Him. Truly, He is Ever Most Forbearing, Oft-Forgiving… until His saying;

وَلَوْ يُوَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ

And if Allah were to punish men. (35:41-45).

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৫০)
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৪৪ নং আয়াত:
[تُسَبِّحُ لَہُ
সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। ]
www.motaher21.net
تُسَبِّحُ لَہُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِہٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَہُوۡنَ تَسۡبِیۡحَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا ﴿۴۴﴾
সাত আসমান এবং যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাঁদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
সাত আকাশ, যমীন ও এগুলির অন্তর্বর্তী সমস্ত মাখলুক আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে থাকে। মুশরিকরা যে আল্লাহ তাআলার সত্তাকে বাজে ও মিথ্যা বিশেষণে বিশেষিত করছে, এর থেকে সমস্ত মাখলুক নিজেদেরকে মুক্ত ঘোষণা করছে এবং তিনি যে মা’রূদ ও প্রতিপালক এটা তারা অকপটে স্বীকার করছে। তারা এটাও স্বীকার করছে যে, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই। অস্তিত্ব বিশিষ্ট সব কিছু আল্লাহর একত্বের জীবন্ত সাক্ষী। এই নালায়েক, অযোগ্যও অপদার্থ লোকদের আল্লাহ সম্পর্কে জঘন্য উক্তিতে সারা মাখলুক কষ্টবোধ করছে। অচিরেই যেন আকাশ ফেটে যাবে, পাহাড় ভেঙে পড়বে এবং যমীন ধ্বসে যাবে।

ইমাম তিবরানীর (রঃ) হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, মিরাজের রাত্রে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ও হযরত মীকাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মাকামে ইবরাহীম ও যমযম কূপের মধ্যবর্তী স্থান হতে নিয়ে যান। হযরত জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন ডান দিকে এবং হযরত মীকাঈল (আঃ) ছিলেন বাম দিকে। তাঁরা তাঁকে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ফিরে আসেন। তিনি বলেনঃ “আমি উচ্চাকাশে বহু তাসবীহ এর সাথে নিম্নের তাসবীহও শুনেছিঃ (আরবি) অর্থাৎ “ভয় ও প্রেমপ্রীতির পাত্র, মহান ও সর্বোচ্চ আল্লাহর পবিত্রতা, মহিমা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে উচ্চাকাশ সমূহ।”

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ মাখলুকের মধ্যে সমস্ত কিছু তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা কীর্তণ করে থাকে। কিন্তু হে মাবন মণ্ডলী! তোমরা তাদের তদ্বীহ্ বুঝতে পার না। কেননা, তাদের ভাষা তোমাদের জানা নেই। প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জড় পদার্থ সবকিছুই আল্লাহর তাসবীহ্ পাঠেরত রয়েছে।

হযরত ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে তারা খাদ্য খাওয়ার সময় খাদ্যের তাসবীহ শুনতে পেতেন। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে)

হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় হস্তের মুষ্টির মধ্যে কয়েকটি পাথর নেন। আমি শুনতে পাই যে, ওগুলি মৌমাছির মত ভন্ করে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করছে। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকরের (রাঃ) হাতে, হযরত উমারের (রাঃ) হাতে এবং হযরত উছমানের (রাঃ) হাতেও।” (এ হাদীসটি সহীহ ও মুসনাদগ্রন্থ সমূহে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে)

রাসূলুল্লাহ (সঃ) কতকগুলি লোককে দেখেন যে, তারা তাদের উষ্ট্রী ও জন্তুগুলির উপর আরোহণরত অবস্থায় ওগুলিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এদেখে। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “সওয়ারী শান্তির সাথে গ্রহণ কর এবং উত্তমরূপে ছেড়ে দাও। ওগুলিকে পথে ও বাজারের লোকদের সাথে কথা বলার চেয়ার বানিয়ে রেখো না। জেনে রেখো যে, অনেক সওয়ারী তাদের সওয়ার চেয়েও উত্তম হয়ে থাকে।” বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যাঙকে মারতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালেমাটি পাঠের পরেই কারো পূণ্যের কাজ গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। (মুসনাদে আহমাদে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে)

“আলহামদু লিল্লাহ’ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কালেমা। যে এটা পাঠ করে না সে আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞ বান্দা। ‘আল্লাহু আকবর’ যমীন ও আসমানের মধ্যবর্তী শূন্য স্থান পূর্ণ করে থাকে। ‘সুবহানাল্লাহ’ হচ্ছে মাখলুকের তাসবীহ! যখন কেউ (আরবি) পাঠ করে তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার বান্দা আমার অনুগত হয়েছে। এবং আমাকে সবকিছু সমর্পণ করেছে।” বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রেশমী হাত ও রেশমী বোস্তামী বিশিষ্ট তায়ালিসী জুব্বা পরিধান করে রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট আগমন করে এবং বলতে শুরু করেঃ “এই ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উদ্দেশ্য এটা ছাড়া অন্য কিছু নয় যে, তিনি রাখালদের ছেলেদেরকে সমুন্নত করবেন এবং নেতাদের ছেলেদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তার অঞ্চল টেনে ধরে বলেনঃ “আমি তোমাকে জন্তুর পোষাক পরিহিত দেখছি না তো?” তারপর তিনি ফিরে আসেন এবং বসে পড়ে বলতে শুরু করেনঃ “হযরত নূহ (আঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় নিজের ছেলেদের ডেকে নিয়ে বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে অসিয়ত হিসেবে দু’টো কাজের হুকুম করছি এবং দু’টো কাজ থেকে নিষেধ করছি। নিষিদ্ধ কাজ দু’টি এই যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না এবং অহংকার করবে না। আর আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি এই যে, তোমরা (আরবি) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, আসমান যমীন এবং এতোদুভয়ের অন্তর্বর্তী যত কিছু রয়েছে সব গুলোকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং অন্য পাল্লায় শুধু এই কালেমাটি রাখা হয় তবে, এই কালেমাটির পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। জেনে রেখো, যদি সমস্ত আকাশ ও যমীনকে একটা বৃত্ত বানানো হয় এবং এই কালেমাটি ওর উপর রাখা হয় এটা ওকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে। দ্বিতীয় হুকুম এই যে, তোমরা (আরবি) পাঠ করতে থাকবে। কেননা, এটা হচ্ছে প্রত্যেক জিনিসের নামায। আর এর কারণেই প্রত্যেককে রিযক দেয়া হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে)

তাফসীরের ইবনু জারীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এসো, হযরত নূহ (আঃ) তাঁর সন্তানদেরকে যে হুকুম করেছিলেন তা আমি তোমাদের নিকট বর্ণনা করি। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎসগণ! আমি তোমাদেরকে হুকুম করছি যে, তোমরা ‘সবুহানাল্লাহ’ বলতে থাকবে। এটা সমস্ত মাখলুকের তাসবীহ এবং এরই মাধ্যমে তাদেরকে রিযক দেয়া হয়।। আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে থাকে।” (বর্ণনাকারী যানদীর কারণে এই হাদীসটির ইসনাদ দুর্বল)

ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, স্তম্ভ, গাছ-পালা, পানির খড়খড় শব্দ এ সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ।

আল্লাহ তাআলা বলেন যে, সমস্ত জিনিস আল্লাহর প্রশংসা পাঠ ও গুণকীর্তণে নিমগ্ন রয়েছে। ইবরাহীম (রাঃ) বলেন যে, খাদ্য ও তাসবীহ পাঠ করে থাকে। সূরায়ে হাজ্জের আয়াতও এর সাক্ষ্য প্রদান করে। মুফাসসিরগণ বলেন যে, আত্মা বিশিষ্ট সব কিছুই আল্লাহর তাসবীহ পাঠে রত রয়েছে। যেমন প্রাণীসমূহ ও গাছ-পালা। একবার হযরত হাসানের (রাঃ) কাছে খাদ্যের খাঞ্চা আসলে হযরত আবু ইয়াযীদ রাকাশী (রঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আবু সাঈদ (রঃ)! খাঞ্চাও কি তাসবীহ পাঠকারী?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ, তাই ছিল।” ভাবার্থ এই যে, যেই পর্যন্ত ওটা কাঁচা কাঠের আকারে ছিল সেই পর্যন্ত তাসবীহ পাঠকারী ছিল। কিন্তু যখন ওটাকে কেটে নেয়ার পর ওটা শুকিয়ে গেছে তখন তাসবীহ পাঠও শেষ হয়ে গেছে। এই উক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় নিম্নের হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য। একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় বলেনঃ “এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে বড় পাপের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রসাব করার সময় পর্দার প্রতি খেয়াল রাখতো না। অপরজন ছিল পরোক্ষ নিন্দাকারী!” অতঃপর তিনি একটি কাঁচা ডাল নিয়ে ওকে দুভাগ করতঃ দুই কবরের উপর গেড়ে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ “সম্ভবতঃ যতক্ষণ এটা শুষ্ক না হবে ততক্ষণ এদের শাস্তি হাল্কা থাকবে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

এজন্যেই কোন কোন আলেম বলেছেন, যে যতক্ষণ এটা কাঁচা থাকবে ততক্ষণ তাসবীহ পড়বে এবং যখন শুকিয়ে যাবে তখন তাসবীহ পাঠও বন্ধ। হয়ে যাবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আল্লাহ তাআলা বিজ্ঞানময় ও ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর পাপী বান্দাদেরকে শাস্তি দানে তাড়াতাড়ি করেন না, বরং বিলম্ব করেন এবং অবকাশ দেন। কিন্তু এরপরেও যদি সে কুফরী ও পাপাচারে লিপ্ত থেকে যায় তখন অনন্যোপায় হয়ে তাকে পাকড়াও করেন।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন পাকড়াও করেন তখন আর ছেড়ে দেন না।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ কুরআনপাকে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যখন কোন জনপদকে তাদের অত্যাচার-অবিচারের কারণে পাকড়াও করেন, তখন এরূপই পাকড়াও হয়ে থাকে (শেষ পর্যন্ত)।”

অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “বহু গ্রামবাসীকে আমি তাদের যুলুমরত অবস্থায় ধ্বংস করে দিয়েছি।” (২২:৪৫) হাঁ, তবে যারা পাপকার্য থেকে ফিরে আসে এবং তাওবা করে নেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করে থাকেন। যেমন এক জায়গায় রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অসৎ কাজ করে এবং নিজের নফসের উপর জুলুম করে, অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহ তাআলাকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।” সূরায়ে ফাতিরের শেষের আয়াতগুলিতেও এই বর্ণনাই রয়েছে।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*প্রকৃতির সাথে যেভাবে সখ্যতা হয় : এরপর জানানাে হচ্ছে যে, এই মহাকাশের নীচে অবস্থিত যে বিশাল জগৎ-এর মধ্যে যা কিছু আছে সবই পারস্পরিক অদেখা এক বন্ধনে আবদ্ধ, এরা সবাই আল্লাহমুখী ও আল্লাহর অনুগত জীবন যাপন করছে এবং অহরহ আল্লাহর নির্দেশিত পথে আবর্তিত হয়ে তার তাসবীহ করছে (সবাই জানাচ্ছে যে, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর হুকুমমত চলতে বাধ্য) এবং আরও জানাচ্ছে যে সব কিছু এগিয়ে চলেছে তারই দিকে । এরশাদ হচ্ছে, ‘সপ্ত-আকাশ, পৃথিবী ও এ দুই এর মাঝে যা কিছু আছে সবই ও সবাই নিরন্তর তাসবীহ জপে চলেছে। আর যেখানে যা কিছু আছে তার প্রশংসা-গীতি গেয়ে চলেছে, কিন্তু তাদের এই তাসবীহ তােমরা বুঝতে পারাে না নিশ্চয়ই তিনি বড়ই সহনশীল মাফ করনেওয়ালা।’ এ বিশাল সৃষ্টির মধ্যে প্রতিটি অণু-পরমাণু প্রতিনিয়ত তাদের নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে আল্লাহর গুণগান করে চলেছে, অর্থাৎ প্রানী ও জড় পদার্থ সবাই ও সবকিছু চলমান অবস্থায় আছে প্রকৃতপক্ষে তাদের সবারই জীবন আছে এবং সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ঘােষণায় রত।  সবাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা ও কৃতিত্ব বর্ণনা করে চলেছে। আমরা তাদের তাসবীহ জপার অর্থ করতে গিয়ে বড় জোর এতটুকু বুঝি যে সব কিছু নিরলসভাবে আল্লাহর হুকুম অবিরত পালন করে প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, সর্ব শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ক্ষমতা সারাক্ষণ এবং সর্বত্র বিরাজমান, তার ক্ষমতার বাইরে কেউ নেই, তার হুকুম অমান্য করার সাধ্য বা স্বাধীনতা কারাে নেই। এ হচ্ছে তুলনাহীন এক দৃশ্য। যখন গভীর দৃষ্টিতে এই বিশ্ব প্রকৃতির দিকে মানুষ তাকায় হৃদয়ের গভীর চিন্তা করে এবং অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চায়, তখন ছােটো বড়ো প্রত্যেকটি নুড়ি ও পাথর, প্রত্যেকটি দানা-কণা, প্রতিটি পল্পব প্রত্যেকটি ফুল ও ফল, প্রত্যেকটি চারা ও গাছ, প্রতিটি কীট পতংগ ও সরীসৃপ প্রাণী এবং প্রত্যেকটি জীবজন্তু ও মানুষ এবং পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি জীব জানােয়ার, শূন্য আকাশে উড়ন্ত পাখীকূল ও পানিতে সন্তরণশীল প্রতিটি প্রাণী এসব কিছুর সাথে যখন মহাশূন্যলােকে বিরাজমান সকল বস্তু নিচয়ের দিকে তাকায় তখন সে অনুভব করে সবাই অদৃশ্য কোনাে এক শক্তির টানে এগিয়ে চলছে, সবাই একই নিয়মে বিচরণ করছে, সবাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব লােকের এসব দৃশ্য বিদগ্ধ হৃদয়ে জাগায় এক প্রবল প্রকম্পন, আবেগ মুগ্ধ নেত্রে সে পুনরায় এগুলাের দিকে যখন দৃষ্টিপাত করে তখন সে দৃশ্য অদৃশ্য সব কিছুর মধ্যে এক প্রাণ প্রবাহ লক্ষ্য করে যখন যেটা সে স্পর্শ করে, যখন যেদিকে পদবিক্ষেপে এগিয়ে যায় সব কিছু থেকেই সে যেন শুনতে পায় এক মর্মকথা, সবাই যেন আপন মালিকের বন্দনা গাইতে ব্যস্ত, সবকিছুর মধ্যেই যেন প্রাণ প্রবাহের বন্যা পরিস্ফুট। এরশাদ হচ্ছে, ‘যতাে কিছু আছে সবাই তার প্রশংসা-গীতি গেয়ে চলেছে।’ হাঁ, অবশ্যই তারা আল্লাহর তাসবীহ জপছে, কিন্তু তারা যেমন ধরনের প্রাণী বা বস্তু তাদের তাসবীহও সেই রকম এবং তারা তাসবীহ পড়ে তাদের আপন আপন ভাষায়। এইজন্যেই বলা হচ্ছে, ‘তোমরা বুঝনা তাদের তাসবীহ জপা।’ তােমরা বুঝো না কারণ তোমরা তাে মাটি-দ্বারা সৃষ্ট মানুষ-এই মাটির আবরণে তােমাদের দেহ গড়া। মাটির আবরণ ভেদ করে যেমন আলাে পার হয়না, তেমনি তােমাদের দেহাবরণ ভেদ করে জীবজন্তু প্রাকৃতিক বস্তু নিচয়ের ভাষা তােমাদের কাছে পৌছায় না, আরও একটা বড় সত্য হচ্ছে এই যে, তােমরা তাে সাধারণভাবে হৃদয়ের কান দিয়ে শােন না এবং সৃষ্টির গোপন রহস্য বুঝার জন্যে চেষ্টা করাে না, খেয়ালও করাে না ওসবের দিকে এবং দিগন্ত বিস্তৃত যে সব নিদর্শন এই বিশাল সৃষ্টিকে ধরে রেখেছে সেগুলােকেও দেখার দরকার মনে করাে না। প্রকৃতপক্ষে এসবের দিকে খেয়াল করে তাকালে সৃষ্টিকুলের যেসব রহস্য নযরের সামনে ভেসে ওঠে তা জানাতে থাকে সেই মহান স্রষ্টার কথা, যিনি এ সবেরও সৃষ্টিকর্তা এবং যিনি এ সবের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রণকারী। আর মানুষের অন্তরাত্মা যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা সৃষ্টি রহস্যগুলাে অবলােকন করতে থাকে এবং পরিষ্কারভাবে এ নিদর্শনগুলাে তার নযরের সামনে ভাসতে থাকে তখন সজীব-নির্জীব সব কিছু যেন তার সাথে কথা বলতে শুরু করে দেয়, আর তখনই সে সব কিছুর মধ্যে এক প্রাণ স্পন্দন দেখতে পায় এবং সেই সময়েই সে তাদের তাসবীহ জপা শুনতে পায়, অতপর সেই সময় তার হৃদয় মন স্বর্গ রাজ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে উঠে, আর সেই সময়েই সে সৃষ্টি রহস্যের গােপন তত্ত্ব ও তথ্যাদির সন্ধান পেতে থাকে যা সাধারণ দুনিয়া পূজারীর দল ও উদাসীন লােকেরা পায় না, পেতে পারে না। পায়না সেই সব স্থবির ও স্থূল দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষেরা, যাদের হৃদয় মাটির পুরু আবরণে আচ্ছন্ন থাকায় সৃষ্টি রাজ্যের গভীরে লুকায়িত গােপন রহস্য উদ্ঘাটনে তারা ব্যর্থ হয়ে যায়, ব্যর্থ হয় ওই সব রহস্যদ্বার খুলতে যা প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্তুর মধ্য থেকে ব্যক্ত হতে থাকে, প্রকাশিত হতে থাকে এ মহাসৃষ্টির সব কিছু থেকে। এ পর্যায়ে এসে জানানাে হচ্ছে যে মহান স্রষ্টা এইসব অপরিনামদর্শী ব্যক্তিদের ওপর রাগ করে তাদেরকে সাথে সাথে শাস্তি দেন না। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই তিনি সহনশীল বড়ই মাফ-করনেওয়ালা।’  *আল্লাহর অসীম ক্ষমতা : এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সহনশীলতা ও ক্ষমাশীলতার কথা উল্লেখের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, তিনি বান্দাদের এই উদাসীনতা, পরিণামের কথা চিন্তা করে কাজ ও ব্যবহার না করার কারণে এবং পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভের জন্যে এ জীবনে কি কি দায়িত্ব পালন করতে হবে সে বিষয়ে চিন্তা না করার সাথে সাথে অধৈর্য হয়ে পড়ে না এবং তাদের ওপর সংগে সংগে শান্তিও নাযিল করেন না। তিনি তাদের এ উদাসীনতা জনিত অপরাধকে তার মৃত্যু পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকেন, সৃষ্টি রাজ্যের সব কিছু যে অহরহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাসবীহ জপে চলেছে, মানুষ-এটা বুঝে না, চেষ্টাও করে না, এজন্যেও আল্লাহ তায়ালা তাদের অপরাধ নেন না, আবার এদের মধ্যে এমন বেশ কিছু নির্লজ্জ মানুষও আছে যারা আল্লাহ জাল্লা শানুহুর অস্তিত্ব পর্যন্ত স্বীকার করতে রাযি নয়। এসব অর্বাচীন, অভদ্র ও অসত্য মানুষ কেমন প্রগলভতার সাথে বলে, ‘এসব কিছু এমনি এমনিই সৃষ্টি হয়েছে, আর এমনি এমনিই প্রকৃতির বুকে এগুলাে বিলীন হয়ে যাবে।’ তথাকথিত এসব মুৰ্খ বুদ্ধিজীবীরা একটুও চিন্তা করতে প্রস্তুত নয় যে, যে প্রকৃতির কথা তারা বড় গলায় বলছে, সেই প্রকৃতি কী? কে রয়েছে তার পেছনে? মানুষে মানুষে দেহাবয়বের দিক দিয়ে, চেহারা ছবিতে, কর্মক্ষমতায় হৃদয়ানুভূতিতে, শক্তি-সামর্থে এবং জ্ঞান গরিমা ও যােগ্যতায় এতাে পার্থক্য কেন, কে এসবের স্রষ্টা আবার এমনও কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মানে বটে, আবার তার ক্ষমতায় তারই কোনাে কোনাে সৃষ্টি জীবজন্তু না বস্তুকে অংশীদার বানায়। এরা কতাে জঘন্য ধরনের বেওকুফ যে যাকে সর্বশক্তিমান বলে মানে তার ক্ষমতায় অন্য কারাে কোনাে অংশ স্বীকার করলে ক্ষমতার নিরংকুশ মালিক বা সর্বশক্তিমান বলতে আর কেউ থাকে না এতােটুকুও তারা বুঝে না। এর পর তাদের সীমাহীন বােকামীর ও আত্ম প্রবঞ্চনার আর একটি দৃষ্টান্ত এই যে, তারা বলে ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা। হতভাগারা এটা হিসাব করে না যে সন্তান হওয়া এটা তাে সৃষ্টিরই নিয়ম, যাদের প্রয়ােজন হয় সাহায্যকারীর, যাদের মৃত্যুর পর প্রয়ােজন হয় উত্তরাধিকারীর! আর এ হতভাগারা আল্লাহর জন্যে সন্তান বানায়, তা আবার এমন একশ্রেণীকে, যাদেরকে তারা নিজেরা সন্তান বানাতে লজ্জাবােধ করে। যাকে মালিক বলে স্বীকার করে তার জন্যে অপয়াটা, আর গােলামদের জন্যে সেরাটা-এ কেমন ধারা ভাগাভাগি? ছিঃ একটুও লজ্জা লাগে না এমন কথা বলতে। যিনি তােমাকে জ্ঞান বুদ্ধি ও সুন্দরতম আকৃতি দিয়ে সৃষ্টির সেরা বানালেন আর সবাইকে নিয়ােজিত করে দিলেন তােমার খেদমতে-তার সাথে এই ব্যবহার! ধিক তােমার জীবন, ধিক তােমার বিবেচনাবোধের ওপরে, আর ধিক তােমার জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়। যেখানে তােমার কর্তব্য ছিলাে মালিকের এতােসব নেয়ামতের কথা স্বীকার করে তার কাছে নিজেকে সোপর্দ করা, তার ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা বানিয়ে তার আরও কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণ করা, তাকে খুশী করার জন্যে সারাক্ষনমান তার প্রশংসা-গীতিতে মুখর থাকা এবং তার আরও মহব্বত লাভ করার জন্যে, তাকে খুশী করার জন্যে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা-তুচ্ছ জ্ঞান করা এ নশ্বর জীবনকে ও এর সকল ক্ষণস্থায়ী সমারােহকে। সকল মনােযােগিতাকে তার দিকেই সংযােগ করা যেন তার কাছে ফিরে গিয়ে তার চিরন্তন মােহাব্বাতের পরশ পাওয়া যায়। প্রেমময় প্রভু-পরওয়ারদেগার মানুষকে যে যােগ্যতা, যে জ্ঞান, যে সুযােগ এবং যে শক্তি সামর্থ্য দিয়েছেন, তাতে তার পক্ষে সর্বোত্তম উপায়ে তার প্রশংসা-গীত গাওয়া, তার আনুগত্য করা এবং তার ইচ্ছাকে কার্যকর করে এ পৃথিবীকে বেহেশতে পরিণত করা প্রয়ােজন ছিলাে-এজন্যেই তাে মালিক তাকে তার প্রতিনিধি বানিয়ে সকল কিছুকে তাঁর ইচ্ছামত পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু হায় এ হতভাগা মানুষ নিজের পজিশন, নিজের মান-সম্মান, নিজের পদমর্যাদা সব কিছুকে মাটি করে দিয়ে নিজের নিকৃষ্টতম সৃষ্টিতে পরিণত করেছে, যা দেখে পশুরাও লজ্জা পায়, তাদেরকে বােধহয় ঘৃণা করে-তাদের পরিচালনাকে অস্বীকার করতে চায়। আল্লাহ তায়ালা যদি চরম সহনশীল না হতেন, না হতেন সীমাহীন ক্ষমাশীল তাহলে তাদেরকে অচিরেই নাস্তানাবুদ করে দিতেন, যেমন করে বিলীন করে দিয়েছেন অতীতে বহু জাতি ও জনপদকে, ওলট-পালট করে দিয়েছেন তাদের ভূমিকে। কিন্তু না, আল্লাহর হাবীব শেষ রসূলের খাতিরে তিনি তা করছেন না-করবেন না-এটা তার ওয়াদা-এজন্যে অপরাধের জঘন্যতায় পূর্ববর্তী কওমগুলােকে ছাড়িয়ে গেলেও কোনাে এলাকার গােটা জনপদকে পুরােপুরি ভাবে ধংস করছেন না-করবেন না। শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যে তিনি তাদেরকে মৃত্যু দম পর্যন্ত সময় দিয়ে রেখেছেন সুযােগ দিয়েছেন, বুঝ শক্তি দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করানাের জন্যে তাদের দুয়ারে দুয়ারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন মােব্বাল্লেগ (প্রচারক)-এর দলকে এবং তাদেরকে সন্দেহমুক্ত সঠিক পথের সুদৃঢ় দিশা দেয়ার জন্যে তার কিতাবকে রেখেছেন অবিকৃত, যার জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কিত এতাে কথা রয়েছে যার চর্চা কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না। এইজন্যেই ত তিনি ‘সহনশীল, মাফ করনেওয়ালা’ উপাধি নিয়েছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

সমগ্র বিশ্ব-জাহান এবং তার প্রত্যেকটি জিনিস নিজের সমগ্র অস্তিত্ব নিয়ে এ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে চলছে যে, যিনি তাকে পয়দা করেছেন এবং তার লালন-পালন ও দেখাশুনা করছেন, তাঁর সত্তা সব রকমের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা মুক্ত এবং প্রভুত্বের ব্যাপারে কেউ তাঁর সাথে শরীক ও সহযোগী নয়।

# প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার মানে হচ্ছে, প্রত্যেকটি জিনিস কেবলমাত্র নিজের রবের দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা মুক্ত থাকার কথা প্রকাশই করছে না বরং এই সঙ্গে তাঁর যাবতীয় গুণে গুণান্বিত ও যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী হবার কথাও বর্ণনা করছে। প্রত্যেকটি জিনিস তার পরিপূর্ণ অস্তিত্বের মাধ্যমে একথা বর্ণনা করছে যে, তার স্রষ্টা ও ব্যবস্থাপক এমন এক সত্তা, যিনি সমস্ত মহৎ গুণাবলীর সর্বোচ্চ ও পূর্ণতম অবস্থার অধিকারী এবং প্রশংসা যদি থাকে তাহলে একমাত্র তাঁরই জন্য আছে।

# তোমরা তাঁর সামনে অনবরত ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে যাচ্ছো এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চলছো, এরপরও তিনি ক্ষমা করে চলছেন, রিযিক বন্ধ করছেন না, নিজের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিতও করছেন না এবং প্রত্যেক ঔদ্ধত্যকারীকে সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে মৃত্যুদণ্ডও দিচ্ছেন না। এসবই তাঁর সহিষ্ণুতা ও অপরূপ ক্ষমাশীলতারই নিদর্শন। তাছাড়া তিনি ব্যক্তিকেও এবং জাতিকেও বুঝবার ও ভুল সংশোধন করার জন্য যথেষ্ট অবকাশ দিচ্ছেন। তাদেরকে উপদেশ ও সঠিক পথনির্দেশনা দেবার জন্য নবী, সংস্কারক ও প্রচারক পাঠিয়ে চলছেন অনবরত। যে ব্যক্তিই নিজের ভুল বুঝতে পেরে সোজা পথ অবলম্ববন করে তার অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি মাফ করে দেন।

Leave a Reply