أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১১৬) [ ** আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না:-] www.motaher21.net সূরা:৪৪: সূরা:- ‌দুখান‌ পারা:২৫ ১৭-৩৩ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১১৬)
[ ** আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না:-]
www.motaher21.net
সূরা:৪৪: সূরা:- ‌দুখান‌ পারা:২৫
১৭-৩৩ নং আয়াত:-
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :১৭
وَ لَقَدۡ فَتَنَّا قَبۡلَہُمۡ قَوۡمَ فِرۡعَوۡنَ وَ جَآءَہُمۡ رَسُوۡلٌ کَرِیۡمٌ ﴿ۙ۱۷﴾
আমি এর আগে ফেরাউনের কওমকেও এই পরীক্ষায় ফেলেছিলাম। তাদের কাছে একজন সম্ভ্রান্ত রসূল এসেছিলেন।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :১৮
اَنۡ اَدُّوۡۤا اِلَیَّ عِبَادَ اللّٰہِ ؕ اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿ۙ۱۸﴾
তিনি বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে সোপর্দ করো। আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :১৯
وَّ اَنۡ لَّا تَعۡلُوۡا عَلَی اللّٰہِ ۚ اِنِّیۡۤ اٰتِیۡکُمۡ بِسُلۡطٰنٍ مُّبِیۡنٍ ﴿ۚ۱۹﴾
আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না। আমি তোমাদের কাছে (আমার নিযুক্তির) স্পষ্ট সনদ পেশ করছি।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২০
وَ اِنِّیۡ عُذۡتُ بِرَبِّیۡ وَ رَبِّکُمۡ اَنۡ تَرۡجُمُوۡنِ ﴿۫۲۰﴾
তোমরা আমার ওপরে হামলা করে বসবে, এ ব্যাপার আমি আমার ও তোমাদের রবের আশ্রয় নিয়েছি।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২১
وَ اِنۡ لَّمۡ تُؤۡمِنُوۡا لِیۡ فَاعۡتَزِلُوۡنِ ﴿۲۱﴾
যদি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না কর, তবে তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২২
فَدَعَا رَبَّہٗۤ اَنَّ ہٰۤؤُلَآءِ قَوۡمٌ مُّجۡرِمُوۡنَ ﴿ؓ۲۲﴾
অবশেষে তিনি তাঁর রবকে ডেকে বললেন, এসব লোক অপরাধী।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৩
فَاَسۡرِ بِعِبَادِیۡ لَیۡلًا اِنَّکُمۡ مُّتَّبَعُوۡنَ ﴿ۙ۲۳﴾
“সুতরাং আপনি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হয়ে পড়ুন, নিশ্চয় তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।’
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৪
وَ اتۡرُکِ الۡبَحۡرَ رَہۡوًا ؕ اِنَّہُمۡ جُنۡدٌ مُّغۡرَقُوۡنَ ﴿۲۴﴾
সমুদ্রকে আপন অবস্থায় উন্মুক্ত থাকতে দাও। এই পুরো সেনাবাহিনী নিমজ্জিত হবে।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৫
کَمۡ تَرَکُوۡا مِنۡ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوۡنٍ ﴿ۙ۲۵﴾
ওরা পশ্চাতে রেখে গিয়েছিল কত বাগান ও ঝরনা,
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৬
وَّ زُرُوۡعٍ وَّ مَقَامٍ کَرِیۡمٍ ﴿ۙ۲۶﴾
কত শস্যক্ষেত ও সুরম্য প্রাসাদ,
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৭
وَّ نَعۡمَۃٍ کَانُوۡا فِیۡہَا فٰکِہِیۡنَ ﴿ۙ۲۷﴾
তাদের পিছনে কত ভোগের উপকরণ পড়ে রইলো যা নিয়ে তারা ফুর্তিতে মেতে থাকতো।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৮
کَذٰلِکَ ۟ وَ اَوۡرَثۡنٰہَا قَوۡمًا اٰخَرِیۡنَ ﴿۲۸﴾
এই হয়েছে তাদের পরিণাম। আমি অন্যদেরকে এসব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :২৯
فَمَا بَکَتۡ عَلَیۡہِمُ السَّمَآءُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَا کَانُوۡا مُنۡظَرِیۡنَ ﴿٪۲۹﴾
আকাশ ও পৃথিবী কেউই ওদের জন্যে অশ্রুপাত করেনি এবং ওদেরকে অবকাশও দেওয়া হয়নি।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :৩০
وَ لَقَدۡ نَجَّیۡنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ مِنَ الۡعَذَابِ الۡمُہِیۡنِ ﴿ۙ۳۰﴾
নিশ্চয় আমি উদ্ধার করেছিলাম বনী-ইস্রাঈলকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হতে,
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :৩১
مِنۡ فِرۡعَوۡنَ ؕ اِنَّہٗ کَانَ عَالِیًا مِّنَ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۳۱﴾
ফির’আউন থেকে ; নিশ্চয় সে ছিল সীমালঙ্ঘনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :৩২
وَ لَقَدِ اخۡتَرۡنٰہُمۡ عَلٰی عِلۡمٍ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۚ۳۲﴾
আমি জেনে-শুনেই ওদেরকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম,
সূরা:৪৪: সূরা:- দুখান :৩৩
وَ اٰتَیۡنٰہُمۡ مِّنَ الۡاٰیٰتِ مَا فِیۡہِ بَلٰٓـؤٌا مُّبِیۡنٌ ﴿۳۳﴾
তাদেরকে এমন সব নিদর্শন দেখিয়েছিলাম যার মধ্যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*ফেরাউনের করুণ পরিণতি : এরপর হযরত মূসার কাহিনীর আর একটা বক্তব্য শুরু করা হচ্ছে। এ কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হচ্ছে। এর শেষ পরিণতি হিসেবে এই পৃথিবীতে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিলাে। ইতিপূর্বে তাদেরকে তার বৃহত্তম পাকড়াও দেখানাে হয়েছে আকাশে ধোয়া দেখা যাওয়ার দিন। হযরত মূসার এই ঘটনা।(আয়াত ১৭-৩৩) এই পর্বটির সূচনা হচ্ছে একটা প্রবল ঝাঁকুনির মাধ্যমে। এই ঝাকুনি দ্বারা ওদের অচেতন মনকে জাগিয়ে তােলা হচ্ছে এবং এই সত্যটির প্রতি ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হচ্ছে যে, কোনাে সম্প্রদায়ের জন্য রাসূল প্রেরণ করা হয় অনেক সময় তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে। এই পরীক্ষা তাদের জন্যে যারা আল্লাহর ওপর বড়াই করে এবং রসূল ও তার অনুসারী মােমেনদেরকে নির্যাতন করে। ওদের দৃষ্টি আর একটি সত্যের প্রতি আকর্ষণ করা হচ্ছে। তাহলাে, রসূলকে রাগান্বিত করা, নির্যাতনের ফলে তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটা এবং হেদায়াতের ব্যাপারে তার আশাহত হওয়া অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর গযবের কারণ হয়ে দাড়ায়। যেমন বলা হয়েছে, ‘তাদের পূর্বে আমি ফেরাউনের সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি।’ অর্থাৎ আমি তাদেরকে নেয়ামত দিয়ে পরীক্ষা করেছি, ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেছি, পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে পরীক্ষা করেছি, সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতা দিয়ে পরীক্ষা করেছি এবং মান মর্যাদা দিয়ে পরীক্ষা করেছি। এরপর আয়াতে বলা হয়েছে, এবং তাদের প্রতি একজন সম্মানিত রসূল আগমন করেন বস্তুত, রসূলের এই আগমনও ছিলাে তাদের জন্যে এক বিরাট পরীক্ষা। কারণ, এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যাবে তারা সেই সম্মানিত রসূলের ডাকে কতােটুকু সাড়া দেয় যিনি তাদের কাছে কোনাে কিছুই দাবী করেন না। বরং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যেই সব কিছু নিবেদন করতে বলেন এবং তাদেরকে উপদেশ দেন যেন আল্লাহর সাথে কার্পণ্য করে নিজেদের কোনাে কিছু লুকিয়ে না রাখে। এই প্রসংগে বলা হচ্ছে, এই মর্মে যে, ‘আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার কাছে দিয়ে দাও, আমি তােমাদের জন্যে প্রেরিত বিশ্বস্ত রাসূল…’ এই সংক্ষিপ্ত কয়টি কথাই তাদের সম্মানিত রসূল মুসা(আ.) তাদের সামনে পেশ করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি তাদের কাছ থেকে সার্বিক সাড়া কামনা করেছেন, পূর্ণ অর্পণ কামনা করেছেন এবং নিশর্ত আত্মসমর্পণ কামনা করেছেন। এই নিশর্ত আত্মসমর্পণ হবে একমাত্র সেই আল্লাহর উদ্দেশ্যে যিনি তাদের প্রভু এবং তারা তাঁর বান্দা। কাজেই মনিবের ওপর বড়াই করা বান্দাদের জন্যে শােভা পায় না। এই উপদেশ হচ্ছে মূলত আল্লাহর যা রসূল তাদের কাছে বয়ে নিয়ে এসেছেন। আর তিনি যে আসলেই আল্লাহর প্রেরিত রসূল, সে মর্মে তার কাছে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। এমন মযবুত দলীল আর অকাট্য প্রমাণ যার সত্যতার ব্যাপারে মন সায় দেয়। তাছাড়া তিনি নিজ পালনকর্তার কাছে আশ্রয় কামনা করেন এবং মানুষের আক্রমণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তি কামনা করেন। তারা ঈমান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে তাদের কাছ থেকে নিজেকে পৃথক করে নিচ্ছেন এবং তাদেরকেও তাঁর কাছ থেকে পৃথক হয়ে যেতে বলছেন। এটা নিসন্দেহে চূড়ান্ত ইনসাফ, ন্যায়বিচার এবং শান্তিপ্রিয়তা। কিন্তু স্বৈরাচার কখনও ইনসাফের ধার ধারে না। বরং সত্যকে ভয় পায়, সত্যের অবাধ বিচরণকে ভয় পায়। তাই প্রথমে শান্তিতে ও নীরবে মানুষের কাছে পৌছার চেষ্টা করে। এরপর সত্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানে এবং অত্যন্ত কঠোর হস্তে সত্যকে দমন করে। সত্যের সাথে স্বৈরাচারের কোনাে আপস নেই। এখানে আপসের অর্থ হচ্ছে, অবাধে সত্যের বিচরণ ঘটুক এবং প্রতিদিন মানুষের হৃদয়ে তার স্থান হােক। এরপর বাতিল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওটুক, নির্যাতনে মেতে উঠুক এবং সত্যকে আরামে ও নিরাপদে থাকতে না দিক তাতে কিছুই এসে যায় না। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে ঘটনার অনেকগুলাে পর্ব উল্লেখ করে একে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে পর্যায়ে পৌঁছে মূসা(আ.) অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, তার জাতি কখনও ঈমান গ্রহণ করবে না, তার ডাকে কখনও সাড়া দেবে না, এমনকি তার সাথে কখনও আপসও করবে না অথবা তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্নও হবে না। এই পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, অপরাধ প্রবণতা তাদের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে এবং এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনাে আশা-ভরসা নেই। তখন তিনি নিজ প্রভুর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে বলে ওঠেন, ‘এরা হচ্ছে অপরাধী সম্প্রদায়।’ এমন ফরিয়াদ জানানাে ছাড়া একজন নবী আর কিইবা করতে পারেন। একজন নবী তার সকল বিষয় আল্লাহর হাতেই অর্পণ করে থাকেন এবং সে ব্যাপারে আল্লাহর স্বাধীন ফয়সালা কামনা করেন। আল্লাহর কাছ থেকে মুসা(আ.) তার ফরিয়াদের জবাব পেলেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর কাছ থেকে এই স্বীকারােক্তিও পেলেন যে, তার সম্প্রদায় সত্যি সত্যিই অপরাধী। বলা হলাে, ‘তাহলে তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় বের হয়ে পড়, (তবে মনে রেখাে) নিশ্চয় তােমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে…।'(আয়াত ২৩-২৪) ভ্রমণ রাতের বেলায়ই হতাে। তারপরও আলােচ্য আয়াতে সে কথা স্পষ্টভাবে বলার পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলাে, ভ্রমণের সময় গােপনীয়তার দৃশ্যটি চিত্রায়িত করা। কারণ, মূসা(আ.)-এর সম্প্রদায় অর্থাৎ বনী ইসরাইলের লােকজনদেরকে নিয়ে অত্যন্ত গােপনে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে যেন বিষয়টি ফেরাউন বা তার লােকজনদের কেউ টের না পায়। সাথে সাথে তাকে আরও নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে, তিনি যেন নিজের সম্প্রদায়ের লােকদেরকে নিয়ে সমুদ্র পার হওয়ার সময় তাদের পেছনে সমুদ্রকে শান্ত রেখে যান, ফলে ফেরাউন ও তার লােক লস্কর প্রতারিত হয়ে তাদেরকে অনুসরণ করতে যাবে। আর এভাবেই তারা আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তির সম্মুখীন হবে। কারণ তিনি তাদেরকে ‘নিমজ্জিত বাহিনী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর এই মন্তব্য জাগতিক নিয়মেই বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছিলাে, এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, জাগতিক উপায় উপকরণও অবধারিত ভাগ্যের সহযোগী রূপে কাজ করে থাকে। সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাটি এখানে সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়নি। বরং তারা যে নিমজ্জিত হবে, আল্লাহর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথাই বলা হয়েছে। এরপর যে মন্তব্য করা হয়েছে তা স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী ফেরাউন ও তার লােক লস্করদের করুণ চিত্র প্রকাশ করে, অসহায়ত্বের দৃশ্য প্রকাশ করে। আল্লাহর সামনে তারা অত্যন্ত অসহায়। এই জগতের সামনেও অসহায়। অথচ এই জগতের বুকে কি দোর্দভ্ড প্রতাপ নিয়ে, নাক উচু করে শাসন শােষণ করেছে, তার ভক্ত অনুরক্তরা সর্বক্ষণ তার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকতাে। অথচ আজ সে এতােই তুচ্ছ ও নগণ্য এবং অক্ষম ও দুর্বল যে, তার অস্তিত্বকে কেউ অনুভব করছে না। আজ তার সমস্ত সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে অথচ বাধা দেয়ার কেউ নেই, আজ তার এই করুণ পরিণতির জন্যে দুঃখ। প্রকাশ করার মতো কেউ নেই। তাই বলা হচ্ছে, ‘তারা ছেড়ে গিয়েছিলাে উদ্যান ও প্রস্রবণ…'(আয়াত ২৫-২৯) আলােচ্য আয়াতের প্রথমেই ওদের বিলাস ও জৌলুসপূর্ণ জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, উদ্যান, ঝর্ণা, শস্য শ্যামল ক্ষেত, মর্যাদাপূর্ণ স্থান, মানুষের ভক্তি ও শ্রদ্ধা, পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পদ যা তারা নিজেরা ভােগ করতাে এবং অপরকে দান করতাে। মােটকথা, তাদের জীবন ছিলো অত্যন্ত সুখ ও সাচ্ছন্দের, এরপর তাদের কাছ থেকে এসব ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং তা অন্য সম্প্রদায়কে দান করা হয়। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর এভাবেই আমি তা বনী ইসরাঈলকে উত্তরাধিকার রূপে দান করেছি…।’ বলা বাহুল্য, বনী ইসরাঈল ফেরাউনের রাজত্ব। উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেনি। তবে তারা অনুরূপ রাজত্ব ভিন্ন এক দেশে লাভ করেছিলাে। তাই আয়াতের অর্থ হলাে, যে নেয়ামত ও রাজত্ব ফেরাউন ও তার লােকজনদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, সেরূপ নেয়ামত ও রাজত্ব বনী ইসরাঈলকে দান করা হয়েছে। এরপর কী হলাে? এরপর যা ঘটেছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। দোর্দন্ড প্রতাপের অধিকারী এই শাসকগােষ্ঠী যারা এক সময় দন্ডমুন্ডের মালিক ছিলাে, আজ তারা নীরবে চলে গেলাে। অথচ একটা প্রাণী ও তাদের জন্যে আক্ষেপ করলাে না, দুঃখ প্রকাশ করলাে না, তাদের এই চলে যাওয়াকে আসমান ও যমীনের কেউই অনুভব করলাে না। এমনকি বিপদের মুহূর্তটি একটুও বিলন্বিত করা হলো না, অথবা তাদেরকে একটু সুযোগও দেয়া হলাে না। তাই বলা হয়েছে, ‘তাদের জন্যে আসমান কান্নাকাটি করেনি ও পৃথিবী এবং তারা অবকাশও পায়নি’ (আয়াত ২৯) এটা এমন একটি বর্ণনাভঙ্গি যার মাঝে একদিকে অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে, আবার অপর দিকে নির্মমতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই অহংকারী, অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকগােষ্ঠী। দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে গেলাে, অথচ আসমান ও যমীনের কেউ সেটা টের পেলাে না, তাদের জন্যে কেউ একটু দুঃখও প্রকাশ করলাে না। একেবারে পিপড়ার মতাে চলে গেলোে। অথচ তারাই তাে পৃথিবীর বুকে ছিলাে দোর্দন্ড প্রতাপের অধিকারী, যারা জুতা পায়ে মানুষকে পিষ্ট করতাে। তারা আজ নীরবেই চলে গেলাে। কেউ তাদের জন্যে কাঁদলে না, আহাজারি করলো না। গােটা বিশ্বজগতের স্বাভাবিক নীতি থেকে বিছিন্ন হওয়ার ফলে আজ সৃষ্টিজগত তাদের ওপর নাখােশ। কারণ, সৃষ্টি জগত হচ্ছে আস্তিক ও বিশ্বাসী। আর ওরা হচ্ছে নাস্তিক ও অবিশ্বাসী। তাই ওরা নষ্ট আত্মা, ওরা এই বিশ্বে বাস করেও অস্পৃশ্য ও ঘৃণ্য। এই বাক্যগুলাের অন্তর্নিহিত মর্ম যদি জুলুমবাজ ও অত্যাচারীরা অনুধাবন করতে পারতাে তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারতাে তারা আল্লাহর সামনে কতাে অসহায়, এই গােটা সৃষ্টিজগতের সামনে কতাে অসহায়, তারা আরও বুঝতে পারতাে যে, তারা এই বিশ্বে বাস করেও উদ্বাস্তু, অস্পৃশ্য ও বিচ্ছিন্ন। বিশ্বের কোন কিছুর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, ঈমানের বন্ধন ছিন্ন করেছে। কোনাে কিছুর সাথে তাদের কোনাে সম্পর্ক নেই, কারণ তারা ঈমানের বন্ধন ছিন্ন করেছে। এই করুণ দৃশ্যের বিপরীতে আমরা ভিন্ন আর একটি দৃশ্য দেখতে পাই। সে দৃশ্য হচ্ছে মুক্তির, সমাদর ও মনােনয়নের। বলা হয়েছে, ‘আমি বনী ইসরাঈলকে অপমানজনক শাস্তি থেকে রক্ষা করেছি। ফেরাউন, সে ছিলাে সীমালংঘনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়…।'(আয়াত ৩০-৩৩) এখানে বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল অপমানজনক শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে, অপরদিকে সীমালংঘনকারী ও অত্যাচারীরা মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈলকে তৎকালীন বিশ্বের জন্য মনােনীত করেছিলেন। কারণ তারা সে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দক্ষতার দিক থেকে সবার শ্রেষ্ঠ ছিলাে। তাই তারা নেতৃত্বের জন্যে যােগ্যতর ছিলাে। অবশ্য পরবর্তীকালে তাদের মাঝে আদর্শচ্যুত ঘটে, নৈতিক অধপতন ঘটে, দুর্নীতির প্রসার ঘটে। এর দ্বারা বুঝা গেলাে যে, আল্লাহর মনােয়ন ও সমর্থন কখনও কখনও সমসাময়িক যুগের শ্রেষ্ঠ ও যােগ্যতর শ্রেণীর ভাগ্যে জুটে থাকে যদিও সেই শ্রেণী ঈমান ও আকিদার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের নয় । অবশ্য সেই শ্রেণীর মাঝে এমন নেতৃত্বের যােগ্যতা থাকতে হবে যা তাদেরকে আল্লাহর পথের সন্ধান দেবে এবং তাদেরকে নৈতিকতা, সততা ও বিচক্ষণতার সাথে পরিচালিত করবে। এরপর বলা হয়েছে, ‘এবং আমি তাদেরকে এমন নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম যাতে ছিলাে স্পষ্ট পরীক্ষা’(আয়াত ৩৩) এসব নিদর্শনাবলী তাদেরকে পরীক্ষাস্বরূপ দেয়া হয়েছিলাে। তাই তারা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। পরীক্ষার পালা শেষ হয় এবং পৃথিবীর বুকে কর্তৃত্বের মেয়াদও শেষ হয়। এখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের নৈতিক অধপতন ও আদর্শচ্যুতির অপরাধে পাকড়াও করেন, তাদের পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের জন্যে পাকড়াও করেন। ফলে তাদের ওপর এমন শাসককে চাপিয়ে দেন যে তাদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করে, বিতাড়িত করে। এরপর লাঞ্ছনা ও দৈন্যদশা তাদের কপালের লিখন হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, বরং তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, যখনই তারা পৃথিবীর বুকে বিশৃংখলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, তখনই তারা বিতাড়ন ও শাস্তির সম্মুখীন হবে এবং এই অবস্থা কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৭-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তিনি ঐ মুশরিকদের পূর্বে মিসরের কিবতীদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি তাদের কাছে তাঁর সম্মানিত রাসূল হযরত মূসা (আঃ)-কে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত মূসা (আঃ) তাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা বানী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না। আমি আমার নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে কতকগুলো মু’জিযা নিয়ে এসেছি। যারা হিদায়াত মেনে নিবে তারা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আল্লাহ তা’আলা আমাকে তার অহীর আমানতদার করে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন। আমি তোমাদের নিকট তার বাণী পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের আল্লাহর বাণীকে মেনে না নিয়ে উদ্ধত্য প্রকাশ করা মোটেই উচিত নয়। তার বর্ণনাকৃত দলীল-প্রমাণাদি ও আহকামের সামনে মাথা নত করা একান্ত কর্তব্য। যারা তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি তোমাদের সামনে প্রকাশ্য দলীল ও স্পষ্ট নিদর্শন পেশ করছি। তোমাদের মন্দ কথন ও অপবাদ হতে আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও আবু সালেহ (রঃ) এ অর্থই করেছেন। আর কাতাদা (রঃ) পাথর দ্বারা হত্যা করা অর্থ নিয়েছেন। অর্থাৎ “আমি তোমাদের দেয়া মুখের কষ্ট ও হাতের কষ্ট হতে আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শরণাপন্ন হচ্ছি।’ হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে আরো বললেনঃ “যদি তোমরা আমার কথা মান্য না কর, আমার উপর যদি তোমাদের আস্থা না থাকে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনতে মন না চায় তবে কমপক্ষে আমাকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকো এবং ঐ সময়ের জন্যে প্রস্তুত থাকো যখন আল্লাহ তা’আলা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করবেন।”

অতঃপর যখন হযরত মূসা (আঃ) তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন অবস্থান করলেন, অন্তর খুলে তাদের মধ্যে প্রচার কার্য চালিয়ে গেলেন, তাদের সর্বপ্রকারের মঙ্গল কামনা করলেন এবং তাদের হিদায়াতের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেন, তখনও দেখলেন যে, দিন দিন তারা কুফরীর দিকেই এগিয়ে চলছে, ফলে বাধ্য হয়ে তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট তাদের জন্যে বদদু’আ করলেন। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মূসা (আঃ) বললোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি ফিরাউন ও তার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে বাহ্যাড়ম্বর ও ধন-দৌলত প্রদান করেছেন যেন তারা (আপনার বান্দাদেরকে) আপনার পৃথ হতে ভ্রষ্ট করে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের ধন-মালকে আপনি ধ্বংস করে দিন এবং তাদের অন্তরকে শক্ত করে দিন, সুতরাং তারা যেন ঈমান আনয়ন না করে যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে। তিনি (আল্লাহ) বললেন:তোমাদের দু’জনের (হযরত মূসা আঃ ও হযরত হারূনের আঃ) প্রার্থনা কবূল করা হলো, সুতরাং তোমরা স্থির থাকো।” (১০:৮৮-৮৯)

এখানে রয়েছেঃ “আমি মূসা (আঃ)-কে বললাম, তুমি আমার বান্দাদেরকে অর্থাৎ বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রজনী যোগে বের হয়ে পড়, নিশ্চয়ই তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে। কিন্তু নির্ভয়ে চলে যাবে। আমি তোমাদের জন্যে সমুদ্রকে শুষ্ক করে দিবো।”

অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। ফিরাউন তার লোক-লশকর নিয়ে বানী ইসরাঈলকে পাকড়াও করার উদ্দেশ্যে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো। পথে সমুদ্র প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো। হযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে সমুদ্রে নেমে পড়লেন। পানি শুকিয়ে গেল। সুতরাং তিনি সঙ্গীসহ সমুদ্র পার হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি ইচ্ছা করলেন যে, সমুদ্রে লাঠি মেরে ওকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন, যাতে ফিরাউন এবং তার লোকজন সমুদ্র পার হতে না পারে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর কাছে অহী। করলেনঃ সমুদ্রকে স্থির থাকতে দাও, তারা এমন বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবে।’

(আরবী)-এর অর্থ হলো শুষ্ক রাস্তা, যা নিজের প্রকৃত অবস্থার উপর থাকে। মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য এই যে, সমুদ্রকে যেন প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া না হয় যে পর্যন্ত না শত্রুরা এক এক করে সবাই সমুদ্রের মধ্যে এসে পড়ে। এসে পড়লেই সমুদ্রকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে এবং এর ফলে সবাই নিমজ্জিত হবে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তারা পশ্চাতে রেখে গিয়েছিল কত উদ্যান ও প্রস্রবণ, কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য অট্টালিকা, কত বিলাস উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিতো! এসব ছেড়ে তারা সবাই ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, মিসরের নীল সাগর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নদীগুলোর সরদার এবং সমস্ত নদী ওর অধীনস্থ। যখন ওকে প্রবাহিত রাখার আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা হয় তখন সমস্ত নদীকে তাতে পানি পৌছিয়ে দেয়ার হুকুম করা হয়। আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী তাতে পানি আসতে থাকে। অতঃপর তিনি নদীগুলোকে বন্ধ করে দেন এবং ওগুলোকে নিজ নিজ জায়গায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

ফিরাউন এবং তার পারিষদবর্গের ঐ বাগানগুলো নীল সাগরের উভয় তীর ধরে ক্রমান্বয়ে চলে গিয়েছিল। এই ক্রমপরম্পরা ‘আসওয়ান’ হতে রাশীদ’ পর্যন্ত ছিল। এর নয়াট উপনদী ছিল। ওগুলোর নাম হলোঃ ইসকানদারিয়া, দিমইয়াত, সারদোস, মাফ, ফুয়ূম, মুনতাহা। এগুলোর একটির সঙ্গে অপরটির সংযোগ ছিল। একটি হতে অপরটি বিচ্ছিন্ন ছিল না। পাহাড়ের পাদদেশে তাদের শস্যক্ষেত্র ছিল যা মিসর হতে নিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত বরাবর চলে গিয়েছিল। নদীর পানি এই সবগুলোকে সিক্ত করতো। তারা পরম সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করছিল। কিন্তু তারা গর্বে ফুলে উঠেছিল। পরিশেষে তারা এসব নিয়ামত রেখে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল। এক রাত্রির মধ্যেই তারা সমস্ত নিয়ামত ছেড়ে দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করে এবং তাদেরকে ভূষির মত উড়িয়ে দেয়া হয় এবং গত হয়ে যাওয়া দিনের মত নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। এমনভাবে তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয় যে, আর উথিত হয়নি। তারা জাহান্নামবাসী হয়ে যায় এবং ওটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।

আল্লাহ তা’আলা এই সমুদয় নিয়ামতের উত্তরাধিকারী করে দেন বানী ইসরাঈলকে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বানী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি।”(৭:১৩৭)

এখানেও ‘ভিন্ন সম্প্রদায়কে উত্তরাধিকারী করেছিলাম’ দ্বারা বানী ইসরাঈলকেই বুঝানো হয়েছে।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘আকাশ ও পৃথিবী কেউই তাদের জন্যে অশ্রুপাত করেনি। কেননা, ঐ পাপীদের এমন কোন সৎ আমলই ছিল না যা আকাশে উঠে থাকে এবং এখন না উঠার কারণে তারা কাঁদবে বা দুঃখ-আফসোস করবে। আর যমীনেও এমন জায়গা ছিল না যেখানে বসে তারা আল্লাহর ইবাদত করতো এবং এখন তাদেরকে না পেয়ে ওটা দুঃখ ও শোক প্রকাশ করবে। কাজেই এগুলো তাদের ধ্বংসের কারণে কাদলো না এবং দুঃখ প্রকাশ করলো না।’

মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ ‘তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।’ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ ‘আকাশের দু’টি দরযা রয়েছে, একটি দিয়ে তার (মানুষের) রূযী নেমে আসে এবং অপরটি দিয়ে তার আমল এবং কথা উপরে উঠে যায়। যখন সে মারা যায় এবং তার আমল ও রিযক বন্ধ হয়ে যায় তখন ও দুটি কাদতে থাকে।” অতঃপর তিনি (আরবী) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। তারপর তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা যমীনে কোন ভাল কাজ করেনি যে, তাদের মৃত্যুর কারণে যমীন কাঁদবে এবং তাদের কোন ভাল কথা ও ভাল কাজ আকাশে উঠে না যে, ওগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আকাশ কাঁদবে।” (এ হাদীসটি হাফিয আবূ ইয়ালা মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত শুরাইহ ইবনে আবীদিল হারামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলাম দারিদ্রের অবস্থায় শুরু হয়েছে এবং সত্বরই দারিদ্রের অবস্থায় ফিরে যাবে, যেমনভাবে শুরু হয়েছিল। জেনে রেখো যে, মুমিন কোথায়ও অপরিচিত মুসাফিরের মত মৃত্যুবরণ করে না। মুমিন সফরে যে কোন জায়গায় মারা যায়, সেখানে তার জন্যে কোন ক্রন্দনকারী না থাকলেও তার জন্যে যমীন ও আসমান ক্রন্দন করে। তারপর তিনি (আরবী)-এই আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন যে, এ দু’টো কাফিরদের জন্যে কাঁদে না।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

কোন এক ব্যক্তি হযরত আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আসমান ও যমীন কারো জন্যে কখনো কেঁদেছে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আজ তুমি আমাকে এমন একটি কথা জিজ্ঞেস করলে যা ইতিপূর্বে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি। তাহলে শুনো, বান্দার জন্যে যমীনে নামাযের একটি জায়গা থাকে এবং তার আমল উপরে উঠার জন্যে আসমানে একটি জায়গা থাকে। ফিরাউন এবং তার লোকদের কোন ভাল আমল ছিলই না। কাজেই না যমীন তাদের জন্যে কেঁদেছে, না আসমান এবং না তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয় যে, তারা পরে কোন সৎ আমল করতে পারে।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কেও এই প্রশ্নই করা হলে তিনিও প্রায় ঐ উত্তরই দেন, এমন কি তিনি একথাও বলেন যে, মুমিনদের জন্যে যমীন চল্লিশ দিন পর্যন্ত কাঁদতে থাকে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) এটা বর্ণনা করলে এক ব্যক্তি এতে বিস্ময় প্রকাশ করলো। তখন তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এতে বিস্ময়ের বিষয় কি আছে? যে বান্দা তার রুকূ’ ও সিজদা দ্বারা যমীনকে আবাদ রাখতো, যে বান্দার তাকবীর ও তাসবীহর শব্দ আসমান বরাবরই শুনতে থাকতো, ঐ আবেদ বান্দার জন্যে এ দুটি কেন কাদবে না?

হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ফিরাউন ও তার লোকদের মত লাঞ্ছিত ও অপমানিত লোকদের জন্যে যমীন ও আসমান কাদবে কেন?

ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, যখন হতে দুনিয়া রয়েছে তখন হতে আসমান শুধু দুই ব্যক্তির জন্যে কেঁদেছে। তাঁর ছাত্র আবীদ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “আসমান ও যমীন কি প্রত্যেক মুমিনের জন্যে কাঁদে না?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “শুধু ঐ স্থানটুকু কঁাদে যে স্থানটুকু দিয়ে তার আমল উপরে উঠে যায়।” অতঃপ তিনি বলেন যে, আসমানের রক্তরঙ্গে রঞ্জিত ও চর্মের রূপ ধারণ করাই হলো ওর ক্রন্দন করা। আসমানের এরূপ অবস্থা শুধু দুই ব্যক্তির শাহাদতের সময় হয়েছিল। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (আঃ)-কে যখন শহীদ করে দেয়া হয় তখন আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল এবং রক্ত বর্ষণ করেছিল। আর হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)-কে যখন শহীদ করা হয় তখনও আকাশ লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

ইয়াযীদ ইবনে আবি যিয়াদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের কারণে চার মাস পর্যন্ত আকাশের প্রান্ত লাল ছিল এবং এই লালিমাই ওর ক্রন্দন। সুদ্দী কাবীরও (রঃ) এটাই বলেছেন।

আতা খুরাসানী (রঃ) বলেন যে, আকাশের প্রান্ত লাল বর্ণ ধারণ করাই হলো ওর ক্রন্দন।

এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত হুসাইন (রাঃ)-কে হত্যা করার দিন তার বধ্যভূমির যে কোন পাথরকেই উল্টানো হতো ওরই নীচে জমাট রক্ত পাওয়া যেতো। ঐদিন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিল, আকাশ-প্রান্ত লাল বর্ণ ধারণ করেছিল এবং পাথর বর্ষিত হয়েছিল। কিন্তু এসবের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের বানানো কাহিনী। এগুলো সবই ভিত্তিহীন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক। কিন্তু শিয়া সম্প্রদায় এটাকে অতিরঞ্জিত করেছে এবং এর মধ্যে বহু মিথ্যা ঘটনা ঢুকিয়ে দিয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।

এটা খেয়াল রাখার বিষয় যে, দুনিয়ায় এর চেয়েও বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনা হতেও বেশী মর্মান্তিক। কিন্তু এগুলো সংঘটিত হওয়ার সময়ও আসমান, যমীন প্রভৃতির মধ্যে এরূপ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁরই সম্মানিত পিতা হযরত আলীও (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন যিনি সর্বসম্মতভাবে তাঁর চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু তখনো তো পাথরের নীচে জমাট রক্ত দেখা যায়নি এবং অন্য কিছুও পৃরিলক্ষিত হয়নি। হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-কে ঘিরে নেয়া হয় এবং বিনা দোষে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে ফজরের নামাযের অবস্থায় নামায-স্থলেই হত্যা করে দেয়া হয়। এটা ছিল এমনই এক কঠিন বিপদ যেমনটি ইতিপূর্বে মুসলমানদের কাছে কখনো পৌঁছেনি। কিন্তু এসব ঘটনার কোন একটিরও সময় ঐ সব ব্যাপার ঘটেনি, হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর হত্যার সময় যেগুলো ঘটার কথা শিয়ারা প্রচার করেছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলোকে বাদ দিয়ে যদি সমস্ত মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক জগতের নেতা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কেই শুধু ধরা হয় তবুও দেখা যাবে যে, তাঁর মৃত্যুর সময়ও শিয়াদের কথিত ঘটনাগুলোর একটিও ঘটেনি। আরো দেখা যায় যে, যেই দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পুত্র হযরত ইবরাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন সেই দিনই ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণ হয়। তখন কে একজন বলে ওঠে যে, হযরত ইবরাহীম (রাঃ)-এর মৃত্যুর কারণেই সূর্য গ্রহণ হয়েছে। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূর্য গ্রহণের নামায আদায় করেন, অতঃপর ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো জন্ম ও মৃত্যুর কারণে এ দুটোতে গ্রহণ লাগে না।”

এরপর আল্লাহ তা’আলা বানী ইসরাঈলের প্রতি নিজের অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “আমি তো উদ্ধার করেছিলাম বানী ইসরাঈলকে ফিরাউনের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হতে। নিশ্চয়ই সে ছিল পরাক্রান্ত সীমালংঘন কারীদের মধ্যে।’ সে বানী ইসরাঈলকে ঘৃণার পাত্র মনে করতো। তাদের দ্বারা সে নিকৃষ্টতম কার্য করিয়ে নিতো। তাদের দ্বারা সে বড় বড় কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করিয়ে নিতো। সে আত্মগর্বে ফুলে উঠেছিল। আল্লাহর যমীনে সে হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। তার এসব মন্দ কর্মে তার কওমও তার সহযোগী ছিল।

এরপর আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর নিজের আর একটি অনুগ্রহের কথা বলেনঃ “আমি জেনে শুনেই তাদেরকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম।’ অর্থাৎ তিনি ঐ যুগের সমস্ত লোকের উপর বানী ইসরাঈলকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। প্রত্যেক যুগকেই বলা হয়। অর্থ এটা নয় যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত লোকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। এটা আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তির মতঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মূসা (আঃ)! আমি তোমাকে লোকদের উপর মনোনীত করেছি।”(৭:১৪৪) অর্থাৎ তার যুগের লোকদের উপর। হযরত মরিয়ম (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তিটিও অনুরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি তোমাকে (হযরত মরিয়ম আঃ-কে) বিশ্বের নারীদের মধ্যে মনোনীত করেছেন।”(৩:৪২) অর্থাৎ তাঁর যুগের সমস্ত নারীর মধ্যে তাকে আল্লাহ তা’আলা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। সর্বযুগের নারীদের উপর যে হযরত মরিয়ম (আঃ)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল এটা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা (রাঃ) হযরত মরিয়ম (আঃ) অপেক্ষা উত্তম ছিলেন বা কমপক্ষে সমান তো ছিলেন। অনুরূপভাবে ফিরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া বিনতে মাযাহিমও (রাঃ) ছিলেন। আর হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ফযীলত সমস্ত নারীর উপর তেমনই যেমন সুরুয়ায় বা ঝোলে ভিজানো রুটির ফযীলত অন্যান্য খাদ্যের উপর।

মহান আল্লাহ বানী ইসরাঈলের উপর তার আরো একটি অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে ঐ সব যুক্তি-প্রমাণ, নিদর্শন, মু’জিযা ও কারামত দান করেছিলেন যেগুলোর মধ্যে হিদায়াত অনুসন্ধান কারীদের জন্যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১৭-৩৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এ আয়াতগুলোতে মূসা (আঃ) যেভাবে ফির‘আউনকে তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াত দিয়েছিলেন, ফির‘আউনকে যেভাবে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল এবং বানী ইসরাঈলকে যেভাবে ফির‘আউন ও তার সৈন্যদের কবল থেকে নাজাত দেয়া হয়েছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

মূসা (আঃ) ফির‘আউনের নিকট আল্লাহ তা‘আলার রিসালাতের দা‘ওয়াত পৌঁছিয়ে দিলেন। মূসা (আঃ)-এর দাওয়াতের সত্যতা জানার পরেও ফির‘আউন অহংকারবশত প্রত্যাখ্যান করল। ফির‘আউন সত্যের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে মূসা (আঃ) প্রস্তাব করলেন যে, বানী ইসরাঈলের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার সাথে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। মু’মিনদেরকে হত্যা, রব দাবী ও আল্লাহ তা‘আলাদ্রোহীতা করে জমিনে কোন প্রকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না। কিন্তু মূসা (আঃ)-এর কথায় কর্ণপাত না করে বরং জমিনে বাড়াবাড়ি করল এবং মূসা (আঃ) ও বানী ইসরাঈলের উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। তখন মূসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রাতে বের হয়ে পড়েন। ফির‘আউন ও তার দলবল এ খবর জানতে পেরে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। কিন্তু অবশেষে তারা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যু বরণ করে আর মূসা (আঃ)-সহ বানী ইসরাঈলকে তাদের কবল থেকে মুক্তি দেয়া হলো।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন ঐ সমস্ত ধন ও প্রাচুর্যের কথা যা তৎকালে ফির‘আউনকে দেয়া হয়েছিল। তারা সেখানে উদ্যান, প্রস্রবন ও সুরম্য অট্টালিকায় বসবাস করত। তারা সেখানে আনন্দের সাথে বিলাস বহুল জীবন-যাপন করত। কিন্তু জমিনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। মূসা (আঃ)-এর এ ঘটনা ইতোপূর্বে একাধিক সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে।

(فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَا۬ءُ وَالْأَرْضُ)

অর্থাৎ তারা এমন কোন ভাল কাজ করেনি যার জন্য আকাশ-জমিন তাদের জন্য কাঁদবে বরং তাদেরকে ধ্বংস করার কারণে আকাশ-জমিন স্বস্তিবোধ করেছে। একাধিক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, কোন সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি মারা গেলে আকাশ-জমিন ক্রন্দন করে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে স্বস্তি পেয়েছে এবং তার থেকেও স্বস্তি পেয়েছে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ‘সে স্বস্তি পেয়েছে এবং তার থেকেও স্বস্তি পেয়েছে’ এর অর্থ কী? তিনি বললেন, যদি মৃত ব্যক্তি মু’মিন বান্দা হয়ে থাকে তাহলে সে দুনিয়ার কষ্ট-মসিবত থেকে স্বস্তি লাভ করেছে। আর যদি মৃত ব্যক্তি পাপিষ্ট হয় তাহলে তার (তার অত্যাচার-নির্যাতন) থেকে দুনিয়ার মানুষ, দেশ, গাছ-পালা ও পশুপাখি স্বস্তি পেয়েছে। (সহীহ বুখারী হা. ৬৫১২,সহীহ মুসলিম হা. ২২৪৫)

(وَلَقَدِ اخْتَرْنٰهُمْ عَلٰي عِلْمٍ عَلَي الْعٰلَمِيْنَ)

‘আমি জেনে শুনেই তাদেরকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সময়ে ও তাদের সময়ের পূর্বে ও পরে বিশ্ববাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত। অতঃপর যখন উম্মাতে মুহাম্মাদী আগমন করলেন তখন তারা সকল উম্মাতের ওপর শ্রেষ্ঠ হয়ে গেলেন।

رهوا-এর অর্থ হলো- স্থির, শান্ত বা শুস্ক, অর্থাৎ লাঠি দ্বারা আঘাত করলে তা স্থির হয়ে যাবে এবং তাতে পথ সৃষ্টি হবে।

অতএব দুনিয়ার সকল স্বৈরাচারী, জালিম ও আল্লাহদ্রোহীদের ফির‘আউনের প্রাপ্ত লাঞ্ছনা ও অপমানজনক শাস্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক ও সাবধান হওয়া উচিত। আল্লাহদ্রোহীতা করে দুনিয়ার কেউ রক্ষা পায়নি।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. জমিনে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না, যারা তা করেছে তারাই ধ্বংস হয়েছে।
২. মু’মিনকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না।
৩. সমুদ্রসহ যাবতীয় বস্তু আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে চলমান।
৪. পৃথিবীর কোন প্রাচুর্যই মানুষকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মূল আয়াতে رَسُوْل كَرِيْم শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। كَرِيْم শব্দটি যখন মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন তার দ্বারা বুঝানো হয় এমন ব্যক্তিকে যে অত্যন্ত ভদ্র ও শিষ্ট আচার-আচরণ এবং অতীব প্রশংসনীয় গুণাবলীর অধিকারী। সাধারণ গুণাবলী বুঝাতে এ শব্দ ব্যবহৃত হয় না।
# প্রথমেই একথা বুঝে নেয়া দরকার যে, এখানে হযরত মূসার যেসব উক্তি ও বক্তব্য উদ্ধৃত করা হচ্ছে, তা যুগপৎ একই ধারাবাহিক বক্তব্যের বিভিন্ন অংশ নয়, বরং বছরের পর বছর দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে যেসব কথা তিনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের বলেছেন তার সারসংক্ষেপ কয়েকটি মাত্র বাক্যে বর্ণনা করা হচ্ছে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আ’রাফ, টীকা ৮৩ থেকে ৯৭ ; ইউনুস, টীকা ৭২থেকে ৯৩ ; ত্বাহা, টীকা ১৮ (ক) থেকে ৫২ ; আশ শু’আরা, টীকা ৭ থেকে ৪৯ ; আন নামল, টীকা ৮ থেকে ১৭ ; আল কাসাস, টীকা ৪৬ থেকে ৫৬ ; আর মু’মিন, আয়াত ২৩ থেকে ৪৬ ; আয যখরুফ, আয়াত ৪৬ থেকে ৫৬ টীকাসহ)।
# মূল আয়াতে أَدُّوا إِلَيَّ عِبَادَ اللَّهِ বলা হয়েছে। এ আয়াতাংশের একটি অনুবাদ আমরা ওপরে বর্ণনা করেছি। এই অনুবাদ অনুসারে এটা ইতিপূর্বে সূরা আ’রাফ (আয়াত ১৫), সূরা ত্বাহা (৪৭) এবং আশ শুআরায় বনী ইসরাঈলদের আমার সাথে যেতে দাও বলে যে দাবী করা হয়েছে সেই দাবীর সমার্থক। আরেকটি ‘অনুবাদ’ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে উদ্ধৃত। অনুবাদটি হলো, হে আল্লাহর বান্দারা, আমার হক আদায় করো অর্থাৎ আমার কথা মেনে নাও, আমার প্রতি ঈমান আনো এবং আমার হিদায়াত অনুসরণ করো। আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর এটা আমার হক। পরের বাক্যাংশ অর্থাৎ “আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল” এই দ্বিতীয় অর্থের সাথে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ।
# নির্ভরযোগ্য রসূল। নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা সংযোজন করে বলার মত ব্যক্তিও আমি নই কিংবা নিজেরকোন ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য নিজেই একটি নির্দেশ বা আইন রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়ার মত ব্যক্তিও নই। তোমরা আমার ওপর এতটা আস্থা রাখতে পার যে, আমার প্রেরণকারী যা বলেছেন কমবেশী না করে ঠিক ততটুকুই আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেব। (প্রকাশ থাকে যে হযরত মূসা সর্বপ্রথম যখন তাঁর দাওয়াত পেশ করেছিলেন তখন এই দু’টি কথা বলেছিলেন)।
# অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা আমার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করছো প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কারণ, আমার যেসব কথা শুনে তোমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছো তা আমার নয়, আল্লাহর কথা। আমি তাঁর রসূল হিসেবে এসব কথা বলছি। আমি আল্লাহর রসূল কিনা এ ব্যাপারে যদি তোমাদের সন্দেহ হয় তাহলে আমি তোমাদের সামনে আমার আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করছি। এই প্রমাণ বলতে কোন একটি মাত্র মু’জিযা বুঝানো হয়‌নি বরং ফেরাউনের দরবারের প্রথমবার পৌঁছার পর থেকে মিসরে অবস্থানের সর্বশেষ সময় পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে যেসব মু’জিযা মূসা আলাইহিস সালাম ফেরাউন ও তার কওমকে দেখিয়েছেন তার সবগুলোকে বুঝানো হয়েছে। তারা যে প্রমাণটিই অস্বীকার করেছে তিনি পরে তার চেয়েও অধিক সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করেছেন। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আয যুখরুফ, টীকা নম্বর ৪২ ও ৪৩ )।
# এটা সেই সময়ের কথা যখন হযরত মূসার পেশকৃত সমস্ত নিদর্শন দেখা সত্ত্বেও ফেরাউন তার জিদ ও হঠকারিতা বজায় রেখে চলছিলো। কিন্তু মিসরের সাধারণ ও অসাধারণ সব মানুষই প্রতিনিয়ত এসব নির্দশন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ছে দেখে সে অস্থির হয়ে উঠলো। সেই যুগেই প্রথমে সে ভরা দরবারে বক্তৃতা করে যা সূরা যুখরুফের ৫১ থেকে ৫৩ আয়াতে পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে (দেখুন, সূরা যুখরুফের ৪৫ থেকে ৪৯ টীকা)। তারপর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করতে মনস্থ করে। ঐ সময় হযরত মূসা (আ) সেই কথাটি বলেছিলেন যা সূরা মু’মিনের ২৭ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃإِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ مِنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ“যে অহংকারী জবাবদিহির দিনের প্রতি ঈমান পোষণ করে না আমি তার থেকে আশ্রয় গ্রহণ করেছি আমার ও তোমাদের যিনি রব, তার কাছে।”এখানে হযরত মূসা (আ) তাঁর সেই কথা উল্লেখ করে ফেরাউন ও তার রাজকীয় সভাসদদের বলছেন, দেখো, আমি তোমাদের সমস্ত হামলার মোকাবিলার জন্য ইতিপূর্বেই আল্লাহ‌ রাব্বুল আলামীনের আশ্রয় চেয়েছি। এখন তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে যদি তোমরা নিজেদের কল্যাণ কামনা করো তাহলে আমার ওপর হামলা করা থেকে বিরত থাকো। আমার কথা মানতে না চাইলে না মানো। আমাকে কখানো আঘাত করবে না। অন্যথায়, ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হবে।
# এটা হযরত মূসা কর্তৃক তাঁর রবের কাছে পেশকৃত সর্বশেষ রিপোর্ট। ‘এসব লোক অপরাধী’ অর্থাৎ এদের অপরাধী হওয়াটা এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। এদের প্রতি আনুকূল্য দেখানো এবং এদেরকে সংশোধনের সুযোগ দানের অবকাশ আর নেই। এখন জনাবের চূড়ান্ত ফয়সালা দেয়ার সময় এসে গিয়েছে।
# সেসব লোকের যারা ঈমান এনেছে। তাদের মধ্যে বনী ইসরাঈলও ছিল এবং হযরত ইউসূফের যুগ থেকে হযরত মূসার যুগের আগমন পর্যন্ত মিসরের যেসব কিবতী মুসলমান ছিল তারাও। আবার সেসব মিশরীয় লোকও যারা হযরত মূসার নিদর্শনসমূহ দেখে এবং তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইউনুস, টীকা ৫৮)।
# এটা হযরত মূসাকে হিজরতের জন্য দেয়া প্রাথমিক নির্দেশ। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বাহা, টীকা ৫৩; আশ শুআরা টীকা ৩৯ থেকে ৪৭)।
# এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো সেই সময় যখন হযরত মূসা তাঁর কাফেলাসহ সমুদ্র পার হয়ে গিয়েছেন এবং তিনি চাচ্ছিলেন সমুদ্রের মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়ে যাওয়ার আগে তা যেমন ছিল লাঠির আঘাতে পুনরায় তেমন করে দেবেন। যাতে মু’জিযার সাহায্যে যে রাস্তা তৈরী হয়েছে ফেরাউন ও তার সৈন্য-সামন্ত সেই রাস্তা ধরে এসে না পড়ে। সেই সময় বলা হয়েছিলো, তা যেন না করা হয়। সমুদ্রকে ঐভাবেই বিভক্ত থাকতে দাও, যাতে ফেরাউন তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এই রাস্তায় নেমে আসে। তারপর সমুদ্রের পানি ছেড়ে দিয়ে এই গোটা সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মারা হবে।
# হযরত হাসান বাসারী বলেনঃ এর অর্থ বনী ইসরাঈল, যাদেরকে ফেরাউনের কওমের ধ্বংসের পর আল্লাহর মিসরের উত্তরাধিকারী করেছিলেন। কাতাদা বলেনঃ এর অর্থ অন্য জাতির লোক, যারা ফেরাউনের অনুসারীদের ধ্বংস করার পরে মিসরের উত্তরাধিকারী হয়েছিলো। কারণ, ইতিহাসে কোথাও উল্লেখ নেই যে, মিসর থেকে বের হওয়ার পর বনী ইসরাঈলরা আর কখনো সেখানে ফিরে গিয়েছিলো এবং সে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলো। পরবর্তীকালের মুফাসসিরদের মধ্যেও এই মতভেদ দেখা যায়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আশ শুআরা, টীকা ৪৫)।
# তারা যখন শাসক ছিল তখন তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ডঙ্কা বাজতো। পৃথিবীতে তাদের প্রশংসা গীত প্রতিধ্বনিত হতো। তাদের আগে ও পিছে চাটুকারদের ভিড় লেগে থাকতো। তাদের এমন ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা হতো যেন গোটা জগতই তাদের গুণাবলীর ভক্ত-অনুরক্ত, তাদের দয়া ও করুণার দানে ঋনী এবং পৃথিবীতে তাদের চেয়ে জনপ্রিয় আর কেউ নেই। কিন্তু যখন তাদের পতন হলো একটি চোখ থেকেও তাদের জন্য অশ্রুপাত হয়নি বরং সবাই প্রাণ ভরে এমন শ্বাস নিয়েছে যেন তার পাঁজরে বিদ্ধ কাঁটাটি বের হয়ে গিয়েছে। একথা সবারই জানা, তারা আল্লাহর বান্দাদের কোন কল্যাণ করেনি যে তারা তার জন্য কাঁদবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যও কোনো কাজ করেনি যে, আসমান-বাসীরা তাদের ধ্বংসের কারণে আহাজারি করবে। আল্লাহর ইচ্ছানুসারে যতদিন তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তারা পৃথিবীর বুকের ওপর দুর্বলদের অত্যাচার করেছে। কিন্তু তাদের অপরাধের মাত্রা সীমালঙ্ঘন করলে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে যেমন ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়।
# তাদের জন্য ফেরাউন নিজেই লাঞ্ছনাকর আযাব। অন্য সব আযাব ছিল এই মূর্তিমান আযাবের শাখা-প্রশাখা।
# এর মধ্যে কুরাইশ গোত্রের কাফের নেতাদেরকে সূক্ষ্মভাবে বিদ্রূপ করা হয়েছে। অর্থাৎ দাসত্বের সীমালংঘনকারীদের মধ্যে তোমরা কি এমন মর্যাদার অধিকারী? অতি বড় বিদ্রোহী তো ছিল সে যে তৎকালীন পৃথিবীর সবচাইতে বড় সাম্রাজ্যের সিংহাসনে খোদায়ীর দাবী নিয়ে বসেছিলো। তাকেই যখন খড়কুটোর মত ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে তোমাদের এমন কি অস্তিত্ব আছে যে আল্লাহর আয়াতের সামনে টিকে থাকবে?
# বনী ঈসরাইলদের গুনাবলী ও দুর্বলতা উভয় দিকই আল্লাহর জানা ছিল। তিনি না দেখে শুনে অন্ধভাবে তাদেরকে বাছাই করেননি। সেই সময় পৃথিবীতে যত জাতি ছিল তাদের মধ্য থেকে তিনি এই জাতিকে যখন তাঁর বার্তাবাহক এবং তাওহীদের দাওয়াতের ঝাণ্ডাবাহী বানানোর জন্য মনোনীত করলেন তখন তা করেছিলেন এ জন্য যে, তাঁর জ্ঞানে তৎকালীন জাতিসমূহের মধ্যে এরাই তার উপযুক্ত ছিল।
# ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল বাকারা, টীকা ৬৪ থেকে ৮৫ ; আন নিসা, টীকা ১৮২ থেকে ১৯৯ ; আল মায়েদা, টীকা ৪২ থেকে ৪৭ ; আল আ’রাফ, টীকা ৯৭ থেকে ১১৩ ; ত্বাহা, টীকা ৫৬ থেকে ৭৪ ।

Leave a Reply