Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৩৮/এবং কাফির বলে -১২) [*লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায় সমকামিতার অপরাধে কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়:- *শুধু প্রাণী নয়, জড় পদার্থকেও আল্লাহ তায়ালা জোড়ার ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন:- *আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।:- *  *জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য :- *যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুর্ভোগ:-] www.motaher21.net সূরা:৫১-যা-রিয়াত। পারা:২৭ ৩১-৬০ নং আয়াত:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৩৮/এবং কাফির বলে -১২)
[*লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায় সমকামিতার অপরাধে কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়:-
*শুধু প্রাণী নয়, জড় পদার্থকেও আল্লাহ তায়ালা জোড়ার ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন:-
*আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।:-
*  *জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য :-
*যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুর্ভোগ:-]
www.motaher21.net
সূরা:৫১-যা-রিয়াত। পারা:২৭
৩১-৬০ নং আয়াত:-
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩১
قَالَ فَمَا خَطۡبُکُمۡ اَیُّہَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿۳۱﴾
ইবরাহীম বললেন : হে আল্লাহর প্রেরিত দূতগণ, আপনাদের অভিপ্রায় কি?
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩২
قَالُوۡۤا اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ ﴿ۙ۳۲﴾
তারা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৩
لِنُرۡسِلَ عَلَیۡہِمۡ حِجَارَۃً مِّنۡ طِیۡنٍ ﴿ۙ۳۳﴾
যাতে আমরা তাদের ওপর পোড়ানো মাটির পাথর বর্ষণ করি।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৪
مُّسَوَّمَۃً عِنۡدَ رَبِّکَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۳۴﴾
‘যা সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত আপনার রবের কাছ থেকে।’
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৫
فَاَخۡرَجۡنَا مَنۡ کَانَ فِیۡہَا مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿ۚ۳۵﴾
সেখানে যারা মুমিন ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৬
فَمَا وَجَدۡنَا فِیۡہَا غَیۡرَ بَیۡتٍ مِّنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿ۚ۳۶﴾
আমি সেখানে একটি পরিবার ছাড়া আর কোন মুসলিম পরিবার পাইনি।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৭
وَ تَرَکۡنَا فِیۡہَاۤ اٰیَۃً لِّلَّذِیۡنَ یَخَافُوۡنَ الۡعَذَابَ الۡاَلِیۡمَ ﴿ؕ۳۷﴾
যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্য ওতে একটি নিদর্শন রেখেছি।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৮
وَ فِیۡ مُوۡسٰۤی اِذۡ اَرۡسَلۡنٰہُ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ بِسُلۡطٰنٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۳۸﴾
এছাড়া (তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে) মূসার কাহিনীতে। আমি যখন তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে পাঠালাম।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৩৯
فَتَوَلّٰی بِرُکۡنِہٖ وَ قَالَ سٰحِرٌ اَوۡ مَجۡنُوۡنٌ ﴿۳۹﴾
তখন সে নিজের শক্তিমত্তার ওপর গর্ব প্রকাশ করলো এবং বললোঃ এ তো যাদুকর কিংবা পাগল।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪০
فَاَخَذۡنٰہُ وَ جُنُوۡدَہٗ فَنَبَذۡنٰہُمۡ فِی الۡیَمِّ وَ ہُوَ مُلِیۡمٌ ﴿ؕ۴۰﴾
অবশেষে আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সবাইকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। আর সে তিরস্কৃত ও নিন্দিত হলো।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪১
وَ فِیۡ عَادٍ اِذۡ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡہِمُ الرِّیۡحَ الۡعَقِیۡمَ ﴿ۚ۴۱﴾
তাছাড়া (তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে) আদ জাতির মধ্যে। যখন আমি তাদের ওপর এমন অশুভ বাতাস পাঠালাম যে,
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪২
مَا تَذَرُ مِنۡ شَیۡءٍ اَتَتۡ عَلَیۡہِ اِلَّا جَعَلَتۡہُ کَالرَّمِیۡمِ ﴿ؕ۴۲﴾
তা যা কিছুর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল, তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ছেড়েছিল।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৩
وَ فِیۡ ثَمُوۡدَ اِذۡ قِیۡلَ لَہُمۡ تَمَتَّعُوۡا حَتّٰی حِیۡنٍ ﴿۴۳﴾
আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের বৃত্তান্তেও, যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘ভোগ করে নাও একটি নিদৃষ্ট কাল। ’
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৪
فَعَتَوۡا عَنۡ اَمۡرِ رَبِّہِمۡ فَاَخَذَتۡہُمُ الصّٰعِقَۃُ وَ ہُمۡ یَنۡظُرُوۡنَ ﴿۴۴﴾
কিন্তু এ সতর্কীকরণ সত্ত্বেও তারা তাদের রবের হুকুম অমান্য করলো। অবশেষে তারা দেখতে দেখতে অকস্মাত আগমনকারী আযাব তাদের ওপর আপতিত হলো।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৫
فَمَا اسۡتَطَاعُوۡا مِنۡ قِیَامٍ وَّ مَا کَانُوۡا مُنۡتَصِرِیۡنَ ﴿ۙ۴۵﴾
তারা উঠে দাঁড়াতে পারল না এবং প্রতিরোধ করতেও পারল না।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৬
وَ قَوۡمَ نُوۡحٍ مِّنۡ قَبۡلُ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ ﴿٪۴۶﴾
এদের আগে নূহের সম্প্রদায়কে, নিশ্চয় তারা ছিল ফাসেক সম্প্রদায়।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৭
وَ السَّمَآءَ بَنَیۡنٰہَا بِاَیۡىدٍ وَّ اِنَّا لَمُوۡسِعُوۡنَ ﴿۴۷﴾
আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার (নিজ) ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৮
وَ السَّمَآءَ بَنَیۡنٰہَا بِاَیۡىدٍ وَّ اِنَّا لَمُوۡسِعُوۡنَ ﴿۴۷﴾
এবং আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি, আমি কত সুন্দর বিস্তারকারী!
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৪৯
وَ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ خَلَقۡنَا زَوۡجَیۡنِ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴۹﴾
আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায়-জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫০
فَفِرُّوۡۤا اِلَی اللّٰہِ ؕ اِنِّیۡ لَکُمۡ مِّنۡہُ نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۚ۵۰﴾
অতএব আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমার জন্য স্পষ্ট সাবধানকারী।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫১
وَ لَا تَجۡعَلُوۡا مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ ؕ اِنِّیۡ لَکُمۡ مِّنۡہُ نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۚ۵۱﴾
আল্লাহর সাথে আর কাউকে উপাস্য বানাবে না। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সাবধানকারী।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫২
کَذٰلِکَ مَاۤ اَتَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ مِّنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا قَالُوۡا سَاحِرٌ اَوۡ مَجۡنُوۡنٌ ﴿ۚ۵۲﴾
এভাবেই হয়ে এসেছে। এদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কাছেও এমন কোন রসূল আসেনি যাকে তারা যাদুকর বা পাগল বলেনি।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৩
اَتَوَاصَوۡا بِہٖ ۚ بَلۡ ہُمۡ قَوۡمٌ طَاغُوۡنَ ﴿ۚ۵۳﴾
তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়ে এসেছে? বস্তুতঃ তারা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৪
فَتَوَلَّ عَنۡہُمۡ فَمَاۤ اَنۡتَ بِمَلُوۡمٍ ﴿٭۫۵۴﴾
কাজেই আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন, এতে আপনি তিরস্কৃত হবেন না।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৫
وَّ ذَکِّرۡ فَاِنَّ الذِّکۡرٰی تَنۡفَعُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۵۵﴾
আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৬
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾
আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৭
مَاۤ اُرِیۡدُ مِنۡہُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ وَّ مَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ یُّطۡعِمُوۡنِ ﴿۵۷﴾
আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার্য যোগাবে।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৮
اِنَّ اللّٰہَ ہُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الۡقُوَّۃِ الۡمَتِیۡنُ ﴿۵۸﴾
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো রিযিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৫৯
فَاِنَّ لِلَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ذَنُوۡبًا مِّثۡلَ ذَنُوۡبِ اَصۡحٰبِہِمۡ فَلَا یَسۡتَعۡجِلُوۡنِ ﴿۵۹﴾
তাই যারা জুলুম করেছে তাদের প্রাপ্য হিসেবে ঠিক তেমনি আযাব প্রস্তুত আছে যেমনটি এদের মত লোকেরা তাদের অংশ পুরো লাভ করেছে। সেজন্য এসব লোক যেন আমার কাছে তাড়াহুড়ো না করে।
সূরা:৫১-যা-রিয়াত-৬০
فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ یَّوۡمِہِمُ الَّذِیۡ یُوۡعَدُوۡنَ ﴿٪۶۰﴾
অতএব, যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুর্ভোগ সে দিনের, যে দিনের বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

৩১-৬০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
ফী জিলালিল কুরআন:-

*লূত জাতির ঘটনা : এই সময় ইবরাহীম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে গেলেন। আগেই তিনি তাদের পরিচয় জেনেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে (আমাদের কাছে) পাঠানাে ব্যক্তিবর্গ, আপনারা কী বলতে চান? তারা বললেন, ‘আমরা একটি অপরাধী জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছি।’ অন্যান্য সূরায় বলা হয়েছে যে, এই জাতিটি ছিলাে লূতের জাতি। ‘যেন আমরা তাদের ওপর মাটি থেকে তৈরী পাথর নিক্ষেপ করি, যা তােমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ব্রয়েছে দুষ্কৃতিকারীদের জন্যে।’ লূতের জাতি যথার্থই সভ্য ও প্রাকৃতিক রীতি, সত্য ও দ্বীনের নীতি লংঘন করে দুষ্কৃতকারী জাতিতে পরিণত হয়েছিলাে। এই পাথর কোনাে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ নির্গত পাথরও হতে পারে, যা ভূগর্ভস্থ উত্তাপের দরুন উদ্গত হয়ে থাকে। ‘তােমার প্রভুর কাছে চিহ্নিত’ অর্থাৎ এই পাথর কখন কাদের ওপর নিক্ষেপ করতে হবে এবং ফেরেশতাদের মাধ্যমেই নিক্ষেপ করতে হবে এটা তিনিই স্থির করে রেখেছিলেন। ফেরেশতাদের প্রকৃত স্বরূপ কী, মহাবিশ্বের সাথে ও মহাবিশ্বে বিরাজমান বস্তু ও প্রাণীর সাথে তাদের সম্পর্ক কী, এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন শক্তি, যেগুলােকে আমরা বিভিন্ন সময়ে উদঘাটিত তথ্যের আলােকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করে থাকি, তার প্রকৃত পরিচয় কী তা কি আমরা জানি? আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদেরকে সংবাদ দেন যে, তিনি কোন প্রাকৃতিক শক্তিকে দিয়ে কোন সময়ে, কোন প্রক্রিয়ায়, কোন দেশে, কোন জাতির ওপর আঘাত হেনেছেন, তাহলে এ সংবাদে আমাদের আপত্তি তােলার অধিকার থাকে না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি সংক্রান্ত আমাদের তথ্য, তত্ত্ব ও ব্যাখ্যাসমূহ নিছক আন্দায-অনুমান ছাড়া কিছু নয়, এ সবের প্রকৃত তত্ত্ব আমাদের নাগালের বাইরে। সুতরাং নিক্ষিপ্ত পাথর আগ্নেয়গিরির পাথরই হােক বা অন্য কোনাে পাথর হােক, তা যে আল্লাহর তৈরী পাথর, তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। এর প্রকৃত পরিচয় আমাদের অজানা। আল্লাহ যখন জানাবেন, তখনই আমরা জানতে পারবাে। ‘আমি সেখানকার মােমেনদেরকে বের করলাম।’ অর্থাৎ তাদেরকে বাঁচানাে ও রক্ষা করার জন্যে বের করলাম। ‘সেখানে একটিমাত্র ঘর ছাড়া মুসলমানদের আর কোনাে ঘর আমি পাইনি।’ এই ঘরটিই ছিলো হযরত লূতের ঘর। হযরত লূতের স্ত্রী ছাড়া এই ঘরের সকল অধিবাসী বেঁচে গিয়েছিলাে। তার স্ত্রী অন্যান্য কাফেরদের সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাে। ‘সেখানে আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি কে যারা ভয় করে তাদের জন্যে একটা নিদর্শন রেখে দিয়েছিলাম।’ যারা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পায়, তারা এ নিদর্শন দেখে চিনতে পারে। অন্যরা আল্লাহর কোনাে নিদর্শনই দেখতে পায় না এবং চিনতে পারে না-পৃথিবীতেও নয়, তাদের সত্তার ভেতরেও নয় এবং ইতিহাসের ঘটনাবলীতেও নয়।

*মূসা(আ.)-এর ঘটনা : নবীদের ইতিহাসে বিরাজমান নিদর্শনাবলীর বর্ণনার প্রেক্ষাপটে হযরত মূসা সম্পর্কেও কয়েকটি আয়াতে সংক্ষিপ্ত কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মূসা সম্পর্কে, যখন আমি তাকে প্রকাশ্য দলীল-প্রমাণ সহকারে ফেরাউনের কাছে পাঠালাম।’ যে প্রকাশ্য দলীল-প্রমাণ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা মূসাকে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলেন তা ছিল তার অকাট্য যুক্তি এবং অত্যন্ত ভীতিপ্রদ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। মূসা(আ.) তাঁর ভাই সহকারে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তাদের উভয়কে আল্লাহ তায়ালা গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন। অথচ ফেরাউন তার ক্ষমতার দর্পে মুখ ফিরিয়ে নিলাে এবং অকাট্য সত্যকে প্রত্যাখ্যান করলাে। হযরত মূসা(আ.)-এর মধ্যে আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন ও অকাট্য প্রমাণ দেখেও সে তার সম্পর্কে বললাে যে, মূসা হয় জাদুকর, না হয় পাগল। এ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, যে হৃদয় হেদায়াত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়নি, তাকে হেদায়াত করা এবং যে জিহ্বা বাতিল ও মিথ্যাকে ক্রমাগত স্বীকৃতি দিতে থাকে, তাকে মিথ্যা থেকে ফেরানাে অলৌকিক ঘটনা দ্বারা সম্ভব নয়। এখানে আয়াতে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। শুধু তার শেষ পরিণতিকে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘অতপর আমি তাকে ও তার সৈন্য-সামন্তকে সাগরে নিক্ষেপ করলাম, সে তাে ছিলাে তিরস্কারযোগ্য।’ অর্থাৎ বিদ্রোহ ও সত্যকে অস্বীকার করার কারণে সে তিরস্কারের ও ধিক্কারের উপযুক্ত ছিলাে। এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ফেরাউনকে ও তার জাতিকে পাকড়াও করা ও তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করাটা ছিলাে আল্লাহর প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ। আর পৃথিবীতে, মানব-সত্তায় ও নবীদের ইতিহাসে আল্লাহর নিদর্শন পেশ করতে গিয়ে মূসা(আ.)-এর ঘটনায় আল্লাহর এই নিদর্শনই তুলে ধরা অভিপ্রেত ছিলাে।
*আ’দ জাতির ঘটনা : আ’দ জাতি সম্পর্কে আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আ’দ সম্পর্কে, যখন আমি তাদের ওপর বন্ধ্যা বাতাস পাঠালাম। সেই বাতাস যার ওপরই গিয়ে পড়ে তাকে চুর্ণবিচূর্ণ করে দেয়।’ আ’দ জাতির ওপর নাযিল করা বাতাসকে ‘বন্ধ্যা বাতাস’ বলা হয়েছে এ জন্যে যে, তাতে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পানি বা জীবনের কোনাে উপকরণ ছিলাে না-ছিলাে শুধু মৃত্যু ও ধ্বংস। আর যার ওপরই এই বাতাস পড়তাে তাকে টুকরাে টুকরা ও ছিন্নভিন্ন করে দিতাে মৃত লাশের মতাে। বাতাস প্রকৃতির একটি শক্তি এবং আল্লাহর এক সৈনিক। আল্লাহর সৈনিকের সংখ্যা কত তা কেবল আল্লাহই জানেন। এ সব সৈনিককে তিনি যখন যে আকারে যার ওপর ইচ্ছা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়ে পাঠাতে পারেন অথবা জীবন গড়ার নির্দেশ দিয়েও পাঠাতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে এমন কোনাে আপত্তি তােলার কোনােই অবকাশ নেই যে, বাতাস তার একটা প্রাকৃতিক নিয়মে চলে এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক কার্যকারণ হেতু কোথাও তা প্রবাহিত হয়, আবার কোথাও হয় না। মনে রাখতে হবে যে, শক্তি বাতাসকে উক্ত নিয়ম অনুসারে ও উক্ত কার্যকারণ অনুসারে পরিচালিত করে, সেই শক্তি তাকে যার ওপর যখন আপন ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুসারে পাঠাতে চায় পাঠাতে পারে। আর সে শক্তি তাকে আপন নির্ধারিত নিয়ম ও কার্যকারণ অনুসারেও পাঠাতে পারে। এতে কোনাে বিরােধিতা, সন্দেহ বা আপত্তির কোনাে অবকাশ নেই।

*সামূদ ও নূহের ঘটনা : ‘আর সামূদের ইতিহাসেও নিদর্শন রয়েছে। যখন তাদেরকে বলা হলাে ….. এবং তারা সাহায্য গ্রহণ করতে সক্ষম ছিলাে না।’ ‘যখন তাদেরকে বলা হলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আনন্দ উপভােগ করো’ এর অর্থ উষ্ট্রীকে হত্যা করার পর তিন দিন সময় দেয়া হয়ে থাকতে পারে, যেমন সূরা হুদে বলা হয়েছে, ‘তােমাদের ঘরে তােমরা তিন দিন আনন্দ উপভােগ করাে।’ আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, রেসালাতের পক্ষ থেকে ঈমানের দাওয়াত আসার পর থেকে উষ্ট্রী হত্যার ঘটনা পর্যন্ত তাদেরকে যা কিছু আনন্দ উপভােগ করতে দেয়া হয়েছে, সেটাই আরাে কয়েক দিন চলতে থাকুক। এভাবে উষ্ট্রী হত্যার মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ লংঘন করার ফলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর লুতের জাতির ওপর বর্ষিত পাথর এবং আদ জাতির ওপর প্রেরিত বাতাস সম্পর্কে যা যা বলা হয়ে থাকে, সামুদের ওপর প্রেরিত বিকট চিৎকার সম্পর্কেও তা বলা যেতে পারে। এ সবই আল্লাহর আদেশে পরিচালিত এবং তারই ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত প্রাকৃতিক শক্তি। আল্লাহ তায়ালা যার ওপর খুশী একে পরিচালিত করে থাকেন এবং আল্লাহর অন্যান্য সৈনিকের মতাে সেও নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকে। অতপর নূহের জাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর নূহের জাতিকে স্মরণ করাে, তারা ছিলাে একটা পাপিষ্ঠ জাতি।’ এখানে কোনাে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াই অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিকে পরবর্তী আয়াত ‘আকাশকে নির্মাণ করেছি স্বহস্তে..’ এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। আর এরই মাধ্যমে সূরার দ্বিতীয় অংশকে তৃতীয় অংশের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, ‘আকাশকে নির্মাণ করেছি হাত দিয়ে। আমি তার বিস্তৃতিও ঘটাই।… আমি তােমাদের জন্যে সতর্ককারী।’
জিলালিল কুরআন:

*আকাশের নির্মাণ প্রসংগ : এখানে এসে পুনরায় সেই প্রাকৃতিক মেলায় প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে, যা সূরার শুরুতে আলােচিত হয়েছে। বলা হয়েছে, আকাশকে আমি হাত দিয়ে তৈরী করেছি এবং তার বিস্তৃতি ঘটাই। এখানে হাত অর্থ শক্তি। আর এই শক্তি সুগঠিত বিশাল আকাশ তৈরী সম্পর্কে সবচেয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা দান করে। আকাশ বলতে গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথকে বুঝানাে হতে পারে। ছায়াপথসমূহের কোনাে সমষ্টিকে বুঝানাে হতে পারে, যাতে হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র বিদ্যমান, অথবা এ দ্বারা মহাশূন্যের অসংখ্যস্তরের মধ্য থেকে কোনাে বিশেষ স্তরকে বুঝানাে হয়ে থাকতে পারে, যেখানে গ্রহ-নক্ষত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করে। আবার অন্য কিছুও বুঝানাে হতে পারে। ‘বিস্তৃতি বলতে কি বুঝানাে হয়েছে, তাও এখানে সুস্পষ্ট। কেননা, বিশাল বিশাল আকৃতির কোটি কোটি নক্ষত্র এই আকাশে বিন্দুর চেয়ে বড় কিছু নয়। সম্ভবত এখানে ‘বিস্তৃতি’ শব্দটি দ্বারা ইংগিতে এ কথাও বুঝানাে হয়েছে যে, এটা জীবিকার ভান্ডার। কেননা, ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, তােমাদের জীবিকা রয়েছে আকাশে। যদিও সেখানে আকাশে বলতে আল্লাহর কাছে বুঝানাে হয়েছে। কিন্তু কোরআনের ভাষায় একটা সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য বহন করে এবং মনে হয় মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে আলোড়িত করার জন্যে এখানে সেই তাৎপর্যই ঈপ্সিত। অনুরূপ ইংগিত রয়েছে পরবর্তী আয়াতেও। বলা হয়েছে, আর পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি। আমি কত সুন্দর বিস্তৃতকারী। আগেই বলেছি যে, আল্লাহ এই পৃথিবীকে জীবনের লীলাভূমি হিসাবে তৈরী করেছেন। ফারশ শব্দটির মধ্যে আরাম, সাবলীলতা ও তত্ত্বাবধানের ভাব নিহিত রয়েছে। পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যে, তা আরামদায়ক লালন-পালনের সুপ্রশস্ত ক্ষেত্র হিসাবে ভূমিকা পালন করতে পারে। এখানে প্রতিটি জিনিস জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে প্রস্তুত।
*জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি : ‘প্রত্যেক জিনিসের দুটি করে জোড়া তৈরী করেছি….’ এ একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। এ দ্বারা পৃথিবীর সৃজনী নিয়ম জানা যায়। গােটা বিশ্বেও হয়তাে তাই । মনে হয় জোড়ায় জোড়ায় বানানােই সৃষ্টির নিয়ম। এটা বাহ্যত প্রাণী জগতে সীমিত। কিন্তু কোরআনে বলা হয়েছে,’প্রত্যেক জিনিসের…’ এ দ্বারা বুঝা যায় যে, শুধু প্রাণী নয়, জড় পদার্থকেও আল্লাহ তায়ালা জোড়ার ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন। আমরা লক্ষ্য করি যে, জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির এই নিয়ম মানব জাতি ১৪শ’ বছর আগেই কোরআনের মাধ্যমে জেনেছে। সে সময় পদার্থে তাে দূরের কথা, প্রাণীদের জন্মও যে জোড়া ভিত্তিক, তাও মানুষ জানতাে না। এ বিষয়টা যখন লক্ষ্য করি, তখন দেখতে পাই যে, আমরা প্রাকৃতিক জগত সংক্রান্ত বহু তত্ত্ব ও তথ্য এরূপ বিস্ময়করভাবে অনেক আগেই জানতে পেরেছি। উল্লেখিত আয়াত থেকে আমরা এও বুঝতে পারি যে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা মানব জাতিকে প্রকৃত সত্যের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে আমরা এই সত্যে উপনীত হবার কাছাকাছি এসে গেছি যে, গােটা বিশ্বজগত সৃষ্টির মূল হলাে পরমাণু। আর এই পরমাণু বিদ্যুতের একটি জোড়া দিয়ে তৈরী-নেগেটিভ ও পজেটিভ। তাই বলা যেতে পারে যে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যত এই আয়াতের ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়েছে।
জিলালিল কুরআন:

*যাবতীয় আশ্রয় তো আল্লাহর কাছেই : আকাশ, পৃথিবী ও সৃষ্টিজগতের এই নিগূঢ় তত্ত্ব আলােচিত হবার পর মানব জাতিকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার কাছে আশ্রয় নেয়ার আহবান জানানাে হয়েছে। আত্মাকে ভারাক্রান্তকারী সকল পার্থিব আবিলতা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে একমাত্র আল্লাহর প্রতি ঘনিষ্ঠ হবার আহবান জানানাে হয়েছে। বলা হয়েছে, অতপর, তােমরা আল্লাহর দিকে পালাও।……আমি তােমাদের জন্যে প্রকাশ্য সতর্ককারী। এখানে ‘পালাও” কথাটা খুবই তাৎপর্যবহ। পৃথিবীতে মানব-সত্তা যে অসংখ্য বােঝার নিচে চাপা পড়ে আছে ও অসংখ্য বাধা-বিপত্তি ও দায়দায়িত্বের বেষ্টনীতে আবদ্ধ হয়ে এক ধরনের বন্দীদশা ও গােলামীর জীবন যাপন করছে, বিশেষত জীবিকা উপার্জনের কাজে নিয়ােজিত হয়ে ও লােভ-লালসার শিকার হয়ে যে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছে, তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে জোরদার কন্ঠে আহবান জানানাে হয়েছে যে, এইসব বাধা-বিপত্তি ছুঁড়ে ফেলে আল্লাহর দিকে পালাও ও তার নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগােপন করো এবং একমাত্র তার কাছেই আশ্রয় নাও। ‘আমি তােমাদের জন্যে প্রকাশ্য সতর্ককারী’ এ কথাটা দু’বার উচ্চারণ দেয়া হয়েছে যে, অতপর মানুষের আর কোনাে ওজুহাত ও ওযর আপত্তি খাটবে না। উপরােক্ত আয়াতটিতে আকাশ, পৃথিবী ও সমগ্র সৃষ্টির নিদর্শনের পাশাপাশি নবীদের ইতিহাসের নিদর্শনের দিকেই সম্ভবত ইংগিত করা হয়েছে। অতপর পূর্ববর্তী নবীদের ঘটনার ওপর মন্তব্য করে বলা হয়েছে, ‘এভাবে যখনই তাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলাের কাছে কোনাে রসূল এসেছে, তখনই তারা বলেছে যে, ও তাে হয় জাদুকর, না হয় পাগল। এটা কি তাদের পারস্পরিক উপদেশ বিনিময়?’ বস্তুত সত্যকে অস্বীকারকারী কাফেরদের এটা চিরন্তন মজ্জাগত স্বভাব-রসূলদের সাথে তারা চিরকাল এরূপ আচরণই করেছে। তারা নবীদেরকে জাদুকর অথবা পাগল বলে আখ্যায়িত করেছে। আর এটা যুগ যুগকালের ব্যবধান সত্তেও এভাবেই যেন তারা পারস্পরিক উপদেশ বিনিময় করে এসেছে যে, নবীদেরকে প্রত্যাখ্যান করা চাই। অতীত ও পরবর্তী খােদাদ্রোহীদের এটাই ছিলাে অভিন্ন চরিত্র: সত্যকে অগ্রাহ্য করা ও নবীদের অবাধ্য হওয়া। আর কাফেরদের এই চিরন্তন বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার স্বাভাবিক ফল এটাই হতে পারে যে, রাসূল(স.) যেন মােশরেকদের অস্বীকৃতি ও প্রত্যাখ্যানে মনোক্ষুন্ন না হন। কেননা তারা গোমরাহ হয়ে গেলে তাতে তাে তার কোনাে দোষ নেই। পক্ষান্তরে হেদায়াতের কাজে তার কোনাে কমতি রাখাও চলবে না। তাই বলা হয়েছে, অতএব তুমি তাদের কাছ থেকে সরে যাও, কারণ তুমি দোষী নও। স্মরণ করিয়ে দেয়াই যখন তােমার কাজ, তখন তারা যতই প্রত্যাখ্যান করুক, স্মরণ করিয়ে দিতে থাকো। ‘স্মরণ করিয়ে দিতে থাকো, কারণ স্মরণ করিয়ে দেয়া মােমেনদের উপকার করে।’ অর্থাৎ অস্বীকারকারীদের উপকার করে না। স্মরণ করিয়ে দেয়ার কাজটা নবীদের কাজ। কারাে হেদায়াতপ্রাপ্তি বা গােমরাহ হওয়া এ কাজের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ বিষয় আল্লাহর হাতে সােপর্দ করে দিতে হবে, যিনি মানুষকে নিজের ঈপ্সিত একটি কাজের জন্যে সৃষ্টি করেছেন।

ফী জিলালিল কুরআন:

*জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য : এরপর আসছে সূরার সর্বশেষ নির্দেশিকা। এখান থেকে আল্লাহর কাছে পালানাের অর্থ কি তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে পালানাের উদ্দেশ্যই হলাে সেই কাজ সম্পাদন করা, যার জন্যে আল্লাহ জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবল এই উদ্দেশ্য সৃষ্টি করেছি যেন তারা আমার এবাদাত করে…’ এই ক্ষুদ্র বক্তব্যটুকু একটি বিরাট সত্যকে ধারণ করে আছে। এটি সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সত্যসমূহের অন্যতম, যা না বুঝে ও না মেনে পৃথিবীতে মানুষের সফল জীবন যাপন সম্ভব হয় না, চাই তা ব্যক্তির হোক বা সমষ্টির হােক এবং যে কোনাে যুগের হােক। এখানে এই মহা সত্যের বেশ কয়েকটি দিক ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। প্রথমটি এই যে, জ্বিন ও মানুষের অস্তিত্বের একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রয়েছে। এই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একটি বিশেষ ভূমিকার মাধ্যমে সফলতা লাভ করে। যে ব্যক্তি এই ভূমিকা পালন করবে, সে তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়িত করবে। আর যে তাতে ব্যর্থ হবে তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য বিফল হবে। এতে তার জীবনের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকবে না। তার জীবন। মূল্যহীন হয়ে যাবে এবং তার অস্তিত্ব একেবারেই নিরর্থক হয়ে যাবে। এই সুনির্দিষ্ট কাজ ও ভূমিকা, যা জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি জগতের বিধির সাথে একাত্ম করে ও তার হেফাযতের নিশ্চয়তা দেয়, তা হচ্ছে আল্লাহর এবাদাত, আনুগত্য ও দাসত্ব। অর্থাৎ একজন গােলাম ও একজন মনিব থাকবে। গােলাম আনুগত্য করবে ও মনিব আনুগত্য পাবে। বান্দার জীবন এভাবেই সুষ্ঠু ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।   *এবাদাত মানে শুধু কিছু আনুষ্ঠানিকতা নয় : এর দ্বিতীয় দিকটি এই যে, এবাদাত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক পূজা-উপাসনার মধ্যে সীমিত থাকবে না। বরং তার চেয়ে ব্যাপকতর ও প্রশস্ততর হবে। জ্বিন ও মানুষ তাদের গােটা জীবন কেবল আনুষ্ঠানিক পূজা-উপাসনা তথা নামায রােযা হজ্জ যাকাত দোয়া দুরূদ পাঠ ইত্যাদি করেই কাটিয়ে দেবে না আর তা করার আদেশও দেয়া হয়নি। তিনি তাদেরকে আরাে বহুরকম কাজ করতে আদেশ দেন, যা তাদের সারা জীবন জুড়ে বিস্তৃত থাকবে। জ্বিনদের কত রকমের দায়িত্ব ও কর্তব্য তা আমরা না জানতে পারি। কিন্তু মানুষের কর্মসীমা আমাদের জানতে হবেই। আমরা কোরআন থেকেই তা জানতে পারি। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বললেন যে, আমি পৃথিবীতে খলীফা পাঠাবাে। তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষের কাজ হচ্ছে খেলাফত। আর এই খেলাফত দুনিয়াকে গড়ার জন্যে বহুরকম তৎপরতা দাবী করে। পৃথিবীর কি কি শক্তি ও সম্পদ আছে এবং তাকে কিভাবে কাজে লাগাতে হবে, কিভাবে দুনিয়ার জীবনকে উন্নত করা যাবে, কিভাবে আল্লাহর বিধানকে বাস্তবায়িত করে মানব জীবনকে মহাবিশ্বের নিয়ম-বিধির সাথে একাত্ম করা যাবে, তাও জানা ও মানা খেলাফতের দায়িত্বের আওতাভুক্ত। সুতরাং এবাদাত নিছক আনুষ্ঠানিক পূজা-অর্চনা নয়, বরং খেলাফতের কাজ অপরিহার্যভাবে এবাদাতের আওতাভুক্ত। আর এবাদাত বলতে প্রধানত দুটো জিনিস বুঝায়। প্রথমত, অন্তরে আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি বদ্ধমূল হওয়া। অর্থাৎ এই ধারণা বদ্ধমূল হওয়া যে, গােলাম ও মনিবের বাইরে তৃতীয় কেউ নেই। উপাসক ও উপাস্য, গােলাম ও মনিব ছাড়া এ বিশ্বচরাচরে আর কেউ নেই। আল্লাহ তায়ালা একমাত্র মনিব, আর সব কিছু তার দাস ও গােলাম। দ্বিতীয়ত, অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিটি কাজ দ্বারা একমাত্র আল্লাহর দিকে সার্বক্ষণিক ও সর্বাত্মক মনােযােগী হওয়া ও অনুগত হওয়া। আর এ ছাড়া অন্যসব রকমের আনুগত্যের ধারণা মন থেকে মুছে ফেলা। এই দুটি জিনিস মিলিত হয়েই এবাদাতের প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য। এতে আনুষ্ঠানিক এবাদাত ও দুনিয়ার পুনর্গঠনের কাজ একই পর্যায়ে উন্নীত হবে। দুনিয়ার উন্নয়নের কাজ আর আল্লাহর পথে জেহাদে কোনাে পার্থক্য থাকবে না। আর আল্লাহর পথে জেহাদ আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া ও দুঃখ-মুসিবতকে সহ্য করার সমান হবে। সবটাই হবে এবাদাত, যার জন্যে আল্লাহ তায়ালা জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর এভাবেই সমগ্র বিশ্বজগতের বিধানের সাথে তথা সব কিছু একমাত্র আল্লাহর বান্দা-আর কারাে নয়’ এই নীতির সাথে একাত্ম হয়ে যাবে। এরূপ যখন হবে, তখনই মানুষ অনুভব করবে যে, সে এ পৃথিবীতে কেবল আল্লাহর এবাদাত করতে, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়িত করতে এসেছে। এ ছাড়া এখানে তার আর কোনাে কাজ নেই। আর এর বিনিময়ে সে ইহজগতে মানসিক শান্তি ও পরিতৃপ্তি পাবে আর আখেরাতে পাবে অশেষ মর্যাদা, অনুগ্রহ ও সম্মান। এরূপ করতে যখন কেউ সমর্থ হবে, তখনই প্রমাণিত হবে যে, সে যথার্থই আল্লাহর কাছে পালিয়েছে ও আশ্রয় নিয়েছে। তখন বুঝা যাবে সে, দুনিয়ার সকল চাপ, সকল বাধা-বিপত্তি ও সকল আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়েছে এবং নিরংকুশভাবে ও নিস্কলুষভাবে একমাত্র আল্লাহর গােলামে পরিণত হয়েছে। তখনই প্রমাণিত হবে যে, সে তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য সফল করেছে। বস্তুত এবাদত বা গােলামীর স্থিতিশীলতা অর্জন করতে হলে পৃথিবীতে খেলাফাতের দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য। এই খেলাফাতের দায়িত্ব নিজের কোনাে স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে পালন করতে হবে না, বরং এবাদাতের প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়িত করার জন্যে এবং আল্লাহর দিকে পালানাের জন্যে। এবাদাতের প্রকৃত তাৎপর্য বাস্তবায়নের ও তার স্থিতির আরাে একটা দাবী এই যে, মানুষের অন্তরে কোনাে কাজের মূল্য নির্ণীত হবে সেই কাজের পেছনে কী উদ্দেশ্য ও প্রেরণা কার্যকর ছিলাে তার আলােকে, তার পার্থিব পরিণতি ও ফলাফল কী দেখা দিয়েছে তার ভিত্তিতে নয় । ফলাফল যা হয় হােক। মানুষের তাতে কিছু এসে-যায় না। সে এইসব কাজ সম্পন্ন করার সময়ে এবাদাত অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য ঠিকমত করতে পেরেছে কিনা সেটাই আসল লক্ষণীয় বিষয়। মনে রাখতে হবে, আখেরাতে তার কাজের প্রতিদান সে এ কাজের পার্থিব ফলাফলের ভিত্তিতে পাবে , বরং এ কাজ আল্লাহর আনুগত্যের মধ্য দিয়ে করা বা না করার ভিত্তিতে পাবে। এখান থেকেই দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে মানুষের নীতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায় । সে দেখবে তার কাজের মধ্যে এবাদাতের তাৎপর্য বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা। তা যদি হয়ে থাকে, তবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালিত ও উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এরপর সে কাজের ফলাফল যা হয় হােক। এই ফলাফল তার দায়িত্বের আওতাধীন নয় এবং তা তার হাতেও নেই। ফলাফল কী হবে সেটা আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তার চেষ্টা, উদ্দেশ্য ও কাজ আল্লাহর ইচ্ছার একটা দিক মাত্র। আর যখনই মানুষ তার মনকে নিজের চেষ্টা ও কর্মের ফলাফলের ভাবনা থেকে মুক্ত করে এবং বুঝতে পারে যে, নিজের চেষ্টা ও কর্মের পেছনে সদুদ্দেশ্য থাকায় এবাদাতের সঠিক অর্থ সে বাস্তবায়িত করতে পেরেছে আর তাতেই তার করণীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও কাজের প্রতিদানপ্রাপ্তি তারর নিশ্চিত হয়েছে, তখন আর তার মনে কোনাে লােভ লালসা অবশিষ্ট থাকবে না। আর যেহেতু পার্থিব সহায়-সম্পদের ওপর এই লােভ-লালসাই যাবতীয় দ্বন্দ্ব ও কলহের মূল কারণ, তাই তা থেকেও সে রেহাই পেয়ে যাবে। তখন একদিকে সে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্যে যতদূর শক্তি সামর্থ ও চেষ্টা তৎপরতা চালানাে তার পক্ষে সম্ভব, তা সম্পন্ন করার কৃতিত্ব অর্জন করবে, অপরদিকে সে নিজের হাত ও মনকে পার্থিব সম্পদের সম্পর্ক থেকে ও এই সকল তৎপরতার ফলাফল থেকে মুক্ত করতে পারবে। কেননা, সে তাে এই সকল ফলাফল বাস্তবায়িত করেছে শুধু এবাদাতের প্রকৃত তাৎপর্য সফল করার তাগিদেই-সেগুলাে নিজে দুনিয়াতে ভােগ করার জন্যে নয়। কোরআন মানুষকে জীবিকার দুশ্চিন্তা থেকে এবং মনের সংকীর্ণতা ও কার্পণ্য থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে তার এই অনুভূতি কে শক্তিশালী করে। জীবিকার দুশ্চিন্তায় সে কেন ভুগবে? জীবিকার নিশ্চয়তা তাে আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিয়ে রেখেছেন। তিনি যখন বান্দাদেরকে তাদের সম্পদ অভাবী ও বঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেন, তখন বান্দারা তাকে জীবিকা দিক ও আহার করাক-তা কখনো স্বভাবতই প্রত্যাশা করেন না। আমি তাদের কাছে কোন জীবিকা চাই না এবং আমাকে তারা আহার করাক-তাও কামনা করি না। নিশ্চয় আল্লাহই জীবিকাদাতা, শক্তিমান ও চিরঞ্জীব। সুতরাং কাজ করার পেছনে ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনের পেছনে মােমেনকে যে জিনিস উৎসাহ যােগায়, তা জীবিকা অর্জনের মােহ নয়। বরং এবাদাতের প্রকৃত অর্থের বাস্তবায়নই এই উৎসাহের উৎস। আর সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সাধনা করা দ্বারাই এবাদাতের প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ জন্যে মােমেনের মন যাবতীয় চেষ্টা-সাধনা করার সময় শুধু এবাদাতের প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়নের ওপরই কেন্দ্রীভূত থাকে, চেষ্টা-সাধনার ফলাফল কী হলাে না হলে সে চিন্তায় নয়। আর এটা একটা মহৎ চেতনা, যা সঠিক ঈমান থেকেই উৎসারিত হয়ে থাকে। এই মহৎ চেতনা থেকে যদি মানুষ বঞ্চিত হয়ে থাকে, তবে তার একমাত্র কারণ এই যে, প্রথম যুগের মুসলমানরা যে ভাবে কোরআনের শিক্ষাকে গভীরভাবে অনুধাবন ও অনুসরণ করতাে, এ যুগের মানুষ তেমন অনুধাবন ও অনুসরণ করে না এবং এই কোরআনের ন্যায় মহান সংবিধান থেকে তাদের জীবন যাপনের রীতিনীতি গ্রহণ করে না। মানুষ যখন এবাদাত ও দাসত্বের উপরােক্ত সর্বোচ্চস্তরে উন্নীত হয় এবং এই স্তরে আপন অবস্থানকে সংহত ও স্থিতিশীল করে, তখন তার মন নিশ্চয়ই একটি মহৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নের নিমিত্তে একটি নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করাকে ঘৃণা করে থাকে। এমনকি এই মহৎ লক্ষ্য যদি আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতকে ও আল্লাহর কালেমাকে বিজয়ী করাও হয়ে থাকে। কেননা, নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন এবাদাতের সঠিক, পরিচ্ছন্ন ও মহান অর্থকে বিনষ্ট করে দেয়, এবাদাতের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে মাথা ঘামানাে বান্দার কাজ নয়। বরং এবাদাতের অর্থকে বাস্তবায়িত করার জন্যে আন্তরিকতার সাথে অবশ্য করণীয় কাজগুলাে সম্পন্ন করাই তার দায়িত্ব। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তিনি যখন যেভাবে তা চান সেভাবেই তা সফল করেন। জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে কোনাে পন্থা অবলম্বনপূর্বক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করার প্রয়ােজন নেই এবং তা এবাদাতকারী মােমেন বান্দার দায়িত্বেরও আওতায় পড়ে না। তাকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আন্তরিকতা সহকারে উত্তম পন্থায় কাজ করে যেতে হয়। এরপর এবাদাতকারী বান্দাকে বিবেক ও মনের পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ত ও স্থিরতা সহকারে সর্বাবস্থায় কাজ করে যেতে হবে, চাই পার্থিব জীবনে তার সুফল দেখুক বা না দেখুক, অথবা নিজে তার যেমন ফলাফল আশা করেছে, তেমন হােক বা তার বিপরীত হােক। কেননা, সে তাে সাধ্যমত তার কাজ সম্পন্ন করেছে এবং এবাদাতের অর্থ বাস্তবায়িত করে তার প্রতিদান লাভ নিশ্চিত করেছে। এতটুকু করেই সে নিশ্চিন্ত হতে পারে। এরপর যা কিছু হয় তা তার দায়িত্ব বহির্ভূত কাজ করতে গিয়ে বান্দার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়। তার এও জানা থাকা চাই যে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রভু ও মনিব। কাজেই আল্লাহর দায়িত্বের সীমানায় অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করা তার উচিত নয়। এ পর্যায়ে এসেই তার ভাবাবেগকে শান্ত ও স্থির করতে হবে। সে আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে এবং আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন। ‘আমি জ্বিন ও মানুষকে শুধু আমার এবাদাতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি।’ এই ক্ষুদ্র আয়াতে যে বিরাট ও বিশাল সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে, ওপরে তারই বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হলাে। আর এ সত্যটি যখন যথাযথভাবে মন-মগজে বদ্ধমূল হয়, তখন তা গােটা জীবনের মােড় পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। এই বিরাট সত্যের আলােকেই আল্লাহ তায়ালা সেইসব লােককে সতর্ক করে দিচ্ছেন যারা যুলুম করেছে, ঈমান আনেনি, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্যে তাড়াহুড়া করেছে এবং ইসলামের আহবানকে অগ্রাহ্য করেছে। যারা যুলুম করেছে। তাদের জন্যে তাদের সহযােগীদের মতােই পরিণতি নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই তাদের তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। যে দিন সম্পর্কে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, তাকে যারা অস্বীকার করে, তাদের ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

Leave a Reply