Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২০১/হে মানুষ:-১১/এবং কফেরর-রা বলে:-৪২)
[# দাওয়াত পৌছে দেয়াটাই শুধু সবার কর্তব্য। :-
#তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফরী করলে,:-
# এদের হিসেব নেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। :-]
www.motaher21.net
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ
পারা:৩০
১-২৬ নং আয়াতের বেখ্যা :-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১
ہَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡغَاشِیَۃِ ؕ﴿۱﴾
তোমার কাছে কি সমাচ্ছন্নকারী (কিয়ামতে)র সংবাদ এসেছে?
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২
وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ خَاشِعَۃٌ ۙ﴿۲﴾
কিছু চেহারা সেদিন হবে ভীত কাতর,
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৩
عَامِلَۃٌ نَّاصِبَۃٌ ۙ﴿۳﴾
কঠোর পরিশ্রমরত, ক্লান্ত- পরিশ্রান্ত।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৪
تَصۡلٰی نَارًا حَامِیَۃً ۙ﴿۴﴾
জ্বলন্ত আগুনে ঝলসে যেতে থাকবে।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৫
تُسۡقٰی مِنۡ عَیۡنٍ اٰنِیَۃٍ ؕ﴿۵﴾
ফুটন্ত ঝরণার পানি তাদেরকে দেয়া হবে পান করার জন্য।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৬
لَیۡسَ لَہُمۡ طَعَامٌ اِلَّا مِنۡ ضَرِیۡعٍ ۙ﴿۶﴾
তাদের জন্য বিষাক্ত কণ্টক ব্যতীত কোন খাদ্য নেই।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৭
لَّا یُسۡمِنُ وَ لَا یُغۡنِیۡ مِنۡ جُوۡعٍ ؕ﴿۷﴾
যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করবে না।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৮
وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاعِمَۃٌ ۙ﴿۸﴾
(পক্ষান্তরে) বহু মুখমন্ডল হবে সেদিন আনন্দোজ্জ্বল।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-৯
لِّسَعۡیِہَا رَاضِیَۃٌ ۙ﴿۹﴾
নিজেদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্ত,
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১০
فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ ﴿ۙ۱۰﴾
উচ্চ মর্যাদার জান্নাতে অবস্থান করবে।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১১
لَّا تَسۡمَعُ فِیۡہَا لَاغِیَۃً ﴿ؕ۱۱﴾
সেখানে কোন বাজে কথা শুনবে না।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১২
فِیۡہَا عَیۡنٌ جَارِیَۃٌ ﴿ۘ۱۲﴾
সেখানে আছে প্রবহমান ঝরনা।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৩
فِیۡہَا سُرُرٌ مَّرۡفُوۡعَۃٌ ﴿ۙ۱۳﴾
সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ,
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৪
وَّ اَکۡوَابٌ مَّوۡضُوۡعَۃٌ ﴿ۙ۱۴﴾
আর পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত থাকবে।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৫
وَّ نَمَارِقُ مَصۡفُوۡفَۃٌ ﴿ۙ۱۵﴾
সারি সারি বালিশ সাজানো থাকবে ।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৬
وَّ زَرَابِیُّ مَبۡثُوۡثَۃٌ ﴿ؕ۱۶﴾
এবং উৎকৃষ্ট বিছানা পাতা থাকবে।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৭
اَفَلَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَی الۡاِبِلِ کَیۡفَ خُلِقَتۡ ﴿ٝ۱۷﴾
তবে কি তারা উটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৮
وَ اِلَی السَّمَآءِ کَیۡفَ رُفِعَتۡ ﴿ٝ۱۸﴾
এবং আসমানের দিকে, কিভাবে তা উর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে?
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-১৯
وَ اِلَی الۡجِبَالِ کَیۡفَ نُصِبَتۡ ﴿ٝ۱۹﴾
এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে?
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২০
وَ اِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ﴿ٝ۲۰﴾
আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে?
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২১
فَذَکِّرۡ ۟ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُذَکِّرٌ ﴿ؕ۲۱﴾
বেশ তাহলে তুমি উপদেশ দিয়ে যেতে থাকো। তুমি তো শুধু মাত্র একজন উপদেশ দাতা।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২২
لَسۡتَ عَلَیۡہِمۡ بِمُصَۜیۡطِرٍ ﴿ۙ۲۲﴾
আপনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগকারী নন।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২৩
اِلَّا مَنۡ تَوَلّٰی وَ کَفَرَ ﴿ۙ۲۳﴾
তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফরী করলে,
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২৪
فَیُعَذِّبُہُ اللّٰہُ الۡعَذَابَ الۡاَکۡبَرَ ﴿ؕ۲۴﴾
আল্লাহ তাকে কঠোর দন্ডে দন্ডিত করবেন।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২৫
اِنَّ اِلَیۡنَاۤ اِیَابَہُمۡ ﴿ۙ۲۵﴾
অবশ্যি এদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।
সুরা: ৮৮ : আল্ -গাশিয়াহ:-২৬
ثُمَّ اِنَّ عَلَیۡنَا حِسَابَہُمۡ ﴿٪۲۶﴾
তারপর এদের হিসেব নেয়া হবে আমারই দায়িত্ব।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
* ভূমিকা:৮৮
ফী জিলালিল কুরআন:
সংক্ষিপ্ত আলোচনা :এ সূরাটি অত্যন্ত গভীর ও প্রশান্ত ভাবের উদ্দীপক কতিপয় সুললিত ছন্দায়িত বাণীর সমষ্টি, যা মানুষকে চিন্তা-ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে, একই সাথে মনে আশা ও শংকার উদ্রেক করে এবং আখেরাতের হিসাব-নিকাশের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ সূরা মানুষের মনকে দুটো ভয়াবহ ময়দানে নিয়ে যায়। একটা হলো আখেরাত, তার বিশাল জগত এবং তার মর্মস্পর্শী দৃশ্যাবলী। অপরটি হলো, দৃশ্যমান সৃষ্টিজগতের সুবিশাল ময়দান, তার বিভিন্ন সৃষ্টির ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর নিদর্শনাবলী । এরপর আখেরাতের হিসাব নিকাশের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সেই সাথে, আল্লাহর নিরংকুশ আধিপত্য এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তার কাছে ফিরে যাওয়ার অনিবার্য বাধ্যবাধকতাও স্পষ্ট করে তুলে ধরে। এই সমস্ত তত্ত্ব ও তথ্য অত্যন্ত প্রভাবশালী, ভাবগষ্টীর কিছু কার্যকর ভংগিতে ব্যক্ত করা হয়েছে, প্রশান্ত কিন্তু শুরুগম্ভীর ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। ‘তোমার কাছে সেই আচ্ছন্নকারী মহাদুর্যোগের বার্তা পৌছেছে কি? ‘ সূরাটি এরূপ ভাষায় শুরু হয়েছে এ জন্য যে, এ দ্বারা মানুষের মনকে যেন আল্লাহর দিকে ফেরানো যায় এবং বিশ্ব নিখিলে দৃশ্যমান তাঁর নিদর্শনাবলী, আখেরাতে তাঁর হিসাব গ্রহণ ও সুনিশ্চিত প্রতিফল প্রদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যায়। সূরার শুরুতে একটা জিজ্ঞাসাবোধক পদও রয়েছে। এই জিজ্ঞাসা আসলে ইতিবাচক বক্তব্য দেয়া ও তার গুরুত্ব উপলব্ধি করানোর জন্যই । এ দ্বারা এই মর্মে সূক্ষ্ম ইংগিতও করা হচ্ছে যে, আখেরাতের ব্যাপারে সাদামাটাভাবে ইতিবাচক বক্তব্য দেয়া ও স্মৃতিচারণ করা ইতিপূর্বে বহুবার হয়েছে। এখানে কেয়ামতের একটা নতুন নামও দেয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে ‘আল্ গাশিয়া’। অর্থাৎ সেই মহাবিপদ, যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং তার ভয়ংকর মূর্তি ও বিভীষিকাময় দৃশ্য মানুষের হৃদয় মনকে হতবুদ্ধি করে ফেলবে। আমপারায় কেয়ামতের আরো কয়েকটি নাম এসেছে। যথা ‘আত্ তা’ম্মা’, ‘আস্সা’খ্খাহ’, ‘আল গাশিয়া’ ও ‘আল কারিয়াহ’। এগুলো সবই এই পারার বক্তব্যের গতিপ্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷
১-৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
ফী জিলালিল কুরআন:
যেহেতু আল্লাহর সম্বোধন সম্পর্কে রসূল (স.)-এর মন অত্যন্ত তীব্র অনুভূতিসম্পন্ন ছিলো, সম্বোধনের তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য তা প্রস্তুতও ছিলো এবং সম্বোধন শোনামাত্র তিনি উপলব্ধি করতেন যে, তা সরাসরি তাকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে, তাই এই সূরা শোনার পর তিনি তৎক্ষণাত বুঝতে পেরেছিলেন যে, ‘তোমার কাছে কি পৌছেছে? ‘ এ সম্বোধনটাও ব্যক্তিগতভাবে তাকেই করা হয়েছে। ইবনে আবি হাতেম বলেন যে, আমাকে আলী বিন মোহাম্মদ তানাফুসী আবু বকর ইবনে আব্বাস থেকে, তিনি আবু ইসহাক থেকে এবং তিনি আমর ইবনে মাইমুন থেকে জানিয়েছেন যে, রসূল (স.) জনৈকা মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন । তখন এ মহিলা পড়ছিলো ‘হাল আতাকা……….. ‘ অর্থাৎ তোমার কাছে আচ্ছন্নকারী মহাদুর্যোগের খবর পৌছেছে কি?’ রসূল (স.) দাড়িয়ে তা শুনলেন এবং বললেন, ‘হা, আমার কাছে এ খবর পৌছেছে ।” এতদসত্ত্বেও এ সম্বোধন প্রত্যেক শ্রোতার প্রতিই উচ্চারিত ৷ ‘গাশিয়া’ তথা কেয়ামতের বিবরণ কোরআনের একটি বহুল আলোচিত বিষয় । এ দ্বারা সতর্কীকিরণ, ভীতি প্রদর্শন ও স্মরণ করানোর ৷ কাজ সমাধা করা হয়। এ দ্বারা মানুষের বিবেক জাগ্রত ও খোদাভীতি উদ্দীপিত করা হয়৷ এ দ্বারা মানুষের মনে আশা ও অপেক্ষমানতার সৃষ্টি করা হয়। এভাবে বিবেক সজীব হয়, নির্জীব ও উদাসীন হয় না। জাহান্নামের চিত্র : এরপর কেয়ামতের কিছু বিবরণ দেয়া হচ্ছে। ‘সেদিন অনেকের মুখমন্ডল হবে ভীতসন্ত্রস্ত, কঠোর শ্রমে বিব্রত, শ্রান্ত, ক্লান্ত, তীব্র আগুনে দগ্ধ । তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত ঝর্ণার পানি। কাটাযুক্ত শুকনো ঘাস ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো খাদ্য থাকবে না। সেই কাটাযুক্ত ঘাস পুষ্টি সাধনও করবে না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত করবে না ।’ এখানে বেহেশতের নেয়ামতের বিবরণ দেয়ার আগে আযাবের বিবরণ দেয়া হয়েছে। কেননা ‘আচ্ছন্নকারী মহাদুর্যোগ ‘ রূপী কেয়ামতের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে এর ঘনিষ্টতম সাদৃশ্য বিরাজমান ৷ কারণ, কেয়ামতের ময়দানে বহু মুখমন্ডল ভীতসন্ত্রস্ত ও শ্রান্ত ক্লান্ত থাকবে। অনেকে অনেক আমলও থাকবে কিন্তু শেরেক অথবা আমল বিনষ্টকারী কোনো পাপের কারণে তা আল্লাহর কাছে প্রশংসনীয় হবে না, তার পরিণামও সন্তোষজনক হবে না, ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় ছাড়া তার ভাগ্যে আর কিছু জুটবে না। কেবল তার মনোকষ্ট, ক্লান্তি ও অবসাদই বাড়বে। কেননা, সে যা কিছু শ্রম করেছে, আল্লাহর সমুষ্টির উদ্দেশ্যে নয় বরং অন্যান্য স্বার্থ অর্জনের জন্য করেছে। সে যে কষ্ট করেছে, তা আল্লাহর বরং সমাজ রক্ষা স্বার্থ উদ্ধার বা অন্য কোনো করেছে। যা কিছু পরিশ্রম করেছে, নিজের জন্য, নিজের সন্তানদের জন্য, দুনিয়ার জন্য এবং দুনিয়ার লোভের খাতিরে করেছে। অতপর এই শ্রমের ফল পেয়েছে। পৃথিবীতে পেয়েছে বঞ্চনা ও হতাশা । আর আখেরাতে পেয়েছে আযাব । চরম লাঞ্চনা, ব্যর্থতা ও হতাশার সাথে সে তার চূড়ান্ত পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে। আর এই লাঞ্চনা, গঞ্জনা, আযাব ও কষ্টের সাথে সাথে সাথে ‘জ্বলন্ত আগুনে দগ্ধ হতে হবে ।’ ‘উত্তপ্ত ঝর্ণার পানি তাকে পান করানো হবে ।’ অর্থাৎ চরম উত্তপ্ত ও উষ্ণ পানি। ‘শুষ্ক কাটাযুক্ত ঘাস ছাড়া তাদের আর কোনো খাদ্য থাকবে না ।’ ‘দারী’ অর্থ কারো কারো মতে দোযখের একরকম গাছ জাহান্নামের গহবরে ‘যাক্কুম’ নামক এক প্রকার গাছ জন্মাবে বলে কোরআনে যে কথা বলা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই এই মত ব্যক্ত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, পৃথিবীতে উদগত এক ধরনের কাটাযুক্ত গাছ। এ গাছ কাচা অবস্থায় উটের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তখন এর নাম হয় ‘শাব্বাক’। যখন এর ফল পাকে, তখন এর নাম হয় ‘দারী ‘ এ সময় এ গাছ বিষাক্ত হয়ে যায়! তাই উট তা খেতে পারে না। সুতরাং উল্লেখিত দুটি ব্যাখ্যার যেটিই সঠিক হোক, ‘গিসলীন’ ও ‘গাসসাকের’ মতো এটিও দোযখের এক ধরনের খাদ্য । এটি সেই সব রকমারি খাদ্যের একটি, যা পুষ্টও করে না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত করে না। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুনিয়ায় বসে আমরা আখেরাতের এই আযাবের প্রকৃতি কি রকম, তা বুঝতে পারবো না। এসব গুণের বর্ণনা দেয়ার উদ্দেশ্য এই যে, আমাদের মানবীয় অনুভূতিতে যন্ত্রণার যে সর্বোচ্চ পরিমাণ কল্পনা করার অবকাশ রয়েছে, তা যেন কল্পনা করতে সক্ষম হই। এই যন্ত্রণা অপমান, লাঞ্চনা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা, হতাশা, আগুনের দহন, প্রচন্ড উত্তপ্ত পানি দ্বারা পিপাসা নিবৃত্তি ও আগুনের দহন জ্বালা পোড়ানোর চেষ্টা এবং পুষ্টও করে না ক্ষুধাও নিবৃত্ত করে না এমন খাদ্য খাওয়া এই সব কিছুর সমাবেশ । এই সব কয়টি যন্ত্রণার একত্র সমাবেশে আমাদের চিন্তায় সর্বোচ্চ পরিমাণ যন্ত্রণার ধারণা পাওয়া সম্ভব। কেয়ামতের এই আযাবের পর আখেরাতের আযাব এর চেয়েও কঠিন সে আযাবের প্রকৃতি একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা তা থেকে আমাদের পানাহ দিন। আমীন!
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং ৮-১৬ আয়াতের ব্যাখ্যা:-
ফী জিলালিল কুরআন:
বেহেশতের বর্ণনা : অপরদিকে ‘সেদিন অনেকের মুখমন্ডল হবে উৎফুল্ল ও উজ্জ্বল ৷ নিজের চেষ্টা-সাধনার জন্য তারা সন্তুষ্ট হবে৷ উন্নত ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বেহেশতে থাকবে, কোনো বাজে কথা সেখানে শুনবে না। সেখানে ঝর্ণাধারা প্রবহমান থাকবে, তাতে উচ্চ আসনসমূহ থাকবে, পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত থাকবে, হেলান দেয়ার বালিশসমহু সারিবদ্ধ থাকবে এবং মুল্যবান সুকোমল বিছানা পাতা থাকবে ।’ এর অর্থ দাড়াচ্ছে এই যে, সেখানে কিছু লোকের মুখমন্ডলে প্রাচুর্য ও আনন্দের লক্ষণ পরিস্ফুট হবে, সন্তোষ ও তৃপ্তির আলামত ফুটে উঠবে। সেই সব মুখমন্ডল আপন প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট হবে, আপন কৃতকর্মের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে৷ কেননা তারা তাদের কল্যাণময় ফল ভোগ করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে তারা নিজেদের আমলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট দেখে পরম আত্মিক তৃপ্তি উপভোগ করবে। সৎ ও কল্যাণকর কাজের প্রতি নিজে পরিপূর্ণ তৃপ্তি ও আস্থা বোধ করা, তার সুফল ভোগ করা, অতপর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেয়ামতের মধ্য দিয়ে তার ফলাফল বাস্তবে প্রত্যক্ষ করার মতো মনের তৃপ্তিদায়ক অবস্থা আর কিছু হতে পারে না। এ কারণেই কোরআন সৌভাগ্যের এই দিকটিকে-বেহেশতে যে ভোগের প্রাচুর্য ও পরিতৃপ্তির বাবস্থা রয়েছে-তার আগে উল্লেখ করেছে। এরপর বেহেশত ও তাতে সৌভাগ্যবানদের জন্যে যে নেয়ামতসমূহ নির্ধারিত রয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছে, ‘তারা উচ্চ বেহেশতে থাকবে ।’ অর্থাৎ তা অবস্থানগতভাবেও উচ্চ, মান মর্যাদায়ও উচ্চ ও উৎকৃষ্ট । আর উচ্চতার ধারণা মানুষের অনুভুতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে । ‘সেখানে তারা কোনো বাজে কথা শুনবে না ।’ এ বক্তব্য দ্বারা এক ধরনের শান্ত, নিরিবিলি, নিরাপদ, তৃপ্তিকর, শান্তিদায়ক, প্রীতিময়, সন্তোষে পরিপূর্ণ, ক্লেদমুক্ত, ঝামেলা মুক্ত- ও বন্ধুদের নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট বিনোদনের একান্ত পরিবেশের ছবি ফুটে ওঠে ৷ সব রকমের বাজে কথা, অশুভ কথা থেকে সে পরিবেশ মুক্ত। এটাই একমাত্র নেয়ামত, এটাই একমাত্র সুখ ও সৌভাগ্য ৷ ইহকালীন জীবন ও তার আজে বাজে কথা, ঝগড়াঝাটি, হট্টগোল, ভিড়, সংঘর্ষ, চিৎকার,শোরগোল, গোলযোগ, অরাজকতা ইত্যাদি যখন কল্পনা করা হয়, তখন তার পাশাপাশি এই অনাবিল শান্তির প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়। যে নির্ঝঞ্ঝাট প্রশান্তি, স্থায়ী নিরাপত্তা, সন্তোষে পরিপূর্ণ প্রীতি ভালোবাসা এবং বন্ধু পরিবেষ্টিত ছায়া সুশীতল পরিবেশের একটি চিত্র উল্লেখিত আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে অর্থাৎ ‘সেখানে তারা কোনো বাজে কথা শুনবে না’, তা দুনিয়ার অশান্ত পরিবেশের সাথে তুলনা না করলেও উপলব্ধি করা যায়। স্বয়ং এ আয়াতের শব্দগুলোই আত্মার ও দুনিয়ার নিরানন্দ পরিবেশে শান্তির বাতাস বইয়ে দেয় এবং কোমলতা ও মসৃণতার মধ্য দিয়ে তা প্রবহমান থাকে । প্রবহমান থাকে কোমল সুললিত বাজনার সুরের মতো । এ বাক্যটির মর্ম থেকে এ কথা প্রতিভাত হয় যে, পৃথিবীতে দ্বন্দ সংঘাতমুক্ত মোমেনদের জীবন বেহেশতী জীবনেরই একটি অংশ । দুনিয়ায় এরূপ দ্বন্দ্ব সংঘাতমুক্ত জীবন-যাপন করে তারা আসলে বেহেশতের সেই নেয়ামতসমৃদ্ধ জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। এভাবে আল্লাহ্ তায়ালা বেহেশতের গুণাবলী থেকে এই মহৎ, মর্যাদাপূর্ণ ও উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরছেন অর্থাৎ সেখানে কোনো বাজে কথা শুনতে হবে না। এরপর আসছে ইন্দ্রিয়ানুভূতিকে তৃপ্তি দিতে সক্ষম নেয়ামতসমূহের বিবরণ। আর এ বিবরণ আসছে এমন ভাষায়, যা দুনিয়ার মানুষ হৃদয়ংগম করতে সক্ষম । অথচ বেহেশত তো বেহেশতবাসীর উন্নত মনমানসিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যার প্রকৃত রূপ ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সেই বিবরণের প্রথম কথা হলো, ‘সেখানে বহমান ঝর্ণা রয়েছে ।’ বহমান ঝর্ণা বলতে বুঝানো হয়েছে উত্তাল পানির স্রোতবাহী নদী বা খাল । এতে সেচের সাথে বাড়তি রয়েছে প্রবাহ, উচ্ছলতা ও চলমানতার যোগ । প্রবহমান পানি চেতনা ও অনুভূতিতে প্রাণপ্রবাহ ও উচ্ছল আত্মার জোয়ার আনে । চেতনার অতলান্ত গভীরে প্রবিষ্ট এই গোপন দৃষ্টিকোণ থেকে এটি উপভোগ্য বস্তু বটে । ‘সেখানে রয়েছে উচ্চ আসনসমূহ ।’ এই উচ্চতা দ্বারা পবিত্রতার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাও বুঝায় । ‘পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত হবে ‘ অর্থাৎ সারিবদ্ধভাবে পানের জন্য প্রস্তুত থাকবে, চাওয়ারও প্রয়োজন হবে না, প্রস্তুত করারও প্রয়োজন হবে না। ‘হেলান দেয়ার বালিশসমূহ সারিবদ্ধ থাকবে ।’ ‘নামারেক’ শব্দের অর্থ আরামে হেলান দেয়ার মতো বালিশ বা গদি ৷ মূল্যবান কোমল বিছানা পাতা থাকবে । ‘যারাবী’ অর্থ মখমলের বিছানা ৷ ‘কার্পেটসমূহ’ এখানে সেখানে পাতা থাকবে, তা যেমন আরামদায়ক হবে, তেমনি হবে নয়নাভিরাম । উল্লেখিত সবকটি জিনিসই এমন নেয়ামত, যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অনেক কিছুই মানুষ পৃথিবীতে দেখতে পায়। এ সব সাদৃশ্যময় জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে করে তা মানুষের উপলব্ধি ক্ষমতার আওতাধীন আসে। তবে সেগুলোর প্রকৃতি এবং বেহেশতের আসবাবপত্রের প্রকৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করবে সেখানকার অধিবাসীদের অভিরুচির ওপর । যে সৌভাগ্যশালী বেহেশতবাসীকে আল্লাহ তায়ালা এই অভিরুচি দান করবেন, তাদের ওপর । আখেরাতের আযাব ও নেয়ামতের প্রকৃতি আসলে কেমন হবে, তা নিয়ে সূক্ষ্ম মূল্যায়ন বা গবেষণায় প্রবৃত্ত হওয়া নিরর্থক ৷ কেননা, কোনো জিনিসের প্রকৃতি উপলব্ধি করা নির্ভর করে উপলব্ধির ক্ষমতা ও সামর্থক জিনিসটা কি ধরনের, তা জানা ও বুঝার ওপর । পৃথিবীবাসী যে চেতনা ও অনুভূতি দ্বারা কোনো কিছুকে উপলব্ধি করে, সে অনুভুতি এ পৃথিবীর পরিবেশ পরিস্থিতি এবং এখানকার জীবনের প্রকৃতির সীমাবদ্ধতায় বন্দী। তারা যখন আখেরাতের জগতে পৌছে যাবে, তখন সকল আবরণ উঠে যাবে, বাধাবিঘ্ন অপসারিত হয়ে যাবে এবং আত্মা ও বোধশক্তি স্বাধীন হবে এবং শুধুমাত্র অভিরুচির পরিবর্তনের কারণে বহু শব্দের এখানে যে অর্থ ছিলো, ওখানে তা থেকে ভিন্ন অর্থ হবে। আজ আমরা যা বুঝতেই পারি না কেমন করে সংঘটিত হবে, তা সেখানে বাস্তবিকভাবেই সংঘটিত হবে। এ সমস্ত বিবরণ দেয়ার উদ্দেশ্য শুধু এই যে, আমাদের বর্তমান কল্পনাশক্তি যে সর্বোচ্চ পরিমাণের স্বাদ, আনন্দ ও সুবিধা কল্পনা করতে সক্ষম, তা যেন কল্পনা করে। যতোদিন আমরা এ পৃথিবীতে আছি, ততোদিন আমাদের আস্বাদন ও উপলব্ধির ক্ষমতা এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে । এসব নেয়ামতের প্রকৃতি আখেরাতে কি তা আমরা ততোদিন বুঝবো না, যতদিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার সম্তোষ ও অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য না করবেন এবং আমরা সেগুলো কার্যত উপভোগ করবো।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-17
اَفَلَا یَنْظُرُوْنَ اِلَى الْاِبِلِ كَیْفَ خُلِقَتْٙ
(এরা মানছে না) তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
ফী জিলালিল কুরআন:
ল্লাহর অসীম শক্তমত্তা : আখেরাতের এই বর্ণনা এখানে সমাপ্ত হচ্ছে। এখান থেকে দৃশ্যমান পার্থিব জীবনে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে। পৃথিবীতে আল্লাহ্র কতো অসীম শক্তিমত্তা, অনুপম বিচক্ষণতা, চমকপ্রদ সৃষ্টিনৈপুণ্য এবং অতুলনীয় প্রকৃতি বৈচিত্র বিরাজমান, আর এই দৃশ্যমান জীবনের পরে যে আরো একটা জীবন রয়েছে, এই পৃথিবীর অবস্থা থেকে ভিন্ন যে আরো অবস্থা রয়েছে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে যে বিলুপ্তি ঘটে তা যে চরম বিলুপ্তি নয় বরং এরপর আর একটি জীবন আছে, তার নিদর্শন তুলে ধরা হচ্ছে, “তারা কি উটনীগুলোকে দেখে না কিভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আকাশমন্ডলকে দেখে না কিভাবে তাকে উচ্চে স্থাপন করা হয়েছে, পর্বতমালাকে দেখে না যে, তা কিভাবে তাকে যমীনের বুকে পুতে রাখা হয়েছে এবং পৃথিবীকে দেখে না কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে? ” এই চারটি ক্ষুদ্র আয়াত কোরআনের প্রথম শ্রোতা আরব জাতির সাথে সম্পৃক্ত পরিবেশের কতিপয় দিক এবং সমগ্র বিশ্বজগতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিককে একত্রিত করেছে। এগুলো হচ্ছে আকাশ, পৃথিবী, পাহাড় ও উট (সকল প্রাণীর প্রতিনিধি হিসাবে) । উটের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট রয়েছে, তার দেহ সৌষ্ঠবে আরবদের কাছে তার মুল্য ও মর্যাদায় একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট রয়েছে। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো মানুষের কাছে সর্বত্র উন্মুক্ত তা সে যেখানেই থাক না কেন। আকাশ, পৃথিবী, পাহাড় ও প্রাণী সর্বত্র বিদ্যমান জ্ঞান বিজ্ঞান ও সভ্যতা সংস্কৃতিতে যতোটুকুই দখল মানুষের থাক না কেন, এ কয়টি উপাদান তার জগত ও চেতনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবেই এবং এ জিনিসগুলোর তাৎপর্য নিয়ে যখন সে চিন্তা ভাবনা করবে, তখন এর অন্তরালে কী আছে, তা সে বুঝতে পারবে। এর প্রত্যেকটিতে অতি প্রাকৃতিক ও অলৌকিক উপাদান নিহিত রয়েছে। এ জিনিসগুলোতে স্রষ্টার কারিগরি নৈপুণ্যের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত । এই একটি বিষয়ই প্রাথমিক আকীদার দিকে ইংগিত করার জন্য যথেষ্ট ৷ এ জন্যে কোরআন সমগ্র মানব জাতির দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট করে। ‘তারা কি উটনীর দিকে তাকায় না কিভাবে তা সৃজিত হয়েছে? উট আরব জাতির প্রথম ও প্রধান জন্তু এর মাধ্যমে তারা চলাচল ও মালপত্র বহন করে। এর গোশত খায় ও দুধ পান করে। এর পশম দিয়ে পোশাক ও চামড়া দিয়ে তাবু বানায় । কাজেই এটা জীবনের প্রধান ও প্রাথমিক উপাদান। এর এমন কিছু বৈশিষ্টও রয়েছে, যা অন্য কোনো জন্তুর নেই । এতো শক্তিমান ও এতো বিশালাকৃতির জন্তু হওয়া সত্ত্বেও তা এতো বিনয়ী ও অনুগত যে, একটা শিশুও তার লাগাম ধরে টানলে তার পিছু পিছু চলতে থাকে৷ এতো বিরাট উপকারী ও সেবাদানকারী জন্তু হওয়া সত্ত্বেও তার পেছনে মানুষের অতি সামান্যই ব্যয় হয়, তার খাদ্য ও বিচরণ ক্ষেত্র সহজলভ্য ৷ ক্ষুধায়, পিপাসায়, পরিশ্রমে ও দুর্যোগে এর মতো ধৈর্যশীল ও কষ্টসহিষ্ণু গৃহপালিত জন্তু আর নেই । বিরাজমান প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলাও তার এক অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতা । এ সমস্ত কারণে কোরআন শ্রোতাদের দৃষ্টি উটনীর সৃষ্টিবেচিত্রের দিকে আকৃষ্ট করে। এটি তাদের চোখের সামনেই রয়েছে৷ এ নিয়ে তাদের কোনো জ্ঞান আহরনের প্রয়োজন নেই৷ ‘তারা উটনীকে দেখে না কিভাবে তা সৃজিত হয়েছে?’ অর্থাৎ এর সৃষ্টি ও গঠন প্রক্রিয়৷ কি দেখে না এবং ভাবে না যে, কিভাবে তাকে তার কর্মের এতো উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে, যার কারণে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য অর্জনে পুরোপুরি সফল এবং তার পরিবেশ ও করণীয় কাজের সাথে পুরোপুরি সমন্বিত! তারা তো একে সৃষ্টি করেনি। উটনী নিজেও নিজেকে সৃষ্টি করেনি। সুতরাং এটাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, তা এক অতুলনীয় নিপুণ কুশলী স্রষ্টার সৃষ্টি । উটনী সেই স্রষ্টার অস্তিত্বেরই সাক্ষী । মহান আল্লাহর পরিকল্পনা ও পরিচালনা দ্বারা যেমন এটা প্রমাণিত হয়, তেমনিএই জন্তুটির সৃষ্টি দ্বারাও প্রমাণিত হয়।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-18
وَ اِلَى السَّمَآءِ كَیْفَ رُفِعَتْٙ
আকাশ দেখছে না, কিভাবে তাকে উঠানো হয়েছে?
ফী জিলালিল কুরআন:
যে দিকে তাকাই শুধু তুমি : ‘তারা কি আকাশমন্ডলীকে দেখে না যে, কিভাবে তাকে উচ্চে স্থাপন করা হয়েছে?’ আকাশের দিকে মানুষের মনকে আকৃষ্ট করার জন্য কোরআন বারবার আহ্বান জানিয়ে থাকে ৷ মরুভূমির অধিবাসীরাই আকাশকে সবচেয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার যোগ্যতা রাখে। কেননা, মরুভূমিতে বসে আকাশ দেখার একটা আলাদা স্বাদ আছে। এখানে আকাশ দেখার একটা আলাদা প্রভাব ও শিক্ষা রয়েছে। আর রয়েছে স্বতন্ত্র রুচিবোধ। এক হিসাবে বলা যেতে পারে যে, মরুভূমি ছাড়া আর কোথাও মনে হয় আকাশ নেই । দিনের বেলায় আকাশের যে চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, অপরাহ্ন তার যে চমকপ্রদ, মনোমুগ্ধকর ও মায়াবী রূপ, সূর্যাস্তকালে তার যে অতুলনীয় শোভা, রাত্রিকালে আকাশের যে গুরুগম্ভীর রূপ, তার তারকারাজির যে ঝিকিমিকি ও তার নিস্তব্ধতার যে আলাপচারিতা এবং সূর্যোদয়কালে তার যে অপূর্ব সুন্দর জীবন্ত ও দেদীপ্যমান দৃশ্য, তা কেবল মরুভূমিতেই উপভোগ করা চলে-অন্য কোথাও নয়। ‘তারা কি তা দেখে না? কিভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে’ কোনো স্তম্ত ছাড়া কে তাকে উঠালো? কে তার সর্বত্র অগণিত নক্ষত্র ছড়িয়ে দিলো? কে তাতে এমন সৌন্দর্য, এমন রূপবৈচিত্র এবং এতো শিক্ষণীয় জিনিস রেখে দিলো ? নিশ্চয়ই মানুষ তাকে ওপরে তোলেনি, আকাশ নিজেও নিজেকে তোলেনি। সুতরাং তার জন্য অন্য কোনো সৃষ্টিকারী ও উঁচুতে স্থাপনকারী নিশ্চয়ই রয়েছে। এ কথাটা বুঝতে কোনো জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র সাধারণ কান্ডজ্ঞানই যথেষ্ট।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-19
وَ اِلَى الْجِبَالِ كَیْفَ نُصِبَتْٙ
পাহাড়গুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে শক্তভাবে বসানো হয়েছে?
ফী জিলালিল কুরআন:
‘তারা কি দেখে না পাহাড়কে কিভাবে তাকে স্থাপন করা হয়েছে? ‘ একজন সাধারণ আরবের নিকট পাহাড় একটা আশ্রয়স্থল এবং একটা সাথী ও বন্ধু । এর দৃশ্য মানব মনে সাধারণভাবে ভীতিও ত্রাসের সঞ্চার করে। পাহাড়ের কাছে মানুষ নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ভাবতে থাকে এবং মনোবল হারিয়ে ফেলে । তার গাষ্টীর্ষ ও বিশালতায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ৷ পাহাড়ের সান্নিধ্যে থাকাকালে মানুষের মন স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হয়। সেখানে তার মনে হয় পাহাড় আল্লাহর নিকটতর এবং পৃথিবীর হট্টগোল ও সংকীর্ণতার উর্ধে । বস্তুত এটা কোনো নিরর্থক বা কাকতালীয় ব্যাপার ছিলো না যে, রসূল (স.) হেরা ও সূর পর্বতের গুহায় নির্জন বাস করেছিলেন । ক্ষণিকের জন্য যারা আত্মাকে নিঝুম নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে যেতে চায় তারা পাহাড়ে যাবে এটা মোটেই বিচিত্র কিছু নয়। পাহাড়কে কিভাবে স্থাপন করা হলো? দৃশ্যটির স্বভাব প্রকৃতির সাথে এ প্রশ্নই অধিকতর মানানসই হয়েছে।
সুরা : আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-20
, وَ اِلَى الْاَرْضِ كَیْفَ سُطِحَتْٙ
আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে?
ফী জিলালিল কুরআন: ‘আর যমীনকে কি তারা দেখে না তা কিভাবে বিছানো হয়েছে ।’ দৃশ্যত, পথিবী বিছানো রয়েছে! বসবাস, চলাচল ও কাজকর্মের জন্য তাকে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এটিকে মানুষ বিছায়নি। কারণ মানুষের আগমনের অনেক আগে থেকেই তা বিছানো রয়েছে৷ তাহলে তারা কি তা দেখে না এবং এর উর্ধে কী থাকতে পারে তা ভেবে দেখে না? তাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে না যে, এই পৃথিবীকে কে বিছালো? কে তাকে বসবাসের ও জীবনধারণের উপযুক্ত বানালো? নিসন্দেহে এ সব দৃশ্য মানুষকে অনেক কিছু ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। একটু বুদ্ধিমত্তার সাথে দৃষ্টি দিলে এবং একটু সুস্থ মন নিয়ে ভাবলেই তা বিবেক ও প্রজ্ঞাকে জাগানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এটা স্রষ্টার দিকে মানবাত্মাকে পরিচালিত করে। প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি অংকনের যে সুন্দর সমন্বয় এখানে পরিস্ফূট হয়েছে, তার কাছে ক্ষণিকের জন্যে আমরা একটু থামবো। আমরা দেখবো, শৈল্পিক সৌন্দর্যের ভাষা দিয়ে কোরআন কিভাবে ধর্মীয় অনুভূতিকে আবেদন জানায় এবং কিভাবে কোরআন ও ধর্মীয় অনুভূতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপলব্ধিকারী মোমেনের অন্তরে মিলিত হয়। সুউচ্চ আকাশ ও বিছানো যমীনের দৃশ্য সামগ্রিক প্রাকৃতিক দৃশ্যেরই অন্তর্ভুক্ত। এই সুদূরপ্রসারী পটভূমিতে আবির্ভূত হয় ‘সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত’ পাহাড় ৷ তাতে কেউ নোংগরও দেয়নি বা কেউ ফেলেও দেয়নি। দৃঢ়ভাবে ঘাড়ের হাড় স্থাপিত উটও আবির্ভূত হয় একই প্রেক্ষাপটে ৷ সুপ্রশস্ত প্রকৃতির প্রান্তরে যে ভয়ংকর দৃশ্য বিদ্যমান, তাতে এ দুটো কেন্দ্রীয় রেখা ও সমান্তরাল রেখা । তবে সে প্রান্তর একটা সুসমন্বিত মানানসই আকৃতির একটা পাত বিশেষ, যাতে কোরআনের পথের অনুসরণে দৃশ্যসমূহের ছবি প্রদর্শিত হয় এবং মোটামুটিভাবে ছবির মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। (‘আত্ তাসওয়ীরুল ফানী ফিল কোরআন’ নামক গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) ৷
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-22
لَسْتَ عَلَیْهِمْ بِمُصَۜیْطِرٍۙ
তুমি এদের উপর বল প্রয়োগকারী নও।
ফী জিলালিল কুরআন:
দাওয়াত পৌছে দেয়াটাই শুধু দায়ীর কর্তব্য। প্রথমে আখেরাতের বিবরণ এবং পরে প্রাকৃতিক দৃশ্যের বিবরণ দেয়ার পর এবার রসূল (স.)-কে সম্বোধন করে তাঁকে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং শ্রোতাদের মনে সাড়া জাগানোর সর্বশেষ পরশ বুলানো হয়েছে। ‘অতএব তুমি স্মরণ করিয়ে দাও, তুমি তো কেবল স্মরণ করিয়ে দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ৷ তুমি তাদের ওপর বলপ্রয়োগকারী নও ৷ তবে যে ব্যক্তি পশ্চাদপসরণ করবে ও কুফরী করবে, তার কথা স্বতন্ত্র । আল্লাহ তায়ালা তাকে সবচেয়ে বড় শাস্তি দেবেন। আমার দিকেই তাদের ফিরে আসতে হবে । অতপর তাদের হিসাব নেয়া আমারই দায়িত্ব । অর্থাৎ তাদেরকে আখেরাত ও তার অন্তর্ভুক্ত সবকিছু স্মরণ করিয়ে দাও এবং বিশ্ব প্রকৃতি ও তার ভেতরে যা যা আছে তাও তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দাও ৷ তোমার কাজ তো কেবল স্মরণ করানো । এটাই তোমার একমাত্র দায়িত্ব । এই দাওয়াতে ও আন্দোলনে এটাই তোমার ভূমিকা, এর অতিরিক্ত কিছু করা তোমার দায়িত্বও নয়, তোমার পক্ষে সম্ভবও নয়। তোমার কর্তব্য শুধু স্মরণ করানো । একাজই তোমার ওপর অর্পিত এবং শুধু এজন্যই তুমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত । ‘তুমি তাদের ওপর বলপ্রয়োগকারী নও ।’ কেননা তাদের মনের ওপর তোমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই যে, তাকে ঈমান আনতে বাধ্য করবে । হৃদয় আল্লাহর মুঠোর মধ্যে । তার ওপর মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই। অবশ্য পরবর্তীকালে যে জেহাদ ফরয করা হয়েছিলো, তা মানুষকে ঈমান আনতে বাধ্য করার জন্য ছিলো না। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌছানোর পথে যে বাধাবিঘ্ন ছিলো, তা দূর করাই ছিলো জেহাদের উদ্দেশ্য । কেউ যেন তাদেরকে এই দাওয়াত শোনা থেকে বিরত রাখতে না পারে এবং যখন শুনবে ও ঈমান আনবে, তখন কেউ যেন তাদেরকে জবরদস্তিমূলক তা থেকে ফেরাতে না পারে। স্মরণ করানোর পথ থেকে বাধা অপসারণের জন্যই জেহাদের আদেশ দেয়া হয়েছিলো। এই স্মরণ করানোই রসূলের পক্ষে সম্ভবপর একমাত্র কাজ । স্মরণ করানো ও প্রচার করা ছাড়া যে ইসলামের জন্য রসূলের আর কিছুই করার নেই, সে কথা কোরআনে বারবার বলা হয়েছে। এ কথা বারবার বলার একাধিক কারণ রয়েছে । প্রথমত প্রচারের পর দাওয়াতের ব্যাপারে আর কোনো চিন্তা-ভাবনা ও উদ্বেগ থেকে রসূলের স্নায়ুকে মুক্তি ও অব্যাহতি দান। এরপর সবকিছু আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করতে হবে, তিনি যা ইচ্ছা করবেন। কল্যাণের আহবান এবং এর সাথে সকল মানুষকে জড়িত করার চেষ্টা সাফল্যের জন্য মানুষের আগ্রহের বাড়াবাড়ি ও ব্যাকুলতা অনেক প্রচারকের মধ্যেই থাকে৷ এটা একটা মারাত্মক ব্যাকুলতা। এ ব্যাপারে বারবার ওহী নাযিল করে ইসলামের আহ্বায়ককে সতর্ক করার প্রয়োজন ছিলো, যাতে তিনি এই উদ্বেগ ও ব্যাকুলতা থেকে মুক্ত হয়ে এবং ফলাফলের ব্যাপারে চিন্তিত না হয়ে দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন ৷ কাজেই কে ঈমান আনলো আর কে কুফুরী করলো তা নিয়ে তার ভাবার দরকার নেই এবং দাওয়াতের পরিস্থিতি ও পরিবেশ যখন খারাপ হয়, তখন মনকে ভারাক্রান্ত করারও তার প্রয়োজন নেই ৷ দাওয়াতকে গ্রহণের হার যতোই ত্রাস পাক এবং বিরোধিতা ও শত্রুতা যতোই বৃদ্ধি পাক, তাতে কিছুই আসে-যায় না। রসূল (স.) যে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনায় অতিমাত্রায় আগ্রহী ও ব্যাকুল ছিলেন এবং এ দ্বীন অত্যস্ত জনকল্যাণমূলক হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষকে এর কল্যাণের অংশীদার করার জন্য অতিমাত্রায় উদগ্রীব ছিলেন, রসূল (স.)-কে সম্বোধন করে এসব নির্দেশের পুনরাবৃত্তিই তার প্রমাণ। কেননা তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরিভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আল্লাহর সীমা ও শক্তি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন ৷ এ জন্য কোনো কোনো সময় এরূপ বারংবার উপদেশ দিয়ে এই মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ ও উদ্বেগের প্রতিকার করার প্রয়োজন ছিলো । কিন্তু এটা যদি রসূল (স.)-এর সাধ্যাতীত হয়েও থাকে, তবুও ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়েযেতে পারে না। দাওয়াতকে অস্বীকারকারীরা অব্যাহতি পেতে পারে না। তাদেরকে পাকড়াও করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই রয়েছেন এবং সব কিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ে আল্লাহর দিকে আবর্তিত হয়ে থাকে ।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-26
ثُمَّ اِنَّ عَلَیْنَا حِسَابَهُمْ۠
তারপর এদের হিসেব নেয়া হবে আমারই দায়িত্ব।
ফী জিলালিল কুরআন:
আল্লাহ তায়ালা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, তবে যে ব্যক্তি পশ্চাদপসরণ করবে ও কুফরী করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সবচেয়ে বড় আযাব দেবেন। এই কাফেরদেরকে আল্লাহর কাছে না গিয়ে উপায় নেই এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের কর্মফল না দিয়ে ছাড়বেন না। এটাই এ সুরার সর্বশেষ অকাট্য বক্তব্য । “নিশ্চয় আমার কাছে তাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতপর তাদের হিসাব নেয়া আমারই দায়িত্ব” এভাবেই রসূলের ভূমিকা ইসলামী দাওয়াত দানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। রসূলের পরবর্তী যে কোনো আহবায়কের অবস্থাও তদ্রূপ ৷ তুমি শুধু স্মরণ করিয়ে দেয়ার কাজে নিয়োজিত ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত । এরপরে তাদের হিসাব নেয়া আল্লাহর দায়িত্ব ৷ সে হিসাব ও জবাবদিহিতা থেকে তাদের পরিত্রাণ নেই৷ আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া থেকে তাদের অব্যাহতি নেই৷ তবে এ কথা হৃদয়ংগম করা কর্তব্য যে, দাওয়াতকে মানুষের কাছে পৌছানোর প্রতিবন্ধকতা অপসারণও “স্মরণ করানো’র কাজের আওতাভুক্ত ৷ এই প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা স্মরণ করানোর কাজটিকে পূর্ণতা দানের জন্যই জরুরী ৷ এটাই হচ্ছে জেহাদের কাজ ৷ কোরআন ও রসূল (স.)-এর জীবনী থেকে জেহাদের শিক্ষা আমরা এ রকমই বুঝতে পারি। এতে কোনো উদাসীনতারও অবকাশ নেই, বাড়াবাড়িরও নয় ।
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
(৮৮-গাশিয়াহ) : নামকরণ:
প্রথম আয়াতের اَلْغَاشِيَةِ শব্দকে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
(৮৮-গাশিয়াহ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
এ সূরাটির সমগ্র বিষয়বস্তু একথা প্রমাণ করে যে এটিও প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি এমন সময় নাযিল হয় যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং মক্কার লোকেরা তাঁর দাওয়াত শুনে তাঁর প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করতে থাকে।
(৮৮-গাশিয়াহ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:
এর বিষয়বস্তু অনুধাবন করার জন্য একথটি অবশ্যি সামনে রাখতে হবে যে, ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রধানত দু’টি কথা লোকদেরকে বুঝাবার মধ্যেই তাঁর দাওয়াত সীমাবদ্ধ রাখেন। একটি তাওহীদ ও দ্বিতীয়টি আখেরাত। আর মক্কাবাসীরা এই দু’টি কথা মেনে নিতে অস্বীকার করতে থাকে। এই পটভূমিটুকু অনুধাবন করার পর এবার এই সূরাটির বিষয়বস্তু ও বর্ণনা পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করুন।
এখানে সবার আগে গাফলতির জীবনে আকণ্ঠ ডুবে থাকা লোকদেরকে চমকে দেবার জন্য হঠাৎ তাদের সামনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে: তোমরা কি সে সময়ের কোন খবর রাখো যখন সারা দুনিয়ার ওপর ছেয়ে যাবার মতো একটি বিপদ অবতীর্ণ হবে? এরপর সাথে সাথেই এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, সে সময় সমস্ত মানুষ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দু’টি ভিন্ন পরিণামের সম্মুখীন হবে। একদল জাহান্নামে যাবে। তাদের উমুক উমুক ধরনের ভয়াবহ ও কঠিন আযাবের সম্মুখীন হতে হবে। দ্বিতীয় দলটি উন্নত ও উচ্চ মর্যাদার জান্নাতে যাবে। তাদেরকে উমুক উমুক ধরনের নিয়ামত দান করা হবে।
এভাবে লোকদেরকে চমকে দেবার পর হঠাৎ বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রশ্ন করা হয়, যারা কুরআনের তাওহীদী শিক্ষা ও আখেরাতের খবর শুনে নাম সিটকায় তারা কি নিজেদের চোখের সামনে প্রতি মুহূর্তে যেসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সেগুলো দেখে না ? আরবের দিগন্ত বিস্তৃত সাহারায় যেসব উটের ওপর তাদের সমগ্র জীবন যাপন প্রণালী নির্ভরশীল তারা কিভাবে ঠিক মরু জীবনের উপযোগী বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পন্ন পশু হিসেবে গড়ে উঠেছে, একথা কি তারা একটুও চিন্তা করে না ? পথে সফর করার সময় তারা আকাশ, পাহাড় বা বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী দেখে। এই তিনটি জিনিস সম্পর্কেই তারা চিন্তা করে না কেন ? মাথার ওপরে এই আকাশটি কেমন করে ছেয়ে গেলো? সামনে ওই পাহাড় খাড়া হলো কেমন করে ? পায়ের নীচে এই যমীন কিভাবে বিছানো হলো? এসব কিছুই কি একজন মহাবিজ্ঞ সর্বশক্তিমান কারিগরের কারিগরী তৎপরতা ছাড়াই হয়ে গেছে? যদি একথা মেনে নেয়া হয় যে, একজন সৃষ্টিকর্তা বিপুল শক্তি ও জ্ঞানের সাহায্যে এই জিনিসগুলো তৈরি করেছেন এবং দ্বিতীয় আর কেউ তাঁর এই সৃষ্টি কর্মে শরীক নেই তাহলে তাঁকেই একক রব হিসেবে মেনে নিতে তাদের আপত্তি কেন? আর যদি তারা একথা মেনে নিয়ে থাকে যে সেই আল্লাহর এসব কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা ছিল, তাহলে সেই আল্লাহ কিয়ামত সংঘটিত করার ক্ষমতাও রাখেন, মানুষের পুর্নবার সৃষ্টি করার ক্ষমতাও রাখেন এবং জান্নাত ও জাহান্নাম বানাবার ক্ষমতাও রাখেন– এসব কথা কোন্ যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে মানতে ইতস্তত করছে?
এ সংক্ষিপ্ত ও অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি প্রমানের ভিত্তিতে বক্তব্য বুঝানো হয়েছে। এরপর কাফেরদের দিক থেকে ফিরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে, এরা না মানতে চাইলে না মানুক, তোমাকে তো এদের ওপর বল প্রয়োগকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি। তুমি জোর করে এদের থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে পারো না। তোমার কাজ উপদেশ দেয়া। কাজেই তুমি উপদেশ দিয়ে যেতে থাকো। সবশেষে তাদের অবশ্যি আমার কাছেই আসতে হবে। সে সময় আমি তাদের কাছ থেকে পুরো হিসেব নিয়ে নেব। যারা মানেনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবো।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,
هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ الْغَاشِیَةِؕ
তোমার কাছে আচ্ছন্নকারী বিপদের খবর এসে পৌঁছেছে কি?১
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:১) এর অর্থ হচ্ছে কিয়ামত। অর্থাৎ যে বিপদটা সারা পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা অবশ্যি সামনে রাখতে হবে। এখানে সামগ্রিকভাবে আখেরাতের কথা বলা হচ্ছে। বিশ্ব ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ার সূচনা থেকে শুরু করে সমস্ত মানুষের আবার জীবিত হয়ে ওঠা এবং আল্লাহর দরবারে শাস্তি ও পুরস্কার লাভ করা পর্যন্ত সমগ্র পর্যায়টি এর অন্তর্ভুক্ত।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,
وُجُوْهٌ یَّوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌۙ
কিছু চেহারা২ সেদিন হবে ভীত কাতর,
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:২) চেহারা শব্দটি এখানে ব্যক্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষের শরীরের সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য ও সবচেয়ে সুস্পষ্ট অংশ হচ্ছে তার চেহারা। এর মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্বের পরিচিতি ফুটে ওঠে। মানুষ ভালো-মন্দ যে অবস্থারই সম্মুখীন হয়, তার প্রকাশ ঘটে তার চেহারায়। তাই “কিছু লোক” না বলে “কিছু চেহারা” বলা হয়েছে।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-6
টিকা নং:3,
لَیْسَ لَهُمْ طَعَامٌ اِلَّا مِنْ ضَرِیْعٍۙ
তাদের জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য থাকবে না।৩
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৩) কুরআন মজীদে কোথাও বলা হয়েছে, জাহান্নামের অধিবাসীদের খাবার জন্য ‘যাককুম’ দেয়া হবে। কোথাও বলা হয়েছে, “গিসলীন” (ক্ষতস্থান থেকে ঝরে পড়া তরল পদার্থ) ছাড়া তাদের আর কোন খাবার থাকবে না। আর এখানে বলা হচ্ছে, তারা খাবার জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। এর অর্থ এও হতে পারে যে, জাহান্নামের অনেকগুলো পর্যায় থাকবে। বিভিন্ন অপরাধীকে তাদের অপরাধ অনুযায়ী সেই সব পর্যায়ে রাখা হবে। তাদেরকে ধরনের আযাব দেয়া হবে। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা “যাককুম” খেতে না চাইলে “গিসলীন” পাবে এবং তা খেতে অস্বীকার করলে কাঁটাওয়ালা ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। মোটকথা, তারা কোন মনের মতো খাবার পাবে না।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-9
টিকা নং:4,
لِّسَعْیِهَا رَاضِیَةٌۙ
নিজেদের কর্ম সাফল্যে আনন্দিত হবে।৪
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৪) অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যেসব প্রচেষ্টা চালিয়ে ও কাজ করে এসেছে আখেরাতে তার চমৎকার ফল দেখে তারা আনন্দিত হবে। তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে যে, দুনিয়ায় ঈমান, সততা ও তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করে তারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার যে কুরবানী দিয়েছে, দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে যে কষ্ট স্বীকার করেছে, আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করতে গিয়ে যেসব জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, গোনাহ থেকে বাঁচতে গিয়ে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং যেসব স্বার্থ ও স্বাদ আস্বাদন থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছে তা সবই আসলে বড়ই লাভজনক কারবার ছিল।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-11
টিকা নং:5,
لَّا تَسْمَعُ فِیْهَا لَاغِیَةًؕ
সেখানে কোন বাজে কথা শুনবে না।৫
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৫) এটিকেই কুরআনের বিভিন্ন স্থানে জান্নাতের নিয়ামতের মধ্যে একটি বড় নিয়ামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা মারয়াম ৩৮ টীকা , আত্তুর ১৮ টীকা , আল ওয়াক্বিয়াহ ১৩ টীকা এবং আন নিসা ২১ টীকা )
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-14
টিকা নং:6,
وَّ اَكْوَابٌ مَّوْضُوْعَةٌۙ
আর পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত থাকবে।৬
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৬) তাদের সামনে সবসময় পানপাত্র ভরা থাকবে। চেয়ে বা ডাক দিয়ে আনিয়ে নেবার প্রয়োজন হবে না।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-20
টিকা নং:7,
وَ اِلَى الْاَرْضِ كَیْفَ سُطِحَتْٙ
আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে?৭
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৭) অর্থাৎ আখেরাতের কথা শুনে এরা যদি বলে, এসব কিছু কেমন করে হতে পারে, তাহলে নিজেদের চারপাশের জগতের প্রতি একবার দৃষ্টি বুলিয়ে এরা কি কখনো চিন্তা করেনি, এই উট কেমন করে সৃষ্টি হলো? আকাশ কেমন করে বুলন্দ হলো? পাহাড় কেমন করে প্রতিষ্ঠিত হলো? এই পৃথিবী কেমন করে বিস্তৃত হলো? এসব জিনিস যদি তৈরি হতে পারে এবং তৈরি হয়ে এদের সামনে বর্তমান থাকতে পারে, তাহলে কিয়ামত কেন আসতে পারবে না? আখেরাতে আর একটা নতুন জগত তৈরি হতে পারবে না কেন? জান্নাত ও জাহান্নাম হতে পারবে না কেন? দুনিয়ায় চোখ মেলেই যেসব জিনিস দেখা যায় সেগুলো সম্পর্কে যে ব্যক্তি মনে করে যে, সেগুলোর অস্তিত্ব লাভ তো সম্ভবপর। কারণ সেগুলো অস্তিত্ব লাভ করেছে কিন্তু যেসব জিনিস এখনো তার দৃষ্টিতে পড়েনি এবং সেগুলো সম্পর্কে এখনো সে কোন অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি, সেগুলো সম্পর্কে যদি সে এক কথায় বলে দেয় যে, সেগুলোর অস্তিত্ব লাভ সম্ভব নয়, তাহলে তাকে বুদ্ধি-বিবেকহীন ও চিন্তাশক্তি বিবর্জিত ব্যক্তিই মনে করা হবে। তার মস্তিষ্কে যদি একটুও বুদ্ধি থাকে তাহলে তার অবশ্যই চিন্তা করা উচিত যে, যা কিছু বর্তমান আছে এবং অস্তিত্ব লাভ করেছে সেগুলোইবা কেমন করে অস্তিত্ব লাভ করলো? আরবের মরু এলাকার অধিবাসীদের জন্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীসম্পন্ন প্রাণীর প্রয়োজন এই উটগুলো কেমন করে সেসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পন্ন হলো? এই আকাশ কেমন করে তৈরি হলো, যার শূন্য পেট শ্বাস নেবার জন্য বাতাসে ভরা? যার মেঘমালা বৃষ্টিবহন করে আনে? যার সূর্য দিনে আলো ও তাপ দেয়? যার চাঁদ ও তারা রাতের আকাশে আলো ছড়ায়? পৃথিবীর এই বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ বসবাস করে, যেখানে উৎপাদিত শস্য ও ফলমূল তার খাদ্য প্রয়োজন পূর্ণ করে, যার নদী ও কূপের পানির ওপর তার জীবন নির্ভরশীল তাকে কিভাবে বিছানার মতো ছড়িয়ে দেয়া হলো? রং বে-রঙের মাটি ও পাথর এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ নিয়ে এ পাহাড়গুলো পৃথিবীর বুকে কিভাবে গজিয়ে উঠেছে? এসব কিছুই কি একজন মহাশক্তিশালী ও বিজ্ঞ স্রষ্টার সৃষ্টি কৌশল ছাড়া এমনিই তৈরি হয়ে গেছে? কোন চিন্তাশীল বিবেকবান ব্যক্তি এই প্রশ্নের নেতিবাচক জবাব দিতে পারেন না। তিনি যদি জেদী ও হঠধর্মী না হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে অবশ্যি মানতে হবে, কোন মহাশক্তিধর ও মহাবিজ্ঞ সত্তা এগুলোকে সম্ভবপর না করলে এগুলোর প্রত্যেকটি অসম্ভব ছিল। আর একজন সর্বশক্তিমানের শক্তির জোরে যদি দুনিয়ার এসব জিনিস তৈরি হওয়া সম্ভবপর হয়ে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে যে জিনিসগুলোর অস্তিত্ব লাভের খবর দেয়া হচ্ছে সেগুলোকে অসম্ভব মনে করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
সুরা: আল-গাশিয়াহ
আয়াত নং :-22
টিকা নং:8,
لَسْتَ عَلَیْهِمْ بِمُصَۜیْطِرٍۙ
তুমি এদের উপর বল প্রয়োগকারী নও। ৮
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৮) অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত যুক্তি মানতে যদি কোন ব্যক্তি প্রস্তুত না হয়, তাহলে মানা না মানা তার ইচ্ছা তবে তোমাকে এই দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়নি যে, যে ব্যক্তি মানতে প্রস্তুত নয় তাকে জবরদস্তি মানাতে হবে। তোমার কাজও কেবল এতটুকুঃ লোকদেরকে ভুল ও সঠিক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য জানিয়ে দাও। তাদেরকে ভুল পথে চলার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করো। কাজেই এ দায়িত্ব তুমি পালন করে যেতে থাকো।