Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৪৯/এবং কাফের-রা বলে -১৫) [*‌‌”আল-ওয়াক্বিয়া”যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে:- *যারা ছিলেন ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী এবং যাবতীয় নেকীর কাজে আগে বেড়ে অংশ গ্রহণকারী:- *বাম দল এর অবস্থা:- *তাদের স্ত্রীদেরা প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা:- *তারা বলত, ‘মরে অস্থি ও মাটিতে পরিণত হলেও কি আমাদেরকে উঠানো হবে? :-] www.motaher21.net সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া” পাহরা:২৭ ১- ৫৬ নং আয়াত:- আয়াতের ব্যাখ্যা:- ১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন। ২) ‌তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৪৯/এবং কাফের-রা বলে -১৫)
[*‌‌”আল-ওয়াক্বিয়া”যখন সেই মহা ঘটনা সংঘটিত হবে:-
*যারা ছিলেন ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী এবং যাবতীয় নেকীর কাজে আগে বেড়ে অংশ গ্রহণকারী:-
*বাম দল এর অবস্থা:-
*তাদের স্ত্রীদেরা প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা:-
*তারা বলত, ‘মরে অস্থি ও মাটিতে পরিণত হলেও কি আমাদেরকে উঠানো হবে? :-]
www.motaher21.net
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”
পাহরা:২৭
১- ৫৬ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন।
২) ‌তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন।
(৫৬-ওয়াক্বিয়া) : নামকরণ:

সূরার সর্বপ্রথম আয়াতে الْوَاقِعَةُ শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
(৫৬-ওয়াক্বিয়া) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস সূরাসমূহ নাযিলের যে পরম্পরা বর্ণনা করেছেন তাতে তিনি বলেছেন: প্রথমে সূরা ত্বহা নাযিল হয়, তারপর আল ওয়াকি’আ এবং তারও পরে আশ’শুআরা (الاتقان للسيوطى) । ইকরিমাও এ পরম্পরা বর্ণনা করেছেন (بيهقى دلائل النبوة) ।

হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাক থেকে যে কাহিনী বর্ণনা করেছেন তা থেকেও এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। কাহিনীতে বলা হয়েছে হযরত উমর (রা.) যখন তাঁর বোনের ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সূরা ত্বাহা তেলাওয়াত করা হচ্ছিলো। তাঁর উপস্থিতির আভাস পেয়ে সবাই কুরআনের আয়াত লিখিত পাতাসমূহ লুকিয়ে ফেললো। হযতর উমর (রা.) প্রথমেই ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাকে রক্ষা করার জন্য বোন এগিয়ে আসলে তাকেও এমন প্রহার করলেন যে, তাঁর মাথা ফেটে গেল। বোনের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখে হযরত উমর (রা.) অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। তিনি বললেন, তোমরা যে সহীফা লুকিয়েছো তা আমাকে দেখাও। তাতে কি লেখা আছে দেখতে চাই। তাঁর বোন বললেন, শির্কে লিপ্ত থাকার কারণে আপনি অপবিত্র وانه لايمسها الاالطاهر “কেবল পবিত্র লোকেরাই ঐ সহীফা হাতে নিতে পারে।” একথা শুনে হযরত উমর (রা.) গিয়ে গোসল করলেন এবং তারপর সহীফা নিয়ে পাঠ করলেন। এ ঘটনা থেকে জানা যায় যে, তখন সূরা ওয়াকি’আ নাযিল হয়েছিল। কারণ ঐ সূরার মধ্যেই لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ আয়াতাংশ আছে। আর একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, হযরত উমর (রা.) হাবশায় হিজরতের পর নবুওয়াতের ৫ম বছরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

(৫৬-ওয়াক্বিয়া) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে, আখেরাত, তাওহীদ ও কুরআন সম্পর্কে মক্কার কাফেরদের সন্দেহ-সংশয়ের প্রতিবাদ। এক দিন যে কিয়ামত হবে, পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস ও লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। তারপর সমস্ত মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করে তাদের হিসেব নিকেশ নেয়া হবে। এবং সৎকর্মশীল মানুষদেরকে জান্নাতের বাগানসমূহে রাখা হবে আর গোনাহগারদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে—এসব কথাকে তারা সর্বাধিক অবিশ্বাস্য বলে মনে করতো। তারা বলতো: এসব কল্পনা মাত্র। এসব বাস্তবে সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। এর জবাবে আল্লাহ বলছেন: এ ঘটনা প্রকৃতই যখন সংঘটিত হবে তখন এসব মিথ্যা কথকদের কেউ-ই বলবে না যে, তা সংঘটিত হয়নি তার আগমন রুখে দেয়ার কিংবা তার বাস্তবতাকে অবাস্তব বানিয়ে দেয়ার সাধ্যও কারো হবে না। সে সময় সমস্ত মানুষ অনিবার্যরূপে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক, সাবেকীন বা অগ্রগামীদের শ্রেণী। দুই, সালেহীন বা সাধারণ নেককারদের শ্রেণী। এবং তিন, সেই সব মানুষ যারা আখেরাতকে অস্বীকার করতো এবং আমৃত্য কুফরী, শির্ক ও কবীরা গোনাহর ওপর অবিচল ছিল। এ তিনটি শ্রেণীর সাথে যে আচরণ করা হবে ৭ থেকে ৫৬ আয়াত পর্যন্ত তা সবিস্তরে বর্ণনা করা হয়েছে।

এরপর ৫৭ থেকে ৭৪ আয়াত পর্যন্ত তাওহীদ ও আখেরাত ইসলামের এ দু’টি মৌলিক আকীদার সত্যতা সম্পর্কে পর পর যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। এ দু’টি বিষয়কেই কাফেররা অস্বীকার করে আসছিল। এক্ষেত্রে যুক্তি-প্রমান হিসেবে পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে মানুষকে তার নিজের সত্ত্বার প্রতি, যে খাবার সে খায় সে খাবারের প্রতি, যে পানি সে পান করে সে পানির প্রতি এবং যে আগুনের সাহায্যে সে নিজের খাবার তৈরী করে সে আগুনের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাকে এ প্রশ্নটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে বলা হয়েছে যে, যে আল্লাহর সৃষ্টির কারণে তুমি সৃষ্টি হয়েছো, যার দেয়া জীবনযাপনের সামগ্রীতে তুমি প্রতিপালিত হচ্ছো, তাঁর মোকাবিলায় তুমি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার কিংবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাঁসত্ব করার কি অধিকার তোমার আছে? তাঁর সম্পর্কে তুমি এই ধারণা করে বসলে কি করে যে, তিনি একবার তোমাকে অস্তিত্ব দান করার পর এমন অক্ষম ও অর্থব হয়ে পড়েছেন যে, পুনরায় তোমাকে অস্তিত্ব দান করতে চাইলেও তা পারবেন না?

তারপর ৭৫ থেকে ৮২ আয়াত পর্যন্ত কুরআন সম্পর্কে তাদের নানা রকম সন্দেহ-সংশয় নিরসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ উপলব্ধি সৃষ্টিরও চেষ্টা করা হয়েছে যে, হতভাগারা তোমাদের কাছে যে এক বিরাট নিয়ামত এসেছে। অথচ এ নিয়ামতের সাথে তোমাদের আচরণ হলো, তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছো এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করছো না। কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে দু’টি সংক্ষিপ্ত বাক্যে অনুপম যুক্তি পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যদি কুরআন নিয়ে কেউ গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখে তাহলে তার মধ্যেও ঠিক তেমনি মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা দেখতে পাবে যেমন মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা আছে মহাবিশ্বের তরকা ও গ্রহরাজির মধ্যে। আর এসব একথাই প্রমাণ করে যে, যিনি এই মহাবিশ্বের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও বিধান সৃষ্টি করেছেন কুরআনের রচয়িতাও তিনিই। তারপর কাফেরদের বলা হয়েছে, এ গ্রন্থ সেই ভাগ্যলিপিতে উৎকীর্ণ আছে যা সমস্ত সৃষ্টির নাগালের বাইরে। তোমরা মনে করো শয়তান মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ গ্রন্থের কথাগুলো নিয়ে আসে। অথচ ‘লাওহে মাহফূজ’ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত যে মাধ্যম এ কুরআন পৌঁছায় তাতে পবিত্র আত্মা ফেরেশতারা ছাড়া আর কারো সামান্যতম হাতও থাকে না।

সর্বশেষে মানুষকে বলা হয়েছে, তুমি যতই গর্ব ও অংহাকর করো না কেন এবং নিজের স্বেচ্ছাচারিতার অহমিকায় বাস্তব সম্পর্কে যতই অন্ধ হয়ে থাক না কেন, মৃত্যুর মুহূর্তটি তোমার চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সে সময় তুমি একান্তই অসহায় হয়ে পড়ো। নিজের পিতা-মাতাকে বাঁচাতে পার না। নিজের সন্তান-সন্তুতিকে বাঁচাতে পার না। নিজের পীর ও মুর্শিদ এবং অতি প্রিয় নেতাদেরকে বাঁচাতে পার না। সবাই তোমার চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আর তুমি অসহায়ের মত দেখতে থাক। তোমার ওপরে যদি কোন উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী ও শাসক না-ই থেকে থাকে এবং পৃথিবীতে কেবল তুমিই থেকে থাক, কোন আল্লাহ না থেকে থাকে, তোমার এ ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে কোন মৃত্যুপথযাত্রীর বেরিয়ে যাওয়া প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পার না কেন? এ ব্যাপারে তুমি যেমন অসহায় ঠিক তেমনি আল্লাহর সামনে জবাবদিহি এবং তার প্রতিদান ও শাস্তি প্রতিহত করাও তোমার সাধ্যের বাইরে। তুমি বিশ্বাস কর আর নাই কর, মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে তার পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে। “মুকাররাবীনদের” বা নৈকট্য লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে ‘মুকাররাবীনদের’ পরিণাম ভোগ করবে। ‘সালেহীন’ বা সৎকর্মশীল হলে সালেহীনদের পরিণাম ভোগ করবে এবং অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হলে সেই পরিণাম লাভ করবে যা এ ধরনের পাপীদের জন্য নির্ধারিত আছে।
# এ আয়াতাংশ দ্বারা বক্তব্য শুরু করা স্বতসিদ্ধভাবেই প্রমাণ করে যে, সে সময় কাফেরদের মজলিসসমূহে কিয়ামতের বিরুদ্ধে যেসব কাহিনী ফাঁদা হতো এবং গালগপ্প করা হতো, এটা তার জবাব। যখন মক্কার লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে সবেমাত্র ইসলামের দাওয়াত শুনছে এটা ঠিক সেই সময়ের কথা। এর মধ্যে তাদের কাছে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশী অদ্ভূত, অযৌক্তিক ও অসম্ভব বলে মনে হতো তা হচ্ছে, এক দিন আসমান যমীনের এ ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারপর অন্য একটি জগত সৃষ্টি হবে যেখানে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের সমস্ত মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। একথা শুনে তাদের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হয়ে যেতো। তারা বলতোঃ এটা হওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাহলে এ পৃথিবী, পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, চন্দ্র এবং সূর্য কোথায় যাবে। শত শত হাজার হাজার বছরের করবস্থ মৃতরা কিভাবে জীবিত হয়ে উঠবে? মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবনলাভ, তারপর সেখানে থাকবে বেহেশতের বাগান ও দোযখের আগুন এসব স্বপ্নচারিতা ও আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। বুদ্ধিবিবেক ও সুস্থ মস্তিষ্কে আমরা এসব কি করে মেনে নিতে পারি? মক্কার সর্বত্র তখন এই গালগপ্পকে কেন্দ্র করে আসর জমছিলো। এ পটভূমিতে বলা হয়েছে, যখন সে মহা ঘটনা সংঘটিত হবে তখন তা অস্বীকার করার মত কেউ থাকবে না।

এ বাণীর মধ্যে কিয়ামত বুঝাতে وَاقِعَةُ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এর অর্থ যা অনিবার্য ও অবধারিত। অর্থাৎ তা এমন জিনিস যা অনিবার্যরূপেই সংঘটিত হতে হবে। এর সংঘটিত হওয়াকে আবার وقعة শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়েছে। আরবী ভাষায় এ শব্দটি আকস্মিকভাবে কোন বড় দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়া বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ কথাটির দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, এর সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হওয়া, আগমন থেমে যাওয়া কিংবা এর আগমন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে না। অন্য কথায়, এ বাস্তব ঘটনাকে অবাস্তব ও অস্তিত্বহীন বানিয়ে দেয়ার মত কেউ থাকবে না। দুই, কোন জীবন্ত সত্তাই তখন এ মিথ্যা কথা বলবে না যে, এ ঘটনা আদৌ সংঘটিত হয়নি।

# মূল আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ “নীচুকারী ও উঁচুকারী” এর একটি অর্থ হতে পারে সেই মহা ঘটনা সব কিছু উলট-পালট করে দেবে। নীচের জিনিস উপরে উঠে যাবে এবং উপরের জিনিস নীচে নেমে যাবে। আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, তা নীচে পতিত মানুষদেরকে উপরে উঠিয়ে দেবে এবং উপরের মানুষদেরকে নীচে নামিয়ে দেবে। অর্থাৎ তা আসার পর মানুষের মধ্যে মর্যাদা ও অমর্যাদার ফায়সালা হবে সম্পূর্ণ আলাদা ভিত্তি ও দৃষ্টিকোণ থেকে। যারা পৃথিবীতে নিজেদেরকে অতি সম্মানিত বলে দাবী করে বেড়াতো তারা লাঞ্ছিত হবে আর যাদের নীচ ও হীন মনে করা হতো তারা মর্যাদা লাভ করবে।
# তা কোন আঞ্চলিক সীমিত মাত্রার ভূমিকম্প হবে না। বরং যুগপৎ সমগ্র পৃথিবীকে গভীর আলোড়নে প্রকম্পিত করবে। পৃথিবী হঠাৎ করে এমন বিরাট ঝাঁকুনি খাবে যার ফলে তা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।
# যাদেরকে এ বক্তব্য শুনানো হচ্ছিলো কিংবা এখন যারা তা পড়বে বা শুনবে, বাহ্যত কেবল তাদেরকে সম্বোধন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে গোটা মানবজাতিকেই সম্বোধন করা হয়েছে। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তারা সবাই কিয়ামতের দিন তিন ভাগে বিভক্ত হবে।

# মূল আয়াতে أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ব্যাকরণ অনুসারে ميمنة শব্দটি يمين শব্দ থেকে গৃহীত হতে পারে— যার অর্থ ডান হাত। আবার يمن শব্দ থেকেও গৃহিত হতে পারে যার অর্থ শুভ লক্ষণ। যদি ধরে নেয়া যায় যে, এ শব্দটির উৎপত্তি يمين শব্দ থেকে হয়েছে তাহলে أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ এর অর্থ হবে, “ডান হাতের অধিকারী।” কিন্তু এখানে এর আভিধানিক অর্থ অভিপ্রেত নয়। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোক ডান হাতকে আরবের লোকেরা শক্তি, মহত্ব ও মর্যাদার প্রতীক বলে মনে করতো। যাকে মর্যাদা প্রদর্শন উদ্দেশ্য হতো মজলিসের মধ্যে তাকে ডান হাতের দিকে বসাতো। আমার কাছে অমুক ব্যক্তির অনেক সম্মান ও মর্যাদা একথা বুঝানোর প্রয়োজন হলে বলতোঃ فُلَانٌ مِنِّى بِالْيَمِيْن সে তো আমার ডান হাতের পাশে। আমাদের ভাষাতেও কাউকে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির ‘দক্ষিণ হস্ত’ বলার অর্থ সে তার ঘনিষ্ঠ জন। আর যদি ধরে নেয়া যায় যে, এর উৎপত্তি يمن শব্দ থেকে হয়েছে তাহলে أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ এর অর্থ হবে, ‘খোশ নসীব’ ও সৌভাগ্যবান।

# মূল ইবারতে “أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ ” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। مشئمة শব্দের উৎপত্তি হয়েছে شئوم থেকে। এর অর্থ, দুর্ভাগ্য, কুলক্ষণ, অশুভ লক্ষণ। আরবী ভাষায় বাঁ হাতকেও شومى বলা হয়। আরবরা شمال (বাঁ হাত) এবং شوم অশুভ লক্ষণ, শব্দ দু’টিকে সমার্থক বলে মনে করতো। তাদের কাছে বাঁ হাত দুর্বলতা ও লাঞ্ছনার প্রতীক। সফরে রওয়ানা হওয়ার সময় যদি পাখী তাদের বাঁ হাতের দিক দিয়ে উড়ে যেতো তাহলে তারা একে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করতো। কাউকে বাঁ পাশে বসালে তার অর্থ হতো সে তাকে নীচু মর্যাদার লোক মনে করে। আমার কাছে তার কোন মর্যাদা নেই কারো সম্পর্কে যদি একথা বলতে হয় তাহলে বলা হয় فُلَانٌ مِنِّى بِالشِّمَال সে আমার বাঁ পাশের লোক। বাংলা ভাষাতেও খুব হালকা ও সহজ কাজ বুঝাতে বলা হয়, এটা আমার বাঁ হাতের খেলা। অতএব, أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ অর্থ দুর্ভাগা লোক অথবা এমন লোক যারা আল্লাহর কাছে লাঞ্ছনার শিকার হবে এবং আল্লাহর দরবারে তাদেরকে বাঁ দিকে দাঁড় করানো হবে।

# السَّابِقُينَ (অগ্রগামীগণ) অর্থ যারা সৎকাজ ও ন্যায়পরায়ণতায় সবাইকে অতিক্রম করেছে, প্রতিটি কল্যাণকর কাজে সবার আগে থেকেছে। আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, জিহাদের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে খরচের ব্যাপারে হোক কিংবা জনসেবার কাজ হোক কিংবা কল্যাণের পথে দাওয়াত কিংবা সত্যের পথে দাওয়াতের কাজ হোক মোট কথা পৃথিবীতে কল্যাণের প্রসার এবং অকল্যাণের উচ্ছেদের জন্য ত্যাগ ও কুরবানী এবং শ্রমদান জীবনপনের যে সুযোগই এসেছে তাতে সে-ই অগ্রগামী হয়ে কাজ করেছে। এ কারণে আখেরাতেও তাদেরকেই সবার আগে রাখা হবে। অর্থাৎ আখেরাতে আল্লাহ তা’আলার দরবারের চিত্র হবে এই যে, ডানে থাকবে ‘সালেহীন’ বা (নেককারগণ, বাঁয়ে থাকবে ফাসেক বা পাপীরা এবং সবার আগে আল্লাহ তা’আলার দরবারের নিকটে থাকবেন ‘সাবেকীন’গণ। হাদীসে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছ যে, রসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান কিয়ামতের দিন কারা সর্বপ্রথম পৌঁছবে এবং আল্লাহর ছায়ায় স্থান লাভ করবে? সবাই বললেনঃ আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ

الَّذِينَ إِذَا أُعْطُوا الْحَقَّ قَبِلُوهُ وَإِذَا سُئِلُوهُ بَذَلُوهُ وَحَكَمُوا لِلنَّاسِ كَحُكْمِهِمْ لأَنْفُسِهِمْ-

“যাদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের সামনে যখনই সত্য পেশ করা হয়েছে, তা গ্রহণ করেছে। যখনই তাদের কাছে প্রাপ্য চাওয়া হয়েছে, তখনই তা দিয়ে দিয়েছে। আর তারা নিজেদের ব্যাপারে যে ফায়সালা করেছে অন্যদের ব্যাপারেও সেই ফায়সালা করেছে।” (মুসনাদে আহমাদ)।

# ‘আওয়ালীন’ ও আখেরীন’ অর্থাৎ অগ্রবর্তী ও পরবর্তী বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে তাফসীরকারদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। এক দলের মতে আদম আলাইহিস সালাম থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তি পর্যন্ত যত উম্মত অতিক্রান্ত হয়েছে তারা ‘আওয়ালীন’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষের আগমন ঘটবে তারা সবাই আখেরীন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আয়াতের অর্থ হবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের পূর্ববর্তী হাজার হাজার বছরে যত মানুষ চলে গিয়েছে তাদের মধ্যে থেকে ‘সাবেকীন’দের সংখ্যা বেশী হবে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী মানুষদের মধ্যে যারা ‘সাবেকীন’দের মর্যাদা লাভ করবে তাদের সংখ্যা হবে কম। দ্বিতীয় দল বলেন, এখানে ‘আওয়ালীন’ ও ‘আখেরীন’ অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের ‘আওয়ালীন’ ও ‘আখেরীন’। অর্থাৎ তাঁর উম্মতের প্রাথমিক যুগের লোকেরা হচ্ছে ‘আওয়ালীন’। তাদের মধ্যে ‘সাবেকীন’দের সংখ্যা হবে বেশী। পরবর্তী যুগের লোকেরা হচ্ছে ‘আখেরীন’। তাদের মধ্যে সাবেকীনদের সংখ্যা হবে কম। তৃতীয় দল বলেন, এর অর্থ প্রত্যেক নবীর উম্মতের ‘আওয়ালীন’ ও ‘আখেরীন’। অর্থাৎ প্রত্যেক নবীর প্রাথমিক যুগের অনুসারীদের মধ্যে আওয়ালীনদের সংখ্যা বেশী হবে এবং পরবর্তীকালের অনুসারীদের মধ্যে তাদের সংখ্যা কম হবে। আয়াতের শব্দাবলী এ তিনটি অর্থ ধারণ করেছে। এখানে এ তিনটি অর্থই প্রযোজ্য হওয়া বিচিত্র নয়। প্রকৃতপক্ষে এসব অর্থের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। এছাড়াও এসব শব্দ থেকে আরো একটি অর্থ পাওয়া যায়। সেটিও নির্ভুল অর্থ। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাথমিক যুগে মানব গোষ্ঠীর মধ্যে ‘সাবেকীন’দের অনুপাত থাকবে বেশী এবং পরবর্তী যুগে সে অনুপাত থাকবে কম। তাই মানুষের সংখ্যা যত দ্রুত বৃদ্ধি পায় নেক কাজে অগ্রগামী মানুষের সংখ্যা সে গতিতে বৃদ্ধি পায় না। গণনার দিক দিয়ে তাদের সংখ্যা প্রথম যুগের সাবেকীনদের চেয়ে অধিক হলেও পৃথিবীর সমস্ত জনবসতির বিচারে তাদের অনুপাত ক্রমন্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে।

# এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে। তাদের বয়স সব সময় একই অবস্থায় থেমে থাকবে। হযরত আলী (রা.) ও হযরত হাসান বাসরী (র) বলেনঃ এরা দুনিয়ার মানুষের সেসব শিশু সন্তান যারা বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলো। সূতরাং তাদের এমন কোন নেকী থাকবে না যার প্রতিদান দেয়া যেতে পারে এবং এমন কোন বদ কাজও থাকবে না যার শাস্তি দেয়া যেতে পারে। তবে একথা সুস্পষ্ট যে, তারা হবে পৃথিবীর এমন লোকদের সন্তান যাদের ভাগ্যে জান্নাত জোটেনি। অন্যথায় নেককার মু’মিনদের মৃত অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তাদের সন্তানদেরকেও জান্নাতে তাদের সাথে একত্রিত করে দেয়া হবে। (আত্ তূর, আয়াত ২১ ) আবু দাউদ তায়ালেসী, তাবারানী ও বাযযার কর্তৃক হযরত আনাস (রা.) ও হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব হতে বর্ণিত হাদীস থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। উক্ত হাদীসে নবী ﷺ বলেছেন যে, মুশরিকদের সন্তানরা জান্নাতবাসীদের খাদেম হবে। (অধিক জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা, সাফফাতের তাফসীর, টীকা ২৬ , আত্ তূর, টীকা ১৯ )।

# এটি জান্নাতের বড় বড় নিয়ামতের একটি। এসব নিয়ামত সম্পর্কে কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষের কান সেখানে কোন অনর্থক ও বাজে কথা, মিথ্যা, গীবত ও চোগলখুরী, অপবাদ, গালি, অহংকার ও বাজে গালগপ্প বিদ্রূপ ও উপহাস, তিরস্কার ও বদনামমূলক কথাবার্তা শোনা থেকে রক্ষা পাবে। সেটা কটুভাষী ও অভদ্র লোকদের সমাজ হবে না যে, পরস্পরে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি করবে। সেটা হবে সভ্য ও ভদ্র লোকদের সমাজ যেখানে এসব অর্থহীন ও বেহুদা কথাবার্তার নামগন্ধ পর্যন্ত থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা কাউকে যদি সামান্য কিছু শিষ্টতা বোধ ও সুরুচির অধিকারী করে থাকেন তাহলে তিনি ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন যে পার্থিব জীবনে এটা কত বড় কষ্টদায়ক ব্যাপার। জান্নাতে মানুষকে এ থেকে মুক্তির আশ্বাস দেয়া হবে।

# মূল আয়াতটি হচ্ছে إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا কিছুসংখ্যক মুফাসসির ও অনুবাদক এর অর্থ করেছেন সেখানে সব দিক থেকেই কেবল ‘সালাম’ ‘সালাম’ শব্দ শুনা যাবে। কিন্তু এর সঠিক অর্থ হচ্ছে সঠিক, সুস্থ ও যথাযথ কথা। অর্থাৎ এমন কথাবার্তা যা দোষ-ত্রুটি মুক্ত, যার মধ্যে পূর্ববর্তী বাক্যে উল্লেখিত মন্দ দিকগুলো নেই। ইংরেজীতে safe শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত এখানে সালাম শব্দটি প্রায় সেই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
# কাঁটাবিহীন কুল বৃক্ষের কুল। কেউ এ কথা ভেবে বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন যে, কুল আবার এমন কি উৎকৃষ্ট ফল যা জান্নাতে থাকবে বলে সুখবর দেয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো, জান্নাতের কুল নয়, এ পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে এ ফলটি এমন সুস্বাদু, খোশবুদার ও মিষ্টি হয় যে, একবার মুখে দিলে রেখে দেয়া কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া কুল যত উন্নতমানের হবে তার গাছ তত কম কাঁটাযুক্ত হবে। তাই জান্নাতের কুল বৃক্ষের পরিচয় দেয়া হয়েছে এই বলে যে, তাতে মোটেই কাঁটা থাকবে না। অর্থাৎ তা হবে এমন উন্নত জাতের কুল যা এই পৃথিবীতে নেই।
# মূল আয়াত হচ্ছে لَا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ । لَا مَقْطُوعَةٍ অর্থ তা কোন মওসূমী ফল হবে না যে, মওসূম শেষ হওয়ার পর আর পাওয়া যাবে না। তার উৎপাদন কোন সময় বন্ধ হবে না যে, কোন বাগানের সমস্ত ফল সংগ্রহ করে নেয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাগান ফলশূন্য থাকবে। বরং যতই খাওয়া হোক না কেন সেখানে প্রতিটি মওসূমে প্রতিটি ফল পাওয়া যাবে এবং লাগাতার উৎপন্ন হতে থাকবে। আর لَا مَمْنُوعَةٍ অর্থ দুনিয়ার ফল বাগানসমূহের মত সেখানে কোন বাঁধা বিঘ্ন থাকবে না। ফল আহরণ ও খাওয়ার ব্যাপারে যেমন কোন বাঁধা থাকবে না তেমনি গাছে কাঁটা না থাকা এবং ফল অধিক উচ্চতায় না থাকার কারণে আহরণ করতেও কোন কষ্ট হবে না।

# দুনিয়ার সেসব সৎকর্মশীলা নারী যারা তাদের ঈমান ও নেক আমলের ভিত্তিতে জান্নাত লাভ করবে। পৃথিবীতে তারা যত বৃদ্ধাবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করুক না কেন সেখানে আল্লাহ তা’আলা তাদের সবাইকে যুবতী বানিয়ে দেবেন। পৃথিবীতে তারা সুন্দরী থাক বা না থাক সেখানে আল্লাহ তাদের পরমা সুন্দরী বানিয়ে দেবেন। পৃথিবীতে তারা কুমারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে বা সন্তানবতী হয়ে মৃত্যুরবণ করে থাকুক, আল্লাহ তাদের কুমারী বানিয়ে দেবেন। তাদের সাথে তাদের স্বামীরাও যদি জান্নাত লাভ করে থাকে তাহলে তাদেরকে একত্রিত করা হবে। অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা জান্নাতবাসী অন্য কারো সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে দিবেন। এ আয়াতের এ ব্যাখ্যা কতিপয় হাদীসের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। ‘শামায়েলে তিরমিযী’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, এক বৃদ্ধা নবীর ﷺ কাছে এসে বললোঃ আমি যেন জান্নাতে যেতে পারি সেজন্য দোয়া করুন। নবী (সা.) বললেনঃ কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যেতে থাকলে তিনি উপস্থিত সবাইকে বললেনঃ তাকে বলে দাও, সে বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “আমি তাদেরকে বিশেষভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো এবং কুমারী বানিয়ে দেবো।” ইবনে আবী হাতেম হযরত সালামা ইবনে ইয়াযীদ থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ এর দ্বারা পৃথিবীর মেয়েদের বুঝানো হয়েছে— তারা কুমারী বা বিবাহিতা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে থাকুক তাতে কিছু যায় আসে না। তাবারানীতে হযরত উম্মে সালামা থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসে তিনি নবীর ﷺ কাছে জান্নাতের মেয়েদের সম্পর্কে কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানের আয়াতসমূহের অর্থ জিজ্ঞেস করছেন। এক্ষেত্রে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেনঃ

هن اللواتى قيضن فى دار الدنيا عجائز رمصا شمطا خلقهن الله بعد الكبر فجعلهن عذارى-

“এরা সেসব মেয়ে যারা দুনিয়ার জীবনে খুন খুনে বুড়ী, পিচুটি গলা চোখ ও পাকা সাদা চুল নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলো। এ বার্ধক্যের পরে আল্লাহ তা’আলা পুনরায় তাদেরকে কুমারী বানিয়ে সৃষ্টি করবেন।” হযরত উম্মে সালামা জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীতে কোন মেয়ের যদি একাধিক স্বামী থেকে থাকে তাহলে কে তাকে লাভ করবে? নবী (সা.) বলেনঃ

انها تخير فتختارا حسنهم خلقا فتقول يارب ان هذا كان احسن خلقا معى فزوجنيها – ياام سلمة , ذهب حسن الخلق بخير الدنيا والاخرة-

“তাকে যাকে ইচ্ছা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হবে। যার আখলাক ও আচরণ সবার চেয়ে ভাল ছিলো সে তাকেই বেছে নেবে। সে আল্লাহ তা’আলাকে বলবেঃ “হে আমার রব, আমার সাথে তার আচরণ ছিলো সবচেয়ে ভাল। অতএব আমাকে তার স্ত্রী বানিয়ে দিন। হে উম্মে সালামা, উত্তম আচরণ দুনিয়ার সমস্ত কল্যাণ অর্জন করলো।” (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আর রাহমানের তাফসীর, টীকা ৫১ )।

# মূল আয়াতে عُرُبًا শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় এ শব্দটি মেয়েদের সর্বোত্তম মেয়েসুলভ গুণাবলী বুঝাতে বলা হয়। এ শব্দ দ্বারা এমন মেয়েদের বুঝানো হয় যারা কমনীয় স্বভাব ও বিনীত আচরণের অধিকারিনী, সদালাপী, নারীসুলভ আবেগ অনুভূতি সমৃদ্ধ, মনে প্রাণে স্বামীগত প্রাণ এবং স্বামীও যার প্রতি অনুরাগী।

# এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে তারা তাদের স্বামীদের সমবয়সী হবে। অন্য অর্থটি হচ্ছে, তারা পরস্পর সমবয়স্কা হবে। অর্থাৎ জান্নাতের সমস্ত মেয়েদের একই বয়স হবে এবং চিরদিন সেই বয়সেরই থাকবে। যুগপৎ এ দু’টি অর্থই সঠিক হওয়া অসম্ভব নয়। অর্থাৎ এসব জান্নাতী নারী পরস্পরও সমবয়সী হবে এবং তাদের স্বামীদেরকেও তাদের সমবয়সী বানিয়ে দেয়া হবে। একটি হাদীসে বলা হয়েছেঃ

يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ جُرداً مُرْداً بِيضاً جِعَاداً مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِينَ-

“জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করলে তাদের শরীরে কোন পশম থাকবে না। মোচ ভেজা ভেজা মনে হবে। কিন্তু দাড়ি থাকবে না। ফর্সা শ্বেত বর্ণ হবে। কুঞ্চিত কেশ হবে। কাজল কাল চোখ হবে এবং সবার বয়স ৩৩ বছর হবে” (মুসনাদে আহমাদ, আবু হুরায়রার বর্ণিত হাদীস)।

# তাদের ওপর সুখ-স্বাচ্ছন্দের উল্টা প্রভাব পড়েছিলো। আল্লাহ তা’আলার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তারা তাঁর নিয়ামতের অস্বীকারকারী হয়ে গিয়েছিলো। নিজেদের প্রবৃত্তির পরিতৃপ্তি সাধনে নিমগ্ন হয়ে তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিলো এবং একের পর এক বড় বড় গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়েছিলো। বড় গোনাহ শব্দটি ব্যাপক অর্থ ব্যঞ্জক। এর দ্বারা যেমন কুফর, শিরক ও নাস্তিকতা বড় গোনাহ বুঝানো হয়েছে তেমনি নৈতিকতা ও আমলের ক্ষেত্রে বড় গোনাহও বুঝানো হয়েছে।
# যাক্কুম এক ধরনের গাছ। তিহামা এলাকায় এ গাছ দেখা যায়। এর স্বাদ হয় তিতা, গন্ধ বিরক্তিকর এবং ভাঙলে এর মধ্য থেকে এক ধরনের দুধের মতো পদার্থ বের হয় যা গায়ে লাগলে গা ফুলে ওঠে ও ফোস্কা পড়ে।

১-৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
সুরা: আল-ওয়াক্বিয়া

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলােচনা : আল ওয়াকিয়া-কেয়ামতের ঘটনা, এটি সূরার নামও এবং এর আলােচ্য বিষয়ের আভাসদানকারী শিরােনামও। এই মক্কী সূরায় আলােচিত প্রথম বিষয়টি হচ্ছে আখেরাতে পুনরুত্থানের ঘটনা। আখেরাতের পুনরুত্থানে সন্দেহ পােষণকারী মােশরেক ও কোরআন অবিশ্বাসীদের নিম্নোক্ত উক্তির জবাবে এ বিষয়টির অবতারণা করা হয়েছে, ‘আমরা যখন মারা যাবাে এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হয়ে যাবে, তখন কি আবার আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা পুনরুজ্জীবিত হবাে?’ এ কারণেই কেয়ামতের বিবরণ দিয়ে সুরা শুরু হয়েছে। এখানে কেয়ামতের বিবরণ এমনভাবে দেয়া হয়েছে যে, তা সকল সন্দেহ নিরসন করে, সকল বিবাদ দূর করে এবং এ ব্যাপারে অকাট্য ও সুদৃঢ় মনােভাব ব্যক্ত করে। ‘যখন কেয়ামতের ঘটনাটা ঘটবে, যার বাস্তবতা সম্পর্কে কোনাে সন্দেহ নেই।…’ এখানে এই দিনের ঘটনাবলী থেকে শুধু সেই ঘটনা কয়টির উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাকে অন্য সকল দিন থেকে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দিন হিসাবে চিহ্নিত করে। এদিনে মানুষের ধ্যান ধারণা ও পৃথিবীর অবস্থা পাল্টে যাবে, ভয়ংকর আলােড়ন ও বিভীষিকার ফলে পৃথিবীর ভূমির এবং তার সম্পদ ও মূল্যবােধের বিরাট পরিবর্তন ঘটবে। ৩-৬ ও তৎপরবর্তী আয়াতে এই পরিবর্তনের বিবরণ দেয়া হয়েছে। যেমন, ‘এ ঘটনা নীচু করে দেবে, উঁচু করে দেবে, যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী।’ এরপর তিন শ্রেণীর মানুষের পরিণতি সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে- অগ্রবর্তী, ডান দিকের ও বাম দিকের লােকেরা। এই তিন শ্রেণীর লােকেরা যথাক্রমে যে নেয়ামত ও আযাব ভােগ করবে, তার এতাে বিস্তৃত বিবরণ দেয়া হয়েছে যে, ঘটনাটা একেবারে অবধারিত ও সন্দেহাতীতরূপে সত্য বলে মনে হয়। আর তার এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিবরণ চাক্ষুষ দর্শনের জন্যে উন্মুক্ত থাকবে। ফলে অস্বীকারকারীরা নিজেদের পরিণাম ও মােমেনদের পরিণাম স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এমনকি তাদের যন্ত্রণাদায়ক আযাবের বিবরণ দেয়ার পর ওখানেই এরূপ বলাবলি করা হবে যে, তারা ইতিপূর্বে সীমালংঘনকারী ছিলাে, তারা বার বার প্রতিজ্ঞা ভংগ করতাে… আযাবটাই বর্তমান, আর তাদের দুনিয়ার জীবনকে ঘৃণ্য এবং তাদের কুফরী ও দুনিয়ার জীবন অতীত, যার উল্লেখ কে অস্বীকৃতিকে বিকৃত বলে আখ্যায়িত করার জন্যে করা হচ্ছে। এখানে সূরার প্রথম পর্ব সমাপ্ত হয় এবং ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের আলােচনা বিশেষত আখিরাত ও পুনরুত্থানের আলােচনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। কেননা, আখেরাতই এ সুরার প্রধান আলােচ্য বিষয়। এই পর্বে আখেরাত সংক্রান্ত আলােচনা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় করা হয়েছে। মানুষ যে পরিবেশেই থাকুক এবং তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যে স্তরেরই হােক, এ পর্বের আয়াতগুলাে পড়লে তার কাছে মনে হবে আখেরাতের আলােচিত দৃশ্যগুলো তার অনুভূতি ও চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার আওতাধীন। মানুষের প্রথম আবির্ভাবটা দেখানাে হয়েছে এক ফোটা বীর্য থেকে, আর তাদের মুত্যু ও তাদের পরবর্তীতে তাদের স্থলে অন্যদের আবির্ভাবকে আখেরাতের পুনরুত্থানের প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। দুনিয়ার প্রথম জন্ম ও মৃত্যু কতাে সহজ স্বাভাবিক, তা সব মানুষের জানা আছে বলেই এটিকে আখেরাতে তাদের পুনর্জন্মের প্রমাণ হিসাবে দেখানাে হয়েছে। এ পর্যায়ে দুনিয়ার কৃষি কাজ ও ফসল উৎপাদনের দৃশ্যও তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, এটাও জীবন সৃষ্টির একটা রূপ। আল্লাহর হাতেই জীবন সৃষ্টির একচ্ছত্র ক্ষমতা নিহিত । তিনি ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে আদৌ কোনাে জীবন সৃষ্টি করতেন না এবং কোনাে ফল বা খাদ্য উৎপন্ন হতাে না। জীবনমাত্রেরই উৎপত্তি যে মিষ্টি পানির ওপর নির্ভরশীল, তারও বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই পানি আল্লাহর একক ইচ্ছা ও ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। তিনি মেঘমালা থেকে এই পানি বর্ষাণ। ইচ্ছা করলে তিনি এই পানিকে এমন লবণাক্ত ও বিস্বাদ বানিয়ে দিতে পারতেন, যা থেকে কোনাে জীবনের উদ্ভব হয় না এবং যা জীবনের অনুকুল ও উপযােগী নয়। এখানে দেখানাে হয়েছে আগুনের দৃশ্যও। মানুষের ব্যবহৃত এ আগুনের উৎস হচ্ছে বৃক্ষ। আগুনের উল্লেখ হওয়া মাত্রই মানুষের অনুভূতি সচকিত হয়ে ওঠে এবং আখেরাতের সেই আগুনকে তাদের মনে পড়ে যায়, যা নিয়ে তারা সন্দিহান ছিলাে। এ সবই মানুষের নিত্যকার সুপরিচিত জিনিসের বাস্তব দৃশ্য । এগুলাে তাদের হৃদয়কে স্পর্শ এবং তারা এ সবের পশ্চাতে আল্লাহর হাত রয়েছে বলে অনুভব করে। এ সব জিনিস আল্লাহ সৃষ্টি করেন এবং তিনিই এগুলাের তদারক করেন। এই পর্বে কুরআন নিয়েও আলােচনা করা হয়েছে। এই কোরআনই তাদের কেয়ামতের ঘটনা অবহিত করে। কাফেররা কেয়ামতের সত্যতায় যখন সন্দেহ পােষণ করে, তখন সে নক্ষত্রের অবস্থান স্থলসমূহের শপথ করে। এই শপথ যে অত্যন্ত গুরুতর তাও সে জানায়। শপথ করে সে জানায় যে, কোরআন অত্যন্ত মহিমান্বিত গ্রন্থ, যাকে পবিত্র ব্যক্তিরা ছাড়া স্পর্শ করতে পারে না এবং তা বিশ্ব প্রভুর নাযিল করা গ্রন্থ। সবার শেষে মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার সময়কার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায়। মানুষের আত্মা যখন কণ্ঠনালীতে এসে পৌছে, মৃত্যুমুখী মানুষ যখন পার্থিব জীবনের শেষ প্রান্তে পদার্পণ করে, তখন সবাই অসহায় দর্শক হয়ে তার পাশে অবস্থান করে। তারা না পারে তার কোনাে সাহায্য করতে না পারে তার ভেতরে ও বাইরে কী হচ্ছে তা জানতে। একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার ওপর সে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মৃত্যুর পূর্ব মুহর্তে। একমাত্র সেই দেখতে পায় তার গন্তব্যের পথ। সে যা দেখতে পায় তা সম্পর্কে কাউকে কিছু বলা তাে দূরের কথা, ইংগিতও সে করতে পারে না। অতপর ওহীর গুণের অকাট্যতা পুনরায় ঘােষণা ও মহান স্রষ্টা আল্লাহর তাসবীহের মধ্য দিয়ে সূরার সমাপ্তি টানা হয়েছে। এভাবে সূরার সূচনা ও সমাপ্তির মধ্যে পূর্ণতম যােগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। এবার সূরার তাফসীরে মনােনিবেশ করা যাক।

ফী জিলালিল কুরআন:

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যখন কেয়ামতের ঘটনা ঘটবে, যে ঘটনার সত্যতায় কোনােই সন্দেহ নেই, যে ঘটনা নীচু করবে ও উচু করবে, যখন পৃথিবী প্রবল জোরে কম্পিত হবে, পাহাড় পর্বত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে, অতপর তা ধূলিকণায় পরিণত হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে।” সূরাটা এভাবে শুরু করার উদ্দেশ্য যে এই ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন, তা সুস্পষ্ট। বিশেষত এতে এমন একটা বাচনভংগি ব্যবহৃত হয়েছে, যা এই ভীতি প্রদর্শনের উদ্যোগকে আরাে শাণিত করে তােলে এবং তাকে সূরার বক্তব্যের সাথে অধিকতর সমন্বিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তােলে। সূরার প্রারম্ভিক ছয়টি আয়াতে দুবার করে যখন অব্যয়টি ব্যবহৃত হয়েছে, অথচ এরপর তখন কী হবে, সেটা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, যখন কেয়ামতের ঘটনা ঘটবে’…. কিন্তু কেয়ামতের ঘটনা ঘটার সময় কী হবে, তা না বলে পুনরায় একই অব্যয় ব্যবহার করে বলা হয়েছে, যখন পৃথিবী প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে…’ এখানেও বলা হয়নি যে, পৃথিবী প্রকম্পিত হওয়ার পর কী হবে। এ দ্বারা এই ধারণা দেয়া হয়েছে যে, এই ভয়ংকর ঘটনার পর যা ঘটবে, তা এতােই ভয়াবহ যে, ভাষায় বর্ণনা করা দুসাধ্য। এই বিশেষ বাচনভংগিটি সূরার প্রারম্ভে অংকিত বিভীষিকাময় দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল ওয়াকেয়া শব্দটির গুরুগম্ভীর ধ্বনাত্মক ব্যঞ্জনা এবং এর অর্থ প্রত্যেক শ্রোতার মনে এই অনুভূতি বদ্ধমূল করে দেয় যেন একটা প্রকান্ড ভারী বস্তু ওপর থেকে মাটিতে পড়ে থেমে গেলাে এবং তা আর গড়ালাে না বা দূরে সরে গেলাে না।। এরপর এই প্রকান্ড ভারী বস্তুর পতন ও অবস্থান থেকে যেন প্রত্যক্ষ করা হয় যে, তার পতন দ্বারা একটা কম্পন ও আলােড়ন সৃষ্টি হবে, তাই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, যে ঘটনা নীচু করে ও উচু করে। বস্তুত কেয়ামতের ঘটনা এমন বহু জিনিসকে উর্দ্ধে তুলে ধরবে, যা দুনিয়ায় থাকাকালে নীচু ও অধপতিত ছিলাে, আবার এমন বহু জিনিসকে তা অধোপতিত করবে, যা পৃথিবীতে খুবই উঁচু ও উন্নত ছিলাে। পৃথিবীতে অনেক কিছুর অবমূল্যায়ন হয়, কিন্তু আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় তার সঠিক মাপ নির্ণয় করা হবে। এরপর সেই বিভীষিকা নেমে আসে পৃথিবীতে, যা মানুষের অনুভূতি অনুসারে স্থিতিশীল ও অবিচল। সহসা তা কাপতে বা দুলতে আরম্ভ করবে। এই কাপন বা দুলুনি কেয়ামতের ঘটনার সাথে সংগতিপূর্ণ। অতপর পাহাড় পর্বতগুলাে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে থাকবে একই কেয়ামতের ঘটনার অংশ হিসাবে এবং তা ধূলিকণার মতাে উড়ে যেতে থাকবে। বস্তুত পৃথিবীর এই কাঁপন ও দোলন এবং পাহাড় পর্বতের চূর্ণ হয়ে উড়ে যাওয়ার মতাে ভয়াবহ দৃশ্য কেয়ামতের দৃশ্য ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আর আখেরাত অস্বীকারকারীরা এবং আল্লাহর সাথে শরীককারীরা, যারা এই ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন হবে এবং তার আলামত পৃথিবীতে ও পাহাড়ে এভাবে দৃষ্টিগােচর হতে থাকবে, তাদের মতাে অজ্ঞ ও গোয়ার আর কে হতে পারে। সূরার এরূপ সূচনা মানবসত্ত্বায় শিহরণ তােলে, তার চেতনায় ভীতির সঞ্চার করে এবং যে ঘটনাকে কাফের ও মোশরেকরা অস্বীকার করে তার সম্পর্কে বিশ্বাস গড়ে তােলে। এভাবে কেয়ামতের ঘটনার প্রথম দৃশ্যের সমাপ্তি ঘটে। আমরা তার আলামত দেখতে পাই উথান ও পতনে, মানুষের ধ্যান ধারণা ও মূল্যবােধে এবং তাদের সর্বশেষ পরিণতিতে।

ফী জিলালিল কুরআন:

*আল্লাহর ঘনিষ্ঠজনদের বিশেষ পুরস্কার : ‘আর তােমরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। ডান পাশের লােকেরা…’ কোরআনের অন্যত্র যেমন দুই ধরনের লােকের উল্লেখ পাওয়া যায়, এখানে তার বিপরীত তিন ধরনের লােকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে ডান দিকের লােকদের কথা। তবে তাদের বিবরণ না দিয়ে কেবল প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত থাকা হয়েছে। অনুরূপ বাম দিকের লােকদের ব্যাপারেও কেবল প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত থাকা হয়েছে। অতপর তৃতীয় শ্রেণীটির উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হচ্ছে অগ্রবর্তী শ্রেণী। তাদের কথা উল্লেখ করে তাদের গুণেই তাদের গুণান্বিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অগ্রবর্তীরা অগ্রবর্তীই।’ অর্থাৎ তাদের চেনার জন্যে একথা বলাই যথেষ্ট যে, তারা অগ্রবর্তী। তাদের আর কোনাে বিশেষণে বিশেষিত করার প্রয়ােজন নেই। তাই আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা কিরূপ, তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে এর অব্যবহিত পরেই। বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। তারা নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে থাকবে। সেখানে শুধু শান্তি আর শান্তির বাণীই তারা শুনতে পাবে।’ অগ্রবর্তীদের সর্বপ্রধান পুরস্কার স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘তারা আল্লাহর ঘনিষ্ঠতম।’ তার পরে উল্লেখ করা হয়েছে জান্নাতের কথা। কেননা, নেয়ামতে পরিপূর্ণ সব কটি বেহেশত একত্রিত হয়েও আল্লাহর নৈকট্যের সমান হতে পারে না। এখানে তাদের পরিচয় দেয়া হয়েছে। এই নৈকট্যলাভকারী কারা? বলা হয়েছে যে, ‘তারা হচ্ছে, ‘প্রথম সময়কার একদল এবং শেষের দিককার মুষ্টিমেয় কিছু লােক।’ অর্থাৎ তারা সীমিত সংখ্যক উকৃষ্টতম ব্যক্তি। প্রথম দিককার লােকদের মধ্যে তাদের সংখ্যা বেশী এবং পরবর্তীদের মধ্যে কম। এই প্রথম দিককার ও ‘শেষের দিককার লােক কারা, সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। প্রথম মত এই যে, প্রথম দিককার লােক’ হলাে পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদের মধ্যকার প্রথম ঈমান আনয়নকারী সর্বোচ্চ মর্যাদাবান ব্যক্তিরা। আর শেষের দিককার ব্যক্তিরা শেষ নবীর আমলে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ও কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় নিপতিত ব্যক্তিবর্গ। দ্বিতীয় মত এই যে, প্রথম ও শেষ ব্যক্তিরা মুহাম্মদ(স.)-এর উম্মতেরই প্রথম যুগের ও শেষ যুগের লােকজন। ইবনে কাসীরের মতে শেষােক্ত মতই অগ্রগণ্য। তিনি এই মতের পক্ষে হাসান ও ইবনে সিরীনের বক্তব্যও উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন, হাসান এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেছেন, সাবিকূন বা অগ্রবর্তীরা তাে অতীত হয়েই গেছে। এখন আমাদের প্রার্থনা এই যে, হে আল্লাহ তায়ালা, আমাদের ডান দিকের লােকদের অন্তর্ভুক্ত করাে। অপর বর্ণনা অনুযায়ী হাসান বলেছেন, প্রথম দিককার লােকেরা বলতে এই উম্মতের অতীত ব্যক্তিদেরকে বুঝানাে হয়েছে। আর ইবনে সিরীন বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী লােকেরা সবাই প্রথম দিককার’ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবার আশা পোষণ করতাে। অতপর তাদের জন্যে নির্ধারিত পুরস্কারের বিবরণ দেয়া হয়েছে, যা স্বভাবতই কল্পনার আওতাভুক্ত, কিন্তু এ ছাড়া আরাে কিছু পুরস্কার রয়েছে, যা অকল্পনীয় এবং বেহেশতে গিয়েই তারা তার কথা জানতে পারবে। সেগুলাে এত উন্নতমানের যে, তা ইতিপূর্বে কেউ দেখেওনি, শোনেওনি এবং কল্পনাও করেনি। ‘মূল্যবান ধাতব পদার্থ খচিত খাটের ওপর তারা থাকবে। তার ওপর হেলান দিয়ে মুখােমুখি বসে থাকবে।’ তাদের কোনাে চিন্তা ভাবনা থাকবে না, ‘নেয়ামতের প্রাচুর্যের মধ্যে তারা আনন্দে বিভাের থাকবে, সেসব নেয়ামত কখনাে কমবে না বা শেষ হবে না, পরস্পরের মুখােমুখি হয়ে তারা গল্পগুজবে ব্যস্ত থাকবে। তাদের সামনে দিয়ে চির তরুণ বালকেরা ঘুরতে থাকবে।’ অর্থাৎ সময়ের আবর্তনে তাদের যৌবন ও সৌন্দর্য ব্যাহত হবে না। পানপাত্র, সুরাহী ও পেয়ালাসমূহ নিয়ে অর্থাৎ চমকার স্বচ্ছ পানীয়তে পরিপূর্ণ পাত্র নিয়ে তারা ঘুরবে এবং তা পান করাবে। ‘যা পান করলে তাদের শিরপীড়া হবে না এবং তারা বিকারগ্রন্তও হবে না।’ বস্তুত তারা এই আনন্দ থেকে কখনাে বিচ্ছিন্ন হবে না এবং তা কখনাে ফুরিয়ে যাবে না। সেখানে সব কিছু চিরস্থায়ী। ‘তাদের পছন্দমতাে ফুল নিয়ে ও রুচিমতাে পাখির গােশত নিয়ে তারা ঘুরবে।’ বস্তুত সেখানে কোনাে কিছু নিষিদ্ধ থাকবে না এবং রুচি বহির্ভূত কোনাে খাদ্য বা পানীয় সরবরাহ করা হবে না। সেখানে থাকবে আনতনয়না একদল হুর আবৃত মুক্তার ন্যায়। অর্থাৎ কেউ তাদের দিকে কখনাে তাকায়ওনি এবং কেউ তাদের স্পর্শ করেনি। এ দ্বারা এই হুর কতাে উৎকৃষ্ট সেটাই বুঝানাে হয়েছে। ‘আর এসবই তাদের কাজের প্রতিদান স্বরূপ।’ অর্থাৎ এসবই তাদের সৎ কাজের পুরস্কার। দুনিয়ার সব নেয়ামতেই ত্রুটি বিচ্যুতি ও অসম্পূর্ণতা থাকতাে, কিন্তু আখেরাতের এসব নেয়ামত সর্বাংগীণ সুন্দর ও উৎকৃষ্টতম। এরপর তারা পরম শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে বেহেশতে। কোনাে রকমের শোরগােল তাদের কানে আসবে না, কোনাে বাদানুবাদ, ঝগড়াঝাটি বা তর্কবিতর্ক কিছুই নয়। তারা সেখানে কোনাে বাজে কথা বা গুনাহর কথা শুনবে না, কেবলই শুনবে শান্তি শান্তি। বস্তুত সেখানে তাদের গােটা জীবনই শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকবে। ফেরেশতা তাদের সালাম দেবে। নিজেরাও সালামের আদান প্রদান করবে। আল্লাহও সালাম দেবেন। এভাবে গােটা পরিবেশে বিরাজ করবে অনাবিল সর্বাত্মক শান্তি।

ফী জিলালিল কুরআন:

*সাধারণ নাজাতপ্রাপ্তদের পুরস্কার : আল্লাহর নির্বাচিত দলটি অর্থাৎ প্রথম ঈমান আনয়নকারী আল্লাহর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের দলটি সম্পর্কে আলােচনার পর তার পরবর্তী দল অর্থাৎ ডান দিকের দল সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। ‘ডান দিকের লােকেরা। ডান দিকের লােকেরা কারা? তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে (২৭-৪০) সূরার শুরুতে যে ডান দিকের লােকদের কথা সংক্ষেপে আলােচিত হয়েছে, এখানে তাদের বিষয় বিস্তারিতভাবে আলােচিত হচ্ছে। তাদের জন্যে কী কী নেয়ামত নির্দিষ্ট রয়েছে, সেটা আল্লাহর ঘনিষ্ঠজনদের পরেই এখানে বিশদ আলােচিত হচ্ছে। এখানে তাদের সম্পর্কে একইভাবে কৌতূহল, বিস্ময় ও গুরুত্ব বুঝাবার জন্যে প্রশ্ন করা হচ্ছে, ‘ডান দিকের লােকেরা কারা? এদের জন্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুগত নেয়ামত নির্দিষ্ট রয়েছে। এই নেয়ামতের যে বিবরণ এখানে দেয়া হয়েছে, তাতে কিছুটা বেদুইন জীবনসুলভ রূঢ়তা বিদ্যমান। বেদুইনরা নিজেদের অভিরুচি ও অভিজ্ঞতা অনুসারে সুখ, আনন্দ ও ভােগবিলাস সম্পর্কে যে ধারণা পােষণ করে, সেই ধারণা অনুসারে তাদের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে’… বদরিকা বৃক্ষে কাঁটা থাকে, কিন্তু এখানে তাকে কাটামুক্ত গাছ হিসাবে দেখানাে হয়েছে। এবং কাঁটাহীন ‘তালহ’ বৃক্ষে। ‘তালহ’ হেজাযের এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছ। কিন্তু এটি এখানে অনায়াসে খাওয়ার যােগ্য করে দেখানাে হয়েছে। ‘আর দীর্ঘ ছায়ায় এবং প্রবহমান পানিতে’- এখানে যে কয়টির উল্লেখ করা হলাে, এর সব কয়টিই বেদুইনদের কাছে আরামদায়ক, আনন্দদায়ক, পছন্দনীয় ও আকাংখিত জিনিস। ‘আর বহু ফলমূল, যা কখনাে বন্ধ ও নিষিদ্ধ হবার নয়।’ বেদুইনদের পরিচিত কতিপয় জিনিস নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার পর অনির্দিষ্টভাবে ফলমূলের উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে সর্বপ্রকারের ফলমূল বুঝানাে হয়েছে। ‘উঁচু উঁচু বিছানাসমূহ’ বিছানা স্বর্ণখচিত বা মসৃণ কিনা সেটা বলা হয়নি। কেননা, বেদুইন অভিরুচি অনুসারে বিছানা উঁচু হওয়াই যথেষ্ট। উঁচু হওয়াটা দু’রকমের হতে পারে। বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক। তবে এ দুটির একটি অপরটির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। অবস্থানের দিক দিয়ে উঁচু এবং গুণগতভাবে পবিত্র পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত হলে উভয় দিক দিয়েই তা উচু হয়ে যায়। কেননা, ভূপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে অবস্থিত জিনিস ভূপৃষ্ঠের ময়লা আবর্জনা থেকে অধিকতর মুক্ত হয়। আর আধ্যাত্মিকভাবে উঁচু হলে তা অপবিত্রতা থেকে অধিকতর নিরাপদ হয়। এ জন্যে বিছানার উল্লেখের অব্যবহিত পরই এ বিছানার অধিবাসী স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমি তাদের যথাযথ ভাবে সৃষ্টি করেছি।’ প্রাথমিকভাবে সৃষ্ট স্ত্রীরা হচ্ছে হুর। আর পুনঃসৃষ্ট স্ত্রী হলাে যুবতীরূপে পুনরুত্থিত দুনিয়ার পুণ্যবতী স্ত্রীরা। ‘আমি তাদের কুমারী বানিয়েছি।’ অর্থাৎ কেউ কখনাে তাদের স্পর্শ করেনি। আমি তাদের স্বামী সােহাগিনী ও সমবয়সিনী তরুণী বানিয়েছি। তার ডান দিকের লােকদের জন্যে নির্দিষ্ট, যাতে উঁচু উঁচু বিছানার সাথে সংগতিশীল হয়। এই ডান দিকের লােকেরা আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রাথমিক শ্রেণী ও পরবর্তী শ্রেণী। এই দুই শ্রেণীর মিলিত সংখ্যা প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী আল্লাহর ঘনিষ্ঠ জনদের চেয়ে বেশী। এর কারণ ইতিপূর্বে এই শব্দদ্বয়ের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছি।

ফী‌ জিলালিল কুরআন:

*বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্তদের করুণ পরিণতি : এরপর প্রসংগ আসছে বাম দিকের লােকদের। সূরার শুরুতে ‘এদের দুর্ভাগা দল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাম দিকের লােকেরা। কারা বামদিকের লােকেরা? তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে ও উত্তপ্ত পানিতে…'(৪১-৫৭) একদিকে ডান দিকের লােকদের জন্যে রয়েছে দীর্ঘ ছায়া এবং প্রবহমান পানি। অপরদিকে বাম দিকের লােকদের জন্যে রয়েছে বাম্প ও উত্তপ্ত পানি। তাদের জন্যে গােটা বায়ুমন্ডলই থাকবে উত্তপ্ত, যা লােমকুপ দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেহকে ভাজা ভাজা করে ফেলবে। সেখানকার পানি থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গরম। যা শরীরকে ঠান্ডাও করবে না, পিপাসাও নিবৃত্ত করবে না। বাম দিকের এই গােষ্ঠীর জন্যেও ছায়া আছে, তবে তা শ্বাসরােধক ধোঁয়ার ছায়া। আসলে এটা তামাশার ও বিদ্রপাত্মক ছায়া, যা ঠান্ডাও নয়, আরামদায়কও নয়। অর্থাৎ এটা এক ধরনের প্রাণহীন উত্তপ্ত ছায়া। এটা তাদের কৃতকর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও মানানসই কর্মফল। ‘নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে খুবই ভােগবিলাসী ছিল।’ ভােগবিলাসীদের জন্যে এই উত্তপ্ত পরিবেশ যে কী যন্ত্রণাদায়ক, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। ‘তারা ভয়ংকর অংগীকার ভংগের কাজে পুন পুন লিপ্ত হতাে।’ অংগীকার ভংগ করা একটা গুনাহ। এ দ্বারা এখানে আল্লাহর সাথে শরীক করা বুঝানাে হয়েছে। বান্দাদের আত্মার কাছ থেকে আল্লাহ তায়ালা যে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের এবং তাঁর একত্বে বিশ্বাসী থাকার অংগীকার নিয়েছিলেন, এখানে সেই দিকে ইংগিত করা হয়েছে। তারা বলতাে, আমরা মরে মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হওয়ার পরও কি পুনরুজ্জীবিত হবাে আর আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষেরাও হবে?’ ‘তারা বলতাে’ এই বাক্যটিতে কোরআন অতীতকালের ক্রিয়া ব্যবহার করেছে। এটাই কোরআনের বানানরীতি। যে দুনিয়ার জীবনে অবস্থানকালে বান্দাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে, তা যেন শেষ হয়ে গেছে, তাই অতীতে পরিণত হয়েছে। আর বর্তমান হচ্ছে এই আযাব ও এই দৃশ্যপট। দুনিয়া যেন অতীতের ফেলে আসা স্মৃতি। আর বর্তমানই হচ্ছে আখেরাত। এরপর কোরআন দুনিয়ার জীবনের কথা এমনভাবে উল্লেখ করছে, যাতে মোশরেকদের উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর হয়ে যায়। ‘তুমি বলাে, পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা সবাই একটি নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে একত্রিত হবে।’ বস্তুত এই শেষােক্ত দিনটিই কোরআনের ভাষায় বর্তমান ও দৃশ্যমান দিন। অতপর কাফেরদের জন্যে যে আযাব অপেক্ষা করছে, কোরআন পুনরায় তার বর্ণনা দিচ্ছে এবং ভােগবিলাসীদের আযাবের পূর্ণাংগ দৃশ্য তুলে ধরছে! অতঃপর ‘হে বিভ্রান্ত অবিশ্বাসীদের গােষ্ঠী, তোমরা যাক্কূম গাছ ভক্ষণ করবে।’ যাক্কুম গাছ কি, তা তাে কেউ জানে না। অন্য একটি সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যাক্কুম গাছ শয়তানের মাথার মতাে, কিন্তু শয়তানের মাথা কেউ দেখেনি। তবে অনুভব করা যায় যে, তা ভালাে নয়। তা হাড়া যাক্কুম শব্দের ধন্যাত্মক ব্যঞ্জনা থেকেও অনুভব হয়, এটা এতো কন্টকাকীর্ণ ও কষ্টদায়ক যে, কণ্ঠনালী তো দূরের কথা, তা স্পর্শ করতে গেলে হাত পর্যন্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। অথচ এর বিপরীতে রয়েছে মােমেনদের জন্যে বদরিকা ও তালহ বৃক্ষ। যাক্কুম শয়তানের মাথার মতাে জিনিস হওয়া সত্তেও তাদের তা ভক্ষণ করতে হবে এবং পেট পুরে ভক্ষণ করতে হবে। কেননা, প্রবল ক্ষুধা ও অসহনীয় কষ্ট তাদের তা ভক্ষণ করতে বাধ্য করবে। আর কাঁটার যন্ত্রণা তাদের গলা ভিজিয়ে মসৃণ করা ও পিপাসা মেটানাের জন্যে পানির কাছে যেতে বাধ্য করবে। অথচ এই পানি হবে এমন গরম যে, তা পিপাসা নিবৃত্ত করবে না। এই পানি তারা পান করবে সেই বিশেষ রােগে আক্রান্ত উটের মতাে, যা কোনােক্রমেই পিপাসা নিবৃত্ত হতে দেয় না। ‘এ হচ্ছে কর্মফল দিবসে তাদের আপ্যায়ন।’ আপ্যায়নে মানুষ তৃপ্তি ও প্রশান্তি বােধ করে, কিন্তু বাম দিকের লােকেরা এতে তৃপ্তি ও প্রশান্তি বােধ করবে না। যেদিন সম্পর্কে তারা সন্দেহ পােষণ করতো, জিজ্ঞাসাবাদ করতাে এবং কোরআনের এ সংক্রান্ত সংবাদে বিশ্বাস করতাে না। অনুরূপভাবে তারা আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত থাকতাে এবং কেয়ামতের দিনে এ জন্যে যে আযাব ভােগ করার হুমকি দেয়া হয়েছে তাকে ভয় পেতাে না। এখানে এসে কেয়ামতের দিনের বিবরণ দেয়া শেষ হয়েছে। সেই সাথে সমাপ্ত হয়েছে সূরার প্রথম পর্ব।

ফী জিলালিল কুরআন:

*হে মানবজাতি! চোখ মেলে একটু তাকাও : সূরার দ্বিতীয় পর্বে সামগ্রিকভাবে ইসলামী আকীদা গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে আখেরাত ও কেয়ামতের ওপর। এখানে দেখানাে হয়েছে মানুষের বিবেককে কোরআন কিভাবে সম্বােধন করে, কিভাবে ঈমানের সপক্ষে অকাট্য যুক্তি প্রদর্শন করে এবং কোমল ও সহজবােধ্য ভাষায় কিভাবে মানুষের অন্তরে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আকীদাগুলােকে বদ্ধমূল করে। মানুষের সুপরিচিত নৈমিত্তিক বড় বড় প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ মানুষকে কি শিক্ষা। দিতে চান এবং বিশ্বজগত সম্পর্কে তার মধ্যে কী পূর্ণাংগ ধ্যান ধারণা ও বিশ্বাস গড়ে তুলতে চান, সেটাই কোরআন স্পষ্ট করে দেয়। এ থেকে সে মানুষকে চিন্তা ও দৃষ্টির একটা পদ্ধতি শেখায়, তার আত্মা ও মনের জন্যে জীবনীশক্তি জোগায় এবং তার আবেগ অনুভূতিকে প্রেরণা ও চেতনায় উজ্জীবিত করে। যে প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত দেখেও মানুষ তার নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্যগুলাে উপলব্ধি করতে পারে না, তার ব্যাপারে কোরআন মানুষকে সচেতন করে দেয়। সে মানুষকে তার আপন সত্ত্বা সম্পর্কে এবং সেখানে যে বিস্ময়কর ও অলৌকিক কার্যাবলী সংঘটিত হয়, সে ব্যাপারেও চকিত করে তােলে। কোরআন মানুষকে শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা নিয়েই চিন্তা ভাবনা করতে বলে না। তাকে নিজের সত্ত্বা থেকে, নিজের নৈমিত্তিক জীবন থেকে এবং তার নিকটবর্তী সুপরিচিত প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অলৌকিক ঘটনাবলী, মােজেযা ও প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা গবেষণা করার নির্দেশ দেয় না, তাকে এমন কোনাে জটিল দর্শন, কঠিন বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান গবেষণা কিংবা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় নিয়ােজিত করে না, যা সবার পক্ষে বােঝা সম্ভব নয়। ইসলামী আকীদা ও আদর্শের অনুশীলন এবং এই আকীদা ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করে জীবন জগত সম্পর্কে যথার্থ ধ্যান ধারণা গঠনের লক্ষ্যে মানুষকে অনুরূপ কষ্টকর চিন্তা-গবেষণায় নিয়ােজিত করার সে পক্ষপাতী নয় । মানুষ নিজে যেমন আল্লাহর সৃষ্টি, তেমনি তার চারপাশের প্রাকৃতিক বস্তুসমূহও আল্লাহর অপার বিস্ময়কর সৃষ্টি নৈপুণ্যের নিদর্শন। মহান আল্লাহ যা কিছু তৈরী করেন তাতেই নিহিত রয়েছে অলৌকিকত্ব। এই মহাগ্রন্থ কোরআনও তার রচিত গ্রন্থ। তাই এই কোরআন মানুষকে তার সত্ত্বার অভ্যন্তরে এবং তার পারিপার্শ্বিক সৃষ্টিজগতে বিরাজমান অসংখ্য অলৌকিক জিনিসের কাছে নিয়ে যায়। মানুষের চির পরিচিত এসব অলৌকিক জিনিসকে সে প্রতিনিয়ত দেখলেও তার ভেতরের অলৌকিকত্ব উপলব্ধি করে না। দীর্ঘ দিনের পরিচিতির কারণেই প্রকৃতির কোথায় কোথায় অলৌকিক রহস্য রয়েছে, সে ব্যাপারে মানুষ উদাসীন। কোরআন তাকে এ সব জিনিসের অলৌকিকত্বের সন্ধান দিতে এবং এ সবের গুপ্ত রহস্য অবলােকন করাতে নিয়ে যায়। মানুষের নিজ সত্তায় এবং বিশ্ব প্রকৃতির পরতে পরতে ও কোণে কোণে যে অকল্পনীয় সৃষ্টি নৈপুণ্যের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, যে অভাবনীয় একত্বের রহস্য ও শাশ্বত প্রাকৃতিক বিধানের বার্তা নিহিত রয়েছে, সে সব অবলােকনের জন্যে কোরআন মানুষের চোখ খুলে দেয়। এ সব রহস্য ও নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ঈমান আকীদার প্রয়ােজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণ। অতপর তা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার সচেতন সত্ত্বায় ও স্বভাব প্রকৃতিতে সম্প্রসারিত হয়। সূরার এই পর্বে এভাবেই আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। এসব নিদর্শন মানুষের নিজ সত্ত্বায় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তার কৃষিকার্যে ও কৃষিপণ্যে, তাদের পানীয় পানিতে এবং তাদের ব্যবহৃত আগুনে। মানুষের নিত্য পরিচিত দৃশ্যমান বস্তুসমূহের মধ্যে এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে মামুলী জিনিস। সৃষ্টির নিদর্শনাবলী তুলে ধরার পর কিভাবে আবার এগুলাের ধ্বংস সাধিত হবে এবং কিভাবে দুনিয়ার জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়ে পরকালীন জীবনের সূচনা হবে, সে দৃশ্যও প্রদর্শন করা হয়েছে। পরকালীন জীবনের সূচনার সেই মুহূর্তটি প্রত্যেকের জীবনেই অবধারিত। তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনাে কৌশলই সফল হবে না। সকল প্রাণী সেই নতুন জগতে একত্রিত হবে এবং পরস্পরের মুখােমুখি হবে। তাদের অবস্থান করতে হবে সর্বশক্তিমানের সামনে। সেখানে কোনাে আড়াল থাকবে না এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে কোনাে চেষ্টা তদবীরেরও সুযােগ থাকবে না। কোরআন যে বাচনভংগি অবলম্বন করে মানুষের সাথে কথা বলেছে, স্বয়ং সেই বাচনভংগিই কোরআনের উৎসের সন্ধান দেয়। খােদ মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে এই একই উৎস থেকে। মানুষ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে, বিশ্ব-প্রকৃতি সেভাবেই জন্মলাভ করেছে। প্রকৃতির অতি নগণ্য ও অতি মামুলী উপাদান থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে জটিলতম এবং প্রকান্ডতম বস্তু ও প্রাণীর। জগত সৃষ্টির মূল উপাদান অণু পরমাণু এবং জীবন সৃষ্টির মূল উপাদান জীবকোষ- এ হচ্ছে এখনকার প্রচলিত ধারণা। এই অণুপরমাণু ও জীবকোষের ক্ষুদ্রতাই স্বয়ং একটা অলৌকিক ব্যাপার ও নিদর্শন স্বরূপ। প্রকৃতির ন্যায় কোরআনেও ক্ষুদ্র থেকে বৃহত কিছুতে উত্তরণের প্রক্রিয়া লক্ষণীয়। দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণাধীন সাধারণ ও নগ্ন পদার্থ সমূহকে কোরআন বিশালতম ইসলামী আকীদা বিশ্বাস ও প্রশস্ততম প্রাকৃতিক ধারণা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করে। প্রত্যেক মানুষই প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে চলেছে প্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বৃক্ষ, ফসল ও ফলমূলের জন্ম, পানি ও আগুনের ব্যবহার এবং মৃত্যুর দৃশ্য। ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী এমন কোন মানুষটি আছে, যে এসব দৃশ্য অবলােকন করে না। এমনকি কোনাে গিরিগুহায়ও যদি কেউ বাস করে, তবে সেও কোনাে না কোনাে শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়া, কোনাে না কোনাে গাছের চারার জন্ম নেয়া, পানির বর্ষণ, আগুনের প্রজ্বলন ও দহন এবং কোনাে কোনাে জীবের মৃত্যু বরণের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ না করে পারে না। প্রতিটি মানুষের পর্যবেক্ষণ করা এসব দৃশ্য থেকেই কোরআন মানুষের মনমগযে আল্লাহ তায়ালা, আখেরাত ও রেসালাত বিষয়ক আকীদা বিশ্বাস গঠন করে। কেননা সে সকল মানুষকে সকল পরিবেশেই সম্বােধন করে থাকে। আর এসব সাধারণ ও মামুলী দৃশ্যাবলীতে রয়েছে প্রকৃতির সবচেয়ে মূল্যবান তত্ত্ব ও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঐশী রহস্য। এসব প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে এক পর্যায়ে নক্ষত্রমন্ডলীর অবস্থানের উল্লেখও যুক্ত হয়েছে। এসব সহজ সরল জিনিস প্রত্যেক মানুষের সহজাত বিবেক ও চেতনাকে সম্বােধন করে। আর এগুলাে পৃথিবীর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বড় বড় বৈজ্ঞানিকের চিন্তা গবেষণার খােরাক যােগাতে থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় নক্ষত্রমন্ডলীর অবস্থান অর্থ মহাজাগতিক প্রকৌশল। মানব জীবনের উন্মেষ হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভেদ্য রহস্য। উদ্ভিদ জীবনের উন্মেষ প্রাণী জীবনের মতােই সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনা। পানি হচ্ছে জীবনের উৎস। আর আগুন হচ্ছে মানব সভ্যতার বিনির্মাণকারী অলৌকিক বস্তু। আকীদা বিশ্বাস গঠনের ক্ষেত্রে এ হচ্ছে আল্লাহর অনুসৃত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া। প্রাকৃতিক পদার্থসমূহের মধ্য থেকে প্রাথমিক পদার্থগুলােকে প্রথমে উল্লেখ করা, অতপর তা থেকে সহজ ও সাবলীল ভংগিতে ইসলামী আকীদা বিশ্বাস গড়ে তােলা। জগত সৃষ্টিতেও আল্লাহ তায়ালা এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। প্রকৃতির প্রাথমিক পদার্থগুলাে দিয়ে গােটা জগতকে সৃষ্টি করেন। কিন্তু মানুষ আকীদা-বিশ্বাস গড়ে তােলার কাজে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে না। সে এ কাজ করতে গিয়ে প্রাথমিক পদার্থসমূহের দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। আর করলেও এমন সহজ সরল ও সাবলীল ভংগিতে করে না; বরং বিষয়টিকে একটি জটিল দার্শনিক তত্ত্বের রূপ দিয়ে ফেলে। ফলে এ পদ্ধতি একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষ ছাড়া সর্বসাধারণের সাথে বলার যােগ্য থাকে না। উভয় ক্ষেত্রে কারিগরির নমুনা একই এবং তা সুস্পষ্ট। অথচ উভয়ের মধ্যে কতাে প্রভেদ!

Leave a Reply