Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৮০/এবং কাফের-রা বলে:-২৫)
[** কাফিরদের হল কি যে, তারা:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ
পারা:২৯
৩৬-৪৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন;-
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৩৬
فَمَالِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا قِبَلَکَ مُہۡطِعِیۡنَ ﴿ۙ۳۶
কাফিরদের হল কি যে, তারা আপনার দিকে ছুটে আসছে,
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৩৭
عَنِ الۡیَمِیۡنِ وَ عَنِ الشِّمَالِ عِزِیۡنَ ﴿۳۷
ডান ও বাম দিক হতে দলে দলে?
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৩৮
اَیَطۡمَعُ کُلُّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ اَنۡ یُّدۡخَلَ جَنَّۃَ نَعِیۡمٍ ﴿ۙ۳۸
তাদের প্রত্যেকে কি এ আশা করে যে, তাকে প্রাচুর্যে ভরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে?
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৩৯
کَلَّا ؕ اِنَّا خَلَقۡنٰہُمۡ مِّمَّا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۹
কখখনো না। আমি যে জিনিস দিয়ে তাদের সৃষ্টি করেছি তারা নিজেরা তা জানে।
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৪০
فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِرَبِّ الۡمَشٰرِقِ وَ الۡمَغٰرِبِ اِنَّا لَقٰدِرُوۡنَ ﴿ۙ۴۰
অতএব না, আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের মালিকের।
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৪১
عَلٰۤی اَنۡ نُّبَدِّلَ خَیۡرًا مِّنۡہُمۡ ۙ وَ مَا نَحۡنُ بِمَسۡبُوۡقِیۡنَ ﴿۴۱
তাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর লোকদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে । আমাকে পেছনে ফেলে যেতে পারে এমন কেউ-ই নেই।
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৪২
فَذَرۡہُمۡ یَخُوۡضُوۡا وَ یَلۡعَبُوۡا حَتّٰی یُلٰقُوۡا یَوۡمَہُمُ الَّذِیۡ یُوۡعَدُوۡنَ ﴿ۙ۴۲﴾
অতএব তাদেরকে অর্থহীন কথাবার্তা ও খেল- তামাসায় মত্ত থাকতে দাও, যেদিনটির প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হচ্ছে যতদিন না সেদিনটির সাক্ষাত তারা পায়।
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৪৩
یَوۡمَ یَخۡرُجُوۡنَ مِنَ الۡاَجۡدَاثِ سِرَاعًا کَاَنَّہُمۡ اِلٰی نُصُبٍ یُّوۡفِضُوۡنَ ﴿ۙ۴۳﴾
সে দিন তারা কবর হতে বের হবে দ্রুত বেগে; (মনে হবে) যেন তারা কোন একটি লক্ষ্যস্থলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
সুরা: ৭০: আল্-মাআরিজ:-৪৪
خَاشِعَۃً اَبۡصَارُہُمۡ تَرۡہَقُہُمۡ ذِلَّۃٌ ؕ ذٰلِکَ الۡیَوۡمُ الَّذِیۡ کَانُوۡا یُوۡعَدُوۡنَ ﴿٪۴۴﴾
অবনত নেত্রে; হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে; এটাই সে দিন, যার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তাদেরকে।
ফী জিলালিল কুরআন: *আল্লাহর শপথ বাক্য : ‘অতএব সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থানসমূহের মালিকের শপথ, অবশ্যই আমি সব কিছু করতে সক্ষম, যে কোনাে সময়ে ওদের থেকে নিকৃষ্ট জীবকে আমি ওদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারি, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না।’ এই বিষয়টির ব্যাপারে কসম খাওয়ার কোনাে প্রয়ােজন আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না, তবু যখন আল্লাহ তায়ালা নিজেই কসম খেয়েছেন তখন নিশ্চয়ই আমাদের বুঝতে হবে যে, এর বিশেষ কিছু তাৎপর্য আছে। গভীরভাবে চিন্তা করলে আমাদের এটুকু বুঝে আসে যে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থানসমূহের কসম খাওয়ার মধ্যে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা পরিস্ফুট হয়ে ওঠেছে। মাশরিক ও মাগরিব সূর্য উদয় ও অন্তমিত হওয়ার স্থানসমূহ বলতে এই বিশাল সৃষ্টিকূলে তারকারাজির উদয় ও অস্তমিত হওয়ার স্থানসমূহকেই বুঝায়। অবশ্য এই বিস্তীর্ণ পৃথিবীর বুকে যে একাধিক স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত সংঘটিত হচ্ছে সেই দিকেও এ কথার ইংগীত হতে পারে। সৌরলােকে পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে গ্রহ নক্ষত্রের একটার পর আর একটার আগমন ও নিক্রিয়মনের ধারা অবিরতভাবেই চলছে। পূর্ব দিগন্তে উদয় ও পশ্চিম দিগন্তে অস্তমিত হওয়ার বিষয়টি তাে সদা সর্বদাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এভাবে ‘উদয় ও অস্তমিত হওয়ার স্থানসমূহ’ কথাটির ব্যাখ্যাও জানা যায়। এ কথা দ্বারা অন্তরের মধ্যে এ সৃষ্টি জগতের বিশালত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি জাগে এবং সকল সৃষ্টির যিনি সৃষ্টিকর্তা তার মাহাত্ম সম্বন্ধেও কিছু চেতনা সৃষ্টি হয়। এরপরও কি এ সৃষ্টি জীবের মনে এতােটুকু সন্দেহ থাকতে পারে যে তিনি ইচ্ছা করলে এ সকল সৃষ্টি থেকে অনেক বেশী উন্নত মানের জীব সৃষ্টি করতে সক্ষম, যার কল্পনা কারাে পক্ষেই সম্ভব নয়। কেউই এ ব্যাপারে তাকে পরাজিত করতে পারে না, তার থেকে কেউ কিছু কেড়েও নিতে পারে না এবং তার পাকড়াও থেকে কেউ পালিয়েও যেতে পারে না, এ ব্যাপারে কি কারাে কোনাে সন্দেহ থাকতে পারে? প্রসংগের বর্ণনা এখানে শেষ হচ্ছে।
সুরা: আল-মাআরিজ
আয়াত নং :-44
خَاشِعَةً اَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ١ؕ ذٰلِكَ الْیَوْمُ الَّذِیْ كَانُوْا یُوْعَدُوْنَ۠
সেদিন চক্ষু হবে আনত, লাঞ্চনা তাদের আচ্ছন্ন করে রাখবে। ঐ দিনটিই সেদিন যার প্রতিশ্রুতি এদেরকে দেয়া হচ্ছে।
ফী জিলালিল কুরআন:
ভয়ানক সেই কেয়ামতের দিনে অপরাধীদেরকে যে কঠিন আযাব দেয়া হবে তার ছবি তুলে ধরা, মােমেনদের মর্যাদা ও নেয়ামতের বর্ণনা পেশ করা ও কাফেরদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করার পর রাসূল(স.)-কে সম্বােধন করে বলা হচ্ছে যে, তাদের বিষয় তার চিন্তা না করে তাদেরকে সেদিনের আযাব ভোগ করার জন্যে ছেড়ে দেয়া উচিত। সেদিন হবে তাদের জন্যে বড়ই অপমানজনক ও কষ্টকর! এরশাদ হচ্ছে, ‘অতএব ছেড়ে দাও তাদেরকে, তারা শলা পরামর্শ করুক এবং সেই ওয়াদা করা দিনের সাক্ষাত লাভ করার পূর্বে তারা এসব আজে বাজে খেলাধূলায় মেতে থাকুক। সেদিন তারা কবর থেকে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এমনভাবে বেরিয়ে আসবে, যেন তারা নির্দিষ্ট কোনাে লক্ষ্যে পৌছানাের জন্যে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। তাদের চোখগুলাে ভীত সচকিত এবং কলুষ কালিমায় আচ্ছাদিত থাকবে, আর সে কঠিন দিনটি সম্পর্কেই তাদের নিশ্চিত ওয়াদা দেয়া হচ্ছে।’ তাদের কদর্য অবস্থার বর্ণনা সম্বলিত এই সম্বােধনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই সম্বােধনের মাধ্যমে তাদের তিরস্কার করা হচ্ছে। এই সম্বোধনের কারণে তাদের মধ্যে যেমন ভীতির সঞ্চার হচ্ছে তেমনই তারা বুঝতে পারছে যে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতি পুরােপুরিই লক্ষ রাখা হচ্ছে। সেদিন তাদের চেহারা ছবি, গােটা অবয়ব ও চাল চলন সবকিছুই ভীতিপ্রদ এবং ভয় উদ্রেককারী হবে। এখানে তাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে কটাক্ষই করা হয়েছে। বিদ্রুপাত্মক এমন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যা আসলেই তাদের অবস্থার জন্যে উপযােগী। বলা হচ্ছে ওরা কবর থেকে বেরিয়ে এসে এমন দ্রুতগতিতে দৌড়াতে থাকবে, দেখে মনে হবে তারা কোনাে গন্তব্য স্থানে জলদী পৌছানাের জন্য দৌড়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতি এমন কটাক্ষ কোনাে অমূলক বিষয় নয়, দুনিয়াতেও তাে তারা এমনিভাবে পূজামন্ডপের দিকে মূর্তিপূজার উদ্দেশ্যে নির্বোধের মতাে দ্রুতগতিতে দৌড়ে যায় এবং তার চতুর্দিকে তারা ভীড় করে মেলা জমায়। সে ভয়ংকর দিনে সে মূর্তিপূজারী মােশরেকরা দিক বেদিক জ্ঞানহারা হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকবে। তবে সে দিনের দৌড়াদৌড়ি এবং আজকের দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আকাশচুম্বী পার্থক্য রয়েছে। এরপর এই বলে তাদের অবস্থার বর্ণনা সমাপ্ত করা হচ্ছে যে, ‘তাদের চোখগুলাে সেদিন ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় অবনমিত থাকবে, যার ওপর কলুষ কালিমা ছেয়ে থাকবে।’ এই বাক্যসমূহের মধ্যে তাদের চেহারার পরিপূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। এই বর্ণনায় তাদের করুণ ও হীন অবস্থার ছবি যেন জীবন্ত রূপ লাভ করেছে। জীবদ্দশায় তারা সেদিন সম্পর্কে যেভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাে তারই প্রতিদান হিসাবে এ অপমানজনক অবস্থায় তারা পতিত হবে। ‘আর এই দিনের ওয়াদায় তাে তারা সন্দিহান ছিলাে, তারা রসূল(স.)-কে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছিলাে এবং অনাগত আযাবের জন্যে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাে। এভাবে সূরাটির শুরু ও শেষের আলােচনা সুসমন্বিত হয়েছে, আর এখানে সমাপ্ত হচ্ছে পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসের দীর্ঘ বর্ণনা। জাহেলিয়াতের অর্থহীন জীবন ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সম্মােহনী ধ্যান-ধারণার মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য বর্তমান তা এই দীর্ঘ আলােচনার মাধ্যমে আশা করি পরিস্ফূট হয়ে উঠেছে।
৩৬-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ ঐ কাফিরদের উপর অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে বিদ্যমান ছিল, স্বয়ং তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল এবং তিনি যে হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন তা তাদের সামনেই ছিল। এতদসত্ত্বেও তারা তার নিকট হতে পালিয়ে যাচ্ছিল এবং তাঁকে বিদ্রুপ করার উদ্দেশ্যে ডান ও বাম দিক হতে দলে দলে তার দিকে ছুটে আসছিল। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তাদের কি হয়েছে যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় উপদেশ হতে? তারা যেন ভীত এস্ত গর্দভ- যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়নপর।”(৭৪:৪৯-৫১) অনুরূপভাবে এখানেও বলেনঃ এই কাফিরদের কি হলো যে, তারা ঘৃণা ভরে তোমার নিকট হতে সরে যাচ্ছে? কেন তারা ডানে বামে ছুটে চলছে? তারা বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-ওদিক চলে যাচ্ছে এর কারণ কি? হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) প্রবৃত্তির উপর আমলকারীদের সম্পর্কে এ কথাই বলেন যে, তারা আল্লাহর কিতাবের বিরুদ্ধাচরণকারী হয়ে থাকে এবং তারা পরস্পরও একে অপরের বিরোধী হয়ে থাকে। হ্যাঁ, তবে কিতাবুল্লাহর বিরোধিতায় তারা সব একমত থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আওফীক (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তারা বেপরোয়া ভাবে ডানে-বামে হয়ে তোমাকে বিদ্রুপ ও উপহাস করে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, অর্থ হলোঃ তারা ডানে-বামে হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করেঃ এ লোকটি কি বলেছে? হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, তারা দলবদ্ধভাবে ডানে-বামে হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চতুর্দিকে ফিরতে থাকে। না তাদের কিতাবুল্লাহর উপর চাহিদা আছে, না রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর প্রতি কোন আগ্রহ আছে।
হযরত জাবির ইবনে সামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) জনগণকে বিচ্ছিন্নভাবে দলে দলে আসতে দেখে বলেনঃ “আমার কি হলো যে, আমি তোমাদেরকে এভাবে দলে দলে আসতে দেখছি?” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবূ দাউদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তাদের প্রত্যেকে কি এই প্রত্যাশা করে যে, তাকে দাখিল করা হবে প্রাচুর্যময় জান্নাতে? না, তা হবে না। অর্থাৎ তাদের অবস্থা যখন এই যে, তারা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (সঃ) হতে ডানে-বামে বক্র হয়ে চলছে তখন তাদের এ চাহিদা কখনো পুরো হতে পারে না। বরং তারা জাহান্নামী দল।
এখন তারা যেটাকে অসম্ভব মনে করছে তার সর্বোত্তম প্রমাণ তাদের নিজেদেরই অবগতি ও স্বীকারুক্তি দ্বারা বর্ণনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছেঃ আমি তাদেরকে যা হতে সৃষ্টি করেছি তা তারা জানে। তা এই যে, আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি দুর্বল পানি হতে। তাহলে তিনি কি তাদেরকে পুনর্বার সৃষ্টি করতে পারবেন না? যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে নিকৃষ্ট পানি হতে সৃষ্টি করিনি?” (৭৭:২০) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “সুতরাং মানুষ প্রণিধান করুক যে, তাকে কি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে। এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য হতে। নিশ্চয়ই তিনি তার প্রত্যানয়নে ক্ষমতাবান। যেই দিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হবে সেই দিন তার কোন সামর্থ্য থাকবে না এবং সাহায্যকারীও না।” (৮৬:৭-১০)
এখানে মহান আল্লাহ্ বলেনঃ শপথ ঐ সত্তার যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম নির্ধারণ করেছেন এবং তারকারাজির গোপন হওয়ার ও প্রকাশিত হওয়ার স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন! ভাবার্থ হচ্ছেঃ হে কাফির সম্প্রদায়! তোমরা যা ধারণা করছো ব্যাপার তা নয় যে, হিসাব-কিতাব হবে না এবং হাশর-নশরও হবে না। এসব অবশ্যই সংঘটিত হবে। এজন্যেই কসমের পূর্বে তাদের বাতিল ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন এবং এটাকে এমনভাবে সাব্যস্ত করেন যে, নিজের পূর্ণ শক্তির বিভিন্ন নমুনা তাদের সামনে পেশ করেন। যেমন আসমান ও যমীনের প্রাথমিক সৃষ্টি এবং এই দু’টির মধ্যে প্রাণীসমূহ, জড় পদার্থ এবং বিভিন্ন নিয়ামতের বিদ্যমানতা। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “অবশ্যই মানব সৃষ্টি অপেক্ষা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করাই বড় ব্যাপার, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।”(৪০:৫৭)।
ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা যখন বৃহৎ হতে বৃহত্তম জিনিস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তখন তিনি ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিস সৃষ্টি করতে কেন সক্ষম হবেন না? অবশ্যই তিনি সক্ষম হবেন। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলো সৃষ্টি করতে ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম হবেন না? হ্যাঁ অবশ্যই তিনি সব কিছুরই উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (৪৬:৩৩)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি ওগুলোর অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তার ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তিনি ওকে বলেনঃ ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।”(৩৬:৮১-৮২)
এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলের অধিপতির- নিশ্চয়ই আমি তাদের এই দেহকে, যেমন এখন এটা রয়েছে, এর চেয়েও উত্তম আকারে পরিবর্তিত করতে পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতাবান কোন জিনিস, কোন ব্যক্তি এবং কোন কাজ আমাকে অপারগ ও অক্ষম করতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারবো না? বস্তুতঃ আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পূনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (৭৫:৩-৪) আরো বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আমি তোমাদের জন্যে মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই তোমার স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতি দান করতে যা তোমরা জান না।” (৫৬:৬০-৬১)।
সুতরাং (আরবি)-এর একটি ভাবার্থ তো এটাই যা উপরে বর্ণিত হলো। আর দ্বিতীয় ভাবার্থ, যা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন তা হলোঃ নিশ্চয়ই আমি সক্ষম তাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর মানব গোষ্ঠীকে তাদের স্থলবর্তী করতে, যারা হবে আমার পূর্ণ অনুগত, যারা আমার অবধাচরণ করবে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।”(৪৭:৩৮) তবে প্রথম ভাবার্থটিই বেশী প্রকাশমান। কেননা এর পরবর্তী আয়াতগুলোতে এ লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
৩৬-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের যে সকল কাফিররা তাঁকে পেয়েও এবং বহুসংখ্যক মু‘জিযাহ দেখার পরেও ঈমান না এনে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কার করছেন।
مُهْطِعِيْنَ অর্থ : হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : منطلقين বা দ্রুত আগমন করে। অর্থাৎ কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে দ্রুত ছুটে আসে ইসলাম গ্রহণ করার জন
৩৬-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের যে সকল কাফিররা তাঁকে পেয়েও এবং বহুসংখ্যক মু‘জিযাহ দেখার পরেও ঈমান না এনে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কার করছেন।
مُهْطِعِيْنَ অর্থ : হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন : منطلقين বা দ্রুত আগমন করে। অর্থাৎ কাফিররা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে দ্রুত ছুটে আসে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য নয়, বরং তিনি কী বলেন তা নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য।
عِزِيْنَ শব্দটি عزة এর বহুবচন। অর্থ : متفرفين বা দলে দলে।
(أَيَطْمَعُ كُلُّ امْرِئٍ ….كَـلَّا)
অর্থাৎ তারা কি এ কুফরী অবস্থায় অটল থেকে জান্নাতে যাওয়ার আশা করে? কখনো সম্ভব নয়, কেবল মু’মিনরাই জান্নাতে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُؤْمِنَةٌ
মু’মিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। (তিরমিযী হা. ৩০৯২, সহীহ)
(إِنَّا خَلَقْنٰهُمْ مِّمَّا يَعْلَمُوْنَ)
অর্থাৎ দুর্বল বীর্য থেকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ ط خُلِقَ مِنْ مَّا۬ءٍ دَافِقٍ لا يَّخْرُجُ مِنْمبَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ)
“সুতরাং মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবল বেগে নির্গত পানি হতে, যা বের হয় পিঠ ও বুকের হাড়ের মধ্য হতে।” (সূরা তারেক ৮৬ : ৫-৭)
(رَبِّ الْمَشٰرِقِ وَالْمَغٰرِبِ)
এ সম্পর্কে সূরা আর-রহমানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(إِنَّا لَقٰدِرُوْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّبَدِّلَ خَيْرًا مِّنْهُمْ)
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শারীরিক গঠন দুনিয়ার চেয়ে উত্তম রূপে নিয়ে আসতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(أَيَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَلَّنْ نَّجْمَعَ عِظَامَه۫ ط بَلٰي قَادِرِيْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّسَوِّيَ بَنَانَه)
“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলো কোনক্রমে একত্র করতে পারব না। হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫ : ৩-৪)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِيْنَ عَلٰٓي أَنْ نُّبَدِّلَ أَمْثَالَكُمْ وَنُنْشِئَكُمْ فِيْ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)
“আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই এ ব্যাপারে যে, আমি তোমাদের মত (অন্যকে) পরিবর্তন করে নিয়ে আসব এবং তৈরি করব তোমাদেরকে এমন (আকৃতিতে) যা তোমরা জান না।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬ : ৬০-৬১)
ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা এ জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি নিয়ে আসতে সক্ষম যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং তাঁর অবাধ্য হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ لا ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْآ أَمْثَالَكُمْ)
“যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য কাওমকে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মত হবে না।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩৮)
(فَذَرْهُمْ يَخُوْضُوْا)
অর্থাৎ হে নাবী! তাদেরকে অবকাশ দিন। তারা তাদের বাতিল চিন্তা-চেতনা নিয়ে মত্ত থাকুক। যখন কিয়ামত চলে আসবে তখন তারা বুঝতে পারবে সঠিক ধর্ম বর্জন করার ফলাফল কী?
الْأَجْدَاثِ শব্দটি جدث এর বহুবচন। অর্থ হল : কবর। فصب অর্থ হল : থান, বেদী-যেখানে মূর্তির নামে পশু জবাই করা হয়। এটি মূর্তি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ علم বা পতাকা বা নিদর্শন অর্থে প্রয়োগ করেছেন। যেভাবে যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যরা নিজেদের পতাকার দিকে দৌড়ায় তেমনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠে মানুষ দ্রুত হাশরের দিকে দৌড়াবে।
خَاشِعَةً অর্থ ذليلة خاضعة বা অপদস্থ ও অবনত হয়ে থাকবে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষ লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারবে না। সকলে হীন ও মাথা নত অবস্থায় থাকবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে কাফিরদের যে অবস্থা ছিল তা জানতে পারলাম।
২. জান্নাতে কেবল মু’মিনরাই প্রবেশ করবে অন্য কোন ব্যক্তি না।
৩. কবর ও পুনরুত্থানের প্রমাণ পেলাম।
৩৬-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
# সমস্ত লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ দেখে এবং কুরআনের বক্তব্য শুনে তা নিয়ে হাসি-তামাসা করা এবং তার প্রতি বিদ্রূপবান নিক্ষেপ করার জন্য চারদিক থেকে ছুটে আসতো এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে।
# অর্থ হলো যেসব লোকের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এই মাত্র বর্ণনা করা হলো আল্লাহর জান্নাত তো তাদের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু যারা সত্যের বাণী শোনা পর্যন্ত পছন্দ করে না এবং ন্যায় ও সত্যের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য এভাবে ছুটে আসছে তারা জান্নাতের দাবীদার কিভাবে হতে পারে? আল্লাহ কি এমন সব লোকদের জন্যই তার জান্নাত তৈরি করেছেন? এ পর্যায়ে সূরা আল কলমের ৩৪ থেকে ৪১ আয়াত সামনে থাকা দরকার। মক্কার কাফেররা বলতো, আখেরাত যদি থাকেও তাহলে এ দুনিয়ায় তারা যেভাবে আমোদ প্রমোদ মত্ত থাকছে সেখানেও একইভাবে মত্ত থাকবে। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান পোষণকারী লোকেরা দুনিয়ায় যেভাবে দুরবস্থার শিকার হয়ে আছে সেখানেও ঠিক তাই থাকবে। উল্লেখিত আয়াতসমূহে কাফেরদের এ ধ্যান-ধারণার জবাব দেয়া হয়েছে।
# এখানে এ আয়াতাংশের দু’টি অর্থ হতে পারে। আগে বর্ণিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ধরে নিলে এর অর্থ হবে, যে উপাদানে এসব লোককে সৃষ্টি করা হয়েছে সে হিসেবে সব মানুষ সমান। জান্নাতে যাওয়ার কারণ যদি ঐ উপাদানটি হয় তাহলে সৎ ও অসৎ, জালেম ও ন্যায়নিষ্ঠা, অপরাধী ও নিরপরাধ সবারই জান্নাতে যাওয়া উচিত। কিন্তু জান্নাতে যাওয়ার অধিকার যে, মানুষের সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় না বরং শুধু তার গুণাবলীর ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টির ফায়সালার জন্য সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিই যথেষ্ট। আর এ আয়াতাংশকে যদি পরবর্তী বিষয়ের পূর্বাভাস বা ভূমিকা হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে তার অর্থ হবে এসব লোক নিজেরাই নিজেদেরকে আমার আযাব থেকে নিরাপদ মনে করছে আর যে ব্যক্তি আমরা কাছে জবাবদিহি সম্পর্কে তাদেরকে সাবধান করে দেয় তাকে বিদ্রূপ ও হাসি-তামাসা করছে। অথচ আমি চাইলে যখন ইচ্ছা দুনিয়াতেও তাদেরকে আযাব দিতে পারি আবার যখন ইচ্ছা মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেও উঠাতে পারি। তারা জানে নগণ্য এক ফোটা বীর্য দিয়ে আমি তাদের সৃষ্টির সূচনা করেছি এবং তারপর তাদেরকে সচল ও সক্ষম মানুষ বানিয়েছি। তাদের এ সৃষ্টি কৌশল সম্পর্কে যদি তারা চিন্তা-ভাবনা করতো তাহলে কখনো এ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী তারা হতো না যে, এখন তারা আমার কর্তৃত্বের গণ্ডির বাইরে কিংবা আমি তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নই।
# অর্থাৎ তারা যা মনে করে বসে আছে ব্যাপার আসলে তা নয়। এখানে মহান আল্লাহ নিজেই নিজের সত্তার শপথ করেছেন। “উদয়াচলসমূহ ও অস্তাচলসমূহ” এ শব্দ ব্যবহারের কারণ হলো, গোটা বছরের আবর্তন কালে সূর্য প্রতিদিনই একটি নতুন কোণ থেকে উদিত হয় এবং একটি নতুন কোণে অস্ত যায়। তাছাড়া ও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্রমাগত উদিত ও অস্তমিত হতে থাকে। এ হিসেবে সূর্যের উদয় হওয়ার ও অস্ত যাওয়ার স্থান একটি নয়, অনেক। আরেক হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের তুলনায় একটি দিক হলো পূর্ব এবং আরেকটি দিক হলো পশ্চিম। তাই সূরা শূ’আরার আয়াতে এবং সূরা মুয্যাম্মিলের আয়াতে رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ রাব্বিল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরেক বিচারে পৃথিবীর দু’টি উদয়াচল এবং দু’টি অস্তাচল আছে। কারণ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য অস্ত যায় তখন অপর গোলার্ধে উদিত হয়। এ কারণে সূরা আর রহমানের আয়াতে رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইনি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য, দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, সূরা আর রহমান, টীকা ১৭)।
# , عَلٰۤى اَنْ نُّبَدِّلَ خَیْرًا مِّنْهُمْ١ۙ وَ مَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِیْنَ তাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর লোকদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে । আমাকে পেছনে ফেলে যেতে পারে এমন কেউ-ই নেই।২৯ তাফসীর : তাফহীমুল কুরআন: টিকা:২৯) এ কথাটির জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাঁর দু’টি উদয়াচল ও দু’টি অস্তাচলের মালিক হওয়ার শপথ করেছেন। এর অর্থ হলো, আমি যেহেতু উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের মালিক তাই গোটা পৃথিবীই আমার কর্তৃত্বাধীন। আমার কর্তৃত্ব ও পাকড়াও থেকে রক্ষা পাওয়া তোমাদের সাধ্যাতীত। যখন ইচ্ছা আমি তোমাদের ধ্বংস করতে পারি এবং তোমাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর কোন জাতির উত্থান ঘটিয়ে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারি।
# মূল আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হলো إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ । نصب (নুছুব) শব্দের অর্থের ব্যাপারে মুফাস্সিরগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। অনেকে এর অর্থ করেছেন মূর্তি বা প্রতিম। তাদের মতে এর অর্থ হলো, তারা হাশরের অধিপতি নির্ধারিত জায়গার দিকে দৌড়িয়ে অগ্রসর হতে থাকবে ঠিক; আজ যেমন তারা তাদের দেব-দেবীর আস্তানার দিকে ছুটে যায়। আবার অন্য আরেক দল মুফাস্সিরের মতে এর অর্থ দৌড়ে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য চিহ্নিত গন্তব্য স্থল। প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী যাতে সবার আগে সেখানে পৌঁছতে চেষ্টা করে।