Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২২৩)
[#আল্লাহর সাহায্য,ও সুসংবাদ:-]
সুরা: ১১০: আন-নাসর
পারা:৩০
১-৩ নং আয়াতের বেখ্যা :-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
কুরআন:-
#তাফসীরে ফী জিলালিল
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
(Book#1223)
[ # When the victory of Allah has come and the conquest:-]
Surah.110: An- Nasr
Para:30 Ayat:- 1- 3
www.motaher21.net
সুরা: আন-নাসর
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
* ভূমিকা:১১০
(১১০-নাসর) : নামকরণ:
প্রথম আয়াত إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ —এর মধ্যে উল্লেখিত নসর (نصر) শব্দকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
(১১০-নাসর) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একে কুরআন মজীদের শেষ সূরা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর আর কোন পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়নি।* (মুসলিম, নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে আবী শাইবা ও ইবনে মারদুইয়া)।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, এ সূরাটি বিদায় হজ্বের সময় আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি সময় মিনায় নাযিল হয়। এ সূরাটি নাযিল হবার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উটের পিঠে সওয়ার হয়ে বিখ্যাত ভাষণটি দেন। (তিরমিযী, বায়যাবী, বাইহাকী, ইবনে শাইবা, আবদ ইবনে হুমাইদ, আবু ইয়ালা ও ইবনে মারদুইয়া)। বাইহাকী কিতাবুল হজ্ব অধ্যায়ে হযরত সারাআ বিনতে নাবহানের রেওয়ায়াতের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ সময়ের প্রদত্ত ভাষণ উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন:
“বিদায় হজ্বের সময় আমি রসূলুল্লাহ (সা.)- কে একথা বলতে শুনেছি: হে লোকেরা! তোমরা জানো আজ কোন দিন? লোকেরা জবাব দিল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটি হচ্ছে আইয়ামে তাশরীকের মাঝখানের দিন। তারপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, জানো এটা কোন জায়গা? লোকেরা জবাব দিল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটি হচ্ছে মাশ’আরে হারাম। এরপর তিনি বলেন, আমি জানি না, সম্ভবত এরপর আমি আর তোমাদের সাথে মিলতে পারবো না। সাবধান হয়ে যাও, তোমাদের রক্ত ও তোমাদের মান-সম্মান পরস্পরের ওপর ঠিক তেমনি হারাম যেমন আজকের দিনটি ও এ জায়গাটি হারাম, যতদিন না তোমরা তোমাদের রবের সামনে হাযির হয়ে যাও এবং তিনি তোমাদেরকে নিজেদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শোনো, একথাগুলো তোমাদের নিকটবর্তীরা দূরবর্তীদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। শোনো আমি কি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এরপর আমরা মদীনায় ফিরে এলাম এবং তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকাল হয়ে গেল।”
এ দু’টি রেওয়ায়াত একত্র করলে দেখা যাবে, সূরা আন নসরের নাযিল হওয়া ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের মধ্যে ৩ মাস ও কয়েকদিনের ব্যবধানে ছিল। কেননা ইতিহাসের দৃষ্টিতে দেখা যায়, বিদায় হজ্ব ও রসূলের (সা.) ওফাতের মাঝখানে এ ক’টি দিনই অতিবাহিত হয়েছিল।
ইবনে আব্বাসের (রা.) বর্ণনা মতে এ সূরাটি নাযিল হবার পর রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: আমাকে আমার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে এবং আমর সময় পূর্ণ হয়ে গেছে। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির ও ইবনে মারদুইয়া) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত অন্যান্য রেওয়ায়াতগুলোতে বলা হয়েছে: এ সূরাটি নাযিল হবার পর রসূলুল্লাহ (সা.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে জারীর, তাবারানী, নাসায়ী, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে মারদুইয়া)।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) বলেন, এ সূরাটি নাযিল হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এ বছর আমার ইন্তিকাল হবে। একথা শুনে হযরত ফাতিমা (রা.) কেঁদে ফেললেন। এ অবস্থা দেখে তিনি বললেন, আমার বংশধরদের মধ্যে তুমিই সবার আগে আমার সাথে মিলিত হবে। একথা শুনে হযরত ফাতিমা (রা.) হেসে ফেললেন। (ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে মারদুইয়া) প্রায় এই একই বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস বাইহাকীতে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত উমর (রা.) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বড় বড় জ্ঞানী ও সম্মানিত সাহাবীদের সাথে তাঁর মজলিসে আমাকে ডাকতেন। একথা বয়স্ক সাহাবীদের অনেকের খারাপ লাগলো। তাঁরা বললেন, আমাদের ছেলেরাও তো এ ছেলেটির মতো, তাহলে শুধুমাত্র এ ছেলেটিকেই আমাদের সাথে মজলিসে শরীক করা হয়েছে কেন? (ইমাম বুখারী ও ইবনে জারীর খোলাসা করে বলেছেন যে, একথা বলেছিলেন হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ) হযরত উমর (রা.) বললেন, ইলমের ক্ষেত্রে এর যা মর্যাদা তা আপনারা জানেন। তারপর একদিন তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক সাহাবীদের ডাকলেন। তাঁদের সাথে আমাকেও ডাকলেন। আমি বুঝে ফেললাম তাদের মজলিসে আমাকে শরীক করার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য আজ আমাকে ডাকা হয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে হযরত উমর (রা.) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ সূরাটির ব্যাপারে আপনাদের অভিমত কি? কেউ কেউ বললেন, এ সূরায় আমাদের হুকুম দেয়া হয়েছে, যখন আল্লাহর সাহায্যে আসে এবং আমরা বিজয় লাভ করি তখন আমাদের আল্লাহর হামদ ও ইস্তিগফার করা উচিত। কেউ কেউ বললেন, এর অর্থ হচ্ছে, শহর ও দুর্গসমূহ জয় করা। অনেকে নীরব রইলেন, এরপর হযরত উমর (রা.) বললেন, ইবনে আব্বাস তুমিও কি একথাই বলো? আমি বললাম: না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে তুমি কি বলো। আমি বললাম: এর অর্থ হচ্ছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাত। এ সূরায় জানানো হয়েছে, যখন আল্লাহর সাহায্যে এসে যাবে এবং বিজয় লাভ হবে তখন আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে, এগুলোই আলামত। কাজেই এরপর আপনি আল্লাহর হামদ ও ইস্তিগফার করুন। একথা শুনে হযরত উমর বললেন, তুমি যা বললে আমিও এছাড়া আর কিছুই জানি না। অন্য একটি রেওয়ায়াতে এর ওপর আরো একটু বাড়ানো হয়েছে এভাবে যে, হযরত উমর বয়স্ক বদরী সাহাবীদের বললেন: আপনারা এ ছেলেকে এ মজলিসে শরীক করার কারণ দেখার পর আবার কেমন করে আমাকে তিরস্কার করেন? (বুখারী, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে জারীর, ইবনে মারদুইয়া, বাগাবী, বাইহাকী ও ইবনুল মুনযির)।
* বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, এরপর কিছু বিচ্ছিন্ন আয়াত নাযিল হয়। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সবশেষে কুরআনে কোন্ আয়াতটি নাযিল হয় সেটি চিহ্নিত করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। বুখারী ও মুসলিমে হযরত বারাআ ইবনে আযেবের (রা.) রেওয়ায়াতে উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: সেটি হচ্ছে সূরা নিসার শেষ আয়াত يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ইমাম বুখারী ইবনে আব্বাসের (রা.) উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: সর্বশেষ আয়াতটি হচ্ছে রিবা সম্পর্কিত আয়াত। অর্থাৎ যে আয়াতের মাধ্যমে সুদকে হারাম গণ্য করা হয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনে মাজাহ ও ইবনে মারদুইয়া হযরত উমর (রা.) থেকে যে হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন তা থেকেও ইবনে আব্বাসের এ উক্তির সমর্থন পাওয়া যায়। কিন্তু এ হাদীসগুলোতে এটিকে শেষ আয়াত বলা হয়নি। বরং হযরত উমরের উক্তি হচ্ছে: এটি সর্বশেষে নাযিল হওয়া আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। আবু উবাইদ তাঁর ফাদায়েলুল কুরআন গ্রন্থে ইমাম যুহরীর এবং ইবনে জারীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েবের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: রিবার আয়াত এবং দাইনের আয়াত (অর্থাৎ সূরা বাকারার ৩৮-৩৯ রুকূ’) কুরআনের নাযিলকৃত সর্বশেষ আয়াত। নাসায়ী, ইবনে মারদুইয়া ও ইবনে জারীর হযরত ইবনে আব্বাসের অন্য একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন তাতে বলা হয়েছে: وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ সূরা বাকারার এ ২৮১ নম্বর আয়াতটি হচ্ছে কুরআনের সর্বশেষ আয়াত। আল ফিরইয়াবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে ইবনে আব্বাসের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে এতটুকু বাড়ানো হয়েছে: এ আয়াতটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের ৮১ দিন আগে নাযিল হয়। অন্যদিকে ইবনে আবী হাতেম এ সম্পর্কিত সাঈদ ইবনে যুবাইরের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে এ আয়াতটি নাযিল হওয়া ও রসূলের (সা.) ওফাতের মধ্যে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানের কথা বলা হয়েছে। ইমাম আহমাদের মুসনাদ ও হাকেমের মুসতাদরাকে হযরত উবাই ইবনে কা’বের (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: সূরা তাওবার ১২৮-১২৯ আয়াত দু’টি সবশেষে নাযিল হয়।
(১১০-নাসর) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:
ওপরে যে হাদীসগুলো আলোচনা করা হয়েছে তাতে একথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁর রসূলকে বলে দিয়েছিলেন, যখন আরবে ইসলামের বিজয় পূর্ণ হয়ে যাবে এবং লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকবে তখন এর মানে হবে, আপনাকে যে কাজের জন্য দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। তারপর তাঁকে হুকুম দেয়া হয়েছে, আপনি আল্লাহর হামদ ও প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে থাকুন। কারণ তাঁরই অনুগ্রহে আপনি এতবড় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাঁর কাছে এ মর্মে দোয়া করুন যে, এই বিরাট কাজ করতে গিয়ে আপনি যে ভুল-ভ্রান্তি বা দোষ-ত্রুটি করেছেন তা সব তিনি যেন মাফ করে দেন। এক্ষেত্রে একটুখানি চিন্তা-ভাবনা করলে যে কোন ব্যক্তিই দুনিয়ার মানুষের একজন সাধারণ নেতা ও একজন নবীর মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখতে পাবেন। মানুষের একজন সাধারণ নেতা যে বিপ্লব করার জন্য কাজ করে যায় নিজের জীবদ্দশাতেই যদি সেই মহান বিপ্লব সফলকাম হয়ে যায় তাহলে এজন্য সে বিজয় উৎসব পালন করে এবং নিজেই নেতৃত্বের গর্ব করে বেড়ায়। কিন্তু এখানে আল্লাহর নবীকে আমরা দেখি, তিনি তেইশ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পুরো একটি জাতির আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তাধারা, আচার-আচরণ, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা-সংস্কৃতি, সমাজনীতি, অর্থব্যবস্থা, রাজনীতি ও সামরিক যোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন। মূর্খতা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের মধ্যে আপাদমস্তক ডুবে থাকা জাতিকে উদ্ধার করে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলেছেন যার ফলে তারা সারা দুনিয়া জয় করে ফেলেছে এবং সমগ্র বিশ্বের জাতিসমূহের নেতৃত্ব পদে আসীন হয়েছে। কিন্তু এতবড় মহৎ কাজ সম্পন্ন করার পরও তাঁকে উৎসব পালন করার নয় বরং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করার এবং তাঁর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করার হুকুম দেয়া হয়। আর তিনি পূর্ণ দ্বীনতার সাথে সেই হুকুম পালন করতে থাকেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ওফাতের পূর্বে سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ কোন কোন রেওয়ায়াতে এর শব্দগুলো হচ্ছে: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ الله وَأَتُوبُ إِلَيْه খুব বেশী করে পড়তেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এই যে কথাগুলো পড়ছেন এগুলো কেমন ধরনের কালেমা। জবাব দিলেন, আমার জন্য একটি আলামত নির্ধারণ করা হয়েছে, বলা হয়েছে, যখন আমি সেই আলামত দেখতে পাবো তখনই যেন একথাগুলো পড়ি এবং সেই আলামতটি হচ্ছে, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির ও ইবনে মারদুইয়া)। প্রায় এ একই ধরনের কোন কোন রেওয়ায়াতে হযরত আয়েশা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার সময় নিজের রুকূ’ ও সিজদায় খুব বেশী করে এ শব্দগুলো পড়তেন: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ , اللهم اغفرلى এটি ছিল কুরআনের (অর্থাৎ সূরা আন নসরের ব্যাখ্যা। তিনি নিজেই ব্যাখ্যাটি করেছিলেন) (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী ইবনে মাজাহ ও ইবনে জারীর)।
হযরত উম্মে সালামা বলেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষের দিকে উঠতে বসতে চলতে ফিরতে তাঁর পবিত্র মুখে সর্বক্ষণ একথাই শুনা যেতো: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনি এ যিকিরটি বেশী করে করেন কেন? জবাব দিলেন, আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে, তারপর তিনি এ সূরাটি পড়লেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রেওয়ায়াত করেন, যখন এ সূরাটি নাযিল হয় তখন থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত যিকিরটি বেশী করে করতে থাকেন:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى , سُبْحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى , إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الغفور (ابن جرير , مسند احمد- ابن ابى حاتم)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ সূরাটি নাযিল হবার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আখেরাতের জন্য শ্রম ও সাধনা করার ব্যাপারে খুব বেশী জোরেশোরে আত্মনিয়োগ করেন। এর আগে তিনি কখনো এমনভাবে আত্মনিয়োগ করেননি। (নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে মারদুইয়া)।
ফী জিলালিল কুরআন:
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : সূরা কাওসারের অনুরূপ এটিও কোরআনুল কারীমের একটি ছোটো সূরা। মাত্র ৩টি আয়াতসম্পন্ন এ সূরায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রিয় হাবীব রসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে, আল্লাহর সাহায্য, বিজয় ও দলে দলে লোকদের ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আগাম সুসংবাদ নাযিল করেছেন। মূলত এটি আল্লাহর মদদ, বিজয় ও ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সুসংবাদবাহী সূরা । এ সূরায় সাহায্য ও বিজয়প্রাপ্তির লগ্নে রসূলল্লাহ (স.)-কে আল্লাহর শোকরিয়া প্রকাশ আল্লাহর প্রশংসা, তার পবিত্রতা বর্ণনা ও মাগফেরাত কামনায় মনোনিবেশ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিজয়োল্লাসে আনন্দে মাতোয়ারা না হয়ে মহান আল্লাহর শোকরিয়া, হামদ, তাসবীহ ও মাগফেরাত কামনার মাধ্যমে বিনয়, নম্রতা, দীনতা, হীনতা প্রকাশের মহান মানবীয় গুণাবলীর প্রতি হুযুরে পাক (স.)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এমনিভাবে এ ছোট্ট সূরাটিতে বিজয়লগ্নে ইসলামী জীবন-চেতনার অনুসারী আল্লাহর দ্বীনের প্রত্যয়শীল জনগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে, বিশেষ করে হাবীবে পাক (স.) প্রদর্শিত এমন সব উজ্জ্বল গুণাবলী অর্জনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যা মানব সভ্যতার কোনো স্তরেই বিজয়ের সুসংবাদ প্রাপ্ত ও বিজয়ের আনন্দে উল্লাসিত জনতার মধ্যে আশা করা যেতে পারে না। এ সূরায় এমন সব মহান উজ্জ্বল উন্নত মানবীয় গুনাবলী যথা সম্মান, মর্যাদা, বিনয়, নিষ্ঠা, একাগ্রচিত্ততা, আত্ম-সংযম, আত্ম-নিয়ন্ত্রন, উদারতা, বিজয় উল্লাসে মদমত্ত না হওয়া এবং হামদ তাসবীহ, মাগফেরাত ও তাওবায় লিপ্ত হওয়ার মতো এত উন্নত পর্যায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট মন্ডিত হওয়ার আদেশ প্রদান করা হয়েছে, যা একমাত্র ইসলামী জীবনদর্শনের স্বাভাবিক পদ্ধতি, প্রবৃত্তি, মননশীলতা ও দর্শনের সাথেই সামঞ্জস্যশীল ৷ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া কখনও মানুষ নৈতিক উৎকর্ষের এত শীর্ষ স্থানে আরোহণ করতে পারে না- পারে না মর্যাদা, সম্মান ও মহত্ত্বের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হতে । এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে আমি এখানে ইমাম আহমদ সংকলিত হাদীস গ্রন্থের রেওয়ায়াতের উদ্ধৃতি পেশ করছি। তিনি রেওয়ায়াত করেন যে, আমাদের কাছে মোহাম্মদ ইবনে আদী বর্ণনা করেছেন, তিনি দাউদ থেকে, দাউদ শাবী থেকে, শাবী মাসরুক থেকে রেওয়ায়াত করেছেন। মাসরুক বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (স.) তার জীবনের শেষ সময়ে বেশী করে এ দোয়া পাঠ করতেন। “সুবহানাল্লাহে ওয়া বিহামদিহী আসতাগফি’রুল্লাহে ওয়া আতুবু ইলাইহে” অর্থাৎ আল্লাহ পাক পবিত্র, তার জন্যে সব প্রশংসা, আমি আমার গুনাহর জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার কাছেই আমি তাওবা করছি- তিনি এ কথাও বলেছেন, আমার প্রভু আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন, এ লক্ষণগুলো দেখলে আমি যেন আল্লাহর তাসবীহ, তাহমীদ, মাগফেরাত ও তাওবায় রত হই । অর্থাৎ উপরোল্লেখিত দোয়া বেশী বেশী করে পাঠ করি।“আর যখন তুমি দেখতে পাবে যমীনে আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ণভাবে বিজয়ী হয়েছে, তখনি তুমি এ বিশ্বাসে উপনীত হবে যে, আল্লাহর সান্নিধ্যে তোমার ফিরে যাওয়ার সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ও আল্লাহর সাহায্য, বিজয় ও দলে দলে লোক ইসলামের পতাকাতলে দাখিল হওয়ার এ মর্মই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইসলাম তার পরিপূর্ণ আদর্শ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার তাৎপর্যই হলো যে, সর্বশেষ রসূলের এ ধরার বুক থেকে অন্তর্ধানের সময় ও আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে বর্ণিত ফাত্হ্ (বিজয়) বলতে মক্কা বিজয়কেই বুঝানো হয়েছে। এটি একজনের একটি উক্তি ৷ আরবের যেসব কবীলাসমূহ, ইসলাম গ্রহণ করার জন্য মক্কা-বিজয়ের অপেক্ষায় ছিলো, তারা বলতো, যদি সে তার জাতির ওপর বিজয়ী হয় তাহলে বুঝবো অবশ্যই সে নবী ৷ তারপর যখন আল্লাহ তায়ালা মক্কা বিজয় দান করলেন তখন তারা দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে লাগলো । এরপর দু’বছর যেতে না যেতেই গোটা আরব উপদ্বীপ ঈমানের শরবত আকণ্ঠ পান করলো এবং সমগ্র আরবের কবীলাগুলো ইসলামের সমুজ্জল বাতির বাইরে আর কেউ রইলো না এ বাতির প্রদীপ্ত আভায় সমুজ্জল হয়ে গেলো তাদের জীবন ৷ আলহামদু লিল্লাহ্ আল্লাহ তায়ালারই যাবতীয় প্রশংসাও কৃতিত্ব এবং তার এহ্সানে আমরা ধন্য । আমর ইবনে সালামার বরাত দিয়ে ইমাম বোখারী তার কিতাব সহীহ বোখারীতে রেওয়ায়াত করেছেন, মক্কা বিজিত হলে প্রত্যেকটি কবীলা ও গোত্রশুলো ইসলাম গ্রহণ করার জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের কাছে দলে দলে ছুটে আসতে লাগলো । আর ইসলাম গ্রহণ করার জন্য মক্কা-বিজ্ঞয়ের প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান কবীলা গুলোও বলতে লাগলো, ‘এবারে তার জাতিকে বুঝতে দাও (অর্থাৎ, বুঝুক তার জাতি এবার) যে অবশ্যই তিনি নবী । সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, আলোচ্য রেওয়ায়াতটি সূরা নাসর-এর সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। এতে এরশাদ হয়েছে- ‘যখন আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয় এসে যাবে….. শেষ পর্যন্ত ।’ সুতরাং, সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার সময়েই এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইংগিত পাওয়া যায় যা অবশ্যই পরবর্তীতে সংঘটিত হবে । এ বিষয়ে নবী (স.) তখনই এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যখন তিনি এই সুসংবাদ ও এই ইংগিত পেয়ে গেলেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর আর একটি রেওয়ায়াত পাওয়া যায়, যাতে আমরা সহজেই দেখতে পাই দুটি রেওয়ায়াতের মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্য বর্তমান । ইমাম বোখারী বলেন, একটি হাদীস মূসা ইবনে ইসমাঈল আমাদেরকে শুনিয়েছেন, তাদের বলেছেন আবু উয়ানাহ্, তিনি পেয়েছেন আবু বাশার থেকে । এই আবু বাশার সাঈদ ইবনে জোবায়ের থেকে পেয়েছেন। আর তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে রেওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেছেন, ওমর (রা.) কিছু সংখ্যক বদরী বুযুর্গ (মুরুব্বী শ্রেণীর) ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে আমার কাছে আসতেন। এতে কারো কারো মনে একটু বেখাপ্পা (খারাপ) লাগলো । একজন বলেই ফেললেন, আমাদেরও তো এ বয়সী ছেলেরা আছে, এ ছেলেটা কেন আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে? তখন ওমর (রা.) বললেন, হা আছে, তবে এ বাচ্চাটা একটু ব্যতিক্রম । তোমাদেরকে যে শিক্ষা দেয়া হয়েছে এই বাচ্চাটাকে সেই একই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা যা জানো এই বাচ্চাটাও তাই জানে । (সুতরাং এটা সাধারণ বাচ্চা নয়)। পরবর্তী আর এক দিন তিনি এ মুরব্বীদেরকে ডাকলেন এবং সেখানে আমাকেও রাখলেন। তখন আমি বুঝলাম, আসলে তিনি তাদেরকে সেদিন কিছু দেখাতে চাচ্ছিলেন। তাই বললেন, আল্লাহ পাকের বাণী ‘ইযা জাআ নাসরুল্লাহে ওয়াল ফাত্হু’ সম্পর্কে আপনারা কী বুঝেন বলূন দেখি । তাঁদের মধ্যে কেউ বললেন, যখন আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ও বিজয় আসবে তখন আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা তার প্রশংসা করতে এবং তাঁর কাছে এস্তেগফার করতে আদেশ দিয়েছেন । কেউ কেউ কিছু না বলে চুপ থাকলেন। তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওহে আব্বাসের বেটা, তুমিও কি ওদের মতো একই কথা বলতে চাও? আমি বললাম, না । তিনি বললেন, তাহলে বলো তুমি কী বলতে চাও । বললাম, এ সূরাটি রসূল (স.) এর মৃত্যুর কথা ভবিষ্যদ্বাণী করছে। (অর্থাৎ তিনি অবিলম্বে ইন্তেকাল করবেন এ ঘোষনা দিচ্ছে) সূরাটি দ্বারা তাকে এ কথাটি জানানো হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলছেন, ‘যখন আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন বুঝবে সেটাই তোমার মৃত্যুর সংকেত ৷ অতএব ‘তোমার রবের প্রশংসা ও কৃতিত্বের কথা ঘোষণা করে তার তাসবীহ (পবিত্রতার ঘোষণা) জপতে থাকো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থী হও, নিশ্চয়ই তিনি তাওবা গ্রহণকারী ।’ তখন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বললেন, ‘তুমি যা বলেছে এর থেকে বেশী কিছু জানিনা ।’ (বোখারী একটি ব্যক্তি-সূত্র থেকে হাদীসটি পেয়েছেন) ৷ যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এই সংকেত পেয়ে গেলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, যে দায়িত্ব দিয়ে তাকে পাঠানো হয়েছিলো তা পূর্ণ হয়ে গেছে, আর তিনি শীঘ্র তার রবের সাথে মিলিত হবেন এটাই ছিলো ইবনে আব্বাসের বোধগম্য অর্থ ৷ অর্থাৎ রসূল (স.)-এর ইন্তেকালের ভবিষ্যদ্বাণী সূরাটির মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে জানিয়েছেন। অবশ্য হাফেয বায়হাকী তার সংকলিত বায়হাকীতে সূরা ‘নাসরের’ শানে নযুল প্রসংগে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সূরা নাসর অবতীর্ণের পর রসূলুল্লাহ্ (স.) তার নয়ন পুতুলী ফাতেমা (রা.)-কে তার কাছে ডেকে এনে বললেন, শোনো মা ফাতেমা, আমি জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়েছি। এ কথা শুনে হযরত ফাতেমা (রা.) প্রথমে, কাদলেন এবং পরক্ষণেই হাসলেন । তার প্রথম কান্না এবং পরক্ষণেই হাসার কারণ ব্যাখ্যা করে হযরত ফাতেমা(রা.) বলেছেন, আব্বা যখন আমাকে এ সংবাদ দিলেন যে, তার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে, তখন আমি কেঁদেছি, পরক্ষণেই তিনি বললেন, তমি ধৈর্য্য যারণ করো, (সংযত হও) ৷ আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার মৃত্যুর পর আমার সাথে মিলিত হবে, তখনই আমি হেসেছি। উক্ত হাদীস থেকে আমরা এ সূরার শানে নযুল ও অবতীর্ণকালীন প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্থিরভাবে বিজয় আসন্ন, দলে দলে লোক ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করছে। আল্লাহ্র দ্বীন পরিপূর্ণভাবে কায়েম হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাযিল করেছেন, রসূল (স.) প্রেরণ করেছেন ও দ্বীনরূপী নেয়ামত উপহার দিয়েছেন, তা সফল হয়েছে। আল্লাহর সাহায্যে বিজয় সূচীত হয়েছে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব যখন বুঝতে পারলেন য়ে বিজয়ের নিদর্শন সুস্পষ্ট দেখা দিয়েছে তখন তিনি এ সিদ্ধান্তে পৌছলেন যে, তার অন্তর্ধানের সময় নিকটতর হয়ে এসেছে। এ দুটো হাদীসের মূল বক্তব্য ও মর্ম প্রায় কাছাকাছি । তবু বিভিন্ন হাদীস ও আল কোরআনের ভাষ্য অনুসারে সূরা নাসর-এর শানে নুযুল প্রসংগে হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় হাদীস অপর এক ঘটনা প্রসংগে বর্ণিত হয়েছে এবং উম্মে সালমা (রা.) বর্ণিত হাদীসেও এ মতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং অপরাপর হাদীসে একই মতের উল্লেখ রয়েছে। উম্মুল মোমেনীন হযরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (স.) মক্কা বিজয়ের পর হযরত ফাতেমা (রা.)-কে ডেকে কানে কানে কি কথা যেন বললেন, ফাতেমা (রা.) কাদলেন। আবার রসূলুল্লাহ (স.) ফাতেমার কানে কি কথা বললেন, এবার ফাতেমা (রা.) হাসলেন। রসূলুল্লাহ (স.) ইন্তেকালের পরে হযরত উম্মে সালমা (রা.) ফাতেমা (রা.)কে হাসা ও কান্নার কারণ জিজ্ঞাস করলে উত্তরে ফাতেমা (রা.) বললেন, তিনি প্রথম আমার কানে কানে বলেছিলেন, অল্প দিনের মধ্যেই তিনি এ পৃথিবী থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাবেন । তখন আমি কেঁদেছি। এর পরেই তিনি আমার কানে কানে বললেন তুমি বেহেশতের সকল রমণীকুলের নেত্রী (একমাত্র ইমরান দুহিতা মরিয়ম ছাড়া) ৷ (তিরমিযী) । উল্লেখিত বর্ণনার সাথে কোরআনুল করীমের আয়াতের সাথে মিল রয়েছে। এবং সহীহ্ মুসলিম শরীফে সংকলিত ইমাম আহমদ (র.) বর্ণিত হাদীসের সাথেও হুবহু মিল রয়েছে৷ কারণ যে নিদর্শন দেখার পর রসূলে পাক (স.) হামদ, তাসবীহ, এস্তেগফার ও তাওবায় লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং শেষ জীবনে যে আলামত প্রকাশ পাওয়ার পর রসূলুল্লাহ (স.) ‘সুবহানাল্লাহে ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম’ দোয়া বেশী করে অজীফা করতেন, সে আলামত বা নিদর্শন আর কিছুই নয়; তা হচ্ছে ‘ইযা জাআ…… তাওয়াবা ।’ যখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের নিদর্শন প্রকাশ হয়েছে তখন তিনি এও উপলব্ধি করলেন যে, আল্লাহর সান্নিধ্যে তাঁর প্রত্যাবর্তনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। অতঃপর তিনি ফাতেমা (রা.)-এর কানে কানে একথা বললেন, যা ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। এ ক্ষুদ্র সূরাটির মোদ্দা কথা হচ্ছে, রসুলুল্লাহ (স.)-এর দৃষ্টি সাহায্য, বিজয় ও দলে দলে লোক ইসলামে দীক্ষিত হতে দেখলেই এ সত্য উপলব্ধি করা যে, যে মহান পয়গাম ও দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাকে প্রেরণ করেছেন তা সমাপ্তি পর্যায়ে এসে গেছে। তাকে দায়িত্ব সম্পাদনের পর বিরহের অনলে জ্বলে-পুড়ে অব্যক্ত ব্যথা বেদনায় জর্জরিত হওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। পরম প্রিয়জনের সান্নিধ্যে প্রত্যাবর্তনের সময় নিকটবর্তী হয়েছে। তাই এ সময় সে মহান প্রভুর হামদ, তাসবীহ মাগফেরাত ও তাওবার মাধ্যমে অতিবাহিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ সূরা অবতীর্ণ করেন।
সুরা: আন-নাসর
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,
اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللّٰهِ وَ الْفَتْحُۙ
যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়,১
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:১) বিজয় মানে কোন একটি যুদ্ধ বিজয় নয়। বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চূড়ান্ত বিজয় যার পরে ইসলামের সাথে সংঘর্ষ করার মতো আর কোন শক্তির অস্তিত্ব দেশের বুকে থাকবে না এবং একথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বর্তমানে আরবে এ দ্বীনটিই প্রাধান্য বিস্তার করবে। কোন কোন মুফাসসির এখানে বিজয় মানে করেছেন মক্কা বিজয়। কিন্তু মক্কা বিজয় হয়েছে ৮ হিজরীতে এবং এ সূরাটি নাযিল হয়েছে ১০ হিজরীর শেষের দিকে। ভূমিকায় আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ও হযরত সারাআ বিনতে নাবহানের (রা.) যে হাদীস বর্ণনা করেছি তা থেকে একথাই জানা যায়। এছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) যে একে কুরআন মজীদের সর্বশেষ সূরা বলেছেন, তাঁর এ বক্তব্যও এ তাফসীরের (রা.) বিরুদ্ধে চলে যায়। কারণ বিজয়ের মানে যদি মক্কা বিজয় হয় তাহলে সমগ্র সূরা তাওবা মক্কা বিজয়ের পর নাযিল হয়। তাহলে আন নসর কেমন করে শেষ সূরা হতে পারে? নিঃসন্দেহে মক্কা বিজয় এ দিক দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় ছিল যে, তারপর আরবের মুশরিকদের সাহস ও হিম্মত নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি-সামর্থ্য ছিল। এরপরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল তায়েফ ও হুনায়েনের যুদ্ধ। আরবে ইসলামের পূর্ণাংগ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে আরো প্রায় দু’বছর সময় লেগেছিল।
সুরা: আন-নাসর
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,
وَ رَاَیْتَ النَّاسَ یَدْخُلُوْنَ فِیْ دِیْنِ اللّٰهِ اَفْوَاجًاۙ
আর (হে নবী!) তুমি (যদি) দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করছে২
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:২) অর্থাৎ লোকদের একজন দু’জন করে ইসলাম গ্রহণ করার যুগ শেষ হয় যাবে। তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে যখন একটি গোত্রের সবাই এবং এক একটি বড় বড় এলাকার সমস্ত অধিবাসী কোন প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলমান হয়ে যেতে থাকবে। নবম হিজরীর শুরু থেকে এ অবস্থার সূচনা হয়। এ কারণে এ বছরটিকে বলা হয় প্রতিনিধি দলের বছর। এ বছর আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতে থাকে। তারা ইসলাম কবুল করে তাঁর মুবারক হাতে বাই’আত গ্রহণ করতে থাকে। এমনকি দশম হিজরীতে যখন তিনি বিদায় হজ্জ করার জন্য মক্কায় যান তখন সমগ্র আরব ভূমি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সারাদেশে কোথাও একজন মুশরিক ছিল না।
সুরা: আন-নাসর
আয়াত নং :-3
টিকা নং:3, 4,
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ اسْتَغْفِرْهُ١ؔؕ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا۠
তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো৩ এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও।৪ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী।
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৩) হামদ মানে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও। আর তাসবীহ মানে আল্লাহকে পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন এবং দোষ-ত্রুটিমুক্ত গণ্য করা। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যখন তুমি তোমার রবের কুদরতের এ অভিব্যক্তি দেখবে তখন তাঁর হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পাঠ করবে। এখানে হামদ বলে একথা বুঝানো হয়েছে যে, এ মহান ও বিরাট সাফল্য সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সময় বিন্দুমাত্রও ধারণা না জন্মায় যে, এসব তোমার নিজের কৃতিত্বের ফল। বরং একে পুরোপুরি ও সরাসরি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী মনে করবে। এজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। মনে ও মুখে একথা স্বীকার করবে যে, এ সাফল্যের জন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য। আর তাসবীহ মানে হচ্ছে, আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হওয়ার বিষয়টি তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার ওপর নির্ভরশীল ছিল— এ ধরনের ধারণা থেকে তাঁকে পাক ও মুক্ত গণ্য করবে। বিপরীতপক্ষে তোমার মন এ দৃঢ় বিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকবে যে, তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার সাফল্য আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি তাঁর যে বান্দার থেকে চান কাজ নিতে পারতেন। তবে তিনি তোমার খিদমত নিয়েছেন এবং তোমার সাহায্যে তাঁর দ্বীনের ঝাণ্ডা বুলন্দ করেছেন, এটা তাঁর অনুগ্রহ। এছাড়া তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ পড়ার মধ্যে বিস্ময়েরও একটি দিক রয়েছে। কোন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলে মানুষ সুবহানাল্লাহ বলে। এর অর্থ হয়, আল্লাহর অসীম কুদরতে এহেন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। নয়তো এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাবার ক্ষমতা দুনিয়ার কোন শক্তির ছিল না।
টিকা:৪) অর্থাৎ তোমার রবের কাছে দোয়া করো। তিনি তোমাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করতে গিয়ে তোমার যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা যেন তিনি মাফ করে দেন। ইসলাম বান্দাকে এ আদব ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে। কোন মানুষের দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের যতবড় খিদমতই সম্পন্ন হোক না কেন, তাঁর পথে সে যতই ত্যাগ স্বীকার করুক না এবং তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী করার ব্যাপারে যতই প্রচেষ্টা ও সাধনা চালাক না কেন, তার মনে কখনো এ ধরনের চিন্তার উদয় হওয়া উচিত নয় যে, তার ওপর তার রবের যে হক ছিল তা সে পুরোপুরি আদায় করে দিয়েছে। বরং সব সময় তার মনে করা উচিত যে, তার হক আদায় করার ব্যাপারে যেসব দোষ-ত্রুটি সে করেছে তা মাফ করে দিয়ে যেন তিনি তার এ নগণ্য খেদমত কবুল করে নেন। এ আদব ও শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। অথচ তাঁর চেয়ে বেশী আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনাকারী আর কোন মানুষের কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। তাহলে এক্ষেত্রে অন্য কোন মানুষের পক্ষে তার নিজের আমলকে বড় মনে করার অবকাশ কোথায়? আল্লাহর যে অধিকার তার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা সে আদায় করে দিয়েছে এ অহংকার মত্ত হওয়ার কোন সুযোগই কি তার থাকে? কোন সৃষ্টি আল্লাহর হক আদায় করতে সক্ষম হবে, এ ক্ষমতাই তার নেই।
মহান আল্লাহর এ ফরমান মুসলমানদের এ শিক্ষা দিয়ে আসছে যে, নিজের কোন ইবাদাত, আধ্যাত্মিক সাধনা ও দ্বীনি খেদমতকে বড় জিনিস মনে না করে নিজের সমগ্র প্রাণশক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত ও ব্যয় করার পরও আল্লাহর হক আদায় হয়নি বলে মনে করা উচিত। এভাবে যখনই তারা কোন বিজয় লাভে সমর্থ হবে তখনই এ বিজয়কে নিজেদের কোন কৃতিত্বের নয় বরং মহান আল্লাহর অনুগ্রহের ফল মনে করবে। এজন্য গর্ব ও অহংকারে মত্ত না হয়ে নিজেদের রবের সামনে দ্বীনতার সাথে মাথা নত করে হামদ, সানা ও তাসবীহ পড়তে এবং তাওবা ও ইসতিগফার করতে থাকবে।
ফী জিলালিল কুরআন:
‘ইযা জাআ…..তাওয়াবা’ সূরা এক বিশেষ অনুভুতি ও চেতনার প্রকাশ ঘটেছে । বিশ্বের ঘটনারাজির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে৷ রসূলুল্লাহ (স.) ও সাহাবাদের যুগে ইসলামী দাওয়াতের বিজয় ও প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে এক নবতর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। ইসলামী দাওয়াতের চূড়ান্ত বিজয়ের এক অভিনব তাৎপর্য ও মর্ম উপলব্ধি করার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। কৌশল বা অস্ত্রবল নয় বিজয় আল্লাহর হাতে : এখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা, করা হয়েছে যে, বিজয় কখনো জনশক্তি বা অন্ত্রবলে হয় না, বরং বিজয়ের উৎস ঈমান বিল্লাহ ৷ কাংখিত বিজয় ইসলামী কাফেলার অস্ত্র দিয়ে আসে না। এ জন্য দায়ী ইলাল্লাহদেরকে শ্রম, প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর মরযী ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে । আল্লাহর নুসরাত ও মদদই হচ্ছে বিজয়ের একমাত্র মাধ্যম । আল্লাহ তায়ালা যখন ইচ্ছা করেন সিদ্ধান্ত নেন, তখন অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়করভাবেই ঘুম থেকে জেগে বিজয়ের উদিত সূর্যকে দেখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা যে সময়ে যে পন্থায় যে প্রকৃতিতে বিজয় দিতে চান বিজয় সে পথেই সূচিত হয়। তিনি বিজয়ের যে নকশা বা চিত্র অংকন প্রকৃতিতে বিজয় দিতে চান বিজয় সে পথেই সূচিত হয়। তিনি বিজয়ের যে নকশা বা চিত্র অংকন করেন, বিজয় সে নকশায় চিত্রিত হয়ে আগমন করে। তার কৌশল ও পরিকল্পনার বুনিয়াদে বিজয়ের লক্ষ্য অর্জিত হয়। বিজয় সূচিত হওয়ার ব্যাপারে নবী করীম (স.) ও তার সাথে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ও জনশক্তির ইচ্ছা, আকাংখা ও প্রত্যাশারও কোনো দখল নেই । বিজয় লাভের ক্ষেত্রে তাদের কোনো কিছুর ওপর নির্ভরতা নেই দ্বীন বিজয়ের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের শ্রম সাধনা, জনশক্তি, সম্পদ ও অস্ত্রের ওপর ভর করে বিজয় আসেনা, সংগ্রামী কাফেলার এতে কোনো অংশ নেই তাদের নিজস্ব শক্তি ও সামর্থের এতে কোনো হিস্যা নেই। বিজয়ের সমস্ত কৃতিত্ব ও অবদান একমাত্র লা শারিক আল্লাহর। আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিষ্ঠাপূর্ণ ও নিবেদিত প্রাণ দায়ী ইলাল্লাহদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ বিজয় দান করেন। আল্লাহ তায়ালাই তার দ্বীনের কর্মীদেরকে বিজয়ের মাল্যে ভূষিত করেন। আল্লাহই তাদের হাতকে শক্তিশালী করেন। আল্লাহ তায়ালাই ফেরেশতাদেরকে খোদার পথে আহবানকারীদের পাহারাদার ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রেখে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা স্বীয় ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করেছেন। তিনিই দ্বীনবিরোধী, নাস্তিক ও মুরতাদদেরকে শায়েস্তা করেন। নাস্তিক মুরতাদ ও আল্লাহদ্রোহীদের সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, প্রতারণাকে ব্যর্থ, প্রতিহত ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহর দ্বীনের মোজাহেদদের সকল বিজয় ও সাফল্য একমাত্র আল্লাহর মদদ, করুণা ও রহম-করমের ওপরই নির্ভরশীল ৷ আর আল্লাহর মদদ ও সাহায্যের ফলে বিজয় সূচিত হওয়ার পরই লোকেরা দলে দলে ইসলামের সূশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। বিজয়ের এ নবতর চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, মর্ম ও তাৎপর্যের উপলব্ধির ফলেই রসূলুল্লাহ (স.)-এর সম্মান ও মর্যাদা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। মানব হৃদয়ে রসূলে করীম (স.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি আরও দৃঢ়তর হতে থাকে এবং দ্বীনের পথে আহবানকারীদের প্রভাব ও সম্মান আল্লাহর সাহায্য বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর সরাসরি হস্তক্ষেপের ফলে তারা গৌরব সম্মান ও বিজয়ীর আসনে সমাসীন হয়। প্রকৃতপক্ষে সমস্ত সম্মান ও ইযযতের হকদার একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা । আর সম্মান তাদের জন্যে, যারা আল্লাহর সাথে নিজেদের সম্পর্ককে গভীর ও নিবিড় করেছে। তাই বিজয়লগ্নে ও বিজয়ান্তে, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত কাফেলাদেরকে একমাত্র আল্লাহর হামদ, তাসবীহ, এস্তেগফার ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দরগায় বিনয় ও শোকরিয়া প্রকাশ করাইৎতাদের অপরিহার্য কর্তব্য। কেননা আল্লাহ্ তায়ালাই তাদেরকে তার দ্বীনের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে অংশ গ্রহণের তাওফীক দান করেছেন। তারই রহমতে ও মদদে তারা কুফর-শিরক ও নাস্তিকতার অভিশপ্ত পথ থেকে বেচে থাকতে পেরেছেন। আর এভাবেই দ্বীন বিরোধীদের কাতারে শামিল হওয়া থেকে আত্মরক্ষার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আল্লাহর যমীনে সমস্ত মানব গোষ্ঠীর ওপর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম উম্মতের উপাধিতে ভূষিত হওয়া উম্মতের কাফেলায় শরীক হওয়ার পরম সৌভাগ্য লাভ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীনের কাফেলাকে সমস্ত অজ্ঞতা, মূর্খতা, অন্ধত্ব, গোমরাহী, ক্ষতি ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। তাই প্রতিনিয়ত তাদের তাঁর স্তবস্তুতি, প্রশংসা, গুণকীর্তন. এস্তেগফার ও তাওবায় লিপ্ত থাকা উচিত । বান্দা আল্লাহর দরবারে এস্তেগফার করার মাধ্যমে অনেক সুক্ষ তত্ত্ব, আত্মিক উৎকর্ষ, বিশুদ্ধতা, পবিত্র মননশীলতা ও নম্রতা হৃদয়ে অনুভব করে দীর্ঘ বিপর্যয় ও পরীক্ষার পর বিজয়লগ্নে মানব হৃদয়ে এক অবর্ণনীয় খুশী, আনন্দানুভুতি ও তৃপ্তি জন্ম নেয়। আল্লাহর রহমতে বিজয় লাভের পর বিজয়ের পূর্বে বাতিলপন্থীদের দেয়া সীমাহীন নির্যাতন, ঈমানের কঠোর অগ্নি পরীক্ষা, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের ভীষণ কষ্ট, কঠোর বিরোধিতা, সংগীন ও মারাত্মক বিপদ-মুসীবত ও বিপর্যয় এবং জীবন ও জীবিকার পরিবেশ দুরূহ ও সংকীর্ণ হওয়ার নিষ্ঠুর নির্মমতা, আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিজয়ের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা- এসব দুঃখ যাতনা, বিষাদ, বেদনার অসংখ্য ক্ষত নিরাময়ের একমাত্র মহৌষধ ও আবে হায়াত হচ্ছে আল্লাহর হামদ, তাসবীহ, তাওবা ও এস্তেগফার ৷ কোরআনে হাকীমে এরশাদ হচ্ছে, “তোমরা কি মনে করেছো যে, (কোনো পরীক্ষা ছাড়াই) তোমরা এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের কাছে (অতীতের) তোমাদের পূর্বে (যে সকল নবী রসূল) যারা অতিবাহিত হয়ে গেছেন, তাদের ইতিহাস রয়েছে। তাদের ওপর কঠিন বিপদ, মুসীবত এসেছে ও তারা ভীষণ কষ্টে পড়েছে। ফলে তাদের হৃদয় টলটলায়মান হয়ে গেছে, এমনকি রসূল ও তার সংগীরা বলে উঠেছে, আল্লাহর (প্রতিশ্রুত) সাহায্য কোথায়? জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে ।” (২.বাকারা:২১৪) । এ কারণে আল্লাহর প্রতিশ্রুত ও বহু প্রতীক্ষিত সাহায্য প্রাপ্তির সময় তার প্রতি বিনয় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এস্তেগফার করা আবশ্যক। এস্তেগফারের মাধ্যমে বান্দা স্বীয় দীনতা-হীনতা প্রকাশ করে আল্লাহর অসীমতা ও বিশালতার স্বীকৃতি প্রদান করে। সাথে সাথে আল্লাহর অনন্ত প্রসংশা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কার । মানবীয় চেষ্টা-সাধনা সকল অবস্থায় অত্যন্ত দুর্বল ও সীমিত। আর আল্লাহর শক্তি সামর্থ প্রবাহ, অনুগ্রহ, অনন্ত, চিরন্তন ও অসীম । আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার আল্লাহর অপার অনুগ্রহকে গুণে শেষ করতে পারবে না ।’ তাই আল্লাহর এ অনন্ত দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার সমীপে এস্তেগফার করা বান্দার দায়িত্ব । আর আল্লাহর নিকট এস্তেগফার আদায়ের মধ্যে আরেকটি সুক্ষ মর্ম ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তা হচ্ছে এই যে, এর মাধ্যমে বান্দা তার সকল অহমিকা ও গর্বকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে স্বীয় অসহায়ত্ত্ব, সংকীর্ণতা ও সকল দুর্বলতা মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে নিবেদন করে। আল্লাহর কাছে বিনয় প্রকাশ করে তার মাগফেরাত কামনা করে । আল্লাহর বিশালতা ও মহত্ত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে তার মাগফেরাত কামনা করে। বিজয়ের আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে পরাজিত প্রতিপক্ষের সাথে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করা থেকে বিরত থাকে । আল্লাহর মদদই যে সত্যাশ্রয়ী কাফেলাকে বিজয়ী করেছে একথা মনে হওয়ার সাথে সাথে নিজস্ব শক্তি সামর্থের গর্ব এবং নিজেদেরকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিমান মনে করার ভ্রান্ত চেতনা ও অনুভূতি লোপ পায়। ফলে বিজয়ী কাফেলার মনমগয পরিশুদ্ধ ও পবিত্র থাকে । এই এস্তেগফারের কারণে সত্যের সংগ্রামী কাফেলার হৃদয়রাজ্যে এ বিশ্বাস ও চেতনা দৃঢ়তর ও স্থায়ী হয় যে, আল্লাহ তায়ালাই বাতিল প্রতিপক্ষের ওপর তাদেরকে বিজয় দান ও আধিপত্য বিস্তারের মর্যাদা দান করেছেন। নতুবা তারা তো ছিলো একান্ত শক্তিহীন, দুর্বল ও অসহায় ৷ মহান আল্লাহ তায়ালা তারই ইচ্ছায় তাদের ওপর মোমেনদেরকে বিজয়ী করেছেন। সাহায্য তো একমাত্র তারই, বিজয় দান তো একমাত্র তারই অনুগ্রহ । আর এ দ্বীন ও জীবনাদর্শ তো একমাত্র তারই প্রদত্ত জীবনদর্শন। আর সবকিছুরই চূড়ান্ত প্রত্যারর্তন ও আশ্রয়স্থল একমাত্র তারই সমীপে । মানব সভ্যতার সুনীল আকাশে আল কোরআন প্রদীপ্ত সত্যের সুমহান আলোকবর্তিকা ৷ মানব সভ্যতার এ ক্রমবিকাশ, প্রগতি ও উৎকর্ষের গগনচুম্বী চূড়া, লোহিত সাগর ও নীল নদীর উপকূলে সত্যতার বিকাশ ও আলোর ছোয়া, সুনীল আকাশের বায়ুতরঙ্গের উথিত আযানের তাকবীর-ধ্বনি, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্বের গগনবিদারী আল্লাহু আকবারের ধ্বনি-এ সবই আল্লাহর অফুরন্ত দান। মহাশক্তির নিকট আত্মসমর্পণের অতৃপ্ত কামনায় পরম তৃপ্তি ও প্রশান্তি কেবল আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আল্লাহর নামের যিকিরেরই ফলশ্রুতি । তারই সাহায্যে এসেছে এ মহান বিজয় ও সাফল্য আর মোমেনরা লাভ করেছে পরম তৃপ্তির সন্ধান। মানব জীবনের প্রগাঢ় অন্ধকারকে দূর করে প্রভাতের সোনালী আলোক রশ্মি, আর আত্মার বিকশিত জ্যোতি এ সবই তো মহান আল্লাহর অফুরন্ত দান। এতে মানুষের বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব নেই, বরং এ সবই আল্লাহর ইচ্ছা । এতদসংগে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সমাজ ও সভ্যতার বিনির্মাণ পুনর্গঠন, প্রগতি ও উত্থান, মানব সমাজের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বু, সুসভ্য ও মার্জিত জীবনাচার মহান আল্লাহর সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল । আর আল্লাহর এ সকল সাহায্য যে চিরন্তন পন্থা ও পদ্ধতির মাধ্যমে পাওয়া যায় তাই নবুওত ও রেসালাত নামে আখ্যায়িত ৷ আল্লাহ তায়ালা নবী ও রসূলদের প্রতিষ্ঠিত জীবনবোধ ও পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষকে এ চিরন্তন বিজয় ও কল্যাণের গগনচুম্বী চুড়ায় উত্তোলন করেন । আর নবুওত ও রেসালাতের নিখুত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত এ পন্থার অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানব সভ্যতা চিরস্থায়ীভাবে আকাশ ছোয়া উন্নতির শীর্ষে অধিষ্ঠিত থাকতে পারে। হযরত ইউসুফ (আ.)-কে এ পন্থায়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা তার বাণীকে পূর্ণতা দান করে ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দান করেছেন। ইউসুফ (আ.) দীর্ঘ পরীক্ষা ও বন্ধুর পথ অতিক্রম করে বিরহ ও বিচ্ছেদ-অনলে দগ্ধীভূত হওয়ার পর মিলনের আনন্দঘন মুহূর্তে পিতাকে সম্মানের সাথে মিসরের সিংহাসনে বসাবার পর বিনয়াবনত হয়ে তিনি বললেন, হে আমার পিতা! এ হচ্ছে আমার দেখা সে স্বপ্রের বৃত্তান্ত যা আমি আগে দেখেছিলোম। আমার প্রভু সে স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন। আমার প্রভু আমাকে কারাগার থেকে বের করে এনে কতো উত্তম সম্মান দান করেছেন। আমাদের ভাইদের ওপর শয়তানের ছোয়া লাগার পরও আমাকে আপনাকে পল্লীর পরিবেশ থেকে বের করে এনে (এ নগরে) মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার প্রভূ যার প্রতি চান মেহেরবানী করেন, তিনিই তো সর্ব-জ্ঞাতা ও মহাবিজ্ঞানী ৷ (ইউসুফ:১০০)। আর দীর্ঘ বিপদময় নির্যাতিত জীবনের অবসানান্তে হযরত ইউসুফ (আ.) আনন্দ উল্লাস, গর্ব-অহংকারের শয়তানী ছোয়া থেকে নিজকে মুক্ত ও পবিত্র রেখে আল্লাহর সমস্ত অনুগ্রহ ও মেহেরবানীর শোকরিয়া আদায় করেন। তার মেহেরবানী, জ্ঞান ও কৌশলের স্বীকৃতি প্রদান করে তাসবীহ ও হামদের মাধ্যমে তারই মহান দরগাহে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তার এ মর্যাদা প্রাপ্তি, তার ভাইদের ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে তারই আশ্রয়ে আগমন, তার পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজনের পুনর্মিলনের মহান সুযোগ সবই যে মহাশক্তিমান আল্লাহর পরম অনুগ্রহ, তারই কৌশল ও মেহেরবানীর ফলশ্রুতি, তা নিসংকোচে হৃষ্টচিত্তে মুক্ত মন নিয়ে তিনি স্বীকার করেন। তার সকল সম্মান মর্যাদা যে আল্লাহরই অফুরন্ত দান তার স্বীকৃতি প্রদান করে তিনি যা বলেছেন আল কোরআনের ভাষায় তা হচ্ছে, ‘হে আমার প্রভু! তুমিই তো আমাকে রাজত্ব প্রদান আপস করেছো, স্বপ্নের বৃত্তান্ত শিখিয়েছো। তুমিই তো আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, (আর) তুমিই দুনিয়া ও আখেরাতে আমার অভিভাবক । তুমি আমাকে তোমার সমীপে আত্মসমপর্ণকারী হয়ে মৃত্যু দান করো আর তোমার নেক বান্দাদের সাথে মিলিত করো ।’ (ইউসুফ:১০১) এ আয়াতেও হযরত ইউসুফ (আ.) মিসরের রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া যে আল্লাহরই মহান দান, তার স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। পরপারে ও ইহ-জীবনে আল্লাহর নেক বান্দাদের সাহচর্য ও সান্নিধ্য লাভ ও ভ্রাতৃত্ব কামনা জান্নাতে সালেহ বান্দাদের সাথে শামিল করা, জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত এমন কি নশ্বর ধরার বুক হতে অবিনশ্বর জগতের সফর পর্যন্ত, আল্লাহর অনুগত আত্মসমর্পণকারী মুসলিম হিসাবে মৃত্যু কামনা এ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্র রহম, করম ও অনুগ্রহ কামনা করেছেন। আখেরাতের অনন্ত জীবনে সালেহ বান্দাদের সাথে জান্নাতে একত্রে বসবাস ও শামিল হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার ফসল ভিক্ষা করেছেন! ঠিক এই একই পদ্ধতিতে চোখের এক পলকে সারার রাণী বিলকিসের সিংহাসন বিস্ময়করভাবে নিজের সামনে উপস্থিত হতে দেখে হযরত সোলায়মান (আ.) নিজের বাহাদুরী বা কৃতিত্বের দাবী না করে বরং মহান আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহে স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও শোকর আদায় করে বলেছেন, আর তিনি যখন এক নিমিষে বিলকিসের সিংহাসনকে তার সামনে উপস্থিত দেখতে পেলেন, (তখনই) বললেন, এতো আমার প্রভুরই দান, তিনি (এমন বিস্ময়কর) ঘটনাতো আমাকে পরীক্ষা করার জন্যই ঘটিয়েছেন। তিনি দেখতে চান যে, আমি কি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না তাঁর অবাধ্যতা প্রকাশ করি? আর যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা নিজের স্বার্থেই তা করে, আর যারা অমান্য ও অবাধ্যতা প্রকাশ করে, (তাতে আল্লাহর কোনো ক্ষতি নেই বরং, তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করে!) আমার প্রভু কারো মুখাপেক্ষী নন, তিনিই পরম দাতা। আর প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (স.) ঠিক একই পন্থার অনুসরণ করেছেন। জীবনভর তিনি একই পদ্ধতিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, সাহায্য ও বিজয়, যে বিজয়কে ইতিহাসের এক অমর স্মৃতি ও নিদর্শন হিসাবে উপহার দিয়েছেন। কাতর কণ্ঠে সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে তিনি আল্লাহর প্রশংসা, গুণ কীর্তন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে স্বীয় জন্মভূমি মক্কায় প্রবেশ করেছেন। যে মক্কাবাসী তাকে রক্তে রঞ্জিত করেছে, তাকে বিতাড়িত করেছে, তার সাথে শত্রুতা করেছে, সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, তার দাওয়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তার সাথে প্রচন্ড শত্রুতা করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে । আর যখন বিজয় তাঁর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছে, তখন সব কিছু ভুলে বিজয়ের আনন্দ ও খুশীতে মেতে না উঠে তিনি পরম বিনয় ও কাতর কণ্ঠে আল্লাহর তাসবীহ, হামদ, এস্তেগফার ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেছেন, যা হযরত আয়শা (রা.) বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে। রসূলুল্লাহ (স.)-এর তিরোধানের পর তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম (রা.) একই পদ্ধতির অনুসরণ ও অনুকরণ করেছেন। এমনিভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মানব সমাজও একই পদ্ধতির অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্বে উচ্চতর মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হয়ে উন্নতির উচ্চ-শিখরে আরোহণ করেছে। এভাবে বিশ্ব-সভ্যতায় তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সম্মান বৃদ্ধি পায়। তারা সম্মান, খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করে।
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ ও গুরুত্ব:
النصر শব্দের অর্থ সাহায্য, সহযোগিতা। এ শব্দটি প্রথম আয়াতেই এসেছে, সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরার অপর নাম সূরাতুত তাওদী বা বিদায়ের সূরা। এ সূরাতে নাবী (সাঃ)-এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে বিধায় এর নাম সূরাতুত্ তাওদী করা হয়েছে। (তাফসীর মারেফুল কুরআন)। এ সূরাটি অবতীর্ণের দিক দিয়ে সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা। (ফাতহুল বারী ৮/৬০৫, সহীহ মুসলিম হা. ৩০২৪)
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : আইয়ামে তাশরীক (১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জের) মাঝামাঝি দিনে মিনায় এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হাজ্জে ছিলেন। সূরাটি শেষ পর্যন্ত পড়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বুঝতে পারলেন যে, এটাই তাঁর শেষ হাজ্জ, অতঃপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রসিদ্ধ ভাষণটি প্রদান করেন। (ইমাম বায়হাকী তার দালায়েল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন হা. ৯৪৬৪)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন :
(إِذَا جَا۬ءَ نَصْرُ اللّٰهِ وَالْفَتْحُ)
সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর নাবী (সাঃ) যে সালাতই আদায় করতেন তাতে
سبحانك ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي
-পাঠ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা. ৪৯৬৭, সহীহ মুসলিম হা. ৪৮৪)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রুকু ও সিজদাতে এ দু‘আটি বেশি বেশি পড়তেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৬৮) কারণ এ সূরা কুরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা। (সহীহ মুসলিম হা. ৭৭৩১) এ সূরার ফযীলত সূরা যিলযালে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীর:
إِذَا সাধারণত শর্তের অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : যখন তুমি সাহায্য চাইবে, তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইবে। (তিরমিযী হা. ২৫১৬, মিশকাত হা. ৫৩০২, সহীহ) তবে নিশ্চয়তার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এখানে সে অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
(نَصْرُ اللّٰهِ) বলতে কুফর ও কাফিরদের ওপর ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। الْفَتْحُ দ্বারা মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে যা ৮ম হিজরীর ১৭ই রমাযান মঙ্গলবার সকালে অর্জিত হয়েছিল। এ সূরাতে কয়েকটি বিষয় আলোচনা স্থান পেয়েছে:
১. সুসংবাদ : এ সুসংবাদটি হলো ইসলাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মুসলিমদেরকে সাহায্য করার সুসংবাদ এবং মক্কা বিজয় ও দলে দলে দীন ইসলামে মানুষের প্রবেশের সুসংবাদ। এ সুসংবাদটি ইতোমধ্যে সংঘঠিত হয়ে গেছে। মক্কা বিজয়ের পরের বছর ৯ম ও ১০ম হিজরীকে প্রতিনিধি দলের আগমনের বছর বলে আখ্যায়িত করা হয়। ঐ সময় আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকেরা দলে দলে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে। মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে ইসলাম গ্রহণের অন্যতম কারণ হল হারাম শরীফকে আল্লাহ তা‘আলা হস্তীবাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন, সে হারামের তত্ত্বাবধায়কদের ওপর যখন মুহাম্মাদ জয়লাভ করেছেন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি সত্য নাবী। (সহীহ বুখারী হা. ৪৩০২)
ইকরিমা ও মুকাতিল (রহঃ) বলেন : (نَصْرُ اللّٰهِ) বা বিজয় বলতে ইয়ামানী প্রতিনিধি দলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা তাদের প্রায় সাতশত লোক মুসলিম হয়ে কেউ আযান দিতে দিতে, কেউ কুরআন তেলাওয়াত করতে করতে, কেউ কালেমা পড়তে পড়তে মদীনায় এসে উপস্থিত হয়েছিল। এতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুবই খুশি হন। কিন্তু উমার ও আব্বাস (রাঃ) কাঁদতে থাকেন। (তাফসীর কুরতুবী)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : نَصْرُ اللّهِ বিজয় এসেছে, সাহায্য এসেছে এবং ইয়ামানবাসীরাও এসেছে। জনৈক ব্যক্তি বলল : হে আল্লাহর রাসূল! ইয়ামানবাসী কারা? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন :
جَاءَ أَهْلُ الْيَمَنِ، هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً، الْإِيمَانُ يَمَانٍ، وَالْفِقْهُ يَمَانٍ، وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ
ইয়ামানবাসীরা আগমন করেছে, এদের হৃদয় খুবই নরম। ঈমান ইয়ামানবাসীদের মাঝে, বুঝশক্তি ইয়ামানবাসীদের এবং দূরদর্শিতা ইয়ামানবাসীদের মাঝেই। (সহীহ মুসলিম হা. ৫২)
২. সূরাতে দুটি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। একটি ইঙ্গিত হলো : আল্লাহ তা‘আলার এ সাহায্য বলবত থাকবে এমনকি তা আরো বৃদ্ধি পাবে যদি মানুষ প্রকৃত ঈমান ও আমলে প্রতিষ্ঠিত থাকে। এর প্রমাণ খুলাফায়ে রাশেদা ও তার পরবর্তী যুগ। আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য নিয়েই খুলাফায়ে রাশেদাগণ ও পরবর্তী মুজতাহিদগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় ইঙ্গিত হলো : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইনতেকালের সময় নিকটবর্তী। এজন্য তিনি সালাতের মাঝে রুকু ও সিজদাতে বেশি বেশি তাসবীহ পাঠ করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী বয়স্ক মুজাহিদদের সাথে উমার (রাঃ) আমাকেও শামিল করে নিতেন। এ কারণে কারো মনে সম্ভবত অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হত। একদা তাদের মধ্যে একজন আমার সম্পর্কে মন্তব্য করে বলল : সে কেন আপনার সাথে আসে? আমাদেরও তো তার মত সন্তান আছে। উমার (রাঃ) বললেন : তোমরা তো তার ব্যাপারে ভাল করেই জান। একদিন তিনি সবাইকে ডাকলেন এবং আমাকেও তাদের সাথে প্রবেশ করালেন। আমি বুঝতে পারলাম আজ তিনি তাদেরকে কিছু দেখাতে চান, উমার (রাঃ) সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন : তোমরা
(إِذَا جَا۬ءَ نَصْرُ اللّٰهِ وَالْفَتْحُ)
এ আয়াতটির ব্যাপারে কী বল? তাদের কতকজন বললেন : যখন বিজয় ও সাহায্য আসবে তখন আমাদেরকে তাসবীহ, তাহলীল ও ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর কতকজন চুপ থাকলেন, কোন কথা বললেন না। এবার তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : তুমি এরূপই বল, হে ইবনু আব্বাস? আমি বললাম : এ সূরায় নাবী (সাঃ)-এর পরলোক গমনের কথা বলা হয়েছে। এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তাঁর ইহলৌকিক জীবন শেষ হয়ে এসেছে। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) বললেন : আমিও তাই বুঝেছি (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭০)।
(فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ)
অর্থাৎ তুমি তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা কর। প্রশংসা বা হামদ হল ভালবাসা ও সম্মানসহকারে পূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার গুণকীর্তন করা। আর পবিত্রতা হল আল্লাহ তা‘আলার শানে উপযুক্ত নয় এমন সব কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। এ আয়াতে উভয়টার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এ সূরা অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেশি বেশি ইসতিগফার পড়তেন। প্রশ্ন হতে পারে; রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তো পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে তবুও কেন তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হল?
উত্তর : এরূপ প্রশ্ন আয়িশাহ (রাঃ) করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জবাবে বলেন :
أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا
আমি কি আল্লাহ তা‘আলার একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (সহীহ বুখারী হা. ১১৩০)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : এর মধ্যে উম্মাতের শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যে, তারা যেন নিরাশ না হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা ছেড়ে না দেয়। তিনি বলেন : নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও যখন তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন তখন অন্যদের কেমন ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। (তাফসীর কুরতুবী)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে যে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন সেজন্য তাঁর শুকুরগুজার হওয়া উচিত এবং বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সূরা নাছর কুরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা।
২. সূরা নাছরে মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।
৩. মৃত্যু নিকটবর্তী মনে হলে বেশি বেশি তাসবীহ ও ইসতেগফার করা উচিত।
৪. ছোটরাও অনেক সময় বড়দের থেকে বেশি জ্ঞান রাখে।
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
পূর্বেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, এই সূরাটি কুরআন কারীমের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “সর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’ (সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে।)” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেনঃ “তুমি সত্য বলেছো।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আইয়ামে তাশরীকের (১১ই, ১২ইও ১৩ই যিল হজ্ব তারিখের) মধ্যভাগে (আরবি) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হলে তিনি বুঝতে পারেন যে, এটা বিদায়ী সূরা। সুতরাং তখনই তিনি সওয়ারী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ খুৎবাহ প্রদান করলেন। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযার (রঃ) এবং হাফিয বারহাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন (আরবি) সূরা অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “আমার পরলোক গমনের খবর এসে গেছে।” এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। তারপরই তিনি হাসতে লাগলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমার আব্বার (সঃ) পরলোক গমনের সময় নিকটবর্তী হওয়ার খবর শুনে আমার কান্না এসেছিল। কিন্তু আমার কান্নার সময় তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি ধৈর্য ধারণ করে। আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে তুমিই সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসায়ীতে এটা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাতে হযরত ফাতিমার (রঃ) উল্লেখ করা হয়নি)
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক মুজাহিদদের সাথে হযরত উমার (রাঃ) আমাকেও শামিল করে নিতেন। এ কারণে কারো কারো মনে সম্ভবতঃ অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হয়ে থাকবে। একদা তাদের মধ্যে একজন আমার সম্পর্কে মন্তব্য করলেনঃ সে যেন আমাদের সাথে না থাকে। তার সমবয়সী ছেলে আমাদেরও তো রয়েছে।” তার এ মন্তব্য শুনে হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ তোমরা তো তাকে খুব ভাল রূপেই জান!” একদিন তিনি সবাইকে ডাকলেন এবং আমাকেও স্মরণ করলেন আমি বুঝতে পারলাম যে, আজ তিনি তাদেরকে কিছু দেখাতে চান। আমরা সবাই হাজির হলে তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবি) সূরাটি সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি (অর্থাৎ এ সূরাটি কিসের ইঙ্গিত বহন করছে)।” কেউ কেউ বললেনঃ “এ সূরায় আল্লাহ তাআলার গুণগান করার জন্যে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলার সাহায্য এলে এবং আমাদের বিজয় সূচিত হলেই যেন আমরা এইরূপ করি।” কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন, কিছুই বললেন হযরত উমার (রাঃ) তখন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার মতামতও কি এদের মতই?” আমি উত্তরে বললামঃ না, বরং আমি এই বুঝেছি এ সূরায় রাসূলুল্লাহর (সঃ) পরলোক গমনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁকে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তার ইহলৌকিক জীবন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং তিনি যেন তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আমিও এটাই বুঝেছি।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “(এ বছরই আমার ইন্তেকাল হবে) আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে।” মুজাহিদ (রঃ), আবুল আলিয়া (রঃ), যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এই তাফসীর বর্ণনা করেছেন। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় অবস্থান করছিলেন, একদা তিনি বলেনঃ “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান! আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে পড়েছে। ইয়ামনের অধিবাসীরা এসে গেছে।” তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ইয়ামনবাসীরা কেমন লোক?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “তারা কোমল প্রাণ ও পরিচ্ছন্ন স্বভাবের অধিকারী। ঈমান, বুদ্ধিমত্তা এবং হিকমত এ সবই ইয়ামনবাসীদের রয়েছে।” (এ হাদসিটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যেহেতু এ সূরাটিতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) পরলোকগমনের সংবাদ ছিল সেহেতু সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আখেরাতের কাজে পূর্বের চেয়ে অধিক মনোযোগী হন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং ইয়ামনবাসী এসে পড়েছে।” তখন একটি লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ইয়ামনবাসীরা কি (প্রকৃতির লোকে)?” উত্তরে তিনি বললেন! “তাদের অন্তর কোমল, স্বভাব নম্র এবং তারা ঈমান ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরা সমূহের মধ্যে পুরো সূরা অবতীর্ণ হওয়ার দিক থেকে (আরবি) এ সূরাটিই সর্বশেষ সূরা। (এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,(আরবি) এ সূরাটি অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তা শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন, অতঃপর বলেনঃ “সব মানুষ এক দিকে এবং আমি ও আমার সাহাবীরা এক দিকে। জেনে রেখো যে, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই, তবে রয়েছে। জিহাদ এবং নিয়ত।” মারওয়ানকে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) এ হাদীসটি শোনালে তিনি বলে ওঠেনঃ “তুমি মিথ্যা বলছো” ঐ সময় মারওয়ানের সাথে তার মজলিসে হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (রঃ) এবং হযরত যায়েদ ইবনে সাবিতও (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন! “এঁরাও এ হাদীসটি জানেন এবং বর্ণনা করতে পারেন। কিন্তু একজন নিজের নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশংকায় এবং অপরজন যাকাত আদায়ের পদমর্যাদা থেকে বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে এটা বর্ণনা করছেন না।” একথা শুনে মারওয়ান হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) কে চাবুক মারতে উদ্যত হলে উভয় সাহাবী মারওয়ানকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “শোনো মারওয়ান! হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সত্য কথাই বলেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের দিন বলেনঃ “হিজরত আর অবশিষ্ট নেই, তবে জিহাদ এবং নিয়ত বাকি রয়েছে। তোমাদেরকে যখন চলতে বলা হবে তখন তোমরা উঠে দাড়িয়ে চলতে শুরু করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন) তবে হ্যা, এটাও মনে রাখতে হবে যে, যে সব সাহাবী (রাঃ) হযরত উমারের (রাঃ) প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেনঃ “যখন আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর শহর ও দূর্গের বিজয় দান করবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করবেন তখন আমরা যেন তার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, এ সূরায় এ নির্দেশই তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। তাছাড়া আমরা যেন নামায আদায় করি ও নিজেদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি, এ নির্দেশও আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাদের এ অর্থ ও তাফসীরও খুবই সুন্দর ও বিশুদ্ধ, এতে কোন সন্দেহ নেই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন, যদিও কেউ কেউ বলেন যে, ওটা ছিল চাশতের নামায, কিন্তু আমরা জানি যে, তিনি চাশতের নামায নিয়মিতভাবে আদায় করতেন না। তাছাড়া ঐসময় ব্যস্ততা ছিল এবং কাজকর্মও অনেক ছিল। তিনি ছিলেন মুসাফির, এ অবস্থায় কি করে তিনি চাশতের নামায পড়তে পারেন? এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কা বিজয়ের সময়ে মক্কা শরীফে রমযানের শেষ পর্যন্ত উনিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। ঐ সময়ে তিনি ফরয নামাযও কসর করেছিলেন। তিনি রোযাও রাখেননি। তাঁর সঙ্গীয় প্রায় দশ হাজার মুসলমান সবাই এ নিয়ম পালন করেছিলেন। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আট রাকআত নামায মক্কা বিজয়ের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছিল। এ কারণেই সেনাবাহিনী প্রধান বা সমকালীন ইমামের জন্যে কোন শহর জয় করার সাথে সাথে ঐ শহরে আট রাকআত নামায আদায় করা মুস্তাহাব।
হযরত সা’দ ইবনে অক্কাস (রাঃ) মাদায়েন বিজয়ের দিন অনুরূপ আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন। এই আট রাকআত নামায দুই রাকআত করে আদায় করতে হবে। কারো কারো মতে আট রাকআতে একবার সালাম ফিরালেই চলবে। অর্থাৎ একবারই সালাম ফিরানোর নিয়তে আট রাকআত নামায পড়া যাবে। কিন্তু সুনানে আবি দাউদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ নামায প্রতি দুই রাকআতে সালাম ফিরিয়ে আদায় করেছিলেন। অন্যান্য তাফসীরও বিশুদ্ধ। যেমন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেছেন যে, এ সূরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে তার ইন্তেকালের সংবাদ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যে মক্কা থেকে কাফিররা তোমাকে চলে যেতে বাধ্য করেছে, সেই মক্কা বিজয় যখন তুমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে, নিজের পরিশ্রমের ফলে যখন দেখতে পাবে, আরো যখন দেখতে পাবে যে, জনগণ আল্লাহর ধর্মে দলে দলে প্রবেশ করছে তখন তুমি স্বীয় প্রতিপালকের তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তুমি পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকো। মনে রেখো যে, তোমার ইহকালীন দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং এখন পরকালের প্রতি মনোযোগী হও। সেখানে তোমার জন্যে বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। তোমার মেহমানদারী স্বয়ং আমিই করবো। কাজেই আমার রহমত ও কুদরতের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে অধিক পরিমাণে আমার প্রশংসা করো, তাওবা ইসতিগফার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুল করে থাকেন।
সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভর রুকু ও সিজদায় নিম্নলিখিত তাসবীহ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি মহাপবিত্র এবং আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন! রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরআন কারীমের (আরবি) এ আয়াতের উপর অধিক পরিমাণে আমল করতেন।
অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর শেষ জীবনে নিম্নলিখিত কালেমাগুলো অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আল্লাহ মহাপবিত্র, তার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবা করছি।” তিনি আরো বলতেনঃ “আমার প্রতিপালক আমাকে আদেশ দিয়ে রেখেছেনঃ যখন আমি দেখতে পাই যে, মক্কা বিজয় অত্যাসন্ন এবং দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করছে তখন যেন আমি এ কালেমা অধিক পরিমাণে পাঠ করি। সুতরাং আল্লাহর রহমতে আমি মক্কা বিজয় প্রত্যক্ষ করেছি। এ কারণে এখন (মনোযোগ সহকারে) এ কালেমা নিয়মিত পাঠ করছি।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে)
তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, শেষ বয়সে রাসূলুল্লাহ (সঃ) উঠতে বসতে চলতে ফিরতে এবং আসতে যেতে নিম্নের তাসবীহ পড়তে থাকতেনঃ
(আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তাঁর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।” হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেনঃ “আমি একবার এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরা নাসর তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “আল্লাহপাক আমাকে এরকমই আদেশ দিয়েছেন।”
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামাযে প্রায়ই এ সূরা তিলাওয়াত করতেন এবং রুকূতে তিনবার নিম্নের দু’আ পড়তেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি মহা পবিত্র। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।” বিজয় অর্থে এখানে মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আরবের সাধারণ গোত্রগুলোর মধ্যে ব্যাপারে কোনই মতানৈক্য হয়নি। আরবের সাধারন গোত্রগুলো অপেক্ষা করছিল যে, যদি মুহাম্মদ (সঃ) স্বজাতির উপর জয়যুক্ত হন এবং মক্কা তাঁর পদানত হয় তবে তিনি যে সত্য নবী এব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ থাকবে না।
আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর প্রিয় নবী (সঃ) কে মহাবিজয় দান করলেন তখন এরা সবাই দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করলো। এরপর দু’বছর যেতে যেতেই সমগ্র আরব ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলো। প্রত্যেক গোত্রের উপর ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য।
সহীহ বুখারীতেও হযরত আমর ইবনে সালমার (রাঃ)এ উক্তি বিদ্যমান রয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সাথে সকল গোত্র ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তারা ইসলাম গ্রহণের জন্যে অপেক্ষা করছিল এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলঃ নবী মুহাম্মদ (সঃ) কে এবং তাঁর স্বজাতিকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। যদি মুহাম্মদ (সঃ) সত্য নবী হয়ে থাকেন তবে নিজের জাতির উপর অবশ্যই জয়যুক্ত হবেন এবং মক্কার উপর তার বিজয় পতাকা উড়বে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের প্রাপ্য।
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহর এক প্রতিবেশী সফর থেকে ফিরে আসার পর হযরত জাবির (রাঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। সেই প্রতিবেশী মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ, দ্বন্দ্ব-কলহ এবং নতুন নতুন বিদআতের কথা ব্যক্ত করলে হযরত জাবির (রাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রু সজল হয়ে উঠলো। তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেনঃ “আমি সরদারে দো জাহান, শাফীউল মুযনিবীন, রহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর মুখে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে বটে, কিন্তু শীঘ্রই তারা দলে দলে এই দ্বীন থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করবে।”
(Book#1223)
[ # When the victory of Allah has come and the conquest:-]
Surah.110: An- Nasr
Para:30 Ayat:- 1- 3
www.motaher21.net
110:1
اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰہِ وَ الۡفَتۡحُ ۙ﴿۱﴾
When the victory of Allah has come and the conquest,
This Surah informs of the Completion of the Life of Allah’s Messenger
Al-Bukhari recorded from Ibn Abbas that he said, “Umar used to bring me into the gatherings with the old men of (the battle of) Badr. However, it was as if one of them felt something in himself (against my attending). So he said,
`Why do you (`Umar) bring this (youth) to sit with us when we have children like him (i.e., his age)’
So `Umar replied, `Verily, he is among those whom you know.`
Then one day he called them and invited me to sit with them, and I do not think that he invited me to be among them that day except to show them. So he said,
`What do you say about Allah’s statement,
إِذَا جَأءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
(When there comes the help of Allah and the Conquest.)’
Some of them said,
`We were commanded to praise Allah and seek His forgiveness when He helps us and gives us victory.’
Some of them remained silent and did not say anything.
Then he (Umar) said to me, `Is this what you say, O Ibn `Abbas’
I said, `No.’
He then said, `What do you say’
I said,
`It was the end of the life of Allah’s Messenger that Allah was informing him of.
Allah said,
إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
When there comes the help of Allah and the Conquest.
which means, that is a sign of the end of your life.
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوِبَا
So, glorify the praises of your Lord, and ask His forgiveness. Verily, He is the One Who accepts the repentance and Who forgives.’
So, Umar bin Al-Khattab said,
`I do not know anything about it other than what you have said.”‘
Al-Bukhari was alone in recording this Hadith.
Imam Ahmad recorded from Ibn Abbas that he said,
“When
إِذَا جَأءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
(When there comes the help of Allah and the Conquest.) was revealed, the Messenger of Allah said,
نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي
My death has been announced to me. And indeed he died during that year.”
Ahmad was alone in recording this Hadith.
Al-Bukhari recorded that Aishah said,
“The Messenger of Allah used to say often in his bowing and prostrating,
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
(Glory to You, O Allah, our Lord, and praise be to You. O Allah, forgive me.) He did this as his interpretation of the Qur’an (i.e., showing its implementation).”
The rest of the group has also recorded this Hadith except for At-Tirmidhi.
Imam Ahmad recorded from Masruq that Aishah said,
“The Messenger of Allah used to often say towards the end of his life,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْه
Glory to Allah, and praise be unto Him. I seek Allah’s forgiveness and I repent to Him.
And he said,
إِنَّ رَبِّي كَانَ أَخْبَرَنِي أَنِّي سَأَرَى عَلَمَةً فِي أُمَّتِي وَأَمَرَنِي إِذَا رَأَيْتُهَا أَنْ أُسَبِّحَ بِحَمْدِهِ وَأَسْتَغْفِرَهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا فَقَدْ رَأَيْتُهَا
إِذَا جَأءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
110:2
وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اَفۡوَاجًا ۙ﴿۲﴾
And you see the people entering into the religion of Allah in multitudes,
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
110:3
فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَ اسۡتَغۡفِرۡہُ ؕؔ اِنَّہٗ کَانَ تَوَّابًا ٪﴿۳﴾
Then exalt [Him] with praise of your Lord and ask forgiveness of Him. Indeed, He is ever Accepting of repentance.
Verily, my Lord has informed me that I will see a sign in my Ummah and He has commanded me that when I see it, I should glorify His praises and seek His forgiveness, for He is the One Who accepts repentance. And indeed I have seen it (i.e., the sign.
When there comes the help of Allah and the Conquest (Al-Fath).
And you see that the people enter Allah’s religion in crowds.
So glorify the praises of your Lord, and ask His forgiveness. Verily, He is the One Who accepts the repentance and Who forgives.”
Muslim also recorded this Hadith.
The meaning of Al-Fath here is the conquest of Makkah, and there is only one view concerning it. For indeed the different areas of the Arabs were waiting for the conquest of Makkah before they would accept Islam. They said,
“If he (Muhammad is victorious over his people, then he is a (true) Prophet.”
So when Allah gave him victory over Makkah, they entered into the religion of Allah (Islam) in crowds. Thus, two years did not pass (after the conquest of Makkah) before the peninsula of the Arabs was laden with faith. And there did not remain any of the tribes of the Arabs except that they professed (their acceptance) of Islam. And all praise and blessings are due to Allah.
Al-Bukhari recorded in his Sahih that `Amr bin Salamah said,
“When Makkah was conquered, all of the people rushed to the Messenger of Allah to profess their Islam. The various regions were delaying their acceptance of Islam until Makkah was conquered. The people used to say,
`Leave him and his people alone. If he is victorious over them he is a (true) Prophet.”‘
We have researched the war expedition for conquest of Makkah in our book As-Surah. Therefore, whoever wishes he may review it there.
And all praise and blessings are due to Allah. Imam Ahmad recorded from Abu `Ammar that a neighbor of Jabir bin `Abdullah told him,
“I returned from a journey and Jabir bin `Abdullah came and greeted me. So I began to talk with him about the divisions among the people and what they had started doing. Thus, Jabir began to cry and he said, `I heard the Messenger of Allah saying,
إِنَّ النَّاسَ دَخَلُوا فِي دِينِ اللهِ أَفْوَاجًا وَسَيَخْرُجُونَ مِنْهُ أَفْوَاجًا
Verily, the people have entered into the religion of Allah in crowds and they will also leave it in crowds.”
This is the end of the Tafsir of Surah An-Nasr, and all praise and blessings are due to Allah
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran