أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১২২/এবং কাফের-রা বলে -১০) [ * *আর যারা কুফরী করেছিলো তাদের বলা হবে আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদেরকে শুনানো হতো না?:-] www.motaher21.net সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া পারা:২৫ ৩১-৩৭ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১২২/এবং কাফের-রা বলে -১০)
[ * *আর যারা কুফরী করেছিলো তাদের বলা হবে আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদেরকে শুনানো হতো না?:-]
www.motaher21.net
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া পারা:২৫
৩১-৩৭ নং আয়াত:-
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩১
وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ۟ اَفَلَمۡ تَکُنۡ اٰیٰتِیۡ تُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فَاسۡتَکۡبَرۡتُمۡ وَ کُنۡتُمۡ قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ ﴿۳۱﴾
আর যারা কুফরী করেছিলো তাদের বলা হবে আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদেরকে শুনানো হতো না? কিন্তু তোমরা অহংকার করেছিলে এবং অপরাধী হয়ে গিয়েছিলে।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩২
وَ اِذَا قِیۡلَ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّ السَّاعَۃُ لَا رَیۡبَ فِیۡہَا قُلۡتُمۡ مَّا نَدۡرِیۡ مَا السَّاعَۃُ ۙ اِنۡ نَّظُنُّ اِلَّا ظَنًّا وَّ مَا نَحۡنُ بِمُسۡتَیۡقِنِیۡنَ ﴿۳۲﴾
আর যখন বলা হতো, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামত যে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তখন তোমরা বলতে, কিয়ামত কী জিনিস তা আমরা জানি না। আমরা কিছুটা ধারণা পোষণ করি মাত্র। দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের নেই।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩৩
وَ بَدَا لَہُمۡ سَیِّاٰتُ مَا عَمِلُوۡا وَ حَاقَ بِہِمۡ مَّا کَانُوۡا بِہٖ یَسۡتَہۡزِءُوۡنَ ﴿۳۳﴾
সেই সময় তাদের কাছে তাদের কৃতকর্মের মন্দ ফলাফল প্রকাশ পাবে। তারা সেই জিনিসের পাল্লায় পড়ে যাবে যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করতো।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩৪
وَ قِیۡلَ الۡیَوۡمَ نَنۡسٰکُمۡ کَمَا نَسِیۡتُمۡ لِقَآءَ یَوۡمِکُمۡ ہٰذَا وَ مَاۡوٰىکُمُ النَّارُ وَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ ﴿۳۴﴾
তাদের বলে দেয়া হবে, আজ আমিও ঠিক তেমনি তোমাদের ভুলে যাচ্ছি যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎ ভুলে গিয়েছিলে। তোমাদের ঠিকানা এখন দোজখ এবং তোমাদের সাহায্যকারী কেউ নেই।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩৫
ذٰلِکُمۡ بِاَنَّکُمُ اتَّخَذۡتُمۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ ہُزُوًا وَّ غَرَّتۡکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ۚ فَالۡیَوۡمَ لَا یُخۡرَجُوۡنَ مِنۡہَا وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ ﴿۳۵﴾
এ জন্য যে, তোমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ ওদেরকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে না এবং তাদের ওজর-আপত্তিও গ্রহণযোগ্য হবে না।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩৬
فَلِلّٰہِ الۡحَمۡدُ رَبِّ السَّمٰوٰتِ وَ رَبِّ الۡاَرۡضِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۳۶﴾
অতএব, সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আসমানসমূহের রব, যমীনের রব ও সকল সৃষ্টির রব।
সূরা:৪৫: আল্ জাসিয়া:৩৭
وَ لَہُ الۡکِبۡرِیَآءُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿٪۳۷﴾
আর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাবতীয় গৌরব-গরিমা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

এরপর আসছে দ্বিতীয় দলটির পালা। তাদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি, তাদেরকে ভৎর্সনা ও লাঞ্ছনা করা হচ্ছে, তাদের দোষ ক্রটিগুলাে জনসমক্ষে তুলে ধরা হচ্ছে এবং তাদের সকল মন্দ কথাবার্তা ও অপকর্মগুলাে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তােমাদের সামনে কি আয়াতসমূহ পঠিত হয়নি?…'(আয়াত ৩১-৩২) এখন তােমরা কি বুঝতে পারছাে? এখন তােমাদের অবিশ্বাসের ফল টের পাচ্ছ কি? ওদের প্রসঙ্গ ক্ষণিকের জন্যে রেখে দিয়ে এবার জনসমক্ষে ঘােষণা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ‘তাদের মন্দকর্মগুলাে তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যে আযাব নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাে, তা তাদেরকে ব্যাপক গ্রাস করবে।'(আয়াত ৩৩) এরপর পুনরায় ওদেরকে লক্ষ্য করে ভর্ৎসনার বাণ নিক্ষেপ করা হবে, ওদেরকে উপেক্ষা ও অমর্যাদার পাত্র বলে ঘােষণা করা হবে এবং ওদেরকে মর্মান্তিক পরিণতির কথা জানিয়ে দেয়া হবে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বলা হবে, আজ আমি তােমাদেরকে ভুলে যাবাে, যেমন তােমরা এ দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিলে…!'(আয়াত ৩৪-৩৫) এবার তাদের শেষ পরিণতির কথা ঘােষণা দিয়ে এরপর দূশ্যের এখানে সমাপ্তি ঘটবে। ওরা জাহান্নামে পড়ে থাকবে, সেখান থেকে আর বের হতে পারবে না। তাদেরকে কোনাে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হবে না এবং ওযর আপত্তি উত্থাপন করতেও বলা হবে না। তাই বলা হয়েছে, ‘আজ তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাদের কাছ থেকে তাওবাও চাওয়া হবে না।’ এই ঘােষণার পর মনে হচ্ছে, আমরা যেন জাহান্নামের কপাট বন্ধ হওয়ায় শব্দ পাচ্ছি যা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ দৃশ্যের সমাপ্তি ঘটেছে। এখন আর কোনাে পরিবর্তন বা সংশােধনের সুযােগ নেই। এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সমাপ্তির পর এখন ধ্বনিত হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসাবাণী। বলা হচ্ছে, ‘অতএব, বিশ্বজগতের মালিক, ভূমন্ডলের মালিক ও নভােমন্ডলের মালিক আল্লাহরই প্রশংসা। আসমানসমূহ ও যমীনে তাঁরই প্রশংসা, তিনি পরাক্রমশলী, প্রজ্ঞাময়’(আয়াত ৩৬-৩৭) সর্বত্র প্রশংসাবাণী ধ্বনিত হচ্ছে, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বের। ঘােষণা দেয়া হচ্ছে চারদিকে। সকলকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, একমাত্র তিনিই হচ্ছেন গােটা সৃষ্টি জগতের মালিক, তিনি আসমান ও যমীনের মালিক, জ্বিন ও ইনসানের মালিক। জীব জন্তু ও পশু পাখীর মালিক এবং আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে এর সবকিছুরও মালিক তিনি। তিনিই এসব কিছুর রক্ষক এবং তিনিই এসব কিছুর পরিচালক। একমাত্র তিনিই প্রশংসার উপযুক্ত। সর্বশেষে আবারও মহান আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কথা ঘােষণা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘গােটা সৃষ্টি জগতের তিনিই হচ্ছেন একক অধিপতি। তাঁর সামনে সকল ক্ষমতাধররাই আজ তুচ্ছ।’ তাঁর সামনে সকল বাহাদুররাই আজ পরাভূত। তাঁর সামনে সকল বিদ্রোহী আজ আত্মসমপির্ত। কারণ তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালকের উদ্দেশেই নিবেদিত।

তাফসীরে‌ ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩০-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাঁর ঐ ফায়সালার খবর দিচ্ছেন যা তিনি আখিরাতের দিন স্বীয় বান্দাদের মধ্যে করবেন। যারা অন্তরে ঈমান এনেছে এবং স্বীয় হাত-পা দ্বারা শরীয়ত অনুযায়ী সৎ নিয়তের সাথে ভাল কাজ করেছে, তাদেরকে তিনি স্বীয় করুণায় জান্নাত দান করবেন।

এখানে রহমত দ্বারা জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে। যে, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতকে বলবেনঃ “তুমি আমার রহমত। আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করবো সে তোমাকে লাভ করবে। এটাই হলো মহাসাফল্য। পক্ষান্তরে যারা কুফরী করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাসন-গর্জনরূপে বলা হবেঃ তোমাদের নিকট কি আল্লাহ তা’আলার আয়াত পাঠ করা হয়নি? অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়েছিল এবং তোমরা ওগুলো শুনেছিলে, কিন্তু তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। তোমরা অন্তরে কুফরী রেখে বাইরেও তোমাদের কাজে কর্মে আল্লাহর নাফরমানী করেছিলে এবং বাহাদুরী দেখিয়ে গুনাহর উপর গুনাহ করতে থেকেছিলে। যখন মুমিনরা তোমাদেরকে বলতো যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তো সত্য এবং কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এতে কোনই সন্দেহ নেই, তখন তোমরা পাল্টা জবাব দিতেঃ কিয়ামত কি তা আমরা জানি না। আমরা মনে করি এটা একটা ধারণা মাত্র, আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই। এখন তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি তাদের সামনে এসে গেছে। তারা তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল স্বচক্ষে দেখে নিয়েছে। যে শাস্তির কথা তারা উপহাস করে উড়িয়ে দিয়েছিল এবং ‘যেটাকে অসম্ভব মনে করেছিল ঐ শাস্তি আজ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে ফেলেছে। তাদেরকে সর্বপ্রকারের কল্যাণ হতে নিরাশ করে দেয়ার জন্যে বলা হবেঃ “আজ আমি তোমাদেরকে বিস্মৃত হয়ে যাবো। যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎকারকে বিস্মৃত হয়েছিলে। তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং এমন কেউ হবে না যে তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারে।

সহীহ হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন স্বীয় বান্দাদেরকে বলবেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম না? তোমাদের উপর কি আমি আমার দয়া-দাক্ষিণ্য নাযিল করিনি। আমি কি তোমাদের জন্যে উট, ঘোড়া ইত্যাদিকে অনুগত করেছিলাম না? তোমাদেরকে কি আমি তোমাদের বাড়ীতে সুখে-শান্তিতে বাস করার জন্যে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছিলাম না?” তারা উত্তরে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এগুলো সবই সত্য। সত্যিই আপনার এই সমুদয় ইহসান আমাদের উপর ছিল। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “সুতরাং আজ আমি তোমাদেরকে বিস্মৃত হয়ে যাবো যেমন তোমরা আমাকে বিস্মৃত হয়েছিলে।”

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই শাস্তি তোমাদেরকে এ জন্যেই দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাবলীকে বিদ্রুপ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। তোমরা এর উপরই নিশ্চিন্ত ছিলে, ফলে আজ তোমাদেরকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো। আজ তোমাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে না এবং তোমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টার সুযোগ দেয়া হবে না। অর্থাৎ এই আযাব হতে তোমাদের বাঁচবার কোন উপায় নেই। এখন আমার সন্তুষ্টি লাভ করাও তোমাদের জন্যে অসম্ভব। মুমিনরা যেমন বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে, ঠিক তেমনই তোমরাও বিনা হিসাবে জাহান্নামে যাবে। এখন তোমাদের তাওবা বৃথা।

আল্লাহ তাআলা মুমিন ও কাফিরদের মধ্যে যা ফায়সালা করবেন এটার বর্ণনা দেয়ার পর বলেনঃ ‘প্রশংসা তাঁরই, যিনি আকাশমণ্ডলীর প্রতিপালক, পৃথিবীর প্রতিপালক এবং জগতসমূহের প্রতিপালক।’ অর্থাৎ যিনি আকাশ ও পৃথিবীর মালিক এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যতকিছু রয়েছে সবকিছুরই যিনি অধিপতি, সমুদয় প্রশংসা ঐ আল্লাহরই প্রাপ্য।

অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে গৌরব গরিমা তারই। আসমানে ও যমীনে আল্লাহ তা’আলারই রাজত্ব, আধিপত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব। তিনি বড়ই মর্যাদা ও বুযুর্গীর অধিকারী। সবাই তার অধীনস্থ। সবাই তার মুখাপেক্ষী।

সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “শ্রেষ্ঠত্ব আমার তহবন্দ এবং অহংকার আমার চাদর। সুতরাং এ দু’টির কোন একটি আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে যে ব্যক্তি টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবো।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে)

তিনি ‘আযীয অর্থাৎ পরাক্রমশালী। তিনি কারো কাছে কখনো পরাস্ত হন। তার কোন কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন কেউ নেই।

তিনি প্রজ্ঞাময়। তাঁর কোন কথা, কোন কাজ, তাঁর শরীয়তের কোন মাসআলা, তাঁর লিখিত তকদীরের কোন অক্ষর হিকমত বা নিপুণতা শূন্য নয়। তিনি সমুচ্চ ও সমুন্নত। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩০-৩৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এখানে আল্লাহ তা‘আলা যারা সৎ আমল করবে তাদের ও যারা অসৎ আমল করবে তাদের অবস্থা কেমন হবে তা বর্ণনা করেছেন। যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর স্বীয় রহমত তথা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তারাই হবে সফলকাম। পক্ষান্তরে যারা কুফরী করত, যারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করত তাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম। ঐ দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন : আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব যেমনভাবে তোমরা দুনিয়াতে আমার সাথে আজকের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিলে। তারা সেখানে কষ্ট আর কষ্ট ভোগ করবে, কিন্তু কেউ তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য করবে না। আর তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। সেখান থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।

(وَبَدَا لَهُمْ سَيِّاٰتُ)

অর্থাৎ তাদের অসৎ আমলগুলো প্রথমে প্রকাশ পাবে।

الكبرياء শব্দের অর্থ গৌরব, অহঙ্কার, গরিমা ইত্যাদি। এটা শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য বৈধ, অন্য কারো জন্য অহঙ্কার করা বৈধ নয়। অর্থাৎ আকাশ ও জমিনের মাঝে একমাত্র তিনিই গর্ব ও অহঙ্কার করতে পারেন। কারণ তিনি আকাশ ও জমিনবাসীর মা‘বূদ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : অহঙ্কার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার জামা। যে এ দুটির কোন একটি আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নিতে চায় আমি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব। (আবূ দাউদ হা. ৪০৯০, সহীহ)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. সৎ আমল ছাড়া নাজাত পাওয়া যাবে না।
২. পার্থিব জীবনের মোহে পড়ে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যাওয়া যাবে না।
৩. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করতে হবে।
৪. গর্ব-অহঙ্কার করা যাবে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# অহংকার বশতঃ তোমরা মনে করেছিলে আল্লাহর আয়াতসমূহ মেনে নিয়ে অনুগত হয়ে যাওয়া তোমাদের মর্যাদার পরিপন্থী এবং তোমাদের দাসত্ব মর্যাদার অনেক ওপরে।
# ইতিপূর্বে ২৪ আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা ছিল খোলাখুলি ও অকাট্যরূপে আখেরাত অস্বীকারকারী। কিন্তু এখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে না, শুধু একটা ধারণা পোষণ করে এবং এর সম্ভাব্যতা অস্বীকার করে না। বাহ্যত এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। কারণ, একটি গোষ্ঠী আখেরাতকে সম্পর্ণরূপে অস্বীকার করে এবং অপরটি তা সম্ভব বলে ধারণা পোষণ করে। কিন্তু ফলাফল ও পরিণামের দিক দিয়ে এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা, আখেরাত অস্বীকৃতি এবং তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকার নৈতিক ফলাফল প্রায় পুরোপুরি এক। কোন ব্যক্তি, যে আখেরাত মানে না বা বিশ্বাস করে না উভয় অবস্থায় অনিবার্যরূপে তার মধ্যে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির অনুভূতি থাকবে না এবং এই অনুভূতিহীনতা অবশ্য তাকে চিন্তা ও কর্মের গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। কেবলমাত্র আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই পৃথিবীতে মানুষের ভূমিকা আচার-আচরণ ঠিক রাখতে পারে। এই বিশ্বাস না থাকলে সন্দেহ-সংশয় ও অস্বীকৃতি এ দু’টি তাকে এক প্রকার দায়িত্বহীন আচরণ ও তৎপরতার দিকে ঠেলে দেয়। এই দায়িত্বহীন আচরণ ও তৎপরতাই যেহেতু আখেরাতে মন্দ পরিণামের মূল কারণ তাই না অস্বীকারকারী দোজখ থেকে রক্ষা পাবে, না সন্দেহ পোষণকারী।
# দুনিয়াতে যেসব নিয়ম-পদ্ধতি, আচার-আচরণ এবং কাজ-কর্ম ও তৎপরতাকে তারা খুব ভাল বলে মনে করতো তা যে ভাল ছিল না সেখানে তারা তা জানতে পারবে। নিজেদেরকে দায়িত্বহীন মনে করে যে মৌলিক ভুল তারা করেছে, যার কারণে তাদের জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ডই ভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে তারা সেখানে তা উপলব্ধি করতে পারবে।
# এই শেষ বাক্যাংশের ধরন এরূপ যেন কোন মনিব তার কিছু সংখ্যক খাদেমকে তিরস্কার করার পর অন্যদের উদ্দেশ্য করে বলছেন, ঠিক আছে, এখন এই অপদার্থগুলোকে এই শাস্তি দাও।

Leave a Reply