Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৯১/ঘুম থেকে নামাজ উত্তম:-২/এবং কাফের-রা বলে:-৩৫) [**মহা‌ খবর:- *তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,:- *এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।:-] www.motaher21.net সুরা: ৭৮: আন্-নাবা পারা:২৯ ১-৪০.নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- তফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯১/ঘুম থেকে নামাজ উত্তম:-২/এবং কাফের-রা বলে:-৩৫)
[**মহা‌ খবর:-
*তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,:-
*এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।:-]

www.motaher21.net
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা
পারা:২৯
১-৪০.নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
তফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-

তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১
عَمَّ یَتَسَآءَلُوۡنَ ۚ﴿۱﴾
তারা একে অন্যের কাছে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২
عَنِ النَّبَاِ الۡعَظِیۡمِ ۙ﴿۲﴾
সেই বড় খবরটা সম্পর্কে কি, ?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩
الَّذِیۡ ہُمۡ فِیۡہِ مُخۡتَلِفُوۡنَ ؕ﴿۳﴾
যে ব্যাপারে এরা নানান ধরনের কথা বলে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে ফিরছে?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৪
کَلَّا سَیَعۡلَمُوۡنَ ۙ﴿۴﴾
কখনই না, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৫
ثُمَّ کَلَّا سَیَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵﴾
আবার বলি, কখনই না, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৬
اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ مِہٰدًا ۙ﴿۶﴾
আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (স্বরূপ) সৃষ্টি করিনি?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৭
وَّ الۡجِبَالَ اَوۡتَادًا ﴿۪ۙ۷﴾
পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৮
وَّ خَلَقۡنٰکُمۡ اَزۡوَاجًا ۙ﴿۸﴾
আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৯
وَّ جَعَلۡنَا نَوۡمَکُمۡ سُبَاتًا ۙ﴿۹﴾
তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১০
وَّ جَعَلۡنَا الَّیۡلَ لِبَاسًا ﴿ۙ۱۰﴾
রাত্রিকে করেছি আবরণ স্বরূপ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১১
وَّ جَعَلۡنَا النَّہَارَ مَعَاشًا ﴿۪۱۱﴾
এবং দিবসকে করেছি জীবিকা অন্বেষণের উপযোগী।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১২
وَّ بَنَیۡنَا فَوۡقَکُمۡ سَبۡعًا شِدَادًا ﴿ۙ۱۲﴾
তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আকাশ স্থাপন করেছি।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৩
وَّ جَعَلۡنَا سِرَاجًا وَّہَّاجًا ﴿۪ۙ۱۳﴾
একটি অতি উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত বাতি সৃষ্টি করেছি?
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৪
وَّ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡمُعۡصِرٰتِ مَآءً ثَجَّاجًا ﴿ۙ۱۴﴾
আর বর্ষণ করেছি পানিপূর্ণ মেঘমালা হতে প্রচুর পানি।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৫
لِّنُخۡرِجَ بِہٖ حَبًّا وَّ نَبَاتًا ﴿ۙ۱۵﴾
যাতে তার সাহায্যে উৎপন্ন করতে পারি শস্য, শাক সবজি ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৬
وَّ جَنّٰتٍ اَلۡفَافًا ﴿ؕ۱۶﴾
এবং ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যানসমূহ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৭
اِنَّ یَوۡمَ الۡفَصۡلِ کَانَ مِیۡقَاتًا ﴿ۙ۱۷﴾
নিঃসন্দেহে বিচারের দিনটি নির্ধারিত হয়েই আছে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৮
یَّوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ فَتَاۡتُوۡنَ اَفۡوَاجًا ﴿ۙ۱۸﴾
সে দিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে অতঃপর তোমরা দলে দলে সমাগত হবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-১৯
وَّ فُتِحَتِ السَّمَآءُ فَکَانَتۡ اَبۡوَابًا ﴿ۙ۱۹﴾
আকাশকে উন্মুক্ত করা হবে, ফলে তা হবে বহু দ্বার বিশিষ্ট।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২০
وَّ سُیِّرَتِ الۡجِبَالُ فَکَانَتۡ سَرَابًا ﴿ؕ۲۰﴾
এবং চালিত করা হবে পর্বতসমূহকে, ফলে তা মরীচিকায় পরিণত হবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২১
اِنَّ جَہَنَّمَ کَانَتۡ مِرۡصَادًا ﴿۪ۙ۲۱﴾
আসলে জাহান্নাম একটি ফাঁদ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২২
لِّلطَّاغِیۡنَ مَاٰبًا ﴿ۙ۲۲﴾
বিদ্রোহীদের আবাস।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৩
لّٰبِثِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَحۡقَابًا ﴿ۚ۲۳﴾
সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৪
لَا یَذُوۡقُوۡنَ فِیۡہَا بَرۡدًا وَّ لَا شَرَابًا ﴿ۙ۲۴﴾
সেখানে কোন রকম ঠাণ্ডা এবং পানযোগ্য কোন জিনিসের স্বাদই তারা পাবে না।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৫
اِلَّا حَمِیۡمًا وَّ غَسَّاقًا ﴿ۙ۲۵﴾
ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া ;
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৬
جَزَآءً وِّفَاقًا ﴿ؕ۲۶﴾
এটাই উপযুক্ত প্রতিফল ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৭
اِنَّہُمۡ کَانُوۡا لَا یَرۡجُوۡنَ حِسَابًا ﴿ۙ۲۷﴾
তারা (পরকালে) হিসাবের আশঙ্কা করত না।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৮
وَّ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا کِذَّابًا ﴿ؕ۲۸﴾
আমার আয়াতগুলোকে তারা একেবারেই মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-২৯
وَ کُلَّ شَیۡءٍ اَحۡصَیۡنٰہُ کِتٰبًا ﴿ۙ۲۹﴾
সব কিছুই আমি সংরক্ষণ করে রেখেছি লিখিতভাবে।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩০
فَذُوۡقُوۡا فَلَنۡ نَّزِیۡدَکُمۡ اِلَّا عَذَابًا ﴿٪۳۰﴾
সুতরাং তোমরা আস্বাদন কর, এখন তো আমি শুধু তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করতে থাকব।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩১
اِنَّ لِلۡمُتَّقِیۡنَ مَفَازًا ﴿ۙ۳۱﴾
নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য আছে সাফল্য,
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩২
حَدَآئِقَ وَ اَعۡنَابًا ﴿ۙ۳۲﴾
উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৩
وَّکَوَاعِبَ اَتۡرَابًا ﴿ۙ۳۳﴾
নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীবৃন্দ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৪
وَّ کَاۡسًا دِہَاقًا ﴿ؕ۳۴﴾
এবং উচ্ছসিত পানপাত্র।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৫
لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡہَا لَغۡوًا وَّ لَا کِذّٰبًا ﴿ۚ۳۵﴾
সেখানে তারা শুনবে না কোন বাজে ও মিথ্যা কথা।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৬
جَزَآءً مِّنۡ رَّبِّکَ عَطَآءً حِسَابًا ﴿ۙ۳۶﴾
প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে,
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৭
رَّبِّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَہُمَا الرَّحۡمٰنِ لَا یَمۡلِکُوۡنَ مِنۡہُ خِطَابًا ﴿ۚ۳۷﴾
যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর রব, দয়াময়; তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদনের শক্তি তাদের থাকবে না ।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৮
یَوۡمَ یَقُوۡمُ الرُّوۡحُ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ صَفًّا ؕ٭ۙ لَّا یَتَکَلَّمُوۡنَ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَہُ الرَّحۡمٰنُ وَ قَالَ صَوَابًا ﴿۳۸﴾
যেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যে ঠিক কথা বলবে, সে ছাড়া আর কেউ কথা বলবে না।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৩৯
ذٰلِکَ الۡیَوۡمُ الۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰی رَبِّہٖ مَاٰبًا ﴿۳۹﴾
এ দিনটি সত্য; অতএব যার ইচ্ছে সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্ৰহণ করুক।
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা:-৪০
اِنَّاۤ اَنۡذَرۡنٰکُمۡ عَذَابًا قَرِیۡبًا ۬ۚۖ یَّوۡمَ یَنۡظُرُ الۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰہُ وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا ﴿٪۴۰﴾
যে আযাবটি কাছে এসে গেছে সে সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিলাম। যেদিন মানুষ সেসব কিছুই দেখবে যা তার দু’টি হাত আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯১/ঘুম থেকে নামাজ উত্তম:-২/এবং কাফের-রা বলে:-৩৫)
[**মহা‌ খবর:-
*তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,:-
*এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।:-]

www.motaher21.net
সুরা: ৭৮: আন্-নাবা
পারা:২৯
১-৪০.নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
তফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-

সুরা: আন-নাবা

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:৭৮

তাফসীর :

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : আলোচ্য সূরাটি এই পারার মধ্য বর্ণিত বিষয়গুলোর এক চমৎকার উদাহরণ ৷ এ পারাতে উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয়, উদাহরণ, প্রাকৃতিক বর্ণনা, ঘটনাপঞ্জী, বিভিন্ন জিনিসের প্রতিচ্ছবি, বিশ্ব প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে বিরাজমান বিষয়সমূহ ৷ প্রাণীজগত ও জড়জগতের সুরঝংকার, দুনিয়া ও আখেরাতের বর্ণনা, অনুভুতি ও বিবেককে আক্রমণকারী শব্দ ও বাচনভংগি ও এখানে রয়েছে। জগত ও জীবন সম্পর্কে বর্ণিত এসব কথা এ সূরাতে মূর্ত হয়ে উঠেছে। সূরাটি শুরু করা হয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী প্রশ্ন আকারে ৷ ওই সময়ে ওরা (কোরায়শরা) যে বিষয়ে মতভেদ করছিলো তার গুরুত্ব এতে অত্যধিক বেড়ে গেলো । অর্থাৎ প্রশ্নের বিষয়টি পাঠকের কাছে নিসন্দেহে এমনভাবে মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হলো যে, সে বিষয়ে সন্দেহ করার আর কোনো সুযোগই রইলো না। তবু কি তারা মতভেদ করছে? এ প্রসংগে তাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে বলা হচ্ছে- যেদিন ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে সবকিছু ৷ কোন্ বিষয়ে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে?’ সেই মহা খবর সম্পর্কে কি, যে বিষয়ে তারা মতভেদে লিপ্ত? না- যা তারা ভাবছে তা কিছুতেই হবার নয়। শীঘ্রই তারা জানতে পারবে । অবশ্যই তারা জানবে। তারপর প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে এই মহাসংবাদ সম্পর্কিত আলোচনা কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত রেখে বলা হয়েছে, আমাদের সামনে ও আশেপাশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, আমাদের অন্তরে যা আমরা অনুভব করছি এবং বিশ্ব-প্রকৃতির মধ্যে বিরাজমান অবস্থা সেই ভয়াবহ পরিণতির ইঙ্গিত দিচ্ছে যা পরবর্তীকালে আসবে- আমি কি পৃথিবীকে বিছানা, পাহাড়গুলোকে পেরেক (-এর মতো করে পয়দা করিনি)? তোমাদের কি জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করিনি? বানাইনি কি তোমাদের নিদ্রাকে আরামের বস্তু, রাতকে (আচ্ছাদনকারী) পোশাক এবং দিনকে জীবিকা আহরণের সময়? এরপর (তোমাদের মাথার ওপর) সাতটি মযবুত আসমান কি বানাইনি ? তারপর কম্পমান আলোকমালা দ্বারা এগুলোকে কি সজ্জিত করিনি? এরপর খাদ্যশস্য, শাকসবজি এবং ঘন সন্নিবেশিত বাগবাগিচা তৈরী করার জন্য মেঘমালা থেকে পানি কি বর্ষণ করিনি? বাস্তব জীবনের এসকল উদাহরণ দ্বারা সুরাটির মধ্যে সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, যে সম্পর্কে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিলো । যখন তারা সেদিনকে প্রত্যক্ষভাবে জানবে, তখন সেদিনটি তাদের ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে । এ কথার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা যেন বলতে চান, কি সে জিনিস এবং কোন সে জিনিস (তোমরা তো বলতে পারো)? অবশ্যই ফয়সালার দিনটি নির্দিষ্ট রয়েছে, সেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং তোমরা দলে দলে এগিয়ে আসবে ৷ সে সময় আকাশকে খুলে দেয়া হবে, আর তা বহু দরজায় পরিণত হয়ে যাবে, পাহাড়গুলোকে সঞ্চালিত করা হবে, যা ধুলাবালির স্তূপে পরিণত হয়ে যাবে। এরপর ভয়ংকর কঠিন আযাবের দৃশ্যের কথা পেশ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওৎ পেতে আছে বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ৷ যেখানে তারা যুগ যুগ ধরে পড়ে থাকবে । ঠান্ডা অথবা পানীয় বস্তুর স্বাদ তারা সেখানে পাবে না। শুধু গরম পানি ও যখমের ধোয়ানী (বা পুঁজ, রক্ত) ছাড়া ৷ এটাই হবে তাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান । বলা হবে, (এগুলোর স্বাদ) ভোগ করো আমি (আজ) শাস্তি ছাড়া অন্য কিছুই বাড়াবো না। অনুরূপভাবে তার নেয়ামতের বিবরণও দেয়া হয়েছে, ছন্দের তালে তালে যার আলোচনা এগিয়ে আসছে। বলা হচ্ছে, অবশ্যই মোত্তাকী পরহেযগারদের জন্যে চূড়ান্ত সাফল্য আসবে, হাজির হবে সোহাগিনী সমবয়সী তরুণীরা কানায় কানায় ভরা পানপাত্র নিয়ে । যার মধ্যে থাকবে না কোনো বাজে বকাবকি। তোমার রবের পক্ষ থেকে দেয়া হবে এ প্রতিদান । সূরাটির সমাপ্তি টানতে গিয়ে ওই মহাদিবসের চমৎকার এবং গৌরবজনক এক দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই দিবসটি আগম্নের পূর্বেই তার দৃশ্যের অবতারণার মধ্যে ফুটে উঠেছে সতর্কীকরণ ও সুসংবাদ দানের এক চমৎকার উপস্থাপনা । মালিক তিনি আকাশন্ডলী ও পৃথিবীর ৷ এ দুইয়ের মধ্যে আর যা কিছু আছে সে সবকিছুর প্রতিপালক । তিনি রহমান, দয়াময় প্রভু । আর সেদিন কেউ তাঁকে সম্বোধন করে কিছু বলার ক্ষমতা রাখবে না। সেদিন রূহ ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকবে। দয়াময় আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সেদিন কোনো কথা বলবে না, আর (অনুমতি পেলে) যা বলবে তা সত্যই হবে। ওই সঠিক দিনটি নিশ্চিতভাবে আসবে। এখন যে তার পরোয়ারদেগারের কাছে আশ্রয় পেতে চায় সে আশ্রয় নিক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন এক আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করছি। সে দিন এবং এই দিনকে অস্বীকারকারী প্রতিটি কাফের ব্যক্তি বলতে থাকবে হায়, আফসোস। (মানুষ না হয়ে) যদি আমি আজ মাটি হয়ে যেতাম!

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-১

عَمَّ یَتَسَآءَلُوْنَۚ

এরা কি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?

ফী জিলালিল কুরআন:

এটিই হচ্ছে সেই মহা খবর, যে বিষয়ে তারা পরস্পর মতভেদ করেছিলো, আর তা শীঘ্রই সংঘটিত হবে৷ সেদিন তারা অবশ্যই সে মহাখবর সম্পর্কে জানতে পারবে । সূরাটির সূত্রপাত হয়েছে এমনভাবে যে, জিজ্ঞাসার বিষয়বস্তু ও জিজ্ঞাসাকারী উভয়কেই এতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ কেয়ামতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে এ বিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে, আর ওরা এই কাজটিই করছিলো । একে অপরকে পুনরুথান ও কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটিই জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো ৷ এটা ছিলো এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে তারা ভীষণ তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেলো । আসলে ওরা সেই ভয়ানক দিনের আগমন সম্পর্কে আদৌ কল্পনা করতে পারছিলো না, যদিও কেয়ামতের আগমন ছিলো সম্পূর্ণ বুদ্ধিসঙ্গত ৷ কোন্‌ জিনিস সম্পর্কে তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করছে এবং কোন্‌ বিষয়ে তারা কথা বলছে? এর পরেই এ সূরার মধ্যে এবং জবাব আসছে, এতে বুঝা গেলো, তাদের থেকে জবাব পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হয়েছিলো এমন নয়, বরং এ প্রশ্ন ছিলো তাদের অবস্থার ওপর বিস্ময় প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের বৈচিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে, যাতে করে ওদের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে বাস্তব সত্যটি প্রকাশ পেয়ে যায়। ‘কোন বিষয়ে তারা পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত?’ যে বিষয়ে তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করছিলো, সে বিষয়টিকে কোনো নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়নি, বরং ‘সেই মহাখবর’ সম্পর্কে বলে ওসব ব্যক্তি ও তাদের কাজ সম্পর্কে এক বিস্ময়ের অনুভূতি জাগ্রত করা হয়েছে।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৪

كَلَّا سَیَعْلَمُوْنَۙ

কখখনো না, শীঘ্রই এরা জানতে পারবে।

ফী জিলালিল কুরআন:

কেয়ামতের এই মহা দিবস সংঘটিত হবে কি না সে বিষয়ে ঈমানদার ও বে-ঈমানদের মধ্যে মতভেদ চলছিলো । কিন্তু প্রশ্নটি আসছিলো শুধুমাত্র শেষোক্ত কাফের দলের পক্ষ থেকে । তারপর তারা পরম্পরকে যে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছিলো তার কোনো বিস্তারিত জবাব দেয়া হয়নি এবং যে বিষয়ের ওপর প্রশ্ন আসছিলো, সে বিষয় সম্পর্কেও কোনো কথা বলা হয়নি। বিতর্কিত বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি কোনো ধমক না দিয়ে, শুধুমাত্র ‘মহা খবর’ বা ‘বিরাট জিনিস’- বলেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এটা অবশ্য সরাসরি জবাব দেয়া থেকে বেশী ক্রিয়াশীল এবং ভীতি প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে বেশী উপযোগী ৷ সরাসরি তিরস্কার করা থেকে কেয়ামতের ভয়াবহতার অনুভূতি জাগ্রত করার ব্যাপারে এটা অধিক কার্যকর পন্থা। যা ভাবছে ওরা (কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে) কিছুতেই তা হবার নয়। শীঘ্রই ওরা জেনে যাবে, আবারও বলছি, কিছুতেই নয়, শীঘ্রই ওরা জানতে পারবে। ‘কাল্লা’ (কিছুতেই নয়) এ শব্দটি কোনো কিছুকে প্রতিহত করার জন্যে অথবা কাউকে ধমক দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে ‘কাল্লা’ শব্দটির প্রয়োগ, বারবার উল্লেখ এবং বাক্যটির বারবার পুনরাবৃত্তি উল্লেখিত বিষয়ের ভয়াবহতাকে তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে৷

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৬

اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهٰدًاۙ

একথা কি সত্য নয়, আমি যমীনকে বিছানা বানিয়েছি?

ফী জিলালিল কুরআন:

সৃষ্টির আদিগন্ত : এরপর এই যে ‘মহাখবর’-এর আলোচ্য বিষয়টি, যে বিষয়ে তারা মতভেদে লিপ্ত, সে বিতর্কিত বিষয়টিকে স্পষ্টতই (সাময়িকভাবে) এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যদিও তা এ সূরার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়, উদ্দেশ্য যেন পরে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যায়। সূরাটি আমাদেরকে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নিয়ে যায় বিশ্বের চতুর্দিকে, যেখানে আমাদের বহু জীবন্ত জিনিস, অসংখ্য রহস্যরাজি দৃষ্টিগোচর হয় যা যে কোনো চিন্তাশীল ব্যক্তির হৃদয়কে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। দেখুন- ‘আমি বানাইনি কি এই পৃথিবীকে বিছানা (স্বরূপ), পাহাড়গুলোকে পেরেক (স্বরপ), আর তোমাদের কি জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করিনি? আর বানাইনি কি তোমাদের ঘুমকে আরামের বস্ত, রাতকে কি পোশাক-এর মতো করে বানাইনি, আর দিবসকে কি জীবনসামগ্রী যোগাড় করার জন্যে উপযুক্ত সময় (হিসেবে) বানাইনি? বানাইনি কি তোমাদের ওপর সাতটি শক্ত আসমান এবং তাকে সুসজ্জিত করিনি কি কম্পমান উজ্জ্বল আলোকমালা দ্বারা? তারপর বর্ষণ করাইনি কি মেঘমালা থেকে প্রচুর (বৃষ্টির) পানি, যাতে করে আমি উৎপন্ন করতে পারি খাদ্যশস্য, শাকসবজি এবং ঘন সন্নিবেশিত ছায়াভরা বাগবাগিচা?’ সূরাটির এই পর্যায়ে এসে আমরা যখন বিশাল এই বিশ্বের আদিগন্ত দিক চক্রবালের দিকে তাকাই, তখন সেখানে আমরা বহু দৃশ্য ও রহস্যরাজির সন্ধান পাই, যা প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ ও ভাষা আমাদের জানা নেই । যার সৌন্দর্য ও সুরের মূর্ছনা হৃদয় দুয়ারে আঘাত হেনে বার বার তাকে বিদ্ধ করতে থাকে । এ আঘাত চলতে থাকে উপর্যুপরি এবং অবিরামভাবে ৷ উদ্দেশ্যমূলকভাবেই বিষয়টিকে প্রশ্ন আকারে পেশ করা হয়েছে। যারা জানে না তাদেরকে যেন এক শক্ত হাত দ্বারা ঝাঁকিয়ে সজাগ করে তোলা হয়েছে৷ তাদের চোখ ও মনোযোগকে আকৃষ্ট করা হয়েছে সমগ্র সৃষ্টি ও তার রহস্যরাজির দিকে, যার সৃষ্টির মূলে এক সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা রয়েছে বলে মযবুত প্রমাণ পাওয়া যায়। অধিকন্তু এ কথাও বুঝা যায়, যিনি কোনো অস্তিত্ব বর্তমান না থাকা থেকে অস্তিত্বকে বর্তমানে এনেছেন, তিনি এগুলোকে পুনরায় অবশ্যই জীবন দান করতে পারেন৷ এগুলোকে উদ্দেশ্যহীন পয়দা করা হয়েছে, অথবা কারো কাছ থেকে হিসেব নেয়া হবে না বা যারা সৎ কর্ম করে তাদেরকে কোনো পুরস্কার দেয়া হবে না- এটা যুক্তিসঙ্গত নয়। অতএব সেই মহা ভয়াবহ দিন আসবেই, সেই দিনটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ খবর দেয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে যে, এ বিষয়েই তারা মতভেদ করছে। বিশ্বরহস্য ভ্রমণ করতে গিয়ে প্রথমেই আমরা পৃথিবী ও পাহাড়-পর্বতগুলোর দিকে তাকাই ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি পৃথিবীকে কি বিছানা (করে) বানাইনি এবং বানাইনি কি পাহাড়গুলোকে পেরেক (স্বরূপ)? ‘মিহাদ’ (বিছানা) বলতে ভ্রমণ ও চলাফেরার জন্যে সমভূমি, আবার দোলনার মতো নরম বিছানা- এ দুটি অর্থই বুঝায় এবং এখানে এ দুটি অর্থের মধ্যে চমৎকার মিল রয়েছে। এ এমন একটি সত্য, যা সাধারণভাবে যে কোনো মানুষ বুঝতে পারে। এদিকে একটু মনোযোগ দিলে একজন সেকেলে এবং সাধারণ বুদ্ধির মানুষের পক্ষেও এ কথাগুলো বুঝা কঠিন নয়! এগুলো্যবুঝার জন্য কোনো সুক্ষদৃষ্টি ও গভীর জ্ঞানেরও প্রয়োজন হয় না।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৭

وَّ الْجِبَالَ اَوْتَادًا۪ۙ

পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো?

ফী জিলালিল কুরআন:

পাহাড়সমূহকে পেরেকের মতো গেড়ে দেয়া হয়েছে যাতে পাহাড় নড়েচড়ে না বেড়ায় । এ কথাটিও সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে, অবশ্য যদি তারা একটু খেয়াল করে বুঝার চেষ্টা করে। যতোই জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার ঘটছে এবং মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্য ও বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে উন্নততর প্রজ্ঞার অধিকারী হচ্ছে ততোই এই উভয় জিনিস সম্পর্কে তার বুঝ শক্তি বেড়ে যাচ্ছে। অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে, সৃষ্টি রহস্যের নতুন নতুন জট তার কাছে খুলে যাচ্ছে এবং বিশ্ব সম্পর্কে আল্লাহর বিস্তারিত পরিকল্পনা সে জানতে ও বুঝতে পারছে। সে জানতে পারছে বিভিন্ন জিনিসের পৃথক পৃথক সৃষ্টি কৌশল এবং সেগুলোর প্রয়োজন ও প্রয়োগ সম্পর্কে ৷ মানুষের বসবাস উপযোগী পৃথিবীর সৃষ্টি প্রকরণ পদ্ধতি এবং প্রতিটি পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো মানুষের যোগ্যতা সম্পর্কেও সে জানতে পারছে। আর পৃথিবীকে যে মানুষের জন্যে বিশেষভাবে আরামদায়ক বিছানা বানানো হয়েছে এটা তার সৃষ্টি নৈপুণ্যের এক অনস্বীকার্য দৃষ্টান্ত ৷ পৃথিবীতে প্রাপ্ত কোনো অবস্থার কারণ কোনো সম্পর্ককে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে অথবা জীবনের জন্যে কোনো প্রয়োজনীয় অবস্থা তার প্রকৃতির কারণেও নষ্ট হতে পারে। এমতাবস্থায় পৃথিবী আর মানুষের বসবাস বা পদচারণার জন্যে আরামদায়ক ঘর হিসেবে কাজ নাও করতে পারে। তিনি পাহাড়গুলোকে পেরেক (স্বরূপ) বানিয়েছেন সাধারণ দৃষ্টিশক্তি দ্বারা যে কেউ বুঝতে পারে যে, পাহাড়-পর্বতগুলো অবিকল কোনো তাঁবুর খুঁটির মতো ৷ এর সত্যতা আমরা কোরআন থেকেই জানতে পারি যে, এ পবর্ত গুলো পৃথিবীকে দৃঢ়ভাবে স্থির করে রেখেছে এবং পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রেখেছে। এই পর্বতমালা সমুদ্রের গভীর গর্তে প্রোথিত এবং স্থলভাগের উপরে সংস্থাপিত। এটাও বাস্তবে সংঘটিত হচ্ছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের ও উপরিভাগের সংকোচনকে এই পর্বতগুলোর ভারত্ব বিভিন্ন অঞ্চলকে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ও অভ্যন্তরীন প্রকম্পন থেকে রক্ষা করে । আরও অনেক ব্যাখ্যা হয়তো ভবিষ্যতে আসবে যা এখন ও মানুষের জ্ঞানসীমার বাইরে আছে কোরআনে কারীম তো এ দিকে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে মাত্র । এরপর শত শত বছর ধরে মানুষ জ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে সেসব জানতে পারবে ।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৮

وَّ خَلَقْنٰكُمْ اَزْوَاجًاۙ

তোমাদের (নারী ও পুরুষ) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি?

ফী জিলালিল কুরআন:

জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি : দ্বিতীয় পর্যায়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা এসেছে মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কে । বলা হয়েছে, ‘তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করেছি।’ এটা অত্যন্ত স্পষ্ট কথা এবং নানা পর্যালোচনার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। সকল মানুষই এটা সহজে বুঝতে পারে । মানুষকে আল্লাহ তায়ালা পুরুষ ও নারী হিসেবে পয়দা করেছেন। পুরুষ ও নারীর মিলনে পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি ও তার বিস্তার এগিয়ে চলেছে। এরা প্রত্যেকেই সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এই মিলনের ফলে পারিব জীবনের যে আনন্দ, স্বাদ ও বৈচিত্র্য তারা পায় সে কথা সহজেই বুঝা যায়, এজন্য কোনো গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন নেই । কোরআন মজীদে উপস্থাপিত এ কথাটি প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক সমাজই মূল্যায়ন করেছে এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এ ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, ব্যবস্থাপনা ও চেষ্টা যে কার্যকর ভূমিকা পালন করে তাও মানুষ সহজেই অনুভব করতে পারে। মানুষের অগ্রগতি ও জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে এ অস্পষ্ট চেতনা সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান গবেষণা ও চিন্তা ভাবনা চলছে। এ বিচিত্র সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় একই শুক্র-বিন্দুর কোনোটাতে পুরুষ শিশু এবং কোনোটাতে কন্যা শিশু কিভাবে জন্ম নিচ্ছে. তা বুঝার কোনো উপায় নেই৷ এ বিষয়ে যতোই জ্ঞান গবেষণা করা হয়েছে, ততোই মানুষ বুঝেছে যে, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও ক্ষমতা ছাড়া এখানে অন্য কারো ইচ্ছাই কার্যকর নেই৷ তিনি এসব কিছু তার ক্ষমতাবলে অতি সুূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ব্যবস্থাপনা ও ইচ্ছাতেই পুরুষ সন্তান ও কন্যা সন্তানের জন্ম, বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটে ।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৯

وَّ جَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًاۙ

তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন,

টিকা:৭) মানুষকে দুনিয়ায় কাজ করার যোগ্য করার জন্য মহান আল্লাহ‌ অত্যন্ত কর্মকুশলতা সহকারে তার প্রকৃতিতে ঘুমের এক অভিলাষ বা চাহিদা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। প্রতি কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রম করার পর এই চাহিদা আবার তাকে কয়েক ঘণ্টা ঘুমাতে বাধ্য করে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানার জন্য পড়ুন তাফহীমুল কুরআনের সূরা আর রুম ৩৩ টীকা।

ফী জিলালিল কুরআন:

অসাধারণ একটি নেয়ামত : ‘তোমাদের নিদ্রাকে আরামের বস্তু বানিয়েছি, রাতকে বানিয়েছি পোশাক (স্বরূপ) আর দিনকেবানিয়েছি জীবিকা আহরণের সময় ।” একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর মানুষ আল্লাহর ব্যবস্থাপনার অধীনে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ অক্ষম ও অচেতন হয়ে যায়। এ এমন একটি অবস্থা যে একে মৃতাবস্থাও বলা যায় না, জীবিতাবস্থাও বলা যায় না। অথচ এই নিদ্রাই তার ক্লান্তি দূর করে ও পরবর্তী সময় জীবনপথে আরও কঠিন পরিশ্রম করার জন্যে নতুন করে তাকে শক্তি ও অবসাদ যোগায় ৷ এসব কিছু এমন এক আশ্চর্য পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে যে, মানুষ এর রহস্য উদঘাটন করতে অক্ষম । এখানে অন্য কারো মর্জির দখল নেই । প্রকৃতির এ নিয়ম কিভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা মানব বুদ্ধির অগম্য ৷ নিদ্রা শেষে মানুষ যখন জেগে ওঠে, তখন সে কিছুই বলতে পারে না নিদ্রাবস্থায় সে কোথায় কি অবস্থায় ছিলো। ঘুম যখন তাকে কাবু করে ফেলে তখন সে নিজের অবস্থা দেখতেও পারে না, বুঝতেও পারে না। মানুষ ও অন্যান্য সকল সৃষ্টির সৃষ্টি বৈচিত্রসমূহের মধ্যে এ এক অত্যাশ্চর্য রহস্য, যা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তিনি এর গোপনীয়তাকে অক্ষুন্ন রেখেছেন, কোনোভাবেই প্রকাশ হতে দেননি এবং এর ওপর তার জীবনকে নির্ভরশীল করে দিয়েছেন । কোনো প্রাণী একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশী না ঘুমিয়ে জেগে থাকতে পারে না। সেই সীমার বাইরে তাকে জেগে থাকতে বাধ্য করলে সে অবশ্যই মারা যাবে। ঘুম মানুষের শুধু শারীরিক ও মানসিক চাহিদাকেই পূরণ করে না, বরং তার কঠিন সংগ্ৰামপূর্ণ জীবনে সস্বিগ্ধ প্রশান্তিও বয়ে আনে। এ এমন একটি আরামপ্রদ বস্তু যা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তাকে তার অস্ত্রশস্ত্র বা ঢাল তলোয়ার ফেলে দিতে বাধ্য করে এবং কিছু সময়ের জন্য সে পূর্ণ প্রশান্তির কোলে ঢলে পড়ে । এ এমন শান্তি, যা খাদ্য পানীয় থেকে কোনো অংশে কম নয়। যখন মানুষ কোনো বিষয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে, তখন মানসিক ক্লান্তি বোধ করে, ভীত সন্ত্রস্ত হয় বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন কিছু সময়ের জন্যে হলেও নিদ্রা এসে তার সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়ে যায় এবং তার সবকিছুর মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। নিদ্রা শুধুমাত্র তার শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে না বরং ঘুম থেকে যখন সে জেগে ওঠে, তখন সে অনুভব করে যেন সে একজন পুরোপুরি পরিবর্তিত মানুষ। এটা অলৌকিক ব্যাপার মনে হলেও এটাই সত্য । এ অলৌকিক ব্যাপারই সংঘটিত হয়েছিলো বদর ও ওহুদ যুদ্ধের সময় যখন আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামকে ঘুম দান করে তাদের অস্থিরতাকে দূর করে দিয়েছিলেন ৷ এরশাদ হচ্ছে, ‘যখন তন্দ্রা এসে তোমাদেরকে ঢেকে ফেললো এবং শান্তির কোলো শুইয়ে দিলো ।’ আবার এরশাদ হয়েছে, ‘তারপর তিনি দারুণ দুঃখের পরে পরম শান্তিদায়ক তন্দ্রা দান করলেন, যা তোমাদের একদলকে ঢেকে ফেললো।’ এই ধরণের সংকটাপন্ন অবস্থায় আল্লাহ্‌ পাক এমনি করে যে শান্তি দান করেন আমাদের অনেকের জীবনেই তার কিছু কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে! এই কর্মবিরতি, অর্থাৎ ঘুমের মাধ্যমে মাঝে মাঝে চেতনা ও কর্মতৎপরতার অবসান প্রত্যেক জীবের একটি অপরিহার্য প্রয়োজন ৷ এ নেয়ামত মহান স্রষ্টার ক্ষমতা ভান্ডারের এক অতি গোপন রহস্য এবং আল্লাহ পাকের অসংখ্য নেয়ামতের মধ্য থেকে এমন এক নেয়ামত যা তিনি ছাড়া আর কেউ দিতে পারেন না। কোরআনে এ বিষয়ের উল্লেখ করে আল্লাহ্‌ তায়ালা চেয়েছেন যে, মানুষ তার সৃষ্টি বৈচিত্রের কথা চিন্তা করুক এবং ভেবে দেখুক কোন মহা শক্তিমান হাত তার প্রকৃতিতে এমন চমৎকার জিনিস দান করেছেন এ থেকে আল্লাহ্‌ তায়ালার কুদরত ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সে অবহিত হোক । এমনি করে আল্লাহ তায়ালার ব্যবস্থাপনার আর একটি দিক হচ্ছে প্রকৃতির জড় পদার্থসমূহকে তিনি জীবজগতের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল করেছেন। যেমন তিনি মানুষকে নিদ্রা ও বিশ্রাম-রূপ বিস্ময়কর জিনিস দান করেছেন, যেমনি করে বিশ্ব সৃষ্টির অন্যান্য জিনিসকে তিনি দিয়েছেন রহস্যপূর্ণ বহু বৈশিষ্ট, যেমন পোশাকের মতো রাত এসে মানুষকে ঢেকে ফেলে এবং তাকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দান করে। এরপর দিনের আগমন মানুষকে জীবিকা আহরণের সুযোগ করে দেয়। এভাবে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং এ বিশ্ব-জগতটি সৃষ্টির বাসোপযোগী থাকে। মানুষসহ অন্যান্য জীবজস্তুর জন্যে মহা শক্তিধর আল্লাহ্‌ তায়ালার পক্ষ থেকে কি চমৎকার এ মহা পরিকল্পনা ।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-১২

وَّ بَنَیْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًاۙ

তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আকাশ স্থাপন করেছি।

ফী জিলালিল কুরআন:

সৃষ্টির এক মহাবিস্ময় : তৃতীয় হৃদয়স্পর্শী বিষয় হচ্ছে আকাশ সৃষ্টি, যা জীবজসু সম্বলিত এই পৃথিবীর সাথে গভীর সামঞ্জস্যশীল। “তোমাদের ওপর সাতটি মযবুত আকাশ বানিয়েছি এবং বানিয়েছি কম্পমান একটি উজ্জ্বল বাতি । বর্ষণ করেছি পানিভরা মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিধারা, যাতে আমি তার দ্বারা ফসল, রবি শস্য, তরুলতা ও ঘন সন্নিবেশিত ফলের বৃক্ষাদি উৎপন্ন করতে পারি । ‘দুনিয়াবাসীর উপরে বানিয়েছি সাতটি মযবুত জিনিস’ বলতে আল্লাহ তায়ালা থরে থরে সজ্জিত সাতটি আকাশকে বুঝিয়েছেন । অন্য স্থানে সাতটি কক্ষপথ বলা হয়েছে। এ সকল সৃষ্টির প্রকৃতি ও এর পেছনে কোন মহান উদ্দেশ্য বর্তমান তা একমাত্র রাব্বুল আলামীনই জানেন। তারকামালা- যার মধ্যে দশ কোটিরও বেশী তারকা বর্তমান রয়েছে। আমাদের সৌরজগত বা গ্রহের ওপর এর যথেষ্ট প্রভাব বর্তমান রয়েছে। অবশ্য এই বাক্যাংশটি দ্বারা আরও অনেক কিছু হয়তো বুঝানো হয়েছে যা আমাদের বুদ্ধির অগম্য । কেউ সামান্য কিছু বুঝলেও বুঝতে পারে। উল্লেখিত আয়াতটি নিশ্চিতভাবে এই ইংগিত বহন করছে, এই সাতটি শক্ত জিনিসের গঠন প্রকৃতি অত্যন্ত মযবুত, তাদের কাঠামো খুবই শক্ত এবং একটি অপরটির সাথে এমনভাবে আবদ্ধ যে, কোনোটিকে কোনোটি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। উর্ধাকাশ বলতে আমরা কী বুঝি? নিশিদিন যা দেখছি ও জানছি তা হচ্ছে, আমাদের মাথার ওপর বহু যোজন দূরে যখন তাকাই, দৃষ্টিসীমা যেখানে ফুরিয়ে যায় সেখানে যে নীল ছাদের মত দেখি, তাকেই আমরা বলি আকাশ । এমনি করে সাতটি শক্ত জিনিস (স্তর) পৃথিবী ও মানব জগতের সাথে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যশীল, আর এভাবেই পৃথিবী ও মানব জীবনের জন্যে আল্লাহর সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনাকে উপযোগী করা হয়েছে- পরবর্তী আলোচনা এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-১৪

وَّ اَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرٰتِ مَآءً ثَجَّاجًاۙ

আর মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেছি অবিরাম বৃষ্টিধারা,

ফী জিলালিল কুরআন:

‘আর আমি পানি ভরা মেঘ থেকে প্রচুর পানিবর্ষণ করি।’ মেঘ ঘনীভূত হয়ে ভারী হয়ে যায় এবং পানি আকারে বৃষ্টি আনে । কে সেই মহান সন্ত্বা যিনি মেঘকে ঘনীভূত করে পানির নির্বারিণী ঝর্ণা ঝরান? তিনি সবার প্রতিপালক মহান আল্লাহ তায়ালা ৷ মেঘ সঞ্চিত হওয়ার পর বায়ুর প্রবাহ ঘটান ৷ মহাশূন্যে মেঘের ঘর্ষণে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। তারপর সেই মহা কুদরতের অদৃশ্য হাত এই প্রকৃতির মধ্যে সেসব গতি দান করেন, ফলে এ বাতি জ্বলে এবং তা তাপ ও আলো দিতে থাকে । সূর্যের মধ্যেই এই পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও তাপ সৃষ্টি হয়, এই জন্যেই এর আওতাভুক্ত আমাদের এই সৃষ্টিজগতকে সৌরজগত বলে, আর এই কারণেই সূর্যকে বাতি বলা হয়েছে। আবার এই কম্পমান বাতি ও তার মধ্য থেকে উদগত রশ্মি ও তাপ বের হয়ে আসে। মেঘমালা গঠিত হয় ও তার থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি নির্গত হয় । পরতে পরতে মেঘের ওপর মেঘ সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবারই বর্ষণের সময় মেঘে মেঘে ঘর্ষণের কারণে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। একেই ‘প্রকম্পমান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই সূর্যরশ্মি ও পানি থেকে খাদ্যশস্য, শাকসবজি উৎপন্ন হয় যা প্রানীকুল খেয়ে থাকে । আরও উৎপন্ন হয় শাখা-প্রশাখায় ভরা ঘন ফলমূলের বৃক্ষরাজি। প্রকৃতির সব কিছুর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যেই এই সকল ব্যবস্থাপনা । মহা বিজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা ছাড়া সবকিছুর মধ্যে এই পারস্পরিক যোগাযোগ ও একে অপরের এই সহযোগিতা সম্ভব নয়। হৃদয়, মন ও অনুভূতি দিয়ে যখন কেউ এগুলো বুঝার চেষ্টা করে, তখন এসব রহস্যের দ্বার তার সামনে উদঘাটিত হয়ে যায় এবং পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি রহস্যের সূক্ষ তথ্য ও জ্ঞান তাকে অভিভূত করে ফেলে । তার বুদ্ধি আর কাজ করতে চায় না, সে হতবুদ্ধি হয়ে যায় এবং এমনভাবে তার চিন্তা চেতনা রুদ্ধ হয়ে যেতে চায় যে, এ বিষয়ে কোনো রকম আলোচনার ক্ষমতাই সে হারিয়ে ফেলে । এর ফলে এই অসীম সৃষ্টি রহস্য ও এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আরও বেশী জ্ঞান গবেষণা করার মতো মন ও আগ্রহ তার বিলুপ্ত হয়ে যায়। সে তখন আত্মহারা হয়ে বলে ওঠে, অবশ্যই এ বিশ্বপ্রকৃতির একজন স্রষ্টা আছেন, রয়েছে এর পেছনে এক সুনিয়ন্ত্রিত চিন্তা-ভাবনা, ব্যবস্থাপনা এবং পূর্বনির্ধারিত ইচ্ছা। কোরআনে পাক এই সকল সত্য ও রহস্যের দ্বার উন্মোচন করেছে। বলেছে, তিনি সেই মহান সত্ত্বা, যিনি পৃথিবীকে বিছানা বানিয়েছেন এবং বানিয়েছেন পাহাড়-পর্বতগুলোকে খুঁটি । আর তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় । তাদের ঘুমকে বানিয়েছেন আরামের বস্তু। এর সাথে রাতকে পোশাক আকারে বানিয়ে তার গোপনীয়তাকে রক্ষা করেছেন দিনকে বানিয়েছেন জীবিকা উপার্জনের সময় হিসেবে, যাতে করে সে জীবনের প্রয়োজন যথাযথভাবে মেটাতে পারে। এর পর তার ওপর রয়েছে সাতটি শক্ত আসমান ও কম্পমান উজ্জ্বল বাতি, বর্ষিত হচ্ছে মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত, যাতে করে সে উৎপন্ন করতে পারে খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও ফলমূলের বাগবাগিচা । একের পর অন্যটির পর্যায়ক্রমিক সৃষ্টি এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, সৃষ্টি মল্লিকার প্রতিটি ফুল একটি অপরটির সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল ৷ এই সৃষ্টি নৈপুণ্য মানুষের অন্তরে সেই মহান সত্ত্বার মহাজ্ঞানী হওয়ার অনুভূতি জাগায়, যিনি এসব কিছুর পরিকল্পনা তৈরী করেছেন, জীবনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক চেতনা জাগিয়ে প্রতিটি অন্তরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এই কারণেই পুনরায় সেই মহা খবরের স্মরণ করাতে হয় যে বিষয়ে তারা মতভেদ করে চলেছে।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-১৭

اِنَّ یَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِیْقَاتًاۙ

নিঃসন্দেহে বিচারের দিনটি নির্ধারিত হয়েই আছে।

ফী জিলালিল কুরআন:

  কেয়ামত অবধারিত : এসব কিছুর উল্লেখ এ জন্যেই করা হয়েছে, যাতে মানুষ সঠিক কাজ করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সে তার বিনিময় পেতে পারে। যেহেতু জীবনাবসান শেষেই রয়েছে প্রতিটি কাজের হিসাব গ্রহণ ও প্রতিদান ৷ ফয়সালার সেই দিনটি সম্পর্কে ওয়াদা করা আছে যা নির্দিষ্ট সময়েই সংঘটিত হবে । ‘অবশ্যই ফয়সালার দিনটি সুনির্দিষ্ট রয়েছে। সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং সবাই দলে দলে সমাগত হবে, আকাশকে খুলে দেয়া হবে, আর তার সবটুকুই অসংখ্য দরজায় পরিণত হবে এবং পর্বতমালাকে সঞ্চালিত করা হবে যা মরু-মরীচিকার আকার ধারণ করবে ।’ মানবসৃষ্টি অযথা নয় এবং উদ্দেশ্যহীনভাবেও তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়নি। যিনি তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করেছেন তিনি সেই মহান সত্ত্বা যিনি মানব ও বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন এবং মানুষের জন্ম ও মৃত্যুকে অর্থহীন করেননি। পৃথিবীতে ভালো অথবা মন্দ কাজ করে মরণের পরে মাটির মধ্যে সে হারিয়ে যাবে এটাও হতে পারে না। আবার এটাও হতে পারে না যে, তারা সঠিক পথে চলুক অথবা ভুল পথে চলুক সবাইকে একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। আবার পৃথিবীতে সে ইনসাফ করুক বা যুলুম করুক সবার দশা একই হবে- সেটাও কিছুতেই সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই একটি দিন এমন আসবে যেদিন সত্য মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হবে। সেই দিনটি চিহ্নিত এবং ওয়াদাকৃত ৷ তবে সেই স্থিরীকৃত দিনটি কবে কখন আসবে তা আল্লাহর এলম (জ্ঞান)-এর মধ্যেই আছে এবং একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তা আবদ্ধ রয়েছে।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-২০

وَّ سُیِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًاؕ

আর পর্বতমালাকে চলমান করা হবে, ফলে তা মরীচিকায় পরিণত হবে।

ফী জিলালিল কুরআন:

“সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, আর তখন সবাই দলে দলে এসে হাযির হবে। আকাশকে খুলে দেয়া হবে। তা অসংখ্য দরজায় পরিণত হয়ে যাবে । আর পর্বতমালাকে এমনভাবে চালিয়ে দেয়া হবে যে তা এক গোলকধাধায় পরিণত হয়ে যাবে ।” ‘সূর’ বিউগল সম এক মহা জাগরণী বাশী ৷ আমরা এই নামটি ব্যতীত এই বাশীর ব্যাপারে আর কিছুই জানি না, শুধু এতোটুকু জানি যে, এতে ফুঁক দেয়া হবে। এ বাশীর প্রকৃতি কেমন হবে সে বিষয়ে আমাদের মাথা ঘামানোও শোভা পায় না। কেননা এটা নিয়ে কথা বলা বা চিন্তা ভাবনা করার ওপর আমাদের ঈমান নির্ভর করে না। এসব গোপন ও অজানা বিষয় নিয়ে অযথা সময় ও শক্তি ক্ষয় করা থেকে আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে বাচিয়েছেন। তবে এ বিষয়ের সঠিক মূল্যায়ন করে উপকৃত হওয়ার তাওফীক অবশ্য তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন । নিশ্চিতভাবে এ ধারণা আমরা করতে পারি যে, এ এমন শিঙ্গা যার মহাধ্ননিতে সকল মানুষ জেগে উঠবে এবং সবদিক থেকে একত্রিত হয়ে তারা দলে দলে হিসাব দেয়ার জন্যে এগিয়ে যাবে। সেই দিনে কবর থেকে উঠে আসা অগণিত মানুষের দল যারা পৃথিবীর বুকে পর্যায়ক্রমে জন্মগ্রহণ করেছিলো, সকল দিক থেকে সমবেত হবে, এইটুকু মাত্র ধারণা করা ছাড়া আর আমাদের কিছু করার নেই৷ এ মহা সমাবেশ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা আমরা জানি না। কারণ পৃথিবীর সকল মানুষ তার সীমাবদ্ধ আভ্যন্তরীণ বাসস্থান থেকে বিশাল সে মহা উদ্যানে যখন একত্রিত হবে, তখন তার শুরু ও শেষ কিছুই বুঝা যাবে না। এমন বিশাল মানব সমাগম পূর্বে কখনও হয়নি এবং এই দিন ছাড়া আর কখনও হবে না। তা কোথায় কেমনভাবে হবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরের ব্যাপার । ‘আর(তখন) আকাশকে খুলে দেয়া হবে আর তা হয়ে যাবে এক উন্মুক্ত দরজা সমষ্টি । পর্বতমালাকে চালিয়ে দেয়া হবে, যা হয়ে যাবে মরু-মরীচিকাসম এক গোলকধাধা ।’ অত্যন্ত মযবুতভাবে গঠিত এ মহাকাশ নিশ্চিতভাবে খুলে যাবে। এর প্রবেশ পথগুলো হবে এতো প্রশস্ত যেন উন্মুক্ত অসংখ্য দরজা । এইভাবে অন্যান্য আরও কয়েকটি প্রসঙ্গে এভাবে এ কথাগুলো বর্ণিত হয়েছে। তখন এগুলো বড়োই অদ্ভুত মনে হবে। আর খুঁটির মতো দৃঢ়ভাবে প্রোথিত পর্বতমালাকে সঞ্চালিত করা হবে এমনভাবে যে, সেগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মরু-মরীচিকার মতো হবে এবং ধূলাবালির মতো উড়তে থাকবে৷ সেগুলোর অস্তিত্ব এমনভাবে বিলুপ্ত হবে যে, ধুলাবালি ছাড়া আর কিছুই নযরে পড়বে না। এভাবেই অন্যান্য আরো কিছু সূরাতে এগুলোর বর্ণনা পাওয়া যায় । তখন সেগুলো মরু-মরীচিকার ধোকার মতো চোখকে ঝলসে দেবে। সব দিক থেকে এটা হবে গোটা বিশ্বে এমন এক ভয়ংকর অবস্থা যে, তা সব কিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত হয়ে যাবে । শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথেই সবকিছু এক বিশাল হাশরের ময়দান হয়ে যাবে এবং সেখানেই এ অবস্থার অবতারণা হবে। এটাই হবে মহাশক্তিমান আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের পূর্ব নির্ধারিত শেষ অবস্থা। শিংগায় ফুঁক ও মহা হাশর (মহাসমাবেশ) সংঘটিত হওয়ার পর পরবর্তী অবস্থা এগিয়ে আসবে এবং পূর্বে যারা এ দিনকে অস্বীকার করেছিলো সেই সকল বিদ্রোহী, যারা এ দিনের আগমন সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলো এবং আল্লাহকে ভয় করার কারণে যারা তাকওয়া পরহেযগারীর জীবনযাপন করেছিলো তারা পর্যায়ক্রমে এগিয়ে আসবে ।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৩০

فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَّزِیْدَكُمْ اِلَّا عَذَابًا۠

এখন মজা বুঝ, আমি তোমাদের জন্য আযাব ছাড়া কোন জিনিসে আর কিছুই বাড়াবো না।

ফী জিলালিল কুরআন:

পাপিষ্ঠদের অপেক্ষায় জাহান্নাম : “সেদিন জাহান্নাম মরণফাদের মতো বিদ্রোহীদের জন্যে ওৎ পেতে থাকবে ৷ সেখানে তারা শীতল অবস্থা বা সুপেয় পানীয় বস্তুর স্বাদ পাবে না। …….. সুতরাং বলা হবে স্বাদ গ্রহণ করো, (আজ) আমি আযাব ছাড়া আর কিছুই তোমাদের বাড়াবো না ।’ প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামকে (পূর্বেই) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এখনও তা বর্তমান আছে। মৃত্যু ফাঁদসম এ জাহান্নামকে বিদ্রোহীদের জন্যে তো ওৎ পেতে অপেক্ষা করছে এবং তাদের ওপর নিরন্তর নযর রাখছে। এই জায়গায় হবে তাদের যাত্রার পরিসমাপ্তি ও প্রত্যাবর্তনস্থল । ওই দাউ দাউ আগুনে ভরা জাহান্নাম তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তখন যেন অবস্থাটা এমন হবে যে, পৃথিবীতে তারা সফরে ছিলো, যাত্রাপথ অতিক্রম করে তারা তাদের আসল ঘরে ফিরে যাবে। তাদের সে আশ্রয়স্থলে তারা যুগ যুগান্তর ধরে বসবাস করবে । “তারা (সেখানে) কোনো ঠান্ডা (বস্তু) ও সুপেয় পানীয় বস্তুর স্বাদ পাবেনা ।’ এর ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু পানীয় পাবে তারা, আর তা হবে আরও ভয়ানক ও তিক্ত । তা হবে শুধু গরম পানীয় ও যখমের ধোয়ানী (পুঁজ-রক্ত)। তা এমন উত্তপ্ত পানীয় বস্তু যা তাদের কষ্ঠনালী ও পাকস্থলীকে ঝলসে দেবে। এটাই হবে গরম পানীয়ের পরিবর্তে সুশীতল বস্তু! হ্যাঁ, সে ধোয়ানী আসবে জ্বলে-পুড়ে যাওয়া ক্ষত থেকে নির্গত পুঁজ-রক্ত হতে । এটাই হবে সে পানীয়, যা সেদিন তাদের জন্যে বরাদ্দ হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে এর প্রতিদান দেয়া হবে। অতীতে তারা যা করেছিলো এবং যে কাজ ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য করণীয় হিসেবে রেখে এসেছিলো তারই প্রতিদান দেয়া হবে তাদের পাওনা । সেগুলোর সাথে সংগতি রেখেই সকল প্রতিদানের ব্যবস্থা রচিত হয়েছে। কারণ তারা তো হিসেব দিতে হবে বলে কখনও ভাবেনি এবং তার কোনো পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে আশাও করেনি। আর এ কারণেই “সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার আয়াতগুলোকে তারা অস্বীকার করেছে ।’ এখানে ব্যবহৃত শব্দগুলোর মধ্যে তাদের অস্বীকৃতি ও হঠকারিতার কাঠিন্য ও নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পেয়েছে। ওদের এসব দুষ্কৃতির প্রত্যেকটিকে আল্লাহ্‌ তায়ালা অত্যন্ত সুক্ষভাবে হিসেব করে সংরক্ষণ করে রেখেছেন, যার থেকে একটি হরফও বাদ পড়ছে না। বলা হচ্ছে, প্রত্যেকটি বস্তুকে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা সংরক্ষণ করে রেখেছি । হতাশ হৃদয়ে তারা বারবার এ আযাবের পবির্তন অথবা হ্রাসের ব্যর্থ আশা করতে থাকবে । বলা হবে, ‘মজা করে স্বাদ গ্রহণ করো ওই আযাবের, আজ আমি কিছুতেই আযাব ছাড়া আর কিছুই বাড়াবো না ৷’

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৩৪

وَّ كَاْسًا دِهَاقًاؕ

এবং উচ্ছসিত পানপাত্র।

ফী জিলালিল কুরআন:

মোত্তাকীদের সাফল্য : এরপর আর একটি দৃশ্যের অবতারণা করা হচ্ছে, এ দৃশ্য হবে মোত্তাকী পরহেযগার (আল্লাহভীরু) লোকদের, যারা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের মধ্যে থাকবে বিদ্রোহী মহাপাপী যারা উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যে থাকবে, তাদের পাশাপাশি হবে এ মোত্তাকীদের বাস। এরশাদ হচ্ছে, অবশ্য মোত্তাকীদের জন্য রয়েছে সাফল্য, বাগবাগিচাসমূহ ও আঙ্গুরের গুচ্ছ। আরও রয়েছে (অপেক্ষমান) সোহাগিনী সমবয়সী উন্নতবক্ষা তরুণীরা। আরও আছে কানায় কানায় ভরা পানপাত্র। সেখানে শুনবে না তারা কোনো বাজে বা মিথ্যা কথা। তোমার পরোয়ারদেগারের পক্ষ থেকে হিসেব করে রাখা এ প্রতিদান এরপর পুনরায় বলা হচ্ছে, এ সময় যখন জাহান্নাম মরণফাদ (সম) ও বিদ্রোহীদের আবাসস্থল হবে, সেখান থেকে বেরুনো অথবা এ অবস্থার পরিবর্তনের কোন উপায় থাকবে না। সেই সময় মোত্তাকীরা এ অবস্থা থেকে রেহাই পেয়ে সাফল্য ও মুক্তির দিকে এগিয়ে যাবে । ওই আনন্দদায়ক অবস্থার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘বাগ-বাগিচাসমূহ ও আংগুরের মধ্যে তারা চিরদিন থাকবে’। আংগুরের কথা বিশেষভাবে ও নির্দিষ্টতাবে উল্লেখের কারণ হচ্ছে, নেয়ামতের মধ্যে বড়ো নেয়ামত হিসেবে মানুষ আঙ্গুরকেই বুঝে ৷ “কাও্য়ায়েব’ বলে বুঝানো হয়েছে ওইসব তরুণীদেরকে যারা সুঢৌল ও স্ফীতবক্ষা । ‘আতরাব’ বলতে বুঝনো হয়েছে তাদেরকে যারা সমবয়সী ও সুন্দরী, আর ‘কা’সান দিহাকা’ বলতে বুঝানো হয়েছে কানায় কানায় ভরা পেয়ালাকে । এইসব নেয়ামতের এক বাস্তব ও বাহ্যিক বিবরণ পেশ করা হয়েছে যাতে করে যে কোনো মানুষ তা বুঝতে পারে। এসব বিলাস-সামগ্রীর স্বাদ কেমন হবে এবং কেমনভাবেই বা তা ভোগ করা হবে তা আমাদের জানা নেই এবং জানা সম্ভবও নয়। কারণ এ জগতে আমাদের জানার মতো উপায় ও সময় সবই সীমাবদ্ধ ৷ 

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৩৫

لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا كِذّٰبًاۚ

সেখানে তারা শুনবে না কোন বাজে ও মিথ্যা কথা।

ফী জিলালিল কুরআন:

এটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, নেক লোকেরা শুধু শারীরিক ভোগ্য সামগ্রীই লাভ করবে না, অভূতপূর্ব মানসিক শান্তিও তারা লাভ করবে । এজন্যই বলা হয়েছে, ‘তারা কোনো বাজে বকাবকি বা মিথ্যাচার সেখানে শুনবে না ।’ সে হবে এমন এক জীবন, যা সব রকম বাজে বকাবকি ও মিথ্যা বা ঝগড়াঝাটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সকল সত্য সেদিন উদঘাটিত হয়ে যাবে। সেদিন যুক্তিহীন তর্কবিতর্কের কোনো সুযোগ থাকবে না। এটা হবে এমন পরম সুখকর ও মনোরম অবস্থা যা সেই অমর জীবনের সাথে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যশীল ৷ এ ব্যাপারে কোরআনের বাণী, ‘তোমার পরোয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এ হচ্ছে এমন এক মহাদান যা হিসেব করে রাখা হয়েছে।’ এ কথাটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা নেয়ামতের সাধারণভাবে এর বাহ্যিক রূপটা দেখি এবং প্রতিদান ও পুরস্কারের মধ্যকার পার্থক্যটাও অনেকাংশে অনুভব করি । কিন্তু এগুলোর মধ্যে একটি নিকট সম্পর্কের বাধনও যে আছে, তাও মোটামুটি অনুভব করি।

সুরা: আন-নাবা
আয়াত নং :-৪০

اِنَّاۤ اَنْذَرْنٰكُمْ عَذَابًا قَرِیْبًا١ۖۚ۬ یَّوْمَ یَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ یَدٰهُ وَ یَقُوْلُ الْكٰفِرُ یٰلَیْتَنِیْ كُنْتُ تُرٰبًا۠

যে আযাবটি কাছে এসে গেছে সে সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিলাম। যেদিন মানুষ সেসব কিছুই দেখবে যা তার দু’টি হাত আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে এবং কাফের বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতাম।

ফী জিলালিল কুরআন:

হাশরের ময়দান : সে দিনের যে চূড়ান্ত দৃশ্যের অবতারণা হবে তা হচ্ছে এই যে, সেদিন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। সে দিনটি সম্পর্কে প্রশ্নকারীরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করছে ও মতভেদকারীরা নানা প্রকার মত পেশ করছে। সে দিনের দৃশ্যের বিবরণ পুরোপুরিভাবেই এ সূরাতে ফুটে উঠেছে। এ সময়ে জিবরাঈল (আ.) ও ফেরেশতারা মহা দয়াময় পরওয়ারদেগারের দরবারে বিনীত অবস্থায় অপেক্ষমান থাকবে। মহান আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলবে না। অপেক্ষাকরার স্থানটি হবে অতি গুরুগম্ভীর ও ভীতি আনয়নকারী । এরশাদ হচ্ছে, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সেসব কিছুর প্রতিপালক তিনি, তার সামনে কেউ কথা বলার ক্ষমতা রাখেনা । সেদিন ফেরেশতা ও আত্মা (রুহ্) সমূহ সারিবদ্ধভাবে দাড়াবে ৷ মহা দয়াময় রাব্বুল আলামীন যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্য কেউ কথা বলবে না এবং যে কথাই সে বলবে, তা হবে সত্য সঠিক, অর্থাৎ যুক্তিহীন বা অন্যায় কোনো কথা সে বলবে না বা বলতে পারবে না। মোত্তাকী পরহেযগার লোকদেরকে যে প্রতিদান ও পাপী লোকদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে তা পূর্বের অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে! এ প্রতিদান তোমার মালিকের পক্ষ থেকে দেয়া হবে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালিক এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে যা কিছু আছে সেসব কিছুর প্রতিপালক, তিনি পরম দাতা, মহা দয়াময়। তিনি চিরস্তন মহাসত্য। মহান সেই পরওয়ারদেগারের প্রভুত্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে মানুষ ও আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও আখেরাত সব কিছুর ওপর ৷ তিনি বিদ্রোহী ও মোত্তাকীদেরকে তাদের পাওনা অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রতিদান দেবেন এবং তার কাছে পূর্ব ও পরের সব কিছুর পরিসমাপ্তি ঘটবে । এমতাবস্থায় প্রাসঙ্গিক আলোচনা কতো সুন্দরভাবেই না এখানে পেশ করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে তিনি এমন দয়াময় যার দান অযাচিতভাবে পাপীতাপী ও আল্লাহভীরু সবার ওপর রয়েছে। এমনকি অন্যায়কারী অপরাধী ও বিদ্রোহীদের জন্য নির্ধারিত যে শাস্তি সেও মহা দয়াবানের রহমতের দান। যালেমদেরকে তাদের যুলুম অনুযায়ী সাজা দান, সেও তার রহমতের এক অমোঘ দাবী । কারণ ভালো ও মন্দের পরিণতি এক হতে পারে না, এক হওয়াও উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালা, পরওয়ারদেগারে হাকীম-এর পবিত্র গুণাবলীর মধ্যে এটাও একটি দিক যে, ‘তাঁকে সম্বোধন করার ক্ষমতা কারো হবে না।’ সেই মহা ভয়ংকর দিনে যেদিন জিবরাঈল (আ.) ও অন্যান্য ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষমান থাকবে। সেইদিন মহা দয়াবান পরওয়ারদেগারের অনুমতি ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। অনুমতি পেলে যে কথা বলবে সে কথাও হবে সত্য সঠিক কথা । যেহেতু দয়াময় প্রভু অনুমতি প্রার্থীকে এ জন্যই অনুমতি দেবেন যে তিনি জানেন সে সঠিক কথাই বলতে চায়। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যপ্রাপ্ত এ সকল ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা গুনাহখাতা বিদ্রোহাত্মক কাজ থেকে পবিত্র থাকবে৷ চুপচাপ থেকে তারা অপেক্ষা করতে থাকবে, তারা অনুমতি ছাড়া হিসেবের বাইরে কথা বলবে না। আল্লাহর দাপট ও পরাক্রমের কারণে গোটা পরিবেশ থমথমে হয়ে থাকবে। এহেন দৃশ্যের মধ্যে এক ভয়ংকর চীৎকার ধ্বনি উত্থিত হবে, যা সাবধানবাণী উচ্চারণ করতে থাকবে এবং এমনভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে প্রচন্ড ঝাকুনি দিয়ে জাগিয়ে তুলবে যে, সে হতবুদ্ধি হয়ে যাবে প্রকৃতপক্ষে সেই দিনটির আগমন অবশ্যম্ভাবী । অতএব, তার কাছে যাওয়ার জন্য যে ব্যক্তি ইচ্ছুক হবে সে এখন থেকেই তার পথ করে নিক। অর্থাৎ সে এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিতে ৷ ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আসন্ন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি “সেদিন, মানুষের দুটি হাত যা এগিয়ে দিয়েছে সে তা দেখতে পাবে এবং (সে দিনকে) অস্বীকারকারী কাফের ব্যক্তি বলে উঠবে, হায়, আফসোস! আমি যদি (মানুষ না হয়ে) মাটি হয়ে থাকতাম!” কেয়ামত সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে যারা নানা প্রশ্নের জালে আবদ্ধ তাদেরকে কঠিন ভাবে নাড়া দিয়ে বলা হচ্ছে, এ দিনের আগমন অবশ্যম্ভাবী, সুতরাং প্রশ্ন তোলা বা মতভেদ করার কোনো সুযোগ নেই । এখনও ভূল সংশোধনের সময় আছে। অতএব যার মনে চায় সে তার প্রভুর কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে নিক । জাহান্নাম তার ফাঁদ ও স্থায়ী ঘর হওয়ার পূর্বেই এটা তার করা উচিত। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে তার গাফেলতির ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য এ এক শক্ত সতর্কবাণী । ‘আমি অবশ্যই আসন্ন আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিলাম ।” জাহান্নাম মোটেই দূরে নয়। অতএব, জাহান্নাম তোমাদের অপেক্ষা করছে এবং তোমাদেরকে দৃষ্টিতে রেখেছে, সেই দিকে সে নিয়ে যেতে চায় যা তোমরা দেখছো! দুনিয়ার জীবনটা পুরোপুরি একটি সংক্ষিপ্ত সফর ও স্বল্প সময়ের জন্যই তোমরা এই বয়স পেয়েছো। এই ভীতির আযাব এতোই কঠিন হবে যে কাফেররা এর মুখোমুখি যখন হবে তখন সে বিকট চীৎকার করে আশা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলে উঠবে যে, সে যদি পয়দাই না হতো । সে দিন মানুষ দেখতে পাবে যা তার দুটি হাত এগিয়ে দিয়েছে এবং প্রতিটি কাফের ব্যক্তি বলবে, হায়, আফসোস! যদি মাটি হয়েই থাকতাম ৷ চরম বিপদাপন্ন অবস্থায় এই হবে তার চিৎকারধ্বনি। তার এ অনুভূতি হবে নিদারুণ ভয় ও লজ্জার ফলশ্রুতি ৷ এমনকি সে ব্যর্থ আশা করতে থাকবে যদি তার অস্তিত্বই না থাকতো! এবং এই কঠিন অবস্থার সম্মুখীন তাকে না হতে হতো! কাফের ও সন্দেহবাদীদের এই ভয়ানক অবস্থাই হচ্ছে প্রশ্নকারীদের আলোচ্য বিষয় । যা নিয়ে তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং সন্দেহবাদ ব্যক্ত করছে। এটাই হচ্ছে এ মহা খবরের মূল বক্তব্য বিষয়।

Leave a Reply