Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৫১) [*‌‌তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন:- *কি ব্যাপার যে, তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করছো না?:- *যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সমকক্ষ হতে পারে না !:- *এমন কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে?:-] www.motaher21.net সূরা:৫৭:আল-হাদীদ। পারা:২৭ ১-১১ নং আয়াত:- আয়াতের ব্যাখ্যা:- ১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৫১)
[*‌‌তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন:-
*কি ব্যাপার যে, তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করছো না?:-
*যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সমকক্ষ হতে পারে না !:-
*এমন কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে?:-]
www.motaher21.net
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ।
পারা:২৭
১-১১ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
২) তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
৩) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
৪) তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-১
سَبَّحَ لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۱﴾
যমীন ও আসমানসমূহের প্রতিটি জিনিসই আল্লাহর তাসবীহ করেছে। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও অতিশয় বিজ্ঞ।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-২
لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ۚ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۲﴾
পৃথিবী ও আকাশ সাম্রাজ্যের সার্বভৌম মালিক তিনিই। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৩
ہُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاہِرُ وَ الۡبَاطِنُ ۚ وَ ہُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۳﴾
তিনিই আদি তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত তিনিই গোপন।তিনি সব বিষয়ে অবহিত।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৪
ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا یَخۡرُجُ مِنۡہَا وَ مَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَ مَا یَعۡرُجُ فِیۡہَا ؕ وَ ہُوَ مَعَکُمۡ اَیۡنَ مَا کُنۡتُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴﴾
তিনিই আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর আরশে সমাসীন হয়েছেন।৪ যা কিছু মাটির মধ্যে প্রবেশ করে, যা কিছু তা থেকে বেরিয়ে আসে এবং যা কিছু আসমান থেকে অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু আসমানে উঠে যায় তা তিনি জানেন। তোমরা যেখানেই থাক তিনি তোমাদের সাথে আছেন। তোমরা যা করছো আল্লাহ‌ তা দেখছেন।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৫
لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ الۡاُمُوۡرُ ﴿۵﴾
আসমান ও যমীনের নিরংকুশ সার্বভৌম মালিকানা একমাত্র তাঁরই। সব ব্যাপারের ফায়সালার জন্য তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হয়।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৬
یُوۡلِجُ الَّیۡلَ فِی النَّہَارِ وَ یُوۡلِجُ النَّہَارَ فِی الَّیۡلِ ؕ وَ ہُوَ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۶﴾
তিনিই রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। তিনি অন্তরের গোপন কথা পর্যন্ত জানেন।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৭
اٰمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ اَنۡفِقُوۡا مِمَّا جَعَلَکُمۡ مُّسۡتَخۡلَفِیۡنَ فِیۡہِ ؕ فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَ اَنۡفَقُوۡا لَہُمۡ اَجۡرٌ کَبِیۡرٌ ﴿۷﴾
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা হতে ব্যয় কর। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৮
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ ۚ وَ الرَّسُوۡلُ یَدۡعُوۡکُمۡ لِتُؤۡمِنُوۡا بِرَبِّکُمۡ وَ قَدۡ اَخَذَ مِیۡثَاقَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۸﴾
তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনছো না? অথচ তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য রসূল তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন অথচ তিনি তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। যদি তোমরা সত্যিই স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত হও!
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-৯
ہُوَ الَّذِیۡ یُنَزِّلُ عَلٰی عَبۡدِہٖۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لِّیُخۡرِجَکُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ بِکُمۡ لَرَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۹﴾
সেই মহান সত্তা তো তিনিই যিনি তাঁর বান্দার কাছে স্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করছেন যাতে তোমাদেরকে অন্ধাকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ তোমাদের প্রতি অতীব দয়ালু ও মেহেরবান।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-১০
وَ مَا لَکُمۡ اَلَّا تُنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ لِلّٰہِ مِیۡرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَا یَسۡتَوِیۡ مِنۡکُمۡ مَّنۡ اَنۡفَقَ مِنۡ قَبۡلِ الۡفَتۡحِ وَ قٰتَلَ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعۡظَمُ دَرَجَۃً مِّنَ الَّذِیۡنَ اَنۡفَقُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ قٰتَلُوۡا ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰہُ الۡحُسۡنٰی ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ﴿٪۱۰﴾
কি ব্যাপার যে, তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করছো না? অথচ যমীন ও আসমানের উত্তরাধিকার তাঁরই। তোমাদের মধ্যে যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সেসব বিজয়ের সমকক্ষ হতে পারে না যারা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে। বিজয়ের পরে ব্যয়কারী ও জিহাদকারীদের তুলনায় তাদের মর্যাদা অনেক বেশী। যদিও আল্লাহ‌ উভয়কে ভাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তোমরা যা করছো আল্লাহ‌ সে সম্পর্কে অবহিত।
সূরা:৫৭:আল-হাদীদ:-১১
مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یُقۡرِضُ اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا فَیُضٰعِفَہٗ لَہٗ وَ لَہٗۤ اَجۡرٌ کَرِیۡمٌ ﴿ۚ۱۱﴾
এমন কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে? উত্তম ঋণ যাতে আল্লাহ‌ তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন। আর সেদিন তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।

১-১১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
(৫৭-হাদীদ) : নামকরণ:

সূরার ২৫ আয়াতের وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ বাক্যাংশ থেকে নাম গৃহীত হয়েছে।

(৫৭-হাদীদ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

সর্ব সম্মত মতে এটি মদীনায় অবতীর্ণ সূরা। এ সূরার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হয় সম্ভবত উহুদ যুদ্ধ ও হুদায়বিয়ার সন্ধির মধ্যবর্তী কোন এক সময় এ সূরা নাযিল হয়েছে। এটা সে সময়ের কথা যখন কাফেররা চারদিক থেকে ক্ষুদ্র এ ইসলামী রাষ্ট্রটিকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল বানিয়েছিল এবং ঈমানদারদের ক্ষুদ্র একটি দল অত্যন্ত সহায় সম্বলহীন অবস্থায় সমগ্র আরবের শক্তির মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে ইসলাম তার অনুসারীদের কাছে শুধু জীবনের কুরবানীই চাচ্ছিলো না বরং সম্পদের কুরবানীর প্রয়োজনীয়তাও একান্তভাবে উপলব্ধি করেছিলো। এ ধরনের কুরবানী পেশ করার জন্য এ সূরায় অত্যন্ত জোরালো আবেদন জানানো হয়েছে। সূরার ১০ আয়াত এ অনুমানকে আরো জোরালো করছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যারা বিজয়ের পরে নিজেদের অর্থ সম্পদ খরচ করবে এবং আল্লাহর পথে লড়াই করবে তারা কখনো ঐসব লোকদের সমমর্যাদা সম্পন্ন হতে পারবে না যারা বিজয় লাভের পূর্বে জান ও মালের কুরবানী পেশ করবে। ইবনে মারদুইয়া কর্তৃক উদ্ধৃত হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীস একথাই সমর্থন করে। তিনি أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেন: কুরআন নাযিলের শুরু থেকে ১৭ বছর পর ঈমানদারদের আলোড়নকারী এ আয়াতটি নাযিল হয়। এ হিসেব অনুসারে ৪র্থ ও পঞ্চম হিজরী সনের মধ্যবর্তী সময়ই এ সূরার নাযিল হওয়ার সময়-কাল বলে নির্ধারিত হয়।

(৫৭-হাদীদ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

এ সূরার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার উপদেশ দান। যখন আরব জাহেলিয়াতের সাথে ইসলামের সিদ্ধান্তকর সংগ্রাম চলছিলো, ইসলামের ইতিহাসের সে সংকটকালে মুসলমানদেরকে বিশেষভাবে আর্থিক কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করা এবং ঈমান যে শুধু মৌখিক স্বীকৃতি ও বাহ্যিক কিছু কাজকর্মের নাম নয় বরং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য একনিষ্ঠ হওয়াই তার মূল চেতনা ও প্রেরণা, একথা তাদের মনে বদ্ধমূল করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই এ সূরা নাযিল করা হয়েছিল। যে ব্যক্তির মধ্যে এ চেতনা ও প্রেরণা অনুপস্থিত এবং আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের মোকাবিলায় নিজের প্রাণ, সম্পদ ও স্বার্থকে অধিকতর ভালবাসে তার ঈমানের দাবি অন্তসার শুন্য। আল্লাহর কাছে এ ধরনের ঈমানের কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই।

এ উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম আল্লাহ তা’আলার গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে যাতে শ্রোতারা ভালভাবে উপলবদ্ধি করতে পারে যে, কোন মহান সত্তার পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বোধন করা হচ্ছে। তারপর নিম্নের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাব পেশ করা হয়েছে।

ঈমানের অনিবার্য দাবী হচ্ছে, ব্যক্তি যেন আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে গড়িমসি ও টালবাহানা না করে। এ ধরনের কাজ শুধু ঈমানের পরিপন্থীই নয়, বাস্তবতার বিচারেও ভুল। কেননা, এসব অর্থ-সম্পদ মূলত আল্লাহ তা’আলারই অর্থ-সম্পদ। তোমাদেরকে খলিফা হিসেবে তা ব্যবহার করার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এ অর্থ-সম্পদই কাল অন্যদের হাতে ছিল, আজ তোমাদের হাতে আছে এবং ভবিষ্যতে অন্য কারো হাতে চলে যাবে। শেষ মেশ তা বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি জিনিসের মালিক আল্লাহর কাছেই থেকে যাবে। এ সম্পদের কোন অংশ তোমাদের কাজে লাগলে কেবল সেই অংশই লাগতে পারে যা তোমাদের অধিকারে থাকা কালে তোমরা আল্লাহর কাজে ব্যয় করবে।

আল্লাহর পথে জান ও মালের কুরবানী পেশ করা যদিও সর্বাবস্থায়ই সম্মানজনক কাজ। কিন্তু এসব ত্যাগ ও কুরবানীর মূল্য ও মর্যাদা অবস্থার নাজুকতা দিয়ে নিরূপিত হয়। এমন সময়ও আসে যখন কুফরী শক্তি অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে এবং সর্বক্ষণ এমন একটা আশংকা বিদ্যমান থাকে যে, কুফরীর সাথে সংঘাতে ইসলাম হয়তো পরাভূত হয়ে পড়বে। আবার এমন একটা সময়ও আসে যখন কুফর ও ইসলামের দ্বন্দে শক্তির ভারসাম্য ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং ন্যায় ও সত্যের দুশমনের মোকাবেলায় ঈমানের অনুসারীরা বিজয়লাভ করতে থাকে। গুরুত্বের দিক দিয়ে এ দু’টি পরিস্থিতি সমান নয়। তাই এ ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে যে ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করা হয় মূল্যের দিক দিয়ে তাও সমান নয়। ইসলাম যখন দুর্বল তখন তাকে সমুন্নত ও বিজয়ী করার জন্য যারা প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা ও অর্থ সম্পদ অকাতরে ব্যয় করবে তারা তাদের সমমর্যাদা লাভ করতে পারবে না।

ন্যায় ও সত্যের পথে যতটা সম্পদ ব্যয় করা হবে আল্লাহর কাছে তা ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহ ঐ সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেবেন শুধু তাই নয় নিজের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুরস্কারও দান করবেন।

আখেরাতে সেসব ঈমানদার কেবল নূর লাভ করবে যারা আল্লাহর পথে তাদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছে। মুনাফিকরা যারা দুনিয়াতে নিজেদের স্বার্থই কেবল রক্ষা করেছে এবং ন্যায় ও সত্য বিজয়ী হচ্ছে, না বাতিল বিজয়ী হচ্ছে তার কোন পরোয়াই করেনি। দুনিয়ার এ জীবনে তারা ঈমানদারদের সাথেই মিলে মিশে থাকলেও আখেরাতে তাদেরকে ঈমানদারদের থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। তারা ‘নূর’ থেকে বঞ্চিত হবে এবং কাফেরদের সাথে তাদের হাশর হবে।

যেসব আহলে কিতাবের গোটা জীবন দুনিয়া পূজায় অতিবাহিত হয়েছে এবং যাদের মন দীর্ঘদিনের গাফলতি ও অমনোযোগিতার কারণে পাথরের ন্যায় কঠোর হয়ে গিয়েছে মুসলমানদের তাদের মত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। সে কেমন ঈমানদার আল্লাহর কথা শুনে যার হৃদয়-মন বিগলিত হয় না এবং তাঁর নাযিলকৃত সত্য বিধানের সামনে মাথা নত করে না।

কেবল সেই সব ঈমানদারই আল্লাহর নিকট ‘সিদ্দিক’ ও শহীদ বলে গণ্য যারা কোন রকম প্রদর্শনীর মনোভাব ছাড়াই একান্ত আন্তরিকতা ও সততার সাথে নিজেদের অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে।

দুনিয়ার জীবন মাত্র কয়েক দিনের চাকচিক্য এবং ধোকার উপকরণ। এখানকার খেল তামাসা, এখানকার আনন্দ ও আকর্ষণ, এখানকার সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা, এখানকার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গর্ব ও অহংকার এবং এখানকার ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের ব্যপারে একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা সাধনা সব কিছুই অস্থায়ী। এর উপমা দেয়া যায় সেই শস্য ক্ষেত্রের সাথে যা প্রথম পর্যায়ে সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। তারপর বিবর্ণ হয়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করে এবং সর্বশেষ ভূষিতে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের জীবন হচ্ছে স্থায়ী জীবন যেখানে সব কাজের বড় বড় ফলাফল পাওয়া যাবে। তোমাদের যদি প্রতিযোগিতামূলকভাবে কিছু করতে হয় তাহলে জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য চেষ্টা করো। পৃথিবীতে আরাম-আয়েশ ও বিপদ-আপদ যাই আসে তা আল্লাহ তা’আলার পূর্ব লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারেই আসে। একজন ঈমানদারের ভূমিকা হওয়া উচিত বিপদ-আপদ আসলে সাহস না হারানো এবং আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তি আসলে গর্ব প্রকাশ না করা। একজন মুনাফিক বা কাফেরের আচরণ হচ্ছে আল্লাহ যদি তাকে নিয়ামত দান করেন তাহলে সে গর্বে মেতে উঠে, অহংকার প্রকাশ করতে থাকে এবং নিয়ামত দাতা আল্লাহর কাজে ব্যয় করতে নিজেও সংকীর্ণতার পরিচয় দেয় এবং অন্যদেরকেও কার্পণ্য করতে পরামর্শ দেয়।

আল্লাহ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, কিতাব এবং ন্যায় বিচারের ভারসাম্যপূর্ণ মানদণ্ড সহকারে তাঁর রসূল পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে আর তার সাথে লোহাও নাযিল করেছেন যাতে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা এবং বাতিলের মাথা অবনত করার জন্য শক্তি ব্যবহার করা যায়। এভাবে আল্লাহ দেখতে চান মানুষের মধ্যে এমন লোক কারা যারা তাঁর দ্বীনের সহায়তা ও সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হয় এবং সেজন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে। তোমাদের নিজেদের উন্নতি ও মর্যাদার জন্য আল্লাহ এই সুযোগসমূহ সৃষ্টি করেছেন। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর কাজের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নন।

আল্লাহর পক্ষ থেকে ইতিপূর্বেও একের পর এক নবী-রসূলগণ এসেছেন। তাদের আহবানে কিছু লোক সঠিক পথে ফিরে এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই পাপাচারী রয়ে গিয়েছে। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এসেছেন। তাঁর শিক্ষায় মানুষের মধ্যে বহু নৈতিক গুণাবলী সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাঁর ‘উম্মাত’ বৈরাগ্যবাদের বিদআত অবলম্বন করে।

এখন আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করবে আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতের দ্বিগুণ অংশ দেবেন এবং তাদেরকে এমন ‘নূর’ দান করবেন যার সাহায্যে তারা দুনিয়ার জীবনে পদে পদে বাঁকা পথসমূহের মধ্যে সোজা পথটি স্পষ্ট দেখে চলতে পারবে। আহলে কিতাব নিজেদেরকে যদিও আল্লাহর রহমতের ঠিকাদার মনে করে থাকে। কিন্তু আল্লাহর রহমত তাঁর নিজেরই হাত আছে। যাকে ইচ্ছা তাকে এই রহমত ও অনুগ্রহ দান করার ইখতিয়ার তাঁর আছে। এ হচ্ছে এই সূরায় সুবিন্যস্ত ও ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত বিষয়বস্তুর সার সংক্ষেপ।

# বিশ্ব-জাহানের প্রত্যেকটি বস্তু সদা সর্বদা এ সত্য প্রকাশ এবং ঘোষণা করে চলেছে যে, এ বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা ও পালনকর্তা সব রকম দোষ-ত্রুটি, অপূর্ণতা, দুর্বলতা, ভুল-ভ্রান্তি ও অকল্যাণ থেকে পবিত্র। তাঁর ব্যক্তিসত্তা পবিত্র, তাঁর গুণাবলী পবিত্র, তাঁর কাজকর্ম পবিত্র এবং তাঁর সমস্ত সৃষ্টিমূলক বা শরীয়াতের বিধান সম্পর্কিত নির্দেশাবলীও পবিত্র। এখানে অতীতকাল নির্দেশক শব্দরূপে سَبَّحَ ব্যবহার করা হয়েছে এবং অন্য কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যত কাল নির্দেশক শব্দ يسبح ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি অণু পরামাণু চিরদিন তার স্রষ্টার পবিত্রতা বর্ণনা করেছে, আজও করছে এবং ভবিষ্যতেও চিরদিন করতে থাকবে।

# মূল আয়াতে هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। এ বাক্যের শুরুতেই هُو শব্দ ব্যবহার করায় আপনা থেকেই এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও অতিশয় বিজ্ঞ শুধু তাই নয়, বরং প্রকৃত পক্ষে কেবলমাত্র তিনিই এমন সত্তা যিনি মহাপরাক্রমশালী ও অতিশয় বিজ্ঞ। عَزِيزُ আযীয শব্দের অর্থ পরাক্রমশালী, শক্তিমান ও অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার অধিকারী যার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পৃথিবীর কোন শক্তিই রোধ করতে পারে না, যার সাথে টক্কর নেয়ার সাধ্য কারো নেই, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যার আনুগত্য সবাইকে করতে হয়, যার অমান্যকারী কোনভাবেই তার পাকড়াও থেকে রক্ষা পায় না। আর حَكِيم হাকীম শব্দের অর্থ হচ্ছে, তিনি যাই করেন, জ্ঞান ও যুক্তি বুদ্ধির সাহায্যে করেন। তাঁর সৃষ্টি, তাঁর ব্যবস্থাপনা, তাঁর শাসন, তাঁর আদেশ নিষেধ, তাঁর নির্দেশনা সব কিছুই জ্ঞান ও যুক্তি নির্ভর। তাঁর কোন কাজেই অজ্ঞতা, বোকামি ও মূর্খতার লেশমাত্র নেই।

এখানে আরো একটি সূক্ষ্ম বিষয় আছে যা ভালভাবে বুঝতে হবে। কুরআন মজীদের অতি অল্প সংখ্যক স্থানে আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নাম عَزِيزُ আযীয (মহাপরাক্রমশালী) এর সাথে قوى (নিরংকুশ শক্তির অধিকারী), مقتدر (ক্ষমতাধর), جبار (আপন নির্দেশাবলী বাস্তবায়নকারী) এবং ذوانتقام (প্রতিশোধ গ্রহণকারী) শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে যার সাহায্যে তাঁর নিরংকুশ ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। যেখানে বাক্যের ধারাবাহিকতা জালেম ও অবাধ্যদের জন্য আল্লাহর আযাবের ভীতি প্রদর্শন দাবী করে কেবল সেখানেই এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের হাতে গোনা কতিপয় স্থান বাদ দিলে আর যেখানেই عزيز আযীয শব্দ ব্যবহার হয়েছে সেখানেই তার সাথে সাথে حكيم হাকীম (অতিশয় বিজ্ঞ), عليم আলীম (সর্বজ্ঞতা), رحيم রহিম (দয়ালু, নিয়মতদানকারী), غفور গাফূর (ক্ষমাশীল), وهاب ওহ্হাব (সার্বক্ষণিক দানকারী) এবং حميد হামিদ (প্রশংসিত) শব্দগুলোর মধ্য থেকে কোন শব্দ অবশ্যই ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, যে সত্তা অসীম ক্ষমতার অধিকারী সে যদি নির্বোধ হয়, মুর্খ হয়, দয়া মায়াহীন হয়, ক্ষমা ও মার্জনা আদৌ না জানে, কৃপণ হয় এবং দুশ্চরিত্র হয় তাহলে তার ক্ষমতার পরিণাম জুলুম নির্যাতন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। পৃথিবীতে যেখানেই জুলুম নির্যাতন হচ্ছে তার মূল কারণ এই যে, যে ব্যক্তি অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে সে তার শক্তি ও ক্ষমতাকে হয় মূর্খতার সাথে ব্যবহার করছে, নয়তো সে দয়ামায়াহীন, কঠোর হৃদয় অথবা কৃপণ ও সংকীর্ণমনা কিংবা দুশ্চরিত্র ও দুষ্কর্মশীল। যে ক্ষেত্রেই শক্তির সাথে এসব দোষ একত্রিত হবে সেক্ষেত্রেই কোন কল্যাণের আশা করা যায় না। এ কারণে কুরআন মজীদে আল্লাহর গুণবাচক নাম عزيز আযীয এর সাথে তাঁর , حميد , غفور , رحيم , عليم , حكيم গাফুর, হামীদ ও وهاب ওয়াহ্হাব হওয়ার কথাও অবশ্যই উল্লেখ করা হয়েছে যাতে মানুষ জানতে পারে, যে আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহান শাসন ও পরিচালনা করছেন একদিকে তিনি এমন ক্ষমতার অধিকারী যে যমীন থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত কেউ তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাঁধা দিতে পারে না, অপরদিকে তিনি حكيم হাকীক বা মহাজ্ঞানীও বটে। তাঁর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত সরাসরি জ্ঞান ও বিজ্ঞতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তিনি عليم আলীমও। যে ফায়সালাই তিনি করেন জ্ঞান অনুসারেই করেন। তিনি رحيم রহীমও। নিজের অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের নির্দয়ভাবে ব্যবহার করেন না। তিনি غفور গাফুরও। অধিনস্তদের সাথে ছিদ্রান্বেষণ বা খুঁত ধরা মানসিকতার নয়, বরং ক্ষমাশীলতার আচরণ করে থাকেন। তিনি وهاب ওয়াহ্হাবও। নিজের অধীনস্তদের সাথে কৃপণতার আচরণ করেন না। বরং চরমদানশীলতা ও বদান্যতার আচরণ করছেন এবং তিনি حميد হামীদও। তাঁর সত্তায় প্রশংসার যোগ্য সমস্ত গুণাবলীর ও পূর্ণতার সমাহার ঘটেছে।

যার সার্বভৌমত্বের (Sovereignty) ওপর রাষ্ট্র দর্শন ও আইন দর্শনের আলোচনা সম্পর্কে অবহিত, তারা কুরআনের এ বক্তব্যের প্রকৃত গুরুত্বকে ভালভাবে বুঝতে পারবেন। সাবভৌমত্ব বলতে বুঝায়, সার্বভোম ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি, অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক হবে। তার আদেশ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টিকারী, তা পরিবর্তনকারী বা পুনর্বিবেচনাকারী কোন আভ্যন্তরীণ বা বাইরের শক্তি থাকবে না এবং তার আনুগত্য করা ছাড়া কারো কোন উপায়ও থাকবে না। এ অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ধারণার সাথে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি অনিবার্যরূপেই দাবী করে যে, যিনি এ ধরনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন তাকে নিষ্কলুষ এবং জ্ঞান-বুদ্ধিতে পূর্ণাংগ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। কারণ, এরূপ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পন্ন লোক নির্বোধ, মূর্খ, দয়ামায়াহীন এবং দুশ্চরিত্র হলে তার সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সর্বাত্মক জুলুম ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এ কারনে যেসব দার্শনিক কোন মানুষ বা মানবীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন একদল মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করেছে তাদেরকে একথাও ধরে নিতে হয়েছে যে, তারা ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে হবে। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, কোন মানবীয় কর্তৃত্ব বাস্তবে যেমন কখনো এরূপ নিরস্কুশ ও সীমাহীন সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করতে পারে না তেমনি কোন বাদশাহ বা পার্লামেন্ট, জাতি কিংবা পার্টি সীমিত পরিসরে যে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করে থাকে তা নির্ভুল পন্থায় কাজে লাগানোও তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, এমন যুক্তিবুদ্ধি যার মধ্যে অজ্ঞতার লেশমাত্র নেই এবং এমন জ্ঞান যা সংশ্লিষ্ট সব সত্যকে পরিব্যাপ্ত করে—কোন একজন মানুষ, একক কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন জাতির ভাগ্যে জুটে যাওয়া তো দূরের কথা, সম্মিলিতভাবে গোটা মানবজাতিও লাভ করেনি। অনুরূপভাবে মানুষ যতক্ষণ মানুষ ততক্ষণ তার পক্ষে নিজের স্বার্থপরতা, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা, ভয়ভীতি, লোভ-লালসা, ইচ্ছা-আকাংখা, পক্ষপাতিত্ব, আবেগ তাড়িত সন্তুষ্টি ও ক্রোধ এবং ভালবাসা ও ঘৃণা করা থেকে ঊর্ধ্বে উঠাও সম্ভবপর নয়। এসব সত্যকে সামনে রেখে কেউ যদি গভীরভাবে চিন্তা করে তাহলে সে উপলব্ধি করবে যে, এ বক্তব্যের মধ্যে কুরআন প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্বের সঠিক ও পূর্ণাংগ ধারণা পেশ করেছে। কুরআন বলছেঃ عزيز আযীয এ বিশ্ব-জাহানে অর্থাৎ নিরংকুশ ও অসীম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কেউ নেই। আর কেবল তিনিই সীমাহীন এই ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী একমাত্র সত্তা যিনি ‘নিষ্কলুষ’ হাকীম’ ও ‘আলীম’ ‘রাহীম’ ও ‘গাফুর’ এবং ‘হামীদ’ ও ‘ওয়াহ্হাব’।
# যখন কিছুই ছিল না তখন তিনি ছিলেন এবং যখন কিছুই থাকবে না তখন তিনি থাকবেন। তিনি সব প্রকাশ্যের চেয়ে অধিক প্রকাশ্য। কারণ পৃথিবীতে যে জিনিসের প্রকাশ দেখা যায় তা তাঁরই গুণাবলী, তাঁরই কার্যাবলী এবং তাঁরই নূরের প্রকাশ। আর তিনি সব গুপ্ত জিনিসের চেয়ে অধিক গুপ্ত। কারণ, ইন্দ্রীয়সমূহ দ্বারা তাঁর সত্তাকে অনুভব ও উপলব্ধি করা তো দূরের কথা বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাভাবনা ও কল্পনা পর্যন্ত তাঁর রহস্য ও বাস্তবতাকে স্পর্শ করতে পারে। ইমাম আহমাদ, মুসলিম, তিরমিযী ও বায়হাকী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে এবং হাফেজ আবু ইয়া’লা মুসেলী তার মুসনাদ গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া সম্বলিত যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তার নিম্নোক্ত কথাগুলোই এ আয়াতের সর্বোত্তম ব্যাখ্যাঃ

أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَىْءٌ-

“তুমিই সর্ব প্রথম। তোমার পূর্বে আর কেউ নেই। তুমিই সর্বশেষ। তোমার পরে আর কেউ নেই। তুমিই প্রকাশ্য তোমার চেয়ে প্রকাশ্য কেউ নেই। তুমি গুপ্ত। তোমার চেয়ে অধিক গুপ্ত আর কেউ নেই।”

এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, কুরআন মজীদে জান্নাত ও দোযখবাসীদের জন্য যে চিরস্থায়ী জীবনের কথা বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলাই সর্বশেষ অর্থাৎ যখন কিছুই থাকবে না তখন তিনি থাকবেন—তার সাথে এ কথা কি করে খাপ খায়? এর জবাব কুরআন মজীদের মধ্যেই বিদ্যমান। كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ (القصص : 88) (সূরা কাছাছ আয়াত ৮৮ ) “অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা ছাড়া আর সব জিনিসই নশ্বর ও ধ্বংসশীল।” অন্য কথায় কোন সৃষ্টিরই নিজস্ব স্থায়িত্ব নেই। যদি কোন জিনিস স্থায়ী হয় বা স্থায়ী থাকে তাহলে আল্লাহ তা’আলা স্থায়ী রাখার কারণেই তা স্থায়ী হয়ে আছে এবং থাকতে পারে। অন্যথায় আল্লাহ ছাড়া স্ব স্ব ক্ষেত্রে আর সবাই নশ্বর ও ধ্বংসশীল। কেউ আপন ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যে অবিনশ্বর বিধায় জান্নাত বা দোযখে চিরস্থায়িত্ব লাভ করবে—এমনটা নয়। বরং সেখানে তার স্থায়িত্ব লাভ করার কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা তাকে চিরস্থায়ী জীবন দান করবেন। ফেরেশতাদের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। তারা আপন ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যে অবিনশ্বর নয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তারা অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং যত সময় পর্যন্ত তিনি চাইবেন তত সময় পর্যন্তই তারা বেঁচে থাকতে পারে।

# বিশ্বজাহানের স্রষ্টাও তিনি শাসনকর্তাও তিনি। (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল আ’রাফ টীকা ৪১-৪২ , ইউনুস, টীকা-৪ , আর রা’দ, টিকা ২ থেকে ৫ , হামীম আস সাজদা, টীকা ১১ থেকে ১৫ )।
# অন্য কথায় তিনি শুধু সামগ্রিক জ্ঞানের অধিকারী নন, খূঁটি নাটি বিষয়েও জ্ঞানের অধিকারী। এক একটি শস্যদানা ও বীজ যা মাটির গভীরে প্রবিষ্ট হয়, এক একটি ছোট পাতা ও অঙ্কুর যা মাটি ফুঁড়ে বের হয়, বৃষ্টির এক একটি বিন্দু যা আসমান থেকে পতিত হয় এবং সমুদ্র ও খালবিল থেকে যে বাষ্পরাশি আকাশের দিকে উত্থিত হয়, তার প্রতিটি মাত্রা তাঁর জানা আছে। কোন্ দানাটি ও বীজটি পৃথিবীর কোন্খানে কিভাবে পড়ে আছে তা তিনি জানেন বলেই সেটিকে বিদীর্ণ করে অঙ্কুরোদগম করেন এবং তাকে লালন পালন করে বড় করেন। কি পরিমাণ বাষ্প কোন্ কোন্ স্থান থেকে উত্থিত হয়েছে এবং কোথায় কোথায় পৌঁছেছে তা তিনি জানেন বলেই সেগুলো একত্রিত করে মেঘমালা সৃষ্টি করেন এবং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের জন্য তা বণ্টন করে দিয়ে একটি হিসেব অনুসারে বৃষ্টিপাত ঘটান। আর যেসব জিনিস মাটিতে প্রবেশ করে ও তা থেকে বেরিয়ে আসে এবং যেসব জিনিস আসমানের দিকে উঠে যায় ও তা থেকে নেমে আসে তাঁর বিস্তারিত দিকও এর আলোকে অনুমান ও অনুধাবন করা যেতে পারে। আল্লাহর জ্ঞান যদি এসব বিষয়ে পরিব্যপ্ত না হতো, তাহলে প্রতিটি জিনিসই আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনা এবং প্রত্যেকটি জিনিসই এমন নিপুন, নিখূঁত ও বিজ্ঞোচিত পন্থায় ব্যবস্থাপনা করা কিভাবে সম্ভব হতো?
# তোমরা কোন জায়গায়ই তাঁর জ্ঞান, তাঁর অসীম ক্ষমতা, তাঁর শাসন কর্তৃত্ব এবং তাঁর ব্যবস্থাপনার আওতা বহির্ভূত নও। মাটিতে, বায়ুতে, পানিতে, অথবা কোন নিভৃত কোণে যেখানেই তোমরা থাক না কেন, সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ জানেন, তোমরা কোথায় আছো। সেখানে তোমাদের বেঁচে থাকাটাই একথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ ঐ স্থানেও তোমাদের জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছেন। তোমাদের হৃদপিণ্ডে যে স্পন্দন উঠছে, তোমাদের ফূসফূস যে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছে, তোমাদের শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টিশক্তি যে কাজ করছে এসব কিছুরই কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় তোমাদের দেহের সব যন্ত্রপাতি ঠিকমত কাজ করছে। কোন সময় যদি তোমাদের মৃত্যু আসে তাহলে এ কারণে আসে যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তোমাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাপনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তোমাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

# তোমরা কোন জায়গায়ই তাঁর জ্ঞান, তাঁর অসীম ক্ষমতা, তাঁর শাসন কর্তৃত্ব এবং তাঁর ব্যবস্থাপনার আওতা বহির্ভূত নও। মাটিতে, বায়ুতে, পানিতে, অথবা কোন নিভৃত কোণে যেখানেই তোমরা থাক না কেন, সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ জানেন, তোমরা কোথায় আছো। সেখানে তোমাদের বেঁচে থাকাটাই একথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ ঐ স্থানেও তোমাদের জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছেন। তোমাদের হৃদপিণ্ডে যে স্পন্দন উঠছে, তোমাদের ফূসফূস যে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছে, তোমাদের শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টিশক্তি যে কাজ করছে এসব কিছুরই কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় তোমাদের দেহের সব যন্ত্রপাতি ঠিকমত কাজ করছে। কোন সময় যদি তোমাদের মৃত্যু আসে তাহলে এ কারণে আসে যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তোমাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাপনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তোমাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

# অমুসলিমদের সম্বোধন করে একথা বলা হয়নি। বরং পরবর্তী গোটা বক্তব্য থেকে একথাই প্রকাশ পাচ্ছে যে, এখানে সেই সব মুসলমানদের সম্বোধন করা হয়েছে যারা ইসলামের বাণী স্বীকার করে ঈমান গ্রহণকারীদের সাথে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু ঈমানের দাবী পূরণ করা এবং মু’মিনের মত জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করা থেকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। একথা সবারই জানা যে, অমুসলিমদেরকে ঈমানের দাওয়াত দেয়ার সাথে সাথেই একথা বলা যায় না, যে আল্লাহর পথে জিহাদের খাতে উদার মনে সাহায্য করো। কিংবা তাদেরকে একথাও বলা না যে, তোমাদের মধ্যে যারা বিজয় লাভের পূর্বে জিহাদ ও আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে তাদের মর্যাদা যারা বিজয় লাভের পরে এসে কাজ করবে তাদের চেয়ে অনেক বেশী হবে। অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাদের সামনে ইসলামের প্রাথমিক দাবী পেশ করা হয়ে থাকে, চূড়ান্ত দাবী নয়। এ কারণে বক্তব্যের ধারা অনুসারে এখানে آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ বলার অর্থ হচ্ছে, যে সেই সব লোক, যারা ঈমানের দাবী করে মুসলমানদের দলে শামিল হয়েছো—আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সরল মনে সত্যিকার অর্থে মেনে নাও এবং এমন কর্মপন্থা গ্রহণ করো যা নিষ্ঠাবান মু’মিনদের করা উচিত।
# এখানে ব্যয় করার অর্থ সাধারণ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা নয়। বরং ১০ নম্বর আয়াতের ভাষা স্পষ্টভাবে বলছে যে, এখানে এর অর্থ ঐ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামকে সমুন্নত করার যে সংগ্রাম চলছিলো সে উদ্দেশ্যে ব্যয় করা। বিশেষ করে সে সময় এমন দু’টি প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল যেজন্য ইসলামী সরকার চরমভাবে আর্থিক সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল। এর একটি ছিল সামরিক প্রয়োজন। আর অপরটি ছিল সেসব নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা করা যারা কাফেরদের জুলুম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আরবের প্রতিটি অংশ থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে এসেছিলো এবং আরো আসছিলো। এ ব্যয় মেটানোর জন্য সত্যিকার মু’মিনগণ তাঁদের শক্তি ও সামর্থের চেয়ে বেশী বোঝা নিজেরা বহন করেছিল। পরবর্তী ১০, ১২, ১৮ ও ১৯ আয়াতে এজন্য তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে বহুসংখ্যক এমন স্বচ্ছল লোকও ছিল যারা কুফর ও ইসলামের এ সংঘাতকে নিছক দর্শক হয়ে দেখছিলো। যে জিনিসের প্রতি ঈমান পোষণের দাবী তারা করছিলো তার কিছু কর্তব্য ও দায়-দায়িত্ব যে তাদের প্রাণ ও সম্পদের ওপর বর্তায়, সে বিষয়ে কোন অনুভূতিই তাদের ছিল না। এ দ্বিতীয় প্রকারের লোকদেরকেই এ আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে, খাঁটি মু’মিন হও এবং আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় কর।
# এর দু’টি অর্থ এবং দু’টি অর্থই এখানে প্রযোজ্য। একটি অর্থ হচ্ছে, তোমাদের কাছে যে সম্পদ আছে তা মূলত তোমাদের নিজের সম্পদ নয়, তা আল্লাহর দেয়া সম্পদ। তোমরা নিজেরা এর মালিক নও। আল্লাহ তাঁর নিজের প্রতিনিধি হিসেবে এ সম্পদ তোমাদের অধিকারে দিয়েছেন। অতএব, সম্পদের মূল মালিকের কাজে তা ব্যয় করতে কুণ্ঠিত ও পিছপা হয়ো না। মালিকের সম্পদ মালিকের কাজে ব্যয় করতে টালবাহানা করা প্রতিনিধির কাজ নয়। দ্বিতীয় অর্থ হলো, এ অর্থ চিরদিন তোমাদের কাছে ছিল না এবং চিরদিন তোমাদের কাছে থাকবেও না। কাল তা অন্য কিছু লোকের কাছে ছিল, আজ আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করে তা তোমাদের হাতে সোপর্দ করেছেন। আবার এমন এক সময় আসবে যখন তা তোমাদের কাছে থাকবে না। অন্য লোকেরা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। সাময়িক কর্তৃত্বের এ সংক্ষিপ্ত সময়ে যখন এ সম্পদ তোমাদের অধিকার ও কর্তৃত্বে থাকে তখন আল্লাহর কাজে তা খরচ করো, যাতে আখেরাতে তোমরা তার স্থায়ী প্রতিদান লাভ করতে পার। একটি হাদীসে নবী ﷺ এ কথাটিই বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বর্ণনা করেছেনঃ একবার নবীর (সা.) বাড়ীতে একটি বকরী জবাই করে তার গোশত বণ্টন করা হলো। ঘরে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ বকরীর কি অবশিষ্ট আছে? হযরত আয়েশা বললেনঃ

مَا بَقِىَ إِلاَّ كَتِفُهَا “একটি হাত ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।” নবী (সা.) বললেনঃ بَقِىَ كُلُّهَا غَيْرَ كَتِفِهَا

“একটি হাত ছাড়া গোটা বকরীই অবশিষ্ট আছে।” অর্থাৎ আল্লাহর পথে যা ব্যয়িত হলো প্রকৃতপক্ষে সেটাই অবশিষ্ট রইলো। আরো একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর রসূল কোন্ প্রকার দানের সওয়াব সবচেয়ে বেশী? তিনি বললেনঃ

أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيحٌ شَحِيحٌ ، تَخْشَى الْفَقْرَ وَتَأْمُلُ الْغِنَى ، وَلاَ تُمْهِلُ حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا ، وَلِفُلاَنٍ كَذَا ، وَقَدْ كَانَ لِفُلاَنٍ-

“যদি তুমি এমন পরিস্থিতিতে দান করো যে, তুমি সুস্থ সবল সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে তা বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন অনুভর করছো এবং তা কোন কাজে খাটিয়ে অধিক উপার্জনের আশা করো। সে সময়ের অপেক্ষায় থেকো না যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে আর তুমি ওসিয়ত করবে যে, এটা অমুককে দিতে হবে এবং এটা অমুককে দিতে হবে। সে সময় তো এ সম্পদ অমুক অমুকের কাছেই চলে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।

অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেনঃ

يَقُولُ ابْنُ آدَمَ مَالِى مَالِى , وَهَلْ لَكَ مِنْ مَالِكَ إِلاَّ مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ ؟ وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَذَاهِبٌ وَتَارِكُهُ لِلنَّاسِ-

“মানুষ বলে আমার সম্পদ, আমার সম্পদ। অথচ তোমার সম্পদের যতটা তুমি খেয়ে নিঃশেষ করলে কিংবা পরিধান করে পুরনো করে ফেললে অথবা দান করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করলে তা ছাড়া তোমার সম্পদে তোমার আর কোন অংশ নেই। এছাড়া আর যাই আছে একদিন তা তোমার হাত থেকে চলে যাবে আর তুমি অন্যদের জন্য তা রেখে যাবে।”-(মুসলিম)
# এখানে পুনরায় জিহাদে অর্থ সম্পদ ব্যয় করাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী এবং আন্তরিকতাপূর্ণ ঈমানের আবশ্যিক প্রমাণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অন্য কথায় যেন বলা হয়েছে প্রকৃত ও নিষ্ঠাবান মু’মিন সে-ই, যে এরূপ পরিস্থিতিতে অর্থ ব্যয় করতে টালবাহানা করে না।
#

Leave a Reply