Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১২১৭/হে মানুষ :-২৪) [#খোটাদানকারী এবং গীবতকারী:- #অর্থ-সম্পদকে মানুষ সর্বশক্তিমান বলে মনে করে। :-] সুরা: ১০৪ এক্স: আল-হুমাযাহ পারা:৩০ ১-৯ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- #তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:- #তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:- # তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:- # তাফসীরে ইবনে কাছীর:- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book#1217/O Ye Mankind:-24] [ # He thinks that his wealth will make him immortal.:-] Surah.104: Al-Humaza Para:30 Ayat:- 1- www.motaher21.net

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২১৭/হে মানুষ :-২৪)
[#খোটাদানকারী এবং গীবতকারী:-
#অর্থ-সম্পদকে মানুষ সর্বশক্তিমান বলে মনে করে। :-]
সুরা: ১০৪ এক্স: আল-হুমাযাহ
পারা:৩০
১-৯ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1217/O Ye Mankind:-24]
[ # He thinks that his wealth will make him immortal.:-]
Surah.104: Al-Humaza
Para:30 Ayat:- 1-
www.motaher21.net

সুরা: আল-হুমাযাহ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:১০৪

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক যুগের পরিস্থিতির একটি বাস্তব দিক এই সূরায় তুলে ধরা হয়েছে। আসলে প্রত্যেক সমাজের পরিবেশেই এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে৷ এক ধরনের সংকীর্ণমনা ছোট লোক অনেক সমাজেই দেখা যায়। তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে নিজের প্রতিপত্তি জমাতে চেষ্টা করে। এ জন্য সে যত নিচে নামা সম্ভব নামে ৷ তারা ভাবে, সম্পদই হলো জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান পুঁজি । এর চেয়ে আর কোনো মুল্যবান জিনিস নেই৷ মানবিক, নৈতিক কিংবা সামাজিক মুল্যবোধ সবই অর্থ-সম্পদের সামনে হেয় ও গৌণ । তারা মনে করে, অর্থের মালিক হতে পারলেই সকল মানুষের মান-মর্যাদা ও মূল্যবোধ বিনা হিসাবে তার করতলগত হবে ।

ফী জিলালিল কুরআন:

অর্থ-সম্পদকে এই শ্রেণীর মানুষ সর্বশক্তিমান খোদা বলে মনে করে। কোনো কিছুই তার অসাধ্য নয়। আর যদি তার দৃষ্টিতে কোনো হিসাব-নিকাশ ও কর্মফলের অবকাশ থেকেও থাকে, তবু সে টাকাকড়ি দিয়ে তারও গতিরোধ করতে পারবে বলে মনে করে। এ জন্য অর্থ লোলুপতায় তারা গতিসীমার বাধ মানে না। টাকাকে সে অনবরত গুণে আনন্দ পায়। এর পাশাপাশি তার ভেতরে এক ধরনের পাপাসক্ত ও অপরাধ্ প্রবণ মনোবৃত্তি বিকাশ লাভ করতে থাকে । এই মনোবৃত্তি তাকে মানুষের সম্মান ও মর্যাদাকে পদদলিত করা, পরনিন্দা করা, ঠাঁট্টা-বিদ্রুপ ও কটাক্ষ করা, মুখে কুৎসা রটানো, অংগভংগি দ্বারা উপহাস করা, কথায় ও ইংগিতে ব্যাংগ করা অথবা তাদের উপাধি ও প্রতীকগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, ইত্যকার অপতৎপরতায় প্ররোচিত করে! এটা মানব চরিত্রের একটা ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট রূপ । মানবতা, ভদ্রতা, সৌজন্য ও ঈমান বিবর্তিত হলেই মানুষের ভেতরে এহেন নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য চালচলন দেখা দেয়। ইসলাম এ ধরনের নিচু মানের মানসিকতাকে ঘৃণা করে। কেননা উন্নত নৈতিকতা তার ভূষণ । সে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, কটাক্ষপাত, পরনিন্দা ও কুৎসা রটনাকে একাধিকবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে এ সূরায় যেভাবে অতিমাত্রায়, ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে হুমকি ও ধমক দিয়ে এ সবের উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মোশরেকদের পক্ষ থেকে রসুল (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছিলো, যার জবাবে এখানে অত্যন্ত কঠোর তাষায় হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে৷ কিছু কিছু রেওয়ায়াতে কতিপয় নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামোল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেসব রেওয়ায়াত নির্ভরযোগ্য নয়। ওই সব রেওয়ায়াতের মধ্য থেকে যেটুকু আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করেছি, তার উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থাকছি। পুজিপতিদের জন্যে সাবধান বাণী : এতে যে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে, তা কেয়ামতের একটি দৃশ্য বর্ণনার মাধ্যমে করা হয়েছে। এতে রয়েছে নির্যাতনের দৈহিক ও মানসিক রূপ এবং আগুনের বাস্তব ও রূপক দৃশ্য ৷ এখানে অপরাধ এবং তার শক্তি দানের পদ্ধতির মধ্যে একটা তুলনা লক্ষণীয় । কথায় ও ইংগিতে নিন্দা ও কটাক্ষকারীর বর্ণনা এরূপ দেয়া হয়েছে যে, মানুষের সাথে ব্যাংগ বিদ্রুপ করা ও তাদের ইযযত-সম্ভ্রম নিয়ে কটুক্তি ও কু-ইংগিত করা তার সার্বক্ষণিক অভ্যাস ও রীতিতে পরিণত হয়। সে অর্থ-সম্পদ পুঞ্জীভূত করে আর ভাবে যে, ওটা তার জীবন ও সুখ-সম্ভোগের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে ।একদিকে এই অর্থদর্পী উপহাসকারী প্রতাপশালী ব্যক্তির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, অপরদিকে সেই হতভাগা ব্যক্তির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, যাকে শোচনীয় অবজ্ঞা, লাঞ্চনা ও তাচ্ছিল্যের সাথে নিক্ষেপ করা হবে ৷ আর ‘হুতামা’ এমন জায়গা সেখানে যা-ই নিক্ষিপ্ত হয় তাই ধ্বংস হয়ে যায়। সেখানেই এই প্রতাপশালী পাপাচারী ব্যক্তিটিরও সকল দর্প, অহংকার চূর্ণ হয়ে যাবে। হুতামা হলো ‘আল্লাহর প্রজ্জলিত আগুন ।’ আগুনকে এভাবে ‘আল্লাহর আগুন’ বলে সম্বন্ধযুক্ত করা থেকে বুঝা যায় যে, এটা একটা নযীরবিহীন, অসাধারণ ও অকল্পনীয় ভীতিপ্রদ আগুন হবে। যে হৃদয় থেকে মোমেনদের প্রতি ব্যাংগ-বিদ্রুপের ইচ্ছা জাগে, এই আগুন সেই হৃদয়ের ভেতর পর্যন্ত ঢুকে । ঠাট্টা-তামাশা করার বাসনা ও অহংকারের জন্মস্থানরূপী অন্তকরণকেও তা দগ্ধ করবে। শুধু চরম অবমাননা ও তাচ্ছিল্যের সাথে নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত থাকা হবে না, বরং এই আগুনকে তার ওপর আবদ্ধ করে দেয়া হবে, যাতে কেউ তাকে উদ্ধার করতে না পারে এবং সেও কাউকে কোনো অনুরোধ করতে না পারে। গরু, গাধা ইত্যাদিকে যেমন রশি দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়, তাকেও তেমনি বেঁধে রাখা হবে। সূরাটিতে একধিক শব্দে ‘তাসদীদ’ প্রয়োগ দ্বারা আযাবের কঠোরতা ও নির্মমতাকে অধিকতর ব্যাগময় করা হয়েছে। আর একাধিক ‘তাকীদ’ সূচক পদ ব্যবহার করে এই আযাবের অবধারিত ও সুনির্দিষ্ট হওয়া বুঝানো হয়েছে! প্রথমে সংক্ষেপে ও অস্পষ্টভাবে বর্ণনা দান, তারপর ব্যাপারটাকে গুরুত্বপূর্ণ ও ভীতিপ্রদ করে তুলে ধরার জন্য প্রশ্ন করা, তারপর জবাব দিয়ে ব্যাখ্যা দান,-এ সব কিছু মিলে এই আযাবকে অতি মাত্রায় ভয়ংকর, আতংকজনক ও অবধারিত রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। ”ওয়ায়লুন (সর্বনাশ বা ধ্বংস) ‘অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে’ ‘হুতামা’, ‘আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন” যা হৃদয় পর্যন্ত ঢুকে যাবে, তা তাদের ওপর আবদ্ধ থাকবে, খুঁটির সাথে বাধা থাকবে” এ সব উক্তির মধ্যে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। আর সার্বিকভাবে এ সূরায় এক ধরনের শৈল্পিক ও চেতনাগত সমন্বয় রয়েছে, যা ‘ব্যংগ-বিদ্রুপ ও কটাক্ষকারী’দের কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷ কোরআন নাযিল হওয়ার সময়ে একদিকে যেমন সে ইসলামের দাওয়াতের নেতৃত্ব দিতো, অপরদিকে তেমনি দাওয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীকেও পর্যবেক্ষণ করতো । কোরআন ছিলো একাধারে ধারালো অস্ত্র এবং কুচক্রীদের চক্রান্ত নস্যাত করার বজ্রনিনাদিত হুংকার । এই হুংকারে সে শত্রুদের হৃদয়কে কাঁপিয়ে দিতো, আর মোমেনদের হৃদয়কে প্রশান্ত করতো ও প্রবোধ দিতো । এ সূরায় যে ভংগিতে আল্লাহ তায়ালা প্রতিবাদ করেছেন ও জবাব দিয়েছেন তাতে আমরা দুটি তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারি। প্রথমত নৈতিক অধপতনের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার দান এবং এই নিচ মানসিকতার নিন্দা । দ্বিতীয়ত মোমেনদেরকে সান্ত্বনা ও প্রবোধ দান এবং তাদের মনে যাতে অপমানবোধ প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আর সেই সাথে তাদেরকে এ কথা উপলব্ধি করানো যে, তাদের সাথে যা কিছু আচরণ সংঘটিত হচ্ছে, তা তিনি দেখেছেন, অপছন্দ করছেন এবং তার শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এর মাধ্যমে এই মর্মেও ইংগিত দেয়া, হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের আত্মাকে এ সব হীনমনাসুলভ চক্রান্তের অনেক উর্ধে রাখবেন ।

#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

(১০৪-হুমাযা) : নামকরণ:

নামকরণ প্রথম আয়াতের হুমাযাহ (هُمَزَةٍ) শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

(১০৪-হুমাযা) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

এ সূরাটির মক্কী হবার ব্যাপারে সকল মুফাস্সির একমত পোষণ করেছেন। এর বক্তব্য বিষয় ও বর্ণনাভংগী বিশ্লেষণ করলে এটিও রসূলের নবুওয়াত পাওয়ার পর মক্কায় প্রথমদিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়।
(১০৪-হুমাযা) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

এই সূরায় এমন কিছু নৈতিক অসদবৃত্তির নিন্দা করা হয়েছে যেগুলো জাহেলী সমাজে অর্থলোলুপ ধনীদের মধ্যে পাওয়া যেতো। প্রত্যেক আরববাসী জানতো, এই অসৎ প্রবণতাগুলো যথার্থই তাদের সমাজে সক্রিয় রয়েছে। সবাই এগুলোকে খারাপ মনে করতো। একজনও এগুলোকে সৎগুণ মনে করতো না এবং প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখতো না। এই জঘন্য প্রবণতাগুলো পেশ করার পর আখেরাতে এই ধরনের চরিত্রের অধিকারী লোকদের পরিণাম কি হবে তা বলা হয়েছে। এই দু’টি বিষয় (অর্থাৎ একদিকে এই চরিত্র এবং অন্যদিকে আখেরাতে তার এই পরিণাম) এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যার ফলে শ্রোতা নিজে নিজেই এই সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেন যে, এই ধরনের কাজের ও চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির পরিণাম এটিই হয়ে থাকে। আর যেহেতু দুনিয়ায় এই ধরনের চরিত্রের লোকেরা কোন শাস্তি পায় না বরং উল্টো তাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখা যায় তাই আখেরাত অনিবার্যভাবে অনুষ্ঠিত হবেই।

সূরা যিলযাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো সূরা চলে এসেছে এই সূরাটিকে সেই ধারাবাহিকতায় রেখে বিচার করলে মক্কা মু’আয্যমার প্রথম যুগে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও তার নৈতিক শিক্ষাবলী মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করার জন্য কি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল তা মানুষ খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারে। সূরা যিলযালে বলা হয়েছে, আখেরাতে মানুষের সমগ্র আমলনামা তার সামনে রেখে দেয়া হবে। সে দুনিয়ায় যে সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকী বা গোনাহ করেছিল তা সেখানে তার সামনে আসবে না এমনটি হবে না। সূরা আদিয়াত-এ আরবের চতুর্দিকে যেসব লুটতরাজ, হানাহানি, খুনাখুনি ও দস্যূতা জারী ছিল সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিগুলোর এহেন অপব্যবহার তাঁর প্রতি বিরাট অকৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়, এ অনুভূতি জাগ্রত করার পর লোকদেরকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারটি এই দুনিয়াতেই শেষ হয়ে যাবে না বরং মৃত্যুর পর আর একটি জীবন শুরু হচ্ছে, সেখানে কেবল তোমাদের সমস্ত কাজেরই নয় বরং নিয়তও যাচাই বা পর্যালোচনা করা হবে। আর কোন্ ব্যক্তি কোন্ ধরনের ব্যবহার লাভের যোগ্য তা তোমাদের রব খুব ভালোভাবেই জানে। সূরা আল কারিয়াহতে কিয়ামতের নকশা পেশ করার পর লোকদেরকে এই মর্মে সর্তক করে দেয়া হয়েছে যে, মানুষের নেকীর পাল্লা ভারী না গোনাহর পাল্লা ভারী হচ্ছে এরই ওপর নির্ভর করবে আখেরাতে তার ভালো বা মন্দ পরিণাম। যে বস্তুবাদী মানসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দুনিয়ার লাভ, স্বার্থ, আয়েশ-আরাম, ভোগ ও মর্যাদা বেশী বেশী করে অর্জন করার ও পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হবার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে সূরা তাকাসুরে তার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। তারপর এই গাফলতির অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করে বলা হয়েছে— এ দুনিয়া কোন লুটের মাল নয় যে, তার ওপর তোমরা ইচ্ছামতো হাত সাফাই করতে থাকবে। বরং এখানে তুমি এর যেসব নিয়ামত পাচ্ছো তার প্রত্যেকটি কিভাবে অর্জন করেছো এবং কিভাবে ব্যবহার করেছো তার জন্য তোমার রবের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সূরা আসর-এ একেবারে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে, যদি মানবজাতির ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ঈমান ও সৎকাজ না থাকে এবং তার সমাজ ব্যবস্থায় হক পথ অবলম্বন ও সবর করার উপদেশ দেবার রীতি ব্যাপকতা লাভ না করে, তাহলে তার প্রত্যেক ব্যক্তি, দেশ, জাতি এমনকি সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে অবস্থান করবে। এর পরপরই আসছে সূরা ‘আল হুমাযাহ।’ এখানে জাহেলী যুগের নেতৃত্বের একটি নমুনা পেশ করে লোকদের সামনে যেন এ প্রশ্ন রাখা হয়েছে যে, এই ধরনের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের অধিকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না কেন ?

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,

وَیْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةِۙ

ধবংশ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনা সামনি) লোকদের ধিক্কার দেয় এবং (পেছনে) নিন্দা করতে অভ্যস্ত।১

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১) এখানে মূল শব্দ হচ্ছে هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ । আরবী ভাষায় এই শব্দ দু’টি অর্থের দিক দিয়ে অনেক বেশী কাছাকাছি অবস্থান করছে। এমন কি কখনো শব্দ দু’টি সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার কখনো দু’য়ের পার্থক্য হয়। কিন্তু সে পার্থক্যটা এমন পর্যায়ের যার ফলে একদল লোক “হুমাযাহ’র যে অর্থ করে, অন্য একদল লোক “লুমাযা”রও সেই একই অর্থ করে আবার এর বিপরীতপক্ষে কিছু লোক “লুমাযাহ”র যে অর্থ বর্ণনা করে অন্য কিছু লোকের কাছে “হুমাযাহ”রও অর্থ তাই। এখানে যেহেতু দু’টি শব্দ এক সাথে এসেছে এবং “হুমাযাহ” ও “লুমাযাহ” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাই উভয় মিলে এখানে যে অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছেঃ সে কাউকে লাঞ্ছিত ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। কারোর প্রতি তাচ্ছিল্য ভরে অংগুলি নির্দেশ করে। চোখের ইশারায় কাউকে ব্যঙ্গ করে কারো বংশের নিন্দা করে। কারো ব্যক্তিসত্তার বিরূপ সমালোচনা করে। কারো মুখের ওপর তার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে। কারো পেছনে তার দোষ বলে বেড়ায়। কোথাও চোখলখুরী করে এবং এর কথা ওর কানে লাগিয়ে বন্ধুদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। কোথাও লোকদের নাম বিকৃত করে খারাপ নামে অভিহিত করে। কোথাও কথার খোঁচায় কাউকে আহত করে এবং কাউকে দোষারোপ করে। এসব তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,

اِ۟لَّذِیْ جَمَعَ مَالًا وَّ عَدَّدَهٗۙ

যে অর্থ জমায় এবং তা গুণে গুণে রাখে।২

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:২) প্রথম বাক্যটির পর এই দ্বিতীয় বাক্যটির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অর্থই প্রকাশিত হয় যে, নিজের অগাধ ধনদৌলতের অহংকারে সে মানুষকে এভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে। অর্থ জমা করার জন্য جَمَعَ مَالًا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে অর্থ প্রাচুর্য বুঝা যায়। তারপর ‘গুণে গুণে রাখা’ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কার্পণ্য ও অর্থ লালসার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-3
টিকা নং:3,

یَحْسَبُ اَنَّ مَالَهٗۤ اَخْلَدَهٗۚ

সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ চিরকাল থাকবে।৩

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৩) এর আর একটি অর্থ হতে পারে। তা হচ্ছে এই যে, সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ তাকে চিরন্তন জীবন দান করবে। অর্থাৎ অর্থ জমা করার এবং তা গুণে রেখে দেবার কাজে সে এত বেশী মশগুল যে নিজের মৃত্যুর কথা তার মনে নেই। তার মনে কখনো এ চিন্তার উদয় হয় না যে, এক সময় তাকে এসব কিছু ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে।
সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-4
টিকা নং:4, 5,

كَلَّا لَیُنْۢبَذَنَّ فِی الْحُطَمَةِ٘ۖ

কখনো নয়, তাকে তো চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গায়৪ ফেলে দেয়া হবে।৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৪) মূলে হুতামা حُطَمَةِ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল হাত্ম (حَطَمْ) । হাত্ম মানে ভেঙ্গে ফেলা, পিষে ফেলা ও টুকরা টুকরা করে ফেলা। জাহান্নামকে হাত্ম নামে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে যা কিছু ফেলে দেয়া হবে তাকে সে নিজের গভীরতা ও আগুনের কারণে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে রেখে দেবে।

টিকা:৫) আসলে বলা হয়েছে لَيُنْبَذَنَّ । আরবী ভাষায় কোন জিনিসকে তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া অর্থে نَبْذَ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ থেকে আপনা আপনি এই ইঙ্গিত সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, নিজের ধনশালী হওয়ার কারণে সে দুনিয়ায় নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকে ঘৃণাভরে জাহান্নামে ছুঁড়ে দেয়া হবে।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-5

وَ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا الْحُطَمَةُؕ

আর তুমি কি জানো সেই চূর্ণ-বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি?

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-6
টিকা নং:6,

نَارُ اللّٰهِ الْمُوْقَدَةُۙ

আল্লাহর আগুন, ৬ প্রচণ্ডভাবে উৎক্ষিপ্ত,

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৬) কুরআন মজীদের একমাত্র এখানে ছাড়া আর কোথাও জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলা হয়নি। এখানে এই আগুনকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে কেবলমাত্র এর প্রচণ্ডতা ও ভয়াবহতারই প্রকাশ হচ্ছে না। বরং এই সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ লাভ করে যারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় মেতে ওঠে তাদেরকে আল্লাহ‌ কেমন প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্রোধের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। এ কারণেই তিনি জাহান্নামের এই আগুনকে নিজের বিশেষ আগুন বলেছেন এবং এই আগুনেই তাকে নিক্ষেপ করা হবে।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-7
টিকা নং:7,

الَّتِیْ تَطَّلِعُ عَلَى الْاَفْئِدَةِؕ

যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে।৭

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৭) আসল বাক্যটি হচ্ছে, تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ ‘এখানে তাত্তালিউ’ (تَطَّلِعُ) শব্দটির মূলে হচ্ছে ‘ইত্তিলা’ (اِطِّلَعُ) ‘ইত্তিলা’ এর একটি অর্থ হচ্ছে চড়া, আরোহণ করা ও ওপরে পৌঁছে যাওয়া। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, অবগত হওয়া ও খবর পাওয়া। আফ্ইদাহ্ (اَفْئِدَةٍ) হচ্ছে বহুবচন। এর একবচন ফুওয়াদ (فواد) এর মানে হৃদয়। কিন্তু বুকের মধ্যে যে হৃদপিণ্ডটি সবসময় ধুক ধুক করে তার জন্যও ফুওয়াদ শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। বরং মানুষের চেতনা, জ্ঞান, আবেগ, আকাংক্ষা, চিন্তা, বিশ্বাস, সংকল্প ও নিয়তের কেন্দ্রস্থলকেই এই শব্দটি দিয়ে প্রকাশ করা হয়। হৃদয় পর্যন্ত এই আগুন পৌঁছবার একটি অর্থ হচ্ছে এই যে, এই আগুন এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যেখানে মানুষের অসৎচিন্তা, ভুল আকীদা-বিশ্বাস, অপবিত্র ইচ্ছা-বাসনা, প্রবৃত্তি, আবেগ এবং দুষ্ট সংকল্প ও নিয়তের কেন্দ্র। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর এই আগুন দুনিয়ার আগুনের মতো অন্ধ হবে না। সে দোষী ও নির্দোষ সবাইকে জ্বালিয়ে দেবে না। বরং প্রত্যেক অপরাধীর হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে সে তার অপরাধের প্রকৃতি নির্ধারণ করবে এবং প্রত্যেককে তার দোষ ও অপরাধ অনুযায়ী আযাব দেবে।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-8
টিকা নং:8,

اِنَّهَا عَلَیْهِمْ مُّؤْصَدَةٌۙ

তা তাদের ওপর ঢেকে দিয়ে বন্ধ করা হবে৮

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৮) অর্থাৎ অপরাধীদেরকে জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করে ওপর থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন দরজা তো দূরের কথা তার কোন একটি ছিদ্রও খোলা থাকবে না।

সুরা: আল-হুমাযাহ
আয়াত নং :-9
টিকা নং:9,

فِیْ عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ۠

(এমন অবস্থায় যে তা) উঁচু উঁচু থামে (ঘেরাও হয়ে থাকবো)।৯

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৯) ফি আমাদিম মুমাদ্দাদাহ (فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ) এর একাধিক মানে হতে পারে। যেমন এর একটি মানে হচ্ছে, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধকরে দিয়ে তার ওপর উঁচু উঁচু থাম গেঁড়ে দেয়া হবে। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এই অপরাধীরা উঁচু উঁচু থামের গায়ে বাঁধা থাকবে। এর তৃতীয় অর্থ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন, এই আগুনের শিখাগুলো লম্বা লম্বা থামের আকারে ওপরের দিকে উঠতে থাকবে।

# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-

নামকরণ:

هُمَزَةٍ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে মানুষের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ায় এবং কাজ ও ইশারায় অন্যের ওপর অপবাদ দেয়। আবার বলা হয় هُمَزَةٍ ঐ ব্যক্তি যে মুখোমুখি মানুষের নিন্দা করে। প্রথম আয়াতে উল্লিখিত هُمَزَةٍ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছ। সূরায় পরনিন্দাকারী ও অর্থলিপ্সুদের দুর্ভোগ ও আখিরাতের শাস্তির বর্ণনা এসেছে।

هُمَزَةٍ এর শাব্দিক আলোচনা ওপরে করা হয়েছে। আর لمزة বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে পশ্চাতে পরনিন্দা করে। এ-সব পশ্চাতে ও সম্মুখে নিন্দাকারী ব্যক্তিরাই সম্পদ জমা করে ও গণনা করে। অর্থাৎ সম্পদ থেকে সাধারণ দান সাদকাহ তো দূরের কথা ফরয যাকাতও আদায় করে না। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাদের এত বড় দুর্ভোগের কথা বলেছেন। নচেৎ সাধারণভাবে সম্পদ সঞ্চয় করা কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ জমাকারীকে তিরস্কার করে বলেন :

(وَجَمَعَ فَأَوْعٰي)‏

“সে সম্পদ জমা করেছে এবং সংরক্ষিত করে রেখেছে।” (সূরা মাআরিজ ৭০ : ১৮)

(أَنَّ مَالَه۫ أَخْلَدَه۫)

অর্থাৎ তার বিশ্বাস তার জমাকৃত সম্পদ তাকে মরতে দেবে না, সর্বদা জীবিত রাখবে। সুতরাং অত্র আয়াতে পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাসীদের তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ছিনিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার পরিণাম ভাল নয়। তাই যারা দুনিয়াবী স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কেবল সম্পদ জমা করবে কিন্তু তার হক আদায় করবে না তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ لا فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)

“আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং সেটা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।” (সূরা তাওবা ৯: ৩৪)

كَلَّا অর্থাৎ সে যেমন বিশ্বাস করছে মূলত বিষয়টি তেমন নয়। সম্পদ তাকে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারবে না। বরং যত সম্পদের অধিকারী হোক না কেন অবশ্যই তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।

الْـحُطَمَةِ জাহান্নামের অন্যতম একটি নাম। হুতামাহ অর্থ ভেঙ্গে চূরমার করা। হুতামার পরিচয় উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(نَارُ اللّٰهِ الْمُوْقَدَة)

“এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি”।

(تَطَّلِعُ عَلَي الْأَفْئِدَةِ)

মুহাম্মাদ বিন কাব (রহঃ) বলেন: আগুন সারা শরীর খেয়ে ফেলবে এমনকি যখন তা অন্তরসহ কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন পুনরায় আবার শরীরের দিকে ফিরে আসবে। তারা এ আগুনে বন্দি হয়ে থাকবে, সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাবে।

مُوْقَدَةُ অর্থ مغلقة বা বন্ধ, পরিবেষ্টিত। অর্থাৎ জাহান্নামের সকল দরজা ও পথ বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তাদেরকে লোহার পেরেকের সাথে বেঁধে দেয়া হবে যা লম্বা লম্বা স্তম্ভের মত। যার ফলে জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَأَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوٰهُمُ النَّارُ ط كُلَّمَآ أَرَادُوْآ أَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَآ أُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه۪ تُكَذِّبُوْنَ ‏)

“আর যারা পাপ কাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আগুনের স্বাদ গ্রহণ (শাস্তি ভোগ) কর যা তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে।” (সূরা সাজদাহ ৩২: ২০)

অর্থাৎ জাহান্নামে লম্বা লম্বা খুঁটি থাকবে যাতে বেধে জাহান্নামীদের শাস্তি দেয়া হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। তারপর খুঁটির সাথে বাঁধা হবে এবং গলায় বেড়ী পরানো হবে। অতঃপর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। (ইবনু কাসীর) সুতরাং পরনিন্দা ও অর্থলিপ্সু হওয়া থেকে সাবধান।

সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দা করে তাদের পরিণতি ভয়াবহ।
২. সম্পদের যাকাত আদায় না করে সঞ্চয় করতঃ হিসাব কষা ভয়াবহ অপরাধ।
৩. জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা সম্পর্কে জানলাম।

# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

১-৯ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ চরম দুর্ভোগ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে যে অগোচরে অন্যের নিন্দে করে এবং সাক্ষাতে ধিক্কার দেয়। এর বর্ণনা (আরবি) (পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়) (৬৮:১১) এ আয়াতের তাফসীরে গত হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলো খোটাদানকারী এবং গীবতকারী। রবী ইবনে আনাস (রাঃ) বলেন যে, সামনে মন্দ বলাকে (আরবি) বলা হয় এবং অসাক্ষাতে নিন্দে করাকে (আরবি) বলে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো মুখের ভাষায় এবং চোখের ইশারায় আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দেয়া। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) এর অর্থ হলো হাত এবং (আরবি) চোখ দ্বারা কষ্ট দেয়া এবং এর অর্থ মুখ বা জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দেয়া। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা আখফাস ইবনে শুরায়েককে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়নি।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে অর্থ জমায় ও তা বারবার গণনা করে। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল।” হযরত কাব (রঃ) বলেনঃ সারাদিন সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখলো এবং রাত্রে পচা গলা লাশের মত পড়ে রইলো।

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ সে মনে করে যে, তার ধন সম্পদ তার কাছে চিরকাল থাকবে। কখনো না। অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুমায়। হে নবী (সঃ)! তুমি কি জান হুতামাহ কি? তা তুমি জান না। তা হলো আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন। যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। জ্বালিয়ে তাদেরকে ভষ্ম করে দিবে, কিন্তু তারা মৃত্যুবরণ করবে না। হযরত সাবিত বানানী (রঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করে যখন এর অর্থ বর্ণনা করতেন তখন কেঁদে ফেলতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহর আযাব তাদেরকে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছে।” মুহাম্মদ ইবনে কা’ব (রঃ) বলেনঃ প্রজ্জ্বলিত আগুন কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারপর ফিরে আসে, আবার পৌঁছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এ আগুন তাদের উপর আবদ্ধ করে দেয়া হবে সুদীর্ঘ স্তম্ভসমূহের মধ্যে। সূরা বালাদ’ এর তাফসীরেও এ ধরণের বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি মারফু হাদীসেও এ রকম বর্ণনা রয়েছে। আগুনের স্তম্ভের মধ্যে লম্বা লম্বা দরজা রয়েছে।

হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) কিরআত (আরবি) রয়েছে। ঐ সব জাহান্নামীদের স্কন্ধে শিকল বাধা থাকবে। লম্বা লম্বা স্তম্ভের মধ্যে আবদ্ধ করে তাদের উপর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। সেই আগুনের স্তম্ভের মধ্যে তাদেরকে নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। আবু সালিহ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তাদের জন্যে ভারী বেড়ী এবং শিকল থাকবে। তাতে তাদেরকে বন্দী করে দেয়া হবে।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1217/O Ye Mankind:-24]
[ # He thinks that his wealth will make him immortal.:-]
Surah.104: Al-Humaza
Para:30 Ayat:- 1-9
www.motaher21.net

104:1

وَیۡلٌ لِّکُلِّ ہُمَزَۃٍ لُّمَزَۃِۣ ۙ﴿۱﴾

Woe to every scorner and mocker

Allah Says:

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

Woe to every Humazah Lumazah.
Al-Hammaz refers to (slander) by speech, and Al-Lammaz refers to (slander) by action.

This means that the person finds fault with people and belittles them. An explanation of this has already preceded in the discussion of Allah’s statement,

هَمَّازٍ مَّشَّأءِ بِنَمِيمٍ
Hammaz, going about with slander (68:11)

Ibn Abbas said,

“Humazah Lumazah means one who reviles and disgraces (others).”

Mujahid said,

“Al-Humazah is with the hand and the eye, and Al-Lumazah is with the tongue.”

Then Allah says,

الَّذِي جَمَعَ مَالاً وَعَدَّدَهُ

104:2

الَّذِیۡ جَمَعَ مَالًا وَّ عَدَّدَہٗ ۙ﴿۲﴾

Who collects wealth and [continuously] counts it.

Who has gathered wealth and counted it.

meaning, he gathers it piling some of it on top of the rest and he counts it up.

This is similar to Allah’s saying,

وَجَمَعَ فَأَوْعَى
(And collect (wealth) and hide it.) (70:18)

This was said by As-Suddi and Ibn Jarir.

Muhammad bin Ka`b said concerning Allah’s statement,
جَمَعَ مَالاً وَعَدَّدَهُ
(gathered wealth and counted it).

“His wealth occupies his time in the day, going from this to that. Then when the night comes he sleeps like a rotting corpse.”

Then Allah says,

يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ

104:3

یَحۡسَبُ اَنَّ مَالَہٗۤ اَخۡلَدَہٗ ۚ﴿۳﴾

He thinks that his wealth will make him immortal.

He thinks that his wealth will make him last forever!

meaning, he thinks that gathering wealth will make him last forever in this abode (the worldly life)

104:4

کَلَّا لَیُنۡۢبَذَنَّ فِی الۡحُطَمَۃِ ۫﴿ۖ۴﴾

No! He will surely be thrown into the Crusher.

كَلَّ

But no!

meaning, the matter is not as he claims, nor as he reckons.

Then Allah says,

لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ

Verily, he will be thrown into Al-Hutamah.

meaning, the person who gathered wealth and counted it, will be thrown into Al-Hutamah, which is one of the descriptive names of the Hellfire. This is because it crushes whoever is in it.

Thus, Allah says,

وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ
104:5

وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡحُطَمَۃُ ؕ﴿۵﴾

And what can make you know what is the Crusher?

نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ

104:6

نَارُ اللّٰہِ الۡمُوۡقَدَۃُ ۙ﴿۶﴾

It is the fire of Allah, [eternally] fueled,

الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الاَْفْيِدَةِ

104:7

الَّتِیۡ تَطَّلِعُ عَلَی الۡاَفۡـِٕدَۃِ ؕ﴿۷﴾

Which mounts directed at the hearts.

And what will make you know what Al-Hutamah is?

The fire of Allah, Al-Muqadah, which leaps up over the hearts.

Thabit Al-Bunani said,

“It will burn them all the way to their hearts while they are still alive.”

Then he said,

“Indeed the torment will reach them.”

Then he cried.

Muhammad bin Ka`b said,

“It (the Fire) will devour every part of his body until it reaches his heart and comes to the level of his throat, then it will return to his body.”

Concerning Allah’s statement,

إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّوْصَدَةٌ

104:8

اِنَّہَا عَلَیۡہِمۡ مُّؤۡصَدَۃٌ ۙ﴿۸﴾

Indeed, Hellfire will be closed down upon them

Verily, it shall Mu’sadahupon them.

meaning, covering, just as was mentioned in the Tafsir of Surah Al-Balad (see 90:20).

Then Allah says,

فِي عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ

In pillars stretched forth.

Atiyah Al-`Awfi said, “Pillars of Iron.”

As-Suddi said, “Made of fire.”

Al-`Awfi reported from Ibn `Abbas,

“He will make them enter pillars stretched forth, meaning there will be columns over them, and they will have chains on their necks, and the gates (of Hell) will be shut upon them.”

This is the end of the Tafsir of Surah Al-Humazah, and all praise and thanks are due to Allah

Leave a Reply