Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৭৬/ এবং কাফের-রা বলে:-২২) [* *অপরাধীদের শাস্তি ও মুমিনের পুরস্কার :-] www.motaher21.net সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ পারা:২৯ ১-৩৭ নং আয়াত:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

( বই # ১১৭৬/ এবং কাফের-রা বলে:-২২)
[* *অপরাধীদের শাস্তি ও মুমিনের পুরস্কার :-]

www.motaher21.net
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ
পারা:২৯
১-৩৭ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
ফী জিলালিল কুরআন:-

সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১
اَلۡحَآقَّۃُ ۙ﴿۱﴾
সেই অবশ্যম্ভাবী ঘটনা।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২
مَا الۡحَآقَّۃُ ۚ﴿۲﴾
কী সেই অবশ্যম্ভাবী ঘটনা?
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩
وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡحَآقَّۃُ ؕ﴿۳﴾
তুমি কি জান সে অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি কি?
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৪
کَذَّبَتۡ ثَمُوۡدُ وَ عَادٌۢ بِالۡقَارِعَۃِ ﴿۴﴾
সামূদ ও ‘আদ সম্প্রদায় মিথ্যারোপ করেছিল ভীতিপ্ৰদ মহাবিপদ সম্পর্কে ।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৫
فَاَمَّا ثَمُوۡدُ فَاُہۡلِکُوۡا بِالطَّاغِیَۃِ ﴿۵﴾
সুতরাং সামূদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ঙ্কর গর্জন দ্বারা।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৬
وَ اَمَّا عَادٌ فَاُہۡلِکُوۡا بِرِیۡحٍ صَرۡصَرٍ عَاتِیَۃٍ ۙ﴿۶﴾
আর আ’দ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঝড়ো-হাওয়া দ্বারা।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৭
سَخَّرَہَا عَلَیۡہِمۡ سَبۡعَ لَیَالٍ وَّ ثَمٰنِیَۃَ اَیَّامٍ ۙ حُسُوۡمًا ۙ فَتَرَی الۡقَوۡمَ فِیۡہَا صَرۡعٰی ۙ کَاَنَّہُمۡ اَعۡجَازُ نَخۡلٍ خَاوِیَۃٍ ۚ﴿۷﴾
তিনি সাত রাত ও আট দিন ধরে বিরামহীনভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (তুমি সেখানে থাকলে) দেখতে পেতে তারা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে আছে যেন খেজুরের পুরানো কাণ্ড।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৮
فَہَلۡ تَرٰی لَہُمۡ مِّنۡۢ بَاقِیَۃٍ ﴿۸﴾
তুমি তাদের কাউকে অবশিষ্ট দেখতে পাচ্ছো কি?
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৯
وَ جَآءَ فِرۡعَوۡنُ وَ مَنۡ قَبۡلَہٗ وَ الۡمُؤۡتَفِکٰتُ بِالۡخَاطِئَۃِ ۚ﴿۹﴾
ফেরাউন, তার পূর্ববর্তী লোকেরা এবং উলটপালট হয়ে যাওয়া জনপদসমূহও৬ একই মহা অপরাধে অপরাধী হয়েছিলো।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১০
فَعَصَوۡا رَسُوۡلَ رَبِّہِمۡ فَاَخَذَہُمۡ اَخۡذَۃً رَّابِیَۃً ﴿۱۰﴾
তারা সবাই তাদের রবের প্রেরিত রসূলের কথা অমান্য করেছিল। তাই তিনি তাদের অত্যন্ত কঠোরভাবে পাকড়াও করেছিলেন।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১১
اِنَّا لَمَّا طَغَا الۡمَآءُ حَمَلۡنٰکُمۡ فِی الۡجَارِیَۃِ ﴿ۙ۱۱﴾
যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল নিশ্চয় তখন আমরা তোমাদেরকে আরোহণ করিয়েছিলাম নৌযানে,
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১২
لِنَجۡعَلَہَا لَکُمۡ تَذۡکِرَۃً وَّ تَعِیَہَاۤ اُذُنٌ وَّاعِیَۃٌ ﴿۱۲﴾
যাতে এ ঘটনাকে আমি তোমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় স্মৃতি বানিয়ে দেই যেন স্মরণকারী কান তা সংরক্ষণ করে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৩
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ نَفۡخَۃٌ وَّاحِدَۃٌ ﴿ۙ۱۳﴾
যখন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৪
وَّ حُمِلَتِ الۡاَرۡضُ وَ الۡجِبَالُ فَدُکَّتَا دَکَّۃً وَّاحِدَۃً ﴿ۙ۱۴﴾
তখন পর্বতমালা সহ পৃথিবী উৎক্ষিপ্ত হবে এবং একই ধাক্কায় ওগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৫
فَیَوۡمَئِذٍ وَّقَعَتِ الۡوَاقِعَۃُ ﴿ۙ۱۵﴾
সেদিন সংঘটিত হবে মহাঘটনা (কিয়ামত)।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৬
وَ انۡشَقَّتِ السَّمَآءُ فَہِیَ یَوۡمَئِذٍ وَّاہِیَۃٌ ﴿ۙ۱۶﴾
সেদিন আসমান চৌচির হয়ে যাবে এবং তার বন্ধন শিথিল হয়ে পড়বে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৭
وَّ الۡمَلَکُ عَلٰۤی اَرۡجَآئِہَا ؕ وَ یَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّکَ فَوۡقَہُمۡ یَوۡمَئِذٍ ثَمٰنِیَۃٌ ﴿ؕ۱۷﴾
ফেরেশতারা এর প্রান্ত সীমায় অবস্থান করবে। সেদিন আটজন ফেরেশতা তাদের ওপরে তোমার রবের আরশ বহন করবে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৮
یَوۡمَئِذٍ تُعۡرَضُوۡنَ لَا تَخۡفٰی مِنۡکُمۡ خَافِیَۃٌ ﴿۱۸﴾
সেদিন উপস্থিত করা হবে তোমাদেরকে এবং তোমাদের কোন গোপনই আর গোপন থাকবে না।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১৯
فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ بِیَمِیۡنِہٖ ۙ فَیَقُوۡلُ ہَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا کِتٰبِیَہۡ ﴿ۚ۱۹﴾
তখন যাকে তার ‘আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, ‘লও, আমার ‘আমলনামা পড়ে দেখ ;
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২০
اِنِّیۡ ظَنَنۡتُ اَنِّیۡ مُلٰقٍ حِسَابِیَہۡ ﴿ۚ۲۰﴾
‘আমি দৃঢ়বিশ্বাস করতাম যে, আমাকে আমার হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে।’
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২১
فَہُوَ فِیۡ عِیۡشَۃٍ رَّاضِیَۃٍ ﴿ۙ۲۱﴾
তাই সে মনের মত আরাম আয়েশের মধ্যে থাকবে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২২
فِیۡ جَنَّۃٍ عَالِیَۃٍ ﴿ۙ۲۲﴾
উন্নত মর্যাদার জান্নাতে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৩
قُطُوۡفُہَا دَانِیَۃٌ ﴿۲۳﴾
যার ফলরাশি অবনমিত থাকবে নাগালের মধ্যে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৪
کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا ہَنِیۡٓـئًۢا بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ ﴿۲۴﴾
বলা হবে, ‘পানাহার কর তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে।’
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৫
وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ کِتٰبَہٗ بِشِمَالِہٖ ۬ۙ فَیَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُوۡتَ کِتٰبِیَہۡ ﴿ۚ۲۵﴾
কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৬
وَ لَمۡ اَدۡرِ مَا حِسَابِیَہۡ ﴿ۚ۲۶﴾
এবং আমার হিসেব যদি আমি আদৌ না জানতাম তাহলে কতই না ভাল হত।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৭
یٰلَیۡتَہَا کَانَتِ الۡقَاضِیَۃَ ﴿ۚ۲۷﴾
হায়! আমার সেই মৃত্যুই (যা দুনিয়াতে এসেছিলো) যদি চূড়ান্ত হতো।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৮
مَاۤ اَغۡنٰی عَنِّیۡ مَالِیَہۡ ﴿ۚ۲۸﴾
আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজেই এল না।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-২৯
ہَلَکَ عَنِّیۡ سُلۡطٰنِیَہۡ ﴿ۚ۲۹﴾
আমার সব ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩০
خُذُوۡہُ فَغُلُّوۡہُ ﴿ۙ۳۰﴾
ফেরেশ্তাদেরকে বলা হবে, ‘ধর তাকে, তার গলায় বেড়ী পরিয়ে দাও।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩১
ثُمَّ الۡجَحِیۡمَ صَلُّوۡہُ ﴿ۙ۳۱﴾
অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩২
ثُمَّ فِیۡ سِلۡسِلَۃٍ ذَرۡعُہَا سَبۡعُوۡنَ ذِرَاعًا فَاسۡلُکُوۡہُ ﴿ؕ۳۲﴾
এবং সত্তর হাত লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩৩
اِنَّہٗ کَانَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ الۡعَظِیۡمِ ﴿ۙ۳۳﴾
নিশ্চয় সে মহান আল্লাহ্র প্রতি ঈমানদার ছিল না,
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩৪
وَ لَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ ﴿ؕ۳۴﴾
এবং অভাবগ্রস্তকে অন্নদানে উৎসাহিত করত না;
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩৫
فَلَیۡسَ لَہُ الۡیَوۡمَ ہٰہُنَا حَمِیۡمٌ ﴿ۙ۳۵﴾
অতএব এই দিন সেখানে তার কোন সুহৃদ থাকবে না।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩৬
وَّ لَا طَعَامٌ اِلَّا مِنۡ غِسۡلِیۡنٍ ﴿ۙ۳۶﴾
এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত।
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-৩৭
لَّا یَاۡکُلُہٗۤ اِلَّا الۡخَاطِـُٔوۡنَ ﴿٪۳۷﴾
যা অপরাধীরা ব্যতীত কেউ ভক্ষণ করবে না।

১-৩৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
ফী জিলালিল কুরআন:-

সংক্ষিপ্ত আলােচনা : এটি একটি ভয়ংকর আতংক সৃষ্টিকারী সূরা। এটি শােনামাত্রই স্নায়ুতে একটা তীব্র ঝাঁকুনি অনুভুত হয়। সুরাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চেতনায় ক্রমাগত করাঘাত করতে থাকে। এটি যেই পড়ে এক অবর্ণনীয় ভীতি তার গােটা সত্তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। বিভীষিকাময় দৃশ্যগুলাে একের পর এক তার সামনে আসতে থাকে এবং তা তার স্নায়ুতন্ত্রীকে ঝাঁকুনি দিয়ে চলে যায়। কখনাে ভীতি ও শংকা, কখনাে ভক্তি ও শ্রদ্ধা আবার কখনাে শাস্তির অনুভূতি জাগে। আর প্রতি মুহূর্তে অনুভূত হয় এক অতন্দ্র ও সদা জাগ্রত সত্তার দৃপ্ত তৎপরতা। সূরাটি সামগ্রিকভাবে শ্রোতার চেতনায় সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে যে অনুভূতি জাগ্রত করে তা হচ্ছে এই যে, দ্বীন ও ঈমানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা কোনাে তামাশার বিষয় নয়। এতে কোনাে তামাশার অবকাশই নেই। এটি দুনিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ, আখেরাতেও গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহর দাড়িপাল্লায় ও হিসাব-নিকাশেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। তাই এ বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করার কোনাে অবকাশ নেই। যে কেউ এ বাস্তবতাকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করার চেষ্টা করবে, সে আল্লাহর অপ্রতিরোধ্য গযবের কবলে পড়বে। রসূল(স.) যদি একে উপেক্ষা বা অবহেলা করতেন, তাহলে তারও রেহাই ছিলাে না। কেননা দ্বীন ও ঈমান গােটা মানব জাতির চেয়েও মূল্যবান, দুনিয়া জাহানের সবকিছুর চাইতেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ, মহীয়ান ও গরিয়ান। বস্তুত আল্লাহর এ দ্বীন হচ্ছে চুড়ান্ত সত্য, চিরন্তন ও শাশ্বত সত্য এবং দৃঢ় প্রত্যয়মূলক, অকাট্য মহা সত্য- যাতে সন্দেহ সংশয়ের লেশমাত্রও নেই। সর্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত এ দ্বীন তাই সৃষ্টি জগতের সব কিছুর উর্ধে উপরােক্ত নিগুঢ় তত্ত্ব এই সুরার নাম থেকেই প্রতিভাত হয়। সূরাটিতে কেয়ামতেরও একটি নাম মনােনীত করা হয়েছে। নামটি হচ্ছে আল-হাক্কাহ। এ শব্দটি শাব্দিক ও অর্থগত উভয় ভাবেই মানবীয় স্নায়ুতে সত্য প্রিয়তা, সত্যনিষ্ঠা এবং সত্যের জন্যে দৃঢ়তা ও স্থীতিশীলতার ভাবধারা বদ্ধমূল করে দেয়। শব্দটির ধ্বনিতাত্বিক ও উচ্চারণগত ভারত্বের বিশ্লেষণ করলেও মনে হয়, এটি শ্রোতার ওপর এমন ভারী বােঝা চাপিয়ে দেয় যে সত্যের অবস্থানে সে একেবারেই স্থির স্থীতিশীল হয়ে যায়। এই দ্বীন, এই আকীদা এবং আখেরাতে অবিশ্বাসীদের শােচনীয় পরিণতির মধ্য দিয়েও এই তাৎপর্য প্রতিভাত হয়। সেই পরিণামের বর্ণনা দেয়া হয়েছে ধারাবাহিকভাবে সুরার শুরু থেকেই। সে বিবরণে দেখানাে হয়েছে কি সাংঘাতিক ও বীভৎস পরিণতি ইসলামের দুশমনদের কপালে জুটেছিলাে। বলা হয়েছে, ‘সামূদ ও আদ জাতি অবিশ্বাস করেছিলাে সেই অতর্কিতে নেমে আসা ভয়ংকর ঘটনাকে। সামুদ তাে এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে গেছে, আর আদকে ধ্বংস করা হয়েছে এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় দিয়ে… যেন কোনাে সংরক্ষক তার স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখে। এভাবে যে বা যারাই এই সত্যকে অগ্রাহ্য করেছে, তাকে বা তাদেরকে ভয়াবহ পরিণতি ভােগ করতে হয়েছে। সে পরিণতি ছিলাে ততটাই ভয়াবহ ও মারাত্মক, যতটা গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তব এই মহাসত্য। এতে আদৌ কোনাে তামাশা বা অবজ্ঞা অবহেলার অবকাশ ছিলাে না। কেয়ামতের যে ত্রাস-সঞ্চারী দৃশ্য এ সূরায় তুলে ধরা হয়েছে, তাতেও সত্যের উল্লেখিত তাৎপর্য প্রতিফলিত। সে সময়ে সৃষ্টি জগতের শােচনীয় পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং মহান আল্লাহর জ্যোতির বিস্ফোরণ ঘটবে। বলা হয়েছে, ‘যখন শিংগায় একটি ফুঁক দেয়া হবে… তােমার প্রভুর সিংহাসন সেদিন মাথার ওপর বহন করবে আটজন।’ পূর্বেকার আতংকজনক বিবরণ আর এখানকার ভক্তি ও শ্রদ্ধার অনুভূতি জাগ্রতকারী বিবরণ এ দুয়ে মিলে হিসাব নিকাশের দৃশ্যের ভয়াবহতা আরাে বাড়িয়ে দেয় এবং উল্লিখিত নিগুঢ় তাৎপর্যকে চেতনায় আরাে বাক্যালাপের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। যথা, গভীরভাবে বদ্ধমূল করে। এরপর মুক্তিলাভকারী ও শাস্তি ত্যাগকারীদের যাকে ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, সে বলবে এই নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখাে। আমার এই হিসাব-নিকাশ হওয়ার এই দিনটির ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিলাে। এই ব্যক্তি মুক্তি পেয়ে গেছে। তবু স্পষ্ট করে নিজের মুক্তির কথা ব্যক্ত করবে না। পক্ষান্তরে যাকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, সে বলবে, ‘হায়, আমার আমলনামা না দিলেই ভালাে হতাে। আমার হিসাব যদি আমি না জানতাম এবং আমার মৃত্যুই যদি আমাকে নিশ্চিত করে দিত, তাহলে কতই না ভালাে হতাে। আমার সহায় সম্পদ (আজ) কোনাে কাজে লাগলাে না। আমার ক্ষমতা এবং প্রভাব প্রতিপত্তিও আমার হাতছাড়া হয়ে গেলাে।’ এভাবেই অপরাধীর শােচনীয় পরিণতি মানবীয় অনুভূতি বদ্ধমূল হয়ে যায়। এরপর সেই ভয়াবহ দিনের বিভীষিকাময় দৃশ্যে আরাে একটা ব্যাপার সংযােজিত হয়। সেটা হলাে সে দিনের সর্বময় কর্তার এই ঘােষণা, ‘ওকে গ্রেপ্তার করাে এবং ওর ঘাড়ে শিকল পরাও। তারপর ওকে জাহান্নামে ছুড়ে মারাে। তারপর সত্তর হাত লম্বা শিকলে ওকে বাধাে।’ এ আয়াত ক’টির প্রতিটি আয়াত যেন সমগ্র আকাশ ও পৃথিবীর সমান ভারী হাতুড়ি হয়ে আমাদের বুকে অত্যন্ত ভয়ংকর ভাবে আঘাত হানে। পরবর্তী আয়াতগুলােতে এই ভয়াবহ পরিণতির কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সে (আসলে) মহান আল্লাহর ওপর ঈমান রাখতাে না, দরিদ্রকে খাদ্য দিতে উৎসাহিত করতাে না। আজ তাই এখানে তার কোনাে অন্তরংগ বন্ধু নেই। ক্ষতস্থানের নােংরা নির্যাস ছাড়া তার আর কোনাে খাদ্য নেই, যা কেবল পাপিষ্ঠ লােকদের খাদ্য। তারপর সেই তাৎপর্য এই শপথ বাক্যেও প্রতিফলিত হয়, যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন সম্পর্কে উচ্চারণ করেছেন, ‘তােমরা যা দেখতে পাও ও যা দেখতে পাওনা তার শপথ করে বলছি, নিশ্চয়ই এ বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন মহান দূতের বাণী । এটা কোনাে কবির কথা নয়… বিশ্ব প্রভুর প্রত্যাদেশ। সর্বশেষে এই মর্মে চুড়ান্ত হুমকি ও হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে যে, এই দ্বীনকে নিয়ে কেউ যদি ছিনিমিনি খেলে বা বিকৃত করে, তা সে যেই হােক না কেন, এমনকি খােদ রসূলও যদি হয়, তবু তার রেহাই নেই, ধরে নাও, যদি মুহাম্মদ(সা.)ও নিজের কোনাে মনগড়া কথাকে আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দিত, তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তার কণ্ঠ-শিরা ছিড়ে ফেলতাম। আর সে অবস্থায় তােমাদের কেউই তাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারতে না। বস্তুত এ দ্বীন এমন একটি জিনিস, যার ব্যাপারে কোনাে আপোষ, দরকষাকষি বা উদাসীনতার অবকাশ নেই। সুরার শেষে কোরআন ও তার উপস্থাপিত দ্বীন সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘােষণা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই এই কোরআন আল্লাহ জন্যে স্মরণিকা… অতএব তােমার মহান প্রভুর নামে পবিত্রতা ঘােষণা করাে।’ সুরার শেষে এ হচ্ছে কোরআন সম্পর্কে চুড়ান্ত বক্তব্য। এই সুরার বর্ণনাভংগী এমন দৃশ্য তুলে ধরে যে, পাঠক তার সামনে একেবারে সত্য ঘটনা চলন্ত ও জীবন্ত দেখতে পাচ্ছে বলে অনুভব করে। এ দৃশ্য সমূহ অত্যন্ত নাটকীয়, প্রভাবশালী, সংক্ষিপ্ত ও ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন। সামূদ, আদ, ফেরাউন ও লুত(আ.)-এর জাতির বিধ্বস্ত জনপদগুলাের দৃশ্য একের পর এক আমাদের সামনে দিয়ে অতিক্রান্ত হয়। এর দ্বারা আমরা নিদারুণ ভাবে প্রভাবিত হই। হযরত নূহ(আ.)-এর আমলের মহাপ্লাবনের ঘটনা, কিছু সংখ্যক মানুষের নৌকায় আরােহন ও বাদবাকীদের ধ্বংসের দৃশ্য এবং একটি ঐতিহাসিক সত্যকে মাত্র কয়েকটি শব্দে ব্যক্ত করে দিচ্ছে। আদ জাতির ধ্বংস হওয়ার দৃশ্য এবং তাদের সম্পর্কে এই শব্দগুলাে এরূপ উপমা দেয় যে, তারা খেজুরের পুরানাে পতিত ডালের মতাে বিক্ষিপ্তভাবে পড়েছিলাে। সাত রাত ও আট দিন ধরে এক নাগাড়ে ঝড় চলতে থাকা এবং আদ জাতিকে সমূলে উৎখাত করার বিবরণ এমন চমৎকার অলংকার সমৃদ্ধ ভাষায় দেয়া হয়েছে যে, তার তুলনা বিরল। কোরআন যে আসলেই ভাষার মোজেজা, এ সূরা অধ্যয়ন করলে সে সম্পর্কে বিশ্বাস আরাে দৃঢ় হয়। কেয়ামতের ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা এমন ভাষায় বলা হয়েছে যে, মনে হয় এ বিস্ফোরণ এক্ষুণি আমাদের সামনেই সংঘটিত হবে। আকাশ ও পৃথিবীকে এক সাথে উত্তোলন করা ও তারপর এক সাথে আছাড় দেয়া। তারপর আকাশ ফেটে যাওয়া এবং সেদিন আকাশের খুবই দুর্বল হওয়া এবং ফেরেশতাদের আকাশের প্রান্তে অবস্থান এ সব আল্লাহর দোর্দন্ড প্রতাপের এমন ভয়াল দৃশ্য যেন তা এক্ষুণি সংঘটিত হচ্ছে। তা ছাড়া আটজন ফেরেশতার আল্লাহর আরশকে ঘাড়ে তােলা, মানুষের যাবতীয় কৃতকর্ম সহ আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া এবং তাদের কোনাে কাজ বা কথাই গােপন না থাকা এ সব বিবরণ পড়ে সত্যি যেন কেয়ামতের মাঠ ও আল্লাহর আদালতের ছবি চোখের সামনে প্রতিভাত হয়। এরপর মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির দৃশ্য দেখানাে হয়েছে। তার ডান হাতে তার আমলনামা। তার এতাে আনন্দ যেন সমগ্র পৃথিবী তার সে আনন্দে মাতােয়ারা। উল্লসিত হয়ে সে সবাইকে তার আমলনামা পড়ে দেখার জন্যে ডেকে বলছে, এই যে আমার আমলনামা তােমরা পড়াে। আমি বিশ্বাস করতাম যে, একদিন হিসাব নিকাশের সম্মুখীন আমাকে হতে হবে।’ অপরদিকে ব্যর্থকাম মানুষের দৃশ্য। তার বাম হাতে তার আমলনামা। আর তার প্রতিটি বাক্য থেকে অনুতাপ, দুঃখ ও হতাশা প্রতিফলিত। ‘হায় আফসােস  আমাকে আমার আমলমানা না দেয়া হলেই ভালাে হতাে… আমার সমন্ত প্রভাব প্রতিপত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে।’ আল্লাহ তায়ালা যখন বলবেন ‘ওকে গ্রেফতার করাে অতপর শিকল পরাও…’ একথা শুনে কম্পিত হবে না এমন কে আছে। সেদিন আল্লাহর এ আদেশ কেমন ক্ষিপ্রগতিতে প্রতিপালিত হবে তা সবাই দেখতে পাবে। সেদিন যারা ব্যর্থ হবে তাদের অবস্থা হবে বড়ই করুণ। বলা হয়েছে, সেদিন সেখানে তার কোনাে বন্ধু থাকবে না…’ এ সব কিছু সত্যিই খুব ভয়াবহ দৃশ্য তুলে ধরে। সবার শেষে যে হুমকি আল্লাহর নামে মনগড়া মিথ্যা রটনাকারীদের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে। তা শুনে আতংক অনুভব করে না এমন মানুষ অত্যন্ত কম। যদি সে আমার ওপর কোনাে অপবাদ আরােপ করতাে তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে তার প্রাণের শিরা কেটে দিতাম এবং কেউ তাকে বাঁচাতে পারতাে না।’ এক কথায় বলা যায়, এই সুরার এই দৃশ্যগুলাে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তা মানুষের মনে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এই সুরায় ব্যবহৃত শব্দ সমূহের ঋনাত্মক বৈশিষ্ট খুবই লক্ষণীয়। বাক্যের ভেতরে যে দৃশ্য সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে, সেই সব দৃশ্যের অনুপাতে শব্দের স্বরগত তারতম্য রয়েছে। উদারহণ স্বরূপ সুরার শুরুতে আল-হাক্কা, উচ্চারণে দীর্ঘ টান, দ্বিত্ব প্রয়ােগ ইত্যাদি বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করে। প্রথম আয়াত দুটিতে থামলেও যেমন শ্রোতার মনে তা বিশেষ প্রভাব পড়ে, না থামলেও তেমনি। এ শব্দগুলো দুনিয়া ও আখেরাতে আনন্দ ও বেদনা, আশা ও নিরাশার যে দৃশ্যাবলী রয়েছে, তাও যেন সংশ্লিষ্ট শব্দ সমূহ উচ্চারণের সাথে সাথেই জীবন্ত ও মূর্ত হয়ে ওঠে। আর এই শব্দগুলাের ধ্বনি ও গঠন প্রণালীর সাথে সে দৃশ্য সমূহের ঘনিষ্ট সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তারপর যেই অপরাধীর শাস্তির বিবরণ শুরু হয় অমনি শব্দের সূর ও ধ্বনি পাল্টে যায়। ওকে ধরাে, শিকল পরাও, অতপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করাে এর প্রতিটি শব্দের সূর বক্তব্য বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ। অতপর সহসাই সূর পাল্টে যায় যখন আল্লাহ তার সিদ্ধান্তের কারণ বর্ণনা করে বলেন, ‘সে আল্লাহর ওপর ঈমান রাখতাে না… তােমার মহান প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ করাে। এখানে শব্দ গুলাের সুর ও ধ্বনি দীর্ঘায়িত হয়েছে। কেননা এখানে আদেশ নিষেধ নয় বরং কারণ বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। এ কয়টা জিনিস আমি উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করলাম। নচেৎ সমগ্র সূরা আসলে এরূপ। বস্তুত এ সূরার শব্দ কাঠামােই এমন যে, যে-ই তা শুনবে, সে প্রকম্পিত না হয়ে পারবে না এবং তা যে কোনাে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও অলংকার বর্ণনার চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। এবারে সূরাটির তাফসীরে মনােনিবেশ করা যাক।

ফী জিলালিল কুরআন:   সূরার প্রথম তিনটি আয়াত অত্যন্ত অতর্কিতে ও নাটকীয় ভংগিতে বর্ণিত হয়েছে। এর শুরুই হয়েছে আল হাক্কাহ অর্থাৎ কেয়ামতের নাম দ্বারা। এ সূরার অধিকাংশ আয়াত কেয়ামত ও তার ঘটনাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই সূরাটির এভাবে সূচনা স্বার্থক হয়েছে ‘আল হাক্কাহ’ শব্দটি ‘হক’ ধাতু থেকে গৃহীত। এর অর্থ হতে পারে সত্যের সাথে সংগতিপূর্ণ, সত্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়ে নাযিল হওয়া সূরা, সত্য অনুসারে সংঘটিত ঘটনা। এর ভেতরে যে অর্থই গ্রহণ করা হােক না কেন, সূরার আলােচ্য বিষয়ের সাথে তা পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই সঠিক সত্য ও নির্ভুল, যা কিছু ঘটবে সবই সত্য, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল অতীত ও ভবিষ্যত ঘটনাবলী সত্য, অবিশ্বাসীদের সত্য প্রত্যাখ্যানে তাদের যে গালমন্দ করা হয়েছে ও যে শাস্তি দেয়া হবে তা ন্যায় সংগত- এ সবই এ শব্দের অর্থ হতে পারে। মােট কথা, বলতে গেলে এই একটি শব্দ থেকে পুরাে সূরারই তাফসীর বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সমগ্র সূরার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ কেবল সত্যকে বর্ণনামূলক ও আতংকজনক করে তােলে। এ পরিবেশ একদিকে যেমন আল্লাহর সীমাহীন কুদরত বা ক্ষমতার অনুভূতি সৃষ্টি করে, অপরদিকে তেমনি এই অসীম ক্ষমতার সামনে মানব সত্তার দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর ভয়াবহ পাকড়াও, সত্য ও সঠিক পথ থেকে সরে গেলে মানুষকে কঠিন শাস্তি দানের হুঁশিয়ারী এবং নবীদের দাওয়াত প্রতাখ্যান করার পরিণামও এতে প্রকাশ করে। কেননা নবীরা সত্যের পথ প্রদর্শক। তাদের শিক্ষা ও শরীয়ত সম্পূর্ণ সত্য। আর এ সব যখন সত্য, তখন তাদের আগমন নিরর্থক নয়। আল্লাহর রসূলরা ভক্তি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য লাভের জন্যেই প্রেরিত হয়েছিলেন। যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হবে, তার জন্যে শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। এ আয়াত তিনটিতে আল হাক্কাহ শব্দটি তিনবার এসেছে। প্রথম আয়াতে শব্দটি উদ্দেশ্য হিসাবে এসেছে, এর বিধেয় কি তা কেউ জানে না। দ্বিতীয় আয়াতে প্রশ্নবােধক বাক্য দ্বারা এর বক্তব্য বিষয়কে আরাে ভয়ংকর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষত, প্রশ্নের জবাব দানে নীরবতা অবলম্বন করার দরুণ এর ভীতিপ্রদ বৈশিষ্ট বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ফী জিলালিল কুরআন:   *আদ ও সামুদ জাতির পরিণতি : এর পরবর্তী আলােচনা শুরু হয়েছে ইসলামের আহবান প্রত্যাখ্যানকারীদের দিয়ে এবং তাদের শোচনীয় পরিণামের বর্ণনা দিয়ে। ৪র্থ আয়াত থেকে ৮ম আয়াত পর্যন্ত আদ ও সামূদ জাতির বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের শাস্তির কথা একটা বিস্ফোরণের আকারে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, সামূদ ও আদ জাতি সেই ভয়ংকর কর্ণবিদারী শব্দকে অস্বীকার করেছিলাে। সামূদ তাে একটা ভয়ংকর দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেলাে। আর আদকে ধ্বংস করা হলাে প্রচন্ড ঘুর্ণিঝড় দ্বারা। তুমি কি এখন তাদের আর কোনাে চিহ্ন অবশিষ্ট দেখতে পাও? এ আয়াত কয়টিতে কেয়ামতের আরেকটি নাম ‘কারিয়া’ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হাককা বা সত্যের চেয়ে কিছু বেশী কঠিন। এ শব্দের অর্থ হচ্ছে যা প্রচন্ড শব্দ করে, আঘাত করে, ছিদ্র করে। কেয়ামত স্বীয় আতংক ও ভীতি দ্বারা মানুষের মনে আঘাত করবে। বিশ্বজগতকে বিকট শব্দ দ্বারা ধ্বংস করে দেবে। এই কেয়ামতকে সামূদ ও আদ জাতি অস্বীকার করেছিলাে। এর পরিণাম তারা কি শাস্তি ভােগ করেছিলাে, তা আমাদের দেখতে হবে। হেজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী আল হিজর নামক স্থান ছিলাে সামুদের আবাসভূমি। তাদেরকে যে আযাব দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিলাে তা ছিলাে বিকট চিৎকার। কোরআনে একাধিক জায়গায় এর বিবরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে এই চিৎকারের নাম দেয়া হয়েছে তাগিয়া। এ শব্দ দ্বারা পূর্বের ও পরের আয়াতগুলাের সাথে ধ্বনি ও ছন্দগত মিল যেমন রক্ষা করা হয়েছে, তেমনি এ সূরার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের সাথে এর সংযােগ রক্ষা করা হয়েছে। এই একটি মাত্র শব্দ দ্বারা সামূদ জাতির ঘটনার বর্ণনা সমাপ্ত করা হয়েছে এবং আর কোনাে বিশ্লেষণের দরকার মনে হয়নি। কেননা সামুদের ঘটনা আকস্মিকভাবেই ঘটেছিলাে এবং তার আর কোনাে জের ছিলাে না। তবে আদ জাতির ঘটনা কিছুটা বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা এটা সাত রাত আট দিন ধরে ঘটেছিলাে। রীহ সরসর শব্দটির অর্থ হলো তীব্র ও ঠান্ডা ঝড়। এই শব্দটির ধ্বনিগত বিন্যাসেও ঝড়ের তীব্রতা ও শীতলতা পরিলক্ষিত হয়। তারপর ‘আতিয়া’ শব্দটি এসে এতে আরাে তীব্রতা যুক্ত করেছে, যাতে কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আ’দ জাতির হঠকারিতা ও বিদ্রোহী আচরণের সাথে এ আয়াতের শাব্দিক সমন্বয় ঘটে। আদ জাতির আবাসভূমি ছিলাে দক্ষিণ আরব, ইয়ামান ও হাদরামওতের মধ্যবর্তী আহকাম নামক স্থান। আদ জাতি অত্যন্ত হিংস্র, লড়াকু ও শক্তিশালী জাতি ছিলাে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সাত দিন আট রাত ধরে প্রচন্ড ঝড় দ্বারা শাস্তি দিলেন। হসুম শব্দটির অর্থ হলাে, যা ক্রমাগত কোনাে জিনিসকে কাটতে থাকে। তাদের লাশগুলােকে খেজুরের মরা ডালের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত চমকপ্রদ তুলনা। এ দ্বারা সেই দীর্ঘকায় শক্ত মানবদের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত মৃত দেহগুলাের যথার্থ ছবি ফুটে ওঠে। আর শেষ কথাটা এই ভয়াল দৃশ্যের চুড়ান্ত রূপ প্রকাশ করেছে। ‘তুমি তাদের কোনাে চিহ্ন অবশিষ্ট দেখতে পাও কি?’ এ হচ্ছে আদ ও সামূদের পরিণাম।
ফী জিলালিল কুরআন:   *আরাে তিনটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি : পরবর্তী আয়াতগুলােতে অন্যান্য আল্লাহদ্রোহীদের পরিণাম বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফেরাউন, তার পূর্ববর্তী এবং উল্টে যাওয়া জনপদের লােকেরা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিলাে। তারা তাদের প্রতিপালকের প্রেরিত নবীর কথা অমান্য করেছে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শক্তভাবে পাকড়াও করলেন।’ এখানে ফেরাউন দ্বারা হযরত মুসা(আ.)-এর সমসাময়িক ফেরাউনের কথা বলা হয়েছে। তার পূর্ববর্তীদের বিবরণ দেয়া হয়নি। উল্টে যাওয়া জনপদ ছিলাে হযরত লুত(আ.)-এর জাতির। তাদের ভেতরে বাস করতাে অত্যন্ত বিকৃত স্বভাবের কিছু মানুষ। এ সব জাতির কাছে ভিন্ন ভিন্ন নবী এসেছিলেন। কিন্তু এক বচনের উল্লেখ করে বুঝানাে হয়েছে যে, নবুওত জিনিসটা মূলত একই জিনিস। একজন রসূলকে অস্বীকার করলে তা সবাইকে অস্বীকার করারই শামিল হয়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শক্তভাবে পাকড়াও করলেন। এরপর বর্ণনা দেয়া হয়েছে নূহ(আ.)-এর জাতির ঘটনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন বন্যা এলাে, আমি তােমাদেরকে (অর্থাৎ তােমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে) নৌকায় আরােহণ করালাম, যাতে সেই ঘটনাকে তােমাদের জন্যে শিক্ষাপ্রদ বানাই এবং স্মরণকারীর কান তা স্মরণ করে। নূহ(আ.)-এর জাতির ভেতরে যারা মােমেন ও সৎলােক ছিলাে, এই অনুগ্রহ শুধু তাদের জন্যে নির্ধারিত ছিলাে। তারাই পরবর্তী মানব জাতির পূর্ব পুরুষ ছিলেন। কাজেই তাদের প্রতি এই অনুগ্রহ গােটা মানব জাতির প্রতি অনুগ্রহের শামিল। বন্যা, নৌকা এবং নৌকায় আরােহণের দৃশ্যাবলী এই সূরার অন্যান্য দৃশ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ। এ ঘটনাকে শিক্ষাপ্রদ বানানাে এবং তাকে গোঁয়ার লােকদের কান খােলার হাতিয়ার বানানাের উল্লেখ ভাষাগত অলংকার ও শ্রুতি মাধুর্যের অতি চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত। এই সকল ভয়াল দৃশ্য আল হাক্কা ও আল কারিয়া শব্দদ্বয়ের মধ্যে নিহিত দৃশ্যাবলীর সামনে নিতান্তই তুচ্ছ। এ দৃশ্যকে অস্বীকারকারীদের কি পরিণাম হয়েছে তা জেনে শুনেও তারা এটা অস্বীকার করে। পরবর্তী আয়াত কয়টিতে এ ঘটনার বিবরণ দেয়া হচ্ছে।
ফী জিলালিল কুরআন:   *কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা : ‘অতপর যখন শিংগায় প্রথম ফুক দেয়া হবে এবং পৃথিবী ও পাহাড় গুলোকে উত্তোলন করে এক সাথে আছাড় দেয়া হবে; সেদিন আটজন (ফেরেশতা) তােমার প্রতিপালকের আরশ ঘাড়ে তুলে নেবে।’ শিংগায় ফুকের কথা কোরআন ও হাদীসে বহুবার উল্লেখিত হয়েছে। আমরা শুধু এতটুকুই বিশ্বাস করি যে, শিংগায় ফুক দেয়া হবে অর্থাৎ বিউগল বাজিয়ে দেয়া হবে, তার পর সমগ্র আকাশ ও পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এর চেয়ে বেশী কিছু আমাদের জানতে বা বুঝতে চেষ্টা করার কোনাে প্রয়ােজন নেই। কেননা এটা অদৃশ্য সংক্রান্ত বিষয়। আমাদের কাছে এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ ছাড়া আর কিছু নেই। এর চেয়ে বেশী জানার কোনাে উপায়ও আমাদের হাতে নেই। কোরআন ও হাদীসে যেটুকু বিবরণ দেয়া থাকে তার চেয়ে বেশী বিবরণ অনুসন্ধান করে কোনাে লাভও নেই, তার কোনাে উপকারিতাও নেই। বরং এতে কেবলমাত্র ধারণা ও অনুমানেরই অনুসরণ করা হয়, যা মূলত নিষিদ্ধ। এই শিংগায় ফুঁক ফলাফল এতােই ভয়াবহ হবে যে, তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য। কোরআনের বর্ণনা মােতাবেক এর সংগে সংগেই পৃথিবী ও পাহাড় পর্বতকে উঠিয়ে ভীষণ জোরে ছুড়ে মারা হবে। এভাবে ছুড়ে মেরে পৃথিবীর উচু নিচু সব সমান করে ফেলা হবে। এ দৃশ্য সত্যিই আতংকজনক। আজ এই পৃথিবীর ওপর মানুষ পরম নিশ্চিন্তে বাস করছে আর পৃথিবীও মানুষের পায়ের নিচে রয়েছে নির্ভাবনায় । আর বিশাল উচু উচু পাহাড় পর্বত মানুষকে স্তম্ভিত ও সন্ত্রস্ত করেছে। আর এই দুটো জিনিসকে ছুড়ে মারা হবে একটা ছেলের হাতের ফুটবলের মতাে। এ দ্বারা শুধু মহান স্রষ্টার সীমাহীন ক্ষমতার সামনে মানুষের অক্ষমতার ব্যাপারটাই স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। অবশ্য পাহাড় ও পৃথিবীকে কিসের ওপর ছুড়ে মারা হবে তার উল্লেখ করা হয়নি। শিংগায় ফুকের পর সেই ঘটনাটি ঘটবে যাকে এখানে ‘আল ওয়াকিয়া’ বলা হয়েছে। এটিও কারিয়া ও ‘হাককা’-এর মতাে কেয়ামতের আর একটি নাম। আল ওয়াকেয়া অর্থ ঘটনা। বস্তুত কেয়ামত তাে একটা ঘটনাই বটে। সৃষ্টি জগতের ইতিহাসে এটি হবে একটি মহা ঘটনা ও ভয়াবহ ঘটনা। ওয়াকেয়া বা ঘটনা নামকরণের উদ্দেশ্য হয়তাে এই যে, সংশয় পােষণকারী ও অবিশ্বাসকারীদেরকে বিশেষভাবে জানিয়ে দেয়া হােক যে, তােমরা অস্বীকার করলেও এটি একটি অবধারিত বাস্তব ও স্বাভাবিক ঘটনা। এ দিনের ভয়াবহতা শুধু পৃথিবী ও পাহাড় পর্বতকেই চূর্ণ বিচূর্ণ করবে না বরং আকাশকেও প্রভাবিত করবে, ‘আকাশ ফেটে যাবে এবং তারপর তা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে।’ আমরা সঠিকভাবে জানি না এখানে আকাশ বলতে কি বুঝানাে হয়েছে। তবে সে দিনের ঘটনাবলীর বর্ণনা দানকারী এই আয়াত ও অন্যান্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, সৌর জগতের পারস্পরিক বন্ধন খুলে যাবে। বিশ্ব প্রকৃতির যে সংযােগ এতকাল তাকে আগলে রেখেছিলাে তা ধ্বংস হবে। আধুনিক বিজ্ঞানও এখন স্বীকার করছে যে, একদিন একটি ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বজগত বিধ্বস্ত হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিধারা দেখে আন্দাজ করেছে যে, সেই ঘটনাটি হবে প্রকৃতির ইতিহাসে একটি নযিরবিহীন ঘটনা এবং তার ফলে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। [কেয়ামতের সেই মহাবিপর্যয় আসার আগেই বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের পৃথিবীটি একটি বড় আকারের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এর নাম ‘এস্টরয়ড এক্সপ্লোশন’। মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই এক্সপ্লোশনের দিন তারিখও আমাদের বলেছেন। তাদের মতে ২০২৮ সালের ১৫ই অক্টোবর বৃটিশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় এ বিপর্যয়টি সংঘটিত হবে। ৭ মাইল চওড়া এই বিশাল এস্টরয়ডটি ঘন্টায় ২৭ হাজার মাইল বেগে পৃথিবীর দিকে তেড়ে আসছে। বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্য সত্য হলে আমাদের এই পৃথিবী এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। আড়াইশ ফুট উঁচু সামূদ্রিক জলোচ্ছাসের ধাক্কায় বিলিন হয়ে যাবে দুনিয়ার দুই তৃতীয়াংশ ভূমি। এই গৃহের দুই তৃতীয়াংশের বেশী জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এসিড রেইনের ফলে পরবর্তি ৫০ বছর পৃথিবীতে কোনােরকম ফসলাদী জন্মাবে না। এসময় পৃথিবীটা মনে হবে একটি আঁধারপুরী। বিজ্ঞানীদের মতে এ ধরনের বিপর্যয় এর আগেও একাধিকবার ঘটেছে। বিজ্ঞানীদের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে এখন দারণভাবে আতংকিত। আমাদের কাছে এই আতংকের খবরটি প্রথম পরিবেশন করেছেন ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনার মহাকাশ বিজ্ঞানী জীম স্কট। যারা এব্যাপারে আরাে বিস্তারিত জানতে উৎসুক তারা আমার ‘সাক্ষীর কাঠগড়ায় নারী’ বইটি দেখতে পারেন।-সম্পাদক] পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরা পড়ে আমরা এ ঘটনার কিছুটা আঁচ করতে পারি।এ ছাড়া এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভের এমন কোনাে মাধ্যম আমাদের নেই, যা দ্বারা এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারি। আমরা যেটুকু জানতে পারি তা সংক্ষিপ্ত হলেও সুনিশ্চিত। কেননা এ জ্ঞান স্বয়ং স্রষ্টাই পাঠিয়েছেন। আমরা এটুকু জানি যে, এই বিশাল পৃথিবী যে ভারী ও কঠিন পর্বতমালাকে বহন করছে পৃথিবী ধ্বংস হবার সময় ওগুলােও ধ্বংস না হয়ে পারে না। সেদিন নক্ষত্রগুলাে ঝরে পড়ে যাবে, চাঁদ সুর্য আলােহীন হয়ে যাবে, পাহাড় তুলাের মতাে হয়ে বাতাসে উড়তে থাকবে। এরপর বলা হয়েছে যে, ‘ফেরেশতারা আকাশের চতুর্দিকে থাকবে এবং আটজন ফেরেশতা তােমার মালিকের আরশ মাথায় বহন করবে।’ সমগ্র জগত তখন বিধ্বস্ত এবং আকাশ ভেংগে খান খান হয়ে যাবে। তখন ফেরেশতারা তার চারদিকে অবস্থান নেবে। আল্লাহর আরশ বহনকরীরা ৮ জন ফেরেশতা, না ফেরেশতাদের আটটি দল বা শ্রেণী, না ৮টি অন্য কিছু আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, এই আটটি কি জিনিস এবং কিভাবে তারা আরশ বহন করবে, এমনকি আরশ কি বস্তু তারও আমরা কিছু জানি না। এ সবের বিস্তারিত বিবরণ আমাদের জানানাে হয়নি। এগুলাে আমাদের অজানা গায়েবী জিনিস। এসব বিষয় না জানলে আমাদের ঈমানের কোনাে ক্ষতি নেই এবং আমাদের জানতে বাধ্যও করা হয়নি। এ সব বিবরণের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, আমরা যেন সেই ভয়াবহ দিন সম্পর্কে সর্তক ও সচেতন হই। পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, সে দিন তােমাদেরকে এমনভাবে হাযির করা হবে যে, তােমাদের কোনাে গােপন ব্যাপারই গােপন থাকবে না। সব কিছুই প্রকাশিত হয়ে পড়বে। দেহ, প্রাণ, বিবেক, মন মগয, জ্ঞান ও কাজ, অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত, সবই প্রকাশ্য হয়ে পড়বে। সকল গুপ্তভেদ বেরিয়ে পড়বে। মানুষের প্রাণ দেহের মতাে প্রকাশ্য হবে। মানুষের সকল চালাকি, গােপন ফন্দি, মনের গােপন চিন্তা চেতনা ও ধ্যান ধারণা এবং যা কিছু মানুষ গােপন রাখা পছন্দ করে কিংবা প্রকাশ পাওয়ায় লজ্জা বােধ করে সবই সকল সৃষ্টির সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়বে। যদিও আল্লাহর চোখে সব সময়ই সব কিছু প্রকাশ্য। কিন্তু মানুষ হয় তাে এ কথাটা যথাযথভাবে উপলব্ধি করে না। পৃথিবীতে অনেক কিছু গােপন থাকে দেখে মানুষ এই ভ্রান্ত ধারণায় লিপ্ত হয় যে, আল্লাহর কাছেও হয়তাে অনেক কিছু গােপন থাকে। তবে কেয়ামতের দিন পুরােপুরি বুঝতে পারবে যে, বিশ্ব জাহানে সব কিছু কত প্রকাশ্য। আকাশ ভেংগে খান খান এবং পৃথিবী ও পাহাড় বিধ্বস্ত হয়ে সমান হয়ে যাওয়ার ফলে সব কিছু প্রকাশ্য হয়ে পড়বে। তবে আদি অন্তের সকল মানুষের সামনে প্রকাশ্য দিবালােকে সব কিছু প্রকাশিত হওয়া বড়ই কঠিন ও উদ্বেগজনক ব্যাপার। সকল জ্বিন, ফেরেশতা ও মানুষের সামনে মানুষের দেহ, মন, আবেগ অনুভূতি, ইতিবৃত্ত, গোপন ও প্রকাশ্য কাজকর্ম সবকিছু নগ্ন হয়ে প্রকাশিত হওয়া বড়ই অবমাননাকর ও কষ্টকর হবে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। মানুষ স্বভাবতই তা চায় না। মানুষের স্বভাবটাও খুবই জটিল। তার মন মগযে অনেক বক্রতা ও জট আছে। মানুষ চায় তার এসব জট ও বক্রতা গোপন থাকুক। তার মন, ভাবাবেগ, ঝোক, পছন্দ অপছন্দ, চিন্তাধারা, সব কিছু লুকিয়ে থাকুক। সামুদ্রিক ঝিনুকের ভিতরে লুকানাে নরম প্রাণী এতাে সংবেদনশীল হয়ে থাকে যে, ক্ষুদ্র একটি সূচের খোচা অনুভব করতেই ঝিনুকের শক্ত খােলসের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ করে ফেলে। মানুষ যখন অনুভব করে যে, তার গুপ্তভেদ কেউ জেনে ফেলছে, তখন এ জলজ প্রাণীর চেয়েও ক্ষীপ্ততার সাথে লুকাতে ও আবদ্ধ হতে সচেষ্ট হয়। এমন তীব্র সংবেদনশীল প্রাণীর কেয়ামতের ময়দানে কি অবস্থা হবে তা সত্যিই ভেবে দেখার বিষয়। যেখানে সর্ব দিক দিয়ে আপাদমস্তক নগ্ন হয়ে তাকে আল্লাহর সামনে ও সমগ্র মানব জাতির সামনে প্রকাশ্য দিবালােকে হাযির হতে হবে? নিসন্দেহে সে অবস্থাটা হবে সর্বাধিক বিব্রতকর ও দুর্বিসহ।
ফী জিলালিল কুরআন:   *অপরাধীদের শাস্তি ও মুমিনের পুরস্কার : এরপর পেশ করা হচ্ছে মুক্তিপ্রাপ্তদের ও দন্ডিতদের দৃশ্য। দৃশ্যটা একেবারেই চাক্ষুস ও প্রত্যক্ষ বলে মনে হয়! ‘অতপর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, এই যে আমার আমলনামা, তােমরা পড়ে দেখো। আমার যে হিসাব নিকাশ হবে, সে ব্যাপারে আমার অটল বিশ্বাস ছিল। অতঃপর সে বড়ই আরামদায়ক ও সুখকর জীবন যাপন করবে।… তোমরা সৎ কাজ করেছিলে।’ আমলনামা ডান হাতে, বাম হাতে ও পিঠের পেছন দিয়ে পাওয়া আক্ষরিকভাবে বাস্তব ব্যাপার হতে পারে, অথবা রূপক বাগধারা হতে পারে। আরবীর প্রচলিত পরিভাষায় ভালাে জিনিসকে ডান এবং খারাপ জিনিসকে বাম বা পেছনের জিনিস বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। যেটাই বুঝানাে হােক না কেন, এ দ্বারা মূল দৃশ্য একই থাকে। মূল দৃশ্য এই যে, মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেই সংকটময় দিনে নিজের আনন্দ-উল্লাস সমবেত জনতার মাঝে এভাবে প্রকাশ করবে যে, এই আমার আমলনামা। এটা পড়ে দেখো। তারপর আরাে আনন্দের সাথে বলবে যে, আমি এতাে সহজে মুক্তি পেয়ে যাবাে ভাবিনি। আমার বিশ্বাস ছিলাে আমাকে পুংখানুপুংখ হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। হযরত আয়েশা(রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রসূল(স.) বলেছেন, যার হিসাব কড়াকড়িভাবে পর্যালােচনা করা হবে, তার শাস্তি হবে। হযরত আয়েশা(রা.) বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আল্লাহ কি বলেননি যে, যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তার হিসাব সহজ করা হবে এবং সে তার পরিবার পরিজনের কাছে আনন্দিত অবস্থায় ফিরে যাবে?’ রসূল(স.) বললেন, ওটা হলাে শুধু হাযির হওয়ার ব্যাপার। সুক্ষ্মভাবে যার হিসাব নেয়া হবে সে রেহাই পাবে না।’ অর্থাৎ নেককারদের ভাসাভাসা হিসাব হবে। হযরত আবু ওসমান থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল(স.) বলেছেন, মােমেনকে তার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে পর্দার আড়ালে। সে তার খারাপ কাজগুলাে পড়তে থাকবে আর সাথে সাথে তার মুখমন্ডলের বর্ণ বিকৃত হতে থাকবে। অবশেষে যখন তার সৎ কাজগুলাের বিবরণ পড়তে আরম্ভ করবে তখন তার মুখের বর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পুনরায় আমলনামার ওপর দৃষ্টি বুলাতেই দেখবে তার সকল খারাপ কাজ সৎ কাজে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। তখন সে বলে উঠবে, ‘তোমরা আমার আমলনামা পড়ো। ফেরেশতারা যার লাশ গােছল করিয়েছিলেন সেই ভাগ্যবান সাহাবী হযরত হানযালার ছেলে আব্দুল্লাহ(রা.) বর্ণনা করেন যে, রসূল(স.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার এক বান্দাকে কেয়ামতের দিন থামিয়ে তার আমলনামার ওপরে তার খারাপ কাজ দেখিয়ে বলবেন, তুমি কি এ কাজ করেছিলে? সে বলবে, হা। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি এ জন্য তােমাকে অপমান করলাম না। তােমাকে মাফ করে দিলাম। তখনই সে বান্দা বলে উঠবে, ‘এই আমার আমলনামা । তােমরা পড়ে দেখাে। আমি বিশ্বাস করতাম যে, আমি হিসাবের সম্মুখীন হব।'[হযরত হানযালা ওহদ যুদ্ধে শহীদ হন। তার সম্পর্কে রসূল(স.) বললেন, তোমাদের এই সহকর্মীটিকে ফেরেশতারা গোসল করাচ্ছেন। সাহাবীরা কৌতুহলী হয়ে হানযালার পরিবারকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তার স্ত্রী বললেন, হানযালা জিহাদের ডাক শুনে যখন বেরিয়ে যান তখন তার গােসল ফরয ছিলাে। (বিস্তারিত বিবরণের জন্যে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন বাংলাদেশ সেন্টার পরিবেশিত ‘আর রাহীকুল মাখতম’ গ্রন্থটি দেখুন।)] কেয়ামতের দিনের গােপন আলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে হযরত ইবনে ওমর(রা.) বলেন, আমি রাসূল(স.) কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার জনৈক বান্দাকে কাছে ডেকে নিয়ে তার সমস্ত গুনাহর স্বীকারােক্তি আদায় করবেন। এভাবে সে বান্দার ধারণা জন্মাবে যে, তার আর মুক্তির আশা নেই। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি দুনিয়াতেও তােমার এ সব গুনাহ লুকিয়ে রেখেছিলাম। আর আজও তা মাফ করে দিচ্ছি। তারপর তার সৎ কাজের বিবরণ তার ডান হাতে দেবেন। পক্ষান্তরে কাফের ও মোনাফেক সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে যালেমদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত!’ এরপর আল্লাহ তায়ালা সেই সাক্ষীদের সামনে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্যে বরাদ্দকৃত নেয়ামত সমূহের নাম ঘোষণা করবেন। সে সব নেয়ামত হবে বাহ্যিক নেয়ামত, যা তখনকার শ্রোতাদের জন্যে উপযােগী হবে। কেননা তারা প্রথম জীবনে জাহেলিয়াতের অনুসারী ছিলাে। এ নেয়ামত সুদীর্ঘ কাল আগে ঈমান আনয়নকারীর জন্যে তৃপ্তিকর হবে না। তাকে দেয়া হবে আরাে উঁচু স্তরের ও মূল্যবান নেয়ামত। তাই বলা হয়েছে, ‘সে থাকবে তৃপ্তিকর জীবনে। উচ্চ বেহেস্তে। তার ফলসমূহ ঝুলতে থাকবে। বলা হবে, তােমরা অতীত দিনগুলােতে যে সৎ কাজ করে পাঠিয়েছাে, তার বিনিময়ে আজ যত খুশী পানাহার করাে।’ এ সম্ভাষণের মধ্য দিয়ে শুধু মােমেনদের নেয়ামতের উঁচু মানই ব্যক্ত হয়েছে তা নয়, বরং তাদের উচ্চ সম্মান ও মর্যাদাও প্রকাশ পেয়েছে। তবে যারা প্রাথমিক যুগে কোরআনের আহবানে সাড়া দিয়ে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ট সখ্যতা গড়ে তুলেছে, তারা এ সব নেয়ামতের চেয়েও মূল্যবান যে জিনিসটি পাবে তা হলাে আল্লাহর নৈকট্য ও ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে। এটাই মহাসত্য যে, আল্লাহর নৈকট্যই যুগে যুগে মানুষের বহু সমস্যার সমাধান করে দিয়ে থাকে, আর নেয়ামত তো হাজারাে রকমের হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তিকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, সে তো বুঝতেই পারবে যে, তার খারাপ কাজগুলাের কঠোর হিসাব নেয়া হবে এবং তার আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার কোনাে উপায় নেই। সে সেই বিশাল জনতার ভিড়ে হতাশা ও অনুতাপের গ্লানি নিয়ে বলতে থাকবে, হায়! আমার আমলনামা একেবারে না দিলেই ভালাে হতাে এবং আমার হিসাব যদি আদৌ না জানতাম তাহলেই ভালাে হতাে। হায়! আফসােস! প্রথম মৃত্যুই যদি আমার জন্যে চূড়ান্ত হতাে। আবার যদি জীবিত না হতে হতাে! তাহলে কতই না ভাল হতাে। আমার ধনসম্পদ কোনাো কাজে লাগলাে না। আমার প্রভাব প্রতিপত্তি সবই বিফলে গেলো। এটা হবে একটা দীর্ঘ একটানা বিবৃতি। দীর্ঘ হতাশার হা-হুতাশ। চরম অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে ওঠেছে এর মধ্য দিয়ে। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা ধারায় এ অবস্থাটাকে দীর্ঘস্থায়ী বলে চিত্রিত করা হয়েছে। মনে হয় যেন এর কোনাে শেষ নেই। এ হতাশা ও আক্ষেপ যেন অনন্তকাল ধরে চলবে। কোরআনের এ এক চমকপ্রদ বর্ণনাভংগী যে, কোনাে বিষয়কে সংক্ষেপে বর্ণনা করে আবার কোনােটার দীর্ঘ বিবরণ দেয়। এটা নির্ভর করে মানুষের মনে সে কি ধরনের ভাব বদ্ধমূল করতে চায় তার ওপর। এখানে সে সেই অনুতাপপূর্ণ দৃশ্যের মধ্য থেকে তার আক্ষেপ ও অনুশােচনার অবস্থাটাই শ্রোতার মনে বদ্ধমূল করতে চায়। তাই সে এটার একটু দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছে। সেই হতাশাগ্রস্ত লােকটি কি কি ভাববে আর কি কি বলে বিলাপ করবে তা সবিস্তারে তুলে ধরেছে। এই পরিস্থিতি মােটেই তার সামনে না পড়লে ভালাে হতাে, হিসাব নিকাশ না হয়ে যে মৃত্যু তার হয়েছিলাে, সেই মৃত অবস্থায় থাকতে পারলেই ঢের ভালো হতাে। তার এতাে সহায় সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি কোনাে কিছুই তার কাজে আসলাে না… ইত্যাদি কোরআন তার এই সমস্ত বিলাপােক্তির বিবরণ দিয়েছে।

ফী জিলালিল কুরআন:   *আল্লাহ তায়ালার এক কঠোর নির্দেশ : তার এই দীর্ঘ আক্ষেপ ও বিলাপের সমাপ্তি ঘটাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে উচ্চারিত একটি বজ্র কঠিন নির্দেশ, ওকে ধরাে এবং শেকল পরাও। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করাে।… ওকে ধরাে এই ক্ষুদ্র কথাটি বলার সময় কি নিদারুণ ভীতিবিহবলতা, আতংক ও গুরুগম্ভীর পরিবেশ সেখানে বিরাজ করবে, তা ভাবতে গা শিউরে ওঠে। সর্বোচ্চ মালিকের থেকে এ নির্দেশ ঘােষিত হওয়া মাত্রই তার আশেপাশে অবস্থানরত সকল সৃষ্টি যেন এই অসহায় ব্যক্তিটির ওপর ঝাপিয়ে পড়তে চাইবে। হযরত মিনহাল ইবনে আমর বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তায়ালা যেই বলবেন ওকে ধরাে অমনি ৭০ হাজার ফেরেশতা তাৎক্ষণিকভাবে আদেশ পালন করতে এগিয়ে আসবে। তাদের মধ্যে যে কোনাে একজন ফেরেশতা এ ধরণের ইংগিত দিয়ে ৭০ হাজার ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারে। সবাই এই ক্ষুদ্র অনুতপ্ত প্রাণীটির দিকে ধেয়ে আসবে। এরপর যখন শিকল পরানাের নির্দেশ আসবে, তখন তাদের যে কেউ সে নির্দেশ বাস্তবায়িত করবে, তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর তাকে আগুনে কিভাবে দগ্ধ করা হবে তার শব্দ আমরা শুনতে পাবাে। তারপর তাকে ৭০ হাত লম্বা শিকলে বাঁধতে বলা হবে। যদিও তাকে বাঁধার জন্যে এক হাত শিকলই যথেষ্ট। তথাপি সম্ভবত আযাবের ভয়াবহতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব বুঝাতে ৭০ হাতের কথা বলা হয়েছে। ব্যাপারটা যখন এ পর্যন্ত পৌছবে তখন এ শাস্তির কারণ সমবেত জনতার সামনে ঘােষণা করা হবে এই বলে যে, ‘নিশ্চয়ই এই লােক আল্লাহর ওপর ঈমান রাখতাে না এবং মিসকীনকে খাবার দিতে উৎসাহিত করতাে না।’ অর্থাৎ এই হতভাগার হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমানও ছিলাে না, তার বান্দাদের প্রতি দয়াও ছিলাে না। তাই এমন হৃদয় দোযখের আগুন ও শাস্তিরই যােগ্য। আল্লাহর প্রতি ঈমান থেকে বঞ্চিত হৃদয় তাে একটা বিরাণ ও বিধ্বস্ত হৃদয়, হেদায়াতের জ্যোতি থেকে তা বঞ্চিত হৃদয়। প্রকৃতপক্ষে এ ধরণের মানুষ জগতের একটি বিকৃত সৃষ্টি। সে যে কোনাে প্রাণী এমনকি জড় পদার্থের চেয়েও অধম। কেননা বিশ্ব নিখিলের সব কিছুই আল্লাহকে মানে, তার গুণ বর্ণনা করে এবং নিজের স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। শুধু মানুষগুলােই হচ্ছে এর ব্যাতিক্রম। তা ছাড়া তার হৃদয়ে দয়ামায়াও থাকে না। দুর্গত ও দরিদ্র মানুষ দয়া দাক্ষিণ্যের সবচেয়ে বেশী মুখাপেক্ষী। কিন্তু কাফেরের মনে দরিদ্র মানুষের প্রতি সহায়তার প্রেরণা জাগে না। সে নিজে খাওয়ানাে তাে দূরের কথা, দরিদ্র মানুষকে খাওয়াতে কাউকে উৎসাহও দেয়না বা অনুরােধ করে না। এ থেকে বুঝা যায় যে, দরিদ্র মানুষের সাহায্য করা ও অভাব মেটানাে মােমেনদের একটা সামষ্টিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব তার ঈমানী দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত। কোরআন ও হাদীসে এ দায়িত্ব তার ওপর অর্পন করা হয়েছে এবং দাড়িপাল্লায় তার এ দায়িত্ব পালনের সাফল্য ও ব্যর্থতা পরিমাণ করা হবে। পরের আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এখানে আজ (কেয়ামতের দিন) তার কোনাে বন্ধু নেই, ‘গিসলীন’ ছাড়া তার কোনাে খাবার নেই, আর তা পাখীরা ছাড়া অন্য কেউই খাবে না। এ আয়াত কয়টার মাধ্যমে হতভাগা কাফেরের পরিণাম সম্পর্কে চুড়ান্ত আল্লাহর সিদ্ধান্ত ঘােষিত হয়েছে। ঈমান না এনে সে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, দরিদ্র মানুষের সাহায্য না করে সে সমাজচ্যুতও হয়েছে। কাজেই এখানেও সে বন্ধুহীন ও সম্পর্কহীন থাকবে। তা ছাড়া খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় জিনিসের সরবরাহ থেকেও সে বঞ্চিত থাকবে। গিসলীন ছাড়া তার জন্যে কোনাে খাদ্য থাকবে না। গিসলীন হলাে জাহান্নামবাসীর দেহের যাবতীয় নােংরা নির্যাস, যথা পুঁজ, কফ, থুথু ইত্যাদি। এসব জিনিস তার দয়া মমতাহীন নিষ্ঠুর হৃদয়ের সাথে মানানসই। এ সব জিনিসই পাপীদের খাদ্য। আর সে তাে তাদেরই ঘনিষ্ঠ সহচর। এ হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তায়ালা বেড়ি ও ৭০ হাত লম্বা শিকল পরানাে এবং জাহান্নামের কঠিনতর আযাবের স্তরে নিক্ষেপের যােগ্য বিবেচনা করেছেন। কেননা সে মিসকীনদের খাদ্য দিতে উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাতাে না। ভেবে দেখা উচিত তাহলে যারা মিসকীনদেরকে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করে, অনাহারে ধুকিয়ে ধুকিয়ে মারে, যারা চরম স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে দরিদ্র ও আর্ত মানুষের সাহায্যকারীদের গতিরােধ করে, যাতে তাদের কাছে খাদ্য ও বস্ত্র না পৌছুতে পারে, তাদের কি পরিণাম হতে পারে? এ ধরনের স্বৈরাচারী যালেম শাসক মাঝে মাঝেই তো পৃথিবীর দেশে দেশে আবির্ভূত হয়। যে আল্লাহ তায়ালা খাদ্য বিতরণের উৎসাহ না দেয়াকে এতাে বড় অপরাধ গন্য করেছেন যে, এ জন্যে জাহান্নাম নির্ধারিত করেছেন, তিনি এ সব নরাধমের জন্যে কি শাস্তি নির্ধারণ করতে পারেন তাও ভাবা দরকার। কোরআন নাযিল হবার প্রাক্কালে আরবের সামাজিক পরিবেশ ছিলাে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের ওপর নির্যাতনে পরিপূর্ণ, সেই নিষ্ঠুর নির্যাতন কমিয়ে আনার জন্যে যালেম ও শােষক স্বৈরাচারীদের এই শােচনীয় পরিণতির দৃশ্য তুলে ধরার প্রয়ােজন ছিলাে। এ ধরণের পরিবেশ বিভিন্ন যুগের জাহেলিয়াত নিয়ন্ত্রিত সমাজে বারবার দেখা দিয়ে থাকে। কোরআন এ ধরণের সকল যুগের সকল সমাজকেই সম্বোধন করে এবং এর সমাধানের পথ প্রদর্শন করে। যখন যে সমাজের মানুষ যে ধরণের ভাষায় প্রভাবিত হতে পারে, তখন তাদের সাথে সে ধরণের প্রয়াগ করে। আজকের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন । এখানে দেশে দেশে এমন সব নিষ্ঠুর ও নির্মম অপরাধপ্রবণ মানুষের দৃষ্টিগােচর হয়, যারা এ ধরণের অগ্নিঝরা হুমকি ও হুংকারের ভাষা ছাড়া আর কোনাে কিছুতেই কর্ণপাত করে না। উল্লেখিত হুমকি ও হুঁশিয়ারী এবং ভীতিপ্রদ দৃশ্যাবলীর প্রেক্ষাপটে এবার আল্লাহ তায়ালা তার মাধ্যমে পাঠানাে বাণীর সত্যতা পুণর্ব্যক্ত করছেন, যাকে মক্কার কাফেররা সংশয়, বিদ্রুপ ও প্রত্যাখ্যানের দৃষ্টিতে দেখেছিলাে।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

( বই # ১১৭৬/ এবং কাফের-রা বলে:-২২)
[* *অপরাধীদের শাস্তি ও মুমিনের পুরস্কার :-]

www.motaher21.net
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ
পারা:২৯
১-২৯ নং আয়াত:-
সুরা: ৬৯: আল্ হাক্কাহ-১-২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ :

الحاقة কিয়ামতের নামসমূহের অন্যতম একটি নাম। এই দিনে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে, তাই এটাকে الحاقة বলা হয়। এ সূরার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

সূরার শুরুর দিকে পূর্ববর্তী কয়েকটি অবাধ্য জাতির ধ্বংসের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তারপর কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, অতঃপর ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ ও বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সীমাহীন আফসোসের কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং সর্বশেষে আল্লাহ তা‘আলা শপথ করে বলেছেন যে- এ কুরআন কোন গণক, জ্যোতিষী বা কবির কথা নয় বরং তা তাঁরই বাণী।

১-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আলোচ্য আয়াতগুলোতে কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং পূর্ববর্তী জাতি সামূদ, ‘আদ ও ফির‘আউনকে যে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করেছেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

الحاقة শব্দটি حق মূলধাতু থেকে গৃহীত, যার অর্থ : সত্য, অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এটা দিবালোকের ন্যায় সত্য। এখানে প্রশ্নাকারে তুলে ধরার উদ্দেশ্য, কিয়ামতের ভয়াবহতা বুঝোনো। সালেহ ও হূদ (আঃ)-এর জাতির নাম সামূদ ও ‘আদ। তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করত, ফলে তারা অপরাধমূলক কাজ করতে এবং নাবীদের অবাধ্য হওয়াকে পরওয়া করত না। যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতিকে এমন এক বিকট আওয়াজ দ্বারা ধ্বংস করলেন যা অন্তরকে বিদীর্ণ করে দিয়েছিল। বিকট আওয়াজ শুনেই তারা মারা গিয়েছিল। হেজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী ‘আল-হিজর’ নামক স্থানে তাদের বসবাস ছিল। কুরআনে একাধিক জায়গায় তাদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে এ বিকট আওয়াজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তাগিয়া’। এ শব্দ দ্বারা পূর্বের ও পরের আয়াতগুলোর সাথে ধ্বনি ও ছন্দগত মিল যেমন রক্ষা করা হয়েছে তেমনি এ সূরার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের সাথে এর সংযোগ রক্ষা করা হয়েছে।

আর ‘আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন প্রচণ্ড ঝড়ো হওয়া দ্বারা। ‘আদ জাতির আবাসভূমি ছিল দক্ষিণ আরব, ইয়ামান ও হাজরামাওতের মধ্যবর্তী আহকাফ নামক স্থানে। ‘আদ জাতি অত্যন্ত হিংস্র, লড়াকু ও শক্তিশালী ছিল। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাত দিন আট রাত ধরে প্রচণ্ড ঝড় দ্বারা শাস্তি দিলেন। صرصر অর্থ হল : অত্যধিক হিমশীতল প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৬৫-৭২ নম্বর আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

عاتية হল এমন কিছু যা দমন করা যায় না, এ ঝড়ো হাওয়া সাত রাত আট দিন প্রবাহিত হয়েছিল। حسوما অর্থ : ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : متتابعات বা ধারাবহিকভাবে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী রবী (রহঃ) বলেন : জুমার দিন শাস্তি শুরু হয়েছিল।

صرعي অর্থ : মৃতদেহ, اعجاز النخل অর্থ : খেজুরের কান্ড, ডাল। خاوية অর্থ : কালি, শূন্য। অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত তাদের দেহকে সারশূন্য খেজুর কাণ্ড বা ডালের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন আমাদের দেশে ধান মাড়াই করার পর আঁটি বা নাড়াকে গরুর পা দ্বারা পীষে মলা হয় তাদের অবস্থা তেমনই হয়েছিল।

অনুরূপভাবে ফির‘আউন, তার পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতি এবং উল্টে দেওয়া জাতি তথা লূত (রাঃ)-এর জাতিকে পাপকাজ করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করেছেন। লূত (রাঃ)-এর জাতিকে المؤتفكات বলার কারণ হল তাদেরকে জমিন উল্টিয়ে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সেটা হচ্ছে, বর্তমান ইসরাঈল সীমান্তবর্তী এলাকায় সাগরের বেলাভূমিতে- যার নাম হল ‘ডেড সী বা মৃত সাগর’। এদের অপরাধ হচ্ছে-তারা সমকামীতায় লিপ্ত ছিল। তাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহ তা‘আলার নাবী লূত (আঃ) তাদেরকে এ জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকতে বললেন কিন্তু তারা মানল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوْطِ نِالْمُرْسَلِيْنَ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوْهُمْ لُوْطٌ أَلَا تَتَّقُوْنَ إِنِّيْ لَكُمْ رَسُوْلٌ أَمِيْنٌ فَاتَّقُوا اللهَ وَأَطِيْعُوْنِ وَمَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ج إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلٰي رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ ‏ أَتَأْتُوْنَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعٰلَمِيْنَ وَتَذَرُوْنَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِّنْ أَزْوَاجِكُمْ ط بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ عٰدُوْنَ قَالُوْا لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهِ يٰلُوْطُ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِيْنَ قَالَ إِنِّيْ لِعَمَلِكُمْ مِّنَ الْقَالِيْنَ )

“লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল, যখন তাদের ভ্রাতা লূত তাদেরকে বলল : ‎ ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? ‘আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর‎ এবং আমার আনুগত্য কর‎। ‘আমি তার জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই আছে। ‘বিশ্বজগতের মধ্যে তো তোমরাই পুরুষের সাথে কুকর্ম কর, ‘এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক। তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ তারা বলল : ‎ ‘হে লূত! তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।’ লূত, বলল : ‎ ‘আমি তোমাদের এ কর্মকে ঘৃণা করি।” (সূরা শুআরা ২৬ : ১৬০-১৬৬)

প্রতœতাত্ত্বিক আবিস্কার ও খননকার্য থেকে এ সত্য বেরিয়ে এসেছে যে, এ শহর ইসরাইল ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায় মৃত সাগরের তীরে অবস্থিত। এ জায়গাটির নাম ওল্ড টেস্টামেন্টে সুডুম (ঝঙউঙগ) নামে উল্লেখ রয়েছে। প্রতœতত্ত্ববিদরা এখানে খুঁজে পেয়েছেন ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার অসংখ্য নমুনা। চূর্ণ-বিচূর্ণ কংকালই বলে দেয় সেখানকার ভয়াবহ দুর্যোগের কথা।

رابية শব্দটির অর্থ : অতিরিক্ত। অর্থাৎ পরিমাণের বেশি শাস্তি দ্বারা তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম।

لَمَّا طَغَا الْمَا۬ءُ

অর্থাৎ নূহ (আঃ) এর যুগে প্লাবন দ্বারা মুুমিনদের ব্যতীত অবাধ্যদেরকে ডুুবিয়ে মেরেছিলেন। মক্কার কাফিরদের সম্বোধন করে বলছেন যে, তারা ছিল তোমাদের পূর্ব পুরুষ, তারা ছিল মু’মিন আর তোমরা এখন কুফরী করছো। তোমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ কর।

সুতরাং আমাদের উচিত হবে পূর্ববর্তী জাতিদের মত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের অবাধ্য না হয়ে তাদের আদেশ মেনে চলা আর নিষেধ থেকে বিরত থাকা। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যদি কোন সমাজে খারাপ ও আল্লাহদ্রোহী কাজ হয় আর তা পরিবর্তন করার মত লোক থাকে কিন্তু তা পরিবর্তন না করে তাহলে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবেন। (আবূ দাঊদ হা. ৪৩৩৯, ইবনু মাযাহ হা. ৪০০৯, হাসান)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. ‘আদ, সামুদ, ফির‘আউন ও অন্যান্য পাপিষ্ঠ জাতির ধ্বংসের কারণ ও আযাবের ধরণ জানলাম।
২. তাদের থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
১৩-১৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এখানে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন। প্রথমে ভয়ের কারণ হবে শিংগায় ফুঁ দেওয়া। এতে সবারই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। তারপর পুনরায় শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে, যার ফলে আকাশ-জমিনের সমস্ত মাখলুক অজ্ঞান হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করবেন তিনি ব্যতীত। এরপর শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে যার আওয়াজ শুনে সমস্ত মাখলুক কবর থেকে উঠে তাদের প্রতিপালকের সামনে এসে দাঁড়াবে। এখানে ঐ প্রথম ফুঁৎকারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এখানে আরো গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এ কথা দ্বারা যে, উঠে দাঁড়ানোর ফুঁৎকার মাত্র একটি। রাবী (রহঃ) বলেছেন : এটা শেষ ফুঁৎকার। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলছেন প্রথটাই সঠিক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

(وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً)

“আর পৃথিবী ও পর্বত মালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯ : ১৪৪)

সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং সকল দরজা খুলে দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَفُتِحَتِ السَّمَا۬ءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا)

“আসমান খুলে দেওয়া হবে, ফলে তাতে বহূ দরজা হয়ে যাবে।” (সূরা নাবা ৭৮ : ১৯)

أرجاءها অর্থ : علي جوانب السماء وأركانها

প্রতিপালকের আনুগত্যস্বরূপ ফেরেশতারা আকাশের পার্শ্বে অবস্থান করবে।

(وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ)

অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহন করবে আট জন ফেরেশতা।

রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার আরশ বহন করে আছে তাদের বিবরণ দিতে আমাকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তাদের কানের অগ্রভাগ থেকে কাঁধ পর্যন্ত দূরত্ব হল ৭০০ বছরের রাস্তার সমান। (আবূ দাঊদ হা. ৪৭২৭, সিলসিলা সহীহাহ : ১৫১)

সেদিন মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং আমলনামাও উপস্থিত করা হবে। ফলে কিছুই গোপন থাকবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কিয়ামতের পূর্বাবস্থা জানলাম।
২. আরশ বহণকারী ফেরেশতাদের দৈহিক আকৃতির ধারণা পেলাম।
৩. কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে আমলনামা দেওয়া হবে।
১৯-২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে, প্রত্যেককে তার আমলনামা প্রদান করা হবে। এখানে বলা হচ্ছে- যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, সে এত খুুশি হবে যে, অন্যদের বলবে, হে অমুক আমার আমলনামা পড়ে দেখ, আমলগুলো কত সুন্দর। সে আরো বলবে, আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে একদিন হিসাবের সম্মুখিন হতে হবে। তাই ভাল ছাড়া খারাপ আমল করিনি। যদি খারাপ আমল কিছু থেকেও থাকে আল্লাহ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দেবেন। যেমন হাদীসে এসেছে : বান্দাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কাছে ডেকে নেবেন। তার অপরাধের কথা স্বীকার করাবেন। যখন সে দেখবে আমি ধ্বংস হয়ে যাব, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : আমি দুনিয়াতে এগুলো ঢেকে রেখেছিলাম আর আজ সেগুলো ক্ষমা করে দিলাম। তারপর তাকে ডান হাতে সৎ আমলের আমলনামা প্রদান করা হবে। (সুন্নাহ লি আবুল আসেম হা. ৬০৪)

তাই আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা ডান হাতে আমলনামা পেতে পারি।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কিয়ামতের দিনে ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত লোকেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে।
২. জান্নাতীদের জন্য প্রস্তুত রাখা অশেষ নেয়ামতরাজির কথা জানতে পারলাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বান্দার সাথে নির্জনে একাকী কথা বলবেন।
২৫-৩৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আল্লাহ তা‘আলা ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের আলোচনার পর বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আলোচনা নিয়ে এসেছেন। তারা আখিরাতে যে আফসোস করবে ও তাদের জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে তার বিবরণও এখানে আলোচনায় স্থান পেয়েছে। জাহান্নামের শিকলের বিবরণ দিতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যদি আকাশ হতে একটি বড় পাথর নিক্ষেপ করা হয় তবে তা এক রাতে পৃথিবীতে এসে পড়বে। কিন্তু ওটাকেই যদি জাহান্নামীকে বাঁধার শৃংখলের একমাথা হতে নিক্ষেপ করা হয় তবে তা অন্য মাথায় পড়তে ৪০ বছর লেগে যাবে। (আহমাদ হা. ৬৮৫৬, তিরমিযী হা. ২৫৮৮ সনদ সহীহ)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. যাদের বাম হাতে আমলনামা প্রদান করা হবে তাদের হায় হুতাশের শেষ থাকবে না।
২. জাহান্নামী ব্যক্তির ক্ষমতা, সন্তান-সন্ততি ও সহায়-সম্পদ কোন উপকারে আসবে না।
৩. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ জানলাম ও তার শাস্তির বিবরণ জানলাম।

১-৩৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

(৬৯-হাক্বাহ্) : নামকরণ:

সূরার প্রথম শব্দটিকেই এর নাম হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

(৬৯-হাক্বাহ্) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

এ সুরাটিও মক্কী জীবনের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাসমূহের একটি। এর বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায়, সূরাটি যে সময় নাযিল হয়েছিলো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তখনো তা তেমন তীব্র হয়ে ওঠেনি। মুসনাদে আহমাদ হাদীস গ্রন্থে হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন: ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি বাড়ি থেকে বের হলাম। কিন্তু আমার আগেই তিনি মসজিদে হারামে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমি সেখানে পৌঁছে দেখলাম তিনি নামাযে সূরা আল হাক্কাহ পড়ছেন। আমি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম, শুনতে থাকলাম। কুরআনের বাচনভঙ্গি আমাকে বিস্ময়ে অভিভূত করে ফেলেছিলো। সহসা আমার মন বলে উঠলো, লোকটি নিশ্চয়ই কবি হবে। কুরাইশরাও তো তাই বলে। সে মুহূর্তেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে একথাগুলো উচ্চারিত হলো: “এ একজন সম্মানিত রসূলের বাণী। কোন কবির কাব্য নয়।” আমি মনে মনে বললাম: কবি না হলে গণক হবেন। তখনই পবিত্র মুখে উচ্চারিত হলো: “এ গণকের কথা ও নয়। তোমরা খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করে থাকো। একথা তো বিশ্ব-জাহানের রব বা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।” এসব কথা শোনার পর ইসলাম আমার মনের গভীরে প্রভাব বিস্তার করে বসলো। হযরত উমরের (রা.) এ বর্ণনা থেকে জানা যায়, সূরাটি তাঁর ইসলাম গ্রহণের অনেক আগে নাযিল হয়েছিলো। কারণ এ ঘটনার পর বেশ কিছুকাল পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তবে বিভিন্ন সময়ের কিছু ঘটনা তাঁকে ক্রমান্বয়ে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তুলছিলো। অবশেষে তাঁর মনের ওপর চূড়ান্ত আঘাত পড়ে তাঁর আপন বোনের বাড়ীতে। আর এ ঘটনাই তাকে ঈমানের মনযিলে পৌঁছিয়ে দেয়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা মারয়ামের ভূমিকা; সূরা ওয়াকিয়ার ভূমিকা)
(৬৯-হাক্বাহ্) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:

সূরাটির প্রথম রুকূতে আখেরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকুতে কুরআনের আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহর রসূল তার সত্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিয়ামত ও আখেরাতের কথা দিয়ে প্রথম রুকূ শুরু হয়েছে। কিয়ামত ও আখেরাত এমন একটি সত্য যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আয়াত ৪ থেকে ১২ তে বলা হয়েছে যে, যেসব জাতি আখেরাত অস্বীকার করেছে শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। অত:পর ১৭ আয়াত পর্যন্ত কিয়ামত কিভাবে সংঘটিত হবে তার চিত্র পেশ করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ দুনিয়ার বর্তমান জীবন শেষ হওয়ার পর মানুষের জন্য আরেকটি জীবনের ব্যবস্থা করেছেন ১৮ থেকে ২৭ আয়াতে সে মূল উদ্দেশ্যটি বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেদিন সব মানুষ তার রবের আদালতে হাজির হবে। সেখানে তাদের কোন বিষয়ই গোপন থাকবে না। প্রত্যেকের আমলনামা তার নিজের হাতে দিয়ে দেয়া হবে। পৃথিবীতে যারা এ উপলব্ধি ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবন যাপন করেছিলো যে, একদিন তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজ নিজ কাজের হিসেব দিতে হবে, যারা দুনিয়ার জীবনে নেকী ও কল্যাণের কাজ করে আখেরাতের কল্যাণ লাভের জন্য অগ্রীম ব্যবস্থা করে রেখেছিলো তার সেদিন নিজের হিসেব পরিষ্কার ও নির্ঝঞ্ঝাট দেখে আনন্দিত হবে। পক্ষান্তরে যেসব লোক আল্লাহ তাআলার হকেরও পরোয়া করেনি, বান্দার হকও আদায় করেনি, তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করার মত কেউ থাকবে না। তারা জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে থাকবে।

দ্বিতীয় রুকূতে মক্কার কাফেরদেরকে বলা হয়েছে। এ কুরআনকে তোমরা কবির কাব্য ও গণকের গণনা বলে আখ্যায়িত করছো। অথচ তা আল্লাহর নাযিলকৃত বাণী। তা উচ্চারিত হচ্ছে একজন সম্মানিত মুখ থেকে। এ বাণীর মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে একটি শব্দও হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ইখতিয়ার রসূলের নেই। তিনি যদি এর মধ্যে তাঁর মনগড়া কোন কথা শামিল করে দেন তাহলে আমি তার ঘাড়ের শিরা (অথবা হৃদপিণ্ডের শিরা) কেটে দেবো। এ একটি নিশ্চিত সত্য বাণী। যারাই এ বাণীকে মিথ্যা বলবে শেষ পর্যন্ত তাদের অনুশোচনা করতে হবে।

সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-১

اَلْحَآقَّةُۙ

অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটি।

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

# মূল আয়াত الْحَاقَّةُ (আল হাক্কাতু) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ এমন ঘটনা যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। যার সংঘটিত হওয়া একান্ত বাস্তব, যার সংঘটিত হওয়ার কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কিয়ামতের জন্য এ ধরনের শব্দ ব্যবহার এবং তা দিয়ে বক্তব্য শুরু করা প্রমাণ করে যে, এ বক্তব্য এমন লোকদের উদ্দেশ্য করে পেশ করা হয়েছে। যারা কিয়ামতের আগমনকে অস্বীকার করেছিলো। তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, যে বিষয়কে তোমরা অস্বীকার করছো তা অবশ্যম্ভাবী। তোমরা অস্বীকার করলেই তার আগমন ঠেকে থাকবে না।
#শ্রোতাদেরকে সজাগ ও সতর্ক করে দেয়ার জন্য পরপর দু’টি প্রশ্ন করা হয়েছে। যাতে করে তারা বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পরবর্তী বক্তব্য শ্রবণ করে।
# মক্কার কাফেররা যেহেতু কিয়ামতকে অস্বীকার করেছিলো এবং তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিকে একটি তামাশা বলে মনে করেছিলো, তাই প্রথমে তাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, কিয়ামতের একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। তোমরা বিশ্বাস করো আর নাই করো তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। একথা বলার পর তাদের বলা হচ্ছে, এ বিষয়টি এতটা সাদামাটা বিষয় নয় যে, কেউ একটি সম্ভাব্য ঘটনার খবরকে মেনে নিচ্ছে কিংবা মেনে নিচ্ছে না। বরং জাতিসমূহের নৈতিক চরিত্র এবং তাদের ভবিষ্যতের সাথে এর অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তোমাদের পূর্বের জাতিগুলোর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে জাতিই আখেরাতকে অস্বীকার করেছে এবং এ দুনিয়ার জীবনকে প্রকৃত জীবন বলে মনে করেছে পরিশেষে আল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে নিজের কৃতকর্মের হিসেব দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে মনে করেছে সেসব জাতিই মারাত্মক নৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়েছে। অবশেষে আল্লাহর আযাব এসে তাদের অস্তিত্ব থেকে দুনিয়াকে পবিত্র করে দিয়েছে।
# মূল শব্দ হলো الْقَارِعَةِ । قرع কারয়া শব্দটি আরবী ভাষায় খটখট শব্দ করা, হাতুড়ি পিটিয়ে শব্দ করা, কড়া নেড়ে শব্দ করা এবং একটি জিনিসকে আরেকটি জিনিস দিয়ে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
#সূরা আরাফের ৭৮ আয়াতে একে اَلرُّجْفَةَ (প্রচণ্ড ভূমিকম্প) বলা হয়েছে। সূরা হূদের ৬৭ আয়াতে এ জন্য الصَّيْحَةَ (প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ) শব্দ ব্যবহৃত হয়ে হয়েছে। সূরা হা-মীম আস সাজদার ১৭ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে صَاعِقَةُ الْعَذَابِ (আযাবের বজ্র ধ্বনি) এসে পাকড়াও করলো। এখানে সে একই আযাবকে اَلطَّاغِيَةُ (অতিশয় কঠিন দুর্ঘটনা) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একই ঘটনার বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনা মাত্র।
# অর্থাৎ লূতের কওমের জনবসতিসমূহ। এসব জনবসতি সম্পর্কে সূরা হূদ (৮২আয়াত) এবং সূরা হিজরে ( ৭৪ আয়াত ) বলা হয়েছে, আমি ঐগুলোকে ওলটপালট করে দিলাম।
# নূহের সময়ের মহা প্লাবনের কথা বলা হয়েছে। এ মহা প্লাবনে গোটা একটি জাতিকে এ একই মহা অপরাধের কারণে ডুবিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। শুধু তারাই বেঁচে ছিল যারা আল্লাহর রসূলের কথা মেনে নিয়েছিলো।
# যেসব লোককে জাহাজে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো তারা হাজার হাজার বছর পর্বে অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালের গোটা মানব গোষ্ঠী যেহেতু এ মহা প্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়া লোকদের সন্তান-সন্তুতি, তাই বলা হয়েছেঃ আমি তোমাদেরকে জাহাজে উঠিয়ে নিয়েছিলাম। অর্থাৎ আজ তোমরা পৃথিবীতে এ কারণে বিচরণ করতে পারছো যে, মহান আল্লাহ‌ ঐ মহা প্লাবন দ্বারা শুধু কাফেরদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং ঈমানদারদের তা থেকে রক্ষা করেছিলেন।
# অর্থাৎ এমন কান নয় যা শুনেও শোনে না এবং যে কানের পর্দা স্পর্শ করেই শব্দ অন্যত্র সরে যায়। বরং এমন কান যা শোনে এবং কথাকে মনের গভীরে প্রবিষ্ট করিয়ে দেয়। বাহ্যত এখানে কান শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ হলো শ্রবণকারী মানুষ যারা এ ঘটনা শুনে তা মনে রাখে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অতঃপর আখেরাতকে অস্বীকার এবং আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণাম কত ভয়াবহ তা কখনো ভুলে যায় না।

# সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-১৩

فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَّاحِدَةٌۙ

অতঃপর যে সময় শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার।

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
# পরবর্তী আয়াত পড়ার সময় এ বিষয়টি দৃষ্টিতে থাকা দরকার যে, কিয়ামতের তিনটি পর্যায় আছে। এ তিনটি পর্যায়ের ঘটনাবলী একের পর এক বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হবে। কুরআন মজীদের কোন কোন জায়গায় এ তিনটি পর্যায় আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় প্রথম পর্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত একসাথে বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সূরা নামলের ৮৭নং আয়াতের উল্লেখ করা যায়। এ আয়াতটিতে প্রথমবার শিংগায় ফুৎকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যখন সারা পৃথিবীর মানুষ একটি ভয়ানক বিকট শব্দে এক সাথে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। সেই সময় গোটা বিশ্ব-জাহানের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার যে অবস্থা সূরা হজ্জের ১ ও ২ আয়াতে , সূরা ইয়াসীনের ৪৯ ও ৫০ আয়াতে এবং সূরা তাকবীরের ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তা তাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকবে। সূরা যুমারের ৬৭ থেকে ৭০ আয়াতে শিংগায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফুৎকারে কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে একবারের ফুৎকার সব মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হবে। কিন্তু পরপর আবার শিংগায় ফুৎকার দিলে সব মানুষ জীবিত হয়ে যাবে এবং আল্লাহর আদালতে বিচারের সম্মুখীন হবে। সূরা ত্বা-হা ১০২ থেকে ১১২ আয়াত , সূরা আম্বিয়ার ১০১ থেকে ১০৩ আয়াত , সূরা ইয়াসীনের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াত এবং সূরা ক্বাফের ২০ থেকে ২২ আয়াতে শুধু শিংগায় তৃতীয়বারের ফুৎকারের কথা উল্লেখিত হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কোরআন, সূরা ত্বা-হা, টীকা ৭৮ ; সূরা হজ্জ, টীকা ১ এবং সূরা ইয়াসীন, টীকা ৪৬ ও ৪৭ ) কিন্তু কুরআন মজীদের এ জায়গায় এবং অন্য আরো অনেক জায়গায় শিংগায় প্রথম ফুৎকার থেকে শুরু করে মানুষের জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্ত কিয়ামতের সমস্ত ঘটনাবলী একই সাথে বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-১৭

وَّ الْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَا١ؕ وَ یَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ یَوْمَئِذٍ ثَمٰنِیَةٌؕ

ফেরেশতারা এর প্রান্ত সীমায় অবস্থান করবে। সেদিন আটজন ফেরেশতা তাদের ওপরে তোমার রবের আরশ বহন করবে।

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
# এ আয়াতটি মুতাশাবেহাত আয়াত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এর নির্দিষ্ট কোন অর্থ বলা কঠিন। আরশ কি বস্তু আমরা জানি না। কিয়ামতের দিন আটজন ফেরেশতার আরশ বহন করার ধরন কি হবে তাও আমরা বুঝি না। তবে কোন অবস্থায়ই এ ধারণা করা যাবে না যে, আল্লাহ‌ তা’আলা আরশের ওপর উপবিষ্ট থাকবেন আর আটজন ফেরেশতা তাকে সহ আরশ বহন করবে। সেই সময় আল্লাহ‌ আরশের ওপর উপবিষ্ট থাকবেন, এমন আয়াতও বলা হয়নি। মহান আল্লাহ‌ দেহসত্তাহীন এবং দিক ও স্থানের গণ্ডি থেকে মুক্ত। এমন এক সত্তা কোন স্থানে অধিষ্ঠিত থাকবেন আর কোন মাখলুক তাকে বহন করবে এটা ভাবা যায় না। আল্লাহর মহান সত্তা সম্পর্কে কুরআন মজীদের দেয়া ধারণা আমাদেরকে এরূপ কল্পনা করতে বাধা দেয়। এ জন্য খুঁজে খুঁজে এর অর্থ বের করার প্রচেষ্টা চালানো নিজেকে গোমরাহী ও বিভ্রান্তির গহবরে নিক্ষেপ করার শামিল। তবে এ বিষয়টি বুঝা দরকার যে, আল্লাহ‌ তাআলার শাসন ও শাসন কর্তৃত্ব এবং তাঁর যাবতীয় বিষয়ের একটা ধারণা দেয়ার জন্য কুরআন মজীদে আমাদের জন্য এমন একটি চিত্র পেশ করা হয়েছে যা দুনিয়ার কোন বাদশার বাদশাহীর চিত্রের অনুরূপ। মানুষের ভাষায় রাষ্ট্র ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির জন্য যে পরিভাষা ব্যবহার করা হয় এ জন্য অনুরূপ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, মানুষের বুদ্ধি-বিবেক এরূপ চিত্র এবং পরিভাষার সাহায্যই গোটা বিশ্ব-সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় কিছুটা উপলব্ধি করতে সক্ষম। বিশ্ব-জাহানের ইলাহী ব্যবস্থাপনাকে মানুষের বোধগম্যতার সীমায় নিয়ে আসাই এ ধরনের বর্ণনাভঙ্গি গ্রহণের উদ্দেশ্য। তাই এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা ঠিক নয়।

সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-১৯
فَاَمَّا مَنْ اُوْتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیْنِهٖ١ۙ فَیَقُوْلُ هَآؤُمُ اقْرَءُوْا كِتٰبِیَهْۚ

সে সময় যাকে তার আমলনামা ডান হতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখো।

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
# ডান হাতে আমলনামা দেয়ার অর্থই হবে তার হিসেব-নিকেশ অত্যন্ত পরিষ্কার। আর সে আল্লাহ‌ তাআলার আদালতে অপরাধী হিসেবে নয়, বরং একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে উপস্থিত হতে যাচ্ছে। অধিকতর সম্ভাবনা হলো, আমলনামা দেয়ার সময়ই সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষগুলো নিজেরাই ডান হাত বাড়িয়ে আমলনামা গ্রহণ করবে কারণ মৃত্যুর সময় থেকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তার সাথে যে আচরণ করা হবে তাতে তার মনে এতটা আস্থা ও প্রশান্তি থাকবে যে, সে মনে করবে আমাকে এখানে পুরস্কার প্রদানের জন্য হাজির করা হচ্ছে, শাস্তিদানের জন্য নয়। একজন মানুষ সৎ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরপারে যাত্রা করছে, না অসৎ ও পাপী হিসেবে যাত্রা করছে মৃত্যুর সময় থেকেই তা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। একথাটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। তাছাড়া মৃত্যুর সময় থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত একজন নেককার মানুষের সাথে সম্মানিত মেহমানের মত আচরণ করা হয়। কিন্তু একজন অসৎ ও বদকার মানুষের সাথে আচরণ করা হয় অপরাধে অভিযুক্ত কয়েদীর মত। এরপর কিয়ামতের দিন আখেরাতের জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই নেককার মানুষের জীবন যাপনের ধরন-ধারণাই পাল্টে যায়। একইভাবে কাফের, মুনাফিকও পাপীদের জীবন যাপনের ধরনও ভিন্ন রূপ হয়ে যায়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আনফাল, আয়াত ৫০ ; আল নাহল, আয়াত ২৮ ও ৩২ এবং টীকা ২৬ ; বনী ইসরাঈল, আয়াত ৯৭ ; ত্বা-হা আয়াত ১০২, ১০৩ ও ১২৪ থেকে ১২৬ এবং টীকা ৭৯ , ৮০ ও ১০৭ ; আল আম্বিয়া, আয়াত ১০৩ টীকা ৯৮ ;আল ফুরকান, আয়াত ২৪ ও টীকা ৩৮ ; আন নামল, আয়াত ৮৯ ও টীকা ১০৯ ; সাবা আয়াত ৫১ ও টীকা৭২ ; ইয়াসীন, আয়াত ২৬ও ২৭ এবং টীকা ২২-৩২; আল মু’মিন আয়াত ৪৫ ও ৪৬ এবং টীকা ৬৩ ; মুহাম্মাদ, আয়াত ২৭ এবং টীকা ৩৭ ; ক্বাফ, আয়াত ১৯থেকে ২৩ পর্যন্ত টীকা ২২ , ২৩ ও ২৫ )।

# আমলনামা পাওয়ার সাথে সাথেই তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে এবং নিজের বন্ধু-বান্ধবদের তা দেখাবে। সূরা ইনশিকাকের ৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “সে আনন্দ চিত্তে আপনজনদের কাছে ফিরে যাবে। “
# তারা তাদের এ সৌভাগ্যের কারণ হিসেবে বলবে যে, দুনিয়ার জীবনে তারা আখেরাতকে ভুলে ছিল না। বরং একদিন তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে সব কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে এ বিশ্বাস নিয়েই তারা সেখানে জীবন যাপন করেছিল।

সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-২৫
وَ اَمَّا مَنْ اُوْتِیَ كِتٰبَهٗ بِشِمَالِهٖ١ۙ۬ فَیَقُوْلُ یٰلَیْتَنِیْ لَمْ اُوْتَ كِتٰبِیَهْۚ

আর যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেয়া হবে সে বলবেঃ হায়! আমার আমলনামা যদি আমাকে আদৌ দেয়া না হতো

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
# সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে, “আর যাকে পিছন দিক থেকে আমলনামা দেয়া হবে।” সম্ভবত তা হবে এভাবে, অপরাধীর প্রথম থেকেই তার অপরাধী হওয়ার বিষয়টি জানা থাকবে। তার আমলনামায় কি আছে তাও ঠিকঠাক তার জানা থাকবে। তাই সে অত্যন্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁ হাত বাড়িয়ে তা গ্রহণ করবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই নিজের পেছনের দিকে লুকিয়ে ফেলবে যাতে কেউ তা দেখতে না পায়।

# হাশরের ময়দানে প্রকাশ্যে আমার হাতে এ আমলনামা দিয়ে সবার সামনে লাঞ্ছিত ও অপমানিত না করে যে শাস্তি দেয়ার তা দিয়ে ফেললেই ভালো হতো।
#‌ পৃথিবীতে আমি যা করে এসেছি তা যদি আমাকে আদৌ বলা না হতো। এ আয়াতের আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, আমি ইতিপূর্বে আদৌ জানতাম না যে, হিসেব কি জিনিস। কোনদিন আমার কল্পনাও আসেনি যে, আমাকে একদিন আমার কার্যাবলীর হিসেব দিতে হবে এবং আমার অতীত কাজ-কর্ম সব আমার সামনে পেশ করা হবে। ফী জিলালিল কুরআন: ১৯-২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ২৯ নং আয়াতে পড়ুন।
# দুনিয়ার জীবন আমার মৃত্যুবরণের পর সবকিছু যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো এবং আর কোন জীবন যদি না থাকতো।
# মূল আয়াতে আছে هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ (হালাকা আন্নি সুলতানিয়া)। سلطان সুলতান শব্দটি দলীল-প্রমাণ অর্থেও ব্যবহৃত হয় আবার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। দলিল-প্রমাণ অর্থে গ্রহণ করলে তার অর্থ হবে, আমি দলীল ও যুক্তি-প্রমাণের যে তুবড়ি ছুটাতাম তা আর এখানে চলবে না। এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের মত কোন প্রমাণই আমার কাছে নেই। আর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও প্রভাব প্রতিপত্তি অর্থে গ্রহণ করলে তার অর্থ হবে, আমি যে শক্তিতে বলীয়ান হয়ে পৃথিবীতে বুক টান করে চলতাম তা খতম হয়ে গিয়েছে। এখানে আমার কোন দলবল বা সেনাবাহিনী নেই, আমার আদেশ মেনে চলারও কেউ নেই। এখানে তো আমি এমন একজন অসহায় মানুষের মত দাঁড়িয়ে আছি যে আত্মরক্ষার জন্যও কিছু করতে সক্ষম নয়।

সুরা: আল-হাক্বাহ্
আয়াত নং :-৩৪

وَ لَا یَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِیْنِؕ

এবং দুস্থ মানুষের খাদ্য দিতে উৎসাহিত করতো না।২০

# নিজে কোন দরিদ্রকে খাবার দেয়া তো দূরের কথা কাউকে এতটুকু কথা বলাও পছন্দ করতো না যে, আল্লাহর ক্ষুধা ক্লিষ্ট বান্দাদের খাদ্য দান করো।

Leave a Reply