Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৯৯/হে মানুষ:-৯/এবং কফেরর-রা বলে:-৪১) [#কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। : – #সৃষ্টি রহস্য : মানুষ ভেবে দেখুক:-] www.motaher21.net সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব পারা:৩০ ১- ১৭ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- # তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:- # তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯৯/হে মানুষ:-৯/এবং কফেরর-রা বলে:-৪১)
[#কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। : –
#সৃষ্টি রহস্য : মানুষ ভেবে দেখুক:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব
পারা:৩০
১- ১৭ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
# তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:-
# তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১
وَ السَّمَآءِ وَ الطَّارِقِ ۙ﴿۱﴾
শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে যা আবির্ভূত হয় তার।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-২
وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الطَّارِقُ ۙ﴿۲﴾
তুমি কি জানো ঐ রাতে আত্মপ্রকাশকারী কি?
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৩
النَّجۡمُ الثَّاقِبُ ۙ﴿۳﴾
ওটা দীপ্তিমান নক্ষত্র!
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৪
اِنۡ کُلُّ نَفۡسٍ لَّمَّا عَلَیۡہَا حَافِظٌ ؕ﴿۴﴾
এমন কোন প্রাণ নেই যার ওপর কোন হেফাজতকারী নেই।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৫
فَلۡیَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ مِمَّ خُلِقَ ؕ﴿۵﴾
সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে, তাকে কি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৬
خُلِقَ مِنۡ مَّآءٍ دَافِقٍ ۙ﴿۶﴾
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবলবেগে নিঃসৃত পানি থেকে,
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৭
یَّخۡرُجُ مِنۡۢ بَیۡنِ الصُّلۡبِ وَ التَّرَآئِبِ ؕ﴿۷﴾
এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য হতে,
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৮
اِنَّہٗ عَلٰی رَجۡعِہٖ لَقَادِرٌ ؕ﴿۸﴾
নিশ্চয় তিনি তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে সক্ষম।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-৯
یَوۡمَ تُبۡلَی السَّرَآئِرُ ۙ﴿۹﴾
যেদিন গোপন রহস্যের যাচাই বাছাই হবে,
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১০
فَمَا لَہٗ مِنۡ قُوَّۃٍ وَّ لَا نَاصِرٍ ﴿ؕ۱۰﴾
সেদিন মানুষের নিজের কোন শক্তি থাকবে না এবং কেউ তার সাহায্যকারীও হবে না।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১১
وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الرَّجۡعِ ﴿ۙ۱۱﴾
কসম বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশের।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১২
وَ الۡاَرۡضِ ذَاتِ الصَّدۡعِ ﴿ۙ۱۲﴾
এবং (উদ্ভিদ জন্মাবার সময়) ফেটে যাওয়া যমীনের,
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১৩
اِنَّہٗ لَقَوۡلٌ فَصۡلٌ ﴿ۙ۱۳﴾
নিশ্চয় তা (কুরআন সত্য-মিথ্যার) পার্থক্যকারী বাণী।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১৪
وَّ مَا ہُوَ بِالۡہَزۡلِ ﴿ؕ۱۴﴾
এবং এটা নিরর্থক নয় ।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১৫
اِنَّہُمۡ یَکِیۡدُوۡنَ کَیۡدًا ﴿ۙ۱۵﴾
নিশ্চয় তারা ভীষণ চক্রান্ত করে।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১৬
وَّ اَکِیۡدُ کَیۡدًا ﴿ۚۖ۱۶﴾
এবং আমিও ভীষণ কৌশল করি।
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব:-১৭
فَمَہِّلِ الۡکٰفِرِیۡنَ اَمۡہِلۡہُمۡ رُوَیۡدًا ﴿٪۱۷﴾
কাজেই ছেড়ে দাও, হে নবী! এ কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯৯/এবং কফেরর-রা বলে:-৪১)
[#কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। : –
#সৃষ্টি রহস্য : মানুষ ভেবে দেখুক:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৮৬ : আত্-তারিক্ব
পারা:৩০
১- ১৭ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
# তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:-

সুরা: আত-তারিক্ব

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:৮৬

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : আমপারার ভূমিকায় আমি বলেছি যে, এ পারার সূরাগুলো মানুষের অনুভূতিতে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। খুবই জোরদার আঘাত করে এবং সংজ্ঞালুপ্ত ঘুমন্তদের কানে বিকট আওয়ায় তোলে ৷ এভাবে একই ধরনের চেতনা ও একই ধরনের সম্বিত ফেরানোর উদ্দেশ্যে ক্রমাগত আঘাত ও বিকট আওয়ায করতে থাকে । সে বলে, ‘জাগো, ওঠো, দেখো, নযর বুলাও, চিন্তা-ভাবনা করো, বিচার-বিবেচনা করো। একজন ইলাহ রয়েছেন, তার একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন রয়েছে, একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা রয়েছে, এক ধরনের পরীক্ষা রয়েছে, সব কিছুরই হিসাব নিকাশ ও জবাবদিহীর ব্যবস্থা রয়েছে। কঠিন শাস্তি ও পরম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে৷” উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি সুস্পষ্ট নমুনা এই সূরায় লক্ষণীয় । এর ছন্দায়িত বাচনভংগিতে যে বলিষ্ঠতা ও তেজস্বীতা বিদ্যমান, তাতে এ সূরার দৃশ্যসমূহ, এর বিশেষ ধরনের সুরেলা ছন্দ, এর শব্দের ঝংকার এবং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের প্রেরণাদায়ী সংকেত সব কিছুরই অবদান রয়েছে। সূরার অংকিত দৃশ্যপটে রয়েছে ‘তারিক’ (রাতে আত্মপ্রকাশকারী জ্যোতিষ্ক), ‘সাকিব’। (উজ্জ্বল), দাফিক (সবেগে স্খলিত), ‘রাজ্য়ী’, (বারবার সংঘটিত বৃষ্টি), সাদয়ী (বিদারণ) । আর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক প্রাণীর ওপর প্রহরা নিয়ুক্ত রয়েছে এই আশ্বাসবাণী । যথা, “প্রত্যেক প্রাণীর ওপর রয়েছে প্রহরী ।” কোনো শক্তি ও সাহায্যকারী নেই এই মর্মে হুশিয়ারী যথা, “যেদিন গুপ্ত তত্ত্ব প্রকাশ হবে সেদিন মানুষের কোনো শক্তিও থাকবে না, সাহায্যকারীও থাকবে না ।” কঠোর ও গুরুগম্ভীর বক্তব্য, যথা, ‘নিশ্চয়ই এ কেতাব চুড়ান্ত নিষ্পত্তিকারী বাণী এবং তা নিরর্থক বাণী নয়।’ এর বাণীর ভেতরে রয়েছে সম চরিত্রের হুমকি ও শাসানি। যেমন, তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আমিও ষড়যন্ত্র করি । অতএব কাফেরদেরকে অবকাশ দাও, কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও। সূরাটির বিষয়বস্তু আমপারার অন্যান্য সূরার বিষয়বস্তুর মতোই, যা পারার শুরুতে আমি উল্লেখ করেছি। পারাটির মূল বক্তব্য এই যে, ‘একজন ইলাহ রয়েছেন, একটি অদৃশ্য প্রশাসন সার্বক্ষনিকভাবে চালু রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে, পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, পরিণাম রয়েছে, জবাবদিহী ও কর্মফল রয়েছে ইত্যাদি ৷’ সূরার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী ও বাস্তব তথ্যসমূহের চমকপ্রদ ভাষ্যের সাথে এ সূরা মিলিয়ে পড়লে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-3

النَّجْمُ الثَّاقِبُۙ

উজ্জ্বল তারকা।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘আকাশের শপথ এবং রাত্রিতে যা আবির্ভূত হয় তার শপথ, ………. প্রত্যেক প্রাণের প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে ।’ এই শপথের ভেতরে একটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারণা এবং একটি ঈমানী তত্ত্বের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমে আকাশ ও নৈশকালীন জ্যোতিষ্কের উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর কোরআনী বাকরীতি অনুসারে প্রশ্নের মাধ্যমে এর পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এভাবে, ‘তুমি কি জানো, রাত্রিতে যা আবির্ভূত হয় তা কী?’ যেন বস্তুটি মানুষের জানা ও চেনার বহির্ভুত। এরপর তার আকৃতির বিবরণ সহকারে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে যে, উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘সাকিব’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিদীর্ণকারী বা ছেদনকারী, অর্থাৎ যে জ্যোতিষ্ক স্বীয় চলমান আলো দিয়ে অন্ধকারকে ছিন্ন করে । এই গুণটি নক্ষত্র মাত্রের মধ্যেই পাওয়া যায়। এ উক্তি দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট নক্ষত্র বুঝানোর অবকাশ নেই, আর তার কোনো প্রয়োজনও নেই । বিষয়টি অনির্দিষ্ট থাকুক এটাই ভালো । এতে কথাটার অর্থ দাড়াবে, ‘শপথ আকাশের এবং শপথ তার উজ্জ্বল নক্ষত্রমন্ডলীর, যাদের তীব্র আলোকরশ্মি অন্ধকারের বুক চিরে ও সকল জিনিসকে আচ্ছন্নকারী রাতের পর্দাকে ছিন্ন করে পার হয়ে যায় । সূরাটিতে বর্ণীত অন্যান্য নিগূঢ় তত্ত্ব, তথ্য ও দৃশ্যাবলীর ব্যাপারে এই ইংগিতের তাৎপর্যময় নির্দেশনা রয়েছে। পরবর্তী আয়াতগুলোতেই এর সাক্ষ্য পাওয়া যাবে ।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-4

اِنْ كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَیْهَا حَافِظٌؕ

এমন কোন প্রাণ নেই যার ওপর কোন হেফাজতকারী নেই।

ফী জিলালিল কুরআন:

আল্লাহ তায়ালা আকাশ ও তার দেদীপ্যমান নক্ষত্রমন্ডলীর শপথ করে যে কথাটি বলেছেন তাহলো এই যে, আল্লাহর নির্দেশক্রমে প্রতিটি প্রাণীর ওপর প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে। কোরআনের বক্তব্যটির হুবহু শাব্দিক রূপ হলো। ‘এমন কোনো প্রাণী নেই যার ওপর রক্ষী বা প্রহরী নিযুক্ত নেই’ এ বাচনভংগিতে এক ধরনের অতিরিক্ত দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠতার ভাব নিহিত রয়েছে। এই প্রহরী প্রাণীর তত্ত্বাবধান করে থাকে। তার রক্ষণাবেক্ষণ করে, তার সংখ্যা নিরূপণ করে এবং সে আল্লাহর নির্দেশক্রমে তার দায়িত্ব বহন করে এবং সাহায্য করে। কেননা সে সকল গোপন তথ্য ও চিন্তা-ভাবনার ভান্ডার, আর কর্ম ও কর্মফল এরই সাথে সম্পৃক্ত । এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর রাজ্যে কোনো বিশৃংখলা ও অরাজকতা নেই । পৃথিবীতে মানুষকে রক্ষাবিহীন অসহায় ছেড়ে দেয়া হয়নি; বরং প্রত্যক্ষ ও নিখুতভাবে তাকে প্রহরাধীন রাখা হয়েছে। এ আয়াতটিতে অত্যন্ত ভীতিপ্রদ যে ধারণাটি দেয়া হয়েছে তাহলো এই যে, মানুষ কখনো নিসংগ থাকলেও একেবারে একাকী থাকে না। কোনো প্রহরী না থাকলেও একজন প্রহরী অবশ্যই থাকে। সেই নিযুক্ত প্রহরী সকল পর্দা ছিন্ন করে যে কোনো গুপ্ত জিনিসের কাছে পৌছে যায়, ঠিক যেমন নক্ষত্রের আলো অন্ধকারের বুক চিরে রাতের পর্দা ছিন্ন করে সকল জিনিসের ওপর ঠিকরে পড়ে। বস্তুত প্রাণী দেহ থেকে শুরু করে বিশ্ব-চরাচরের সর্বত্র আল্লাহর যতো সৃষ্টি আছে তা সব একই নিয়মে বাধা রয়েছে এবং তাদের মধ্যে পূর্ণ সমন্বয় বিরাজিত। এখানে যেমন প্রাণীকে প্রকৃতির সাথে সমন্বিত করা হয়েছে, তেমনি অপর একটি উক্তিতে তাকদীর তথা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। আকাশ ও নক্ষত্রের শপথ দ্বারা এই সত্যের ওপরই আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষের ইহকালীন জন্ম দ্বারা এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, মানুষকে দায়িত্বহীন করেও ছাড়া হয়নি এবং নিরর্থক করেও রাখা হয়নি।

ফী জিলালিল কুরআন: সৃষ্টি রহস্য : অতএব মানুষ ভেবে দেখুক কোন জিনিস থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে! অর্থাৎ মানুষের উপলব্ধি করা দরকার যে, সে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং এখন তার অবস্থা কি। ‘মেরুদন্ড ও পাঞ্জরাস্থির মাঝখান থেকে প্রবল বেগে নির্গত পানি থেকে তার সৃষ্টি হয়েছে।’ অর্থাৎ পুরুষের পিঠের মেরুদন্ডের হাড়ের ভেতর থেকে এবং নারীর উচ্চ বক্ষদেশের হাড়ের ভেতর থেকে নির্গত পানির সমন্বয়ে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ তত্ত্বটি গুপ্ত ছিলো। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানতো না। মাত্র বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক বিজ্ঞান নিজস্ব প্রক্রিয়ায় এ তথ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয় যে, পুরুষের বীর্য তার মেরুদন্ডে এবং নারীর বীর্য তার বক্ষের উর্ধাংশের হাড়ের ভেতরে তৈরী হয়। অতপর তা একটি নিভৃত ও সুরক্ষিত স্থানে মিলিত হয় এবং তা থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়। একজন পুরুষের পিঠ ও নারীর বক্ষ থেকে নির্গত পানি আর পরিণত বৃদ্ধিমান সচেতন এবং জটিল আংগিক, স্নায়ুবিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোধারী মানুষের মাঝে যে বিরাট ব্যবধান, যা পেরিয়ে প্রবল বেগে স্খলিত পানি পরিণত মানুষের আকৃতি লাভ করে। এ থেকে বুঝা যায় যে, তরল পদার্থকে উক্ত বিস্ময়কর সুদীর্ঘ পথে পরিচালিত করে, যাতে তা এই চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। এ দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, আল্লাহর আদেশে নিয়োজিত একজন প্রহরী এই বুদ্ধিহীন, আকৃতিহীন বীর্যকে পাহারা দেয় ও সংরক্ষণ করে। একজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে নিজের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সব বিস্ময়কর জিনিসের সম্মুখীন হয়, এই বীর্য ফোটা তার চেয়েও বহুগুণ বেশী বিস্ময়কর জিনিস ও অবস্থার সম্মুখীন হয়ে থাকে । বীর্যের মধ্যে বিরাজমান শুক্রকীট এতো ক্ষুদ্র হয়ে থাকে যে, তা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা কষ্টকর। আর একবার যে পরিমাণ বীর্য নির্গত হয় তাতে থাকে কোটি কোটি শুক্রকীট ৷ এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি, যার কোন আকৃতি, বৃদ্ধি, শক্তি বা ইচ্ছা নেই, জরায়ূতে অবস্থান নেয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে যে কাজটি শুরু করে তা হচ্ছে খাদ্য অন্বেষণ ৷ আল্লাহর নিয়োজিত প্রহরী এই শুক্রকীটকে এমন পেটুক স্বভাবের বানিয়ে দেয় যে, তার চার পাশের জরায়ূর প্রাচীরকে সে তরল রক্তের পুকুরে পরিণত করে। সেই পুকুর তরতাজা খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে। অতপর খাদ্য লাভের ব্যাপারে একটু নিশ্চিত হওয়া মাত্রই তারা নতুন কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করে। এভাবে ক্রমাগত বিভক্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকে, যা থেকে নতুন সেল বা জীবকোষ জন্ম নেয়। এই সরল সোজা আকৃতিহীন, বৃদ্ধিহীন, ইচ্ছাহীন, শক্তিহীন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি জানে তাকে কী করতে হবে এবং সে কী চায়। কেননা আল্লাহর নিয়োজিত সেই প্রহরী তাকে এতটা জ্ঞান, পথনির্দেশ,শক্তি ও ইচ্ছা দান করে যা দ্বারা সে নিজের কাজের পথ চিনতে পারে। সেই প্রহরীর ওপর দায়িত্ব রয়েছে যেন সে এই সকল কোষের প্রতিটি গ্রুপকে এই বিশাল ভবনের এক একটা অংশ নির্মাণে নিয়োজিত করে। সেই ভবনটি আর কিছু নয়-মানব দেহ । শুক্রকীট থেকে নির্গত এই জীবকোষ বা সেলের একটি গ্রুপ মানব দেহের সার্বিক কাঠামো নির্মাণে এবং আর একটি গ্রুপ পেশী নির্মাণে এবং আর একটি গ্রুপ স্নায়ুতন্ত্রী নির্মাণে নিয়োজিত হয়। এভাবে গোটা মানব দেহ নির্মিত হয়। তবে কাজটি এতো সহজে সম্পন্ন হয় না। আরো সুক্ষ বিশেষজ্ঞীয় পদ্ধতি রয়েছে । কোনো একটি হাড় অপর হাড়ের সাথে, একটি পেশী অপর পেশীর সাথে এবং একটি স্নায়ুতন্ত্রী অপর স্নায়ূতন্ত্রীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কেননা এই ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জটিল কাজ । এর গঠন প্রণালী অভিনব এবং এর দ্বারা যে সব কাজ নেয়া হবে তা বহুবিধ । জীবকোষ বা সেলগুলোর প্রতিটি গ্রুপ থেকে আবার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দল বিভক্ত হয়ে উক্ত ভবনের প্রতিটি স্তম্ভের জন্যে নির্দিষ্ট ধরনের কাজে নিয়োজিত হয়। প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সেল নিজের জানা পথে চলতে থাকে৷ সে কোথায় যাবে এবং কী তার করণীয়, তা সে ভালোভাবেই জানে ৷ এদের কোনো একটি সেলও তার কর্মস্থল ও পথ ভুল করে না। উদাহরণ স্বরূপ, চোখ নির্মাণের দায়িত্বসম্পন্ন সেলগুলো জানে যে, এটা মুখমন্ডলেই নির্মাণ করতে হবে, কখনো পেটে, হাতে বা পায়ে নয়। অথচ এসব জায়গার প্রত্যেকটিতেই চোখ হতে পারে। আর যদি চোখ তৈরীর কাজে নিযুক্ত সেলগুলোকে ধরে নিয়ে পেটে, হাতে বা পায়ে রেখে দেয়া হতো, তাহলে তারা ওখানেই চোখ বানিয়ে ফেলতো ৷ কিন্তু এ সেলগুলো স্বয়ং যখন মানবদেহের ভেতরে চলাচল করে, তখন চোখের জন্যে যে জায়গা নির্ধারিত, সে দিকেই চলে। কে নির্ধারণ করেন এই দেহটির ঠিক এই জায়গায় একটি চোখের দরকার, অন্য কোথাও নয়? ইনি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা । তিনিই তার সর্বোচ্চ রক্ষক, তার তত্ত্বাবধায়ক এবং তাকে সেই দিক-দিশাহীন জায়গায় পথের দিশা দেখান, যেখানে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো পথ প্রদর্শক নেই । আর ওই সমস্ত কোষ এককভাবে ও সম্মিলিতভাবে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করে। তাদেরই অভ্যন্তরে লুকানো একটি গ্রুপ সমষ্টি তাদের কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করে। সেই গ্রুপগুলো হচ্ছে উত্তরাধিকারের গ্রুপসমূহ, যা গোটা প্রজন্মের বিবরণী ও পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্যসমুহ সংরক্ষণ করে। যে কোষ বা সেল চোখ তৈরীর জন্য নির্দিষ্ট, তা চোখ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। চোখ নির্মাণের এই কাজ করার সময় যাতে চোখের নির্দিষ্ট রূপ বা আকৃতি বিনষ্ট ও বিকৃত না হয় এবং তা মানুষের চোখের বৈশিষ্ট হারিয়ে অন্য কোন প্রাণীর চোখে পরিণত না হয়, সে জন্য তাকে তার সুনির্দিষ্ট আকৃতিতে সংরক্ষণ করা এই কোষের দায়িত্ব । মানুষের বাপদাদার চোখের একটা নির্দিষ্ট রূপ ও নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট থাকতে পারে৷ তাও সংরক্ষণ করা এই কোষের দায়িত্ব । এই চোখের আকৃতিগত ও বৈশিষ্ট্যগত নকশায় যাতে এমন সামান্যতম বিচ্যুতিও না ঘটে, যাতে মূল পরিকল্পিত নকশা থেকে তা ভিন্ন আকৃতি ধারণ করে, তা নিশ্চিত করাও ওই কোষের দায়িত্ব । কে এই কোষকে এতো শক্তি এবং এতো জ্ঞান দান করলো এতো সেই সরল ও অবোধ কোষ, যার কোনো বুদ্ধি ও উপলব্ধি ক্ষমতা নেই, নেই কোনো ইচ্ছা শক্তি । একে এত শক্তি ও এতো জ্ঞান দানকারী আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ নয়। একে তিনি চোখের নকশা তৈরীর জ্ঞান দান করেছেন এবং এদেরই একটি বা কয়েকটি সরল ও অবোধ কোষ এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করে। অথচ সমগ্র মানব জাতিকে যদি একটি চোখ বা তার একটি অংশেরও নকশা তৈরী করতে বলা হতো, তবে তা তারা করতে পারতো না। প্রবল বেগে প্রক্ষিপ্ত সেই শুক্রবিন্দু ও একজন সবাক মানুষের মাঝে যে দীর্ঘ ও বিস্ময়কর পথ পরিক্রমা রয়েছে, তার দৃশ্য সম্বলিত এই সংক্ষিপ্ত বিবরণের নেপথ্যেও রয়েছে অগণিত বিস্ময়। দেহের বিভিন্ন যন্ত্র ও অংগপ্রত্যংগের বৈশিষ্টের ভেতরে এই বিস্ময় নিহিত । এই তাফসীরে তার পুরো বিবরণ দেয়া আমাদের সাধ্যাতীত। আল্লাহর সুনিপুণ পরিকল্পনা ও সুদক্ষ সাক্ষ্যই বিধৃত হয়েছে সেই সব আজব ও অদ্ভুত অংগ বৈশিষ্ট্যে। আর তাতে রয়েছে মহান আল্লাহর তত্ত্বাবধায়ক, পথ-প্রদর্শক ও সহায়ক হাতের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের ছাপ । যে সত্যের জন্য আকাশ ও নক্ষত্রের শপথ করা হয়েছে, এ বিবরণটিতে তাকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আর সেই সাথে এতে রয়েছে পরবর্তাঁ অংশে বর্ণীত তত্ত্বেরও পটভূমি ।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-10

فَمَا لَهٗ مِنْ قُوَّةٍ وَّ لَا نَاصِرٍؕ

সেদিন মানুষের নিজের কোন শক্তি থাকবে না এবং কেউ তার সাহায্যকারীও হবে না।

ফী জিলালিল কুরআন:

পুনর্জন্ম : ‘নিশ্চয়ই তিনি তার পুনসৃষ্টিতেও সমর্থ ৷ যেদিন সকল গুপ্ত তথ্য ফাস হয়ে যাবে, তখন তার কোনো শক্তিও থাকবে না, সাহায্যকারীও থাকবে না।’ অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তায়ালা যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, লালন-পালন ও তত্ত্বাবধান করেছেন, তিনি তাকে মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম এবং প্রাচীন জিনিসকে নতুন করে সৃষ্টি করতে সক্ষম। প্রথম সৃষ্টি তার সীমাহীন ক্ষমতা, নিজস্ব পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার স্বাক্ষর । এই বিচক্ষণ ও সুনিপুণ সৃষ্টি একেবারেই বৃথা যাবে যদি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করে সকল গোপন কার্যকলাপের অনুসন্ধান ও নিরীক্ষণ না করা হয় এবং যথাযথ ও ন্যায্য প্রতিফল না দেয়া হয়। ‘যেদিন গোপন বিষয়গুলো ফাস হয়ে যাবে।” অর্থাৎ সকল অজানা তথ্য যেদিন প্রকাশিত হবে, যেমন প্রকাশিত হয় রাতের নক্ষত্র অন্ধকারের পর্দা ছিন্ন করে, যেমন বহু আবরণ আবৃত প্রাণীকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রহরী ফেরেশতা তার কাছে গমন করে। যেদিন মানুষ সকল শক্তি ও সাহায্যকারীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়বে, সেদিন সকল গুপ্তভেদ প্রকাশিত হবে। ‘সেদিন তার কোনো শক্তিও থাকবে না, কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না ।’ অর্থাৎ নিজেকে নিজে সামাল দেয়ার জন্য নিজের ক্ষমতাও থাকবে না, আর বাইরে এমন কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না যার সাহায্য নেয়া যায়। সকল শক্তি হারানোর পর সকল গুপ্ত তথ্য প্রকাশিত হওয়া একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি নির্দেশ করে। এতে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় । এ ধরনের পরিস্থিতি স্নায়ুমন্ডলীতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এ সময় তার চেতনা ও অনুভূতি নিজের ও পারিপার্শ্বিক জগতের বাইরে গিয়ে মানুষের জন্ম ও তার বিস্ময়কর পরিভ্রমণ এবং তার শেষ গন্তব্য স্থলে উপনীত হয়। সেখানে তার সকল আবরণ খসে পড়ে, সকল গুপ্তভেদ ফাস হয়ে যায়। সেখানে সে সকল সহায় ও শক্তি হারিয়ে ফেলে ৷ এসব কথা বলার পরও হয়তো অন্তরে এ ব্যাপারে সামান্য কিছু সন্দেহ-সংশয় অবশিষ্ট থাকতে পারে যে, এ সব ঘটনা সত্যিই ঘটবে কিনা! এ কারণে দৃঢ়তার সাথে পুনরুক্তি করা হয়েছে যে, এ উক্তির সাথে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর সংযোগ সাধন করা হয়েছে এভাবে, ‘বৃষ্টি সম্বলিত আকাশের শপথ, ফেটে যাওয়া যমীনের শপথ, নিশ্চয়ই এটা চূড়ান্ত ও অকাট্য বাণী, এটা মোটেই রসিকতা নয় ।’ আয়াতে ব্যবহৃত ‘রাজ্য়ী’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ পুনরাবৃত্তি । এ দ্বারা বৃষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। আকাশ বারংবার বৃষ্টি বর্ষণ করে । আর ‘সাদয়ী’ অর্থ বিদারণ বা ফেটে যাওয়া ৷ এখানে উদ্ভিদকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তা মাটি বিদীর্ণ করে উদ্গত হয়। এই দুটো জিনিসই জীবনের একটি দৃশ্যের ছবি তুলে ধরেছে। উদ্ভিদের জীবন ও প্রথম সৃষ্টির নমুনা হচ্ছে যথাক্রমে আকাশ থেকে উৎক্ষিপ্ত পানি এবং পৃথিবীর মাটি বিদীর্ণ করে উদগত উদ্ভিদ । পুরুষের পাজড়ের হাড় ও স্ত্রীর বক্ষদেশ থেকে প্রবল বেগে নিক্ষিপ্ত পানি এবং জরায়ুর অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে আসা সন্তানের সাথে এর নিকটতম সাদৃশ্য বিদ্যমান। জীবন জীবনই ৷ দৃশ্য দৃশ্যই। আন্দোলন আন্দোলনই ৷ কিন্তু এ সবই একটা স্থায়ী ও শ্বাশ্বত বিধি ব্যবস্থা এবং একটা সুনির্দিষ্ট ও চিহ্নিত শিল্পকর্মের নমুনা । এ সবই মহান স্রষ্টার উপস্থিতি ও বিদ্যমানতা নির্দেশ করে। কেউই তার সমকক্ষ ও সমতূল্য নয় সৃষ্টিকর্মের শৈল্পিক নৈপুণ্যেও নয়, বাহ্যিক আকৃতিতেও নয়। উপরোক্ত দৃশ্যটি রাতের উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই নক্ষত্র সকল পর্দা ও আবরণ ছিন্ন করে। অনুরূপভাবে এটি গুপ্তভেদ প্রকাশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে তুলনীয় । একই নিপুণ সৃষ্টি, যা স্রষ্টার অস্তিত্ব নির্দেশ করে।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-17

فَمَهِّلِ الْكٰفِرِیْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَیْدًا۠

কাজেই ছেড়ে দাও, হে নবী! এ কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও।

ফী জিলালিল কুরআন:

যুদ্ধের নেতৃত্ব স্বয়ং আল্লাহর হাতে : আল্লাহ তায়ালা এই দুটি সৃষ্টি ও দুটি ঘটনার নামে শপথ করেছেন, বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশ এবং উদ্ভিদ উদ্গমনকারী পৃথিবী ৷ এ দুটি জিনিসেরই বাহ্যিক দৃশ্য ও অন্তর্নিহিত মর্ম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। খোদ্‌ বাক্যের বাচনভংগিও অত্যন্ত কঠোর ও দৃঢ় বক্তব্য প্রকাশ করে। শপথ করে বলা হচ্ছে যে, এই অকাট্য বাণী, যা পুণর্জন্ম ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা ঘোষণা করে, অন্য কথায় সার্বিকভাবে এই কোরআন, অকাট্য ও অবিসংবাদিত ৷ এতে কোনো তামাশা বা রসিকতার মিশ্রণ নেই । এ বাণী সকল বিতর্ক, সকল সন্দেহ, সকল সংশয় ও সকল বাকবিতন্ডার অবসান ঘটায়। এটি চুড়ান্ত ও সর্বশেষ বাণী । বারংবার বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশ এবং উদ্ভিদ উদ্গমনকারী পৃথিবী এ ব্যাপারে সাক্ষী । আর এই চুড়ান্ত ও অকাট্য বাণী প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা তার রসূল (স.) এবং তার সাথী, মক্কার মোশরেকদের হাতে নিপীড়িত ও নির্যাতিত মুষ্টিমেয় মোমেনের দলটিকে সম্বোধন করেছেন। রসূল (স.)-এর পরিচালিত আন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা সব সময় ষড়যন্ত্র ও ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত ছিলো । তারা নিত্যনতুন চক্রান্ত এঁটে যাচ্ছিলো অব্যাহতভাবে ৷ এ সম্বোধনে আল্লাহ তায়ালা তার রসূলকে প্রবোধ ও সান্ত্বনা দিয়ে নিজ কাজে নিয়োজিত থাকার এবং মোশরেকদের চক্রান্তে ভীত না হওয়ার উপদেশ দিয়ে তিনি বলছেন যে, সাময়িকভাবে এটাকে বরদাশত করে যেতে হবে৷ মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধের নেতৃত্ব স্বয়ং আল্লাহর হাতে । কাজেই রসূল (স.) ও মোমেনদের আশ্বস্ত এবং নিশ্চিন্ত থাকা উচিত । ‘ওরা ভীষণ চক্রান্ত করে, আমিও কৌশল অবলম্বন করি।’ অর্থাৎ এই সব নগণ্য সৃষ্টি, যাদেরকে পুরুষের পিঠ ও নারীর বুক থেকে সবেগে ধাবিত পানি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাদের কোনো শক্তি, জ্ঞান, ইচ্ছা ও পথের দিশা ছিলো না, যারা তাদের দীর্ঘ পরিক্রমায় সর্বশক্তিমানের নাগালের মধ্যে ও মুঠোর মধ্যে রয়েছে, যারা একদিন তার কাছে ফিরে যেতে বাধ্য যখন তাদের সকল জারিজুরি ফাস হয়ে যাবে, যখন তাদের কোনো ক্ষমতা এবং কোনোই সাহায্যকারী থাকবে না, তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত………। আর আমি … স্রষ্টা পথ  প্রদর্শক, রক্ষক, নির্দেশক, পুনর্জন্ম দানকারী, পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী, সর্ব শক্তিমান, পরাক্রমশালী, আকাশ ও নক্ষত্রের স্রষ্টা, সবেগে নির্গত পানি তথা বীর্যের স্রষ্টা, সবাক মানুষের স্রষ্টা, বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশ ও উদ্ভিদ উদগাতা পৃথিবীর স্রষ্টা, আমি আল্লাহ ….. আমিও ষড়যন্ত্র করি। একদিকে তাদের ষড়যন্ত্র, একদিকে আমার ষড়যন্ত্র, এটাই হলো যুদ্ধ । আসলে এটা একতরফা যুদ্ধই যদিও নিছক তামাশাচ্ছলে দো’তরফা হিসাবে দেখানো হয়েছে।’অতএব কাফেরদেরকে অবকাশ দাও’ ‘কিছুটা অবকাশ দাও’ অর্থাৎ তাড়াহুড়ো করো না। যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য দ্রুততা কামনা করো না। এ যুদ্ধের প্রকৃতি ও চরিত্র তো দেখেছো । সামান্য একটু সময় দেয়াতেই কল্যাণ। অবশ্য পার্থিব জীবনের পুরোটা কেটে গেলেও তা সামান্যই । আখেরাতের অনন্ত জীবনের সামনে এ আয়ুস্কাল আর কতোই বা? এ আয়াতে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তায়ালা তার রসূল (স.)-এর সাথে একান্ত আপন ভংগিতে কথা বলছেন। ‘কাফেরদেরকে সময় দাও, কিছু সময় তাদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ যেন রসূল (স.)-ই সব কিছুর হর্তাকর্তা । তিনিই যেন অনুমতি দেয়ার মালিক, তিনিই যেন অবকাশ দেয়া বা সময় দেয়ার অনুমতি দিতে পারেন । অথবা অবকাশ দেয়ার মঞ্জুরী দেন। আসলে এ সবের কিছুই রসূল (স.)-এর হাতে নেই। এটা শুধু রসূল (স.)-কে একান্ত আপন করে নেয়া ও তার প্রতি মমত্ত্ব প্রকাশের ভাষা । রসূল(স.) এর মনে দয়া ও মমত্ব্বের সুবাতাস বইয়ে দেয়াই এর উদ্দেশ্য । তার মনের আকাংখা ও আল্লাহর ইচ্ছাকে একীভূত করণের লক্ষ্যেই এ কথা বলা হয়েছে। নিজ ক্ষমতাবলে ও ইচ্ছায় আল্লাহ তায়ালা তার একান্ত নিজস্ব কাজে তাকে এমনভাবে নিয়োজিত করেছেন যেন তার কোনো ক্ষমতা আছে। এভাবে তিনি তার মধ্যে ও আল্লাহ্‌র মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে সাময়িকভাবে তা যেন ঘুচাতে চাইছেন ৷ তিনি যেন বলছেন, তাদের ব্যাপারে তোমাকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এদেরকে একটু অবকাশ দাও। বস্তুত এ হচ্ছে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্বের প্রকাশ! এ দ্বারা তার সকল মনোকষ্ট মুছে দিচ্ছেন । সকল গ্লানি দূর করে দিচ্ছেন। শুধু মাত্র অবশিষ্ট থাকছে তাঁর গভীর প্রীতি ও ভালোবাসা !

# তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

(৮৬-তারিক্ব) : নামকরণ:

প্রথম আয়াতে الطَّارِق শব্দটিকে এর নাম গণ্য করা হয়েছে।

(৮৬-তারিক্ব) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

বক্তব্য বিষয়ের উপস্থাপনা পদ্ধতির দিক দিয়ে মক্কা মুআ’যযমার প্রাথমিক সূরাগুলোর সাথে এর মিল দেখা যায়। কিন্তু মক্কার কাফেররা যখন কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল ঠিক সে সময়ই এ সূরাটি নাযিল হয়।

(৮৬-তারিক্ব) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

সর্বপ্রথম আকাশের তারকাগুলোকে এ মর্মে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হয়েছে যে, এ বিশ্ব-জাহানে কোন একটি জিনিসও নেই যা কোন এক সত্তার রক্ষনাবেক্ষণ ছাড়া নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত ও অস্তিত্বশীল থাকতে পারে। তারপর মানুষের দৃষ্টি তার নিজের সত্ত্বার প্রতি আকৃষ্ট করে বলা হয়েছে, দেখো কিভাবে এক বিন্দু শুক্র থেকে অস্তিত্ব দান করে তাকে একটি জ্বলজ্যান্ত গতিশীল মানুষে পরিণত করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, যে আল্লাহ এভাবে তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি নিশ্চিতভাবেই তাকে দ্বিতীয়বার পয়দা করার ক্ষমতা রাখেন। দুনিয়ায় মানুষের যেসব গোপন কাজ পর্দার আড়ালে থেকে গিয়েছিল সেগুলোর পর্যালোচনা ও হিসেব-নিকেশই হবে এই দ্বিতীয়বার পয়দা করার উদ্দেশ্য। সে সময় নিজের কাজের পরিণাম ভোগ করার হাত থেকে বাঁচার কোন ক্ষমতাই মানুষের থাকবে না এবং তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসতেও পারবে না।

সবশেষে বলা হয়েছে, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং মাটি থেকে গাছপালা ও ফসল উৎপাদন যেমন কোন খেলা তামাসার ব্যাপার নয় বরং একটি দায়িত্বপূর্ণ কাজ, ঠিক তেমনি কুরআনে যেসব প্রকৃত সত্য ও নিগূঢ় তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোও কোন হাসি তামাসার ব্যাপার নয়। বরং সেগুলো একেবারে পাকাপোক্ত ও অপরিবর্তনীয় কথা। কাফেররা এ ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে যে, তাদের চালবাজী ও কৌশল কুরআনের এই দাওয়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। কিন্তু তারা জানে না, আল্লাহও একটি কৌশল অবলম্বন করছেন এবং তাঁর কৌশলের মোকাবিলায় কাফেরদের যাবতীয় চালবাজী ও কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে। তারপর একটি বাক্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা এবং পর্দান্তরালে কাফেরদের ধমক দিয়ে কথা এভাবে শেষ করা হয়েছে: তুমি একটু সবর করো এবং কিছুদিন কাফেরদেরকে ইচ্ছে মতো চলার সুযোগ দাও। কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা টের পেয়ে যাবে, তাদের চালবাজী ও প্রতারণা কুরআনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। বরং যেখানে তারা কুরআনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে কুরআন বিজয়ীর আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-4
টিকা নং:1,

اِنْ كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَیْهَا حَافِظٌؕ

এমন কোন প্রাণ নেই যার ওপর কোন হেফাজতকারী নেই।১

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১) হেফাজতকারী বলতে এখানে আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর ছোট বড় সকল সৃষ্টির দেখাশুনা, তত্ত্বাবধান ও হেফাজত করছেন। তিনিই সব জিনিসকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনিই সবকিছুকে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি সব জিনিসকে ধারণ করেছেন বলেই প্রত্যেকটি জিনিস তার নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত আছে। তিনি সব জিনিসকে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করার এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত বিপদমুক্ত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টির জন্য আকাশের ও রাতের অন্ধকারে আত্মপ্রকাশকারী প্রত্যেকটি গ্রহ ও তারকার কসম খাওয়া হয়েছে। আভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে النَّجْمُ الشَّا قِبُ শব্দ একবচন হলেও এখানে এর মানে কিন্তু একটি তারকা নয় বরং তারকামণ্ডলী। ফলে এখানে এ কসমের অর্থ এ দাঁড়ায়ঃ রাতের আকাশে এই যে অসংখ্য গ্রহ তারকা ঝলমল করতে দেখা যায় এদের প্রত্যেকটির অস্তিত্ব এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করছে যে অবশ্যি কেউ একজন আছেন যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, এগুলোকে আলোকিত করেছেন, এগুলোকে শূন্যে ঝুলিয়ে রেখেছেন এবং এমনভাবে এদেরকে হেফাজত করছেন যার ফলে এরা নিজেদের স্থান থেকে ছিটকে পড়ে না এবং অসংখ্য তারকা একসাথে আবর্তন করার সময় একটি তারকা অন্য তারার সাথে ধাক্কা খায় না বা অন্য কোন তারা তাকে ধাক্কা দেয় না।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-5
টিকা নং:2,

فَلْیَنْظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَؕ

কাজেই মানুষ একবার এটাই দেখে নিক কী জিনিস থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে!২

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:২) ঊর্ধ্বজগতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর এবার মানুষকে তার নিজের সত্ত্বা সম্পর্কে একটু চিন্তা করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। তাকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? কে পিতার দেহ থেকে নির্গত কোটি শুক্রকীটের মধ্য থেকে একটি শুক্রকীট এবং মায়ের গর্ত থেকে নির্গত অসংখ্য ডিম্বের মধ্য থেকে একটি ডিম্ব বাছাই করে দেয় এবং কোন এক সময় তাদের সম্মিলন ঘটায় এবং তারপর এক বিশেষ মানবীর গর্ভ ধারণ সংগঠিত হয়? গর্ভ সঞ্চারের পর কে মায়ের উদরে তার ক্রমবৃদ্ধি ও বিকাশ সাধন করে? তারপর কে তাকে একটি জীবিত শিশুর আকারে জন্মলাভ করার পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেয়? কে মায়ের গর্ভাধারের মধ্যেই তার শরীরিক কাঠামো এবং দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতাসমূহের অনুপাত নির্ধারণ করে দেয়? কে জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনবরত তার তত্ত্বাবধান করে? তাকে রোগ মুক্ত করে। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। নানা প্রকার আপদ-বিপদ থেকে বাঁচায়। তার জন্য বহুতর সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে। তার নিজের এসব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার কোন ক্ষমতাই নেই। এমন কি এগুলো সম্পর্কে কোন চেতনাই তার নেই। এসব কিছুই কি এক মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান ছাড়াই চলছে?

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-7
টিকা নং:3,

یَّخْرُجُ مِنْۢ بَیْنِ الصُّلْبِ وَ التَّرَآئِبِؕ

যা পিঠ ও বুকের হাড়ের মাঝখান দিয়ে বের হয়।৩

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৩) এখানে মূল আয়াতে সুলব طُلْب ও তারায়েব تَرَاءِب শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। طُلْب ‘সুলব’ মেরুদণ্ডকে ও تَرَاءِب তারয়েব বুকের পাঁজরকে বলা হয়। যেহেতু যে উপাদান থেকে পুরুষ ও নারীর জন্ম হয় তা মেরুদণ্ড ও বুকের মধ্যস্থিত ধড় থেকে বের হয়, তাই বলা হয়েছে পিঠ ও বুকের মধ্যস্থল থেকে নির্গত পানি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের হাত পা কর্তিত অবস্থায়ও এ উপাদান জন্ম নেয়। তাই একথা বলা ঠিক নয় যে, সারা শরীর থেকে এ উপাদান বের হয়। আসলে শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোই হচ্ছে এর উৎস। আর এ প্রধান অঙ্গগুলো সব ধড়ের সাথে সংযোজিত। মস্তিষ্কের কথা আলাদা করে না বলার কারণ হচ্ছে এই যে, মেরুদণ্ড মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ যার মাধ্যমে শরীরের সাথে মস্তিষ্কের সম্পর্ক বজায় রয়েছে।*

* মাসিক তরজুমানুল কুরআনে এই ব্যাখ্যটি প্রকশিত হবার পর জনৈক ডাক্তার সাহেব মাওলানা মওদূদীকে (র) লেখেনঃ “আপনার ব্যাখ্যাটি আমি মনোযোগ সহকারে কয়েকবার পড়লাম। কিন্তু আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। কারণ বাস্তব পর্যবেক্ষণে আমরা দেখি, অণ্ডকোষে (Testicles) বীর্যের জন্ম হয়। তারপর সরু সরু নালীর মাধ্যমে বড় বড় নালীর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে তা পেটের দেয়ালের অভ্যন্তরে কোমরে হাড়ের ঠিক বরাবর একটি নালী (Inguinal Cannal) অতিক্রম করে নিকটবর্তী একটি গ্রন্থিতে প্রবেশ করে। এই গ্রন্থিটির নাম Prostate. এরপর সেখান থেকে তরল পদার্থ নিয়ে এর নির্গমন হয়। মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে এর অগ্রসর হবার ব্যাপারটি আমার বোধগম্য হলো না। অবশ্য এর নিয়ন্ত্রণ এমন একটি নার্ভ সিষ্টেমের মাধ্যমে হয় যা মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মাঝখানে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। তাও একটি বিশেষ সীমিত পর্যায়ে। এর নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা আবার মস্তিষ্কের মধ্যস্থিত আর একটি গ্রন্থির তরল পদার্থের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে নির্গমনের (যা একটি নারীর মাধ্যমেই হতে পারে) আমার আবেদন, এর ব্যাখ্যা কি, এটা আপনি বিস্তারিতভাবে লেখেন। আমি আপনাকে বিরক্ত করতে সাহস করলাম এজন্য যে, আপনি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান চর্চায় বিশ্বাস করেন।”

এর জবাবে মাওলানা ১৯৭১ সালের নভেম্বরের তরজুমানুল কুরআন সংখ্যায় পরবর্তী প্যারাটি লেখেনঃ

যদিও শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যাবলী (Functions) আলাদা তবুও কোন অংশ নিজে একাকী কোন কাজ করে না। বরং প্রত্যেকে অন্যের কার্যাবলীর সহায়তায় (Co-oridination) নিজের কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করে। নিঃসন্দেহে বীর্যের জন্ম হয় পুরুষাঙ্গে এবং সেখান থেকে তা বের হয়েও আসে একটা বিশেষ পথ দিয়ে। কিন্তু পাকস্থলী, কলিজা, ফুসফুস, কিডনী, লিভার ও মস্তিষ্ক প্রত্যেকে স্বস্থানে নিজের কাজটি না করলে বীর্য জন্মাবার ও নির্গত হবার এ ব্যবস্থাটি কি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের কাজ করতে সক্ষম? অনুরূপভাবে দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন, কিডনীতে পেশাব তৈরি হয় এবং একটি নালীর সাহায্যে মূত্রাশয়ে পৌঁছে পেশাব নির্গত হবার পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু কিভাবে কোন্ কার্যক্রমের ফলে? রক্ত প্রস্তুতকারী ও তাকে সমগ্র দেহে আবর্তিত করে কিডনী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্বে যেসব অঙ্গ নিয়োজিত তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কি কিডনী একাই রক্ত থেকে পেশাবের উপাদানগুলো আলাদাকরে সেগুলোকে এক সাথে পেশাবের নালী দিয়ে বাইরে বের করে দিতে সক্ষম হবে? তাই কুরআন মজীদে বলা হয়নি যে, এ উপাদানগুলো মেরুদণ্ড ও পাঁজরের ( بِيْنَ الطُّلْبِ والتَّرَاءَب ) হাড় থেকে নির্গত হয় বরং বলা হয়েছে, “ঐ দু’টোর মধ্যখানে শরীরের যে অংশটি রয়েছে সেখান থেকে এ উপাদান গুলো নির্গত হয়।” এতে একথা অস্বীকার করা হয়নি যে বীর্য তৈরি হবার ও তার নির্গমনের একটি বিশেষ কর্মপ্রণালী (Mechanism) রয়েছে, শরীরের বিশেষ কিছু অংশ এ কাজে নিয়োজিত থাকে। বরং এ থেকে একথা প্রকাশ হয় যে, এ কর্মপ্রণালী স্বতঃপ্রবৃত্ত নয়। মহান আল্লাহ মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলে যেসব অঙ্গ সংস্থাপন করেছেন তাদের সমগ্র কর্মের সহায়তায় এ কাজটি সম্পাদিত হয়। এজন্য আমি আগেই বলেছি যে, সমগ্র শরীর এ কাজে অংশ নেয়নি। কেননা হাত-পা কর্তিত অবস্থায়ও এ ব্যবস্থাকে কর্মরত দেখা যায়। তবে মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলে যেসব বড় বড় অঙ্গ রয়েছে তাদের কোন একটিও যদি না থাকে তাহলে এ কর্মপ্রণালী অচল বলা যেতে পারে। “ভ্রুণতত্ত্বের (Embryology) দৃষ্টিতে এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, ভ্রূণের মধ্যে (Foetus) যে অণ্ডকোষে (Testicle) বীর্যের জন্ম হয় তা মেরুদণ্ড ও বক্ষ পাঁজরের মধ্যস্থলে কিডনীর নিকটেই অবস্থান করে এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে পুরুষাঙ্গে নেমে আসে। এ কার্য ধারা সংঘটিত হয় জন্মের পূর্বে আবার অনেক ক্ষেত্রে তার কিছু পরে। কিন্তু তবুও তার স্নায়ু ও শিরাগুলোর উৎস সবসময় সেখানেই (মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলে) থাকে। বরং পিঠের নিকটবর্তী মহাধমনী (Artery) থেকে শিরাগুলো (Aorta) বের হয় এবং পেটের সমগ্র অঞ্চল সফর করে সেখানে রক্ত সরবরাহ করে। এভাবে দেখা যায় অণ্ডকোষ আসলে পিঠের একটি অংশ। কিন্তু শরীরের অতিরিক্ত উষ্ণতা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকার কারণে তাকে পুরুষাঙ্গে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। উপরন্ত যদিও অণ্ডকোষ বীর্য উৎপাদন করে এবং তা মৌলিক কোষে (Seminal Vesicles) জমা থাকে তবুও মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলই হয় তাকে বের করার কেন্দ্রীয় সঞ্চালন শক্তি। মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ুবিক প্রবাহ এ কেন্দ্রে পৌঁছার পর কেন্দ্রের সঞ্চালনে (Trigger Action) মৌলিক কোষ সংকুচিত হয়। এর ফলে তরল শুক্র ( بِيْنَ الطُّلِبِ والتَّرَاءَب ) পিচকারীর ন্যায় প্রবল বেগে বের হয়। এজন্য কুরআনের বক্তব্য চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান লব্ধ জ্ঞানের সাথ সামঞ্জস্যশীল।”

মাওলানার এই জবাবটি প্রকাশিত হবার পর দু’জন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ দু’টি বিভিন্ন স্থান থেকে মাওলানার বক্তব্য সমর্থন করে যে তথ্য সরবরাহ করেন তা সর্বশেষ প্যারায় সন্নিবেশিত হয়েছে। —অনুবাদক

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-8
টিকা নং:4,

اِنَّهٗ عَلٰى رَجْعِهٖ لَقَادِرٌؕ

নিশ্চিতভাবেই তিনি (স্রষ্টা) তাকে দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন।৪

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৪) অর্থাৎ যেভাবে তিনি মানুষকে অস্তিত্ব দান করেন এবং গর্ভ সঞ্চারের পর থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত তার দেখাশুনা করেন তা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করে যে, তিনি মৃত্যুর পর আবার তাকে অস্তিত্বশীল করতে পারেন। যদি তিনি প্রথমটির ক্ষমতা রেখে থাকেন এবং তারই বদৌলতে মানুষ দুনিয়ায় জীবন ধারণ করছে, তাহলে তিনি দ্বিতীয়টির ক্ষমতা রাখেন না, এ ধারণা পোষণ করার পেছনে এমন কি শক্তিশালী যুক্তি পেশ করা যেতে পারে? আল্লাহর এই শক্তিকে অস্বীকার করতে হলে আল্লাহ যে তাকে অস্তিত্বদান করেছেন সরাসরি একথাটিই অস্বীকার করতে হবে। আর যে ব্যক্তি একথা অস্বীকার করবে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি একদিন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় যার ফলে সে দাবী করে বসবে, এ দুনিয়ায় সমস্ত বইপত্র একদিন ঘটনাক্রমে ছাপা হয়ে গেছে, দুনিয়ার সমস্ত শহর একদিন হঠাৎ ঘটনাক্রমে তৈরি হয়ে গেছে এবং এই দুনিয়ায় হঠাৎ একদিন এমন এক ঘটনা ঘটে গেছে যার ফলে সমস্ত কলকারখানা আপনা আপনি নির্মিত হয়ে তাতে উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। আসলে মানুষ দুনিয়ায় যেসব কাজ করেছে ও করছে তার তুলনায় তার সৃষ্টি ও তার শারীরিক গঠনাকৃতি এবং তার মধ্যে কর্মরত শক্তি যোগ্যতাসমূহের সৃষ্টি এবং একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে তার টিকে থাকা অনেক বেশী জটিল কাজ। এত বড় জটিল কাজ যদি এ ধরণের জ্ঞানবত্তা, উন্নত কলাকৌশল, আনুপাতিক ও পর্যাক্রমিক কার্যক্রম এবং সাংগঠনিক শৃংখলা সহকারে হঠাৎ ঘটনাক্রমে ঘটে যেতে পারে, তাহলে দুনিয়ায় আর কোন্ কাজটি আছে যাকে মস্তিস্ক বিকৃতি রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কাজ বলবে না?

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-9
টিকা নং:5,

یَوْمَ تُبْلَى السَّرَآئِرُۙ

যেদিন গোপন রহস্যের যাচাই বাছাই হবে,৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৫) গোপন রহস্য বলতে এখানে প্রত্যেক ব্যক্তির এমনসব কাজ বুঝানো হয়েছে যেগুলো রহস্যাবৃত্ত রয়ে গেছে আবার এমন সব কাজও বুঝানো হয়েছে, যেগুলো বাহ্যিক আকৃতিতে জন সমক্ষে এসে গেছে কিন্তু সেগুলোর পেছনে সক্রিয় নিয়ত, উদ্দেশ্য স্বার্থ ও আশা-আকাঙ্খা এবং সেগুলোর গোপন কার্যকারণ লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে গেছে। কিয়ামতের দিন এসব কিছু উন্মুক্ত হয়ে সামনে এসে যাবে। সেদিন কেবলমাত্র কে কি করেছে এর তদন্ত ও হিসেব-নিকেশ হবে না বরং কি কারণে, কি উদ্দেশ্য, কি নিয়তে ও কোন মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করেছিল তারও হিসেব হবে। অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি যে কাজটি করেছে দুনিয়ায় তার কি প্রভাব পড়েছে, কোথায় তার প্রভাব পৌঁছেছে এবং কতদিন পর্যন্ত এ প্রভাব অব্যাহত থেকেছে— তাও সারা দুনিয়ার চোখ থেকে গোপন থেকেছে, এমনকি যে ব্যক্তি এ কাজটি করেছে তার চোখ থেকেও। আর একটি রহস্যও শুধুমাত্র কিয়ামতের দিনেই উন্মুক্ত হবে এবং সেদিন এর পুরোপুরি তদন্ত ও হিসেব-নিকেশ হবে। সেটি হচ্ছে, এক ব্যক্তি দুনিয়ায় যে বীজ বপন করে গিয়েছিল তার ফসল কতখানি পর্যন্ত কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে সে এবং তার সাথে আর কে কে কাটতে থেকেছে?

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-11
টিকা নং:6,

وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الرَّجْعِۙ

কসম বৃষ্টি বর্ষণকারী আকাশের৬

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৬) আকাশের জন্য ذَاتِ الرَّجْعِ (বৃষ্টি বষর্ণকারী) বিশেষণটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘রজুআ’ (رجع) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ফিরে আসা। তবে পরোক্ষভাবে আরবী ভাষায় এ শব্দটি বৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। কারণ বৃষ্টি মাত্র একবার বর্ষিত হয়েই খতম হয়ে যায় না বরং একই মওসূমে বারবার এবং কখনো মওসূম ছাড়াই একাধিকবার ফিরে আসে এবং যখন তখন বর্ষিত হয়। বৃষ্টিকে প্রত্যাবর্তনকারী বলার আর একটি কারণ হচ্ছে এই যে, পৃথিবীর সমুদ্রগুলো থেকে পানি বাষ্পের আকারে উঠে যায়। আবার এই বাষ্পই পানির আকারে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-14
টিকা নং:7,

وَّ مَا هُوَ بِالْهَزْلِؕ

এবং তা হাসি-ঠাট্টার কথা নয়। ৭

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৭) অর্থাৎ যেমন আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং তার ফলে মাটি চিরে উদ্ভিদের অংকুর গজিয়ে ওঠা কোন হাসি-ঠাট্টার ব্যাপার নয় বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নিরেট সত্য, ঠিক তেমনি কুরআন মানুষকে আবার তার আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে এই মর্মে যে বিষয়টির খবর দিচ্ছে, সেটিও কোন হাসি-ঠাট্টার ব্যাপার নয়। বরং সেটি একটি চূড়ান্ত ও মীমাংসাকারী কথা, একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিবর্তনীয় নিরেট সত্য। সেটি পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েই ক্ষান্ত হবে।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-15
টিকা নং:8,

اِنَّهُمْ یَكِیْدُوْنَ كَیْدًاۙ

নিশ্চয়ই এরা কিছু চক্রান্ত করছে৮

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৮) অর্থাৎ কাফেররা কুরআনের দাওয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য নানা ধরণের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। তারা ফুঁক দিয়ে এ প্রদীপটি নিভিয়ে দিতে চাচ্ছে। মানুষের মনে সব রকমের সন্দেহের জাল বুনে দিচ্ছে। একের পর এক মিথ্যা দোষারোপ করে যাচ্ছে কুরআনের দাওয়াত পেশকারী নবীর বিরুদ্ধে। এভাবে দুনিয়ায় যাতে তাঁর কথা বিস্তার লাভ করতে না পারে এবং তিনি যে কুফরী ও জাহেলিয়াতের আঁধার দূর করতে চান তা যাতে চারদিক আচ্ছন্ন করে রাখে সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-16
টিকা নং:9,

وَّ اَكِیْدُ كَیْدًاۚۖ

এবং আমিও একটি কৌশল করছি। ৯

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৯) অর্থাৎ এদের কোন অপকৌশল লাভে কামিয়াব না হয় এবং অবশেষে এরা ব্যর্থ হয়ে যায় আর এই সঙ্গে যে আলোর শিখাটিকে নিভিয়ে দেবার জন্য এরা সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটি যাতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য আমি ব্যবস্থা অবলম্বন করছি।

সুরা: আত-তারিক্ব
আয়াত নং :-17
টিকা নং:10,

فَمَهِّلِ الْكٰفِرِیْنَ اَمْهِلْهُمْ رُوَیْدًا۠

কাজেই ছেড়ে দাও, হে নবী! এ কাফেরদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও।১০

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১০) অর্থাৎ এদেরকে ছেড়ে দাও কিছুক্ষণের জন্য। এরা যা কিছু করতে চায় তা করে দেখুক। বেশী সময় যাবে না, এর ফলাফল এদের সামনে এসে যাবে। তখন আমি যে ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলাম তার মোকাবিলায় এদের অপকৌশল কতটুকু সাফল্যের মুখ দেখেছে তা এরা বুঝতে পারবে।

Leave a Reply