Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৪৯/এবং কাফের-রা বলে -১৫) [*‌‌”আল-ওয়াক্বিয়া”যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে:- *যারা ছিলেন ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী এবং যাবতীয় নেকীর কাজে আগে বেড়ে অংশ গ্রহণকারী:- *বাম দল এর অবস্থা:- *তাদের স্ত্রীদেরা প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা:- *তারা বলত, ‘মরে অস্থি ও মাটিতে পরিণত হলেও কি আমাদেরকে উঠানো হবে? :-] www.motaher21.net সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া” পাহরা:২৭ ১- ৫৬ নং আয়াত:- আয়াতের ব্যাখ্যা:- ১) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৪৯/এবং কাফের-রা বলে -১৫)
[*‌‌”আল-ওয়াক্বিয়া”যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে:-
*যারা ছিলেন ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী এবং যাবতীয় নেকীর কাজে আগে বেড়ে অংশ গ্রহণকারী:-
*বাম দল এর অবস্থা:-
*তাদের স্ত্রীদেরা প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা:-
*তারা বলত, ‘মরে অস্থি ও মাটিতে পরিণত হলেও কি আমাদেরকে উঠানো হবে? :-]
www.motaher21.net
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”
পাহরা:২৭
১- ৫৬ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ।
২) তাফসীরে ইবনে কাছীর।
৩) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন।
৪) ‌তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন।

সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১
اِذَا وَقَعَتِ الۡوَاقِعَۃُ ۙ﴿۱﴾
যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২
لَیۡسَ لِوَقۡعَتِہَا کَاذِبَۃٌ ۘ﴿۲﴾
তখন তার সংঘটিত হওয়াকে কেউ-ই মিথ্যা বলতে পারবে না।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩
خَافِضَۃٌ رَّافِعَۃٌ ۙ﴿۳﴾
তা হবে উলট-পালটকারী মহা প্রলয়।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪
اِذَا رُجَّتِ الۡاَرۡضُ رَجًّا ۙ﴿۴﴾
যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫
وَّ بُسَّتِ الۡجِبَالُ بَسًّا ۙ﴿۵﴾
এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬
فَکَانَتۡ ہَبَآءً مُّنۡۢبَثًّا ۙ﴿۶﴾
ফলে ওটা পর্যবসতি হবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায়।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭
وَّ کُنۡتُمۡ اَزۡوَاجًا ثَلٰثَۃً ؕ﴿۷﴾
সময় তোমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮
فَاَصۡحٰبُ الۡمَیۡمَنَۃِ ۬ۙ مَاۤ اَصۡحٰبُ الۡمَیۡمَنَۃِ ؕ﴿۸﴾
ডান দিকের লোকদের (সৌভাগ্যের) কথা আর কতটা বলা যাবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯
وَ اَصۡحٰبُ الۡمَشۡـَٔمَۃِ ۬ۙ مَاۤ اَصۡحٰبُ الۡمَشۡـَٔمَۃِ ؕ﴿۹﴾
বাম দল লোক,‌‌ বাম দলকের লোকদের (দুর্ভাগ্যের) পরিণতি আর কি বলা যাবে!
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১০
وَ السّٰبِقُوۡنَ السّٰبِقُوۡنَ ﴿ۚۙ۱۰﴾
আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১১
اُولٰٓئِکَ الۡمُقَرَّبُوۡنَ ﴿ۚ۱۱﴾
তারাই তো নৈকট্য লাভকারী।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১২
فِیۡ جَنّٰتِ النَّعِیۡمِ ﴿۱۲﴾
তারা নিয়ামতে ভরা জান্নাতে থাকবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৩
ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۱۳﴾
পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে হবে বেশী
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৪
وَ قَلِیۡلٌ مِّنَ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿ؕ۱۴﴾
এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকে হবে কম।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৫
عَلٰی سُرُرٍ مَّوۡضُوۡنَۃٍ ﴿ۙ۱۵﴾
তারা স্বর্ন- মণিমুক্তা খচিত আসনসমূহে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৬
مُّتَّکِـِٕیۡنَ عَلَیۡہَا مُتَقٰبِلِیۡنَ ﴿۱۶﴾
তারা আসনে হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৭
یَطُوۡفُ عَلَیۡہِمۡ وِلۡدَانٌ مُّخَلَّدُوۡنَ ﴿ۙ۱۷﴾
তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা–
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৮
بِاَکۡوَابٍ وَّ اَبَارِیۡقَ ۬ۙ وَ کَاۡسٍ مِّنۡ مَّعِیۡنٍ ﴿ۙ۱۸﴾
বহমান ঝর্ণার সুরায় ভরা পান পাত্র,পাত্র নিয়ে ( সেই চির কিশোররা ) সদা ব্যস্ত থাকবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-১৯
لَّا یُصَدَّعُوۡنَ عَنۡہَا وَ لَا یُنۡزِفُوۡنَ ﴿ۙ۱۹﴾
যা পান করে মাথা ঘুরবে না। কিংবা বুদ্ধিবিবেক লোপ পাবে না।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২০
وَ فَاکِہَۃٍ مِّمَّا یَتَخَیَّرُوۡنَ ﴿ۙ۲۰﴾
তারা তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে যাতে পছন্দ মত বেছে নিতে পারে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২১
وَ لَحۡمِ طَیۡرٍ مِّمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿ؕ۲۱﴾
আর তাদের পছন্দমত পাখীর গোশত নিয়ে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২২
وَ حُوۡرٌ عِیۡنٌ ﴿ۙ۲۲﴾
তাদের জন্য থাকবে সুনয়না হুর।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৩
کَاَمۡثَالِ اللُّؤۡلُوَٴ الۡمَکۡنُوۡنِ ﴿ۚ۲۳﴾
এমন অনুপম সুন্দরী যেন লুকিয়ে রাখা মুক্তা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৪
جَزَآءًۢ بِمَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۴﴾
তাদের কাজের পুরস্কারস্বরূপ।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৫
لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡہَا لَغۡوًا وَّ لَا تَاۡثِیۡمًا ﴿ۙ۲۵﴾
সেখানে তারা কোন অর্থহীন বা গোনাহর কথা শুনতে পাবে না।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৬
اِلَّا قِیۡلًا سَلٰمًا سَلٰمًا ﴿۲۶﴾
‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ছাড়া।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৭
وَ اَصۡحٰبُ الۡیَمِیۡنِ ۬ۙ مَاۤ اَصۡحٰبُ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ۲۷﴾
আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল !
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৮
فِیۡ سِدۡرٍ مَّخۡضُوۡدٍ ﴿ۙ۲۸﴾
থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ ,
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-২৯
وَّ طَلۡحٍ مَّنۡضُوۡدٍ ﴿ۙ۲۹﴾
থরে থরে সজ্জিত কলা,
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩০
وَّ ظِلٍّ مَّمۡدُوۡدٍ ﴿ۙ۳۰﴾
দীর্ঘ বিস্তৃত ছায়া,
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩১
وَّ مَآءٍ مَّسۡکُوۡبٍ ﴿ۙ۳۱﴾
সদা প্রবহমান পানি।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩২
وَّ فَاکِہَۃٍ کَثِیۡرَۃٍ ﴿ۙ۳۲﴾
ও প্রচুর ফলমূল,
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৩
لَّا مَقۡطُوۡعَۃٍ وَّ لَا مَمۡنُوۡعَۃٍ ﴿ۙ۳۳﴾
অবাধ লভ্য অনিশেষ যোগ্য।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৪
وَّ فُرُشٍ مَّرۡفُوۡعَۃٍ ﴿ؕ۳۴﴾
এবং সুউচ্চ আসনসমূহে অবস্থান করবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৫
اِنَّاۤ اَنۡشَاۡنٰہُنَّ اِنۡشَآءً ﴿ۙ۳۵﴾
তাদের স্ত্রীদেরকে আমি বিশেষভাবে নতুন করে সৃষ্টি করবো।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৬
فَجَعَلۡنٰہُنَّ اَبۡکَارًا ﴿ۙ۳۶﴾
অত:পর আমি তাদের চিরকুমারী বানিয়ে দেব।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৭
عُرُبًا اَتۡرَابًا ﴿ۙ۳۷﴾
প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৮
لِّاَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ٪۳۸﴾
এসব হবে ডান দিকের লোকদের জন্য।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৩৯
ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۙ۳۹﴾
তাদের সংখ্যা পূববর্তীদের মধ্য থেকেও হবে অনেক।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪০
وَ ثُلَّۃٌ مِّنَ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿ؕ۴۰﴾
এবং পরবর্তীদের মধ্য থেকেও হবে অনেক।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪১
وَ اَصۡحٰبُ الشِّمَالِ ۬ۙ مَاۤ اَصۡحٰبُ الشِّمَالِ ﴿ؕ۴۱﴾
আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বামদিকের দল !
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪২
فِیۡ سَمُوۡمٍ وَّ حَمِیۡمٍ ﴿ۙ۴۲﴾
তারা থাকবে অত্যন্ত উষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে,
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৩
وَّ ظِلٍّ مِّنۡ یَّحۡمُوۡمٍ ﴿ۙ۴۳﴾
এবং কালো ধোঁয়ার ছায়ার নীচে থাকবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৪
لَّا بَارِدٍ وَّ لَا کَرِیۡمٍ ﴿۴۴﴾
তা না হবে ঠাণ্ডা, না হবে আরামদায়ক।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৫
اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَبۡلَ ذٰلِکَ مُتۡرَفِیۡنَ ﴿ۚۖ۴۵﴾
ইতিপূর্বে তারা তো মগ্ন ছিল ভোগ-বিলাসে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৬
وَ کَانُوۡا یُصِرُّوۡنَ عَلَی الۡحِنۡثِ الۡعَظِیۡمِ ﴿ۚ۴۶﴾
এবং অবিরাম লিপ্ত ছিল ঘোরতর পাপকর্মে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৭
وَ کَانُوۡا یَقُوۡلُوۡنَ ۬ۙ اَئِذَا مِتۡنَا وَ کُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَاِنَّا لَمَبۡعُوۡثُوۡنَ ﴿ۙ۴۷﴾
তারা বলত, ‘মরে অস্থি ও মাটিতে পরিণত হলেও কি আমাদেরকে উঠানো হবে?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৮
اَوَ اٰبَآؤُنَا الۡاَوَّلُوۡنَ ﴿۴۸﴾
আমাদের বাপ দাদাদেরকেও কি উঠানো হবে যারা ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৪৯
قُلۡ اِنَّ الۡاَوَّلِیۡنَ وَ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿ۙ۴۹﴾
বলুন, ‘অবশ্যই পূর্ববর্তিরা ও পরবর্তিরা—
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫০
لَمَجۡمُوۡعُوۡنَ ۬ۙ اِلٰی مِیۡقَاتِ یَوۡمٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿۵۰﴾
( সব মানুষকে) একদিন অবশ্যই একত্রিত করা হবে। সেজন্য সময় নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫১
ثُمَّ اِنَّکُمۡ اَیُّہَا الضَّآلُّوۡنَ الۡمُکَذِّبُوۡنَ ﴿ۙ۵۱﴾
তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫২
لَاٰکِلُوۡنَ مِنۡ شَجَرٍ مِّنۡ زَقُّوۡمٍ ﴿ۙ۵۲﴾
তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ হতে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৩
فَمَالِـُٔوۡنَ مِنۡہَا الۡبُطُوۡنَ ﴿ۚ۵۳﴾
এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৪
فَشٰرِبُوۡنَ عَلَیۡہِ مِنَ الۡحَمِیۡمِ ﴿ۚ۵۴﴾
তদুপরি তারা পান করবে তার উপর অতি উষ্ণ পানি—
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৫
فَشٰرِبُوۡنَ شُرۡبَ الۡہِیۡمِ ﴿ؕ۵۵﴾
পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৬
ہٰذَا نُزُلُہُمۡ یَوۡمَ الدِّیۡنِ ﴿ؕ۵۶﴾
প্রতিদান দিবসে এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন।
১- ৫৬ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ ও ফযীলত :

الْوَاقِعَةُ শব্দের শাব্দিক অর্থ সংঘটিতব্য, যা সংঘটিত হবে। এটি কিয়ামতের নামসমূহের অন্যতম একটি নাম। যেহেতু কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে তাই এ নামেও তাকে নামকরণ করা হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াত থেকেই সূরাকে “ওয়াকি‘আহ্” নামে নামকরণ করা হয়েছে।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আবূ বক্র (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আমাকে সূরা হূদ, ওয়াকিআহ্, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন (নাবা) এবং ইযাশ্ শামসু কুওভিরাত (তাকভীর) বৃদ্ধ করে ফেলেছে। (তিরমিযী হা. ৩২৯৭, সহীহাহ্ হা. ৯৫৫)

এছাড়া সূরা আল ওয়াকি‘আহ্’র যত ফযীলতের হাদীস রয়েছে সবই দুর্বল। কোন গ্রহণযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায় না। এ সূরার ফযীলত সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে : যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল ওয়া-ক্বি‘আহ্ পাঠ করবে সে কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না। এ হাদীসটিও দুর্বল। (সিলসিলা যয়ীফাহ্, হা. ২৮৯)

সূরার শুরুতে কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, সে-সময় জমিন ও পাহাড়ের কী ভয়ানক অবস্থা হবে, মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে, যারা নৈকট্যশীল ও ডানপন্থী তাদের আরাম আয়েশ ও সুখের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তারপর যারা বামপন্থী তাদের কষ্টের অন্ত থাকবে না এবং তাদের কষ্টের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর কয়েকটি নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছেন যার মাধ্যমে তাঁকে চেনা অতি সহজ।

১-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আলোচ্য আয়াতগুলোতে কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে তা জোরালোভাবে উপস্থাপন, কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে জমিন, পাহাড় পর্বতে যে এক ভয়ানক অবস্থা দেখা দেবে এবং মানুষ তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে সে কথা আলোচনা করা হয়েছে।

الْوَاقِعَةُ কিয়ামতের অন্যতম একটি নাম। وقع، يقع অর্থ সংঘটিত হওয়া, অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। উদ্দেশ্য হল সর্বশেষ শিংগায় ফুঁৎকার। অন্যত্র আল্লাহ বলেন :

(فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ)

“সেদিন যা সংঘটিত হওয়ার তা (অর্থাৎ কিয়ামত) সংঘটিত হয়ে যাবে।” (সূরা আল হা-ক্বক্বাহ্ ৬৯ : ১৫)

(لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ)

‘(তখন) এর সংঘটন অস্বীকার করার কেউ থাকবে না।’ অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত সংঘটিত করার ইচ্ছা করবেন তখন তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কেননা কিয়ামতের আকলী ও নাকলী উভয় প্রকার দলীল দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। আবার বলা হয়, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(اِسْتَجِيْبُوْا لِرَبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ أَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَه۫ مِنَ اللّٰهِ)

“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দাও সেই দিবস আসার পূর্বে যা আল্লাহর বিধানে অপ্রতিরোদ্ধ।” (সূরা শূরা ৪২ : ৪৭)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন :

(سَأَلَ سَائِلٌ بِعَذَابٍ وَاقِعٍ لِلْكَافِرِينَ لَيْسَ لَهُ دَافِعٌ)‏

“এক ব্যক্তি আবেদন করল সেই আযাবের যা সংঘটিত হবেই, কাফিরদের হতে তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।” (সূরা মা‘আ-রিজ ৭০ : ১-২)

আল্লামা শানক্বীতি (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে দুটি দিক বর্ণনা করেছেন-

(১) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটি মিথ্যা নয় এবং তার ব্যতিক্রমও হবে না। বরং এটি এমন বিষয় যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। এ অর্থের ওপর প্রমাণ বহন করে অন্যান্য আয়াত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(اَللّٰهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ط لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلٰي يَوْمِ الْقِيٰمَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِ ط وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللّٰهِ حَدِيْثًا) ‏

“অবশ্যই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সঠিক ইলাহ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী?” (সূরা নিসা ৪ : ৮৭)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

( وَّأَنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَا لا وَأَنَّ اللّٰهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُوْرِ)‏

“এবং কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং ক্ববরে যারা আছে তাদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্থিত করবেন।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৭)

(২) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোন ব্যক্তিই মিথ্যুক থাকবে না। বরং সকল মানুষ কিয়ামতের দিন কিয়ামতের সত্যতা স্বীকার করে নেবে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলা বলেন :

(لَا يُؤْمِنُوْنَ بِه۪ حَتّٰي يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيْمَ)‏

“তারা এতে ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি‎ প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা শু‘আরা- ২৬ : ২০১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :

(وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰي تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ)‏

“যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে, অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি‎।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৫৫)

(خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ)

‘এটা কাউকেও করবে নীচ, কাউকেও করবে সমুন্নত’ অর্থাৎ কিয়ামত কিছু মানুষকে তাদের খারাপ আমলের জন্য লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে। যেমন কাফিররা মুনাফিকরা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে। আর যারা মু’মিন তারা সেদিন হবে সম্মানিত, সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَمَنْ يَّأْتِه۪ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَأُولٰ۬ئِكَ لَهُمُ الدَّرَجٰتُ الْعُلٰي)‏

“এবং যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা।” (সূরা ত্বা-হা ২০ : ৭৫)

(رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا)

‘যখন প্রবল কম্পণে পৃথিবী প্রকম্পিত হবে’ – رجا অর্থ নড়াচড়া করা, অস্থিরতা, কম্পন। যেমন সূরা আয্ যিলযালে বলা হয়েছে :

(إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا) ‏

“যখন পৃথিবীকে তার কম্পনে প্রকম্পিত করা হবে” (সূরা আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ১)

بَسًّا অর্থ : চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ পাহাড়গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে তুলার মতো পাতলা হয়ে উড়বে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَتَكُوْنُ الْـجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ)‏

“এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙীন পশমের মত।” (সূরা আল ক্বা-রি‘আহ্ ১০১ : ৫)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلًا)‏

“(এসব হবে) সেদিন যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশির ন্যায় হবে।” (আল মুয্যাম্মিল ৭৩ : ১৪)

أَزْوَاجًا -এর অর্থ : أصناف তথা শ্রেণি, দল। অর্থাৎ তোমরা সেদিন তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সে তিন শ্রেণির কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছেন :

(১) (فَأَصْحٰبُ الْمَيْمَنَةِ)

অর্থাৎ এরা সাধারণ মু’মিন, যাদেরকে তাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। এজন্য এদেরকে আসহাবুল ইয়ামিন বা ডানপন্থী বলা হয়।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَأَصْحٰبُ الْيَمِيْنِ مَآ أَصْحٰبُ الْيَمِيْنِ ط ‏ فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ)‏

“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! (তারা থাকবে এক উদ্যানে,) সেখানে আছে কাঁটাবিহীন বরই গাছ।” (সূরা ওয়াকিআহ্ ৫৬ : ২৭-২৮)

(২) (وَأَصْحٰبُ الْمَشْئَمَةِ)

এরা হলো কাফির শ্রেণি যারা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল ও পরকালে বিশ্বাস রাখত না। এদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে। এ জন্য এদেরকে বামপন্থীও বলা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَأَصْحٰبُ الشِّمَالِ مَآ أَصْحٰبُ الشِّمَالِ‏ فِيْ سَمُوْمٍ وَّحَمِيْمٍ)

“আর বাম দিকের দল, কত হতভাগা বাম দিকের দল! তারা থাকবে উত্তপ্ত বাতাস ও উত্তপ্ত পানিতে।” (আল ওয়াকিআহ্ ৫৬ : ৪১-৪২) এদের আমলনামা পিছন দিক থেকেও দেয়া হবে।

(৩) (وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ)

এরা হলো বিশিষ্ট মু’মিন, যারা ঈমান ও আমলে অগ্রগামী। এদের মধ্যে নাবী, রাসূল, সিদ্দিক ও শহীদগণ শামিল।

এ তিন প্রকারের কথা উল্টাভাবে আবার এ সূরার ৮৮-৯৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন মানুষ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে।

(১) এক শ্রেণি আরশের ডান পাশে থাকবে। এরা আদম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বদেশ থেকে জন্ম নিয়েছিল। এদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। এদেরকে ডান দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরা হলো জান্নাতীদের সাধারণ দল।

(২) এ শ্রেণি আরশের বাম পাশে থাকবে। এরা আদম (আঃ)-এর বাম পার্শ্বদেশ থেকে জন্ম নিয়েছিল। এদেরকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে এবং এদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরা জাহান্নামী।

(৩) এরা আল্লাহ তা‘আলার সামনে থাকবে। এরা হবেন বিশিষ্ট দল। এরা ডানপন্থীদের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান ও নৈকট্য লাভকারী। এদের সংখ্যা ডানপন্থীদের চেয়ে কম হবে।

উপরোক্ত তিন শ্রেণির কথা অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরে বলেন :

(ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتٰبَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا ج فَمِنْهُمْ ظٰلِمٌ لِّنَفْسِه۪ ج وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ ج وَمِنْهُمْ سَابِقٌۭ بِالْخَيْرٰتِ بِإِذْنِ اللّٰهِ ط ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ)‏

“অতঃপর আমি এ কিতাবের অধিকারী করেছি তাদেরকে, যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে পছন্দ করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, তাদের কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় নেক কাজে অগ্রবর্তী। এটাই বড় সাফল্য।” (সূরা আল ফাতির ৩৫ : ৩২, ইবনু কাসীর) মি‘রাজের হাদীসে এসেছে; নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যখন আমরা দুনিয়ার আকাশে উঠলাম তখন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, তার ডান পাশে কিছু লোক ও বাম পাশে কিছু লোক। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তিনি যখন ডান পাশে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম পাশে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি বললেন : সৎ নাবী ও সৎ সন্তানকে স্বাগতম। আমি বললাম, হে জিরবীল এ ব্যক্তি কে? জিবরীল (আঃ) বলল : তিনি আদম (আঃ), তার ডান ও বাম পাশের লোকেরা তার সন্তান। ডান পাশের ব্যক্তিরা জান্নাতী আর বাম পাশের ব্যক্তির জাহান্নামী। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৩)

আমরা যেন ডান পাশের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি সে জন্য যথাসম্ভব সৎ আমল করতে হবে। কেননা প্রত্যেককে সে আমলের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কিয়ামত অবশ্যই ঘটবে। অতএব তার প্রতি ঈমান আনার সাথে সাথে সে দিনের ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সৎ আমল করতে হবে।
২. কিয়ামতের পূর্বে জমিন, পাহাড়ের যে ভয়ানক অবস্থা হবে সে কথা জানতে পারলাম।
৩. সেদিন মানুষ তিন দলে প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নৈকট্যশীলগণের মধ্যে শামিল করে নিন। আমীন!
১৩-২৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

ثُلَّةٌ শব্দের অর্থ : দল। আল্লামা জামাখশারী (রহঃ) বলেন : বড় দলকে ثُلَّةٌ বলা হয়।

(ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ وَقَلِيلٌ مِنَ الْآخِرِينَ) ও

(ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ وَثُلَّةٌ مِنَ الْآخِرِينَ)

-এ আয়াতগুলোর ব্যাপারে যে শানে নুযুল পাওয়া যায় তা দুর্বল। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ২৬৩)

আয়াতে উল্লিখিত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে মুফাস্সিরদের অনেক মতামত পাওয়া যায়।

মুজাহিদ, হাসান বাসরী প্রমুখদের মতে, পূর্ববর্তী বলতে উম্মতে মুহাম্মাদীর পূর্ববর্তী উম্মতসমূহকে বুঝানো হয়েছে। আর পরবর্তী বলতে উম্মতে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে।

ইবনু জারীর (রহঃ) এ মতকে পছন্দ করেছেন। তিনি দলীল উল্লেখ করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ

আমরা সর্বশেষ উম্মত কিন্তু কিয়ামতের দিন অগ্রগামী। (সহীহ বুখারী হা. ৬৬২৪) তবে এ বিষয়ে সঠিক কথা হলো : পূর্ববর্তী বলতে, এ উম্মতের প্রথম যুগের মানুষকে বুঝানো হয়েছে তবে কেউ কেউ এর সাথে ইসলামের তিনটি স্বর্ণ যুগকেও শামিল করেছেন।

যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

خَيْرُ الْقُرُوْنِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

সর্বোত্তম যুগ আমার যুগ, অতঃপর তার পরবর্তী যুগ, অতঃপর তার পরবর্তী যুগ। (সহীহ বুখারী হা. ২৬৫১, সহীহ মুসলিম হা. ২৫৩৩ আযওয়াউল বায়ান ৭/৪৫৩) আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেছেন :

جماعة كثيرون من المتقدمين من هذه الأمة وغيرهم

অর্থাৎ এ উম্মতের প্রথম সারির ও অন্যান্যদের অধিক সংখ্যার একটি দল। (তাফসীর সা‘দী)

আর পরবর্তী বলতে এ উম্মতের উল্লিখিত পূর্ববর্তী মানুষ বা যুগের মানুষ ব্যতীত কিয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে সবাই শামিল। (ইবনু কাসীর, তাফসীর সা‘দী ও তাফসীর মুয়াসসার) এ কথার ওপরে প্রমাণ বহন করে ইবনু আব্বাসের বর্ণনা, তিনি

(ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ وَثُلَّةٌ مِنَ الْآخِرِينَ)

এ আয়াতের ব্যাপারে বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তারা সবাই আমার উম্মত (কুরতুবী)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

أَهْلُ الجَنَّةِ عِشْرُونَ وَمِائَةُ صَفٍّ ثَمَانُونَ مِنْهَا مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ وَأَرْبَعُونَ مِنْ سَائِرِ الأُمَمِ

জান্নাতবাসীগণ একশত বিশ কাতারে বিভক্ত হবে; তার মধ্যে আশি কাতার এ উম্মতের অর্ন্তভুক্ত, বাকী চল্লিশ কাতার অন্যান্য সকল উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ, তিরমিযী হা. ২৫৪৬, মিশকাত হা. ৫৬৪৪)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীরা জান্নাতে যে আরাম আয়েশে থাকবে তার বিবরণ তুলে ধরেছেন।

مَّوْضُوْنَةٍ বলা হয় নির্মিত, খচিত। অর্থাৎ জান্নাতীরা স্বর্ণের তৈরি মণিমুক্তা খচিত আসনে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বালিশের ওপর হেলান দিয়ে বসবে। তখন চিরকিশোর যারা কখনো বৃদ্ধ হবে না এবং শারীরিক গঠনে কোন পরিবর্তন আসবে না তারা পানপাত্র, সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে তাদের সামনে ঘোরাফেরা করবে। যা পান করলে মাথা ব্যথা হবে না এবং জ্ঞান হারাও হবে না। এসব জান্নাতী কিশোরদের বিবরণ দিতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :

(وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُوْنٌ)‏

“তাদের সেবার জন্য নিয়োজিত থাকবে কিশোরেরা যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ।” (সূরা তূর ৫২ : ২৪)

الْمَكْنُوْنِ অর্থ সুরক্ষিত, যাতে কখনো হাতের স্পর্শ লাগেনি। অর্থাৎ জান্নাতীদেরকে এমন হুর প্রদান করা হবে যাদেরকে ইতোপূর্বে স্পর্শ করা হয়নি। দুনিয়াবী নারীদের যেসব সমস্যা হয় তাদের এরূপ কোন সমস্যাও হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَي قَلْبِ بَشَرٍ

আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান তা শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তা অনুভূতও হয়নি। (সহীহ বুখারী হা. ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম হা. ২৮২৪)

(لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا)

‘তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য’ অর্থাৎ পৃথিবীতে পরস্পর দ্বন্দ্ব বিবাদ হয়। যার ফলে অন্তরে জন্ম নেয় এমন ঘৃণা, বিদ্বেষ ও শত্র“তা যা একে অপরের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, গালিগালাজ ইত্যাদি করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। জান্নাতে জান্নাতীরা এ সমস্ত চারিত্রিক নোংরামী ও পংকিলতা থেকে কেবল পবিত্রই থাকবে না, বরং সেখানে শুধু সালাম আর সালামের ধ্বনি মুখরিত হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. উম্মতে মুহাম্মাদীর ও অন্যান্য উম্মতের অনেক সংখ্যক লোক জান্নাতে যাবে।
২. জান্নাতীগণ জান্নাতে যে সকল নেয়ামত পাবে তার বিবরণ অবগত হলাম।
২৭-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

যারা কিয়ামত দিবসে ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা জান্নাতে যেসব নেয়ামতে থাকবে আল্লাহ তা‘আলা সে কথা এখানে তুলে ধরেছেন।

(سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ)

‘কাঁটাবিহীন বরই গাছ’ একদা একজন গ্রাম্য ব্যক্তি আগমন করল এবং বলল; হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কষ্টদায়ক গাছের কথা উল্লেখ করেছেন, আমি মনে করি জান্নাতে কোন কষ্টদায়ক গাছ নেই? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তা কী? সে ব্যক্তি বলল : বরই গাছ, তার কষ্টদায়ক কাঁটা আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি ‘কাঁটাবিহীন বরই গাছ’ ? আল্লাহ তা‘আলা তার কাঁটা নষ্ট করে দিয়েছেন, প্রত্যেক কাঁটার স্থানে ফল রয়েছে। কেননা তা এমন ফল দেবে যা থেকে ৭২টি রং বের হবে; এক রঙের অপর রঙের সাথে কোন মিল থাকবে না। ( সহীহ, তারগীব ও তারহীব হা. ৩৭৪২)

(وَّفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ)

‘আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ’ এখানে فُرُشٍ থেকে অনেকে জান্নাতী স্ত্রীদেরকে বুঝিয়েছেন। আরবরা স্ত্রীদেরকে বিছানা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

(إِنَّآ أَنْشَأْنٰهُنَّ إِنْشَا۬ءً)

‘তাদেরকে (জান্নাতী হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি (দুনিয়ার নারীদের থেকে) ভিন্নরূপে’ জান্নাতী রমণীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ দুনিয়ার নারীরা যেমন বয়স্কা, বৃদ্ধা হয়ে যায়, রূপ-লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়, প্রতি মাসে সমস্যা হয় জান্নাতী নারীরা এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তারা হবে চিরকুমারী, সমবয়স্কা ও বর্ণনাতীত রূপ-লাবণ্যে ভরপুর।

عُرُبًا শব্দটি عرب এর বহুবচন। এমন নারী যে তার রূপ-লাবণ্য ও অন্যান্য গুণের কারণে স্বীয় স্বামীর কাছে অত্যন্ত প্রিয়া। أَتْرَابًا হল ترب এর বহুবচন। অর্থ সমবয়স্কা, অর্থাৎ যেসব নারীদেরকে জান্নাতবাসীরা স্ত্রীরূপে পাবে, তারা সবাই সমবয়স্কা হবে। হাদীসে এসেছে : সকল জান্নাতী তেত্রিশ বছর বয়সের হবে। (তিরমিযী হা. ২৫৪৫, সহীহ) অথবা এর অর্থ হবে, নিজ নিজ স্বামীর সমবয়স্কা হবে। উভয় অবস্থাতেই অর্থ একই। (ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِيْنَ) আয়াতদ্বয়ের তাফসীর পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা যে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে থাকবে তার বিবরণ পেলাম।
২. জান্নাতী নারীদের রূপ-সৌন্দর্যের বিবরণ জানলাম।
৪১-৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

যারা কিয়ামত দিবসে বাম হাতে আমলনামা পাবে তারা জাহান্নামে যে দুঃখ-কষ্টে থাকবে তার বিবরণ এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

سَمُوْمٍ হল উত্তপ্ত বায়ু, আর حَمِيْمٍ হল উত্তপ্ত পানি। يَّحْمُوْمٍ হল কালো ধোঁয়া। অর্থাৎ বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত জাহান্নামীরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কালো ধোঁয়াকে ছায়া মনে করে সে দিকে যাবে কিন্তু আসলে তা ঠাণ্ডা ছায়া নয় এবং তা দেখতেও ভাল দেখাবে না।

(إِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ)

অর্থাৎ এসকল জাহান্নামীরা দুনিয়াতে হারাম কাজে সবর্দা লিপ্ত ছিল, রাসূলগণ যা কিছু নিয়ে এসেছিলেন তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করত না।

(عَلَي الْحِنْثِ الْعَظِيْمِ)

অর্থাৎ তারা সবর্দা কুফরী, শিরক ও আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে লিপ্ত থাকত; তাওবা করার পরওয়া করত না।

(أَإِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ)

অর্থাৎ আমরা মারা গেলে হাড় ও মাটিতে পরিণত হয়ে যাব তারপরেও কি পুনরুত্থিত হব? কাফিররা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে এ কথা বলত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জবাবে বলেন : হে নাবী! তুমি বলে দাও : আদম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যারা আসবে সবাই পুনরুত্থিত হবে। এ পুনরুত্থান হবে এক নির্ধারিত দিনের নির্ধারিত সময়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(ذٰلِکَ یَوْمٌ مَّجْمُوْعٌﺫ لَّھُ النَّاسُ وَذٰلِکَ یَوْمٌ مَّشْھُوْدٌ﮶ وَمَا نُؤَخِّرُھ۫ٓ اِلَّا لِاَجَلٍ مَّعْدُوْدٍ﮷ یَوْمَ یَاْتِ لَا تَکَلَّمُ نَفْسٌ اِلَّا بِاِذْنِھ۪ﺆ فَمِنْھُمْ شَقِیٌّ وَّسَعِیْدٌ)

“এটা সেদিন, যেদিন সমস্ত‎ মানুষকে একত্র করা হবে; এটা সেদিন যেদিন সকলকে উপস্থিত করা হবে; এবং আমি নির্দিষ্ট কিছু কালের জন্য সেটা স্থগিত রাখি মাত্র। যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ কথা বলতে পারবে না; তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য ও কেউ ভাগ্যবান।” (সূরা হূদ১১ : ১০৩-১০৫)

(لَاٰکِلُوْنَ مِنْ شَجَرٍ مِّنْ زَقُّوْمٍ)

‘তোমরা অবশ্যই যাক্কূম বৃক্ষ হতে আহার করবে’ যাক্কুম জাহান্নামের একটি নিকৃষ্ট গাছ। যা অতি বিস্বাদ ও তিক্ত। খেতে ভাল না লাগলেও ক্ষুধার তাড়নায় তা খেয়েই তাদের উদর পূর্ণ করবে।

هِيْمِ হল أهيم এর বহুবচন। সেই পিপাসিত উটকে বলা হয়, যে বিশেষ এক ভোগের কারণে পানির ওপর পানি পান করেই যায়, কিন্তু তাতে পিপাসা নিবৃত্ত হয় না।

(هٰذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ)

‘কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন’ মহান আল্লাহ ঠাট্টা করে কাফিরদেরকে এ কথা বলছেন। কারণ কষ্টদায়ক খাবার ও পাণীয় দ্বারা কি আপ্যায়ন করা হয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. বাম হাতে আমলনামা যারা পাবে তারা জাহান্নামী।
২. জাহান্নামীরা জাহান্নামে যে দুঃখ-কষ্টে থাকবে তার বিবরণ জানলাম।

Leave a Reply