Book No. 2 ” হে মুমিনগণ ! ” (সংক্ষিপ্ত)

একনজরে ” হে মুমিনগণ ! “

———————————————————————————————–

 

 

হে মুমিনগণ
ঙ ণব ডযড় ইবষরবাব

ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোতাহার হোসাইন

িি.িসড়ঃধযবৎ২১.হবঃ

প্রফেসর’স পাবলিকেশন্স
৩৮/৩, বাংলাবাজার, ঢাকা।
মোবাইল: ——
ঊ-সধরষ: ধরংষধস১২১৭@মসধরষ.পড়স

হে মুমিনগণ
ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোতাহার হোসাইন

প্রকাশকাল:
আগস্ট ২০০৭
দ্বিতীয় প্রকাশ
জানুয়ারি, ২০২০

প্রকাশনায়:
এ এম আমিনুল ইসলাম
৩৮/৩ বাংলাবাজার
মোবাইল: ——–

মুদ্রণে :
মার্জান প্রিন্টিং প্রেস
মগবাজার, ঢাকা।

মুদ্রণ ও ডিজাইন
প্রফেসর’স পাবলিকেশন্স
৩৮/৩, বাংলাবাজার, ঢাকা
মোবাইল: ০১৮১৬৮১০৬৫৩

শুভেচ্ছা মূল্য : ৪০ টাকা মাত্র
ঙ ণব ডযড় ইবষরবাব
ঊহমরহববৎ গফ. গড়ঃধযবৎ ঐড়ংংধরহ

ঊফরঃরড়হ
অঁমঁংঃ ২০০৭
২হফ ঊফরঃরড়হ
ঔধহঁধৎু ২০২০

চঁনষরংযবফ নু
অ.গ. অসরহঁষ ওংষধস
৩৮/৩, ইধহমষধনধুধৎ, উযধশধ
ঈবষষ : —-

চৎরহঃরহম চৎবংং
গধুধহ চৎরহঃরহম চৎবংং
গড়মযনধুধৎ, উযধশধ

চৎরহঃরহম ্ উবংরমহ
চৎড়ভবংংড়ৎ চঁনষরপধঃরড়হ’ং
৩৮/৩, ইধহমষধনধুধৎ, উযধশধ
ঈবষষ : ০১৮১৬৮১০৬৫৩

চৎরপব : ৩০.০০ ঞশ. ঙহষু
অনুমতির প্রয়োজন নেই

যে কোন মুসলিম সংস্থা, অথবা ব্যক্তি এই বই যে কোন মাধ্যমে, যে কোন ভাষায়, কোন প্রকার পরিবর্তন ছাড়া এবং কোন পূর্ব অনুমতি ছাড়া বিক্রয় অথবা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রকাশ করতে পারেন।

আমরা শুধুমাত্র অবগতির জন্য কয়েকটি প্রকাশিত কপি পেলে ধন্য হবো।
-প্রকাশক

সম্মানিত পাঠকের প্রতি বিনীত নিবেদন

আল কুরআনের কোথাও কোন ভুল নেই- “লা রাইবা ফি-হে” কিন্তু কুরআনের মত ঘোষণা করার দুঃসাহস আমার নেই যে, এই বই-এ কোন ত্রæটি নেই। যদিও এগুলো কুরআনেরই সে সমস্ত আয়াত-সমগ্র কুরআনে যেগুলোতে মুমিনদেরকে সরাসরি আহŸান করেই কিছু আদেশ কিছু নিষেধ করা হয়েছে। তাই বলে এটাই পূর্ণ কুরআন নয় বরং কুরআনের অংশ বিশেষ। এগুলো জানার আগ্রহ প্রত্যেক মুমিনের রয়েছে এবং নিজেদেরকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে গড়তে হলে এগুলো জানার কোন বিকল্প নেই। তারপরেও মনে রাখতে হবে এটা মূল আয়াতের সাথে বাংলা অনুবাদ ও কিছু তাফসীর তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। এতে কোথাও কোন ভুল-ত্রæটি ধরা পড়লে অথবা আপনাদের কোন মূল্যবান পরামর্শ থাকলে জানিয়ে বাধিত করবেন।
পূর্ণ কুরআন অধ্যয়ন করা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। যদিও মুসলমান হিসেবে এটা আমাদের প্রধান কর্তব্য। কারণ কুরআন থেকে সরে গেলে আমরা ইসলাম থেকে, ঈমান থেকে দূরে সরে যাব। রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাতকে আকড়িয়ে থাকাই আমাদের সঠিক পথ প্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম। সেই পথের কিছুটা দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। এই বইতে কুরআনের দৃষ্টিতে করণীয় ও বর্জনীয়ের অধিকাংশই আমরা জানতে পারব। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর কুরআন থেকে সঠিক হেদায়েত দান করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফল করুন। এই মুনাজাত করছি।

প্রকৌশলী মুহাম্মদ মোতাহার হোসাইন
গ্রাম: দেবপুর, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী

একনজরে হে মুমিনগণ

১. দ্ব্যার্থবোধক শব্দ পরিহার কর ———————– বাকারা, ২:১০৪
২. নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর — বাকারা, ২:১৫৩
৩. পবিত্র খাদ্য গ্রহণ কর —————————— বাকারা, ২:১৭২
৪. কিসাসের আইন মেনে চল ————————– বাকারা, ২:১৭৮
৫. রোজা রাখ তাকওয়া অর্জন কর ——————— বাকারা, ২:১৮৩
৬. পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর ——————– বাকারা, ২:২০৮
৭. পরকালে ক্রয় বিক্রয় হবে না, কারো সুপারিশ কাজে আসবে না- বাকারা, ২:২৪৫
৮. অনুগ্রহ প্রকাশ করে, কষ্ট দিয়ে দান-খয়রাত নষ্ট করো না- বাকারা, ২:২৬৪
৯. সম্পদ থেকে উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করা —– বাকারা, ২:২৬৭
১০. সুদের বকেয়া পরিত্যাগ কর ———————— বাকারা, ২:২৭৮
১১. লেন-দেন লিপিবদ্ধ কর এবং সাক্ষী রাখ ————– বাকারা, ২:২৮২
১২. আহলি কিতাবরা ঈমান থেকে কুফরীতে ফিরিয়ে নিতে চায়- আলে ইমরান, ৩:১০০
১৩. আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর ———————- আলে ইমরান, ৩:১০২
১৪. মুমিন ছাড়া কাউকে অন্তরংগ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না—– আলে ইমরান, ৩:১১৮
১৫. সুদ খেয়ো না ————————————– আলে ইমরান, ৩:১৩০
১৬. কুফরীর পথ অবলম্বনকারীর অনুসরণ করো না।——– আলে ইমরান, ৩:১৪৯
১৭. কাফিরদের মত কথাবার্তা বলো না। —————— আলে ইমরান, ৩:১৫৬
১৮. সবর, মুসাবারাহ, মুরাবাতাহ ও তাকওয়া অবলম্বন কর– আলে ইমরান, ৩:২০০
১৯. বিধবা ও স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ কর —————— নিসা, ৪:১৯
২০. একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। —— নিসা, ৪:২৯
২১. সুস্থ মস্তিষ্কে ও পবিত্র অবস্থায় নামাজ পড় ————- নিসা, ৪:৪৩
২২. আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আনুগত্য কর।- নিসা, ৪:৫৯
২৩. শক্রর মুকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত থাক। ————– নিসা, ৪:৭১
২৪. অপরিচিতদের মুসলিম দাবীর সত্যতা যাচাই কর। —– নিসা, ৪:৯৪
২৫. নিজের বিরুদ্ধে গেলেও ন্যায় সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর। —- নিসা, ৪:১৩৫
২৬. আন্তরিকভাবে ঈমান আন। ————————– নিসা, ৪:১৩৬
২৭. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ঈমানের বিরুদ্ধে সম্পষ্ট দলিল— নিসা, ৪:১৪৪
২৮. অংগীকার রক্ষা কর, হালাল হারাম মেনে চল। ——— মায়েদা, ৫:০১

২৯. পূণ্যের কাজে সহযোগিতা কর, পাপের কাজে সহযোগিতা করো না।- মায়েদা, ৫:০৩
৩০. অজু, গোসল ও তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন কর।—— মায়েদা, ৫:০৭
৩১. কোন সম্প্রদায়ের শক্রতার কারণে ন্যায় বিচার ত্যাগ করো না।—– মায়েদা, ৫:০৯
৩২. আল্লাহর উপর ভরসা কর। ———————————— মায়েদা, ৫:১২
৩৩. জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ ক৪।—————– মায়েদা, ৫:৩৮
৩৪. তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। —— মায়েদা, ৫:৫৪
৩৫. মুমিনদের প্রতি বিনয় নম্র হও কাফেরদের প্রতি কঠোর হও। —— মায়েদা, ৫:৫৭
৩৬. তোমাদের ধর্মকে উপহাসকারীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। – মায়েদা, ৫:৬০
৩৭. হালালকে হারাম করো না। ———————————– মায়েদা, ৫:৯০
৩৮. মদ (নেশা), জুয়া, স্তম্ভ (মূর্তি) ও লটারী পরিহার কর। ———– মায়েদা, ৫:৯৩
৩৯. ইহরাম অবস্থায় শিকার করো না। —————————– মায়েদা, ৫:৯৭
৪০. শিকার করলে কাফফারা আদায় কর। ————————- মায়েদা, ৫:৯৮
৪১. কুরআন যে বিষয়ে নীরব তা নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করো না। —- মায়েদা, ৫:১০৪
৪২. নিজেরা সঠিক পথে থাক।———————————— মায়েদা, ৫:১০৮
৪৩. অসিয়তের দুই জন স্বাক্ষী রাখ। —————————— মায়েদা, ৫:১০৯
৪৪. যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করো না। ————————— আনফাল, ৮:১০
৪৫. আল্লাহ ও রাসূলের (সঃ) আদেশ অমান্য করো না। ————- আনফাল, ৮:২০
৪৬. আল্লাহ ও রাসূলের (সঃ) এর ডাকে সাড়া দাও। ————— আনফাল, ৮:২৪
৪৭. আমানতের খিয়াতন করো না। ——————————- আনফাল, ৮:২৭
৪৮. আল্লাহকে ভয় করার প্রতিদান। —————————— আনফাল, ৮:২৯
৪৯. শক্র বাহিনীর মুকাবিলায় সুদৃঢ় থাক ও আল্লাহকে স্মরণ কর। —- আনফাল, ৮:৪৫
৫০. কাফের পিতা ও ভাইকেও অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। —— তাওবা, ৯:২৩
৫১. মুশরিকদের মসজিদুল হারামের নিকটেও প্রবেশ নিষেধ। ——– তাওবা, ৯:২৮
৫২. ভন্ড আলেমদের থেকে সতর্ক থাক মাল সম্পদের যাকাত দাও। — তাওবা, ৯:৩৪
৫৩. আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যেও না।- তাওবা, ৯:৩৮
৫৪. সত্যনিষ্ঠদের সংগী হও। ———————————— তাওবা, ৯:১১৯
৫৫. নিকটতম কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। ———————- তাওবা, ৯:১২৩
৫৬. রুকু, সিজদা, ইবাদাত ও সৎকর্ম কর। ———————– হজ্জ, ২২:৭৭
৫৭. শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। ———————— নূর, ২৪:২১
৫৮. বিনা অনুমতিতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না। —————- নূর, ২৪:২৭
৫৯. মুহাররম আত্মীয়-স্বজন এবং দাস-দাসীদেরও তিন সময়ে অনুমতি গ্রহণ করা কর্তব্য— নূর, ২৪:৫৮
৬০. আল্লাহর ইবাদত করার ক্ষেত্রে ওজর পেশ করো না। ———– আনকাবুত, ২৯:

৬১. আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। ————————- আহ্যাব, ৩৩:৯
৬২. আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ কর। —————————- আহ্যাব, ৩৩:৪১
৬৩. স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দেয়া হলে ইদ্দত পালন করতে হবে না। আহ্যাব, ৩৩:৪৯
৬৪. সামাজিক শিষ্টাচার ও পর্দার আদেশ মেনে চল। —————- আহ্যাব, ৩৩:৫৩
৬৫. নবী করীম (সাঃ)- এর প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ কর।——– আহ্যাব, ৩৩:৫৬
৬৬. নবী রাসূলদের (সাঃ)- মর্যাদা ক্ষুণœ হওয়ার মত কথা বলো না।— আহ্যাব, ৩৩:৫৬
৬৭. সঠিক কথা বল। ——————————————- আহ্যাব, ৩৩:৭০
৬৮. সৎ আচরণ গ্রহণ কর, ধৈর্যশীলরা বে-হিসাব পুরষ্কার পাবে। —–
৬৯. আল্লাহ সাহায্যকারী হও আল্লাহ তোমাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। মুহাম্মদ, ৪৭:০৭
৭০. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর। —————– মুহাম্মদ, ৪৭:৩৩
৭১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)০ এর অগ্রে যেয়ো না। ———— হজরাত, ৪৯:০১
৭২. রাসূল (সাঃ) এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখ। ——————- হজরাত, ৪৯:০২
৭৩. ফাসিক লোকদের কথাবার্তার সত্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নাও। – হজরাত, ৪৯:০৬
৭৪. একে অপরকে উপহাস করো না। মন্দ নামে ডেকো না। ——- হজরাত, ৪৯:১১
৭৫. বেশী কুধারণা পোষণ করো না, গীবত করো না। ————– হজরাত, ৪৯:১২
৭৬. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি আন্তরিকভাবে ঈমান আন, পূর পাবে।—— হাদীদ, ৫৭:
৭৭. পাপাচার ও সীমা লংঘনের ব্যাপারে কানাকানি করো না, সৎকাজ কর।- মুজাদালা,৫৮:০৯
৭৮. প্রয়োজনে মজলিশের স্থান প্রশস্ত করে দাও। ——————- মুজাদালা, ৫৮:১১
৭৯. সাদকা প্রদান পবিত্র হওয়ার উপায়। ————————– মুজাদালা, ৫৮:১২
৮০. আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করছ তা চিন্তা কর। ————- হাশ্র, ৫৯:১৮
৮১. কুফরি শক্তির অনুকূল কাজ করো না। ———————— মুমতাহিনাহ, ৬০:০১
৮২. মুসলিম ও কাফির পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থেকোনা। —— মুমতাহিনাহ, ৬০:১০
৮৩. গজব প্রাপ্তদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ———————— মুমতাহিনাহ, ৬০:১৩
৮৪. কথা ও কাজে গরমিল করো না। —————————- সাফ্ফ, ৬১:০২
৮৫. যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে মুক্তির পথ (জিহাদ) অবলম্বন কর। — সাফ্ফ, ৬১:১০
৮৬. আল্লাহর সাহায্যকারী হও, বিজয় তোমাদের। —————– সাফ্ফ, ৬১:১৪
৮৭. জুমআর আযানের সাথে সাথে বেচাকেনা বন্ধ কর। ————- জুমু’আ, ৬২:০৯
৮৮. ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না করে।—– মুনাফিকুন, ৬৩:৯
৮৯. স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতির ব্যাপারে সতর্ক থাক। ——————- তাগাবুন, ৬৪:১৪
৯০. সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।—— তাহরীম, ৬৬:০৬
৯১. আল্লাহর কাছে তওবা কর, আন্তরিক তওবা। —————— তাহরীম, ৬৬:০৮

জুমআর আযানের সাথে সাথে বেচা-কেনা (কাজকর্ম) বন্ধ কর

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِىَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللّهِ وَذَرُوْا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ○
হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দৌড়াও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সূরা ৬২, জুম’আ, আয়াত: ৯)
জুম’আ মূলত একটি ইসলামী পরিভাষা, জাহিলিয়াতের যুগে আরববাসীরা একে “ইয়াওমু আরূরা” বলত। ইসলামে এ দিনটিকে যখন মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছিল তখনই ইহার নামকরণ হয় ‘জুম’আ’। ইহা প্রাথমিকভাবে মুসলমানদের সমাবেশের দিন, সাপ্তাহিক সমাবেশ। এদিন তারা একত্রিত হয়ে নিজেদের একতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন আরো জোরদার করে। এই দিনের সামষ্টিক এবাদাত তথা জুম’আর নামাজের ইমাম সাহেব অর্থাৎ সামাজের নেতা সাপ্তাহিক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের পর্যালোচনা করেন এবং একে আরো উন্নত ও সুসংহত করার জন্য উপদেশ এবং আহŸান জানান। এখানে মুসলমানদের পারস্পরিক সামাজিক ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় করর যে চমৎকার ব্যবস্থা তা লক্ষণীয়। প্রত্যহ তারা পাঁচবার মসজিদে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর সপ্তাহে একবার প্রত্যেক গ্রাম শহর অথবা বড় শহরের ওয়ার্ড এর কেন্দ্রীয় মসজিদে জুম’আর নামাজ আদায় করেন এবং এটা একটা স্থানীয় সমাবেশ যেখানে বর্তমানে পরিস্থিতির আলোচনা করে ইমাম তথা নেতা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বৎসরে দুইবার দুই ঈদে আরো বৃহত্তর অঙ্গনে একত্রে সমাবেশ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মিলিত হন এবং সর্বোপরি জীবনে কমপক্ষে একবার মক্কায় সারা বিশ্বের মুসলমানগণ কেন্দ্রীয় সম্মেলনে একত্রিত হন এবং এই বিশ্বসম্মেলন- হজ্জ প্রতি বৎসরই অনুষ্ঠিত হয়। এখানে একটি চমৎকার একত্রিকরণ ও পৃথকীকরণ এর সুখী ও সুন্দর বিন্যাস লক্ষণীয়। এটা অত্যন্ত সহজেই পালন করা যায়। এর মাধ্যমেই আরো বৃহত্তর এবং কঠিন সংগ্রামের স্তরে পরস্পরের একতা, ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক আলোচনা এবং যৌথ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি।
মুসলমানদের সাপ্তাহিক দিন ‘জুমাবার’ এবং ইহুদীরে সাববাত- ‘শনিবার’ ও খ্রীষ্টানদের ‘রোববার’ এক নয়। ইহুদীদের সাববাত হচ্ছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আল্লাহর সৃষ্টি কাজ শেষে বিশ্রাম গ্রহণের স্মরণে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শিক্ষা এর বিপরীত। আমরা জানি আল্লাহ পাকের বিশ্রামের কোন প্রয়োজন নেই এবং তাঁকে কোন কিছু ক্লান্ত শ্রান্ত করতে পারেনা। ইহুদীদের ঐদিন কোন প্রকার কাজকর্ম করা নিষিদ্ধ, কিন্তু ঐদিন ইবাদাত বন্দেগী সম্পর্কে তাদের ধর্মগ্রন্থ নীরব। পক্ষান্তরে আমাদের জুমাবারের মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে এবাদাত বন্দেগী এবং এর জন্য দিক নির্দেশনা। যদিও খ্রীষ্টানরা ইহুদীদের শনিবার থেকে রোববার দিনকে পরিবর্তন করেছে কিন্তু তাদের ভাবধারা একই রয়ে গেছে। শুধুমাত্র এটাকে একটা ধর্ম নিরপেক্ষ রূপ দেয়া হয়েছে। অথচ আমাদের পবিত্র কুরআন নির্দেশ দেয় যখন ‘জুমআর’ নামাজের আযান দেয়া হয় তখন তোমরা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ কর এবং ছুটে এস আন্তরিকতা ও আনুগত্য নিয়ে ইবাদাত করে। পারস্পরিক দেখা সাক্ষাত এবং পরামর্শের মাধ্যমে সামাজিক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন কর। অতঃপর এই সম্মেলন শেষে আবারো পৃথিবীতে রুজী রোজগারের সন্ধানে ছড়িয়ে পড়। এখানে মূল আয়াতে যদিও বেচা-কেনা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয় না কিন্তু এর অর্থ কেবলমাত্র বেচা-কেনা বন্ধ করা নয় বরং খুৎবা শোনা ও নামাজের জন্য যাওয়ার চিন্তা ও ব্যবস্থা ছাড়া অন্য সকল প্রকার চিন্তা ও ব্যস্ততা ছেড়ে দেয়ার নির্দেশই এখানে দেয়া হয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে এটাই আমাদের জন্য উত্তম যদি আমরা বুঝি। অর্থাৎ আমাদের আসল সম্পদতো পরকালীন সম্পদ তথা ইবাদাত বন্দেগী। অতএব এটাই আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। অতএব নির্দিষ্ট যে মৌলিক ইবাদাতগুলো রয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে কোন কাজে লিপ্ত থাকা যাবেনা। বরং সেই ইবাদাতগুলোর সময়ে অন্যান্য সকল কাজ বন্ধ রাখতে হবে।

 

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না করে

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلاَ أَوْلاَدُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللّهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ ○
হে মুমিনগণ! তোমাদের সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না করে। যারা এরূপ করবে তারাইতো ক্ষতিগ্রস্থ। (সূরা ৬৩, মুনাফিকুন, আয়াত-৯)
এ সূরার প্রথম রুকুতে মুনাফিকদের মিথ্যা শপথ ও চক্রান্তর উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিযার মহব্বতে লিপ্ত হয়ে পড়াই এর মূল কারণ। এ কারণেই একদিকে তারা মুসলমানদের কবল থেকে আত্মরক্ষা এবং অপরদিকে সুযোগ সুবিধা ভোগ করার উদ্দেশ্যে বাহ্যত মুসলমান বলে প্রকাশ করত। অতঃপর এখানে মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে তোমরা মুনাফিকদর মত দুনিয়ার মহব্বতে মগ্ন হয়ে যেওনা। এখানে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এই জন্য যে মানুষ বেশীরভাগ এদের স্বার্থেই ঈমানের দাবী পূরণ ও দায়িত্ব পালন হতে মুখ ফিরিয়ে, মুনাফেকী, ঈমানের দুর্বলতা কিংবা ফাসেকী নাফরমানীর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আসলে এখানে দুনিয়ার সে সব কিছুকেই বুঝানো হয়েছে যা মানুষকে নিজের মধ্যে এতটুকু মশগুল করে রাখে, যার ফলে সে আল্লাহকে ভুলে যায়। আল্লাহর ব্যাপারে সম্পূর্ণ গাফিল হয়ে যায়। মূলত এই ভুলে যাওয়া ও আল্লাহর স্মরণ হতে গাফিল হয়ে যাওয়া সমস্ত দুষ্কর্মের মূল কারণ। মানুষ মোটেও স্বাধীন নহে, এক আল্লাহর বান্দাহ আর আল্লাহ তার কাজকর্ম পুরাপুরি জানেন এবং একদিন তার সমানে গিয়ে মানুষকে নিজের সমস্ত কাজে কর্মের হিসেব দিতে হবে। একথা যদি মানুষের মনে থাকে ভুলে না তাহলে কোন প্রকার গুমরাহী বা পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
মানবীয় দুর্বলতার কারণে কখনো পদঙ্খলন ঘটে গেলেও হুশ ফিরে আসার সাথে সাথে সে নিজেকে সামলে নেয়। ফলে ভুল পথ ত্যাগ করে সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। আয়াতে একথা বলা হয়নি যে ধনমালের এবং সন্তান-সন্তুতির মহব্বত সর্বাবস্থায় নিন্দনীয়। বরং এগুলো নিয়ে ব্যাপৃত থাকা এক পর্যায়ে কেবল জায়েযই নয় বরং ওয়াজিবও হয়ে যায়। কিন্তু সর্বদা এই সীমানার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এসব বস্তু যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে দেয়। আল্লাহর স্মরণ-এ প্রত্যেক কল্যাণ, সেবা, মহৎ চিন্তা, মহৎ কাজ অন্তভর্‚ক্ত। কারণ এটাই হল সেবা এবং উৎসর্গ যেটা আল্লাহ আমাদের কাছে চান। হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন স্মরণ অর্থ যাবতীয় আনুগত্য ও ইবাদাত এই অর্থ সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। আমরা যদি এতে ব্যর্থ হই, ক্ষতি আমাদের নিজেরই অন্য কারো নয়। কারণ এটা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ বন্ধ করে দেয়, জান্নাতের পথ থেকে সরিয়ে দিয়ে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়।

 

স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতির ব্যাপারে সতর্ক থাক

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلاَدِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ○
হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রীগণ ও তোমাদের সন্তান-সন্তুতির মধ্যে কতিপয় তোমাদের শত্রæ। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। আর তোমরা যদি ক্ষমা কর, উপেক্ষা কর এবং দোষত্রæটি ঢেকে রাখ তবে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়াময়। (সূরা ৬৪, তাগাবুন, আয়াত-১৪)
আল্লাহর পথে চলার ব্যাপারে বহুসংখ্যক ঈমানদার পুরুষকে নিজের স্ত্রী-সন্তান হতে এবং বহু সংখ্যক স্ত্রীলোককে নিজের স্বামী ও সন্তান হতে পিতা-মাতাকে তাদের সন্তান হতে এবং সন্তানদেরকে তাদের পিতা-মাতা হতে অসংখ্য প্রকার দুঃখ-কষ্ট, বিপদ, অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পুরুষের পক্ষে এমন স্ত্রী পাওয়া বা স্ত্রীর পক্ষে এমন স্বামী পাওয়া যে, ঈমান ও সততার জীবন যাপনে পরস্পর পূর্ণমাত্রায় সহযোগী ও সাহায্যকারী হবে এবং এরপর তাদের সন্তানদের আকীদা, বিশ্বাস, আমল ও চরিত্র স্বভাবে তাদের মনমত ও চোখের শীতলতা হবে। এমনটি খুব কমই ঘটে থাকে। সাধারণত দেখা যায় স্বামী ঈমানদার চরিত্রবান হল স্ত্রী ও সন্তান এমন হয় যারা তার ঈমানদারী, সততা ও বিশ্বস্ততাকে নিজেদের দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করে। তারা চায় স্বামী বা পিতা তাদের জন্যা এমন কাজ করুক যার ফলে তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পাবে পরিণামে তাকে জাহান্নামে যেতে হলেও তাতে তাদের কোন আপত্তি নেই। এর বিপরীত মুমিন স্ত্রীলোক এমন স্বামীর পাল্লায় পড়ে যে, তার শরীয়ত পালন করে চলা স্বামীর মোটেই সহ্য হয়না। সন্তানরা অসদাচারী পিতার পদাংক অনুসরণ করে অসৎকর্মে লিপ্ত হয়ে মায়ের জীবনকে দুঃসহ করে তোলে। অনুরূপভাবে অনেক সন্তান পিতা-মাতার কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়। বিশেষত কুফরী ও ঈমানের দ্ব›েদ্ব ঈমানদার ব্যক্তির দায়িত্ব হল আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের খাতিরে সর্বপ্রকার ক্ষতি ও দুঃখ বিপদ সহ্য করতে প্রস্তুত থাকা। কারাবরণ কিংবা দেশ ত্যাগ করে চলে যেতে হলেও কিছুমাত্র কুণ্ঠিত হবেনা প্রকৃতঈমানের এটাই দাবী। কিন্তু এসব ক্ষেত্রেই একজন ঈমানদার স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রী ও সন্তানেরা স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী ও সন্তানরা এবং সন্তানদের ক্ষেত্রে পিতা মাতা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামী সমাজেও এ ধরনের অবস্থা অনেক দেখা যায়।
আয়াতটি নাযিল হওয়া কালী সময়ে বহু সংখ্যক ঈমানদারের জীবনে তদান্তিন বিশেষ অবস্থায় যে বিশেষ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, বর্তমান সময়েও অমুসলিম সমাজে ইসলাম গ্রহণকারী বহুলোকের জীবনে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে থাকে। তদানিন্তন মক্কা ও আরবের অন্যান্য অঞ্চলে সাধারণত এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল যে, একজন পুরুষ ঈমান আনল, কিন্তু স্ত্রী-পুত্র পরিজন যে শুধু ঈমান আনতে প্রস্তুত নয় তা-ই নয় বরং তাকেই ইসলাম থেকে বিরত রাখার বা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল সেসব মহিলারা এবং সন্তানরাও যারা নিজেদের সমাজ পরিবেশে একাই ইসলাম গ্রহণ করত ও ঈমানের পথে চলতে চাইত।
এসকল অবস্থার সম্মুখীন ঈমানদার লোকদের সম্বোধন করে আলোচ্য আয়াতে তিনটি কথা বলা হয়েছেÑ প্রথমত বলা হয়েছে যে, বৈষয়িক সম্পর্ক ও আত্মীয়তার দৃষ্টিতে যদিও এই লোকেরা সর্বাধিক প্রিয়জন। কিন্তু দ্বীন ও ইসলামের দৃষ্টিতে এরা তোমাদের শত্রæ। অবশ্য সে শত্রæতা কয়েক প্রকার হতে পারে। তারা তোমাদেরকে নেক কাজ থেকে বিরত রাখতে ও পুনরায় কুফরীর দিকে টানতে পারে। অথবা হতে পারে তাদের সদিচ্ছা সহানুভ‚তি হবে কুফরীর প্রতি আর তোমাদের কাছে মুসলমানদের যুদ্ধ সংক্রান্ত অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন গোপন তথ্য জানতে পারলে তারা ইসলামের দুশমনদের কাছে পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের কাজে মূল শত্রæতার স্বরূপ ও অবস্থায় বা মাত্রায় তো পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু আসলে এতো শত্রæতাই। ঈমান যাদ তোমাদের অধিকতর প্রিয় বস্তু হয়ে থাকে তাহলে এসব দিক দিয়েই তাদেরকে শত্রæ মনে করাই কর্তব্য। তাদের প্রেম ভালবাসায় পড়ে তোমাদের ও তাদের মধ্যে ঈমান ও কুফরের কিংবা আল্লাহনুগত্য ও আল্লাহর নাফরমানীর দিক দিয়ে যে বিরাট প্রাচীর আড়াল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তা তোমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
অতঃপর আলোচন্য আয়াতে বলা হয়েছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। অর্থাৎ তাদের বৈষয়িক সুখ সুবিধা বিধান করতে গিয়ে স্বীয় পরকাল পরিণতি বরবাদ করোনা। তাদের প্রতি ¯েœহ ভালবাসা এতটা বেশী পোষণ করোনা যার ফলে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর সাথে তোমাদের সম্পর্ক রক্ষা ও ইসলাম পালনের পথে তারা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের প্রতি এতটা নির্ভরতা রেখনা যার ফলে তোমার অসতর্কতার সুযোগে মুসলিম সমাজের গোপন তত্ব জানতে পেরে শত্রæপক্ষকে জানিয়ে দিতে পারে। রাসূল (সাঃ) একটি হাদীসে বলেছেনÑ “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, বলা হবে এর সন্তান সন্তুতিরা তার সব নেক আমল খেয়ে ফেলেছে।”
পরিশেষে বলা হয়েছে- “আর তোমরা যদি ক্ষমা ও সহনশীলতার ব্যবহার কর ও ক্ষমা করে দাও তাহলে অল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়াবান।” এর অর্থ এই যে তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা হচ্ছে শুধু তোমাদেরকে সাবধান করার উদ্দেশ্যে। যেন তোমরা সতর্ক থাক এবং দ্বীন ইসলামকে তাদের ক্ষতি হতে রক্ষা করার চিন্তা-ভাবনা কর। এর মূলে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। তোমরা স্ত্রী-পুত্রকে মারপিট করবে কিংবা তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করবে বা দুর্ব্যবহার করবে অথবা তাদের সাথে সম্পর্ক এতটা তিক্ত করবে যার ফলে তোমাদের ও তাদের পারিবারিক জীবনই দুঃসহ হয়ে উঠবেÑ এটা কখনো উদ্দেশ্যে নয়। কেননা তা করা হলে দুটো বিরাট ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। একটি এই যে এর ফলে স্ত্রী-পুত্রকে সংশোধন করার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় এই যে সমাজে এর দরুণ ইসলামের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ বিরুদ্ধভাব সৃষ্টি হতে পারে। আশেপাশের লোকেরা মুসলমানদের চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে এরূপ ধারণা করতে পারে যে, ইসলাম গ্রহণ করলেই বুঝি নিজের ঘরেও স্ত্রী-পুত্র পরিজনের প্রতি কঠোর ও রূঢ় আচরণকারী হয়ে যেতে হয়।
এ ধরনের সমস্যা সম্পর্কে সূরা আন্-কাবুতের ৮নং আয়াতে, সূরা লোকমানের ১৪-১৫নং আয়াতে, সূরা তাওবা ২৩-২৪, সূরা মুমতাহানার ৩ ও মুনাফিক‚ন-৯নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব আমাদের কর্তব্য নিজ পরিবার পরিজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা যাতে তাদের জন্য ঈমানের ও ইসলামের কোনা ক্ষতি না হয় এবং তাদেরকে হেকমতের সাথে সংশোধনের চেষ্টা কর।

 

সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لاَ يَعْصُوْنَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ ○
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্দ হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, পাষাণ হৃদয় ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’য়ালা যা আদেশ করেন তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ করা হয় তা-ই করেন। (সূরা ৬৬, তাহরীম, আয়াত-৬)
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে কেবলমাত্র নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করতে থাকবে এবং তার চেষ্টা এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে মুমিন ব্যক্তির কেবলমাত্র এতটুকুই দায়িত্ব নয় বরং সেই সাথে প্রাকৃতিক ব্যবস্থানুযায়ী যে পরিবার ও বংশের নেতৃত্বের বোঝা তার উপর অর্পিত হয়েছে যে পরিবার ও বংশের লোকজনকেও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আল্লাহর পছন্দের অনুরূপ বানাতে চেষ্টা করে যাওয়াও তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। তারা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে তার পক্ষে যতটা সম্ভব তাদেরকে সেদিক হতে ফিরিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা চালাবে। সন্তানাদি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল অবস্থার হবে পিতৃগণের শুধু এই চিন্তাই হওয়া উচিত নয়। সেই সাথে বরং ইহা অপেক্ষাও বেশী চিন্তা করতে হবে তাদেরকে জাহান্নমের ইন্দন থেকে বিরত রাখার জন্য। বুখারী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে-রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল এবং নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে। দেশ প্রশাসক রাখাল সে তার প্রজা সাধারণের ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। স্ত্রী নিজের স্বামীর ঘর সন্তানদের ব্যাপারে দায়ী। সে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহী করবে।”
অতঃপর জাহান্নামের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে যে, এর ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এটা অত্যন্ত মারাত্মক আগুন, এটা সাধারণ আগুনের মত যেটা কাঠ বা কয়লা বা এধরনের জিনিষকে জ্বালায় তা’নয়। এই আগুনের ইন্দর হবে মানুষ যারা পাপ কাজ করবে এবং যাদের অন্তর পাথরের মত কঠিন। অথবা পাথরের মূর্তি যে গুলো জীবনের সকল মিথ্যার প্রতিকৃতি। আমরা সাধারণত চিন্তা করি ফেরেশতারা স্বভাবগতভাবে খুবই নরম স্বভাবের দয়াদ্র এবং সুন্দর। কিন্তু অন্যদিকে তারা ন্যায় বিচারক, বিশ্বস্ত এবং সুশৃংখল এবং অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তাদেরকে দেয়া আল্লাহর আদেশ সমূহ পালন করেন। এই ব্যাপারে তাঁরা সামান্য শিথিলতা দেখান না বা আদেশ পালনে সাম্যন্য ত্রæটি বা হেরফের করেননা। তাঁরা আল্লাহর আদেশ সমূহ পুংখানুপুয়খ রূপে বাস্তবায়ন করেন।
অতএব আমাদের কর্তব্য জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

 

আল্লাহর কাছে তওবা কর আন্তরিক তওবা

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا تُوْبُوْا إِلَى اللّهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لاَ يُخْزِي اللّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مَعَهُ نُوْرُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ○
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর আন্তরিক তওবা। আশা করা যায় যে, তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহপাক নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটা-ছুটি করবে। তারা বলবে হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা ৬৬, তাহরীম, আয়াত-৮)
“তাওবাতান নাসূহ” এর দুটি অর্থ হতে পারে। (১) মানুষ এমন খাঁটি ও অকৃত্রিম, একনিষ্ঠ তাওবা করবে যাতে লোক দেখানো বা রিয়াকারী, মুনাফেকী বা কপটতার বিন্দু বিসর্গও থাকবেনা। (২) ব্যক্তি নিজে নিজের কল্যাণ কামনা করবে, মঙ্গল চাইবে এবং গুনাহ হতে তওবা করে নিজেই নিজেকে মারাত্মক পরিণতি হতে রক্ষা করবে অথবা গুনাহর কারণে তার দ্বীন পালনে যে ফাটল ধরে গিয়েছিল তাওবা করে এর প্রতিবিধান করবে- মেরামত বা সংশোধন করবে। কিংবা তওবা করে সে নিজের জীবনকে এতটা সুসংগঠিত ও পরিমার্জিত করে নিবে যে অন্য লোকদের জন্য সে উপদেশ হওয়ার দৃষ্টান্ত হবে। তার দৃষ্টান্ত দেখে অন্য লোকেরাও তারই মত নিজেদের সংশোধন করে নেবে। এইসব অর্থ আভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে জানা ও বুঝা যায়। এছাড়াও শরীয়াতের দৃষ্টিতে এর অর্থ ও তাৎপর্য জানা যায় রাসূল (সাঃ) এর হাদীস হতেÑ রাসূল বলেছেন: “তাওবাতুন নাসূহ এর তাৎপর্য হলে, তোমার দ্বারা যখন কোনা অপরাধ হয়ে যায় তখন নিজের গুনাহর জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হও এবং এই লজ্জা সহকারে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও আর ভবিষ্যতে কখনো একাজ করোনা।” হযরত আলী (রাঃ) একবার একজন বেদুইন লোককে খুব দ্রæত তাওবা ইস্তিগফার এর শব্দগুলো উচ্চারণ করতে শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন এতো মিথ্যুকের তাওবা। সে জিজ্ঞাসা করল তাহলে সহীহ তাওবা কী? তিনি বললেন এর জন্য ছয়টি জিনিস হওয়া আবশ্যক (১) যা ঘটে গেছে তার জন্য লজ্জিত হবে, (২) নিজের যেসব কর্তব্যে অবহেলা দেখিয়েছ তা রীতিমত আদায় কর, (৩) যার হক নষ্ট বা হরণ করেছ তাকে তা ফিরিয়ে দাও, (৪) যাকে কষ্ট দিয়েছ তার নিকট ক্ষমা চাও, (৫) ভবিষ্যতে পুনরায় এ গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প কর ও (৬) নিজের সত্তাকে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত ও নি:শেষিত কর যেভাবে তুমি আজ পর্যন্ত একে নফরমানীর কাজে অভ্যস্ত বানিয়ে রেখেছ। একে আল্লানুগত্যের তিক্ত রস পান করাওÑ যে রকম একে তুমি আজ পর্যন্ত নাফরমানীর মিষ্টতার স্বাদ আস্বাদন করিয়েছ।
তাওবার ব্যাপারে আরো কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। প্রথমত এই যে মূলত তাওবা কোন ব্যাপারে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়াÑ এইজন্য যে উহা আল্লাহর নাফরমানীর কাজ। অন্যথায় কোন গুনাহকে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করে। কোন, দুর্নাম, অখ্যাতি বা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ভয় করে তা পরিহার করার সংকল্প বা ওয়াদা করাকে কখনো তাওবা বলা যায় না। দ্বিতীয়ত যে সময় অনুভ‚তি জাগবে যে, আল্লাহর নাফরমানী করে বসেছে ঠিক সে সময় তাওবা করা কর্তব্য। আর যেভাবেই সম্ভব এর প্রতিবিধান করা কর্তব্য। প্রতিবিধানে টালবাহানা করা অনুচিত।
তৃতীয়ত: তওবা করে বারবার তওবা ভঙ্গ করা, তওবাকে একটা কৌশল বা খেলায় পরিণত করা এবং যে গুনাহ হতে তওবা করেছে বার বার এরই পুনরাবৃত্তি করা তওবা মিথ্যা হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ। আর বারবার তওবা ভঙ্গ করা হলে তা তার অন্তরে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়ার ভাব বর্তমান না থাকারই প্রমাণ।
চতুর্থত: যে ব্যক্তি সাচ্চা মনে তওবা করে পুনরায় সে গুনাহটি না করার দৃঢ় সংকল্প করেছে মানবিক দুর্বলতার কারণে তার দ্বারা যদি সে গুনাহর পুনরাবৃত্তি ঘটে যায়, তাহলে আগের গুনাহটি নতুন হবেনা। অবশ্য পরবর্তী গুনাহর জন্য আবার তাওবা করতে হবে। এবং ভবিষ্যতে আর তাওবা ভঙ্গ করবেনা এর জন্য খুব শক্ত প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প করবে।
পঞ্চম এই যে: যখন যখনই নাফরমানীর কথা স্মরণ আসবে তখনই নতুন করে তওবা করা কর্তব্য নয়। কিন্তু তার নফল যদি পূর্বে করা গুনাহ স্মরণ করে আনন্দ স্বাদ অনুভব করে তাহলে বার বার তাওবা করা কর্তব্য-যেন শেষ পর্যন্ত গুনাহর স্মৃতি তার জন্য আনন্দের বা স্বাদের পরিবর্তে লজ্জার অনুত‚তি কখনো নাফরমানী করেছে বা গুনাহ করেছে একথা ভেবে আনন্দ স্বাদ পেতে পারেনা। কেহ যদি অনন্দ-স্বাদ অনুভব করে তাবে বুঝতে হবে আল্লাহর ভয় তার মনে মজুবত হয়ে বসতে পারেনি।
অতঃপর আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছেÑ “আশা করা যায় আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” তাওবা করা হলে অবশ্যই মাফ করে দেয়া হবে এবং অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে একথা বলা হয়নি বরং আয়াতে বলা হয়েছে যে সত্যিকার তাওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন এরূপ আশা করা যায়। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে গুনাহগারের তাওবা কবুল করা এবং তাকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে জান্নাত দেয়া আল্লাহর কোন কর্তব্য নয় এটা পুরোপুরি তার দয়া ও অনুগ্রহের ব্যাপারে যে তিনি ইচ্ছা হলে ক্ষমা করবেন এবং পুরষ্কারও দেবেন। তাঁর কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশা পোষণ করাতো বান্দার অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু গুনাহ করলে তিনি মাফ করে দেবেন এই ভরসায় কখনো গুনাহ করা উচিত নয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে “সেদিন আল্লাহপাক নবী করীম (সাঃ) এবং বিশ্বাসী অনুগামীদের লজ্জিত করবেন না” অর্থাৎ তাঁদের নেক আমলের শুভ প্রতিফলন তিনি বিনষ্ট করবেন না। তিনি কাফের ও মুনাফিকদেরকে একথা বলার আদৌ সুযোগ দেবেন না যে তারা আল্লাহর বন্দেগী করে কি ফল পেল? শুধুমাত্র আল্লাদ্রোহী লোকেরাই লজ্জিত ও লাঞ্চিত হবে। আল্লাহর অনুগত ও আল্লাহর বিধান পালনকারী লোকদের ভাগ্যে লজ্জা ও লাঞ্চনা কখনো আসবেনা। অতঃপর তাদেরকে শুভ সংবাদ শোনানো হয়েছে যে, “তাদের অগ্রভাগে ও ডানে নূর দৌড়াতে থাকবে।” সূরা হাদীসের ১২ ও ১৩নং আয়াতের সাথে মিলালে জানা যায় এই অবস্থা হাশরের ময়দান থেকে জান্নাতে নেয়ার সময় হবে। যেখানে চতুর্দিকে গভীর নিশ্চিদ্র অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন থাকবে। তখন জাহান্নামী লোকেরা পথ চেনার সময় আঘাতের পর আঘাত পাবে এবং হোচটের পর হোচট খেয়ে পড়বে। আর আলো পাবে কেবল ঈমানদার লোকেরা। তারা এই আলোর সাহায্যে নির্বিঘেœ পথ চলবেন। এই কঠিন নাযুক অবস্থায় ঈমানদার লোকেরা অন্ধকারে নিমজ্জিত লোকদের হাহাকার ও ফরিয়াদ শুনে ভীত বিহব্বল হয়ে পড়বেন। নিজেদের অপরাধ ও দোষ ত্রæটির তীব্র অনুভ‚তিতে তারা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়বেন এই ভেবে যে, তাদের নূরও যদি কেড়ে নেয়া হয় এবং তারাও যদি এই হতভাগ্য লোকদের মত হয়ে পড়ে। এই কারণে তারা দোয়া করতে থাকবেন, হে আমাদের রব আমাদের অপরাধ মাফ করে দিন এবং আমাদের নূর জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত অব্যাহত ও অক্ষুণœ রাখুন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত হাসান বসরী (রাঃ), মুজাহিদ (রাঃ), দাহহাক (রাঃ) প্রায় এইরূপ তাফসীর করেছেন।

তথ্যসূত্র:
১। মা’রেফুল কুরআন : মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহঃ)।
২। তাফহীমুল কুরআন : সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ)।
৩। The Holy Quran : Abdullah Yousuf Ali
৪। মেশকাত শরীফ : নূর মুহাম্মদ আজমী।
৫। রিয়াদুস সালেহীন : ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া আন নববী (র.)।

 

 

 

 

 

 

One comment

  1. Good collection and presentation in short! But the Quran deals with so many aspects of life as it is complete code of life !
    1. The Holy Quran is a book of faith and signs and not science
    2. The Prophet Mohammad (Peace be upon him) is the real picture of the Holy Quran, His life is the best explanation of the Holy Quran!
    3. The Quran is the best book of all humanity as a source of justice and laws, political and cultural values, foreign policies etc.
    4. The Holy Quran is complete for all humanity and for all ages and the only revealed book of all books which is protected by the Creator Allah in His Hard disc memory which can not be changed, it is only book memorised by millions of Muslims correctly in letters and signs !

Leave a Reply