Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৫০) [*‌‌সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জান,তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা?:- *পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করতে পারে কী?:- *মৃত্যু পথযাত্রীর বিদায়ী প্রাণবায়ূকে ফিরিয়ে আন না কেন?:-] www.motaher21.net সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া” পারা:২৭ ৫৭-৯৬ নং আয়াত:- আয়াতের ব্যাখ্যা:- ১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৫০)
[*‌‌সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জান,তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা?:-
*পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করতে পারে কী?:-
*মৃত্যু পথযাত্রীর বিদায়ী প্রাণবায়ূকে ফিরিয়ে আন না কেন?:-]
www.motaher21.net
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”
পারা:২৭
৫৭-৯৬ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
২) তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
৩) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
৪) তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৭
نَحۡنُ خَلَقۡنٰکُمۡ فَلَوۡ لَا تُصَدِّقُوۡنَ ﴿۵۷﴾
আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করছ না?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৮
اَفَرَءَیۡتُمۡ مَّا تُمۡنُوۡنَ ﴿ؕ۵۸﴾
তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে শুক্র তোমরা নিক্ষেপ করো।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৫৯
ءَاَنۡتُمۡ تَخۡلُقُوۡنَہٗۤ اَمۡ نَحۡنُ الۡخٰلِقُوۡنَ ﴿۵۹﴾
তা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি তোমরা করো, না তার স্রষ্টা আমি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬০
نَحۡنُ قَدَّرۡنَا بَیۡنَکُمُ الۡمَوۡتَ وَ مَا نَحۡنُ بِمَسۡبُوۡقِیۡنَ ﴿ۙ۶۰﴾
আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই–
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬১
عَلٰۤی اَنۡ نُّبَدِّلَ اَمۡثَالَکُمۡ وَ نُنۡشِئَکُمۡ فِیۡ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۶۱﴾
তোমাদের আকার আকৃতি পাল্টে দিতে এবং তোমাদের অজানা কোন আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করতে (আমি অক্ষম নই)।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬২
وَ لَقَدۡ عَلِمۡتُمُ النَّشۡاَۃَ الۡاُوۡلٰی فَلَوۡ لَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۶۲﴾
নিজেদের প্রথমবার সৃষ্টি সম্পর্কে তোমরা জান। তবুও কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৩
اَفَرَءَیۡتُمۡ مَّا تَحۡرُثُوۡنَ ﴿ؕ۶۳﴾
তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৪
ءَاَنۡتُمۡ تَزۡرَعُوۡنَہٗۤ اَمۡ نَحۡنُ الزّٰرِعُوۡنَ ﴿۶۴﴾
তোমরা কি ওকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৫
لَوۡ نَشَآءُ لَجَعَلۡنٰہُ حُطَامًا فَظَلۡتُمۡ تَفَکَّہُوۡنَ ﴿۶۵﴾
আমি ইচ্ছা করলে অবশ্যই একে টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত করতে পারি, তখন হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে তোমরা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৬
اِنَّا لَمُغۡرَمُوۡنَ ﴿ۙ۶۶﴾
‘নিশ্চয় আমরা দায়গ্ৰস্ত হয়ে পড়েছি,’
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৭
بَلۡ نَحۡنُ مَحۡرُوۡمُوۡنَ ﴿۶۷﴾
বরং ‘আমরা হৃত-সর্বস্ব হয়ে পড়েছি।’
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৮
اَفَرَءَیۡتُمُ الۡمَآءَ الَّذِیۡ تَشۡرَبُوۡنَ ﴿ؕ۶۸﴾
তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা চিন্তা করেছ কি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৬৯
ءَاَنۡتُمۡ اَنۡزَلۡتُمُوۡہُ مِنَ الۡمُزۡنِ اَمۡ نَحۡنُ الۡمُنۡزِلُوۡنَ ﴿۶۹﴾
তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭০
لَوۡ نَشَآءُ جَعَلۡنٰہُ اُجَاجًا فَلَوۡ لَا تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۷۰﴾
আমি ইচ্ছা করলে ওটা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না কেন?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭১
اَفَرَءَیۡتُمُ النَّارَ الَّتِیۡ تُوۡرُوۡنَ ﴿ؕ۷۱﴾
তোমরা যে আগুন জ্বালিয়ে থাক, তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭২
ءَاَنۡتُمۡ اَنۡشَاۡتُمۡ شَجَرَتَہَاۤ اَمۡ نَحۡنُ الۡمُنۡشِـُٔوۡنَ ﴿۷۲﴾
তোমরা সৃষ্টি করো, না তার সৃষ্টিকর্তা আমি?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৩
نَحۡنُ جَعَلۡنٰہَا تَذۡکِرَۃً وَّ مَتَاعًا لِّلۡمُقۡوِیۡنَ ﴿ۚ۷۳﴾
আমি সেটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার উপকরণ এবং মুখাপেক্ষীদের জন্য জীবনোপকরণ বানিয়েছি।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৪
فَسَبِّحۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الۡعَظِیۡمِ ﴿٪ؓ۷۴﴾
সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৫
فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِمَوٰقِعِ النُّجُوۡمِ ﴿ۙ۷۵﴾
আমি শপথ করছি নক্ষত্র রাজির অস্তাচলের।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৬
وَ اِنَّہٗ لَقَسَمٌ لَّوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عَظِیۡمٌ ﴿ۙ۷۶﴾
এটা এক অতি বড় শপথ যদি তোমরা বুঝতে পার।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৭
اِنَّہٗ لَقُرۡاٰنٌ کَرِیۡمٌ ﴿ۙ۷۷﴾
নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৮
فِیۡ کِتٰبٍ مَّکۡنُوۡنٍ ﴿ۙ۷۸﴾
একখানা সুরক্ষিত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৭৯
لَّا یَمَسُّہٗۤ اِلَّا الۡمُطَہَّرُوۡنَ ﴿ؕ۷۹﴾
যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা সম্পর্শ করে না ।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮০
تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۸۰﴾
এটা বিশ্ব-জাহানের রবের নাযিলকৃত।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮১
اَفَبِہٰذَا الۡحَدِیۡثِ اَنۡتُمۡ مُّدۡہِنُوۡنَ ﴿ۙ۸۱﴾
এরপরও কি তোমরা এ বাণীর প্রতি উপেক্ষার ভাব প্রদর্শন করছো?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮২
وَ تَجۡعَلُوۡنَ رِزۡقَکُمۡ اَنَّکُمۡ تُکَذِّبُوۡنَ ﴿۸۲﴾
এ নিয়ামতে তোমরা নিজেদের অংশ রেখেছো এই যে, তোমরা তা অস্বীকার করছো?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৩
فَلَوۡ لَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الۡحُلۡقُوۡمَ ﴿ۙ۸۳﴾
তাহলে মৃত্যু পথযাত্রীর প্রাণ যখন কণ্ঠনালীতে উপনীত হয়।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৪
وَ اَنۡتُمۡ حِیۡنَئِذٍ تَنۡظُرُوۡنَ ﴿ۙ۸۴﴾
এবং তখন তোমরা তাকিয়ে থাক।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৫
وَ نَحۡنُ اَقۡرَبُ اِلَیۡہِ مِنۡکُمۡ وَ لٰکِنۡ لَّا تُبۡصِرُوۡنَ ﴿۸۵﴾
সে সময় তোমাদের চেয়ে আমিই তার অধিকতর নিকটে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা ।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৬
فَلَوۡ لَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ غَیۡرَ مَدِیۡنِیۡنَ ﴿ۙ۸۶﴾
অতঃপর যদি তোমারা হিসাব নিকাশ ও প্রতিফলের সম্মুখীন না হও।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৭
تَرۡجِعُوۡنَہَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۸۷﴾
আর নিজেদের এ ধারণার ব্যাপারে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে মৃত্যু পথযাত্রীর বিদায়ী প্রাণবায়ূকে ফিরিয়ে আন না কেন?
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৮
فَاَمَّاۤ اِنۡ کَانَ مِنَ الۡمُقَرَّبِیۡنَ ﴿ۙ۸۸﴾
মৃত সেই ব্যক্তি যদি মুকাররাবীনদের কেউ হয়ে থাকে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৮৯
فَرَوۡحٌ وَّ رَیۡحَانٌ ۬ۙ وَّ جَنَّتُ نَعِیۡمٍ ﴿۸۹﴾
তাহলে তার জন্য রয়েছে আরাম-আয়েশ, উত্তম রিযিক এবং নিয়ামতে ভরা জান্নাত।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯০
وَ اَمَّاۤ اِنۡ کَانَ مِنۡ اَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ۙ۹۰﴾
আর সে যদি ডান দিকের লোক হয়ে থাকে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯১
فَسَلٰمٌ لَّکَ مِنۡ اَصۡحٰبِ الۡیَمِیۡنِ ﴿ؕ۹۱﴾
তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হয় এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯২
وَ اَمَّاۤ اِنۡ کَانَ مِنَ الۡمُکَذِّبِیۡنَ الضَّآلِّیۡنَ ﴿ۙ۹۲﴾
আর সে যদি অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের কেউ হয়ে থাকে।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯৩
فَنُزُلٌ مِّنۡ حَمِیۡمٍ ﴿ۙ۹۳﴾
তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফূটন্ত গরম পানি।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯৪
وَّ تَصۡلِیَۃُ جَحِیۡمٍ ﴿۹۴﴾
এবং জাহান্নামে ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯৫
اِنَّ ہٰذَا لَہُوَ حَقُّ الۡیَقِیۡنِ ﴿ۚ۹۵﴾
এ সবকিছুই অকাট্য সত্য।
সূরা:৫৬:”আল-ওয়াক্বিয়া”-৯৬
فَسَبِّحۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الۡعَظِیۡمِ ﴿٪۹۶﴾
অতএব, তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।

৫৭-৯৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
(৫৭)# এখান থেকে ৭৪ আয়াতে যে যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে তাতে একই সাথে আখেরাত ও তাওহীদ উভয় বিষয়েই যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। মক্কার মানুষেরা যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার এ দু’টি মৌলিক বিষয়ের প্রতিবাদ করেছিলো তাই এখানে এমনভাবে যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যা দ্বারা আখেরাত প্রমাণিত হয় এবং তাওহীদের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
# আমিই যে তোমাদের রব ও উপাস্য এবং আমি পুনরায় তোমাদের সৃষ্টি করতে পারি এ কথা মেনে নেয়া।
(৫৮/৫৯)# ছোট্ট এ বাক্যে মানুষের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য সব জিনিস বাদ দিয়ে মানুষ যদি শুধু এই একটি বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতো যে, সে নিজে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কুরআনের একত্ববাদী শিক্ষায়ও তার কোন সন্দেহ-সংশয় থাকতো না, তার আখেরাত সম্পর্কিত শিক্ষায়ও কোন সন্দেহ-সংশয় থাকতো না। মানুষের জন্ম পদ্ধতি তো এছাড়া আর কিছুই নয় যে, পুরুষ তার শুক্র নারীর গর্ভাশয়ে পৌঁছে দেয় মাত্র। কিন্তু ঐ শুক্রের মধ্যে কি সন্তান সৃষ্টি করার এবং নিশ্চিত রূপে মানুষের সন্তান সৃষ্টি করার যোগ্যতা আপনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে? অথবা মানুষ নিজে সৃষ্টি করেছে? কিংবা আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ সৃষ্টি করেছে? অথবা এই শুক্র দ্বারা গর্ভে মানুষ সৃষ্টি করে দেয়া কি কোন পুরুষ অথবা কোন নারী কিংবা দুনিয়ার কোন শক্তির ইখতিয়ারে? তারপর গর্ভের সূচনা থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত মায়ের পেটে ক্রমান্নয়ে সৃষ্টি ও লালন করা এবং প্রতিটি শিশুকে স্বতন্ত্র আকৃতি দান করা, প্রতিটি শিশুর মধ্যে একটি বিশেষ অনুপাতে মানসিক ও দৈহিক শক্তি দান করা যার সাহায্যে সে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে—এটা কি এক আল্লাহ ছাড়া আর করো কাজ? এতে কি আর কারো সামান্যতম দখলও আছে? পিতা-মাতা নিজে কি একাজ করে থাকে? না কোন ডাক্তার এ কাজ করে? না কি নবী-রসূল ও আওলিয়াগণ এ কাজ করে থাকেন—যারা এই একই পন্থায় জন্মলাভ করেছেন? না কি সূর্য, চাঁদ, তারকারাজি, এ কাজ করে থাকে—যারা নিজেরাই একটি নিয়ম-নীতির নিগড়ে বাঁধা? নাকি সেই প্রকৃতি (Nature) একাজ করে যা নিজে কোন জ্ঞান, কলাকৌশল, ইচ্ছা ও ইখতিয়ার রাখে না? তাছাড়া সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, সুশ্রী হবে না কদাকার, শক্তিশালী হবে না দুর্বল, অন্ধ, কালা, খোঁড়া ও প্রতিবন্ধী হবে না সুস্থ অংগ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট এবং মেধাবী হবে না মেধাহীন—সে সিদ্ধান্ত কি আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ারে? তাছাড়া জাতিসমূহের ইতিহাসে কখন কোন জাতির মধ্যে কোন কোন ভাল বা মন্দ গুণের অধিকারী লোক সৃষ্টি করতে হবে যারা সে জাতিকে উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছিয়ে দেবে কিংবা অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কি সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে? কেউ যদি এক গুঁয়েমি ও হঠকারীতায় লিপ্ত না হয় তাহলে সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, শিরক ও নাস্তিকতার ভিত্তিতে এসব প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত জওয়াব দেয়া সম্ভব নয়। এর যুক্তিসঙ্গত জওয়াব একটাই। তা হচ্ছে, মানুষ পুরোপুরি আল্লাহর সৃষ্টি। আর প্রকৃত সত্য যখন এই তখন আল্লাহর সৃষ্টি এই মানুষের তার আল্লাহর মোকাবিলায় স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার দাবী করার কিংবা তাঁর ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার কি অধিকার আছে?

তাওহীদের মত আখেরাতের ব্যাপারেও এ প্রশ্ন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানকারী। এমন একটি ক্ষুদ্র কীট থেকে মানুষের জন্মের সূচনা হয় যা শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখাই যায় না। এক সময় এই কীট নারী দেহের গভীর অন্ধকারে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় ঐ ডিম্বানুও আবার অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দৃষ্টিগোচর হওয়ার মত নয়। এ দু’য়ের সংযুক্তি দ্বারা একটি অতি ক্ষুদ্র জীবন্ত কোষ (cell) সৃষ্টি হয়। এটিই মানব জীবনের সূচনা বিন্দু। এ কোষটিও এত ক্ষুদ্র হয় যে, অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া তা দেখা যায় না। মাতৃগর্ভে অতি ক্ষুদ্র এ কোষের প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে আল্লাহ তায়ালা ৯ মাসের কিছু বেশী সময়ের মধ্যে তাকে একটি পূর্ণ মানুষ রূপ দান করেন। তার গঠন ও নির্মাণ পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে হৈ চৈ করে দুনিয়া মাতিয়া তোলার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মায়ের দেহই তাকে ঠেলে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সমস্ত মানুষ এভাবেই পৃথিবীতে এসেছে এবং তাদের মত মানুষের জন্ম গ্রহণের এই দৃশ্যই রাত দিন দেখছে। তা সত্ত্বেও কোন বিবেকহীন ব্যক্তিই শুধু বলতে পারে, যে আল্লাহ বর্তমানে এভাবে মানুষকে সৃষ্টি করছেন তিনি তাঁর সৃষ্ট এসব মানুষকে পুনরায় অন্য কোন পদ্ধতিতে সৃষ্টি করতে পারবেন না।

(৬০)# তোমাদেরকে সৃষ্টি করা যেমন আমার ইখতিয়ারে। তেমনি তোমাদের মৃত্যুও আমার ইখতিয়ারে। কে মাতৃগর্ভে মারা যাবে, কে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র মারা যাবে এবং কে কোন বয়সে উপনীত হয়ে মারা যাবে সে সিদ্ধান্ত আমিই নিয়ে থাকি। যার মৃত্যুর জন্য আমি যে সময় ঠিক করে দিয়েছি তার পূর্বে দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে মারতে পারে না এবং সে সময়ের পর কেউ তাকে এক মুহূর্ত জীবিত রাখতেও পারে না। যাদের মৃত্যুর সময় হাজির হয় তারা বড় বড় হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তারের চোখের সামনে মৃত্যুরবণ করে। এমনকি ডাক্তার নিজেও তার মৃত্যুর সময় মরে যায়। কেউ কখনো মৃত্যুর সময় জানতে পারেনি, ঘনিয়ে আসা মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে পারেনি, কার মৃত্যু কিসের মধ্যে কখন কোথায় কিভাবে সংঘটিত হবে তাও কেউ জানে না।
(৬১)# বর্তমান আকার-আকৃতিতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করতে আমি যেমন অক্ষম হই নাই। তেমনি তোমাদের সৃষ্টি পদ্ধতি পরিবর্তন করে অন্য আকার-আকৃতিতে ভিন্ন প্রকৃতির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে তোমাদের সৃষ্টি করতেও আমি অক্ষম নই। বর্তমানে আমি তোমাদের সৃষ্টি করি এভাবে যে, তোমাদের শুক্র নারীর গর্ভাশয়ে স্থিতি লাভ করে এবং সেখানে ক্রমান্বয়ে প্রবৃদ্ধি লাভ করে একটি শিশুর আকারে তা বেরিয়ে আসে। সৃষ্টির এই পদ্ধতিও আমার নির্ধারিত। সৃষ্টির ধরাবাঁধা এই একটা নিয়মই শুধু আমার কাছে নেই যে, এটি ছাড়া অন্য কোন নিয়ম-পদ্ধতি আমি জানি না বা কার্যকরী করতে পারি না। যে বয়সে তোমাদের মৃত্যু হয়েছিল কিয়ামতের দিন ঠিক সেই বয়সের মানুষের আকৃতি দিয়েই আমি তোমাদের সৃষ্টি করতে পারি। বর্তমানে আমি তোমাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের এক রকমের পরিমাপ রেখেছি। কিন্তু আমার কাছে মানুষের জন্য এই একটি মাত্র পরিমাপই নেই যে, আমি তা পরিবর্তন করতে পারি না। আমি কিয়ামতের দিন তা পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের কিছু করে দেব। ফলে তোমরা এখানে যা দেখতে ও শুনতে পাও না তা দেখতে ও শুনতে পাবে। এখন তোমাদের শরীরের চামড়া, তোমাদের হাত পা এবং তোমাদের চোখের কোন বাক শক্তি নেই। কিন্তু মুখকে বলার শক্তি তো আমিই দিয়েছি। কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং তোমাদের গাত্র চর্মের প্রতিটি অংশ আমার আদেশে কথা বলবে। এ ব্যবস্থা করতে আমি অক্ষম নই। বর্তমানে তোমরা একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাক এবং তারপর মৃত্যুবরণ কর। তোমাদের এ জীবন মৃত্যুও আমার নির্ধারিত একটি বিধানের অধীনে হয়ে থাকে। তোমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যতে আমি অন্য আরেকটি বিধান বানাতে সক্ষম যার অধীনে তোমাদের কখনো মৃত্যু হবে না। বর্তমানে তোমরা একটা বিশেষ মাত্রা পর্যন্ত আযাব সহ্য করতে পার। তার চেয়ে অধিক আযাব দেয়া হলে তোমরা জীবিত থাকতে পার না। এ নিয়ম বিধানও আমারই তৈরী। ভবিষ্যতে আমি তোমাদের জন্য আর একটি আইন-বিধান তৈরী করতে পারি যার অধীনে তোমরা এত দীর্ঘকাল পর্যন্ত এরকম আযাব ভোগ করতে সক্ষম হবে যে, তার কল্পনাও তোমরা করতে পার না। কঠোর থেকে কঠোরতর আযাব ভোগ করেও তোমাদের মৃত্যু হবে না। আজ তোমরা ভাবতেও পার না যে, কোন বৃদ্ধ যুবক হয়ে যেতে পারে, কেউ রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে কিংবা কেউ মোটেই বার্ধক্যে উপনীত হবে না এবং চিরদিন একই বয়সের যুবক থাকবে। কিন্তু এখানে যৌবনের পরে বার্ধক্য আসে আমার দেয়া নিয়ম বিধান অনুসারেই। ভবিষ্যতে তোমাদের জীবনের জন্য আমি এমন ভিন্ন নিয়ম-বিধান বানাতে সক্ষম, যার আওতায় জান্নাতে প্রবেশ মাত্র বৃদ্ধ যুবকে পরিণত হবে এবং তার যৌবন ও সুস্থতা অটুট ও অবিনশ্বর হবে।

(৬২)# কিভাবে তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল তা তোমরা অবশ্যই জান। যে শুক্র দ্বারা তোমাদের অস্তিত্বের সূচনা হয়েছে তা পিতার মেরুদণ্ড থেকে কিভাবে স্থানান্তরিত হয়েছিল, মায়ের গর্ভাশয় যা কবরের অন্ধকার থেকে কোন অংশে কম অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল না তার মধ্যে কিভাবে পর্যায়ক্রমে তোমাদের বিকাশ ঘটিয়ে জীবিত মানুষে রূপান্তরিত করা হয়েছে, কিভাবে একটি অতি ক্ষুদ্র পরমাণু সদৃশ কোষের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ সাধন করে এই মন-মগজ, এই চোখ কান ও এই হাত পা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বুদ্ধি ও অনুভূতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, শিল্প জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তি, ব্যবস্থাপনা ও অধীনস্ত করে নেয়ার মত বিস্ময়কর যোগ্যতাসমূহ দান করা হয়েছে। এটা কি মৃতদের জীবিত করে উঠানোর চেয়ে কম অলৌকিক ও কম বিস্ময়কর? এসব বিস্ময়কর ব্যাপার তোমরা যখন নিজের চোখেই দেখছো এবং নিজেরাই তার জ্বলন্ত সাক্ষী হিসেবে বর্তমান আছ, তখন তা থেকে এ শিক্ষা কেন গ্রহণ করছো না যে, আল্লাহর যে অসীম শক্তিতে দিন রাত এসব মু’জিযা সংঘটিত হচ্ছে তাঁর ক্ষমতাই মৃত্যুর পরের জীবন, হাশর নাশর এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মত মু’জিযাও সংঘটিত হতে পারে?

(৬৩/৬৪)# উপরে উল্লেখিত প্রশ্ন এ সত্যের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল যে, তোমরা তো আল্লাহ তা’আলার গড়া। তিনি সৃষ্টি করেছেন বলে তোমরা অস্তিত্ব লাভ করছো। এখন এই দ্বিতীয় প্রশ্নটি দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তা হচ্ছে, যে রিযিকে তোমরা প্রতিপালিত হচ্ছো তাও আল্লাহই সৃষ্টি করে থাকেন। তোমাদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানুষের কর্তৃত্ব ও প্রচেষ্টা এর অধিক আর কিছুই নয় যে, তোমাদের পিতা তোমাদের মায়ের দেহাভ্যন্তরে এক ফোঁটা শুক্র নিক্ষেপ করে। অনুরূপ তোমাদের রিযিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও মানুষের প্রচেষ্টা জমিতে বীজ বপনের বেশী আর কিছুই নয়। যে জমিতে এই চাষাবাদ করা হয় তাও তোমাদের তৈরী নয়। এই জমিতে উর্বরা শক্তি তোমরা দান কর নাই। ভূমির যে উপাদান দ্বারা তোমাদের খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা হয় তা তোমরা সরবরাহ কর নাই। তোমরা জমিতে যে বীজ বপন কর তাকে প্রবৃদ্ধির উপযুক্ত তোমরা বানাও নাই। ঐগুলো যে গাছের বীজ তার প্রতিটি থেকে ঐ একই প্রজাতির গাছ ফুটে বের হওয়ার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য তোমরা সৃষ্টি কর নাই। সেই ভূমিকে বাতাসে ঢেউ খেলা শ্যামল শস্য ক্ষেত্রে পরিণত করার জন্য ভূমির অভ্যন্তরে যে ক্রিয়া-প্রক্রিয়া এবং ভূমির উপরিভাগে যে বাতাস, পানি, উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও মৌসূমী পরিবেশ প্রয়োজন তার কোনটিই তোমাদের কোন তদবীর বা ব্যবস্থাপনার ফল নয়। এর সব কিছুই আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও প্রতিপালক হওয়ার বিস্ময়কর কীর্তি। অতএব তোমরা যখন তাঁর সৃষ্টি করার কারণে অস্তিত্ব লাভ করছো এবং তাঁরই দেয়া রিযিকে প্রতিপালিত হচ্ছো তখন তাঁর নির্দেশের বাইরে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার কিংবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব ও আনুগত্য করার অধিকার তোমরা কি করে লাভ করো?

এ আয়াতের যুক্তি প্রমাণ বাহ্যিকভাবে তাওহীদের স্বপক্ষে। তবে এতে যে বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে সে বিষয়ে কেউ আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলেই এর মধ্যে আখেরাতের প্রমাণও পেয়ে যাবে। জমিতে যে বীজ বপন করা হয় তা মৃত বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু কৃষক তাকে মাটির করবে দাফন করার পর আল্লাহ তা’আলা তার মধ্যে জীবন সৃষ্টি করেন। তা থেকে অঙ্কুরোদগম হয় এবং সবুজ-শ্যামল শষ্য ক্ষেত্রের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পরিদৃষ্ট হয়। আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত এভাবে কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠছে। এটা কি কোন অংশ কম বিস্ময়কর মু’জিযা যে, মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে যে খবর দিচ্ছে সে মু’জিযাকে অসম্ভব মনে করবো?

(৬৫-৬৯)# শুধু তোমাদের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাই নয় তোমাদের পিপাসা মেটানোর ব্যবস্থাও আমিই করেছি। তোমাদের জীবন ধারণের জন্য যে পানি খাদ্যের চেয়েও অধিক প্রয়োজনীয় তার ব্যবস্থা তোমরা নিজেরা কর নাই। আমিই তা সরবরাহ করে থাকি। পৃথিবীর সমুদ্রসমূহ আমি সৃষ্টি করেছি। আমারই সৃষ্টি করা সূর্যের তাপে সমুদ্রের পানি বাষ্পে পরিণত হয়। আমি পানির মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য দিয়েছি যে, একটি বিশেষ মাত্রার তাপে তা বাষ্পে পরিণত হয়। আমার সৃষ্ট বাতাস তা বহন করে নিয়ে যায়। আমার অসীম ক্ষমতা ও কৌশলে বাষ্পরাশি একত্রিত হয়ে মেঘে পরিণত হয়। আমার নির্দেশে এই মেঘরাশি একটি বিশেষ অনুপাত অনুসারে বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে যাতে পৃথিবীর যে অঞ্চলের জন্য যে পরিমাণ পানি বরাদ্দ করা হয়েছে তা সেখানে পৌঁছে যায়। তারপর আমি উর্ধাকাশে এমন এক মাত্রার ঠাণ্ডা সৃষ্টি করে রেখেছি যার ফলে বাষ্প পুনরায় পানিতে পরিণত হয়। আমি তোমাদেরকে শুধু অস্তিত্ব দান করেই বসে নাই। তোমাদের প্রতিপালনের মত সব ব্যবস্থাও আমি করছি যা না থাকলে তোমরা বেঁচেই থাকতে পারতে না। আমি সৃষ্টি করার ফলে অস্তিত্বলাভ করে, আমার দেয়া রিযিক খেয়ে এবং আমার দেয়া পানি পান করে আমার মোকাবিলায়, স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী হবে কিংবা আমার ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করবে এ অধিকার তোমরা কোথা থেকে লাভ করেছো?

(৭০)# এ আয়াতাংশে আল্লাহ তা’আলার অসীম ক্ষমতা ও কর্মকৌশের এক অতি বিস্ময়কর দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা পানির মধ্যে যে সব অতি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য রেখেছেন তার একটি হচ্ছে, পানির মধ্যে যত বস্তুই মিশে থাকুক না কেন, তাপের প্রভাবে যখন তা বাষ্পে পরিণত তখন সমস্ত মিশে যাওয়া বস্তু নীচে পড়ে থাকে এবং শুধু জলীয় অংশই বাতাসে উড়ে যায়। পানির যদি এই বিশেষত্ব না থাকতো তাহলে পানি অবস্থায় তার মধ্যে মিশে থাকা বস্তুসমূহ বাষ্পে পরিণত হওয়ার সময়ও তার মধ্যে থেকে যেতো। সূতরাং এমতাবস্থায় সমুদ্র থেকে যে বাষ্প উত্থিত হতো তার মধ্যে সমুদ্রের লবণও মিশে থাকতো এবং ঐ পানি বৃষ্টির আকারে বর্ষিত হয়ে গোটা ভূপৃষ্ঠকে লবণাক্ত ভূমিতে পরিণত করতো। সে পানি পান করে মানুষ যেমন বেঁচে থাকতে পারতো না, তেমনি তা দ্বারা কোন প্রকারের উদ্ভিদও উৎপন্ন হতে পারতো না। এখন যে ব্যক্তির মস্তিস্কে কিছুমাত্র মগজ আছে সে কি এ দাবী করতে পারে যে, অন্ধ ও বধির প্রকৃতিতে আপনা থেকেই পানির মধ্যে এ জ্ঞানগর্ভ বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়েছে? পানির যে বৈশিষ্ট্যের কারণে লবণাক্ত সমুদ্র থেকে পরিষ্কার সুপেয় পানি উত্থিত হয়ে বৃষ্টির আকারে বর্ষিত হয় এবং নদী, খাল, ঝর্ণা ও কূপের আকারে পানি সরবরাহ ও সেচের কাজ আঞ্জাম দেয় তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যিনি পানির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করেছেন তিনি বুঝে শুনেই তা করেছেন যেন পানি তাঁর সৃষ্টিকূলের প্রতিপালনের সহায়ক হয়। যেসব জীবজন্তুর পক্ষে লবণাক্ত পানিতে বেঁচে থাকা ও জীবন যাপন করা সম্ভব তাদেরকে সমুদ্রে সৃষ্টি করেছেন। সেখানে তারা স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছে। কিন্তু স্থলভাগ ও বায়ু মণ্ডলের বসবাসের জন্য যেসব জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন তাদের জীবন ধারণ ও জীবন যাপনের জন্য সুপেয় মিঠা পানির প্রয়োজন ছিল। সে উদ্দেশ্যে বৃষ্টির ব্যবস্থা করার পূর্বে তিনি পানির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য দিলেন যে, তাপে বাষ্পে পরিণত হওয়ার সময় তা যেন পানিতে মিশ্রিত কোন জিনিস সাথে নিয়ে উত্থিত না হয়।

টিকা:৩১) অন্য কথায় তোমাদের মধ্যে কেউ এ বৃষ্টিকে দেবতাদের কীর্তি বলে মনে করে। আবার কেউ মনে করে, সমুদ্রের পানি থেকে মেঘমালার সৃষ্টি এবং পুনরায় তা পানি হয়ে আসমান থেকে বর্ষিত হওয়াটা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলছে। আবার কেউ এটাকে আল্লাহর রহমত মনে করলেও আল্লাহর সামনেই আনুগত্যের মাথা নোয়াতে হবে এতটা অধিকার আল্লাহর কাছে আছে বলে মনে করে না। তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের এত বড় না-শুকরী কেন করছো? আল্লাহর এত বড় নিয়ামত কাজে লাগিয়ে উপকৃত হচ্ছো এবং তার বিনিময়ে কুফর, শিরক, পাপাচার ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হচ্ছো!
(৭১)# গাছ বলতে যেসব গাছ থেকে জ্বালানী কাঠ সংগৃহীত হয় সে গাছের কথা বলা হয়েছে কিংবা মারখ ও আফার নামে পরিচিত গাছের কথা বলা হয়েছে যার তাজা কাঁচা ডাল পরস্পর রগড়িয়ে প্রাচীনকালে আরবের অধিবাসীরা আগুন জ্বালাতো।
(৭২/৭৩)# আগুনকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার উপকরণ বানানোর অর্থ হচ্ছে, আগুন এমন জিনিস যা প্রয়োজনের মুহূর্তে প্রজ্বলিত হয়ে মানুষকে তার ভুলে যাওয়া শিক্ষা স্মরণ করিয়ে দেয়। আগুন যদি না থাকতো তাহলে মানুষ জীবনে পশুর জীবন থেকে ভিন্ন হতো না। মানুষ পশুর মতো কাঁচা খাদ্য খাওয়ার পরিবর্তে আগুনের সাহায্যে তা রান্না করে খাওয়া শুরু করেছে এবং আগুনের কারণেই মানুষের জন্য একের পর এক শিল্প ও আবিষ্কারের নতুন নতুন দরজা উদঘাটিত হয়েছে। এ কথা সুস্পষ্ট, যেসব উপকরণের সাহায্যে আগুন জ্বালানো যায় আল্লাহ যদি তা সৃষ্টি না করতেন এবং আগুনে যে সব বস্তু জ্বলে তাও যদি তিনি সৃষ্টি না করতেন তাহলে মানুষের উদ্ভাবনী যোগ্যতার তালা কোন দিনই খুলতো না। কিন্তু মানুষের স্রষ্টা যে একজন বিজ্ঞ পালনকর্তা যিনি একদিকে তাকে মানবিক যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং অন্যদিকে পৃথিবীতে সেসব উপকরণ ও সাজ-সরঞ্জাম ও সৃষ্টি করেছেন যার সাহায্যে তার এসব যোগ্যতা বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে সে কথা মানুষ একদম ভুলে বসে আছে। মানুষ যদি গাফিলতি ও অমনযোগিতায় নিমগ্ন না হয় তাহলে সে দুনিয়াতে যা যা ভোগ করছে তা কার অনুগ্রহ ও নিয়ামত সে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এক আগুনই যথেষ্ট।
# মূল আয়াতে مقوين শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ভাষাবিজ্ঞ পণ্ডিতগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন মরুভূমিতে উপনীত মুসাফির বা পথচারী। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। কারো কারো মতে এর অর্থ হচ্ছে সেসব মানুষ যারা খাবার পাকানো, আলো পাওয়া কিংবা তাপ গ্রহণ করার কাজে আগুন ব্যবহার করে।

(৭৪)# সে পবিত্র নাম নিয়ে ঘোষণা করে দাও যে, কাফের ও মুশরিকরা যেসব দোষত্রুটি, অপূর্ণতা ও দুর্বলতা তাঁর ওপর আরোপ করে তা থেকে এবং কুফর ও শিরকমূলক সমস্ত আকীদা ও আখেরাত অস্বীকারকারীদের প্রতিটি যুক্তি তর্কে যা প্রচ্ছন্ন আছে তা থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।
(৭৫)# তোমরা যা মনে করে বসে আছো ব্যাপার তা নয়। কুরআন যে আল্লাহ‌ পক্ষ থেকে সে বিষয়ে কসম খাওয়ার আগে এখানে لا শব্দের ব্যবহার করায় আপনা থেকেই একথা প্রকাশ পায় যে, এই পবিত্র গ্রন্থ সম্পর্কে মানুষ মনগড়া কিছু কথাবার্তা বলছিলো। সেসব কথার প্রতিবাদ করার জন্যই এ কসম খাওয়া হচ্ছে।

(৭৬/৭৭)# তারকারাজি ও গ্রহসমূহের ‘অবস্থান স্থল’ অর্থ তাদের মনযিল ও তাদের কক্ষপথসমূহ। আর কুরআনের মহা সম্মানিত গ্রন্থ হওয়া সম্পর্কে ঐগুলোর শপথ করার অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বজগতে সৌরজগতের ব্যবস্থাপনা যত সুসংবদ্ধ ও মজবুত এই বাণীও ততটাই সুসংবদ্ধ ও মজবুত। যে আল্লাহ ঐ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন সে আল্লাহ এই বাণীও নাযিল করেছেন। মহাবিশ্বের অসংখ্য ছায়াপথ (Galaxies) ঐ সব ছায়াপথের মধ্যে সীমা সংখ্যাহীন নক্ষত্র (Stars) এবং গ্রহরাজি (Planets) বাহ্যত ছড়ানো ছিটানো দেখা গেলেও তাদের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার যে সুসংবদ্ধতা বিরাজমান এ মহাগ্রন্থও ঠিক অনুরূপ পূর্ণ মাত্রার সুসংবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত জীবন বিধান পেশ করে। যার মধ্যে আকীদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে নৈতিক চরিত্র, ইবাদত, তাহযীব, তামাদ্দুন, অর্থ ও সমাজ ব্যবস্থা, আইন ও আদালত, যুদ্ধ ও সন্ধি মোট কথা মানব জীবনের সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এর কোন একটি দিকই আরেকটি দিকের সাথে সামঞ্জস্যহীন ও বেখাপ্পা নয়। অথচ এই ব্যবস্থা বিভিন্ন আয়াত ও ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদত্ত ভাষণে বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া ঊর্ধ্বজগতের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-শৃঙ্খলা যেমন অপরিবর্তনীয়, তাতে কোন সময় সামান্য পরিমাণ পার্থক্যও সূচিত হয় না, ঠিক তেমনি এই গ্রন্থে যেসব সত্য ও পথনির্দেশনা পেশ করা হচ্ছে তাও অটল ও অপরিবর্তনীয়, তার একটি বিন্দুকেও স্ব-স্থান বিচ্যুত করা যেতে পারে না।

(৭৮)# এর অর্থ ‘লওহে মাহফুজ’। এটি বুঝাতে كِتَابٍ مَكْنُونٍ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এমন লিখিত বস্তু যা গোপন করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যা কারো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সুরক্ষিত ঐ লিপিতে কুরআন মজীদ লিখিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপরে কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তা’আলার কাছে তা সেই ভাগ্যলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে যাতে কোন রকম পরিবর্তন পরিবর্ধন সম্ভব নয়। কারণ, তা যেকোন সৃষ্টির ধরা ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে।

(৭৯)# কাফেররা কুরআনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আরোপ করতো এটা তার জবাব। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গণক আখ্যায়িত করে বলতো, জিন ও শয়তানরা তাঁকে এসব কথা শিখিয়ে দেয়। কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে এর জবাব দেয়া হয়েছে। যেমনঃ সূরা শূ’আরাতে বলা হয়েছেঃ

وَمَا تَنَزَّلَتْ بِهِ الشَّيَاطِينُ – وَمَا يَنْبَغِي لَهُمْ وَمَا يَسْتَطِيعُونَ – إِنَّهُمْ عَنِ السَّمْعِ لَمَعْزُولُونَ “শয়তান এ বাণী নিয়ে আসেনি। এটা তার জন্য সাজেও না। আর সে এটা করতেও পারে না। এ বাণী শোনার সুযোগ থেকেও তাকে দূরে রাখা হয়েছে।” (আয়াত ২১০ থেকে ২১২)

এ বিষয়টিই এখানে এ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, “পবিত্র সত্তা ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করতে পারে না।” অর্থাৎ শয়তান কর্তৃক এ বাণী নিয়ে আসা কিংবা নাযিল হওয়ার সময় এতে কর্তৃত্ব খাটানো বা হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা যে সময় ‘লওহে মাহফূজ’ থেকে তা নবীর ﷺ ওপর নাযিল করা হয় সে সময় পবিত্র সত্তাসমূহ অর্থাৎ পবিত্র ফেরেশতারা ছাড়া কেউ তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। ফেরেশতাদের জন্য পবিত্র কথাটি ব্যবহার করার তাৎপর্য হলো মহান আল্লাহ তাদেরকে সব রকমের অপবিত্র আবেগ অনুভূতি এবং ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা থেকে পবিত্র রেখেছেন। আনাস (রা.), ইবনে মালেক, ইবনে আব্বাস (রা.), সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইকরিমা, মুজাহিদ, কাতাদা, আবুল আলীয়া, সুদ্দী, দাহহাক এবং ইবনে যায়েদ, এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই বর্ণনা করেছেন। বাক্য বিন্যাসের সাথেও এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, বাক্যের ধারাবাহিকতা থেকে এ কথাই বুঝা যায় যে, তাওহীদ ও আখেরাত সম্পর্কে মক্কার কাফেরদের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রতিবাদ করার পর কুরআন মজীদ সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণা প্রত্যাখ্যান করে তারকা ও গ্রহরাজির “অবস্থান ক্ষেত্র” সমূহে শপথ করে বলা হচ্ছে, এটি একটি অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন গ্রন্থ, আল্লাহর সুরক্ষিত লিপিতে তা লিপিবদ্ধ আছে কোন সৃষ্টির পক্ষে তাতে হস্তক্ষেপ করার কোন সম্ভাবনা নেই এবং তা এমন পদ্ধতিতে নবীর ওপর নাযিল হয় যে, পবিত্র ফেরেশতাগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শও করতে পারে না। মুফাসসিরদের মধ্যে কেউ কেউ এ আয়াতের لا শব্দটিকে ‘না’ অর্থে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা আয়াতের অর্থ করেছেন “পাক পবিত্র নয় এমন কোন ব্যক্তি যেন তা স্পর্শ না করে” “কিংবা এমন কোন ব্যক্তির তা স্পর্শ করা উচিত-নয়, যে না পাক।” আরো কতিপয় মুফাসসির যদিও لا শব্দটিকে ‘না’ অর্থেই গ্রহণ করেছেন এবং আয়াতের অর্থ করেছেন এই গ্রন্থ পবিত্র সত্তাগণ ছাড়া আর কেউ স্পর্শ করে না। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এখানে ‘না’ শব্দটি ঠিক তেমনি নির্দেশ সূচক যেমন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না)। এর মধ্যে উল্লেখিত ‘না’ শব্দটি নির্দেশসূচক। এখানে যদিও বর্ণনামূলকভাবে বলা হয়েছে যে, মুসলমান মুসলমানের ওপর জুলুম করে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, মুসলমান যেন মুসলমানের ওপর জুলুম না করে। অনুরূপ এ আয়াতে যদিও বলা হয়েছে যে, পবিত্র লোক ছাড়া কুরআনকে কেউ স্পর্শ করে না। কিন্তু তা থেকে এ নির্দেশ পাওয়া যায় যে, তা হচ্ছে, পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি যেন তা স্পর্শ না করে। তবে প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাখ্যা আয়াতের পূর্বাপর প্রসঙ্গের সাথে খাপ খায় না। পূর্বাপর বিষয়বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন করে এ বাক্যের এরূপ অর্থ করা যেতে পারে। কিন্তু যে বর্ণনাধারার মধ্যে কথাটি বলা হয়েছে সে প্রেক্ষিতে রেখে একে বিচার করলে এ কথা বলার আর কোন সুযোগই থাকে না, “পবিত্র লোকেরা ছাড়া কেউ যেন এ গ্রন্থ স্পর্শ না করে।” কারণ, এখানে সম্বোধন করা হয়েছে কাফেরদেরকে। তাদের বলা হচ্ছে, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব। এ কিতাব সম্পর্কে তোমাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত যে, শয়তানরা নবীকে তা শিখিয়ে দেয়। কোন ব্যক্তি পবিত্রতা ছাড়া এ গ্রন্থ স্পর্শ করতে পারবে না শরীয়াতের এই নির্দেশটি এখানে বর্ণনা করার কি যুক্তি ও অবকাশ থাকতে পারে? বড় জোর বলা যেতে পারে তা হচ্ছে, এ নির্দেশ দেয়ার জন্য যদিও আয়াতটি নাযিল হয়নি। কিন্তু বাক্যের ভঙ্গি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আল্লাহর দরবারে যেমন কেবল পবিত্র সত্তারাই এ গ্রন্থ স্পর্শ করতে পারে অনুরূপ দুনিয়াতেও অন্তত সেসব ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় এ গ্রন্থ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুক। যারা এ গ্রন্থের আল্লাহর বাণী হওয়া সম্পর্কে বিশ্বাস পোষণ করে।

এ মাসায়ালা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

একঃ ইমাম মালেক (র) মুয়াত্তা গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবনে আবী বকর মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাযম বর্ণিত এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ ﷺ ইয়ামানের নেতৃবৃন্দের কাছে আমর ইবনে হাযমের মাধ্যমে যে লিখিত নির্দেশনামা পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে এ নির্দেশটিও ছিল যে, لاَ يَمَسُّ الْقُرْآنَ إِلاَّ طَاهِرٌ (পাক পবিত্র লোক ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে)। আবু দাউদ তাঁর ‘মীরাসীল’ গ্রন্থে ইমাম যুহরী থেকে একথাটি উদ্ধৃত করেছেন। অর্থাৎ তিনি আবু মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাযমের কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লিখিত যে নির্দেশনামা দেখেছিলেন তার মধ্যে এ নির্দেশটিও ছিল।

দুইঃ হযরত আলী থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেনঃ

ان رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَكُنْ يَحْجِزُهُ عَنْ القران شَيْءٌ , لَيْسَ الْجَنَابَةَ-

“অপবিত্র অবস্থা ছাড়া অন্য কিছুই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতে পারতো না।” (আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী)।

তিনঃ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

لاَ تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلاَ الْجُنُبُ مِنَ الْقُرْآنِ “ঋতুবতী নারী ও নাপাক কোন ব্যক্তি যেন কুরআনের কোন অংশ না পড়ে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)।

চারঃ বুখারীর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ ﷺ রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে যে পত্র দিয়েছিলেন তাতে পবিত্র কুরআনের এ আয়াতটিও লিখিত ছিলঃ

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ…………….. সাহাবা কিরাম (রা.) ও তাবেয়ীনদের থেকে এ মাসয়ালাটি সম্পর্কে যেসব মতামত বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

হযরত সালমান ফারসী (রা.) অযু ছাড়া কুরআন শরীফ পড়া দুষণীয় মনে করতেন না। তবে তাঁর মতে এরূপ ক্ষেত্রে হাত দিয়ে কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়। হযরত সা’দ (রা.) ইবনে আবী ওয়াককাস এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)ও এমত অনুসরণ করতেন। হযরত হাসান বাসরী ও ইবরাহীম নাখয়ীও বিনা ওযুতে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা মাকরূহ মনে করতেন। (আহকামুল কুরআন— জাসসাস)। আতা, তাউস, শা’বী এবং কাসেম ইবনে মুহাম্মাদও এই মত পোষণ করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে (আল-মুগনী-ইবনে কুদামাহ)। তবে তাঁদের সবার মতে অযু ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ না করে পড়া কিংবা মুখস্ত পড়া জায়েয।

নাপাক, হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় কুরআন শরীফ পড়া হযরত উমর (রা.), হযরত আলী (রা.), হযরত হাসান বাসরী, হযরত ইবরাহীম নাখয়ী এবং ইমাম যুহরীর মতে মাকরূহ। তবে ইবনে আব্বাসের (রা.) মত ছিল এই যে, কোন ব্যক্তি কুরআনের যে অংশ স্বভাবতই মুখে মুখে পড়তে অভ্যস্ত তা মুখস্ত পড়তে পারে। তিনি এ মতের ওপর আমলও করতেন। এ মাসয়ালা সম্পর্কে হযরত সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়েব এবং সা’ঈদ ইবনে জুবাইরকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তার স্মৃতিতে কি কুরআন সংরক্ষিত নেই? সুতরাং পড়ায় কি দোষ হতে পারে? (আল-মুগনী ও আল-মুহাল্লা-ইবনে হাযম)।

এ মাসয়ালা সম্পর্কে ফকীহদের মতামত নিম্নরূপঃ

ইমাম আলাউদ্দীন আল-কাশানী بدائع الصنائع গ্রন্থে এ বিষয়ে হানাফীদের মতের ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ বিনা অযুতে নামায পড়া জায়েজ নয়, তেমনি কুরআন মজীদ স্পর্শ করাও জায়েজ নয়। তবে কুরআন মজীদ যদি গেলাফের মধ্যে থাকে তাহলে স্পর্শ করা যেতে পারে। কোন কোন ফকীহর মতে চামড়ার আরবণ এবং করো করো মতে যে কোষ, লেফাফা, বা জুযদানের মধ্যে কুরআন শরীফ রাখা হয় এবং তা থেকে আবার বের করা যায় তা-ই গেলাফের পর্যায়ভুক্ত। অনুরূপ বিন অযুতে তাফসীর গ্রন্থসমূহ এবং এমন কোন বস্তু স্পর্শ করা উচিত নয় যার ওপর কুরআনের কোন আয়াত লিখিত আছে। কিন্তু ফিকহার গ্রন্থসমূহ স্পর্শ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হচ্ছে বিনা অযুতে স্পর্শ না করা। কারণ দলীল প্রমাণ হিসেবে তার মধ্যে কুরআনের আয়াত লিখিত আছে শুধু সেই অংশ বিনা অযুতে স্পর্শ করা ঠিক নয়। কিন্তু যে অংশে টীকা লেখা হয় তা ফাঁকা হোক কিংবা ব্যাখ্যা হিসেবে কিছু লেখা থাক, তা স্পর্শ করায় কোন দোষ নেই। তবে সঠিক কথা হলো, টীকা বা ব্যাখ্যাসমূহও কুরআনেরই একটা অংশ এবং তা স্পর্শ করা কুরআন মজীদ স্পর্শ করার শামিল। এরপর কুরআন শরীফ পড়া সম্পর্কে বলা যায় যে, “বিনা অযুতে কুরআন শরীফ পড়া জায়েয।” ফতোয়ায়ে আলমগিরী গ্রন্থে শিশুদেরকে এই নির্দেশের আওতা বহির্ভূত গণ্য করা হয়েছে। অযু থাক বা না থাক শিক্ষার জন্য শিশুদের হাতে কুরআন শরীফ দেয়া যেতে পারে।

ইমাম নববী (র) المنهاج গ্রন্থে শাফেয়ী মাযহাবের মতামত বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ নামায ও তাওয়াফের মত বিনা অযুতে কুরআন মজীদ স্পর্শ করা কিংবা তার কোন পাতা স্পর্শ করা হারাম। অনুরূপ কুরআনের জিলদ স্পর্শ করাও নিষেধ। তাছাড়া কুরআন যদি কোন থলি বা ব্যাগের মধ্যে রাখা থাকে কিংবা গেলাফ বা বাক্সের মধ্যে থাকে বা দরসে কুরআনের জন্য তার কোন অংশ কোন ফলকের ওপরে লিখিত থাকে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে যদি করো মালপত্রের মধ্যে রাখা থাকে, কিংবা তাফসীর গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ থাকে অথবা কোন মুদ্রার গায়ে তা ক্ষোদিত হয় তাহলে তা স্পর্শ খরা জায়েয। শিশুর অযু না থাকলেও সে কুরআন স্পর্শ করতে পারে। কেউ যদি অযু ছাড়া কুরআন পাঠ করে তাহলে কাঠ বা অন্য কোন জিনিসের সাহায্যে পাতা উল্টাতে পারে।

‘আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ’ গ্রন্থে মালেকী মাযহাবের যে মত উদ্ধৃত করা হয়েছে তা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহদের সাথে তারা এ ব্যাপারে একমত যে, হাত দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করার জন্য অযু শর্ত কিন্তু কুরআন শিক্ষার প্রয়োজনে তারা শিক্ষক ও ছাত্র উভয়কে এ ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন। এমনকি তাদের মতে শিক্ষার জন্য ঋতুবতী নারীর জন্যও কুরআন স্পর্শ করা জায়েয। ইবনে কুদামা আল-মুগনী গ্রন্থে ইমাম মালেকের (র) এ উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন যে, নাপাক অবস্থায় তো কুরআন শরীফ পড়া নিষেধ। কিন্তু ঋতু অবস্থায় নারীর জন্য কুরআন পড়ার অনুমতি আছে। কারণ, আমরা যদি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাকে কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখি তাহলে সে তা ভুলে যাবে।

ইবনে কুদামা হাম্বলী মাযহাবের যেসব বিধি-বিধান উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে, নাপাক এবং হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় কুরআন কিংবা কুরআনের পূর্ণ কোন আয়াত পড়া জায়েয নয়। তবে বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি পড়া জায়েয। কারণ এগুলো কুরআনের কোন না কোন আয়াতের অংশ হলেও সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য থাকে না। তবে কোন অবস্থায়ই বিনা অযুতে হাত দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে চিঠিপত্র কিংবা ফিকাহর কোন গ্রন্থ বা অন্যকিছু লিখিত বিষয়ের মধ্যে যদি কুরআনের কোন আয়াত লিপিবদ্ধ থাকে তাহলে তা হাত দিয়ে স্পর্শ করা নিষেধ নয়। অনুরূপভাবে যদি কোন জিনিসের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে তাহলে অযু ছাড়াই তা হাত দিয়ে ধরে উঠানো যায়। তাফসীর গ্রন্থসমূহ হাত দিয়ে ধরার ক্ষেত্রে অযু শর্ত নয়। তাছাড়া তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে অযুহীন কোন লোককে যদি হাত দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে হয় তাহলে সে তায়াম্মুম করে নিতে পারে। ‘আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ’ গ্রন্থে হাম্বলী মাযহাবের এ মাসয়ালাটিও উল্লেখ আছে যে, শিক্ষার উদ্দেশ্যও শিশুদের বিনা অযুতে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা ঠিক নয়। তাদের হাতে কুরআন শরীফ দেয়ার আগে তাদের অভিভাবকদের কর্তব্য তাদের অযু করানো।

এ মাসায়ালা সম্পর্কে জাহেরীদের মতামত হচ্ছে, কেউ বিনা অযুতে থাক বা নাপাক অবস্থায় থাক কিংবা ঋতুবতী স্ত্রীলোক হোক সবার জন্য কুরআন পাঠ করা এবং হাত দিয়ে তা স্পর্শ করা সবর্বাবস্থায় জায়েয। ইবনে হাযম তাঁর আল-মুহাল্লা গ্রন্থে (১ম খণ্ড, ৭৭ থেকে ৮৪ পৃষ্ঠা) এ মাসয়ালা সম্পর্কে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তাতে এ মতটি সঠিক ও বিশুদ্ধ হওয়া সম্পর্কে বহু দলীল প্রমাণ পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কুরআন পাঠ করা এবং তা স্পর্শ করার ব্যাপারে ফকীহগণ যে শর্তাবলী আরোপ করেছেন তার কোনটিই কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত নয়।

(৮০/৮১)# মুল আয়াতের কথাটি হচ্ছে أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ । ادهان অর্থ কোন ব্যাপারে খোশামোদ ও তোয়াজ করার নীতি গ্রহণ করা, গুরুত্ব না দেয়া এবং যথাযোগ্য মনোযোগের উপযুক্ত মনে না করা। ইংরেজীতে (to take lightly) কথাটি দ্বারা প্রায় একই অর্থ প্রকাশ পায়।

(৮২)# ইমাম রাযী تَجْعَلُونَ رِزْقَكُمْ কথাটির ব্যাখ্যায় এখানে রিযিক শব্দটির অর্থ আয় রোজগার ও উপার্জন হওয়ার সম্ভাবনার কথাও প্রকাশ করেছেন। কুরাইশ গোত্রের কাফেররা যেহেতু কুরআনের দাওয়াতকে তাদের উপার্জন ও আর্থিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করতো। তারা মনে করতো এ আন্দোলন যদি সাফল্য মণ্ডিত হয় তাহলে আমাদের আয় উপার্জনের পথ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আয়াতটির অর্থ এও হতে পারে যে, তোমরা পেটের ধান্ধার কারণেই কুরআনকে অস্বীকার করে যাচ্ছো। তোমাদের কাছে হক ও বাতিলের কোন গুরুত্বই নেই। তোমাদের দৃষ্টিতে সত্যিকার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে রুটি। রুটির জন্য তোমরা হকের বিরোধিতা করতে এবং বাতিলের সহযোগিতা গ্রহণ করতে একটুও দ্বিধান্বিত নও।

(৮৩-৯৬)# হযরত উকবা ইবনে আমের জুহানী বর্ণনা করেছেন, এ আয়াত নাযিল হলে রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা এটিকে রুকূ’তে স্থান দাও। অর্থাৎ রুকূ’তে سُبحَانَ رَبِى العَظِيْم পড়। পরে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى আয়াতটি নাযিল হলে তিনি বললেন, এটিকে তোমরা সিজদায় স্থান দাও। অর্থাৎ সিজদায় سُبحَانَ رَبِى الْاَعْلَى পড় (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হাব্বান, হাকেম)। এ থেকে জানা যায়, রসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের যে নিয়ম পদ্ধতি বেঁধে দিয়েছেন তার ছোট ছোট বিষয়গুলো পর্যন্ত কুরআনের ইঙ্গিত ও নির্দেশনা থেকেই গৃহীত।

Leave a Reply