Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১২০৮ : হে মানুষ:-১৮) [# শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম:-] www.motaher21.net সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন পারা:৩০ ১-৮ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- #তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:- #তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:- # তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:- # তাফসীরে ইবনে কাছীর:- (Book#1208/O Ye Mankind :-18) [ # Verily, We created man in the best form.:-] Surah.95 : At-Tin Para:30 Ayat:- 1-8

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২০৮ : হে মানুষ:-১৮)
[# শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন
পারা:৩০
১-৮ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

(Book#1208/O Ye Mankind :-18)
[ # Verily, We created man in the best form.:-]
Surah.95 : At-Tin
Para:30 Ayat:- 1-8

সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-১
وَ التِّیۡنِ وَ الزَّیۡتُوۡنِ ۙ﴿۱﴾
শপথ তীন ও যাইতূনের।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-২
وَ طُوۡرِ سِیۡنِیۡنَ ۙ﴿۲﴾
শপথ ‘সিনাই’ পর্বতের।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৩
وَ ہٰذَا الۡبَلَدِ الۡاَمِیۡنِ ۙ﴿۳﴾
এবং শপথ এই নিরাপদ নগরী (মক্কা)র।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৪
لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫﴿۴﴾
আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৫
ثُمَّ رَدَدۡنٰہُ اَسۡفَلَ سٰفِلِیۡنَ ۙ﴿۵﴾
তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৬
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَہُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ ؕ﴿۶﴾
তাদেরকে ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করতে থাকে। কেননা তাদের রয়েছে এমন পুরস্কার যা কোনদিন শেষ হবে না।
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৭
فَمَا یُکَذِّبُکَ بَعۡدُ بِالدِّیۡنِ ؕ﴿۷﴾
সুতরাং এরপর কিসে তোমাকে (হে মানুষ) কর্মফল দিবস সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে?
সুরা: ৯৫ : সুরা: আত-ত্বীন:-৮
اَلَیۡسَ اللّٰہُ بِاَحۡکَمِ الۡحٰکِمِیۡنَ ٪﴿۸﴾
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?

সুরা: আত-ত্বীন

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:৯৫

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : আলোচ্য সূরাটি এক বুনিয়াদী সত্যকে পেশ করেছে, আর তা হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সুন্দর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন মানুষের গঠন-প্রকৃতির মধ্যে যে মযবুতী দান করা হয়েছে, তা ঈমানী জীবন যাপনের মাধ্যমেই প্রকাশ করা সম্ভব৷ অর্থাৎ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও আল্লাহর ভয়-ভীতি হৃদয়ে পোষণ করে জীবন যাপন করলেই আল্লাহ তায়ালার বাঞ্ছিত সেই দৃঢ়তা ও মযবুতী আসে । পক্ষান্তরে, যখন মানুষ তার স্বাভাবিক প্রকৃতি ও ঈমানী জীবন যাপন করা থেকে সরে দাড়ায়, তখন তার পতন শুরু হয় এবং পরিশেষে তার জীবনে চরম অধপতন নেমে আসে।

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-3

وَ هٰذَا الْبَلَدِ الْاَمِیْنِۙ

এবং এই নিরাপদ নগরীর (মক্কা) কসম।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘তীন’ ও ‘যায়তুন’ ফল দুটির কসম খেয়ে আল্লাহ তায়ালা একটি সরল সত্য কথাকে তুলে ধরেছেন। তিনি আরো কসম খেয়েছেন সিনাই উপত্যকায় অবস্থিত তুর পর্বতের এবং নিরাপদ ও নিরাপত্তাদানকারী পবিত্র (মক্কা) নগরীর । কোরআনে পাকের এই পারার অনেক সূরার মধ্যেই এই কসম খাওয়ার দৃশ্য নযরে পড়ে। মক্কা নগরীর যে পরিবেশ ও পরিবেষ্টনীর মধ্য থেকে তৎকালীন সত্যের নিশানবরদাররা ঈমানী আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন আমপারার এই অধ্যায়ে বিশেষভাবে তা তুলে ধরার জন্যই যেন অনেকগুলো সাদৃশ্যপূর্ণ সূরার পাশপাশি সমাবেশ ঘটানো হয়েছে । সিনাই উপত্যকায় অবস্থিত তুর পর্বত বলতে সেই পর্বতটিকে বুঝানো হয়েছে, যেখান থেকে মূসা (আ.)-কে ডাক দেয়া হয়েছিলো এবং নিরাপদ শহর বলতে পবিত্র মক্কা নগরীকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে মহা সম্মানিত আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ অবস্থিত । এই দুই স্থানের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা হচ্ছে এ দুটি ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও ঈমানী ধ্যান-ধারণার প্রচার ও প্রসারের কেন্দ্রভুমি। এই কারণেই আলোচ্য অধ্যায়ের সূরাগুলোতে এই সত্য স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে তীন ও যায়তুন ফল দুটির উল্লেখ যে কোন বিশেষ কারণে করা হয়েছে তা বুঝা কঠিন। এ বিষয়ে তাফসীরকারকদের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, তীন বলতে দামেস্ক নগরীর পাশে অবস্থিত তুর পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত তীন নামক পাহাড়ে উৎপন্ন এক প্রকারের ফলকে বুঝানো হয়েছে ।(তুর পর্বতে উৎপন্ন এ ফলটিকে কেউ আনজির (পেয়ারা) এবং কেউ ডুমুর বলে বুঝাতে চেয়েছেন ৷ প্রকৃতপক্ষে এক নতুন ফল যা ব্যক্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিস সদৃশ বিভিন্ন ফলের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আসলে ‘তীন’ নিজেই স্বতন্ত্র এক ফল । আনজির বা ডুমুর কোনোটি নয়।) বলা হয়েছে, ‘তীন’ দ্বারা ইংগিত করা হয়েছে ওই তীন গাছের দিকে, যা আদম (আ.) ও তার বিবি হাওয়া (আ.)-কে স্বস্তি দিয়েছিলো ৷ দুনিয়ার এই জীবনে নেমে আসার পূর্বে জান্নাতে থাকাকালে তারা এই গাছের পাতা দ্বারা নিজেদের লজ্জাস্থান ঢেকেছিলেন ৷ এ পর্যায়ে আরও একটি কথা জানা যায় যে, তীন বলতে বুঝায় ওই পাহাড়ের ওপরে আঞ্জিরের গাছ উৎপন্ন হওয়ার স্থান, যেখানে নূহ্‌ (আ.)-এর নৌযানটি পানি শুকানোর সময় আটকে গিয়েছিলো । আর ‘যায়তুন’ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে বায়তুল মাকদাস নগরে অবস্থিত ‘যায়তা’ নামক পাহাড়টি । আবার কেউ কেউ খোদ বায়তুল মাকদাসকেই যায়তুন বলে উল্লেখ করেছেন। আরও একটি কথা যায়তুন সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তা হচ্ছে, নূহ্‌ (আ.)-এর সময়কার মহাপ্লাবনের সমাপ্তি পর্যায়ে পানি ও তুফানের অবস্থা জানার জন্য তিনি একটি কবুতর পাঠিয়েছিলেন, এই কবুৃতরটি এসে যে গাছের ডাল ভেংগে নিয়ে গিয়েছিলো এবং যা দেখে নূহ(আ.) বুঝেছিলেন যে, পানি শুকিয়ে এসেছে এবং গাছ-পালা জেগে উঠেছে আর কিছু কিছু নতুন গাছপালা অংকুরিত হতেও শুরু করেছে- সেই গাছটিকেই এখানে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তীন ও যায়তুন মূলত আমাদের পরিচিত দুটি ফলের নাম। এগুলোর ইংগিত অন্য কিছুর প্রতি নয় । এগুলো আমরা অহরহ খেয়ে থাকি । এগুলো খুব অভিনব কিছু নয়! কারো কারো মতে ফল দুটি যে অঞ্চলে পয়দা হয়, সেই এলাকাকে বুঝানোর জন্য কোরআনে কারীমে ইংগিত দেয়া হয়েছে। কোরআনে পাকের অন্য স্থানে বর্ণিত ‘যায়তুন’ শব্দটি দ্বারা তুর পাহাড়ের আশে-পাশের এলাকার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন একটি গাছ যা উদ্গতো হয় সাইনা এলাকায় অবস্থিত তুর পাহাড় থেকে৷ এ গাছ তৈলসমৃদ্ধ হয়েই পয়দা হয়, রংগীন রসে ভরা সকলের কাছেই অত্যন্ত সুপেয়’ এবং রংগীন রস অর্থাৎ সুস্বাদু এ ফলটি যেমন তৈলাক্ত তেমনি এমন টকটকে রং ভরা যে যারা খায় তাদের মুখ লাল হয়ে যায়। এভাবেই যায়তুনের বর্ণনাও এসেছে, তবে ‘তীন’ শব্দটি শুধু এ সূরাতেই এবং গোটা কোরআনের মধ্যে একটি বারের মতো উল্লেখ হয়েছে। এ বর্ণনা থেকে এ ফল দুটি সম্পর্কে আমরা চূড়ান্তভাবে কোনো কিছুই স্থির করতে পারি না। বড়জোর কোরআনের বিভিন্ন সূরার মধ্যে প্রাপ্ত বর্ণনার প্রেক্ষাপটে আমরা এটুকু বুঝতে পারি যে, দ্বীন ও ঈমানের সাথে যার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় । মানুষের সুন্দরতম গঠন-প্রক্রিয়ার সাথে পূর্ণ সংগতি রেখে তার অবগতির ব্যাপারে তীন ও যায়তুন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই অর্থ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে সে মূল সত্যের প্রতি ইংগিত দান করা হয়েছে, যা! এই সূরার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে, আর তা কোরআনের বর্ণনা পদ্ধতির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্য্যশীল ।

ফী জিলালিল কুরআন: মানুষের আত্মিক ও দৈহিক গঠন : এ সূরার মধ্যে আলোচিত মুল’ বক্তব্য বিষয়টি হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতি দিয়ে, তারপর তাকে আমি নিক্ষেপ করেছি সর্বাধিক নিম্নস্তরে ৷ তবে ওই সকল মানুষ ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, সুতরাং তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ প্রতিদান ।’ সুন্দরতম আকৃতি দান থেকে শুরু হয়েছে মানুষের প্রতি নেয়ামত দানের আলোচনা ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সব কিছুকেই অতি সুন্দর করে পয়দা করেছেন। সে সব কিছুর মধ্যে মানুষের সৃষ্টির বিষয়টি হচ্ছে সুন্দরতম আকৃতিসম্পন্ন । তার দেহ সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য । এ এমন এক বৈশিষ্ট যা অন্য কোনো কিছুকেই দেয়া হয়নি। মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার এই অবদান এবং মেহেরবানী সর্বদাই দেখতে পাওয়া যায়। যদিও তার মধ্যে নানাবিধ দুর্বলতা, ঝগড়াঝাটি ও নাফরমানী করার প্রবণতা বর্তমান রয়েছে, তবু তার জন্য আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে তার এক বিশিষ্ট মর্যাদা রয়েছে। এ মর্যাদা যেমন তার শারীরিক গঠন প্রকৃতিতে, তেমনি তার মানসিক ও আত্মিক শ্রেষ্ঠত্বে । এসব কিছু মিলে তাকে তুলে রাখা হয়েছে সবকিছুর ওপরে ৷ তার শারীরিক গঠন এতো সুন্দর যে, তার সাথে অন্য কোনো সৃষ্টির কোনো তুলনাই হয় না। তার বুদ্ধির কথা চিন্তা করতে গেলে দেখা যায় যে, এ ধরনের বুদ্ধি অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি৷ সর্বোপরি তার রয়েছে আত্মিক মর্যাদা, এ ক্ষেত্রে সে তো অনবদ্য । তার আত্মিক অবস্থার উন্নতি যে কতো অধিক হতে পারে তা শুমার করে শেষ করা যাবে না। তার এই দিকটাকেই এই সূরার মধ্যে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আসলে যখন তার অবনতি হয়, তখন দৈহিক দিক থেকে তো তেমন কিছু পরিবর্তন বুঝা যায় না। দেহ তেমনি থাকা সত্ত্বেও তার মানসিক চারিত্রিক ও গুণগত বিপর্যয় ঘটে গেলে সে সবার কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়ে । তার দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের অভাব হলেই সে সবার নযর থেকে পড়ে যায়, তার মান-মর্যাদা খতম হয়ে যায়। পরিশেষে আল্লাহ্‌ রব্বুল ইযযতের এতো প্রিয় সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তার কাছে সে চরম ঘৃণা ও আযাবের অধিকারী হয়ে যায়। ঈমানের দাবী থেকে যখন সে সরে দাড়ায়, তখন তার যাবতীয় মান-মর্যাদা আল্লাহর কাছে শেষ হয়ে যায়। বান্দার কাছেও নীতিহীনতার কারণে সে ঘৃণ্য হয়। সুতরাং, আলোচ্য সূরাতে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও সুন্দরতম হওয়ার যে অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে এটা হচ্ছে তার নৈতিক ও আত্মিক বিষয়। এ কারণেই তার মর্যাদাকে ফেরেশতাদের চেয়েও ওপরে তোলা হয়েছে। একথারই সাক্ষ্য বহন করছে মে’রাজের ঘটনাটি ৷ সেখানে জিবরাঈল (আ.) একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে গিয়ে থেমে গেলেন এবং তার অনেক অনেক উর্ধে তোলা হলো আল্লাহর রসূল মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকে । রসূল তিনি, তবে তিনি মানুষও বটে । এই তো সেই মানুষ যাকে এতো উর্ধে তোলা হলো, যার মর্যাদাকে সবার ওপর স্থান দেয়া হলো, কিন্তু নাফরমানীর কারণে যখন তার নৈতিক অধপতন শুরু হলো তখন সেই অধপতন তাকে ডুবিয়ে দিলো এবং তাকে নিক্ষেপ করলো অবনতির অতল তলে । যেখানে কোনো জীবজন্তু বা অপর কোনো সৃষ্টিই কোনোদিন পৌছুবে না। ওই পর্যায়ে পৌছে গেলে তার তুলনায় একটি হিংস্র জন্তুও মর্যাদাশীল ও নিজ মর্যাদায় মযবুত অবস্থানের অধিকারী হতে পারে । কারণ সে জুটি তার প্রাকৃতিক স্বভাবের ওপরে টিকে থাকে। তার রব কর্তৃক প্রদত্ত আনুগত্যবোধ অনুসারে সে কাজ করে যায় এবং সে নিজ দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করে। অপরদিকে দেখুন ওই ব্যক্তিকে যে সৃষ্টির সেরা হওয়ার গৌরবে গৌরবান্বিত ৷ সে তার নিজের মনিবকে মনিব বলে মানতে অস্বীকার করেছে। সে চলেছে তার লাগাম ছাড়া প্রবৃত্তির কথা মতো ৷ এটা এমন একটা নিম্নস্তর, যেখানে কোনো জীবজন্তু পর্যন্ত পৌছায় না অর্থাৎ তার মতো করে নাফরমানী করে না। ‘অবশ্যই, আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠন প্রণালী দিয়ে তারপর তাকে নিক্ষেপ করেছি নিন্ন থেকে নিম্নতম স্তরে ।’ যখন সে তার প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে সরে যায় তখনই তার এই পতন। যদিও এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্যে আল্লাহ তায়ালাই তাকে পথ দেখিয়েছেন কিন্তু ভুল পথ ও সত্যসঠিক পথকে তিনি তার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন । তারপর তাকে এখতিয়ার দিয়েছেন যে, সে সত্য পথে চলবে না ভুল পথে চলবে । অর্থাৎ ভাল ও মন্দ দু’টি পথ তার সামনে রয়েছে, এ দুটোর যে কোনো একটা গ্রহণ করার স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন। ‘তবে, যে সব লোক ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তারা বাদে ।’ এরাই হচ্ছে সেই সব ব্যক্তি, যারা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত সঠিক পথে অবস্থান করেছে এবং তাদেরকে দেয়া দায়িত্ব ঈমান ও ভালো কাজ করার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে পালন করে চলেছে। এভাবে তারা সেই পূর্ণত্বের সোপানে আরোহণ করছে যা তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে। এই ভালো কাজের পরিণতিতে তারা পৌছে যাবে চিরস্থায়ী বাসস্থানে, চিরন্তন যিন্দেগী নিয়ে । ‘সুতরাং তখন তাদের দেয়া হবে এমন প্রতিদান, যা কখনও শেষ হবে না ।’ যারা তাদের আপন প্রবৃত্তির আহ্বানে বিপর্যয়কারী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তারা শেষ নাগাদ ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যায়। এই অবস্থাই তাকে সকল জিনিসের নিচে নামিয়ে দেয়, আর নিচের সেই স্থানটি হচ্ছে জাহান্নাম । যে মানবতার কারণে ছিলো তার বিশেষ মর্যাদা সেই মানবতা যেখানে শেষ হয়ে যাবে সেখানে থাকবে চরম নীচুতা ও হীনতা এবং অমর্যাদার অভিশাপ। সুতরাং, এই দুই শ্রেণীর মানুষ জীবন পথে যখন যাত্রা শুরু করে, তখন তারা পৃথক পৃথক দুটি চরম পথের দিকে অগ্রসর হয় । এক দল তার প্রকৃতির সঠিক ও মযবুত পথ ধরে চলতে থাকে, ঈমানের সাথেই যার পরিপূর্ণতা আসে ৷ সৎকর্ম দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে এই নেক কাজ তাকে নেয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তার সাফল্যকে চূড়ান্ত স্তরে পৌছিয়ে দেয়। অপরদিকে যে ব্যক্তি প্রকৃতির সুস্থ ও সঠিক আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়, কুপ্রবৃত্তির চাহিদার কাছে আত্মসমর্পণ করে সর্বোপরি আল্লাহর সন্তোষজনক পথ থেকে দূরে সরে চলে যায়, সে পরিশেষে ধ্বংস ও অবনতির অতল জাহান্নামে পৌছে যায়। এ অবস্থার মধ্যেই মানুষের জীবনে ঈমানের মূল্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ৷ উন্নতির এটা হচ্ছে এমন একটি স্তর, যেখানে পৌছে সঠিক মানব প্রকৃতি তার পরিপূর্ণতা পায়। ঈমানের এই রশি মানব-প্রকৃতি ও তার মনিব আল্লাহ তায়ালার মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন সৃষ্টি করে । এটা হচ্ছে এমন এক নূর বা জ্যোতি যা ক্রমোন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষকে পথ দেখায়, যা শেষ পর্যন্ত তাকে পৌছে দেয় চিরন্তন ও সম্মানিত যিন্দেগীতে ৷ আবার যখন ঈমানের এই রশি ছিড়ে যায়, এই উজ্জ্বল বাতি নিভে যায় তখন এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এই হয় যে, সে দ্রুতগতিতে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় এবং পরিশেষে সে পৌছে যায় অবনতির নীচু থেকে নীচু স্তরে, আর এই শেষ অবস্থা হচ্ছে মানবতার সামগ্রিক ও চুড়ান্ত বিপর্যয়। এ স্তরে পৌছে গিয়ে সে মানব সৃষ্টির মৌলিক উপাদান এক দলা মাটিতে পরিণত হয় এবং এই মাটি দোযখের আগুনের ইন্ধন পাথরের সংলগ্ন হয়ে দোযখের আগুনের জ্বালানিতে পরিণত হয়।

ফী জিলালিল কুরআন: এ বাস্তবতার ছায়াতলে মানুষকে ডাক দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘এই সত্য সমাগত হয়ে যাওয়ার পর কোন সে জিনিস যা তোমাকে সত্যকে অস্বীকার করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলো? বিচার দিবসকেই বা অস্বীকার করতে কোন শক্তি তোমাকে বাধ্য করলো? আল্লাহ তায়ালা কি সকল বিচারক থেকে বড় বিচারক নন?’ এই বাস্তব সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পরও তোমাকে কোন জিনিস বা কোন শক্তি বাধ্য করলো যে, তুমি নবীর উপস্থাপিত সকল সত্যকে অস্বীকার করছে৷ এবং তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছো? আল্লাহ তায়ালা কি সকল বিচারক থেকে সুক্ষ, পারদর্শী ও সুবিচারক নন? মানুষের জীবনে ঈমান আনার সুফলকে বাস্তবে প্রত্যক্ষ করার পরও কোন সে জিনিস যা তোমাকে সেই সত্যকে উপেক্ষা করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে? বিশেষ করে যখন তোমরা বেঈমানদের চলার বীভৎস পথ দেখতে পাচ্ছো, দেখতে পাচ্ছো তারা সত্যের আলোতে জীবনের সঠিক পথ দেখতে পাচ্ছে না এবং আল্লাহর মযবুত রশিকেও তারা ধারণ করছে না, তখন তাদেরকে, কোন স্বার্থ কোন শক্তি এ কাজে এগিয়ে দিচ্ছে? এসব নিষ্ঠুর ও হঠকারিতার সঠিক বিচার করার জন্যে ‘আল্লাহ তায়ালা কি অভ্যস্ত ন্যায়পরায়ন ও দৃঢ় বিচারক নন? নন কি তিনি সকল বিচারক থেকে বড় বিচারক? বিশেষ করে এ সময়ে, যখন এই নরাধম ও হঠকারীদের মোকদ্দমা তার সামনে পেশ করা হবে? মোমেন ও বে-ঈমানদের মধ্যে ফায়সালা করার প্রশ্ন যখন তার আদালতে পেশ করা হবে, তখন তার বিচার ক্ষমতা কি কার্যকর ভূমিকা রাখবে না? সেদিন সুবিচার সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা সুস্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠবে। এ প্রসঙ্গে একটি ‘মারফু’ হাদীস হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তি “ওয়াত্তীনি ওয়ায্ যায়তুনি’ সূরাটির শেষ আয়াত ‘আলাইসাল্লাহু বি-আহকামিল হাকেমীন’ পর্যন্ত পড়বে তখন সে মেন বলে, ‘বালা, ওয়া আনা আলা যালিকা মিনাশ্‌ শাহেদীন!’ ‘হা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ তায়ালার চাইতে বড়ো বিচারক আর কেউ নেই ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
(৯৫-ত্বীন) : নামকরণ:

নামকরণ সূরার প্রথম শব্দ আত্ তীন ( التِّيۡنَ ) —কে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
(৯৫-ত্বীন) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

কাতাদাহ এটিকে মাদানী সূরা বলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ ব্যাপারে দু’টি বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। একটি বক্তব্য একে মক্কী এবং অন্যটিতে মাদানী বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ আলেম একে মক্কী গণ্য করেছেন। এর মক্কী হবার সুস্পষ্ট আলামত হচ্ছে এই যে, এই সূরায় মক্কা শহরের জন্য (هٰذَا الۡبَلَدِ الۡاَمِيۡنَ ) (এই নিরাপদ শহরটি) শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, যদি মদীনায় এটি নাযিল হতো তাহলে মক্কার জন্য “এই শহরটি” বলা ঠিক হতো না। তাছাড়াও সূরার বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে এটিকে মক্কা মু’আয্যমারও প্রথম দিকে সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়। কারণ এর নাযিলের সময় কুফর ও ইসলামের সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল এমন কোন চিহ্নও এতে পাওয়া যায় না। বরং এর মধ্যে মক্কী যুগের প্রথম দিকের সূরাগুলোর মতো একই বর্ণনাভংগী পাওয়া যায়। এই ধরনের বর্ণনার মাধ্যমে অতি সংক্ষেপে এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যে, আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তি অপরিহার্য এবং একান্ত যুক্তিসঙ্গত।
(৯৫-ত্বীন) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

এর বিষয়বস্তু হচ্ছে পুরস্কার ও শাস্তির স্বীকৃতি। এই উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম মহান মর্যাদাশালী নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানসমূহের কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছেন। এই বাস্তব বিষয়টি কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা হয়েছে। যেমন কোথাও বলা হয়েছে: মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন এবং ফেরেশতাদেরকে তার সামনে সিজদা করার হুকুম দিয়েছেন। (আল বাকারাহ ৩০- ৩৪, আর আ’রাফ ১১, আল আন’আম ১৬৫, আল হিজর ২৪-২৯, আন নামল ৬২, সা’দ ৭১-৭৩ আয়াত) কোথাও বলা হয়েছে: মানুষ আল্লাহর এমন একটি আমানতের বাহক হয়েছে যা বহন করার শক্তি পৃথিবী, আকাশ ও পাহাড় কারো ছিল না। (আল আহযাব ৭২ আয়াত) আবার কোথাও বলা হয়েছে: আমি বনী আদমকে মর্যাদাশালী করেছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনী ইসরাঈল ৭০ আয়াত) কিন্তু এখানে বিশেষ করে নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানগুলোর কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, মানুষকে এমন উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে যার ফলে তার মধ্যে নবুওয়াতের মত সর্বাধিক উন্নত পদমর্যাদা সম্পন্ন লোক জন্ম নিয়েছে। আর এই নবুওয়াতের চাইতে উঁচু পদমর্যাদা আল্লাহর অন্য কোন সৃষ্টি লাভ করেনি।

এরপর বলা হয়েছে, দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এক ধরনের মানুষ এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি হবার পর দুষ্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং নৈতিক অধপতনের মধ্যে তলিয়ে যেতে যেতে একেবারে সর্বনিম্ন গভীরতায় পৌঁছে যায়। সেখানে তাদের চাইতে নীচে আর পৌঁছতে পারে না। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ ঈমান ও সৎকাজের পথ অবলম্বন করে এই পতন থেকে রক্ষা পায়। তাদেরকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার অপরিহার্য দাবি যে উন্নত স্থান সে স্থানেই তারা প্রতিষ্ঠিত থাকে। মানবজাতির মধ্যে এই দুই ধরনের লোকের অস্তিত্ব এমন একটি বাস্তব সত্য যাকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যেতে পারে না। কারণ মানুষের সমাজে সব জায়গায় সবসময় এটি দেখা যাচ্ছে।

সবশেষে এই বাস্তব সত্যটির মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষের মধ্যে যখন এই দু’টি আলাদা আলাদা এবং পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মানুষ পাওয়া যায় তখন কাজের প্রতিদানের ব্যাপারটি কেমন করে অস্বীকার করা যেতে পারে? যারা অধপতনের গভীর গর্তে নেমে গেছে এবং যারা উন্নতির উচ্চতম শিখরে পৌঁছে গেছে তাদেরকে যদি কোন প্রতিদান না দেয়া হয় এবং উভয় দলের পরিণতি একই হয়, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর রাজত্বে কোন ইনসাফ নেই। অথচ শাসককে ইনসাফ অবশ্যি করতে হবে, এটা মানুষের সাধারণ জ্ঞান এবং মানবিক প্রকৃতির দাবী। এক্ষেত্রে আল্লাহ যিনি সকল শাসকের বড় শাসক তিনি ইনসাফ করবেন না, একথা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে।
(৯৫-ত্বীন) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

এর বিষয়বস্তু হচ্ছে পুরস্কার ও শাস্তির স্বীকৃতি। এই উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম মহান মর্যাদাশালী নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানসমূহের কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছেন। এই বাস্তব বিষয়টি কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা হয়েছে। যেমন কোথাও বলা হয়েছে: মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন এবং ফেরেশতাদেরকে তার সামনে সিজদা করার হুকুম দিয়েছেন। (আল বাকারাহ ৩০- ৩৪, আর আ’রাফ ১১, আল আন’আম ১৬৫, আল হিজর ২৪-২৯, আন নামল ৬২, সা’দ ৭১-৭৩ আয়াত) কোথাও বলা হয়েছে: মানুষ আল্লাহর এমন একটি আমানতের বাহক হয়েছে যা বহন করার শক্তি পৃথিবী, আকাশ ও পাহাড় কারো ছিল না। (আল আহযাব ৭২ আয়াত) আবার কোথাও বলা হয়েছে: আমি বনী আদমকে মর্যাদাশালী করেছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনী ইসরাঈল ৭০ আয়াত) কিন্তু এখানে বিশেষ করে নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানগুলোর কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, মানুষকে এমন উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে যার ফলে তার মধ্যে নবুওয়াতের মত সর্বাধিক উন্নত পদমর্যাদা সম্পন্ন লোক জন্ম নিয়েছে। আর এই নবুওয়াতের চাইতে উঁচু পদমর্যাদা আল্লাহর অন্য কোন সৃষ্টি লাভ করেনি।

এরপর বলা হয়েছে, দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এক ধরনের মানুষ এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি হবার পর দুষ্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং নৈতিক অধপতনের মধ্যে তলিয়ে যেতে যেতে একেবারে সর্বনিম্ন গভীরতায় পৌঁছে যায়। সেখানে তাদের চাইতে নীচে আর পৌঁছতে পারে না। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ ঈমান ও সৎকাজের পথ অবলম্বন করে এই পতন থেকে রক্ষা পায়। তাদেরকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার অপরিহার্য দাবি যে উন্নত স্থান সে স্থানেই তারা প্রতিষ্ঠিত থাকে। মানবজাতির মধ্যে এই দুই ধরনের লোকের অস্তিত্ব এমন একটি বাস্তব সত্য যাকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যেতে পারে না। কারণ মানুষের সমাজে সব জায়গায় সবসময় এটি দেখা যাচ্ছে।

সবশেষে এই বাস্তব সত্যটির মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষের মধ্যে যখন এই দু’টি আলাদা আলাদা এবং পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের মানুষ পাওয়া যায় তখন কাজের প্রতিদানের ব্যাপারটি কেমন করে অস্বীকার করা যেতে পারে? যারা অধপতনের গভীর গর্তে নেমে গেছে এবং যারা উন্নতির উচ্চতম শিখরে পৌঁছে গেছে তাদেরকে যদি কোন প্রতিদান না দেয়া হয় এবং উভয় দলের পরিণতি একই হয়, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর রাজত্বে কোন ইনসাফ নেই। অথচ শাসককে ইনসাফ অবশ্যি করতে হবে, এটা মানুষের সাধারণ জ্ঞান এবং মানবিক প্রকৃতির দাবী। এক্ষেত্রে আল্লাহ যিনি সকল শাসকের বড় শাসক তিনি ইনসাফ করবেন না, একথা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে।
সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,

وَ التِّیْنِ وَ الزَّیْتُوْنِۙ

তীন ও যায়তূন,১

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১) এর ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণের মধ্যে অনেক বেশী মতবিরোধ দেখা যায়। হাসান বসরী, ইকরামাহ, আতা ইবনে আবী রাবাহ, জাবের ইবনে যায়েদ, মুজাহিদ ও ইবরাহীম নাখয়ী রাহেমাহুমূল্লাহ বলেন, তীন বা ইন্জীর (গোল হালকা কালচে বর্ণের এক রকম মিষ্টি ফল) বলতে এই সাধারণ তীনকে বুঝানো হয়েছে, যা লোকেরা খায়। আর যায়তূন বলতেও এই যায়তূনই বুঝানো হয়েছে, যা থেকে তেল বের করা হয়। ইবনে আবী হাতেম ও হাকেম এরই সমর্থনে হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) একটি উক্তিও উদ্ধৃত করেছেন। যেসব তাফসীরকার এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন তারা তীন ও যায়তূনের বিশেষ গুণাবলী ও উপকারিতা বর্ণনা করে এই মত প্রকাশ করেছেন যে, এসব গুণের কারণে মহান আল্লাহ এই দু’টি ফলের কসম খেয়েছেন। সন্দেহ নেই, একজন সাধারণ আরবী জানা ব্যক্তি তীন ও যায়তূন শব্দ শুনে সাধারণভাবে আরবীতে এর পরিচিত অর্থটিই গ্রহণ করবেন। কিন্তু দু’টি কারণে এই অর্থ গ্রহণ করা যায় না। এক, সামনে সিনাই পর্বত ও মক্কা শহরের কসম খাওয়া হয়েছে। আর দু’টি ফলের সাথে দু’টি শহরের কসম খাওয়ার ব্যাপারে কোন মিল নেই। দুই, এই চারটি জিনিসের কসম খেয়ে সামনের দিকে যে বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে সিনাই পর্বত ও মক্কা শহরের আলোচনা তার সাথে খাপ খায় কিন্তু এই ফল দু’টির আলোচনা তার সাথে মোটেই খাপ খায় না। মহান আল্লাহ কুরআন মজীদে যেখানেই কোন জিনিসের কসম খেয়েছেন তার শ্রেষ্ঠত্ব ও উপকারিতা গুণের জন্য খাননি। বরং কসম খাবার পর যে বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে সেই বিষয়ের জন্যই কসম খেয়েছেন। কাজেই এই ফল দু’টির বিশেষ গুণাবলীকে কসমের কারণ হিসেবে উপস্থাপিত করা যায় না।

অন্য কোন কোন তাফসীরকার তীন ও যায়তূন বলতে কোন কোন স্থান বুঝিয়েছেন। কা’ব আহবার, কাতাদাহ ও ইবনে যায়েদ বলেন, তীন বলতে দামেশ্ক এবং যায়তূন বলতে বায়তুল মাক্দিস বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাসের (রা.) একটি উক্তি ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে মারদুইয়া উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, তীন বলতে হযরত নূহ আলাইহি সালাম জূদী পাহাড়ে যে মসজিদ বানিয়েছিলেন তাকে বুঝানো হয়েছে। আর যায়তূন বলতে বায়তুল মাকদিস বুঝানো হয়েছে। কিন্তু একজন সাধারণ আরবের মনে “ওয়াত তীন ওয়ায যায়তূনে” (وَالتِّيۡنَ وَالزَّيۡتُوۡنَ‏ ) শব্দগুলো শুনামাত্রই এই অর্থ উকি দিতে পারতো না এবং তীন ও যায়তূন যে এই দু’টি স্থানের নাম কুরআনের প্রথম শ্রোতা আরববাসীদের কাছে তা মোটেই সুস্পষ্ট ও সুপরিচিত ছিল না।

তবে যে এলাকায় যে ফলটি বিপুল পরিমাণে উৎপন্ন হতো অনেক সময় সেই ফলের নামে সেই এলাকার নামকরণ করার রীতি আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই প্রচলন অনুসারে তীন ও যায়তূন শব্দের অর্থ এই ফল দু’টি উৎপাদনের সমগ্র এলাকা হতে পারে। আর এটি হচ্ছে সিরিয়া ও ফিলিস্তীন এলাকা। কারণ সে যুগের আরবে তীন ও যায়তূন উৎপাদনের জন্য এ দু’টি এলাকাই পরিচিত ছিল। ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়েম, যামাখশারী ও আলুসী রাহেমাহুমূল্লাহ এই ব্যাখ্যা অবলম্বন করেছেন। অন্যদিকে ইবনে জারীর প্রথম বক্তব্যটিকে অগ্রাধিকার দিলেও একথা মেনে নিয়েছেন যে, তীন ও যায়তূন মানে এই ফল দু’টি উৎপাদনের এলাকাও হতে পারে। হাফেজ ইবনে কাসীরও এই ব্যাখ্যাটি প্রণিধানযোগ্য মনে করেছেন।

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,

وَ طُوْرِ سِیْنِیْنَۙ

সিনাই পর্বত২

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:২) আসলে বলা হয়েছে তূরে সীনীনা। (طُوۡرِ سِيۡنِيۡنَۙ ) হচ্ছে সিনাই উপদ্বীপের দ্বিতীয় নাম। একে সাইনা বা সীনাই এবং সীনীনও বলা হয়। কুরআনে এক জায়াগায় “তূরে সাইনা” ( طور سيناء ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে যে এলাকায় তূর পর্বত অবস্থিত তা সীনাই নামেই খ্যাত। তাই আমি অনুবাদে সীনাই শব্দ ব্যবহার করেছি।
সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-4
টিকা নং:3,

لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِیْۤ اَحْسَنِ تَقْوِیْمٍ٘

আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়।৩

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৩) একথাটির ওপরই তীন ও যায়তূনের এলাকা অর্থাৎ সিরিয়া ও ফিলিস্তীন এবং তূর পর্বত ও মক্কার নিরাপদ শহরের কসম খাওয়া হয়েছে। মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে , একথার মানে হচ্ছে এই যে তাকে, এমন উন্নত পর্যায়ের দৈহিক সৌষ্ঠব দান করা হয়েছে যা অন্য কোন প্রাণীকে দেয়া হয়নি। তাকে এমন উন্নত পর্যায়ের চিন্তা, উপলব্ধি জ্ঞান ও বুদ্ধি দান করা হয়েছে ,যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি। তারপর যেহেতু নবীগণই হচ্ছেন মানবজাতির প্রতি এই অনুগ্রহ ও পূর্ণতাগুণের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ের নমুনা এবং মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে নবুওয়াত দান করার জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছেন তার জন্য এর চাইতে বড় মর্যাদা আর কিছুই হতে পারে না, তাই মানুষের সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি হবার প্রমাণ স্বরূপ আল্লাহর নবীদের সাথে সম্পর্কিত স্থানসমূহের কসম খাওয়া হয়েছে। সিরিয়া ও ফিলিস্তীন এলাকায় হযরত ইবরাহীম আলাইহি সালাম থেকে নিয়ে হযরত ঈসা আলাইহি সালাম পর্যন্ত অসংখ্য নবীর আবির্ভাব ঘটে। তূর পর্বতে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নবুওয়াত লাভ করেন। আর মক্কা মু’আয্যমার ভিত্তি স্থাপিত হয় হযরত ইবরাহীম ( আ) ও হযরত ইসমাঈলের ( আ) হাতে। তাদেরই বদৌলতে এটি আরবের সবচেয়ে পবিত্র কেন্দ্রীয় নগরে পরিণত হয়। হযরত ইবরাহীম (আ) এ দোয়া করেছিলেনঃ ( رَبّ اجْعَلْ هذَا بَلَدًا امِنًا ) “হে আমার রব! একে একটি নিরাপদ শহরে পরিণত করো।” ( আল বাকারাহ ১২৬) আর এই দোয়ার বরকতে আরব উপদ্বীপের সর্বত্র বিশৃংখলার মধ্যে একমাত্র এই শহরটিই আড়াই হাজার বছর থেকে শান্তি ও নিরাপত্তার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কাজেই এখানে বক্তব্যের অর্থ হচ্ছেঃ আমি মানবজাতিকে এমন উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছি যে, তার মধ্যে নবুওয়াতের ন্যায় মহান মর্যাদার অধিকারী মানুষের জন্ম হয়েছে।

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-5
টিকা নং:4,

ثُمَّ رَدَدْنٰهُ اَسْفَلَ سٰفِلِیْنَۙ

তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৪

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৪) মুফাস্সিরগণ সাধারণত এর দু’টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। এক, আমি তাকে বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার, বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। দুই, আমি তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বক্তব্যের যে উদ্দেশ্যটি প্রমাণ করার জন্য এই সূরাটি নাযিল করা হয়েছে এই দু’টি অর্থকে তার জন্য প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে না। সূরাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, আখেরাতে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা যে যথার্থ সত্য তা প্রমাণ করা। এদিক দিয়ে মানুষদের মধ্যে থেকে অনেককে চরম দুর্বলতম অবস্থায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয় এবং মানুষদের একটি দলকে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে— এ দু’টি কথার একটিও এই অর্থের সাথে খাপ খায় না। প্রথম কথাটি শাস্তি ও পুরস্কারের প্রমাণ হতে পারে না। কারণ ভালো ও খারাপ উভয় ধরনের লোক বার্ধক্যের শিকার হয়। কাউকে তার কাজের শাস্তি ভোগ করার জন্য এই অবস্থার শিকার হতে হয় না। অন্যদিকে দ্বিতীয় কথাটি আখেরাতে কার্যকর হবে একে কেমন করে এমন সব লোকের কাছে হিসেবে পেশ করা যেতে পারে যাদের থেকে আখেরাতে শাস্তি ও পুরস্কার লাভের ব্যবস্থার পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করার জন্য এই সমস্ত যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে? তাই আমার মতে আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে, সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুষ্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে দুষ্কৃতিরই সুযোগ দান করেন এবং নিচের দিকে গড়িয়ে দিতে দিতে তাকে এমন নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেন যে, অন্য কোন সৃষ্টি সেই পর্যায়ে নেমে যেতে পারে না। এটি একটি বাস্তব সত্য। মানুষের সমাজে সচরাচর এমনটি দেখা যায়। লোভ, লালসা, স্বার্থবাদিতা, কামান্ধতা, নেশাখোরী, নীচতা, ক্রোধ এবং এই ধরনের অন্যান্য বদ স্বভাব যেসব লোককে পেয়ে বসে তারা সত্যিই নৈতিক দিক দিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছে যায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ শুধুমাত্র একটি কথাই ধরা যাক। একটি জাতি যখন অন্য জাতির প্রতি শত্রুতা পোষণ করার ব্যাপারে অন্ধ হয়ে যায় তখন সে হিংস্রতার দুনিয়ায় হিংস্র পশুদেরকেও হার মানায়। একটি হিংস্র পশু কেবলমাত্র নিজের ক্ষুধার খাদ্য যোগাড় করার জন্য অন্য পশু শিকার করে। যে ব্যাপকভাবে পশুদের হত্যা করে চলে না। কিন্তু মানুষ নিজেই নিজের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে চলছে। পশুরা কেবলমাত্র নিজেদের নখর ও দাঁত ব্যবহার করে শিকার করে। কিন্তু এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্ট মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে বন্দুক, কামান, ট্যাংক, বিমান, আণবিক বোমা, উদজান বোমা এবং অন্যান্য অসংখ্য মারণান্ত্র তৈরী করেছে এবং সেগুলোর সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সুবিশাল জনপদগুলো ধবংস করে দিচ্ছে। পশুরা কেবল আহত বা হত্যা করে। কিন্তু মানুষ নিজেদেরই মতো মানুষকে নির্যাতন করার জন্য এমন সব ভয়াবহ পদ্ধতি আবিস্কার করেছে যেগুলোর কথা পশুরা কোন দিন কল্পনাও করতে পারে না। তারপর নিজেদের শত্রুতা ও প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য তারা নীচতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তারা মেয়েদের উলংগ করে তাদের মিছিল বের করে। এক একজন মেয়ের ওপর দশ বিশ জন ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করে। বাপ, ভাই ও স্বামীদের সামনে তাদের স্ত্রী ও মা-বোনদের শ্লীলতাহানি করে। মা-বাপের সামনে সন্তানদেরকে হত্যা করে। নিজের গর্ভজাত সন্তানদের রক্ত পান করার জন্য মাকে বাধ্য করে। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে এবং জীবন্ত কবর দেয়। দুনিয়ায় পশুদের মধ্যেও এমন কোন হিংস্রতম গোষ্ঠী নেই যাদের বর্বরতাকে কোন পর্যায়ে মানুষদের এই বর্বরতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। মানুষের অন্যান্য বড় বড় গুণের ব্যাপারেও এই একই কথা বলা যায়। এগুলোর মধ্য থেকে যেটির দিকে মানুষ মুখ ফিরিয়েছে সেটির ব্যাপারে নিজেকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি প্রমাণ করেছে। এমনকি ধর্ম যা মানুষের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তাকেও সে এমন সংকীর্ণ করে দিয়েছে, যার ফলে সে গাছপালা, জীব-জন্তু ও পাথরের পূজা করতে করতে অবনতির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে নারী ও পুরুষের লিংগেরও পূজা করতে শুরু করেছে। দেবতাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধর্ম মন্দিরে দেবদাসী রাখছে। তাদের সাথে ব্যভিচার করাকে পুণ্যের কাজ মনে করছে। যাদেরকে তারা দেবতা ও উপাস্য গণ্য করেছে তাদের সাথে সম্পর্কিত দেবকাহিনীতে এমন সব কুৎসিত কাহিনী জুড়ে দিয়েছে যা জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মানুষের জন্যও লজ্জার ব্যাপার।

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-6
টিকা নং:5,

اِلَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمْ اَجْرٌ غَیْرُ مَمْنُوْنٍؕ

তাদেরকে ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করতে থাকে। কেননা তাদের রয়েছে এমন পুরস্কার যা কোনদিন শেষ হবে না।৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৫) যেসব মুফাস্সির “আসফালা সা-ফেলীন ( اَسْفَلَ سافِلِيْنَ ) —এর অর্থ করেছেন, বার্ধক্যের এমন একটি অবস্থা যখন মানুষ নিজের চেতনা ও স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, তারা এই আয়াতের অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন, “কিন্তু যারা নিজেদের যৌবনকালে ও সুস্থাবস্থায় ঈমান এনে সৎকাজ করে তাদের জন্য বার্ধক্যের এই অবস্থায়ও সেই নেকী লেখা হবে এবং সেই অনুযায়ী তারা প্রতিদানও পাবে। বয়সের এই পর্যায়েও তারা ঐ ধরনের সৎকাজগুলো করেনি বলে তাদের ভালো প্রতিদান দেবার ক্ষেত্রে কিছুই কম করা হবে না।” আর যেসব মুফাস্সির “আসফালা সাফেলীনের” দিকে উল্টো ফিরিয়ে দিবার অর্থ ‘জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে নিক্ষেপ করা’ করেছেন তাদের মতে এই আয়াতের অর্থ হচ্ছেঃ “ঈমান এনে যারা সৎকাজ করে তারা এর বাহিরে তাদেরকে এই পর্যায়ে উল্টো ফেরানো হবে না। বরং তারা এমন পুরস্কার পাবে যার ধারাবাহিকতা কোনদিন খতম হবে না।” কিন্তু এই সূরায় শাস্তি ও পুরস্কারের সত্যতার পক্ষে যে যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে তার সাথে এই উভয় অর্থের কোন মিল নেই। আমার মতে এই আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে, মানুষের সমাজে যেমন সাধারণভাবে দেখা যায়, যেসব লোকের নৈতিক অধপতন শুরু হয় তারা অধপাতে যেতে যেতে একেবারে নীচতমদের নীচে চলে যায়, ঠিক তেমনি প্রতি যুগে সাধারণভাবে দেখা যায়, যারা আল্লাহ, রসূল ও আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকাজের কাঠামোয় নিজেদের জীবনকে ঢেলে সাজিয়ে নেয় তারা এই পতনের হাত থেকে বেঁচে গেছে এবং আল্লাহ মানুষকে যে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছিলেন তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাই তারা অশেষ শুভ প্রতিদানের অধিকারী। অর্থাৎ তারা এমন পুরস্কার পাবে, যা তাদের যথার্থ পাওনা থেকে কম হবে না এবং যার ধারাবাহিকতা কোনদিন শেষও হবে না।

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-7
টিকা নং:6,

فَمَا یُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّیْنِؕ

কাজেই (হে নবী!) এরপর পুরস্কার ও শাস্তির ব্যাপারে কে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলতে পারে?৬

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৬) এই আয়াতটির আর একটি অনুবাদ এও হতে পারেঃ “কাজেই (হে মানুষ) এরপর কোন্ জিনিসটি তোমাকে শাস্তি ও পুরস্কারের বিষয়টি মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে উদ্বুদ্ধ করে? উভয় অর্থের ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও মূল বক্তব্য একই থাকে। অর্থাৎ মানুষের সামাজে প্রকাশ্যে দেখা যায় সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্ট মানুষের একটি দল নৈতিক অধপাতে যেতে যেতে একেবারে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছে যায় আবার অন্য একটি দল সৎকাজের পথ অবলম্বন করে এই পতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে এবং মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার যে উদ্দেশ্য ছিল তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ অবস্থায় পুরস্কার ও শাস্তিকে কেমন করে মিথ্যা বলা যেতে পারে? বুদ্ধি কি একথা বলে, উভয় ধরনের মানুষের একই পরিণাম হবে? ইনসাফ কি একথাই বলে, অধপাতে যেতে যেতে নীচতমদেরও নীচে যারা পৌঁছে যায় তাদেরকে কোন শাস্তিও দেয়া যাবে না এবং এই অধপতন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে যারা পবিত্র জীবন যাপন করে তাদেরকে কোন পুরস্কারও দেয়া যাবে না? এই কথাটিকেই কুরআনের অন্যান্য স্থানে এভাবে বলা হয়েছেঃ

اَفَنَجۡعَلُ الۡمُسۡلِمِيۡنَ كَالۡمُجۡرِمِيۡنَ مَا لَكُمۡ كَيۡفَ تَحۡكُمُوۡنَ‌ۚ

“আমি কি অনুগতদেরকে অপরাধীদের মতো করে দেবো? তোমাদের কি হয়ে গেছে? তোমরা কেমন ফায়সালা করছো? ( আল কলম ৩৫-৩৬ আয়াত )।

اَمۡ حَسِبَ الَّذِيۡنَ اجۡتَرَحُوۡا السَّيِّاٰتِ اَنۡ نَّجۡعَلَهُمۡ كَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ ۙ سَوَآءً مَّحۡيَاهُمۡ وَمَمَاتُهُمۡ‌ؕ سَآءَ مَا يَحۡكُمُوۡنَ

“দুষ্কৃতকারীরা কি একথা মনে করেছে, আমি তাদেরকে এমন লোকদের মতো করে দেবো যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে? উভয়ের জীবন ও মৃত্যু এক রকম হবে? খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত যা এরা করছে।” ( আল জাসিয়া ২১ আয়াত )

সুরা: আত-ত্বীন
আয়াত নং :-8
টিকা নং:7,

اَلَیْسَ اللّٰهُ بِاَحْكَمِ الْحٰكِمِیْنَ۠

আল্লাহ কি সব শাসকের চাইতে বড় শাসক নন?৭

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৭) অর্থাৎ যখন দুনিয়ার ছোট ছোট শাসকদের থেকেও তোমরা চাও এবং আশা করে থাকো যে, তারা ইনসাফ করবে, অপরাধীদেরকে শাস্তি দেবে এবং ভালো কাজ যারা করবে তাদেরকে পুরস্কৃত করবে তখন আল্লাহর ব্যাপারে তোমরা কি মনে করো? তিনি কি সব শাসকের বড় শাসক নন? যদি তোমরা তাঁকে সবচেয়ে বড় শাসক বলে স্বীকার করে থাকো তাহলে কি তাঁর সম্পর্কে তোমরা ধারণা করো যে, তিনি ইনসাফ করবেন না? তাঁর সম্পর্কে কি তোমরা এই ধারণা পোষণ করো যে, তিনি মন্দ ও ভালোকে একই পর্যায়ে ফেলবেন? তোমরা কি মনে করো তাঁর দুনিয়ায় যারা সবচেয়ে খারাপ কাজ করবে আর যারা সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তারা সবাই মরে মাটির সাথে মিশে যাবে। কাউকে তার খারাপ কাজের শাস্তি দেয়া হবে না এবং কাউকে তার ভালো কাজের পুরস্কারও দেয়া হবে না?

ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনুল মুনযির, বায়হাকী, হাকেম ও ইবনে মারদুইয়া হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন “ওয়াত তীনে ওয়ায্যায়তূনে” সূরা পড়তে পড়তে (اَلَيۡسَ اللّٰهُ بِاَحۡكَمِ الۡحٰكِمِيۡنَ ) আয়াতটিতে পৌঁছে তখন যেন সে বলে। (وَاَنًا عاى اج ذالِكَ مِنَ اشَّا هِدِيْنَ ا ) (হ্যাঁ, এবং আমি তার ওপর সাক্ষদানকারীদের একজন)। আবার কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এই আয়াতটি পড়তেন, তিনি বলতেন, (سُبْحانَكَ فَبَآى ) (হে আল্লাহ তুমি পবিত্র! আর তুমি এই যা বলছো তা সত্য।)
নামকরণ ও গুরুত্ব:

التِّيْنِ তীন হচ্ছে ডুমুর জাতীয় এক প্রকার মিষ্টি ফল, যার গাছ ও ফল দেখতে ডুমুর গাছ ও ফলের মতই।

প্রথম আয়াতে উল্লিখিত তীন শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। বারা বিন আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) সফরে দুরাকাত সালাতের কোন এক রাকাতে সূরা তীন পাঠ করতেন। আমি তাঁর চেয়ে মধুর ও উত্তম কণ্ঠস্বরে কিরাত আর কারো শুনিনি। (সহীহ বুখারী হা. ৭৬৯, সহীহ মুসলিম হা. ১৭৫)

তাফসীর :

অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেন: তীন ও যাইতুন হলো দুটি প্রসিদ্ধ ফল যা মানুষ খায়। (তাফসীর মুয়াসসার) আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি গাছের শপথ করেছেন কারণ এ দুটি গাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় অধিক উপকারী। এ বিষয়ে অনেক চিকিৎসাবিদ আলোচনা করেছেন। যহহাক (রহঃ) বলেছেন: তীন হলো: মাসজিদে হারাম আর যাইতুন হলো: মাসজিদে আকসা। ইবনু জায়েদ (রহঃ) বলেন: তীন হলো: দামেস্কের মাসজিদ আর যাইতুন হলো: মাসজিদে আকসা। এছাড়াও অনেক মতামত পাওয়া যায়। (ইবনু কাসীর, ফাতহুল কাদীর)

(وَطُوْرِ سِيْنِيْنَ) তুরে সিনাই হলো সেই পাহাড় যার ওপর আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছেন।

(الْبَلَدِ الْأَمِيْنِ)

নিরাপদ শহর হলো মক্কা, আবার কতক আলেম বলেছেন: প্রকৃতপক্ষে এ হচ্ছে তিনটি জায়গা যার প্রত্যেকটিতে আল্লাহ তা‘আলা একজন করে “উলূল আযম” রাসূল প্রেরণ করেছেন। তীন ও যাইতুন দ্বারা বাইতুল মাকদিস এলাকাকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে। সিনাই পর্বত দ্বারা মূসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ তা‘আলা যে পাহাড়ের ওপর কথা বলেছেন তা বুঝানো হয়েছে।

“নিরাপদ শহর” দ্বারা মক্কাকে বুঝানো হয়েছে। যেখানে শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর)

(فِيْٓ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ)

পূর্বে উল্লিখিত তিনটি স্থানের শপথের জবাব হলো এ আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিম্নমুখী করে। কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহে সোজা করে।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : تقويم অর্থ সোজা সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিসমূহের মধ্যে মানুষের চেয়ে উত্তম আর কোন সৃষ্টি নেই। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে, বিবেক বুদ্ধি বোধশক্তি, শ্রবণ, প্রজ্ঞা ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছেন।

(أَسْفَلَ سٰفِلِيْنَ)

এখানে অনেক মানুষের শারীরিক পরিবর্তনের কথা বলেছেন, আবার অনেকে হীনতার অর্থ নিয়েছেন যে, মানুষ কর্মের কারণে চতুষ্পদ প্রাণীর চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়। তবে সঠিক অর্থ হলো : এখানে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হচ্ছে। কাফিররা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান না আনার কারণে নিজেদেরকে উঁচুমর্যাদা আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি) থেকে জাহান্নামের নিম্ন দেশে ঠেলে দিচ্ছে। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা পরের আয়াতে ঈমানদার ও সৎ আমলকারী ব্যক্তিদের আলাদা করেছেন। কেননা তারা ঈমান এনে এ লাঞ্ছনা থেকে নিজেদের রক্ষা করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরা আছরে বলছেন:

(إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ إِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَتَوَاصَوْا بِالْـحَقِّ ৫ لا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْر)‏

“নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরস্পরকে হক্বের উপদেশ দেয় এবং উপদেশ দেয় সবরের।” (সূরা আসর ১০৩: ২-৩)

(فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّيْنِ)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে এমন নিদর্শনাবলী সুষ্পষ্ট করে দেয়ার পরেও কোন্ জিনিস তোমাদেরকে পুনরুত্থানের প্রতি অবিশ্বাসী হতে অনুপ্রাণিত করছে?

(أَلَيْسَ اللّٰهُ بِأَحْكَمِ الْـحٰكِمِيْنَ)

অর্থাৎ যে আল্লাহ তা‘আলা বিচারের দিনকে নির্ধারিত করে রেখেছেন তিনি কি সৃষ্টি জীবের মাঝে ন্যায় বিচার করবেন না? হ্যাঁ, অবশ্যই তিনি মানুষকে তাদের কর্মের ভাল-মন্দ প্রতিদান দেয়ার জন্য ন্যায় বিচার করবেন। এ সূরার শেষে

بلي وانا علي ذلك من الشاهدين

পড়ার প্রমাণ বিশুদ্ধ নয়। (তিরমিযী হা. ৩৩৪৭, সনদ দুর্বল।)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. তীন ও যাইতুনের তাফসীর জানতে পারলাম।
২. মক্কার মর্যাদা ও গুরুত্ব জানলাম।
৩. মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষকে উত্তম অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
৪. মু’মিনদের মর্যাদাবান ও কাফিরদের অসম্মানের পাত্র করার হিকমত জানলাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “নবী করীম (সঃ) তাঁর এক সফরে দু’রাকআত নামাযের কোন এক রাকআতে সূরা তীন পাঠ করছিলেন। আমি তার চেয়ে মধুর ও উত্তম কণ্ঠস্বর অথবা কিরআত আর কারো শুনিনি।

১-৮ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে তাফসীরকারগণ বহু উক্তির উপর মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে তীন’ দ্বারা দামেস্কের মসজিদকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তীন’ হলো সরাসরি দামেস্ক শহর। অন্য কেউ বলেন যে, ওটা হলো জুদী পাহাড়ে অবস্থিত হযরত নূহের (আঃ) মসজিদ। হযরত মুজাহিদের (রঃ) মতে এটা হলো সাধারণ আনজীর বা ডুমুর জাতীয় ফল।

যায়তুনের অর্থ ও বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, ওটা হলো বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ। অন্য কারো মতে যায়তুন হলো ঐ ফল যাকে চিপে রস অর্থাৎ তৈল বের করা হয়।

ভূরে সীনীন হলো ঐ পাহাড় যেখানে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলেছিলেন।

(আরবি) দ্বারা মক্কা শরীফকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। কেউ কেউ বলেন যে, এই তিন জায়গায় তিনজন বিশিষ্ট নবীকে (আঃ) প্রেরণ করা হয়েছিল। তুরে সীনীন এর অর্থ হলো তুরে সায়না অর্থাৎ সিনাই পাহাড়। এই পাহাড়ে আল্লাহ জাল্লাজালালুহু হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে বাক্য বিনিময় করেছেন। বালাদুল আমীন হলো মক্কা মুআযযামা, যেখানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) পাঠানো হয়েছে। তাওরাতের শেষেও এ তিনটি জায়গার নাম উল্লিখিত রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, তূরে সায়না থেকে আল্লাহ তা’আলা এসেছেন অর্থাৎ তিনি হযরত মূসার (আঃ) সাথে কথা বলেছেন আর সা’ঈর। অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের পাহাড় থেকে তিনি নুর চমকিত করেছেন। অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ) কে সেখানে প্রেরণ করেছেন এবং ফারানের শীর্ষে তিনি উন্নীত হয়েছেন অর্থাৎ মক্কার পাহাড় থেকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর এই তিনজন বিশিষ্ট নবীর ভাষা এবং সত্তা সম্পর্কে পর্যায়ক্রমেই উল্লেখ করা হয়েছে।

এইসব শপথের পর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ নিশ্চয়ই আমি মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর ছাঁচে ঢালাই করেছি, অতঃপর তাকে আমি অধঃপতিত হীন অবস্থার লোকদের চেয়েও হীনতম করে দিই। অর্থাৎ জাহান্নামের অধিবাসী করে দিই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য না করে থাকে। এ কারণেই যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে তাদেরকে পৃথক করে নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা অতি বৃদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কুরআন জমা করেছে সে বার্ধক্য ও হীন অবস্থায় উপনীত হবে না। ইবনে জারীর (রঃ) এ কথা পছন্দ করেছেন। কিন্তু অনেক ঈমানদারও তো বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হন। কাজেই সঠিক কথা হলো ওটাই যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।” (১০৩:১-৩) ইতিপূর্বেও এরূপ উক্তি উল্লিখিত হয়েছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে মানুষ! তুমি যখন তোমার প্রথমবারের সৃষ্টি সম্পর্কে জানো তখন শাস্তি ও পুরস্কারের দিনের আগমনের কথা শুনে এবং পুনরায় জীবিত হওয়ার অর্থাৎ পুনরুত্থানের কথা শুনে এটাকে বিশ্বাস করছো না কেন? এ অবিশ্বাসের কারণ কি? কোন বস্তু তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবিশ্বাসী করেছে? যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে পুনরায় সৃষ্টি করা কি কঠিন কাজ?

হযরত মুজাহিদ (রঃ) একবার হযরত ইবনে আব্বাসকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন “এখানে কি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে বুঝানো হয়েছে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। এখানে শুধু সাধারণ মানুষকেই বুঝানো হয়েছে।”

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তিনি কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? তিনি কারো প্রতি কোন প্রকার যুলুম বা অত্যাচার করেন না। তিনি অবিচার করেন না। এ কারণেই তিনি কিয়ামত বা শেষ বিচারের দিনকে অবশ্যই আনয়ন করবেন এবং সেই দিন তিনি প্রত্যেক যালিম, অত্যাচারীর নিকট থেকে যুলুমঅত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।

ইতিপূর্বে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফু’ রূপে একটি হাদীস গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ (আরবি) সূরাটি পাঠ করবে এবং সূরার শেষের (আরবি)পর্যন্ত পৌঁছবে তখন যেন সে বলেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হ্যা, এবং আমিও এর উপর সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে একজন।”

(Book#1208/O Ye Mankind :-18)
[ # Verily, We created man in the best form.:-]
Surah.95 : At-Tin
Para:30 Ayat:- 1-8
www.motaher21.net

# (English)Tafsir-Ibne Kasir :-

95:1

وَ التِّیۡنِ وَ الزَّیۡتُوۡنِ ۙ﴿۱﴾

By the fig and the olive

The Explanation of At-Tin and what comes after it

Allah says:

وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ

By At-Tin and Az-Zaytun.

Al-Awfi reported from Ibn Abbas that what is meant by At-Tin is the Masjid of Nuh that was built upon Mount Al-Judi.

Mujahid said,

“It is this fig that you have.”

وَالزَّيْتُونِ
By Az-Zaytun,

Ka`b Al-Ahbar, Qatadah, Ibn Zayd and others have said,

“It is the Masjid of Jerusalem (Bayt Al-Maqdis).”

Mujahid and `Ikrimah said,

“It is this olive which you press (to extract the oil).”

وَطُورِ سِينِينَ

95:2

وَ طُوۡرِ سِیۡنِیۡنَ ۙ﴿۲﴾

And [by] Mount Sinai

By Tur Sinin.

Ka`b Al-Ahbar and several others have said,

“It is the mountain upon which Allah spoke to Musa.”

وَهَذَا الْبَلَدِ الاَْمِينِ

95:3

وَ ہٰذَا الۡبَلَدِ الۡاَمِیۡنِ ۙ﴿۳﴾

And [by] this secure city [Makkah],

By this city of security. meaning Makkah.

This was said by Ibn `Abbas, Mujahid, `Ikrimah, Al-Hasan, Ibrahim An-Nakha`i, Ibn Zayd and Ka`b Al-Ahbar.

There is no difference of opinion about this.

Some of the Imams have said that these are three different places, and that Allah sent a Messenger to each of them from the Leading Messengers, who delivered the Great Codes of Law.

– The first place is that of the fig and the olive, which was Jerusalem, where Allah sent `Isa bin Maryam.

– The second place is Mount Sinin, which is Mount Sinai where Allah spoke to Musa bin `Imran.

– The third place is Makkah, and it is the city of security where whoever enters is safe. It is also the city in which Muhammad was sent.

They have said that these three places are mentioned at the end of the Tawrah. The verse says,

– “Allah has come from Mount Sinai – meaning the one upon which Allah spoke to Musa bin `Imran;

– and shined fromSa`ir – meaning the mountain of Jerusalem from which Allah sent `Isa;

– and appeared from the mountains of Faran – meaning the mountains of Makkah from which Allah sent Muhammad .”

Thus, He mentioned them in order to inform about them based upon their order of existence in time. This is why He swore by a noble place, then by a nobler place, and then by a place that is the nobler than both of them.
Man becoming Lowly even though He was created in the Best Form

and the Result of that Allah says,

لَقَدْ خَلَقْنَا الاِْنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ

95:4

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫﴿۴﴾

We have certainly created man in the best of stature;

Verily, We created man in the best form.

This is the subject being sworn about, and it is that Allah created man in the best image and form, standing upright with straight limbs that He beautified.

ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ

95:5

ثُمَّ رَدَدۡنٰہُ اَسۡفَلَ سٰفِلِیۡنَ ۙ﴿۵﴾

Then We return him to the lowest of the low,

Then We reduced him to the lowest of the low.

meaning, to the Hellfire.

This was said by Mujahid, Abu Al-Aliyah, Al-Hasan, Ibn Zayd and others.

Then after this attractiveness and beauty, their destination will be to the Hell-fire if they disobey Allah and belie the Messengers.

This is why Allah says

95:6

اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَہُمۡ اَجۡرٌ غَیۡرُ مَمۡنُوۡنٍ ؕ﴿۶﴾

Except for those who believe and do righteous deeds, for they will have a reward uninterrupted.

إِلاَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ

Save those who believe and do righteous deeds.

Some have said,
ثُمَّ رَدَدْنَـهُ أَسْفَلَ سَـفِلِينَ
(Then We reduced him to the lowest of the low).

“This means decrepit old age.”

This has been reported from Ibn `Abbas and `Ikrimah.

Ikrimah even said,

“Whoever gathers the Qur’an (i.e., he memorizes it all), then he will not be returned to decrepit old age.”

Ibn Jarir preferred this explanation.

Even if this was the meaning, it would not be correct to exclude the believers from this, because some of them are also overcome by the senility of old age. Thus, the meaning here is what we have already mentioned (i.e., the first view), which is similar to Allah’s saying,

وَالْعَصْرِ إِنَّ الاِنسَـنَ لَفِى خُسْرٍ إِلاَّ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَـتِ

By Al-`Asr. Verily man is in loss, except those who believe and perform righteous deeds. (103:1-3)

Concerning Allah’s statement,

فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ

Then they shall have a reward without end.

meaning, that will not end, as we have mentioned previously.

Then Allah says

95:7

فَمَا یُکَذِّبُکَ بَعۡدُ بِالدِّیۡنِ ؕ﴿۷﴾

So what yet causes you to deny the Recompense?

فَمَا يُكَذِّبُكَ

Then what causes you to deny,

meaning, `O Son of Adam!’

بَعْدُ بِالدِّينِ

after this, the Recompense,

meaning, `in the recompense that will take place in the Hereafter.

For indeed you know the beginning, and you know that He Who is able to begin (the creation) is also able to repeat it which is easier. So what is it that makes you deny the final return in the Hereafter after you have known this’

Then Allah says,

أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ

95:8

اَلَیۡسَ اللّٰہُ بِاَحۡکَمِ الۡحٰکِمِیۡنَ ٪﴿۸﴾

Is not Allah the most just of judges?

Is not the Allah the best of judges,

meaning, `is He not the best of judges, Who does not oppress or do any injustice to anyone’

And from His justice is that He will establish the Judgement, and He will give retribution to the person who was wronged in this life against whoever wronged him.

This is the end of the Tafsir of Surah At-Tin and all praise and thanks are due to Allah

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply